মাইরের উপর ওষুধ নাই (রম্যরচনা)                                                                      

মাইরের উপর ওষুধ নাই (রম্যরচনা)

মাইরের উপর ওষুধ নাই (রম্যরচনা) – সকাল সন্ধ্যা স্টুডেন্টদের সাথে বক-বক করে আবার সন্ধ্যায় স্টাফ মিটিং করে একটু যে শান্তিতে শুয়ে বিশ্রাম নিবো তা আর কপালে সইলোনা । পাশের রুমে মা আর আমার এক নাম্বারের বাদর অনুজ হাও কাও লাগিয়েছে অনেক্ষন হলো । নাহ, আর সইতে পারছিনা । একটু দেখেই আসি ঘটনাটা কি । গিয়ে দেখি এই দুই বান্দা টিভি নিয়ে গবেষণা করছে রীতিমতো । মা বকা দিচ্ছে আমার ছোট ভাইকে । টিভিতে একটু পরপর সমস্যা হচ্ছে মা দেখতে পাচ্ছেনা তাই সে এবার টিভিটাই খুলে হাতুরে ইঞ্জিনিয়ারিং শুরু করেছে । আমি এই চরম ইঞ্জিনিয়ারিং মুহুর্তটি দেখতে হাতছাড়া করলাম না । আমি জানি একটু পর টিভি টা আরো বেশি খারাপ হয়ে যাবে, আর তখন মা যে কি ভাবে তাকে উত্তম-মধ্যম লাগাবে সেটা ভেবেই চোখ দুটো চক-চক করে উঠলো দেখার জন্য । মনের মাঝে সেই লেভেলের একটা শয়তানি হাসি দিয়ে উঠলো । সকালে আমার চা এ ফাজিলটা দুধের বদলে আটা মিশিয়ে ছিলো ।

মিনিট দশেক পর সব আগের মতো করে লাগিয়ে সে টিভিটা অন করতেই টিভির দৃশ্যের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখতে পেলাম মানে আর চালুই হচ্ছেনা। এখন অপেক্ষা মা এর হাতে খুন্তি বা ঝাটার বাড়ি উঠার । কিন্তু এই রিমান্ডের আগ মুহুর্তে আমার অনুজ এক হাত উঠিয়ে বললো শান্ত থাকো সবাই। এখন আখেরি দাওয়া দিবো, এই বলেই প্যান্টের পেছনে হাত টা মুছে দুম-দুম দুটো কিল বসালো টিভির উপর । ব্যাস সেই অলৌকিক ঘটনাটি ঘটেই গেলো । টিভি একদম এইচডি কোয়ালিটির ছবি দেখাতে লাগলো । এই জাদু দেখানোর পর অনুজ তার মাথার চুলে নায়কের স্টাইলে হাত বুলিয়ে একটা ভাব নিয়ে বললো এমন কত ম্যাশিন ঠিক করলাম । সত্যি বলতে তার ইঞ্জিনিয়ারিং এ কতটা কাজ হয়েছে তা জানিনা তবে মাইর দিয়ে যে কাজটা হয় তা আমি নিজেই সাক্ষী ।

সকালে চা বানাতে গিয়ে ঘটলো আরেক বিপত্তি। চিনির বক্সটা এমন ভাবে জেদ অভিমান করে বসলো যে কিছুতেই অভিমান কমিয়ে খুলতে পারলাম না । শেষে আমিও একটু দিলাম এক থাপ্পর । ব্যাস অনন্ত জলিলের মত অসম্ভব কে সম্ভব করে ফেললাম । গোসল খানার শাওয়ার (ঝর্না) টা বেশ কিছুদিন অল্প করে নিজেকে জলদান করছিলো । মা এর ডাকে সাড়া দিয়ে প্লায়ার্স দিয়ে দিলাম কয়েকটা বারি । ম্যাজিকের মত এর পর থেকে পানি মুক্ত মনে পরতে লাগলো । সব মিলিয়ে সকাল-সকাল অসাধারণ অভিজ্ঞতার মাঝে দিয়ে শুরু করলাম । অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার পুর্বে একবার ভেবে নিলাম সেই কোন এক মহাপুরুষ বলে গিয়েছিলেন মাইরের উপর নাকি ঔষধ নাই ।

ক্লাস নিতে মিটে ঢুকেই যখন দেখলাম ফাজিলের হাড্ডি গুলো ক্লাসে আসেনি আর যারা আছে তারাও ঝিমাচ্ছে তখন আবার মনে হলো মাইরের উপর ঔষধ নাই । কিন্তু মায়া ও হয় বাচ্চা গুলোর উপর আর অনলাইনে পিটুনি লাগানোর অপশনও নাই ।

