বিএসডিআই এবং আরএকে সিরামিক্স এর উদ্যোগে বিশেষ অনুশীলন কর্মশালার আয়োজন

গত ২৬ জুলাই বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট RAK Ceramics এর মিড লেভেল ম্যানেজমেন্টের লিডারশীপ দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে “Leadership & Business Communication” এর ওপর দিন ব্যাপী ট্রেইনিং সেশন পরিচালনা করে। সেশনে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের মোট ৪০ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। সেশনটি পরিচালন করেন বিএসডিআই এর নির্বাহী পরিচালক জনাব কে এম হাসান রিপন। সেশনে ব্যাক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে লিডারশীপ এবং কমিউনিকেশন স্কিলস এর কার্যকরী ব্যবহারের গুরুত্ব আলোচনা করা হয় এবং প্রশিক্ষণার্থীরা এর সম্পর্কিত নানা কৌশল অনুশীলন করেন।

এ সময় সেশনে RAK Ceramics এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন RAK Ceramics এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জনাব শ্রী নিবাস। সেশন শেষে উপস্থিত ট্রেইনিদের মাঝে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এখানে উল্লেখ যে, বিএসডিআই  ২০০৩ সাল থেকে কর্পোরেট সেক্টরে সফলতার সাথে কর্মীদের কর্ম দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।  

জাতীয় দক্ষতার সনদ হোক স্বীকৃতি

জাতীয় দক্ষতার সনদ হোক স্বীকৃতি

আমাদের দেশে অনেক দক্ষ লোক আছে যারা বিভিন্ন পেশায় দক্ষ কিন্তু তাদের কোন সরকার কর্তৃক স্বীকৃত সার্টিফিকেট নেই। অনেক সময় দেখা যায়, তারা বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাবহারিক দিক থেকে দক্ষ হওয়া সত্বেও পাঠ্যপুস্তক এর জ্ঞান না থাকার কারণে পিছিয়ে পরে। তাই তাদের দক্ষতা কে যাচাই করে একটা মানদণ্ডে একটি  ডাটাবেজের অধীনে। তাদের দক্ষতা কোন লেভেলে আছে তা যাচাই করে ওই লেভেলের সার্টিফিকেট প্রদান করার একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে আইপিএল। তাদের দক্ষতা যাচাই করার পর একটি মানদণ্ডের অধীনে ডাটাবেজ রাখা হয়। 

 

আরপিএল করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ট্রেনিং এর প্রয়োজন হয় না। যে ব্যক্তি আইপিএলের জন্য আগ্রহী সে তার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সরকার কর্তৃক  নির্দিষ্ট  কোন প্রতিষ্ঠান থেকে  আইপিএলের পরীক্ষার জন্য তার যে বিষয়ে দক্ষতা আছে সে বিষয়ে   নিবন্ধন করে পরীক্ষা দিতে পারবে।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার পরে তাদেরকে তিন টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচাই করা হয়। যেমন-

১। লিখিত পরীক্ষা 

২। প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার

৩। ভাইভা পরীক্ষা

 

এই তিন ধরনের পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে তাকে কমেন্ট বা উপযুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

তবে যদি কেউ প্র্যাক্টিক্যাল ভাইবা অথবা লিখিত পরীক্ষার কোন একটা বিষয় কাঙ্খিত ফলাফল না পায় তাহলে পরবর্তীতে সে শুধুমাত্র ঐ পর্বের  পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে তার অন্য পর্বের পরীক্ষা অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন নেই।

 

RPL কেন করবেন –

আমাদের দেশে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক সময় দেখা যায় কর্মী প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ আগে কখনো আরপিএল সম্পর্কিত কোন ডাটাবেস ছিল না। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দক্ষতা অনুযায়ী লেভেল ১ থেকে ৬ পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এখানে বেসিক থেকে শুরু করে skilled, semi-skilled, higher-skilled এবং ডিপ্লোমা পর্যন্ত সমমান ডিগ্রি প্রদান করা হয়। 

 

সুবিধা

  • দেশে বিদেশে কর্মসংস্থান 
  • একজন আরপিএল কম্পিটেন্ট লোক তার দক্ষতা অনুযায়ী কোন জায়গায় আবেদন করলে তার আলাদা করে পরীক্ষা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না কারণ সে সরকার কর্তৃক স্বীকৃত।
  • অনেক সময় দেখা যায় সরকারের অনেক কর্মী প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে আরপিএল প্রাপ্ত ডাটাবেজ  থেকে তারা সহজেই কর্মী নিয়ে নেয়।

