বৈপ্লবিক পরিবর্তনে কম্পিউটার বিজ্ঞানের তাৎপর্য

বৈপ্লবিক পরিবর্তনে কম্পিউটার বিজ্ঞানের তাৎপর্য

বৈপ্লবিক পরিবর্তনে কম্পিউটার

আমরা যেহেতু ডিজিটাল যুগে বাস করি, বেশিরভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গুলো  ডেটা এবং সফ্টওয়্যার এর নির্ভর করে। কম্পিউটার সায়েন্স  মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য উন্নয়ন, পরিবহন, ব্যাংকিং, যোগাযোগগুলি সবকিছুর উপরে প্রভাব ফেলে। এমনকি মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফ্রিজ বা দরজার তালার মতো জিনিসগুলি এখন আমাদের ওয়াই ফাই নেটওয়ার্ক এবং ব্যক্তিগত সহায়ক ডিভাইস গুলির সাথে সংযুক্ত।

প্রযুক্তি বিশ্বকে উন্নতির চরম শিখরে সংযুক্ত করেছে। কিন্তু যাদু দ্বারা এটি ঘটেনি। আমরা আইটি গ্র্যাজুয়েটদের ধারালো চিন্তা এবং পরিশ্রমে এখানে পৌঁছেছি। বর্তমানে এই প্যানডেমিকের দিনে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ছাড়া একটা দিনও অতিবাহিত করা দুর্বিষহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কিন্তু পাঠদান কার্যক্রম সচল রয়েছে, সব ধরনের কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে, বিভিন্ন ওয়েবিনার, ওয়ার্কশপে মানুষ ঘরে বসেই যুক্ত হতে পারছে। পৃথিবীতে কি ঘটছে সবকিছুর খোঁজখবর ঘরে বসেই সবাই পেয়ে যাচ্ছে। এর সবকিছুর পেছনে কম্পিউটার বিজ্ঞান ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। মানুষের কল্যাণে প্রতিনিয়ত  আইটি গ্রাজুয়েটরা পরিশ্রম করে যাচ্ছে যাতে মানুষের কাছে সবকিছু সহজলভ্য হয়। আপনিও এই গ্রাজুয়েটদের মধ্যে সংযুক্ত হয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনে সহায়তা করে মানুষের জীবন যাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।

১। ব্লকচেইন কি তাহলে ভবিষ্যৎ?

২। আমরা কীভাবে পরবর্তী বড় সাইবার-আক্রমণ বন্ধ করতে পারি?

৩। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কি মানুষের বড় বড় সমস্যা গুলো সমাধান করতে পারবে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার জন্য আপনার যে সমস্ত ধারণা এবং যে দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো অর্জন করতে পারবেন কম্পিউটার সাইন্স ডিগ্রির মাধ্যমে, আমাদের ভবিষ্যতের একটি বড় অংশ প্রযুক্তির উপরে নির্ভর করে আছে এবং এটি আমাদের বিশ্বকে প্রভাবিত করবে পাশাপাশি বিশ্বের নতুন রূপ আমরা দেখতে পাব।

বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য এবং সেরা কম্পিউটার বিজ্ঞানের কাজগুলির একটি দখল করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আপনি আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পোঁছে যেতে পারবেন। বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা বিশেষত পেশাদারদের জন্য দরকারী, যারা বড় ডেটা বা অ্যালগরিদম দিয়ে কাজ করেন। বিশদ মনোযোগ আপনার অ্যাপ্লিকেশন বা সফ্টওয়্যার প্রোগ্রামটি তৈরি করতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে। কোডের বাগযুক্ত লাইন গুলো নিয়ে বার বার ভাবুন, বাগমুক্ত করুন। শেষ পর্যন্ত আপনি যে ফলাফলটি চান তা তৈরি না করা পর্যন্ত আপনাকে অসংখ্য বার পরীক্ষা এবং ত্রুটির মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং এটার জন্য প্রচুর ধৈর্য দরকার।

চাকরির ক্ষেত্রে কম্পিউটার সায়েন্সের বিস্তৃতি সুবিশাল, সফটওয়্যার ডেভেলপার থেকে শুরু করে ডাটাবেজ এডমিনিস্ট্রেটর এছাড়াও গতানুগতিক কাজের সুযোগগুলোর পাশাপাশি আরও একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র হল কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করার জগত।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, আপনি এই দক্ষতাগুলি নিয়ে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় আইটি পেশায় প্রয়োগ করতে পারেন। প্রোগ্রামিংয়ের ভাষা সর্বত্র একরকম এবং আপনি যদি পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ভ্রমণ করতে চান তবে আইটি বিভাগ আপনাকে সর্বদা স্বাগতম জানাবে।

আসলেই কি কম্পিউটার সায়েন্সর চাকরির ক্ষেত্র সুবিশাল? যদি এক কথায় বলি তাহলে ‘নিঃসন্দেহে সুবিশাল ক্ষেত্র রয়েছে’ । কম্পিউটার সায়েন্স পরবর্তী বছর গুলিতে অন্যান্য শিল্পের তুলনায় অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সর্বোপরি বলা যায় যে, কম্পিউটার সায়েন্স বর্তমান এবং পরবর্তী প্রজন্মে অভিনব পরিবর্তন বয়ে নিয়ে আসবে, যার পিছনে মেধাবী আইটি গ্রাজুয়েটদের কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য অন্যতম ভূমিকা পালন করবে।

লেখক: 

অভিজিত রায়

ইন্সট্রাক্টর

কম্পিউটার টেকনোলজি

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

 

স্বপ্ন যখন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার

স্বপ্ন যখন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার

পৃথিবী প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগছে প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই সাথে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র সহ সব কিছু নির্ভর করে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার এর উপরে, তাই একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর ক্যারিয়ার এর ক্ষেত্র দিনে দিনে বেড়েই চলেছে | বর্তমান সময়ে পুরো বিশ্ব সহ বাংলাদেশের সকল জায়গাগুলোতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন |

আপনি যখন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, আপনি নিজেকে এমন একটি পেশায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেন যা বৈদ্যুতিক মোটর এবং বিদ্যুৎ উত্পাদন সরঞ্জাম সহ বৈদ্যুতিক ডিভাইস এবং সরঞ্জাম উত্পাদন, নকশা, পরীক্ষা এবং তদারকি জড়িত। অতএব, এই জাতীয় ধারণা এবং তত্ত্বগুলি কীভাবে বাস্তব জীবনে পরিচালনা করতে হয় ,জানতে হবে|, আপনাকে এটি খুব অনন্য এবং উপযুক্ত তৈরির  দক্ষতা অর্জন করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, এটি কোনও গোপন বিষয় নয় যে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সমাজের অন্য সকল শিক্ষার্থীদের থেকে একটু বেশি দক্ষতা অর্জন করতে হয় |

সুতরাং একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কেরিয়ার গড়ে তুলতে আপনার কী দরকার আছে তা জানার জন্য নিচের বিষয়গুলো পড়তে হবে |

বাংলাদেশে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র সমূহ:

সর্বপ্রথম ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর প্রয়োজন হয় ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার উৎপাদনের কোম্পানিগুলোতে | যেগুলোকে আমরা ইলেকট্রিক্যালের জেনারেশন কোম্পানি বলে থাকি | এছাড়াও যারা বিদ্যুৎ পরিবহন করে এ সকল কোম্পানিতে ইলেকটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন, যেগুলোকে আমরা ডিসট্রিবিউশন কোম্পানি বলে থাকি | তা ছাড়াও যারা বিদ্যুৎ বিতরণ করেন ( গ্রাহক পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছে দেন ) সে সকল জায়গাগুলোতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন, যাদেরকে আমরা ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী বলি |

জেনারেশন কোম্পানি গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রয়েছে তাপবিদ্যুৎ, কেন্দ্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র,বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ | ট্রান্সমিশন কোম্পানি গুলোর মধ্যে রয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ |  ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী গুলোর মধ্যে রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ, ডেসকো ডেসা নেস্কো | এছাড়াও বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ,বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটি, কমিউনিকেশন সিস্টেম এ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর প্রয়োজন হয় |

 

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত?

ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যারিয়ার গড়তে সচেষ্ট যে কারও জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান অপরিহার্য। আপনার সম্পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর জন্য, আপনাকে শক্তিশালী দক্ষতার সাথে আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি আপনার উদ্দেশ্য গুলি পূরণ করতে পারে।

 

সৃজনশীল সমস্যার সমাধান

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা নিয়মিত জটিল চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করে এবং উদ্ভাবক সমাধানগুলি প্রস্তুত করেন। সেরা ফলাফল অর্জনের জন্য, এই বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তির পরিবর্তনগুলি বজায় রাখতে এবং সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন পদ্ধতির সাথে প্রস্তুত হওয়া জরুরী। প্রতিটি প্রকল্পের সাথে একজন ইঞ্জিনিয়ার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে ।

 যোগাযোগ

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা উভয় লিখিত এবং মৌখিক যোগাযোগের দক্ষতার মাধ্যমে একটি সংস্থার মধ্যে তাদের প্রভাব সর্বাধিকতর করতে পারে। তাদের বিশেষজ্ঞ দক্ষতা দিয়ে অ-প্রযুক্তিগত শ্রোতাদের কাছে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হবেন।

নেতৃত্ব

ইঞ্জিনিয়াররা তাদের বহুমুখী দলগুলির সাথে কার্যকরভাবে সহযোগিতা করে তাদের প্রকল্পগুলি সফল করে তোলে। কার্যকরভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে অবশ্যই প্রতিটি প্রকল্পের চাহিদা গণনা করতে, ব্যবহারের বিষয়ে কৌশলগত পছন্দ করতে এবং প্রতিটি পর্বের অপারেশন অনুকূল করতে সক্ষম হতে হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং নেতারা বুঝতে পারেন যে কীভাবে তাদের কাজটি তাদের সংস্থার বৃহত্তর মিশনে ফিট করে। পরিবর্তে, তারা অন্যান্য পেশাদারদের তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং অর্জনে গাইড করতে পারে।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কী দক্ষতা থাকা উচিত?

