কেমন হতে চলছে ভবিষ্যৎ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে “Harmony OS”

 

কেমন হতে চলছে ভবিষ্যৎ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে “Harmony OS”

মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যাবহার করেন আর অপারেটিং সিস্টেম কি তা জানেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। একটি ডিভাইস কে পরিচালিত করতে নির্দেশনা দেয়া বা নিয়ন্ত্রন করে সঠিক কার্যোপযোগী করে তোলাই মুলত এর লক্ষ্য। আর এই অপারেটিং সিস্টেম কে অনেক টা প্রাণ বলা যেতে পারে ডিভাইসের। সময়ে সময়ে অনেক অপারেটিং সিস্টেমই এসেছে টেক বাজারে। এর মধ্যে কম্পিউটার/ ল্যাপটপের মত ডিভাইসে জনপ্রিয়তায় মাইক্রোসফট এর উইন্ডোজ ভার্সন গুলো বেশি জনপ্রিয় আর স্মার্ট ফোন মোবাইল গুলোর জন্য এন্ড্রোয়েড অধিক জনোপ্রিয় । এগুলো ছাড়াও ম্যাক, লিনাক্স, উবোন্টু ইত্যাদি রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে স্মার্ট ফনের বাজারে এন্ড্রোয়েডকে টেক্কা দিতে চীনের কোম্পানি হুয়াওয়ে নিয়ে এসেছে হারমোনি নামের নতুন মাত্রার এক অপারেটিং সিস্টেম। টেক বিশেষজ্ঞদের মতে এটিই হতে চলেছে আগামির নতুন ভবিষ্যতের চালক। যদিও এর জন্ম টেক যুদ্ধের মাধ্যমে তবুও এক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে যুদ্ধ শুধু ধ্বংসই করে না কিছু নতুনত্বও নিয়ে আসে। যাইহোক আজ আপনাদের সাথে এই নতুন মাত্রার অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করবো।

হুয়াওয়ে এই অপারেটিং সিস্টেমটি একটি মাল্টি কার্নেল ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম যেটিতে একটি সিঙ্গেল ফ্রেম এর অ্যাপ ওয়ার্ক এর উপর ভিত্তি করে কোডিং করা হয়েছে এবং সকল ধরনের হার্ডওয়ারে একই ধরনের সার্ভিস বিদ্যমান করা হয়েছে | এর ফলে বিভিন্ন বড় বড় কোডিং কে সংক্ষেপে তৈরি করে এবং মানুষের জন্য সহজ থেকে সহজতর করে ব্যবহার করা হচ্ছে | এটি শুধুমাত্র একটি অপারেটিং সিস্টেমই না স্মার্ট টিভি, স্মার্টফোন, স্মার্ট কিচেন ও ল্যাপটপ সহ বিভিন্ন ধরনের গেজেটে ব্যবহার করা যাবে |

 

হারমনি ওএস নিয়ে যেসব ডেভলপাররা কাজ করেন তাদেরকে বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করতে হয় না কারণ এই ওএসটি  সকল ধরনের ডিভাইসের জন্য একই ধরনের কোড করে তৈরি করা হয়েছে | তাছাড়া এই সফটওয়্যারটি এমনভাবে ডেভলপমেন্ট করা হয়েছে যাতে অ্যান্ড্রয়েডের বিভিন্ন ধরনের এপিকে ফাইল গুলো কেউ সহজেই ইনস্টল করতে সাহায্য করবে |

 

হারমনি ওএস এর ওয়েস্টিন ছোট ছোট প্রোগ্রামিং লাইনের মাধ্যমে ডেভলপ করার কারণে এর সাইজ অপারেটিং সিস্টেম থেকে তুলনামূলকভাবে কম এবং ফলশ্রুতিতে খুব দ্রুততার সাথে কমিউনিকেট করতে পারি | ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক প্রতিবেদনে জানা যায় তিনি দাবি করেন যে 60% কাজ করেন এবং মাত্র 5 মিনিটে | এই অপারেটিং সিস্টেমটি তেএনকোডিং যথেষ্ট ম্যানেজমেন্ট স্কেজিং| নতুন অপারেটিং সিস্টেমটি প্রচলিত অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম থেকে 25 দশমিক 7 শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে  | এতে আরো বেশি ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে কারণ ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইসের জন্য ডেভলপারদের ভিন্নভাবে কোডিং করার প্রয়োজন হয় না যার কারণে তারা অনেক সময় পায় এবং সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট এর সুযোগ পেয়ে থাকে | তাছাড়া এতে এন্ড্রোয়েড এর সকল এপস নির্দিধায় চালানো যাবে।