 

বিশ্বের সর্বাধিক টেকসই ক্যারিয়ার হসপিটালিটি শিল্প

বিশ্বের সর্বাধিক টেকসই ক্যারিয়ার হসপিটালিটি শিল্প (The most sustainable career hospitality industry in the world )

বর্তমান বিশ্বের  সর্বাধিক চাহিদা সম্পন্ন  এবং স্বপ্নীল ক্যারিয়ার হসপিটালিটি সেক্টর।  পৃথিবীর  সকল দেশেই  এই পেশার  চাহিদা  ব্যাপক  বিশেষভাবে ট্যুরিষ্ট দেশ গুলোতে যেখানে হোটেল শিল্পের ব্যবসা রমরমা  সেখানে এই  কাজ করতে  আগ্রহীদের  চাহিদা  আকাশ চুম্বী। বাংলাদেশেও প্রতিনিয়ত  এগিয়ে যাচ্ছে  হোটেল শিল্প  এবং এর সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশের কর্মীর চাহিদা।

এই কোর্সে প্রশিক্ষণ শেষে একজন শিক্ষার্থী তার ক্যারিয়ার গড়তে পারে ৩/৫ তারকা হোটেল, ট্রাভেল এজেন্সি, এয়ারলাইন্স, হোটেল এন্ড মোটেল গুলোতে।

বিএসডিআই ১৭ বছর ধরে হোটেল সেক্টরে দক্ষভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে,  ২০০৪ সাল থেকে হোটেল সেক্টরে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। বিএসডিআই’তে রয়েছে ১ বছর মেয়াদি বৃটিশ ডিপ্লোমা, ৬ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স, ৪ মাস মেয়াদি সল্প মেয়াদি ট্রেড কোর্স ।

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেট ইনস্টিটিউটে  (বিএসডিআই) হোটেল শিল্পে দক্ষ  কর্মী ও টেকসই কর্ম-সংস্থানের সুযোগ নিয়ে পরিচালনা করছে  ৬ মাস মেয়াদি হসপিটালিটি ক্যাটারিং এবং কুকিং ডিপ্লোমা  কোর্স।  এই ডিপ্লোমা কোর্সের মাধ্যমে  একজন  শিক্ষার্থী নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারে থ্রিওরি ও প্যাকটিক্যাল ক্লাসের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে।

 

শিক্ষাপদ্ধতিঃ 

এই কোর্সের আওতায় প্রশিক্ষন প্রদান করা হবে  শেফ কোর্স, ফুড এন্ড বেভারেজ সার্ভিস কোর্স, রুম সার্ভিস, অপারেশন এবং ফন্ট অফিস ম্যানেজমেন্ট।

৬ মাস মেয়াদী এই কোর্সটি পরিচালনা করা হবে হাইব্রিড মেথড এর মাধ্যমে। যেখানে প্রথম চার মাস থিওরি ক্লাস অনলাইনে এবং পরের দুই মাস প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস অফলাইনে ল্যাবে পরিচালনা করা হবে।

 

কেন আমরাই সেরা?

  • হোটেল শিল্পে  প্রশিক্ষনে ১৭ বছরের অভিজ্ঞতা
  • আধুনিক ল্যাব
  • দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা
  • স্বনামধন্য কোম্পানির সাথে সংযুক্তি

 

সুবিধা : 

  • সরকারি সনদ
  • দেশে-বিদেশে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা
  • চাকরির সহায়তা
  • ল্যাবে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ।

 

ভর্তির যোগ্যতাঃ 

নুন্যতম যেকোন সালে এস এস সি/ সমমান পাশকৃত হতে হবে।

 

ভর্তি সেশনঃ 

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেট ইনস্টিটিউট (বিএসডিআই)-তে বছরে ৪ টি সেশনের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, বর্তমানে মার্চ সেশনে ভর্তি চলছে।

 

যোগাযোগঃ

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট(বিএসডিআই), বাড়ি- ২ বি, রোড- ১২, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭১৩৪৯৩২৪৬, ০১৭১৩৪৯৩২৪৩, www.bsdi-bd.org