সমস্যাগুলি সমাধান করতে এবং জটিল প্রকল্পগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইলেকট্রিক্যাল প্রকৌশলীরা বিজ্ঞান এবং গণিতের একটি সম্পূর্ণ জ্ঞান আঁকেন।ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা নিম্নলিখিত:

  • সার্কিট ডিজাইন
  • সিস্টেম তত্ত্ব এবং বিশ্লেষণ প্রয়োগ করন
  • বৈদ্যুতিক স্কিম্যাটিক্স করন
  • তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ
  • কর্মক্ষম পরিকল্পনা প্রস্তুত
  • বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ
  • সরাসরি নির্মাণ কার্যক্রম এবং সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কী কী সরঞ্জাম ব্যবহার করেন?

ইলেকট্রিক্যাল প্রকৌশলীরা সংযোগ তৈরি করতে, ডায়াগনস্টিক চালাতে এবং সূক্ষ্ম সমন্বয় করতে তাদের সরঞ্জামগুলিতে নির্ভর করে। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা তাদের দায়িত্ব এবং কাজের পরিবেশের উপর নির্ভর করে কাটার, প্লেয়ার এবং ট্যুইজার এবং অন্যান্য আইটেম গুলির বিবিধ ভাণ্ডার রাখতে পারেন। যাইহোক, এগুলি কয়েকটি মূল সরঞ্জাম যা বৈদ্যুতিক সিস্টেমের বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ব্যবহার করেন:

  • ফ্রিকোয়েন্সি ক্যালিব্রেটার এবং সিমুলেটর
  • অসিলোস্কোপ
  • সিগন্যাল জেনারেটর
  • ভোল্টেজ মিটার
  • অ্যামিটার
  • মাল্টিমিটার

একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কে কি কি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয় |

কম্পিউটার সফ্টওয়্যার, বৈদ্যুতিন সিস্টেম তৈরি এবং অনুকূলকরণে ইঞ্জিনিয়ারদের সহায়তা করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফ্টওয়্যার গুলির মধ্যে রয়েছে:

  • সার্কিট ডায়াগ্রাম এবং বৈদ্যুতিক স্কিম্যাটিক্সের জন্য সিমুলেটর সফ্টওয়্যার  |
  • বিশ্লেষণ এবং ডিজাইন পরীক্ষার জন্য পাওয়ার সিস্টেম এবং সার্কিট সিমুলেটর সফ্টওয়্যার  |
  • কাজ, শ্রম এবং ব্যয় ট্র্যাক করার জন্য প্রকল্প পরিচালনার সফ্টওয়্যার |
  • ডিফারেনশিয়াল সমীকরণ, লিনিয়ার বীজগণিত এবং কার্ভ ফিটিং সহ অপারেশনগুলির জন্য কম্পিউটিং সফ্টওয়্যার |

পরিশেষে বলতে চাই উপরোক্ত জ্ঞান এবং দক্ষতা গুলো অর্জন করে একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশ তথা সমাজের উপকারে আসতে পারলে প্রত্যেক ইঞ্জিনিয়ারের জীবন সফল হবে বলে আমি মনে করি |

 

 

লিখেছেন

মোঃ শফিকুল ইসলাম মিলন

ইন্সট্রাক্টর

ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্ট

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট

Medical Textile-The Defense Guard During COVID-19

Medical Textile-The Defense Guard During COVID-19

Introduction:

Medical textiles are also known as Healthcare Textiles. Medical Textiles is one of the most rapidly expanding sectors in the technical textile market. Advanced medical textiles are significantly developing area because of their major expansion in such fields like wound healing and controlled release, bandaging and pressure garments, implantable devices as well as medical devices, and development of new intelligent textile products.

The consumption of Medical Textiles worldwide was 1.5 million tons in 2000 and is growing at an annual rate of 4.6%. The Indian market size of medical textiles was estimated to be INR 14.8 billion in 2003-04 and is expected to grow to INR 23.3 billion by 2007-08. Market is expected to grow by 8% p.a.

Impact of Medical Textile during Corona:

Medical textile are act nowadays as the defense guard during COVID-19 around the world.  have long been used in protective coverings, including gowns, coveralls, caps, and face coverings. In recent months, there has been much interest and activity from the healthcare industry, broader workforce, and general public regarding the use of protective coverings to reduce the risk of infection by the novel coronavirus (SARS-Cova-2). Consequently, there has been a sharp increase in demand for these products.

PPE has become a household term, but regulatory complexities and associated performance requirements are not commonly understood.  OSHA defines PPE as “equipment worn to minimize exposure to hazards that cause serious workplace injuries and illnesses. Especially within the context of disease transmission, it is important to note that PPE is designed to protect the wearer, not necessarily others who may come into close proximity to the wearer.

In addition to pore size, the number of available pores can be affected by a number of fabric, yarn and fiber characteristics. In general, fabric modifications that increase the number of pores, while making them smaller should improve filtration performance. For instance, simply by increasing the thread count of a fabric, the spaces between yarns — fabric interstices — will be increased in number while made smaller in size. This should improve filtration efficiency. However, breathability may be negatively impacted as seen in the study above, where an effective increase in fabric interstices is achieved by doubling the fabric layers.

The Medical Chart:

The Medical Textile Equipment’s used in situation of COVID-19:

Facemasks: Face masks are made with non-woven fabric, which has better bacteria filtration and air permeability while remaining less slippery than woven cloth.

PPE kit for Covid19: Personal Protective Equipment’s (PPEs) are protective gears designed to safeguard the health of workers by minimizing the exposure to a biological agent.

Gowns:  Gowns should cover the wearer’s back even when they bend over or sit. It considered as a very good medical textile equipment during this pandemic situation.

Coveralls: Coveralls can be worn in place of gowns. They provide better protection, but they also are more uncomfortable to most healthcare workers thanks to the added insulation.

Gloves: Nonsterile patient examination gloves can be used to treat coronavirus patients. These can include nitrile, natural, rubber, poly chloroprene, and vinyl gloves. Double gloving and extended length gloves are not considered necessary.

Eye protection:  This can be a face shield or goggles. Reusable goggles and shields should be cleaned and disinfected after every use, and disposable types should be thrown out after every use. This should be removed before leaving the patient care area.

 

Conclusion: Treatments and Health Monitoring provides comprehensive coverage on smart textiles, the emerging and important materials that are finding applications in the fields of medicine and healthcare.

References:

https://textilelearner.blogspot.com/2012/02/introduction-of-medical-textiles.html

https://www.textileworld.com/textile-world/features/2020/05/textiles-the-coronavirus-sars-cov-2/

https://textilevaluechain.in/2020/04/22/covid19-nonwovens-in-medical-textiles/

https://www.fashionatingworld.com/textile

https://www.technicaltextile.net/news/standard-textile-increases-production-of-ppe-for-covid-19-266184.html

https://www.elsevier.com/books/advances-in-smart-medical-textiles/langenhove/978-1-78242-379-9

http://textilefocus.com/covid-19-textiles-technology/

https://www.weforum.org/agenda/2020/08/how-the-textile-industry-can-help-countries-recover-from-covid-19/

https://www.magzter.com/article/Business/Textile-Value-Chain/Covid19-Nonwovens-In-Medical-Textiles

 

Writer: K. M. Fahim Istiaque

Instructor, Textile Engineering

Daffodil Polytechnic Institute

Bangladesh Skill Development Institute

 

আধুনিক যুগে আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন এর গুরুত্ব

– আধুনিক যুগে আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন এর গুরুত্ব –

 

আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাই

আধুনিকতার উৎকর্ষ সাধনের সাথে সাথে আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইনে মানুষের কর্মক্ষেত্রও বেড়েছে।
ক্যারিয়ারে সফলতা পেতে অনেকেই   এ কর্মক্ষেত্রেকে বেছে নিয়ে নিজের চিন্তাধারার বিকাশ ঘটাচ্ছেন এন্ড (and)
আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং হচ্ছে তেমনই একটি কর্মক্ষেত্র।

=>  Architecture and Interior Design,আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে লাইট,আসবাবপত্র,গৃহসজ্জা সামগ্রীর যথাযথ স্থানে ব্যবহারের মাধ্যমে বাড়ি, অফিস বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে আরো আকর্ষণীয় ও আরামদায়কভাবে উপস্থাপন করা। যিনি দক্ষতার সাথে উক্ত কাজগুলো করে থাকেন তিনিই হচ্ছেন একজন আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইনার।

মানুষ নিজের সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে আবাসস্থল ও অফিস-আদালত,হাসপাতাল, বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব কিছুরই সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চায়। আবাসস্থলের দরজা, জানালা, মেঝে, আসবাবপত্র, পর্দাটা কোমন হবে সে হিসাবটাও করে দেন একজন আর্কিটেক্ট ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। মোটকথায় বলা চলে স্থাপনার ভিতরের ও বাহিরের দেওয়ালের রঙ,সঠিক আসবাবপত্রের ডিজাইন ও রঙে থেকে শুরু করে স্বল্প জায়গাকে কীভাবে বেশী করে ব্যবহার করা যায়, সেসকল যাবতীয় ডিজাইন ও সঠিক বাস্তবায়ন করাটাই একজন আর্কিটেক্ট ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাজ।

=>আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন(Architecture and Interior Design) থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রঃ নিজেদেরকে এ ক্ষেত্রটির সাথে যুক্ত করে বর্তমান সময়ের তরুণ-তরূণীরা গড়ে তুলছে একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার।

সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার – আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাই

রিয়েল এস্টেট
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম
ইন্টেরিয়র ডিজাইন ফার্ম এ বর্তমানে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের ব্যাপক চাহিদা।

এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা,  যেমন-
গণপূর্ত
স্থাপত্য অধিদপ্তর
রাজউক
কেডিএ
সিডিএ
আরডিএ
বিডিএ
এলজিইডি

সিটি করপোরেশন সহ যেকোন নির্মাণ মূখী চাকুরীর ক্ষেত্রে আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন বিভাগ থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে যেখানে রয়েছে কর্মনির্ভর সম্মানী।

তাছাড়া বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে একজন আর্কিটেক্ট ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা।সর্বোপরি বলা যায়, আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন বহির্বিশ্ব ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

লিমা আক্তার
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর
আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন টেকনোলজি
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

ইতিহাস পিছু টানে

ইতিহাস পিছু টানে

অতীব পরিতাপের বিষয় আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস বা অন্যান্য শিল্প মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের দাসত্বের স্বরূপ ও পরিধি নিয়ে কোন উল্লেখযোগ্য কাজ, গবেষণা হয়নি যদিও এই জনপদে দাসপ্রথার প্রচলন ছিল এবং আমাদের সমাজ ও অর্থনীতিতে তাদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। ১৯ শতকের ঢাকা শহরে দাসত্বের প্রকৃতি, পরিমাণ ও বিস্তৃতি শিল্পীর নিখুঁত তুলির আঁচড়ে বিশদভাবে অঙ্কিত হয়েছে জেমস টেইলরের ১৮৪০ সালে প্রকাশিত ‘A Sketch of the Topgraphy and Statistics of Dacca’ গবেষণাধর্মী বইটিতে। বাংলাদেশ আর্কাইভের নথির রেকর্ড অনুযায়ী জেমস টেইলর ছিলেন ঢাকাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে একজন শল্য চিকিৎসক। উপমহাদেশে ইংরেজ আগমনের বহু আগে থেকেই এখানে দাসত্ব প্রচলিত ছিল। আমাদের পূর্বপুরুষের ইতিহাসের পাতায় দাসত্বের ছাপ লেগে আছে কারণ ঢাকা ছিল একসময়ের দাস ব্যবসার কেন্দ্র। তখন আরব, পূর্ব আফ্রিকা, পারস্য উপসাগর, মৌরিতাস, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে দাস ব্যবসার সম্পর্ক ছিল। এরপর ইংরেজরা ক্ষমতায় এসে দাস ব্যবসাকে বৈধতা দেয় এবং নিজেরাও দাস ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়। যেমন গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ড দাসপ্রথা বিধি-মোতাবেক বাতিল করার বিরোধিতা করে বলেন, “দাস ব্যবস্থায় মালিক এবং দাস উভয় পক্ষেরই সুবিধা আছে।” এমনকি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং আন্দোলন সংগ্রামের পর দাসপ্রথা বিলোপ আইন ১৮৪৩ “Act-V” পাশের শতবছর পরেও ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপনিবেশে প্রায় ৫লাখ ক্রীতদাস বিদ্যমান ছিল। শাসকশ্রেণী আফ্রিকা থেকে কাফ্রি, হাবশি দাস এনেছিল এই বাংলায় যাদের বেশিরভাগ ছিল যুদ্ধবন্দী, অপহৃত শিশু, আদিবাসী বা দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। দরিদ্র মানুষ অনেক সময় পেটে ভাতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার তাগিদে নিজেকে বেচে দিয়েছিল।

এই বাংলায় সাধারণত দুই ধরণের দাস ছিল যথা কৃষিনির্ভর দাস যারা মালিকের জমিতে কৃষি কাজের সাথে-সাথে পশুপালনের কাজ করত। আরেক শ্রেণির দাস জমিদারের পাহারাদার। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি স্টেট ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক ইন্দ্রাণী চ্যাটার্জি তার Gender, Slavery and Law in Colonial India বইতে লিখেছেন, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার কলোনিতে দক্ষ অদক্ষ দুই শ্রেণির দাস ছিল। দাসদের কাজ কী সেটা নির্ভর করত মালিকের সম্পদ, পেশা, সামাজিক মর্যাদার উপর। দাসদের বয়স, লিঙ্গ এবং দক্ষতার উপরও নির্ভর করছে তাদের কাজের ধরণ কেমন হবে। নারীদাস সাধারণত মালিকের বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ, ফসল মাড়াই করা, মালিকের বাড়ির শিশুদের দেখভাল করত। তারা অনেক ক্ষেত্রে মালিকের রক্ষিতা হয়ে থাকত, পতিতালয়ে ঠাই হয়েছে অনেকের। খোজা করা পুরুষ দাস এবং রক্ষিতা তৎকালীন সামন্ত রাজা জমিদারদের মনোরঞ্জন করে, লাঠিয়াল বাহিনীতে কাজ করে সমাজে বিভিন্ন ভূমিকা রাখত। কিছু দাসদের আবার নিজস্ব দাস ছিল। দাসদের সংখ্যার পরিমাণ, তাদের দক্ষতা তৎকালীন মালিকদের সামাজিক মর্যাদার প্রতীক এবং মালিকের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত ছিল।

১৮৭০ সাল থেকে ব্রিটেনে দাসপ্রথা

১৮৭০ সাল থেকে ব্রিটেনে দাসপ্রথা বিলোপের জোরালো আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার জোরালে ঢেউয়ের আঘাত লাগে ভারতের মাটিতেও। আন্দোলনের মুখে ব্রিটেন দাস ব্যবসা থেকে সরে আসলেও তারা দাসপ্রথা ও ব্যবসা বন্ধ না করে বরং স্থানীয়দের দিয়ে পরোক্ষ দাসপ্রথা চালিয়ে যায়। ব্রিটিশ উপনিবেশিক অফিসারদের স্বীকারোক্তি থেকেই জানা যায় কেউ যদি অত্যাচার না করে দাসদের স্বাধীনতা ও অধিকার দিয়ে দাস রাখতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না। উপনিবেশের শাসক লর্ড কর্নওয়ালিস পর্তুগিজ বা ফ্রান্সের সেটেলারদের জন্য দাসপ্রথা বিলোপ করলেন না, এটার পিছনেও গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। বহির্বিশ্ব এবং স্থানীয়দের দেখানো যে ব্রিটেন দাসপ্রথার সমর্থক নয়, তারা ভারতে গৃহকর্মে দাস ব্যবহার করে না। ব্রিটিশ সরকার রায় দেয় যে দাসদের সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করে যে কেউ দাস রাখতে পারবে। সেক্ষেত্রে দাস চাইলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং রয়েল হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটিশ কলোনির ইতিহাস বিশ্লেষক মরগান ফিন বলছেন যে, দাসপ্রথা বিলুপ্ত না করে দাসপ্রথা থেকে দূরে সরে গিয়ে ব্রিটেন দাসপ্রথার নির্মমতার নৈতিক দায় এড়াতে পারে না। কারণ দাসপ্রথা বিলুপ্ত না করে দূরে থেকেও ব্রিটেন কার্যত প্রকারান্তরে স্থানীয় দাস মালিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছে।

ডাক্তার জেমস টেইলরের মতে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোর তুলনায় ঢাকা এবং আশেপাশের জেলাগুলোতে দাসত্ব বিস্তৃত পরিসরে বিদ্যমান ছিল কারণ এই অঞ্চলের খরা, বন্যা, নদী-ভাঙনের মত নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত মানুষ অসহায় ও গৃহহীন হয়ে পড়ত প্রতিবছর। সেই সঙ্গে হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে একসঙ্গে অনেক মানুষ হারিয়ে ফেলত তাদের জীবিকার শেষ সম্বল, বসতভিটা। ফলে জীবনের তাগিদে তাদেরকে বেছে নিতে হতো স্বেচ্ছা শ্রম যাতে হয়ত জুটত অন্নের সংস্থান। একসময়ের স্বাধীন জীবিকার অধিকারী মানুষগুলো প্রকৃতির নিষ্ঠুর খেলায় এক নিমিষে তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে অনিশ্চয়তার কাছে নিজেদের সঁপে দিয়ে পাড়ি জমালো শহরে এবং স্থান হলো রেললাইনের বস্তিতে এবং এই ছিন্নমূল মানুষের নতুন নাম হলো চাকর। তখনকার দিনে হিন্দু পুরুষ চাকরের নাম ছিল ভাণ্ডারী বা ক্রীতদাস আর মুসলমান পুরুষ চাকরের পরিচয় গোলাম বা নফর। নারীদের ক্ষেত্রে হিন্দু মুসলিম ভেদে দাসী ও বান্দি নামে ডাকা হতো। শহরের হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গৃহকর্মের জন্য দাসীবাঁদী ছিল। মুসলিম পরিবারে তারা গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি রান্নার কাজে সাহায্য করত কিন্তু হিন্দু বাড়িতে শুধু গৃহস্থালি কাজই তারা করতে পারতো।

Map of Dhaka (1840). Source: ‘A Sketch of the Topgraphy and Statistics of Dacca’ by James Taylor

পুরুষ দাসদের নিয়োগ

পুরুষ দাসদের নিয়োগ করা হতো কৃষি এবং চাষাবাদের যাবতীয় কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের কাজে। লাঙল দিয়ে জমি চাষ, ক্ষেত নিড়ানো, আগাছা পরিষ্কার করা, জমি ঠিক করা, মাছ ধরা, কাঠ কাটা, গবাদিপশুর জন্য ঘাসবিচালি কাটা, পশু লালনপালন করা, ফসল মাড়াই করে গোলা ভর্তি করা ছিল তাদের কাজ। এছাড়াও এঁটো থালাবাসন মাজা, নদী থেকে খাবার পানি আনা, মনিবের জন্য হুক্কা এবং পান সাজানো তাদের অন্যতম কাজ। ভাণ্ডারী বা গোলামের মালিক আশেপাশের ছয় সাতটা দাসীবাঁদীদের সাথে তাদের বিয়ে দিতো যাতে তাদেরকে রক্ষিতা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বিয়ে হলেও দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হতো মালিকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। বিয়ের খরচাপাতি দাসের মালিকই বহন করত কিন্তু এই সাজানো বিয়েতে নারীদের কোন লাভ ছিল না বরং নারীদের যথাসম্বল জমানো টাকা খরচ করে বিয়ের ব্যয় নির্বাহ করা হতো এবং কিছু অর্থের মালিক হয়ে যেত দাস পুরুষটি।