 

এক কথায় বলতে গেলে হারমনি ও এস এর ভবিষ্যত নির্ভর করছে তার প্রত্যেকটি সফটওয়্যার কতটা অপটিমাইজ এবং প্রত্যেকটি ডিভাইসে কতটা সুন্দরভাবে অপটিমাইজ ভাবে এবং স্মুথলি চালানো যাবে | হুয়াই এর এই অপারেটিং সিস্টেম টা সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে কেউ যদি কথা বলতে বলতে ভিডিও কলে বা অডিও কলে এক রুম থেকে অন্য রুমে চলে যায় সেই ক্ষেত্রে এই অপারেটিং সিস্টেমে একটি বিশেষ ফাংশন এর মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তিকে ডিভাইসটিকে আলাদাভাবে স্পিকার চেঞ্জ করা লাগবে না আগে যেভাবে কথা বলছিল তিনি ঠিক সেভাবেই কথা বলতে পারবে |অন্যদিকে যদি আমরা সিকিউরিটির কথা চিন্তা করি তাহলে শুধুমাত্র আইফোনের আইওএস-এ সিকিউরিটি দিকে যথেষ্ট পরিমাণ নজর দিয়ে থাকে কিন্তু সেক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড এর অবস্থা একদমই নাজেহাল | সুতরাং, এই অপারেটিং সিস্টেমটির ভবিষ্যৎ এখানেও নির্ভর করছে যে তারা মানুষকে কতটা সিকিউরিটি  প্রদান করতে পারবে | আমরা প্রায়ই শুনি অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে বিভিন্ন ধরনের ডেটা চুরি হয় বিভিন্ন এপস এর মাধ্যমে কিন্তু হারমনি তার অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে ডাটা চুরি হওয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে তাহলে অবশ্যই বলা যেতে পারে যে এন্ড্রোয়েড থেকে এই অপারেটিং সিস্টেমের ভবিষ্যৎ ভালো |

 

হারমনি ওএস  এর সবচাইতে বড় বাধা হতে পারে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের অ্যাপ স্টোর | 2012 সালে যখন প্রথম অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেম আসে তখন তাদের সাথে রীতিমতো  তৎকালীন মোবাইল জগতের এক নাম্বার কোম্পানি নোকিয়া এবং ব্ল্যাকবেরি  ছাড়িয়ে যেতে পারিনি | তার প্রধান কারণ হচ্ছে এন্ড্রয়েড এবং আইওএস তাদের সফটওয়্যার ডেভলপার দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস তৈরি করা এবং প্রতিনিয়ত প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস তারা অ্যাপস্টোরে আপলোড করে যার কারণে মানুষ দিন দিন বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল |

 

তাছাড়া এই অপারেটিং সিস্টেমটির আরো একটি বড় বাঁধা হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড এবং তাদেরকে কখনো প্রমোট করে না কারণ তারা এখান থেকে কোনপ্রকার লভ্যাংশ নেয় না | তারা শুধুমাত্র চাই মানুষ তাদের অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহার করুক এবং তাদের যেসব সার্ভিস আছে তারা সেসব সার্ভিস ব্যবহার করুক এবং অবশ্যই সার্ভিস গুলো ব্যবহার করলে সেখান থেকে তারা একটি রেভিনিউ পেয়ে থাকে | তাই হারমনিকে নিয়োমিত আপডেট এপস স্টোরে যোগ করতে হবে এবং সেই সাথে আকর্ষোনীয় এপস নিয়ে ওএস যুদ্ধের মাঠে নামতে হবে। তারা যদি এই কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারে তবে তারা হারানো জায়গা ফিরে পেতে পারে আর না হলে তারা হয়তো নোকিয়া আর ব্ল্যাকবেরির মতো ইতিহাস হয়ে যাবে |

 

 

কপি রাইটঃ এস. এম. রাজিব আহম্মেদ

ইন্সট্রাকটর, কম্পিউটার টেকনোলজি

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

 

Tags: No tags

Comments are closed.