উন্নয়নের দ্বার খুলে দিল ড্যাফোডিল

স্কুলের গন্ডী পেরেছিলাম আরও ১০ বছর আগে। স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হলাম পলিটেকনিকে। চলে এলাম ব্যাস্ততম রাজধানীতে। বাবা ও মা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। একটা মাত্র ছেলে ছিলাম বিধায় ভালোবাসাটা অনেক তীব্র ছিল আমার জন্যে। কিন্তু আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম। কারন স্কুলের শেষ বেঞ্চের ছাত্রটি বাবা মা ছেড়ে ঢাকায় এসে এখানকার পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে চলাটা সত্যি খুব কষ্টকর। তার উপর নতুন শিক্ষাঅধ্যায় শুরুটা আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলেছিল। ছাত্র হিসেবে তেমন ভালো ছিলাম না। তাই নিজের মধ্যে ভয়টা বেড়েই চলছিল। যাই হোক সব ভাবনার অবসান ঘটিয়ে বাবা নিয়ে আসলেন ঢাকাতে। ঢাকা পৌছে বাবার এক বন্ধুর বাসায় উঠলাম। বাবার বন্ধু একটি থাকার জন্যে একটি মেস ঠিক করে দিলেন। ভর্তি হলাম “ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট”-এ । আবারও ঠিক একই ভাবে সেই ভয় কাজ করছে মনের মধ্যে। যাই হোক ভর্তি যখন হয়ে গেছি তখন শেষ তো করতেই হবে। তবে শুরু থেকে আমার পলিটেকনিক বা কারিগরি শিক্ষার উপর একটা ধারনা ছিল না। লোকমুখে শুনে আমার মধ্যে একটা ভুল ধারনা জন্মেছিল ছিল যে, কারিগরি শিক্ষা বর্তমান সময়ে তেমন যোগপোযোগী না। এর তেমন কোন বাজার চাহিদা নেই। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে দেখলাম ভালভাবেই কাটছিল। কারন নিজের মধ্যে কারিগরি শিক্ষাব্যাবস্থা নিয়ে জন্মে থাকা ভুল প্রমাণিত হচ্ছিল। ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম সত্যি নিজের চিন্তা ধারাকে বদলে দিল। নিজেকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলছিল। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের থেকে এর শিক্ষাব্যাবস্থা অনেক আধুনিক ও উন্নত। প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যাবস্থা হওয়ায় উচ্চশিক্ষার উৎসাহটা বেড়ে গেল। পড়াশুনা নিয়ে পুষে রাখা ভয়টা ধীরে ধীরে কেটে গেল।
এই শিক্ষাব্যাবস্থার আদলে আমার জীবনে একটা নতুন সুযোগ আসলো। শিক্ষাসফরের অধীনে একটি কর্মশালায় অংশগ্রহন। স্থানটি ছিল মালেশিয়ায়। দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই প্রথম কোনো কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা সফর আয়োজন করল। নিজেকে খুব উদ্দেপিত লাগছে। শিক্ষাসফর নিয়ে নিজের মধ্যে একটি চরম উত্তেজনা কাজ করছে। অবশেষে দিনক্ষন ঠিক হল। ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০১৮। কিন্তু মালেশিয়াতে শিক্ষা সফর হবে বিধায় কিছু কার্যক্রম যেমন ভিসা প্রসেসিং, এয়ার টিকেট, ইমিগ্রেশন ইত্যাদি। এই প্রথম আমার দেশের বাইরে ভ্রমন, তাই নিজেকে খুব উৎসাহী ও ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
যাই হোক শিক্ষা সফরের বিষয়ে আসি। মূলত শিক্ষা সফরটি মালেশিয়ার একটি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ( কেবাংসান ইউনিভার্সিটি অব মালেশিয়া) ও ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট যৌথ ভাবে আয়োজন করেছিল।

অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ করে ২৬শে সেপ্টেম্বর চলে আসল। সন্ধায় বাসা থেকে রেডি হয়ে বের হলাম। আগের দিন সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছিলাম। উত্তেজনার চরম সীমা কাজ করছে। ভার্সিটির সামনে গিয়ে সবাই একত্র হলাম শিক্ষকদের সাথে যারা আমাদের সাথে যাত্রার সঙ্গী হবেন। আমরা ১৫জন সহপাঠী এবং ৪ জন ইন্সট্রাক্টরসহ মোট ১৯ জন ছিলাম। এরপর ভার্সিটি থেকে সবাই ভার্সিটির বাসে করে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। বিমানবন্দর পৌছে ইমিগ্রেশন শেষ করে বিমানে উঠলাম। মূহুর্তটা সত্যি অনেক আনন্দের।