একজন পুরুষ দাসের সর্বোচ্চ বাজার দর ছিল বর্তমানের হিসেবে ১৫০ রুপি এবং নারী দাসীর দাম ১০০ রুপি। নারী দাসীদের কেনা হতো সাধারণত ছোট বয়সে এবং তাদের নিয়োগ দেয়া হতো মনিবের কন্যা, স্ত্রীর সেবা করার জন্য। আমেরিকার ক্রীতদাসদের থেকে ঢাকার ক্রীতদাসের ভাগ্য মনে হয় একটু প্রসন্ন। দাসদের সাথে মোটামুটি ভালো ব্যবহার করত মনিব যদিও সেটা নির্ভর করত মনিবের মেজাজ মর্জির উপর। নারী দাসীদের কাজ খুব বেশি শ্রমসাধ্য ছিল না বরং শারীরিক পরিশ্রমের কাজের জন্য আলাদা দিন মজুর ভাড়া নিত মনিব, মৌখিক বা শারীরিক আঘাত বা নির্যাতন কমবেশি ছিল। তবুও এখানের ক্রীতদাসরা যথেষ্ট স্বাধীনতা, সামাজিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করতেন। তারাও মনিবের পরিবারের সাথে খাবার খেতে পারত এমনকি পান তামাকের মত তৎকালীন বিলাস দ্রব্যেও তাদের অধিকার ছিল। অনেক ক্রীতদাসের জন্ম হয়েছিল মনিবের বাড়িতে থেকেই অর্থাৎ জন্মসূত্রেই তারা ছিল দাস কিন্তু তারা মনিবের বাড়িতে তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে পড়ালেখা করতে পারতো।

দাস হিসেবে মানুষ কেনাবেচার প্রচলন আধুনিক সময়ে আর নাই। কিন্তু অতীতে ছিল, এই তো কিছুদিন আগেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মানুষের জীবন দাস হিসেবে হাতবদল ঘটত। পূর্বে জমিজমা সম্পত্তির সাথে দাস বিক্রিও চলত, ছিল জমি এবং দাসের জন্য আলাদা দলিল। বর্তমান অর্থের হিসেবে তখন একজন দাসের সর্বোচ্চ বিনিময় মূল্য ছিল মাত্র ১৫০ রুপির কাছাকাছি আর নারী দাসীর মূল্য মাত্র ১০০ রুপি। ভাগ্য ভালো হলে নারীদের স্থান হতো মনিবের অন্দরমহলে কিন্তু এমন সৌভাগ্য তো সবার ভাগ্যে জোটে না। সুতরাং বেশিরভাগ নারীদের স্থান হতো শহরের বেশ্যালয়ে পুরুষদের মনোরঞ্জনের জন্য। এই অঞ্চলের দাসদের মানবিক কিছু সুযোগ সুবিধা ছিল যেমন মনিব শারীরিক প্রহার করলে সরকারের কাছে সুরক্ষার জন্য আবেদন করতে পারতো। বিচারকের কাছে নালিশ দিয়ে যারা মুক্ত হয়ে যেতো তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে লাগল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যেমন ময়মনসিংহের কয়েকটি গ্রামে জড়ো হয়ে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বাস করতে থাকে কিছু সদ্য মুক্ত দাস। মুক্ত দাসরাই পরে রায়ত, জমিদার, সামন্ত রাজাদের কেরানি হয়, খাজনা সংগ্রহ করে, পাইক পেয়াদায় পরিণত হয় এবং তারা সমাজে কায়স্থ হিসেবে পরিচিতি পায়।

১৮৪৩ সালের দাসপ্রথা

১৮৪৩ সালের দাসপ্রথা সংশোধন আইন পাশ হলেও বাংলা থেকে পরিপূর্ণভাবে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হতে শতবছর সময় লেগেছে। ১৮৪৩ সালের “Act-V” আইনটি দাসত্ব বিলোপ না করলেও দাস এবং মুক্ত মানুষের মানুষের মধ্যে ব্যবধান দূর করতে সাহায্য করেছিল। আফ্রিকা থেকে নতুন দাস আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও প্রায় ২০শতকের শুরুর দিকে পর্যন্ত স্বল্প পরিসরে দাসত্বের চর্চা সমাজে বিদ্যমান ছিল। হয়ত মাত্র কয়েক প্রজন্ম আগেও আমাদের পূর্ব প্রজন্ম বাধ্য-শ্রমে নিযুক্ত ছিল, কিন্তু আমাদের পাঠ্যপুস্তকে, ইতিহাসের পাতায়, সাহিত্য সংস্কৃতিতে এমনকি অন্য কোন শিল্প মাধ্যমে সেই অমানবিক নিষ্ঠুরতার কোন উল্লেখ নাই। বাংলার ক্রীতদাসের অতীত কালো অধ্যায়ের সঠিক ইতিহাস পঠন পাঠন এখন সময়ের দাবী, কারণ আমেরিকা, ইউরোপে কিছুদিন আগের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে একদল মানুষ ভেঙে ফেলেছে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলে দাস ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড ক্লস্টনের স্ট্যাচু। ব্রিস্টলের মেয়র এই ঘটনাকে ‘দুঃসাহসী’ হিসেবে আখ্যা দেন। আমাদের মুক্ত আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা সন্তানদের স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তকে বাংলার দাস ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করে তাদেরকে জানানো উচিৎ কেমন ছিল পূর্ব-প্রজন্মের সামাজিক অবস্থা ও ব্যবস্থা। কেউ কেউ বলতে পারে এই বাংলায় দাসপ্রথা সামান্য মাত্রায় বিরাজিত ছিল, তারা সুবিধা বঞ্চিত, তারা দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিজেদের বেচতে বাধ্য হয়েছিল, তবুও তাদের সন্তানরাও আইনি সুরক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস যাই হোক তার সঠিক এবং নির্মোহ পাঠ যদি আমাদের সন্তানদের নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে জন্ম নেবে শিকড় বিচ্ছিন্ন প্রজন্ম।

 

লেখক: 

মোঃ আব্দুল্লা-আল-মামুন রুপম

ইন্সট্রাকটর, ইলেকট্রিক্যাল

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতি

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ [পর্ব ২]

চাকুরীর জন্য সিভি মেইল করার খুটিনাটি

 

চাকুরীদাতা তার চাকুরীর বিজ্ঞাপনে প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ্য করার পর সাধারনত একটি ইমেইল এড্রেস দিয়ে থাকেন যাতে আগ্রহী প্রাথীগন উক্ত ইমেইল এড্রেস এর মাধ্যমে চাকুরীর জন্য আবেদন করতে পারেন। ইমেইলে চাকুরীর জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয়ে আপনার জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী। চলুন এই পর্বে জেনে আসি সেইসব মৌলিক বিষয়গুলো ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতি।

১) “To” তে চাকুরীদাতার ইমেইলঃ
ইমেইলের “To” এর ঘরে চাকুরীর বিজ্ঞাপনে দেয়া ইমেইল এড্রেসটি লিখতে হবে। “To” তে যার মেইল এড্রেসটি দেয়া হয় তিনি হচ্ছেন প্রকৃত প্রাপক বা যাকে মেইলটা লেখা হয়েছে।

এছাড়া আরো দুটি অপশন রয়েছে, “Cc” এবং “Bcc”।
Cc এর পূর্ণরূপ Carbon Copy। প্রকৃত প্রাপক ছাড়া যাদের জানা দরকার যে মেইলটি পাঠানো হয়েছে অথবা মেইলের বিষয়বস্তুর সাথে যারা সম্পর্কিত এমন ব্যাক্তিদের ইমেইল এড্রেসগুলো থাকবে “Cc” তে। উল্লেখ্য যে “To” এবং “Cc” তে যাদের ইমেইল এড্রেস থাকবে মেইলটি পাওয়ার পর তারা প্রত্যেকে “To” তে থাকা ইমেইল এড্রেসগুলো দেখতে পাবে পাশাপাশি “Cc” তে থাকা ইমেইল এড্রেসগুলোও দেখতে পাবে।

এবার আসি “Bcc” তে। Bcc এর পূর্ণরূপ Blind Carbon Copy। “Bcc” তে যাদের ইমেইল এড্রেস রাখা হয় তারা প্রত্যেকেই মেইলটি পান তবে “Bcc” তে তার পাশাপাশি অন্য যাদের ইমেল এড্রেস রাখা হয়েছে সেটা তাদের কাছে গোপন থাকে।

“Cc” এবং “Bcc” সাধারনত কর্পোরেট কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সিভি মেইল করার জন্য সাধারনত আমরা শুধুমাত্র “To” অপশনই ব্যবহার করি। 

২) সাবজেক্টঃ
অনেকে ইমেইলের সাবজেক্ট না লিখেই ইমেইলটি পাঠিয়ে দেন। এটি অত্যন্ত বড় একটি ভুল। ইমেইলের বিষয়বস্তু অল্প কথায় ইমেইল সাবজেক্ট এ লিখতে হবে যাতে করে প্রাপক খুব সহজেই পুরো মেইলটি পড়ার আগেই মেইল এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারনা পান।

উদাহরনঃ
ধরুন আপনি কোন চাকুরীর বিজ্ঞাপনে দেখলেন যে কোন কোম্পানি প্রোডাকশন অফিসার পদে কিছু সংখ্যক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিবে। সেক্ষেত্রে উক্ত চাকুরীর আবেদন করতে ইমেইলের সাবজেক্ট এ লিখতে হবে “Applying for the post of “Production Officer”.