ছোট বেলায় ভয়ানক কিছু প্রানীর মাঝে ছিলো ক্লাসের স্যার । ইনাদের হাতের ছিলো অসাধারণ পিটুনি শিল্প । এই শিল্প অধিকাংশই ঝরে পরতো উনাদের হ্যারিপটারের জাদুর লাঠি হতে । উনাদের সেই লাঠির জাদুতেই আজ আমরা বাঁকা পথে যাইনি। উনাদের এই শিল্প যে শুধু পিটুনি দিতেই লাগতো তা নয় , প্রতিভাও বের করে নিয়ে আসে। তখন আমি ৭ম শ্রেনীতে । আমার এক বন্ধু আর আমার মাঝে মোটামুটি ৩য় মহাযুদ্ধ সামনের ব্রেঞ্চে কে বসবে তা নিয়ে। বন্ধুর এর সাথে যুদ্ধে আমার শার্টের ২টি বোতাম শহীদ হয় । এই নিয়ে জমসেদ স্যার (স্কুলে ভয়ংকর রাগী স্যার হিসেবে পরিচিত) এর আদালতে বিচার হয় । আমাকে কান ধরে ২০ বার ইয়ে করতে হয় আর বেচারা বন্ধুকে ২০টা পিটুনি শিল্পের বেত্রাঘাত দান করে । স্যার যখনই তাকে বেত্রাঘাত দিতে লাঠি তুলে তখনই সে এমন ভংগিতে শারীরিক কসরত করে যে স্যার ৫/৬ টা বেত্রাঘাত দিয়েই হাসতে শুরু করে আর বলে সে নাকি ফিউচারে মাইকেল জ্যাকসন কে টেক্কা দিবে । সে বার বিদায় অনুষ্ঠানে স্যার তাকে একটা সুযোগও দিলো স্টেজে ব্রেকডান্স দেয়ার । সেই যে আমার দুটো বোতাম শহীদের বিনিময়ে তার স্টেজে উঠার সৌভাগ্য হলো তারপর থেকে প্রতি বছর আমাদের মহল্লায় তার নাচ দেখতে হয় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ।

বিকেলে বের হয়েছিলাম রাজশাহী পদ্মার পাড়ে বাতাস উপভোগ করতে। ভরা নদীতে পানির খেলা দেখে মন দুলে উঠলো নৌকার দুলুনি খেতে-খেতে । নৌকায় আমি বাদেও আরো কয়েকজন উঠলো ঠিকই কিন্তু নৌকার স্যালুমেশিন ইঞ্জিন আর স্টার্ট নেয় না। মাঝি তার চ্যালাকে চোখ রাংগিয়ে বললো “ মামুর ব্যাটা ঠ্যালে ঘুইরালেই হবে ? কান্ঠার উপ্রে স্যান্ধে লাগা” (রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষা) মানে শুধু ঘুরালেই হবেনা, মেশিনের এক পাশে জোরে মাইর লাগাতে হবে। মাঝির চ্যালা হাল্কা একটা বারি দিতেই ইঞ্জিন চালু। মাঝি তার হাজারী পাওয়ারের চশমাটা নাকের ৬০ ডিগ্রি কোণে স্থাপন করে ব্রাজিল রং এর দাত গুলো ভাসিয়ে হেসে বললো “ এঞ্জিনিয়ার হবি বোটা, শিখ্যালে কথা লুঠে লিবি” (রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষা)।

এখন বাসায় বসে বসে এই পিটুনি শিল্প বা মহাঔষধ (মাইর) নিয়ে ভাবছি আর লিখতে বসলাম সারাদিনের অভিজ্ঞতা। লিখতে লিখতে পিটুনি শিল্পের বাস্তবতা দেখে মনে মনে হাসছি খুব। আমার আদরের বাদর অনুজটা অনেক্ষন তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো ব্যাটারিটা তাহলে শেষ আবার এই করোনায় বের হয়ে ব্যাটারি লাগাতে হবে। আমি আড় চোখে তাকিয়ে বললাম হাত দিয়ে একটা চর থাপ্পড় মার। অব্যার্থ ওষুধ তা কি আর ভুল হয়, চলতে  শুরু। আরকি সন্দেহ থাকে এই সাত কলার রঙচোখা জীবনে। পিটুনির তেল মারা কথা শেষ করতে হবে তাই এখনি ভাবলাম ইতি টানবো। কিন্তু বিধীবাম, কী-বোর্ডের সমস্যা একটু পর-পর কয়েকটা কী কাজ করছেনা। শেষ ওষুধ তো আছেই হুহুহুহাহাহা। ইয়া ঠাস ঠাস ঠাস…………………….

একটু আগে এক্স-রে করে আসলাম। এখন আমার বর্তমান অবস্থাটা আর নাই বা বললাম, কিন্তু আমার অবস্থাটা নিচের লাইন টুকু পড়ে একটু হলেও আন্দাজ করতে পারবেন ………………………….

“ হুতাসে মেতে চটকনা দিয়ে হাত করলাম ফুলিয়ে হাতি,

স্বস্তা ওষুধ ব্যাবহারে সাইড ইফেক্ট পড়ে নিয়ো হে মহা জ্ঞাণী এই জাতি ”

 

কপি রাইটঃ এস. এম. রাজিব আহম্মেদ

ইন্সট্রাকটর, কম্পিউটার টেকনোলজি

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

 

Comments are closed.