আমরা ঠিক সকাল ৮ টায় মালায়শিয়া পৌছালাম। এয়ারপোর্টে নেমে সেখান থেকে সবাই কেবাংসান ইউনিভার্সিটি অব মালেশিয়াতে গেলাম। ম‚লত এখান থেকেই আমাদের শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য কার্যক্রম শুরু করলাম। কেবাংসান ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল পলিটেকনিক এর যৌথ উদ্দোগে আয়োজন করা হয় একটি কর্মশালা। এই কর্মশালায় আমাদের কিছু সুক্ষ্ম দক্ষতা বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হয়। এর দ্বারা আমি অনেক জ্ঞান লাভ করি। যেমন সেলফ ডেভেলপমেন্ট, টাইম ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। এছাড়াও ভাষাগত ও প্রযুক্তিগত বিদ্যা যেমন ইংলিশ স্কিল, টেকনলজি, ল্যাংগুয়েজ চ্যাঞ্জিং ইত্যাদি। তাছাড়া কেবাংসান ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল রিসার্চ সেন্টার ও জিওলজিকাল রিসার্চ সেন্টার ঘুরে দেখার সুযোগ পাই। ক্লিনিকাল রিসার্চ সেন্টার জায়গাটি সত্যি খুব চমৎকার। সেখানে মালেশিয়ার অনেক পুরোনো কিছু শিল্প ও বন্য প্রাণীর মমি সংরক্ষন করে রাখা আছে। এগুলো ম‚লত তারা ভবিষ্যৎ গবেষনার জন্যে সংরক্ষিত রয়েছে। আর জিওলজিকাল রিসার্চ সেন্টারে তাদের ভূতাত্ত্বিক বিষয়ের উপর কিছু যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম রয়েছে যা তারা গবেষনার জন্যে ব্যাবহার করে থাকে।


এর পাশাপাশি একটি সেশনের আয়োজন করা হয়, যেখানে আমরা ও মালেশিয়ান কেবাংসান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা একত্রে অংশগ্রহন করি। এরপর আমাদের লব্ধ জ্ঞানের উপর আমরা প্রেজেন্টেশন প্রদান করি এবং সেখানে আমরা একে অন্যের সংস্কৃতি তুলে ধরি। সবশেষে আমরা পুরো সেশনের উপর একটি সার্টিফিকেট কেবাংসান ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জন করি।
পরদিন আমরা আরও ৩টি ইউনিভার্সিটি ও ১টি পলিটেকনিক ভ্রমন করি। এরপর সবশেষে আমরা মালেশিয়ার টুর্যিরজম সাইটগুলো ঘুরে দেখা শুরু করি। আমি বিশেষ করে কুয়ালালামপুর এর অসাধারন সৌন্দর্য বেশি উপভোগ করেছিলাম। সেখানকার লোকজন, তাদের সংস্কৃতি, খাদ্যভ্যাস, রাস্তাঘাট সম্পর্কে জানলাম। নিজের মনোস্তাত্ত্বিক প্রবৃদ্ধি বিকশিত হচ্ছিল তা বুঝতে পারলাম। ৩রা নভেম্বর আমরা বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি।
এই সম্পূর্ন এডুকেশন ট্যুরটি আমার জীবনের পুরু চিন্তাভাবনাকে বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম কোনো কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ড্যাফোডিল পলিটেকনিক থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ধরনের এডুকেশন ট্যুরের আয়োজন সত্যি এক্তি বড় পদক্ষেপ। তাছাড়া এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক কোনো ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাথে যৌথভাবে অংশগ্রহনম‚লক শিক্ষা সফর অনেক প্রশংসনীয় বিষয়। এই ধরনের পদক্ষেপ প্রমান করে যে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভিন্ন আংগিকে চিন্তা করে এবং কারিগরি শিক্ষাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখে। সবথেকে বড় বিষয় ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী হিসেবে এই ধরনের ওয়ার্কশপে অংশগ্রহন করতে পারাটা আমার কাছে অনেক বড় অর্জন। যা কিনা বর্তমান সময়ে চাকুরীর ক্ষেত্রে নিজেকে যোগ্যপোযোগী করে তুলতে সাহায্য করবে। কারন শুধু বইপড়া আর পাঠ্যবিদ্যার জোরে বর্তমান প্রতিযোগিতাম‚লক বাজারে টিকে থাকা সম্ভব নয়। নিজেকে এই প্রতিযোগিতাম‚লক জগতে আরও আত্মবিশ্বাসী করে টিকে থাকা ও নিজের স্থানটি আরো শক্ত ও মজবুত করে ধরে রাখার জন্যে প্রকৌশল শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