৩) ইমেইল বডিঃ
চাকুরীর আবেদনের ক্ষেত্রে ইমেইলের বডিতে কভার লেটার লিখতে হয়। চাকুরীর বিজ্ঞাপনে উল্লেখ্যিত পদে নিয়োগের জন্য আবেদনপত্রকেই কভার লেটার বলা হয়। একটি কভার লেটারে মূলত তিনটি অংশ থাকে:ক) Introduction (প্রথম অংশ)
‘Dear Sir/Mam’ সম্বোধন ব্যবহার না করে ‘Dear Concern/Hiring Official’ দিয়ে কভার লেটার শুরু করুন। এই অংশে অল্প কথায় কোন পদের জন্য আবেদন করছেন? নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে কীভাবে জানলেন? উল্লেখ্যিত পদে কাজ করার জন্য আপনি কেন আগ্রহী? এই তিনটি বিষয় লিখুন।

খ) Body (মূল অংশ)
চাকুরীর বিজ্ঞাপনে উল্লেখ্যিত পদের জন্য আপনি কী কারণে যোগ্য, যে পদের জন্য আপনি আবেদন করছেন, তার সাথে আপনার যোগ্যতা কীভাবে সম্পর্কিত এই অংশে তা অল্প ও স্পষ্ট ভাষায় ব্যাখ্যা করুন।

গ) Closing (শেষ অংশ)
সিভির সাথে সংযুক্ত আপনার সিভিটি দেখার অনুরোধ করে ইন্টারভিউর জন্য আপনার আগ্রহ এবং নিয়োগকারী কীভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন, তা উল্লেখ করুন শেষ অংশে।

ইন্টারনেটে প্রচুর কভার লেটার স্যাম্পল পাওয়া যায়। এমন কিছু ওয়েবসাইট হলো রেজ্যুমে জিনিয়াস (resumegenius.com), হাডসন (hudson.com), জবস্ক্যান (jobscan.com) ইত্যাদি।

৪) সিগনেচারঃ
ফ্রেশাররা ইমেইলের শেষে নিজের নাম, সর্বশেষ ডিগ্রি, ইউনিভার্সিটি/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, মোবাইল নাম্বার এবং ইমেল ইত্যাদি উল্লেখ্য করুন এই অংশে। যারা চাকুরীজীবি তারা নিজের নাম, বর্তমান পদের নাম, বর্তমান কোম্পানির নাম, মোবাইল নাম্বার এবং ইমেল ইত্যাদি উল্লেখ্য করুন

৫) এটাচমেন্টঃ
সর্বশেষে এটাচমেন্ট বাটনে ক্লিক করে আপনার সিভির সফট কপি মেইলে সংযুক্ত করুন। সিভি অবশ্যই পিডিএফ ফর্মেটে সংযুক্ত করবেন। বর্তমানে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডেই পিডিএফ বানানো যায় তারপরেও যদি সম্ভব না হয় অনলাইনে ফাইল কনভার্ট করা সম্ভব। সিভির ফাইলের নাম যাতে নিজের পূর্ন নাম হয় সেটা লক্ষ্য রাখুন।
যেকোন চাকুরীর আবেদন নিজের মেইল থেকে করুন। যে মেইল থেকে আবেদন করবেন তার গুগুল একাউন্ট প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আপডেট করুন। গুগুল একাউন্টে আপনার পূর্ন নাম এবং একটি ফরমাল প্রোফাইল পিকচার সংযুক্ত করুন। সর্বশেষে যা বলতে হয় তা হল বানানের ক্ষেত্রে অবশ্যই মনোযোগী এবং সতর্ক থাকবেন।

আজ এই পর্যন্তই।
আমন্ত্রন থাকল পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য। আগামী পর্বে থাকছে চাকুরীর ইন্টারভিউতে কেমন হওয়া উচিত আপনার পোশাক

 লেখক: মোঃ জায়েদুল হক, ইন্সট্রাকটর,

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

কারিগরি শিক্ষা আত্ননির্ভশীলতার প্রস্তুতি

কারিগরি শিক্ষা আত্ননির্ভশীলতার প্রস্তুতি

কারিগরি শিক্ষা

একটি দেশের উন্নয়নের জন্য দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। পৃথিবীর যে দেশে যত বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী আছে সেই দেশ তত বেশি উন্নত। মানব সম্পদ যদি ব্যবহারযোগ্য না হয় তবে তার কোন মূল্য নেই। কোন রাষ্ট্রের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ বা খনিজ সম্পদ থাকলেই, সেই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত হয়না, যদি না ঐ রাষ্ট্র উপযুক্ত পরিকল্পনায় ঐ সম্পদকে ব্যবহার করতে পারে। একইভাবে রাষ্ট্রে অসংখ্য জনগোষ্ঠী থাকলেই রাষ্ট্রের উন্নতি হবে না। ঐ জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে উৎপাদনমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারলে সেই জনগোষ্ঠী রাষ্টের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।।

 

যে শিক্ষা শিক্ষার্থী তার বাস্তব জীবনে ব্যবহার করে কোন একটি নির্দিষ্ট পেশায় নিযুক্ত হতে পারে তাই কারিগরি শিক্ষা। কারিগরি শিক্ষার কয়েকটি ট্রেড রয়েছে যেমন সিভিল ,ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক্স,মেকানিক্যাল,কম্পিউটার,আকিটেকচার,পাওয়ার, ইত্যাদি ।এই ট্রেড গুলোর যেকোনো একটি ট্রেডে বাস্তবমুখী শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে আমরা আমাদের বেকারত্বকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।   সাধারন শিক্ষা অর্জন করে যেখানে চাকরি নামক সোনার হরিনের পেছনে দীঘদিন ছুটতে হয়,সেখানে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে অনেক ভালো মানের চাকরি পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয় না। সঠিকভাবে কারিগরি শিক্ষা গ্রহন করলে অনেক উন্নত মানের প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনে চাকরি পাওয়া যায়।তেমনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলো DHAKA WASA,BREB,DPDC,EPZ,BANGLADESH RAILWAY,BTRC,PWD এবং BPSC তে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সরকারি চাকরি। বিভিন্ন   কারিগরি  শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীকে বা ব্যক্তিকে পেশা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সে নিজেই অর্জিত শিক্ষার সাথে মিল রেখে স্বাধীনভাবে পেশা খুঁজে নিতে পারে। সাধারণ শিক্ষা এর বিপরীত, অর্থাৎ অর্জিত শিক্ষার সাথে কর্মের মিল থাকে না। কারিগরী শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়স সম্পর্কে কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করা হয়। সাধারণত ঝরে পড়া শিক্ষার্থী অথবা কোন কারণে শিক্ষাবঞ্চিত ব্যক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা নানাভাবে সফলতা এনে দিতে পারে। এ ধরনের শিক্ষার প্রধান শর্ত হলো ধৈর্য্য, পরিশ্রম ও অনুশীলন। দক্ষতাই উন্নয়ন-এ কথাটি কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ শিক্ষার প্রধান সাফল্য ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ। এর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থী বা ব্যক্তিকে পরবর্তী জীবনে নির্দিষ্ট কোন কারিগরি বিষয়ে দক্ষ করে তোলা, নিজ নিজ উদ্যোগে স্থানীয় ছোট ছোট শিল্পের প্রসার ঘটানো, স্বাধীনভাবে পছন্দ অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদকে প্রকৃষ্টভাবে কাজে লাগিয়ে কর্মীর হাতে পরিণত করা।

আমাদের দেশের বিপুল সম্ভাবনাময় এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার। প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এদেশের জনসম্পদই হচ্ছে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন ভাগের একভাগ হচ্ছে ১৫ এবং তদুর্ধ বয়সী কম-উপযোগী মানুষ।  দেশে বর্তমানে দারিদ্রের হার ৩০ ভাগেরও উপরে এবং প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ নতুন করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এর অধিকাংশই হয় বেকার, না হয় আধা বেকার অবস্থায় থাকে। যাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়, তারাও দক্ষতার অভাবে স্বল্প বেতন ও সুযোগ-সুবিধায় কাজ করতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের জীবনমান থাকে অনুন্নত এবং অভাব হয় নিত্যসঙ্গী। পাশাপাশি আমাদের দেশের প্রচুর লোক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিদেশে যাচ্ছেন। প্রবাস থেকে আমাদের দেশে তারা যে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করেন তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত এবং এ বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে যে সকল শ্রমজীবী মানুষ বিদেশে যান তার ২৩%  দক্ষ, বাকি ৭৭% আধা-দক্ষ বা অদক্ষ। ফলে তারা অন্যান্য দেশের কর্মজীবীদের তুলনায় অনেক কম আয় করেন এবং কম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করেন। আমরা যদি তাদেরকে দক্ষ শ্রমজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে তারা অধিক উপার্জনসহ মানসম্মত উন্নত জীবনের অধিকারী হতো এবং কয়েকগুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণে সক্ষম হত। কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় জোর দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের চাইতে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যাণ্ড, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপির হার অনেকগুণ বেশী। অথচ ১৯৭০ সালে এই দেশগুলির জিডিপি আমাদের প্রায় সমকক্ষ ছিলো।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশ উন্নতির স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করেছে কারিগরি শিক্ষার ওপর ভর করে। তাদের কৃষি, শিল্প ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি যুগোপযোগী মানসম্মত কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা। অথচ আমাদের দেশের ক্ষেত্রে চিত্রটা ভিন্ন। এখানে কারিগরি শিক্ষার প্রতি সমাজের অনেকেই এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। সামাজিকভাবে ধরে নেওয়া হয় যারা পড়াশুনায় ভালো নয় তারা টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল এডুকেশনে শিক্ষা নিতে আসে। যা আজ আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। এর ফলে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক মহল সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে। অথচ কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ করলে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারত।