চাকরি মেলা সফলে নিয়ম মানতে হবে দু’পক্ষকেই

চাকরি মেলা সফলে নিয়ম মানতে হবে দু’পক্ষকেই

সুইডিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা (সিডা) আয়োজিত উচ্চশিক্ষার স্থায়ী উন্নয়ন বিষয়ক এক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সুযোগ হয়েছিল সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ করার। এছাড়াও উপসালা এবং চালমার বিশ্ববিদ্যালয়ও সফর করা হয়েছে।

‍সম্মেলনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে যখনই যাওয়া হয় তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টার শেষ এবং নতুন সেমিস্টারের প্রস্তুতি চলছে। তাই ধারণা করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো বন্ধ থাকবে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। ক্যাম্পাসে ঢ়ুকেই আমি দেখতে পেলাম সরগরম অবস্থা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

প্রথমদিন বুঝতে পারিনি। দ্বিতিয়দিন দেখলাম সম্পূর্ণ ভিন্নচিত্র। শিক্ষার্থীরা সবাই পরিপাটি হয়ে হাতে একটি ফোল্ডার নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, ক্যাম্পাস অডিটরিয়ামে ঢোকার অপেক্ষায়।

এক ছাত্রকে সামনে পেয়ে জিজ্ঞেস করতেই লাইনের কারণ জানা গেলো। বললো, চাকরি মেলা চলছে। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রায় দু’শতাধিক প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করছে।

অডিটরিয়ামে প্রবেশ করে আমার চোখ কপালে। কোম্পানির স্টলগুলো সারিসারি করে বসানো হয়েছে। ভাগ করা হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিভেদে। শুধু কোম্পানির জন্য স্টলই নয়, আছে ইন্টারভিউ বুথ। যেখানে বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তারা সরাসরি ইন্টারভিউ নিতে পারবে। কোম্পানিগুলো তাদের চাকরি পদমর্যাদা এবং কাজের বিবরণী প্রতিটি স্টলে ঝুলিয়ে রেখেছেন। শিক্ষার্থীরা স্টলে স্টলে গিয়ে কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছেন, জানার চেষ্টা করছেন কোম্পানি সম্পর্কে। একজন একজন করে ডাকা হচ্ছে, যেন এক উৎসবম‍ুখর পরিবেশ।

ব্যাপারটা মোটেও এমন ছিল না যে হঠাৎ করে সবকিছু হয়ে গেল। পুরো বিষয়টি একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্যে সম্পন্ন হয়। আর এর পেছনে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। পুরো বছর জুড়ে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারগুলো তাদের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একাডেমিক পড়াশোনার শেষের দিকে চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়া এবং প্রস্তুতি দু’টোই একসঙ্গে চালিয়ে থাকে। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাছাই করে তাদের কাছে ছাত্রছাত্রীদের তালিকা পাঠানো, প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তাদের চাকরি পদমর্যাদা, কাজের বিবরণী এবং সুবিধাগুলো সংগ্রহ করা, ছাত্রছাত্রীদের ইন্টারভিউর জন্য প্রস্তুত করা, সিভি তৈরিতে সহযোগিতা এবং সাজসজ্জার ধারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। ছাত্রছাত্রীরাও তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর বিষদ গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য করে তুলতে সবসময় সচেষ্ট থাকে। তারপর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত চাকরি মেলা।

কেন এই চাকরি মেলা?

চাকরি মেলায় চাকরিদাতা এবং সম্ভাব্য কর্মী, উভয়ের অংশগ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার পাশাপাশি আরেকটি বিষয় নিয়ে সবসময় চিন্তা করতে হয় আর তা হলো একটি ভালো চাকরি।

চাকরিদাতা এবং সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেওয়া উভয়ের জন্য কর্মসংস্থানমূলক অনুষ্ঠানগুলো বিশেষ করে চাকরি মেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেজন্য সারা বছর বিশ্বের বিভিন্নস্থানে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরাসরি নিয়োগ, অ্যাপ্লিকেশন এবং নেটওর্য়াকিং প্রসেসকে জোরদার করার জন্য চাকরি মেলার আয়োজন করে থাকে। চাকরিদাতা এবং সম্ভাব্য কর্মীদের জন্য চাকরি মেলা একধরনের অতি প্রয়োজনীয় মাধ্যম হিসেবে বিশ্বে পরিগণিত হয়।

কিন্তু আমাদের দেশে চাকরি মেলায় অংশগ্রহণে একধরনের অনিহা দেখা যায় চাকরিদাতা এবং চাকরি প্রার্থীদের মাঝে।

চাকরিদাতা এবং সম্ভাব্য কর্মী উভয়ের জন্য চাকরি মেলায় অংশগ্রহণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিশাল নেটওর্য়াকের মাধ্যমে একজন আরেকজনকে সরাসরি যাচাই-বাছাই করার একটি সুযোগ পেয়ে থাকেন। চাকরি মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একজন চাকরি প্রত্যাশী নিমিষেই হাজার হাজার বায়োডাটার মধ্য থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারেন, আর যা কিনা শুথুমাত্র সম্ভব চাকরিদাতার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে।

নিয়োগকর্তাদের জন্যও চাকরি মেলা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা অবস্থানের মাধ্যমে তারা একসঙ্গে শতাধিক কোয়ালিটি সিভি এবং সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে চাকরি প্রার্থীদের যাচাইয়ের প্রথম ধাপ সম্পন্ন করতে পারেন।

প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরি মেলায় অংশগ্রহণের উপকারিতা

একসঙ্গে এক জায়গায় একাধিক চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে প্রাথমিক যাচাই করা সম্ভব এবং অনেকক্ষেত্রে নিয়োগও সহজ করা যায়, চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ডের মান ও প্রচার এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব, সহজেই প্রতিভা খুঁজে পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, গতানুগতিক বিজ্ঞাপন ব্যয় দূর করা সম্ভব এবং বিজ্ঞাপনের চেয়ে দ্রুত ট্যালেন্ট হান্ট করা যায়, কমিউনিটির সঙ্গে নেটওর্য়াক তৈরি করা সম্ভব হয়, একই মাধ্যমে সবধরনের যেমন ফুলটাইম, পার্টটাইম, ভলেনটারি পদের জন্য প্রার্থী যাচাই এবং সরাসরি নিয়োগ সম্ভব হয়।

ছাত্রছাত্রীদের চাকরি মেলায় অংশগ্রহণের উপকারিতা

নিয়োগকর্তারা কি চান তা সহজেই বোঝা যায়, নেটওয়ার্কিংয়ের বিশাল সুযোগ পাওয়া যায়, প্রতিষ্ঠান বা পুরো ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে রিসার্চ করা যায় যা পরবর্তীতে ইন্টারভিউতে কাজে লাগে, চাকরিদাতার কাছ থেকে সরাসরি ফিডব্যাক পাওয়া যায়, একসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে সিভি এবং সরাসরি ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ থাকে, মেলা পরবর্তী যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি ছাত্রছাত্রীরা চাকরি মেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে খুব একটা সচেতনতা প্রকাশ করে না। এমন কি প্রফেশনাল ইম্প্রেশনও তাদের মধ্যে দেখা যায় না। ‍

তবে কয়েকটি পয়েন্ট মেনে চললে সরাসরি চাকরি প‍াওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়

চাকরিমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করা,  কোন কোম্পানি কি কি পদের জন্য মেলায় অংশ নিয়েছে তার তালিকা করে সে অনুযায়ী সিভি-কভার লেটার বানানো ও জমা দেওয়া, আগে থেকে মেলার ফ্লোর প্ল্যান সংগ্রহ করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করে মেলার প্রথমেই সিভি জমা এবং আলোচনা সম্পন্ন করা, মেলায় এমনভাবে অংশ নিতে হবে যাতে প্রফেশনাল ইমপ্রেশন তৈরি হয় (ইন্টারভিউ ড্রেস, এনার্জি এবং উদ্যমী ভাব প্রকাশ অত্যন্ত জরুরি), অবশ্যই প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে তার সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখতে হবে, প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার শেষের দিকে অবশ্যই তার ভিজিটিং কার্ড, কোম্পানির লিফলেট সংগ্রহ করা এবং এক সপ্তাহ পর অবশ্যই একটি ফলোআপ ই-মেইল পাঠাতে হবে।

বেশিরভাগ চাকরিপ্রত্যাশী মনে করেন চাকরি মেলাগুলো অতীত, অতীতের একটি জিনিস- কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি অতীতের এমনই এক সৃষ্টি যা সবসময় বর্তমান হয়ে থাকবে। তাই চাকরিদাতা ও চাকরিপ্রত্যাশী উভয়কেই এটি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।