কর্মমুখী ও ব্যবহারিক শিক্ষার শক্তিই হচ্ছে উন্নয়ন ও জাতি গঠনের আসল শিক্ষা। জাতীয় জীবনে অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি শিক্ষা। হাতে-কলমে শিক্ষাই হচ্ছে একটা জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। শিক্ষা যেমন ব্যক্তিজীবনকে আলোকিত এবং উন্নত করে, তেমনি জাতি দেশকে সমৃদ্ধ ও সমুন্নত করে। ব্যবহারিক শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে না। হাতে-কলমের শিক্ষার প্রভাবেই মানুষ কুসংস্কার, জড়তা ও হীনতা থেকে মুক্ত হয়ে জাতিকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে পারে। সর্বপরি,বতমানে বেচে থাকার জন্য কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই।

 

Author:

Sharmin Akter

Junior Instructor

AIDT, Daffodil Polytechnic Institute

 

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ [পর্ব ১]

কেমন হওয়া উচিত ফ্রেশার চাকুরী প্রাথীর সিভি

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ [পর্ব ১]

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ

চাকরিদাতার কাছে সিভি হচ্ছে আপনার প্রথম উপস্থাপনা। সিভি বাছাই করার সময় চাকুরীদাতা দ্রুত সময়ে তার চাহিদা অনুযায়ী সিভি বাছাই করতে চায়। অতএব আপনার সিভি এমন হওয়া উচিত যাতে এক ঝলকেই একদম বেসিক যে তথ্যগুলো প্রাথমিক বাছাইয়ে জন্য জরুরী সেগুলো চাকরিদাতার কাছে উপস্থাপিত হয়।

চাকুরীদাতার কাছে নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে উপস্থাপনের জন্য আপনার সিভিটি হতে পারে মোক্ষম অস্ত্র। চলুন এই পর্বে জেনে আসি একজন ফ্রেসার হিসেবে কোন বিষয়গুলো আপনার সিভিতে থাকা জরুরী।

১) CONTACT INFOTMATION (যোগাযোগের তথ্য)

সিভির একদম উপরের অংশে প্রার্থীর সাথে যোগাযোগের তথ্য থাকবে। আপনার নাম, চিঠি পাঠানোর ঠিকানা, ফোন নম্বর বা মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস ও পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Linkedin এর আপনার প্রোফাইল URL টি থাকবে। চাকুরীদাতার যদি আপনার সিভিটি উপযুক্ত মনে করেন তাহলে এই অংশের মোবাইল নাম্বার অথবা ইমেইল এড্রেসে পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য বিস্তারিত তথ্য সহ যোগাযোগ করবেন।

) FORMAL PHOTO (ফর্মাল ছবি)

সিভির একদম উপরের ডান দিকে আপনার ফর্মাল ছবি সংযুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে ছয় মাসের বেশি পুরোনো ছবি না দেওয়াই ভালো। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা বা হালকা নীল হলে ভালো হয়।

) CAREER OBJECTIVE (পেশাগত উদ্দেশ্য)

সিভিতে পেশাগত উদ্দেশ্য শিরোনামে অবশ্যই একটি অংশ রাখবেন। আপনি যে পদের জন্য আবেদন করতে যাচ্ছেন সেখান থেকে আপনি কী অর্জন করতে চান, আপনার উপর কতটুকু নির্ভর করা যায় প্রভৃতি বিষয় অল্প কথায় স্পষ্ট করে উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

) SPECIAL QUALITIES (বিশেষ গুণাবলী)

এই অংশে অল্প কথায় আপনার ব্যাক্তিগত কিছু গুনাবলী উল্লেখ্য করুন যা চাকুরীদাতাকে আকৃষ্ট করতে পারে। সততা, কঠোর পরিশ্রমী, নেতৃত্বের গুণাবলি, কাজের প্রতি যত্নশীল, কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন এইগুলো উদাহরন হিসেবে নেয়া যেতে পারে।

) ACADEMIC QUALIFICATION (শিক্ষাগত যোগ্যতা)

আপনার শিক্ষা সম্পর্কীত তথ্য থাকবে এই অংশে। আপনার অর্জিত সর্বোচ্চ ডিগ্রিটিকে সবার উপরে এবং তারপর ধারাবাহিকভাবে অন্যগুলো ছক আকারে উল্লেখ্য করুন। প্রতিটি অর্জিত ডিগ্রির নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, বোর্ড অথবা বিভাগের নাম, মেজর সাবজেক্ট, ফলাফল এবং ফলাফল প্রকাশের সাল অবশ্যই উল্লেখ্য করতে হবে।

) WORKING EXPERIENCE (কাজের অভিজ্ঞতা)


আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা সফরের ইতিহাস, ইন্টার্নশিপের তথ্য থাকবে এই অংশে। যদি কোন সময় পদের সাথে সংশ্লিষ্ট এমন কোন অ্যাসাইনমেন্ট করে থাকেন, সেটা উল্লেখ করতে পারেন। আবেদনকৃত পদের সঙ্গে সম্পর্কৃত নয় এমন কোনো অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভালো ।

৭) TRAINING & WORKSHOP (প্রশিক্ষন এবং কর্মশালা)


যে পদের জন্য আবেদন করছেন, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো ট্রেইনিং, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদিতে অংশগ্রহনের তথ্য থাকবে এই অংশে। ট্রেইনিং, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির নাম, পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, সময়সীমা ও সালের নাম অবশ্যই উল্লেখ্য করতে হবে।

) EXTRA-CURRICULAR ACTIVITIES (পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম)


মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমের মাধ্যমে। পড়ালেখার পাশাপাশি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, প্রজেক্ট তৈরী, লেখালেখি, বিভিন্ন ক্লাবে সাথে কাজ করার ইতিহাস অল্প কথায় স্পষ্ট করে উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

) ACHIVEMENT (অর্জন)


বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার প্রাপ্তি, বিভিন্ন ক্লাবে নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ ইত্যাদি অল্প কথায় স্পষ্ট করে উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

১০) LANGUAGE PROFICIENCY (ভাষাগত দক্ষতা)


বাংলা ও ইংরেজি এই দুইটি ভাষা সিভিতে উল্লেখ্য করা অতি জরুরী। ইংরেজীতে যদি আপনি দুর্বল হয়ে থাকেন তাহলে এই মুহুর্তে দুর্বলতা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করুন। পদক্ষেপ গুলো কি হতে পারে তা নিয়ে লিখব অন্য কোনদিন। বাংলা ও ইংরেজীর পাশাপাশি অন্য কোন ভাষা যদি আপনার জানা থাকে তা উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

১১) COMPUTER PROFECIENCY (কম্পিউটারে দক্ষতা)

চাকুরীর ক্ষেত্রে কম্পিউটার চালনায় দক্ষতা অতি জরুরী। বিশেষ করে মাক্রোসফট অফিস এর বিভিন্ন এপ্লিকেশন যেমন মাক্রোসফট ওয়ার্ড, মাক্রোসফট এক্সেল, মাক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট সফটওয়ার এবং ইমেল কমিউনিকেশন ইত্যাদি এই অংশে উল্লেখ্য করুন।

১২) INTERST (আগ্রহ বা শখ)

অল্প কথায় স্পষ্ট করে আপনার শখ বা অবসর সময়ে কী করেন তা উল্লেখ করুন এই অংশে। এই ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হোন। চাকুরীর সাথে সম্পর্কৃত আগ্রহ বা শখ উল্লেখ্য করুন যেমন কোন ট্রাভেলিং এজেন্সিতে কোন পদের জন্য আবেদন করছেন সেখানে আপনি ভ্রমন করতে ভালোবাসেন তা প্রথমে  উল্লেখ্য করুন, আপনি যদি কোন কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের কোন পদের জন্য আবেদন করেন তাহলে সেখানেো আড্ডা দেয়া আপনার শখ তা প্রথমে উল্লেখ্য করুন। শেষে আপনার যদি কোন উল্লেখযোগ্য আগ্রহ বা শখ থাকে যুক্ত করুন।

১৩) PERSONAL INFORMATION (ব্যক্তিগত তথ্য)


আপনার পিতা ও মাতার নাম, আপনার জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, জাতীয়তা, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার, ধর্ম এবং স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি এই অংশে উল্লেখ্য করুন।

১৪) REFFERENCE (রেফারেন্স)

প্রয়োজনে যাতে সিভিতে দেয়া আপনার তথ্যগুলোর সত্যতা দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, সে কারনেই এই রেফারেন্সের অংশ। আপনার পরিচিত পেশাজীবি কোন ব্যাক্তি যিনি আপনার সম্পর্কে জানেন তাদের নাম, পদ, অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল এড্রেস ইত্যাদি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। যাদের রেফারেন্স দিচ্ছেন তাদের অনুমতি নিবেন এবং বিষয়টি তাদের জানিয়ে রাখবেন।

১৫) DECLARATION (ঘোষণা)

এই অংশে সর্ম্পূণ সিভির সকল তথ্যের সত্যতা প্রমানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন সার্টিফিকেট সমুহ, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি প্রদর্শন এবং সিভিতে দেয়া প্রত্যেকটি তথ্যের সত্যতার নিশ্চয়তা নিজের নাম ও সিগনেচার সহ ঘোষনা করবেন।

ব্যাক্তিভেদে আরো কিছু বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে তবে উপরোক্ত বিষয় গুলো প্রত্যেকটি ফ্রেশারের সিভিতে থাকা অত্যন্ত জরুরী।

আজ এই পর্যন্তই।
আমন্ত্রন থাকল পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য। আগামী পর্বে থাকছে চাকুরীর জন্য সিভি মেইল করার খুটিনাটি

লেখকঃ 

মোঃ জায়েদুল হক

ইন্সট্রাকটর, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

 

শেখ মুজিব: চিরদিন এক প্রতিবাদী তর্জনী

শেখ মুজিব: চিরদিন এক প্রতিবাদী তর্জনী

দেশের জন্য মুক্তির দীর্ঘ লড়াইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলে যেতে হয়েছে অনেকবার। সব মিলিয়ে তিনি তাঁর জীবনের প্রায় সাড়ে ১২ বছর জেলে ছিলেন। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি কোনো এক সময়। কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থানকালে তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা (রেণু) তাকে অনুরোধ করেন আত্মজীবনী লিখতে।

বঙ্গবন্ধু দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলেছিলেন, “লিখতে তো পারি না; আর এমন কী করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করেছি।”

তবুও রেণু তাঁকে শেষবার অনুরোধ করেন আত্মজীবনী লেখার জন্য, বলেন ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। একদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু কারাগারের ছোট কোঠায় বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছেন তাঁর রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কথা। কীভাবে তাঁর সঙ্গে পরিচয়, কীভাবে তাঁর সান্নিধ্য লাভ, কীভাবে তিনি কাজ করতে শেখালেন ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে ভাবনার জগতে সাঁতার কাটছেন।

হঠাৎ তাঁর মনে হলো লিখতে ভালো না পারলেও ঘটনা যতদূর মনে আছে লিখে রাখতে তো আর ক্ষতি নেই। অন্তত এই বন্দি কারাগারে সময়টুকু তো কাটবে! এর কয়েকদিন পর রেণু তাকে কয়েকটা খাতা কিনে জেলগেটে জমা দিয়েছিলেন। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা তাঁকে দেন। তখন থেকেই তিনি শুরু করেন আত্মজীবনী লিখতে।

বঙ্গবন্ধুর এ অমর সৃষ্টি পাদপ্রদীপের আলোয় আনবার পিছনে তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনার অনেক অবদান রয়েছে। তিনিই বহু খোঁজাখুজি করে বঙ্গবন্ধুর মহাপ্রয়ানের ২৯ বছর পর স্মৃতিকথা লেখা সেই চারটি খাতা হাতে পান। অবহেলা আর অনাদরে পড়ে থেকে জীর্ণ হয়ে যাওয়া খাতাগুলো থেকে বহু কষ্টে পাঠোদ্ধার করে ২০১২ সালে গ্রন্থাকারে আমাদের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হন। যে বই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর নিজের জবানিতেই আমাদের কাছে অনেক বেশি সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছে। পৃথিবীর ১৭টি ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছে।

বইটিতে শেখ মুজিব ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত নিজের জীবনের ঘটনা লিখেছেন। সেখানে তাঁর জীবনে দেখা নানা বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। বইটি লেখার প্রেক্ষাপট, তাঁর বংশপরিচয়, জন্ম, শৈশব-কৈশোর, স্কুল-কলেজের শিক্ষাজীবন, রাজনৈতিক জীবন, সেসময়ের সামাজিক অবস্থা, দুর্ভিক্ষ, কলকাতা-বিহারের দাঙ্গা ও দেশভাগসহ ইত্যাদি নানা বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা যায় বইটি থেকে।

 

পাশাপাশি তাঁর চীন, ভারত, পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণও বইটিতে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। বঙ্গবন্ধুর এ বইটি এমন একটি বই যা যে কোনো পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে বাধ্য। এতে বঙ্গবন্ধুর বংশপরিচয় সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারি। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর অসাধারণ স্মৃতিশক্তির পরিচয় দিয়েছেন। বইটিতে তিনি তাঁর বংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন।

বইটির শুরুতে তিনি উল্লেখ করেছেন, শেখ বোরহানউদ্দিন এই শেখ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। শুরুর দিকে শেখ বংশ বেশ সম্পদশালী ছিল। এর প্রমাণস্বরূপ বোরহানউদ্দিনের সেই মুঘল আমলে ইটের বেশ সুন্দর কয়েকটি দালান নির্মাণ করার কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু সেগুলোকে অবশ্য জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থায় দেখেছেন তাও বলেছেন। ধীরে ধীরে তাদের সম্পত্তির পরিমাণ কমতে থাকে। বইতে বঙ্গবন্ধু তাঁরই বংশের কয়েকজন এবং তাদের নিয়ে কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।

উল্লেখ করেছেন বেগম ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথা। মজার ব্যাপার হলো, বইয়ের তথ্যানুযায়ী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যখন শেখ ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে হয় তখন তাঁর বয়স মাত্র বারো-তেরো বছর, আর ফজিলাতুন্নেসার তিন বছর। বইটির ৭ম পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু মজা করে বলেছেন, “আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে।” এভাবেই অত্যন্ত সহজ ভাষা কিন্তু বিভিন্ন মজার ঘটনার মাধ্যমে নিজের জন্ম ও বংশপরিচয়ের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেছেন বঙ্গবন্ধু।

তাঁর বর্ণনা থেকে আমরা এক বিচিত্র শিক্ষাজীবনের কথা জানতে পারি। বইটি থেকে আমরা জানতে পারি, সাত বছর বয়সে তিনি ভর্তি হন তাঁরই ছোট দাদার প্রতিষ্ঠিত একটি মিডল ইংলিশ স্কুলে, যার নাম ‘টুঙ্গিপাড়া ডিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়’। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সেখানে পড়ার পর চতুর্থ শ্রেণিতে গিয়ে ভর্তি হন ‘গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে’। ১৯৩৪ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। ফলে তাঁর হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে, এসময় তাঁর লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে।

তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান কলকাতার অনেক বড় বড় ডাক্তারকে দেখিয়েছিলেন এবং সেখানেই তাঁর চিকিৎসা হতে থাকে। দুই বছর কেটে যায় ওভাবেই। কিন্তু একটা বিপদ যেতে না যেতেই আবার ১৯৩৬ সালে গ্লুকোমা রোগের জন্য তাঁর চোখ হঠাৎ খারাপ হয়ে পড়ে। এসময় তাঁর বাবা গোপালগঞ্জ থেকে মাদারীপুরে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন, তাই শেখ মুজিবকে সপ্তম শ্রেণিতে আবার ভর্তি করা হয় মাদারীপুর হাই স্কুলে। ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসার জন্য বাবা তাঁকে আবার কলাকাতায় নিয়ে যান। কলকাতার ডাক্তার টি. আহমেদ তাঁকে দেখেন। তিনি বলেন চোখ অপারেশন করতে হবে।

এতে শেখ মুজিব বেশ ভয় পেয়ে যান, পালানোরও চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। চোখ অপারেশন করা হয়। তিনি আবার ভালো হয়ে যান। কিন্তু ডাক্তার বলেন লেখাপড়া বন্ধ রাখতে হবে এবং চশমা পরতে হবে। তাই সেই ১৯৩৬ সাল থেকেই আজীবন চশমা পরতেন বঙ্গবন্ধু, যা তাঁর ব্যক্তিত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছিল।

এরপর আবার মাদারীপুরে ফিরে যান মুজিব। কিন্তু ততদিনে তাঁর সহপাঠীরা তাঁকে ছাড়িয়ে উপরের ক্লাসে উঠে গেছে। তাই তিনি আর মাদারীপুর হাই স্কুলে যাননি। তাঁর বাবা তাঁকে ১৯৩৭ সালে ভর্তি করে দেন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে। এরপর প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত সেখানেই পড়েন তিনি। সত্যিই এক ঘটনাবহুল শিক্ষাজীবনের অধিকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইতে তাঁর শিক্ষাজীবন সম্পর্কে যে বর্ণনা আমরা পাই তা সেটাই প্রমাণ করে।

বইটিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিস্তারিত ফুটিয়ে তুলেছেন অসাধারণভাবে। তিনি বর্ণনা করেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু মিশন স্কুলে পড়াকালেই। এসময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্য পান। হোসেন সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে যখন সোহরাওয়ার্দী মিশন স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন। বইটির প্রায় সবখানেই বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দীর কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর সততা, কর্মদক্ষতা, সুনীতি, উদারতা ও বিচক্ষণতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনকে প্রভাবিত করেছিল অনেকাংশে।

 

শেখ মুজিবের প্রথম জেল জীবনের ঘটনাও এই বইয়ে উঠে এসেছে। সময়টা ছিল ১৯৩৮ সাল। তাঁর এক সহপাঠী ছিলেন আব্দুল মালেক নামে। কোনো একদিন গোপালগঞ্জের খন্দকার শামসুল হুদা এসে জানালেন, মুজিবের সহপাঠী মালেককে ‘হিন্দু মহাসভার’ সভাপতি সুরেন ব্যানার্জীর বাড়িতে তাকে অন্যায়ভাবে মারধর করা হচ্ছে। তাই দ্রুত শেখ মুজিব সুরেন বাবুর বাড়িতে গিয়ে অনুরোধ করেন মালেককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ছাড়া তো দূরে থাক, তাকে উল্টে গালমন্দ করেন সুরেন বাবু। কিশোর মুজিব তার এরকম আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। খবর পাঠিয়ে তাঁর দলের ছেলেদের ডেকে আনেন।

শেখ মুজিবের দুই মামা শেখ সিরাজুল হক ও শেখ জাফর সাদেকও ছুটে যান জনবল নিয়ে। সেখানেই দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল মারামারি শুরু হয়ে যায়। শেখ মুজিব ও তাঁর বন্ধুরা মিলে দরজা ভেঙ্গে নিয়ে আসেন মালেককে। পুরো শহরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। হিন্দু নেতারা থানায় মামলা করেন। খন্দকার শামসুল হক হন আদেশের আসামি। অভিযোগ, মুজিব ছুরি দিয়ে সুরেন বাবুকে হত্যা করতে তার বাড়ি গিয়েছিলেন!

পরদিন মুজিব জানতে পারেন তাঁর দুই মামাকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকেও গ্রেপ্তার করতে চায়, কিন্তু সাহস পাচ্ছে না তাঁর বাবার জন্য। কারণ তাঁর বাবাকে এলাকায় সবাই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। গ্রেপ্তারে দেরি হলে কেউ কেউ তাকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমি পালাব না। পালালে লোকে বলবে যে আমি ভয় পেয়ে পালিয়েছি।”

অনেক ইতস্তত করে পুলিশ শেখ মুজিবের বাসায় গিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেশ করলে বাবা শেখ লুৎফর রহমান বললেন, “ওকে নিয়ে যান।” দারোগা বাবু নরম স্বরে বললেন, “ও বরং খেয়ে-দেয়ে আসুক।” সত্যিই, এবারও নিজের সততার প্রমাণ দেন মুজিব। খেয়ে-দেয়ে হাজিরা দেন তিনি। জেলে মেয়েদের ওয়ার্ডে কোনো মেয়ে আসামি না থাকায় তাকে রাখা হয় মেয়েদের ওয়ার্ডে। সেটি ছিল শেখ মুজিবের প্রথম জেল, তাও আবার বিনা অপরাধে অন্যায়ভাবে। প্রথম জেলে যাওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।

জেল থেকে ফিরে শেখ মুজিবুর রহমান আবার রাজনীতিতে যোগ দেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির ২০৯ নং পৃষ্ঠায় একটি ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি। ঘটনাটি হলো: একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।

আমি আর রেণু দুজনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, আমি তো তোমারও আব্বা। কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন ও আর সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বই থেকে জানা যায় যে শেখ মুজিব প্রথমে পাকিস্তান হবার পক্ষেই ছিলেন। কারণ সেই সময়ের হিন্দু সমাজের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের জন্য মুসলমানরা টিকতে পারছিল না। কিন্তু পাকিস্তান হবার পর যখন বাংলা ভাষার উপর আঘাত আসল, তখন তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। মাত্র বছরখানেকের মধ্যেই পাকিস্তান সৃষ্টির স্বপ্নভঙ্গের কারণ ঘটে। তখন থেকেই পাকিস্তানের নানা অন্যায়-অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে শেখ মুজিব সোচ্চার হতে থাকেন।

আসলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের এমন এক চরিত্র যিনি ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির মতো নিজের জীবনটাকেও অসমাপ্ত রেখে গেছেন। এ অসমাপ্ত জীবন কত-ই না ঘটনাবহুল! বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সম্পূর্ণ প্রতিফলন এ বইটি। আর এ আদর্শে নিজের জীবন গড়ে তুলতে হবে বর্তমান প্রজন্মের প্রতিটি শিশুকে।সত্যি কথা বলতে কী এই বইটা আমি এখনও পড়লে আমার মধ্যে জানার স্পৃহা আরো অনেক বেড়ে যায়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার এক অসামান্য পাঠ রয়েছে বইটিতে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদী চেতনার সঙ্গে বইটি আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়।

 আমাদেরও তাঁর মতো প্রতিবাদী হতে হবে, অন্যায়ের সঙ্গে কখনোই আপোস করা যাবে না।

 

 

=======================================

লিখেছেন:

ইমাম  সাদ আহমেদ

ইন্সট্রাক্টর

ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

 

সুখী হতে গেলে যেটির প্রয়োজন নেই

সুখী হতে গেলে যেটির প্রয়োজন নেই

সুখী হতে চায় না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া মুশকিল । প্রত্যেকে যে যে অবস্থানে আছে সেই অবস্থান থেকে সব সময় উপরে উঠতে চায় । এই উপরে উঠতে চাওয়ার কারণ টি কি?

আমি যদি আপনাকে এই প্রশ্নটি করি তাহলে আপনি কি উত্তর দিবেন? নিশ্চয়ই বলবেন, ভালো থাকার জন্য, সুখে থাকার জন্য বা শান্তিতে থাকার জন্য । এখন প্রশ্ন হলো ভালো থাকা, সুখে থাকা কিংবা শান্তিতে থাকা যেটাই বলেন না কেন? এটির জন্য কি দরকার? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে টাকা পয়সা, বাড়ি, গাড়ি, ক্ষমতা ইত্যাদি অনেক কিছু সামনে চলে আসে । আপনি কি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন, বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা পাওয়ার থাকলেই আপনি সুখে থাকবেন? তাই যদি হতো তাহলে খবরের কাগজে বের হতো না ধনীর দুলালী ভালোবাসার টানে রিকশাওয়ালার ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে । এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে সেগুলো বলে শেষ করা যাবে না, যে টাকা পয়সা থাকলে মানুষ সুখী হতে পারে । এখান থেকে আমরা বুঝলাম যে আসলে টাকা পয়সা ধন দৌলত এগুলো মানুষকে সুখী করতে পারে না ।

আপনার যখন অনেক টাকা হবে তখন আপনি আরো টাকার পিছনে ছুটবেন, সাধারণ মানুষ যেখানে তিন বেলা খায়, আপনি টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে দুই বেলা খাবার সময় পাবেন না কারণ তখন আপনার দরকার আরো টাকা, ক্ষমতাবান ব্যক্তি চেয়ারম্যান থেকে এমপি হতে চাইবে, এমপি হতে পারলে মন্ত্রী হতে চাইবে, মন্ত্রী হতে পারলে প্রধানমন্ত্রী হতে চাই, মানুষের এই চাওয়ার কোন শেষ নেই, এর পিছনে অনেক গল্প আমরা ইউটিউব গুগোল এ সার্চ করলে পেয়ে যাব যারা মোটিভেশনাল স্পিকার তাদের কাছ থেকে । আপনি এখনো কনফিউশন তাইতো, তাহলে প্রকৃত সুখ কিসে?

প্রকৃত সুখ কিসে আরেকটু আলোচনা করলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন । আমি এখানে কয়েকটি পয়েন্ট একটু উল্লেখ করতে চাচ্ছি:

1. অফিসের বস কল দিয়ে বলল কোথায় আপনি এই মুহূর্তে আমার সঙ্গে দেখা করেন ।
2. বন্ধু, পরীক্ষা নাকি আর এক মাস বাকি আছে ।
3. আজকে গণিত পরীক্ষা টা খুব খারাপ হয়ে গেল ।
4. আপনি মনে হয় এবার নির্বাচনে আর জয়ী হতে পারবেন না ।
5. বন্ধু, শুনলাম তোমার প্রেমিকার নাকি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ।

উপরের পাঁচটি বাক্যের মত হাজার হাজার বাক্য আমাদের জীবনে শুনতে হয় । উপরের যে পাঁচটি বাক্য আমি বলেছি, এই পাঁচটি বাক্যের মধ্যে একটি কমন মিল আছে । কি ভেবে পেলেন? অনেকে ইতিমধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছেন, আবার অনেকে এখনো চিন্তাভাবনা করছেন ।

এই পাঁচটি বাক্যের মধ্যে একটি মিল, সেটি হচ্ছে যে কেউ এই পাঁচটি বাক্যের যেকোনো একটি যখন শুনবে তখনই তার ভিতর এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়, এই অস্থিরতা যখন শুরু হয় তখন তার খেতে ভালো লাগেনা, ঘুমাতে ভালো লাগে না, টিভি দেখতে ভালো লাগে না, গান শুনতে ভালো লাগে না, ঘুরতে যেতে ভালো লাগে না, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালো লাগে না, কোন কাজে মন বসে না, আর এইগুলো যখন কোন মানুষের মধ্যে বিরাজ করে, তখন আমরা তাকে বলি লোকটি টেনশনে আছে।

 

 

জি হ্যাঁ, আজকে আমার আলোচনার মূল হচ্ছে টেনশন ।

আমরা সব কিছু অর্জন করতে চাই সুখে থাকার জন্য, কিন্তু এই একটা জিনিস যে যত কম অর্জন করবে সে ততো সুখে থাকবে ।
বুঝতে পারলেন না? টেনশন যার যত বেশি কম সে ততো বেশি সুখী । আমার মতে টাকা পয়সা ধন দৌলত বাড়ি গাড়ি এগুলোতে কোন মানুষ সুখী হতে পারে না । প্রকৃত সুখী সেই ব্যক্তি যার কোন টেনশন নেই । গণিতে সবকিছু শুরু হয় শূন্য থেকে, শূন্য এমন একটি সংখ্যা যে টি সংখ্যার বাম পাশে বসলে সংখ্যার মানের কোন পরিবর্তন হয় না, কিন্তু সংখ্যার ডান পাশে বসলে ঐ সংখ্যার মান দশগুণ বেড়ে যায়, এই শুন্য যদি একা একা থাকে তাহলে তার কোন মূল্য নেই । শুন্য জিনিসটা কেউই অর্জন করতে চায় না । টাকা শুন্য, গাড়ি নেই মানে শুন্য, ছেলে মেয়ে নেই মানে শুন্য, মান সম্মান নেই মানে শুন্য, পাওয়ার নেই মানে শুন্য, এগুলো কোন মানুষ কখনোই আশা করে না । আর এই শুন্য যখন আপনার জীবনে টেনশন এর জায়গাটি দখল করে নিবে, তাই ডানে হোক, বামে হোক আপনি হবেন এই পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ।
শুধুমাত্র একটি জিনিস শূন্যতে থাকলে আপনার মত সুখী ব্যক্তি পৃথিবীতে আর একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না । আমাদের সকল অশান্তির মূল হচ্ছে টেনশন | টেনশন যার যত কম সেই ব্যক্তি ততবেশি সুখী, টেনশন যার যত কম সেই ব্যক্তি তত বেশি কর্মক্ষম, টেনশন যার যত কম সেই ব্যক্তি ততবেশি শক্তিশালী, টেনশন কম মানে মাথা ঠান্ডা, আর ঠান্ডা মাথার মানুষ পৃথিবীর সবকিছু জয় করতে পারে সুতরাং আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি মানুষের সুখে থাকার মূলমন্ত্র হচ্ছে টেনশন কে শুন্য তে রাখার চেষ্টা করা । আর এই টেনশন দূর করে কিভাবে সুখে থাকা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে আর একদিন বলব ।

লেখক,
এম. এম. শাহানুজ্জামান
লেকচারার,
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট