লক্ষ্য হোক কারিগরি শিক্ষা

লক্ষ্য হোক কারিগরি শিক্ষা

কারিগরি শিক্ষা

বাংলাদেশে সাধারণ শিক্ষার হার, কারিগরি শিক্ষার হারের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্র-ছাত্রীর গার্জিয়ানরা মনে করেন সাধারণ শিক্ষায় সঠিক শিক্ষা কারন সমাজের প্রতিনিধিত্ব করা থেকে শুরু করে সমাজ সংস্করণে  সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতরাই  প্রতিনিধিত্ব করছে। যার ফলশ্রুতিতে সমাজের বেশিরভাগ গার্জিয়ান মনে করেন তার সন্তানকে সাধারণ শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত করলে, সমাজের তথা রাষ্ট্রের যে কোন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।

যার ফলশ্রুতিতে মা-বাবারা তার সন্তানকে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন এবং তার সন্তানের জন্য প্রচুর অর্থ সম্পদ ব্যয় করে সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রচেষ্টা করে। কিন্তু বাস্তবতা এরকম যে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত  আমাদের বাংলাদেশ অনেক কম। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার যে পথ পেরোনোর প্রচেষ্টায়, সন্তানরা এগিয়ে যায় তা মধ্যবর্তী অবস্থায় গিয়ে থেমে যায়। অধিকাংশ সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার ছাত্র-ছাত্রী সার্টিফিকেট নিয়ে একটি চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়ে থাকে।

 

 

অথচ,পলিটেকনিক শিক্ষায়  শিক্ষার্থীরা বেকার থাকে না। কারণ তারা জীবনের লক্ষ্যই নির্ধারণ করে কর্মের মাধ্যমে। যা  তাকে সমাজ তথা রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করে । পলিটেকনিক শিক্ষা শিক্ষার্থীকে প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে থাকে যার বেশিরভাগই হাতে কলমে শিক্ষা হয়ে থাকে। কারিগরি জ্ঞান থাকার কারণে খুব সহজেই একজন শিক্ষার্থী সমাজের যেকোনো  কাজের সাথে নিজেকে দ্রুত খাপ-খইএ নিতে পারো । বাংলাদেশের পেক্ষাপটে পলিটেকনিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

পলিটেকনিক শিক্ষা হোক লক্ষ্য, কারন যে শিক্ষা সমাজকে পরিবর্তন করে দিতে পারে তাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা সেক্টরেই পলিটেকনিক শিক্ষা হোক লক্ষ্য, রাষ্ট্রের গঠনের জন্য কারিগরি শিক্ষা তথা পলিটেকনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবকরাই পারে তার পরিবর্তন আনায়ন করতে। আজকাল কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট বিহীন জীবন চলাই দুষ্কর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কম্পিউটার টেকনোলজি নামে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে। এছাড়াও ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি, টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজি , সিভিল টেকনোলজি সহ অন্যান্য আরো অনেক যুগোপযোগী টেকনোলজি। আসলে পলিটেকনিক শিক্ষা বলতে আমরা কি বুঝি।

পলিটেকনিক শিক্ষা কী?

একটি পলিটেকনিক শিক্ষা হাতে কলমের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গতিশীল এবং প্রগতিশীল শিক্ষার পরিবেশ দিয়ে থাকে। আমরা উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন পলিটেকনিক এর নাম শুনেছি।

সিঙ্গাপুরে পাঁচটি পলিটেকনিক রয়েছে, যেমন, নানিয়াং পলিটেকনিক (এনওয়াইপি), এনজি অ্যান পলিটেকনিক (এনপি), রিপাবলিক পলিটেকনিক (আরপি), সিঙ্গাপুর পলিটেকনিক (এসপি) এবং টেমেসেক পলিটেকনিক (টিপি)। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের কোর্স সরবরাহ করে যা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার পরিপূর্ণ করার দিকে পরিচালিত করে পাশাপাশি আরও পড়াশোনার জন্য তাদের প্রস্তুত করে। লক্ষ করলে দেখা যায় যে সিঙ্গাপুরের জিডিপি বাংলাদেশের জিডিপির চেয়ে অনেক বেশি তাই তারা একটি উন্নত দেশ। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে খুব দ্রুত তারা উন্নতি লাভ করেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ কারিগরি তথা পলিটেকনিক শিক্ষা দুরুতো গ্রহণ না করার ফলে সিঙ্গাপুরের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

 

অনুশীলন-ভিত্তিক পড়াশোনাঃ

পলিটেকনিক শিক্ষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য অনুশীলন ভিত্তিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া। শিল্প অংশীদারদের সাথে কাজের সংযুক্তি পাঠ্যক্রমের অংশ এবং নির্বাচিত কোর্সের জন্য ছয় সপ্তাহ থেকে ছয় মাস বা তার বেশি সময়ের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। এই কাজের সংযুক্তিগুলি  কাজের উপর মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এবং শিল্প বিশেষজ্ঞদের সাথে কাজ করার সুযোগগুলি সরবরাহ করতে সক্ষম করবে।

একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি, পলিটেকনিকগুলি কিছু গুরুত্বপূর্ণ জীবন দক্ষতা অর্জনের উপর জোর দেয়। এগুলি যোগাযোগ ও উপস্থাপনের পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। এগুলি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস এবং সমালোচনামূলক অনুষদের বিকাশের উদ্দেশ্যে সাহায্য করে যা  সমাজে কার্যকর অংশগ্রহণকারী হতে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীরা অরিজিনাল ও ক্রিটিভিটি চিন্তাভাবনা করতে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করতে শিখবে। যা দ্রুত সমাজ গঠন তথা রাষ্ট্র গঠনে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে।

অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা পলিটেকনিক শিক্ষা পরিচালিত হয়ে থাকে বিধায়। খুব সহজে হাতে কলমে শিক্ষা নেওয়া যায়। অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী প্রতিনিয়তই প্রাক্টিক্যাল ক্লাস এর প্রতি অত্যন্ত যত্নবান এবং গুরুত্ব দিয়ে থাকন। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক অংশটি কম থাকে। প্র্যাকটিক্যাল অংশটি বেশি থাকায় গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার থেকে একটু আলাদা হয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশের পেক্ষাপটে পলিটেকনিক শিক্ষায় হোক জাতীয় লক্ষ্য।

 

লেখক, 

মুহাম্মাদ সহিদুল ইসলাম

ইন্সট্রাক্টর, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

লক্ষ্য ছাড়া দক্ষতা বিকাশ!

লক্ষ্য ছাড়া দক্ষতা বিকাশ!

আমরা সবাই নিজেদের দক্ষতা বিকাশ করতে চাই। সারাদিন ফেসবুক, ইউটিউভ বা গুগল ঘেটে আমরা অনুপ্রানিত হয়ে সীদ্ধান্ত নেই যে অনেক হয়েছে এবার দক্ষতা বিকাশের পালা। শুরু হয় ভিডিও দেখা। আর মাশাআল্লাহ ফেসবুক, ইউটিউভে ভিডিওর অভাব নেই। কখনো এই ভিডিও কখনো বা সেই ভিডিও। আবার অনলাইন লার্নিং পোর্টাল তো আছেই। আমি একটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে সার্ভে করেছিলাম যেখানে আমি কয়েকটি প্রশ্ন রেখেছিলাম তরুনদের কাছেঃ

  1. আপনি কোর্স শুরু করেছেন কিন্তু শেষ করেন নি? (হ্যা অথবা না)
  2. আপনি কোর্স শুরু করেছেন কোন লক্ষ্য নির্ধারন না করেই? (হ্যা অথবা না)
  3. আপনি কোর্স সম্পন্ন করেছেন কিন্তু কোন রুপান্তর হয়নি? (হ্যা অথবা না)

অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে “না”র সংখ্যা বেশী আসছে কেন? লক্ষ্য ছাড়া কোন কিছুই করা মানে হলো কোন কাজে না আসা। উদাহরনস্বরুপ বলা যায়। আমি ইংরেজী ভাষা শিখতে ও কাজে লাগাতে চাই। এখন আপনাকে SMART প্ল্যান করতে হবে।

তাহলে আসুন আমরা এই লক্ষ্যটাকে ভেঙে ফেলি।

  • আমার লক্ষ্যঃ আমি ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে চাই
  • কেনঃ আমি যেহেতু মার্কেটিংয়ে কাজ করবো তাই ইংরেজী ভাষা আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
  • কারনঃ অধিকাংশ সময় আমাকে বাইরের দেশের সাথে কথা বলতে হয়, বিভিন্ন জায়গায় প্রেজেন্টেশন দিতে হয় এবং সেখানে ইংরেজী ভাষাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়।
  • কতদিন সময় দেবেন নিজেকে: এটি তিন মাসের (৯০ দিন) জন্য নিজেকে রুপান্তরের একটি কার্যক্রম হবে।
  • কি কি দক্ষতা অর্জন করতে চান?: ইংরেজীতে কথা বলতে চাই, পড়তে চাই, শুনে বুঝতে চাই

আমার ইংরেজী ভাষা শিক্ষার এই লক্ষ্যকে কিভাবে ভাগ করবো?

 পড়ার ক্ষমতা বাড়ানো (টার্গেট এক মাস):

  • আমি প্রতিদিন এক ঘন্টা করে ৩০ দিন বিভিন্ন ইংরেজী সংবাদপত্র/বই/নিবন্ধ/ব্লগ পড়ব।
  • আমি অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নার্স অভিধান থেকে নতুন শব্দের অর্থ খুঁজে বের করব এবং সেগুলি একটি ডায়েরিতে নোট করব।

শ্রবণ ক্ষমতা বাড়ানো (টার্গেট এক মাস)

  • আমি প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে ৩০ দিন বিবিসি / সিএনএন / অন্যান্য ইংরেজি নিউজ চ্যানেল ইত্যাদি চোখ, কান এবং মন দিয়ে শুনব।
  • আমি গুগল / ইউটিউব ব্যবহার করে নতুন শব্দের উচ্চারণ খুঁজে বের করব।

স্পিকিং সক্ষমতা বাড়ানো (টার্গেট এক মাস)

  • যতটুকু সম্ভব আমি ইংরেজিতে কথা বলবো; এবং পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের সাথে কথা বলার সময় যতটা পারি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করব। লক্ষ্য তিন মাস অনুশীলনটি চর্চা করা।

নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি এবং মেন্টরশিপ সন্ধান করা (টার্গেট তিন মাস)

  • আমি অনুশীলনের জন্য একটি ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাবে যোগদান করব।
  • আমি পরামর্শের জন্য বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শদাতাদের অনুরোধ করব।
  • আমি দরকার হলে কোন সনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এক মাসব্যাপী ইংরেজী ভাষার উপর একটি কোর্স সম্পূর্ন করব (যদি প্রয়োজন হয়)
  • আমি GoEdu.ac, লিংকডইন, গুগল গ্যারেজ ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মগুলি ভিজিট করে অন্তত ১০ টি অনলাইন কোর্সে যোগদান এবং সম্পূর্ণ করব
আপনাদের জন্য বিশেষ এই ছকটি তৈরি করেছি এবং এটি তৈরি করতে আমাকে বিশেষভাবে পরামর্শ  দিয়েছেন বাংলাদেশের অত্যন্ত দক্ষতা সম্পন্ন প্রশিক্ষক এবং আমার খুব প্রিয় জীশু তরফদার ভাই

শেষ কথা

উপরের যে পরিকল্পনাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম সেটা কিন্তু শুধুমাত্র নিজেকে রুপান্তরের নিমিত্তে করা হয়েছে। লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা ছাড়া হাজার হাজার কোর্স করেও রুপান্তরের দেখা পাওয়া যাবে না। আমি যে ছকটি আকবার চেষ্টা করেছি সেটি আপনারা আপনাদের মতো করে আকবার চেষ্টা করুন। তবে মনে রাখবেন জ্ঞান, দক্ষতা এবং আচরন তখনই প্রয়োজনে আসবে যদি তা আপনার লক্ষ্যে সাথে সামঞ্জস্য হয়।

লেখকঃ 

কে এম হাসান রিপন

নির্বাহী পরিচালক

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

কম্পিউটার টেকনোলজি কি ডিপ্লোমা-ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য সঠিক পছন্দ

কম্পিউটার টেকনোলজি কি ডিপ্লোমা-ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য সঠিক পছন্দ

তথ্য প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে, যা গ্লোবাল ভিলজে এ পরিনত করেছে । আধুনিক এই যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমাদের জীবন যাপনকে করে তুলছে আরো সহজ। এই পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে এগিয়ে যাবার প্রত্যয় নিয়ে এল কম্পিউটার প্রযুক্তি। প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে নিজেকে আত্বনির্ভরশীল ব্যক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে হলে কম্পিউটার টেকনোলজি পড়ার বিকল্প কিছু হতে পারে না।

কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনেক রাস্তা খোলা। এ বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বহুমুখী কাজ করতে পারে। কেউ হন প্রোগ্রামার আবার কেউবা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এ ছাড়াও  সৃজনশীল দক্ষতা থাকলে গ্রাফিক্স বা ওয়েব ডিজাইনারও হতে পারেন। পাশাপাশি আছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুযোগ। ঘরে বসেই বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের চর্চা করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কাজ করে দিতে পারেন। নিজেই আরও মানুষের কর্মসংস্থান করে দিতে পারেন।

আর অফিস-আদালতের চাকরি তো আছেই। প্রতিটি ব্যাংক, করপোরেট হাউস, গণমাধ্যমসহ প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি অফিসেই প্রয়োজন হয় কম্পিউটারে দক্ষ জনবলের।

একমাত্র কম্পিউটার টেকনোলজিই পারে বহুমুখি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কম্পিউটার টেকনোলজি অপরিহার্য। ২০১১ সালে হতে প্রতিটি কোর্সে কম্পিউটার বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। সমস্ত- সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহে ই-গভর্নেস চালু করতে যাচ্ছে, সেহেতু অনুমান করা যাচ্ছে যে, কম্পিউটার টেকনোলজি কর্মসংস্থানের ব্যাপ্তি কত বিশাল হতে পারে। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি আপনাকে সামিল করবে এই কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদদের প্রথম সারিতে। এই কম্পিউটার ডিপ্লোমা ডিগ্রী হবে অবারিত কম্পিউটার সম্পর্কীত কর্ম ক্ষেত্রে প্রবেশের আপনার প্রথম চাবিকাঠি।

এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার তথ্য প্রযুক্তিতে নির্ভরশীলতা বাড়ানোর জন্য তৈরি করছে হাইটেক পার্ক। দেশেই তৈরি হবে আমাদের নিত্যব্যবহার্য প্রযুক্তিপণ্য।  এদেশে নির্মিত সফটওয়্যার দিয়েই চলবে আমাদের ব্যাংক, বীমা, কলকারখানা, অফিস-আদালতসহ অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান এই স্বপ্ন নিয়েই হাইটেক পার্ক ধারনার যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ১৯৯৯ সালে। যা বর্তমানে দৃশ্যমান। চলমান প্রকল্পগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক সিলেট, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, রাজশাহী এছাড়াও আরো অনেকগুলো হাই-টেক পার্ক প্রস্তাবিত। এসব হাই-টেক পার্কগুলো পুরোদমে চালু হলে আরো বিশাল একটি ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। সুতরাং ডিপ্লোমা-ইন- কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ই হবে সঠিক পছন্দ বর্তমান প্রেক্ষাপটে।

লেখক:

জহির আহমেদ চৌধুরী

লেকচারার, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

 

 

আছি জ্ঞানের ঋণে, শোধ করিবো কত দিনে?

আছি জ্ঞানের ঋণে, শোধ করিবো কত দিনে?

গরম ধূমায়িত এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে দিতে সকালের ঝুম বৃষ্টির ফোটা গুলো দেখছিলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে। প্রতিটি ফোটা কাছের পুকুরটিতে হুমরি খেয়ে পরছিলো। প্রকৃতির এই দৃশ্য দেখে আমি যখন অনেকটা আত্বিক কবি সেই মুহুর্তে পাশে ফ্লাটের আনোয়ার ভাইকে দেখলাম একটা ছাতা মাথায় দিয়ে হাটু পর্যন্ত প্যান্ট উচিয়ে অনেকটা ব্যাস্ততার সাথেই বের হলেন। স্বাভাবিকতা মেনেই বললাম এতো সকাল সকাল কোথায় চললেন? আনোয়ার ভাই এক গাল হাসি টেনে বললো “ ভাই আজ ব্যাংকের লোনের টাকার কিস্তি দেয়ার শেষ তারিখ, লম্বা লাইনের চক্করে না পরতেই এতো সকালে বের হওয়ায় এই আয়োজন।“ উনার ব্যস্ততা দেখে আর কথা বাড়ালাম না।

টেবিলের উপর রেখে দেয়া বইটি নিয়ে ক্লাসের পড়া এগিয়ে নিতে পড়তে শুরু করলাম। বেশ কয়েকটা অনুচ্ছেদ পড়ার পর হঠাত আনোয়ার ভাইয়ের সকালের কথাটি মনে পরলো। একজন সুস্থ মানুষ সর্বোদা সচেষ্ট থাকে তার পাওনাদারের সম্পদ যথা সময়ে ফেরত দিতে। আনোয়ার ভাইও সেরকমই একজন মানুষ বিধায় উনি সময় মত ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্য সকাল সকাল বৃষ্টির মধ্যেও বের হয়েছেন। কিন্তু আমার মতে একজন মানুষকি সুধুই অর্থিক ভাবেই ঋণী হলে তা ফেরত দিতে এতো সচেষ্ট হবে নাকি আরো কিছুর জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত? আমরা কি সবাই প্রত্যেকে ঋণ মুক্ত নাকি ঋণী? একবার আমার এক বন্ধু খুব গর্ব করেই বলেছিলো সে এবং তার পরিবার কোন দিন কখনো কারো নিকট হতে ধার নেয়না অর্থাৎ ঋণ করেনা। এটা তাদের বংশ গত শিক্ষা সে বলছিলো। যাইহোক তার সেই দাম্ভিকতা সেদিন আমার মত অনেকেই হজম করে শুনছিলাম। কিন্তু আজ মনের মাঝেই বলে উঠছে আমরা সবাই ঋণী। এই ঋণ আমরা কেউ শোধ করতে সক্ষম হয়েছি আবার কেউ এই ঋণ শোধের চেষ্টায় আছি আবার কেউ এই ঋণ শোধের পর অন্যদের ঋণ দিচ্ছি। কিন্তু তবুও এই ঋণ কোন দিনই শোধ করা সম্ভব না। কিসের ঋণ বুঝেননি তাইতো? মনের গভির থেকে একবার ভাবুন তো আপনি আমি জ্ঞানের ঋণ করছি কি না? সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সামাজের প্রতি ঋণ অনেক বড় একটা বিষয় আর এই বড় বিষয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ হলো জ্ঞাণের প্রতি ঋণ। জ্ঞানের প্রতি ঋণ শুনতে কেমন জানি লাগছে তাইনা? অনেকেই হয়তো বলছেন এ কেমন ঋণ যার ভিত্তি এখনো বুঝলাম না। আচ্ছা আমাকে বিষয় টা পরিষ্কার করতে দেন।

এইযে, আপনি আমি ক্লাসের বই বলুন আর গল্পের বই বলুন কিংবা মাল্টিমিডিয়ার তথ্য নির্ভর যেকোন কিছুই বলুন সবই কিন্তু কোন না কোন ব্যাক্তি দ্বারা লিখা বা তৈরিকৃত। এমনকি এই যে আমার পোস্ট টি পড়ছেন এটাও। আপনি জানেন কি এগুলো ধার করা জ্ঞান আপনার আমার জন্য? সেই সব লেখক, উদ্ভাবক, কারিগর দিনের পর দিন জ্ঞান সাধণা করে লিখে গেছেন এক একটি তথ্যবহুল বই। এই বই এর শিক্ষা গুলো তাদের পরিশ্রমের জ্ঞানের। যার মূল্য আপনার আমার বই এর শুরুতে লিখা টাকার অংকে করা নেহাত বোকামি মুর্খতা ছাড়া আর কিছুই না। আমরা তাদের জ্ঞান ধার করে পড়ছি বছরের পর বছর। শুধুই যে ক্লাসের বই তাই নয়, বিভিন্ন জ্ঞান বিজ্ঞান, গল্প উপন্যাস, কবিতা প্রবন্ধ ইত্যাদি সব কিছুই। এখন কেউ হয়তো বলবেন তাহলে কি এগুলো জ্ঞান ধার করা আমাদের জন্য উচিত নয়? আমরা কেন জ্ঞান ধার করবো? ধার করা জ্ঞান আমরা আর নিবোনা ইত্যাদি ইত্যাদি। এহেম! এহেম! ভাই আমরা সামাজিক জীব। এখানে একজন অপরজনের উপর নির্ভরশিল এবং দায়বধ্য। ওই যে বললাম সামাজিক দায়বদ্ধতা। আপনি যত বড়ই ব্যাক্তি হোন না কেন, আপনাকে সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে থেকে একে অপরের সাহায্যে জীবন পরিচালিত করতেই হবে। আর এগুলো সাহায্য নেয়া আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। জীবনের শুরুতে আমরা যেমন বাবা মা এর উপর নির্ভর থাকি খাওয়া, চলা সব কিছুতে আর এর পরে ধাপে-ধাপে শিখে নিই সব কিছু তেমনি রক্ত মাংশের এক প্রানী থেকে মানুষে পরিনত হতে শিক্ষা জীবনের শুরুতে এই মহান লেখক উদ্ভাবক গণের বিতরন করা জ্ঞান ধার/ ঋণ স্বরুপ আমরা গ্রহণ করি। সময়ের সাথে সাথে এই ঋণ এর পরিমানও বেড়েই চলে। এক সময় আপাত দৃষ্টিতে প্রাতিষ্ঠানিক এই শিক্ষা শেষ করে আমরা প্রবেশ করি কর্ম ব্যাস্ত জীবনে। কর্ম জীবন টা এমন এক জীবন যেখানে আপনার সেই সব ধার বা ঋণ করা জ্ঞান কে বাস্তবতায় ইনভেস্ট করতে হয় জীবনকে পরিচালিত করতে। সঠিক ভাবে জ্ঞানকে ইনভেস্ট করতে পারলে আপনি লাভবান হবেন যা আপনার ঋণ গ্রহণের সফলতা হিসেবে ধরা হবে এবং সেই সাথে আপনার এই সফলতার ফল গুলোকে অনেক টা ধার করা জ্ঞান গুলোর শোধ স্বরুপ ধরা যেতেই পারে। কিন্তু শুধু একটা জ্ঞান কি শোধ করলেই হবে? জীবনে কত কত জ্ঞান আপনি ধার করেছেন তার হিসেব নেই।

এবার আরেকটি মজার বিষয়ে আসি। আপনি জ্ঞান ধার করেছিলেন আর তা ইনভেস্ট করে সফলতা পেয়ে মোটামোটি ফেরতও দিলেন। সাধারণত আমরা সুস্থ মানুষেরা তখনই অর্থ বা সম্পদ ধার নিয়ে ফেরত দেই যখন সেই ধার করা অর্থ/ সম্পদের বেশি আয় করা হয় আর তা ফেরত দেয়ার পরেও কিছু থাকে যা ভবিষ্যত জীবন চালাতে অবশ্যই লাগবে। তাহলে জ্ঞানের দিক থেকে যদি হিসেব করি বিষয় টা এমন যে আমি জ্ঞান ইনভেস্ট করে সফলতা পেয়ে এমন কিছু হতে পেরেছি যার ফলে আমি মোটামোটি সেই বিষয়ে ধার করা জ্ঞান শোধ করেছি আর বাকি সামনের ভবিষ্যত জীবন এই সফল হওয়ার অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অবশ্যই চলতে হবে। এখন হিসেব করে দেখুন যে, আপনি বা আমি ধার করে জ্ঞান নিয়ে ইনভেস্ট করে সফল হয়ে সেই সফল হওয়ার অর্জিত ফল কে কাজে লাগিয়ে সামনের ভবিষ্যত কাটিয়ে দিলেও একটা জিনিস শূণ্য থেকেই যাচ্ছে। আর তা হচ্ছে সেই পর্যায়ের জ্ঞান যা আমি অন্যকে ধার/ ঋণ দেয়ার কথা যা সেই সকল লেখক উদ্ভাবক গণ করে গেছেন। তারাও জ্ঞান ধার করেছেন, ইনভেস্ট করেছেন, সফলতা পেয়েছেন আর শুধু নিজের ভবিষ্যত চলার মত করেই চলে গেছেন তা নয়। তারা তাদের পরিশ্রম করা অর্জিত জ্ঞান গুলোকে নিজের বাকি জীবন চলার পরেও আরো যে জ্ঞান অর্জন করে গিয়েছেন তা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে গিয়েছেন লিখে বা উদ্ভাবনের মাধ্যমে। অনেকেই তো সফল হয়, আদর্শ স্বরুপ মানুষও হয়ে উঠে কিন্তু কয়জন রয়েছে যারা তাদের সেই অর্জিত জ্ঞান মানব জাতির কাছে ছড়িয়ে দিয়েছেন? জ্ঞান অর্জন আর জ্ঞান দান অনেক পার্থক্য রাখে। জ্ঞান যে কেউ অর্জন করার অধিকার বা ক্ষমতা রাখে কিন্তু জ্ঞান দান করার যোগ্যতা সবার থাকেনা। যে আপনিই একদিন জ্ঞান ধার করে চলেছিলেন সেই আপনিই সবার মাঝে জ্ঞান দান করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন এমন মহৎ হৃদয় কয় জনের হয়? আমরা আজও জ্ঞান ধার করে চলেছি কিংবা কেউ কেউ জ্ঞান ইনভেস্ট করছি আবার এমনও অনেকে আছি যারা জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি কিন্তু জ্ঞান দান করে সামাজিক যে দায়বদ্ধতা তা কয় জনে শোধ করেছি? জানি সামাজিক ঋণ কিংবা জ্ঞানের ঋণ কোন দিনই সম্পুর্ন শোধ সম্ভব নয়, তবুও তো সাধ্যমত যার যত টুকু আছে তা দিয়ে তো জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে পারি একে অন্যকে। আজ আপনার অর্জিত জ্ঞান যদি দান না করেন তাহলে মনে রাখবেন একদিন আপনি মারা যাবেন আর কবর দেয়ার সাথে সাথেই সেই অর্জিত জ্ঞান দান না করায় মাটির সাথে পচে জৈব সার হয়ে যাবে। প্রশ্ন করুন নিজেকে আপনি কতটুকু জ্ঞান অর্জন করলেন আর কত টুকু শোধ করে দান করলেন। তাই তো বলি “ওহে যুবক আছি জ্ঞানের ঋণে, শোধ করিবো কত দিনে?”

 

—————————————-

এস.এম.রাজিব আহম্মেদ

ইন্সট্রাকটর

ডিপার্টমেন্ট অব কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

চিরন্তন ছুটে চলা

চিরন্তন ছুটে চলা

বিয়ে,

পরস্পরের প্রতি কখনো ভালোবাসা, আবার কখনো তা নিতান্ত ছলনা, এরপর পৃথিবীতে আসা।
এরপর শৈশব, কৈশোর, যৌবন এবং সবশেষে বার্ধক্য অবশেষে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া।
এটাই পৃথিবীতে আসা-যাওয়ার গল্প।
কিন্তু রেখে যাওয়া কিছু স্মৃতির চলে নিরন্তন ছুটে চলা।

সেদিন তুমি পৃথিবীকে চিৎকার করে জানিয়েছিলে তোমার জন্মের কথা। হয়তো সবাই সেদিন খুশি ছিলো, কিন্তু তুমি ছিলে
অসহায়। এর পর মা-বাবার আদরে ধীরে ধীরে বড় হওয়া। তোমার বয়স যখন ১ বছর, তখন আধো আধো কথা বলো,
এরপর ২ বা ২ ১/২ বছরে ভালোভাবেই কথা বলতে শিখেছো কিন্তু তখনও ভালোভাবে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। সে সময়
পরিবারের মানুষের হাতে-হাত রেখে হাঁটার চেষ্টা।
বয়স যখন ৪/৫ তখন শুধু হাটঁতেই শেখনি, দৌড়ানোটাও শিখেছো তখন। এরপর শুরু হলো জীবনযুদ্ধ পড়ালেখা। তখন
তুমি প্রাইমারিতে, তখনও তুমি বোঝনি জীবনের মানে, বাবা মায়ের বা শিক্ষকদের শিখানো বুলি তোমার মুখে। তারপর
শুরু হলো সেকেন্ডারি পড়াশোনা। এখন তোমার মস্তিষ্ক কিছুটা বুঝতে পারছে, হচ্ছে কিছু জীবনের পরিবর্তন।

এরপর কলেজ- ভার্সিটির গন্ডি

যেখানে তোমার খোঁজার পরিপূর্ণ সময় জীবনের মানে।

তুমি অর্থ উপার্জন করলে, সংসারি হলে এরপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া। বয়স ৫০/৬০, তখন ভাবছো পরপারের কথা।
এটাই আমাদের জীবন।
কেন পৃথিবীতে আসলে? আর কেনই বা চলে যাওয়া? ভেবেছো কখনো?
ধরো তুমি একটা কাগজ দিয়ে উড়োজাহাজ তৈরি করেছো: কারন সেটি উড়িয়ে তুমি  বিনোদন পাবে অথবা তুমি একটা
হাত-পাঁখা তৈরি করেছো, সেটি তোমাকে গরমে একটু স্বস্তি দেবে। এটাই নিয়ম |
আমরা কিছু  করি, তা থেকে কিছু পাওয়ার আশায়।
তাহলে তুমি একটু অনুভব করো যে তুমিতো এমনি একটা কিছু করো নাই, তবে তুমি যে পৃথিবীতে আসলে তুমিও এমনি
আসো নাই। মহান আল্লাহ তোমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। আর তোমাকেও পৃথিবীতে কিছু করে যেতে হবে, যেন আরেক
জগতে তোমার  স্রষ্টা খুশি হয়। তাই আমাদের এই নিরন্তর পথচলা হোক ভালো কিছু কজের মাধ্যমে, যেন পৃথিবীতে
আমাদের নাম মুছে না যায়।
শুধু ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপ, ম্যসেন্জারে মধ্যে কমিনিউকেশনে আটকে জীবনটাকে যান্ত্রিক না করে বাবা-মা, পরিবার-
পরিজন, প্রিয়জন সকলকে সময় দেই সাধ্যমত আর সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করে হোক আমাদের ছুটে চলা সামনের দিকে।

সবশেষ একজন সফল মানুষের বিশেষ একটা উক্তির মাধ্যমে আমার আজকের লিখার ইতি টানতে চাই,,,– তিনি কনরাড
হিলটন (প্রতিষ্ঠাতা, হিলটন হোটেল চেইন), তিনি বলেছেন-

“সফল মানুষেরা কাজ করে যায়। তারা ভুল করে, ভুল শোধরায় – কিন্তু কখনও হাল ছাড়ে না”
অর্থাৎ তার চলে নিরন্তন ছুটে চলা। ধন্যবাদ।

লেখকঃ

মোঃ আলামিন হোসেন,
লেকচারার, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

 

আমি চিনি কিন্তু তিনি চেনেন না, কথোপকথনে কীভাবে অংশ নেব?

আমি প্রচুর মানুষের সাথে কথা বলি। যারা পরিচিত তাদের সাথে বলি আবার যারা অপরিচিত তাদের সাথে আরো বেশী বলি।  সরাসরি কথা বলি, মোবাইলের মাধ্যমে বরি, ওয়াটসএ্যাপ, বা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারতো আছেই। আমি যেহেতু প্রচুর ভ্রমন করি, দেশের ভেতরে বা দেশের বাইরে সেজন্য ভ্রমনের সময় আমার এই কথোপকথনের কাজটি বেশী হয়। আরো ভালো লাগে যখন রিকশা, সিএসজি, উবারে উঠি তখন চালকের সাথে গল্প করা। অনেক কিছু শেখা যায় যা লিখে বোঝানো যাবে না। যখন কোন কর্পোরেট ডিনারে বা অনুষ্ঠানে যাবার সুযোগ হয় তখন খুঁজে খুঁজে বের করি কাদের সাথে এখনও আমার পরিচয় হয়নি। তাদের কাছে গিয়ে কথোপকথন শুরু করে দেই। কারন প্রতিটি মানুষের একটি করে গল্প আছে যা কথোপকথনের মাধ্যমে জানা যায় এবং সেখান থেকে নতুন নতুন ধারানা তৈরি করা যায়।

মানুষের জীবন পুরোটাই যোগাযোগ নির্ভর। ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্তু আমাদের যোগাযোগ করতে হয়। বিভিন্ন উপায়ে আমরা যোগযোগ রক্ষা করি। আসলে যোগযোগ এমনই একটি বিষয় যা একজনকে সমৃদ্ধ করে তোলে। যোগাযোগের কথা উঠলেই আমরা মনে করি কর্মক্ষেত্রে আমার যোগাযোগ কেমন হবে? অফিসে বা নিজের ব্যবসায় আমি কিভাবে যোগাযোগ করবো? আসলে ব্যাপারটি পুরোপুরি সেটা নয়। যোগাযোগ সর্বত্র। নিজের ব্যক্তি জীবনের উন্নয়নের জন্য, মানসিকতা বিকাশের জন্য, মানুষের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এবং কর্মক্ষেত্রে শীর্ষ পারফরমারের তকমা লাগাবার জন্য বা ব্যবসায় উন্নতি সাধনের জন্য গুনগত যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমের মাঝে  কথোপকথন অত্যন্ত মূল্যবান। মনে রাখতে হবে  কথোপকথন করেক ধরনের মানুষের সাথে সাধারনত হয়ে থাকতে পারে

  • আপনি চেনেন এমন মানুষ
  • আপনি চেনেন না এমন মানুষ

যাদেরকে জানেন বা চেনেন এমন মানুষের সাথেই আমরা  কথোপকথন চালিয়ে যেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। ধরুন আপনি একটি কর্পোরেট ডিনারের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। আপনি আপনার একজন কলিগের সাথে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। আপনারা দুজনই অনুষ্ঠানের এককোনায় দাড়িয়ে আছেন এবং নিজেদের মধ্যেই অফিসের কর্মব্যস্ত দিন নিয়ে আলোচনা করলেন এবং ডিনার শেষ করে বাড়ি ফিরে এলেন। অথবা আপনি একটি কনফারেন্সে অংশগ্রহনের সুযোগ পেলেন এবং আপনার এক বন্ধুর সাথে গেলেন। আপনারা দুজনই বেছে নিলেন একদম কোনায় অবস্থিত দুটি চেয়ার এবং যথারিতী বসে পুরো সেশনে অংশ নিয়ে বাড়ি চলে এলেন।  অথচ আপনার ডান-বামে বা চারপাশে এমন অনেক মানুষ ছিলেন যাদের সাথে আপনি হাত মেলাতে পারতেন এবং পরবর্তিতে তাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতেন। আবার এমন চিত্রই বেশী দেখা যায় যে কাছে এসে মোবাইল ফোনটি বের করে হাসি দিয়ে বললেন একটা সেলফি তুলি? যাকে বললেন তিনিও হাসি দিয়ে সেলফিতে অংশ নিয়েই শেষ। যদিও প্রথম দুই ব্যক্তির তুলনায় তৃতীয় ব্যক্তি কিছুটা এগিয়ে কারন বাড়ি ফিরে তিনি যখন ছবিটি ফেসবুকে বা লিংকডইনে আপলোড করবেন চমৎকার একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তখন ফেসবুক সেই ব্যক্তিকে এআই (AI) ব্যবহারের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে যে কেউ তার ছবি ফেসবুকে যুক্ত করেছে। যদি স্ট্যাটাসটি পছন্দ হয় তাহলে তিনি তার প্রোফাইলে ঢ়ুকে দেখবার চেষ্টা করবেন। এখানে একটা লীড তৈরি হবার আশা থাকে। কিন্তু যিনি কথাও বললেন, ছবিও তুললেন না, তার জন্য ঐ দু-ঘন্টা বিনিয়োগের ফল কি হলো? কিন্তু বিষয়টি অন্যরকম হতে পারতো!

অনুষ্ঠানে বা কনফারেন্সে যাবার আগে যদি একটু হোম ওয়ার্ক করে নেয়া যায় যেমনঃ

  • খুজে বের করা আপনি কেন সেখানে আছেন বা কেন সেখানে যাচ্ছেন?
  • ঐ অনুষ্ঠানে কারা আসছেন, তাদের নিয়ে হালকা একটু গবেষনা করা।
  • অতিথীদের মধ্যে কারা আছেন যারা আপনার কাজের ক্ষেত্রের সাথে সংযুক্ত এবং তাদের বর্তমান প্রকল্প নিয়ে একটা ধারনা নেয়া।
  • অতিথীদের ফেসবুক বা লিংকডইনের প্রোফাইলটা একটু ব্রাউজ করে যেনে নেয়া কোন ধরনের কাজের সাথে তারা এই মুহুর্তে ব্যস্ত। এটি অবশ্য অনুষ্ঠানে থেকেও করা সম্ভব যদি আগে থেকে অতিথীদের তথ্য পাওয়া না যায়।
  • আসলে পুরো বিষয়টিকে গেম প্ল্যানের সাথে তুলনা করা যায়। গেম প্ল্যান যেমন একটি দল বা একজন খেলোয়াড়ের জন্য বুঝে নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন তেমনি একজন প্রফেশনাল বা গ্রাজুয়েটের জন্য তার নিজের গেম প্ল্যান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, তাহলেই সময় বিনিয়োগের ভালো ফল আশা করা যায়।

একটি বিষয় আমাদের সবসময় স্মরন রাখতে হবে যে প্রত্যেক অপরিচিত মানুষ আপনাকে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। অতএব তার সফলতা অনেক বেশী হয়ে থাকে যিনি অপরিচিত মানুষকে পরিচিত মানুষে রুপান্তর করতে পারেন। অপরিচিত মানুষকে পরিচিত করে তুলবার প্রথম ধাপ হচ্ছে  কথোপকথন।

কথোপকথনের অনেক সুবিধা রয়েছেঃ

  • যেকোন মানুষের সাথে কথোপকথন আপনাকে সম্পূর্ন নতুন একটি ধারনা বা প্রেক্ষপট তৈরিতে সাহায্য করে।
  • যেকোন মানুষের সাথে কথোপকথন আপনাকে একটি নতুন সুযোগের দরজা খুলতে সহায়তা করে
  • আপনাকে নতুনকে সনাক্ত করতে সহায়তা করে
  • আপনার জন্য নতুন লিঙ্ক তৈরি করে দেয় এবং নিজেকে সেই লিংকের সাথে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে।
  • জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করে।
  • দক্ষতা তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে।
  • ইতিবাচক মানসিকতা অর্জনে ভূমিকা রাখে।

ধরুন আপনি কোনও অনুষ্ঠানে রয়েছেন এবং আপনি দেখছেন যে আপনি অনুষ্ঠানের আয়োজক ছাড়া কাউকেই চেনেন না কিন্তু একটি ছোট্ট আলোচনা দিয়ে আপনি অনেক কিছুই অর্জন করতে পারেন। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে  কথোপকথনে বলা এবং শোনার মাঝে একধরনের ব্যালেন্স রাখাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এই বিষয়ে প্রায় সকলেই একমত হয়েছেন যে কথোপকথনে বলার চেয়ে শুনবার মানসিকতাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। গৌতম বুদ্ধের একটি চমৎকার উক্তি রয়েছে ”আপনার মুখ খোলা থাকলে আপনি শিখছেন না”। তার মানে জানবার মানসিকতা নিয়ে কথোপকথনে অংশ নিতে হবে।

দুর্দান্ত কথোপকথনের জন্য কয়েকটি টিপস

দুর্দান্ত যোগাযোগকারী সবসময় একধরনের বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন সর্বক্ষেত্রে এবং তিনি অত্যন্ত সচেতন থাকেন তার এই দক্ষতার ব্যপারে। তারা জানেন কিভাবে একটি দুর্দান্ত কথোপকথন চালিয়ে নেয়া যায়। অবশ্যই এটি একটি গুরুত্বপূর্ন দক্ষতা যা সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।

  • আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে একটি ইংরেজী বাক্য “I am excited”. কোন একটি কাজ করবার আগে আমাদের ভালো করে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে আমি যে কাজাট করতে যাচ্ছি তার জন্য আমার ভেতরে কোন উত্তেজনা কাজ করছে কিনা? যদি উত্তেজনা অনুভাব করা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনি সফলভাবে কাজটি শেষ করতে পারবেন। আর যদি না হয় তাহলে হাজার চেষ্টা করেও আপনি কোন সমাধান বের করতে পারবেন না। বের করতে পারবেন শুধু অজুহাত। কোন অপরিচিত মানুষের সাথে কথোপকথনের প্রধান শর্ত হলো নিজ থেকে মনে মনে বার বার বলতে থাকা “Yes I am Excited”.

 

  • সঠিকভাবে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন হলো শর্ত হলো বডি ল্যাংগুয়েজের উপর নজর রাখা বিশেষ করে “Nonverbal Skills” । আপনার সত্যিকারের মন থেকে একটি হাসি, ইতিবাচক অঙ্গভঙ্গি এবং আবেগ দিয়ে শ্রবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। কথোপকথনের সময় আপনার অভিব্যক্তিগুলোর (Expressions) উপর সর্বদা সচেতন থাকবেন। কোন একটি আলোচনায় অতি সাধারন কিন্তু মূল্যবান আপনার ভুরুর (Eyebrow) সঠিক ব্যবহারও কিন্তু আপনাকে একধাপ এগিয়ে নিতে পারে।

 

  • মাল্টিটাস্কিং করবেন না। কথোপকথনের সময় আমরা নিজের অজান্তেই একাধিক কাজের সাথে যুক্ত থাকি যেটা মোটেও ইতিবাচক নয়। মোবাইল নিয়ে খেলা করা, চাবির রিং ঘোড়ানো, এখানে এবং সেখানে দেখা, হাত গুটিয়ে পকেটের ভেতর রেখে দেয়া ইত্যাদি পরিহার অত্যন্ত জরুরী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কথোপকথনে মনোনিবেশ (Concentration) করা এবং মননশীলতা (mindfulness) নিশ্চিত করা।

 

  • ভালো করে দেখে নেন আপনার ভেতর ”আমিও” (me too) লক্ষণ আছে কিনা। ধরুন কেউ একজন তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অভিজ্ঞতার কথা আপনার সাথে শেয়ার করছেন। তার কথা শেষ হবার সাথে সাথেই আপনিও বলে উঠলেন আমারও এরকম একটি অভিজ্ঞতা আছে এবং বলা শুরু করে দিলেন। এটি দুর্দান্ত কথোপকথনের জন্য একটি বড় বাধা।

 

  • অনেকে বিশেষজ্ঞ হয়ে বিরোধী মন্তব্য তৎক্ষনাত দেবার চেষ্ট করেন, এটি আরেকটি বাধা দুর্দান্ত কথোপকথনের। প্রত্যেকেরই বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। সুতরাং আমাদের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে হবে, তাত্ক্ষণিকভাবে বিরোধীতা করা উচিত নয়। আপনার যদি ভিন্ন মতামত থাকে তাহলে বাড়ি ফিরে ঐ বিষয়ে ব্লগ লিখে নিজস্ব ব্লগ সাইটে পাবলিশ করে দিতে পারেন। তবে কোনভাবেই কথোপকথনের সময় তর্কে যাওয়া ঠিক নয়। যদি বন্ধুদের আড্ডা হয় বা অতি পরিচিত কেউ হয় সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা।

 

  • কথোপকথনে যাবার আগে এই মানসিকতা তৈরি করুন যে আপনি কিছুই জানেন না। তাহলেই আপনি অনেক কিছেই জানতে পারবেন। সক্রেটিসের একটি দারুন উদ্ধৃতি রয়েছে ”আমি জানি যে অনেক কিছুই আমি জানি না”

 

  • যেকোন কথোপকথন শুরু করার আগে প্রয়োজন প্রশ্ন আর সে প্রশ্ন হতে পারে অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যতকে ঘিরে। ধরুন গুগলের মতো বিশাল একটি সাইট খুলে বসে আছেন। কিন্তু কোন প্রশ্ন করছেন না। তাহলে ঐ বিশাল সাইটি খুলে বসে থাকার মানে কি হলো? গুগলের কাছ থেকে সত্যিকারের উপকার পেতে হলে আপনাকে যেমন একটি প্রশ্ন করা দরকার তেমনি পরিচিত বা অপরিচিত কারো কাছ থেকে সত্যিকারের উপকার বা লিংক পেতে হলে দরকার উন্মুক্ত প্রশ্ন। এমন প্রশ্ন যার উত্তর সাধারনত কেউ শুধুমাত্র হ্যা বা না দিয়ে শেষ করতে পারবে না। উদাহরন স্বরুপ বলা যায় যে যদি কোন অপরিচিত মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরে যদি বলেন “কোভিড আমাদের অনেক বিপদে ফেলে দিয়েছে না?” উত্তর আসতে পারে শুধু হ্যা সূচক মাথা নাড়ানো। আর যদি প্রশ্নটি এমনভাবে করা যায় কোভিডের কারনে যে চাপ অর্থনীতির উপর পড়েছে তার থেকে কি সহজে আমরা বের হতে পারবো, আপনি কি মনে করেন? এই খোলা প্রশ্নের কারনে তাকে মন্তব্য করতে হবে।

 

  • ”Happy Hello” কনসেপ্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন টুলস কথোপকথনের শুরুতেই একজনকে আকৃষ্ট করবার জন্য যা বিনা ব্যয়ে যে কারও সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার শক্তি হিসেবে কাজ করে। আসল হাসি দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় সবসময় কাজ করে।

 

  • ইংরেজীতে একটি কোট আছে “Happiness is an unexpected compliment”. প্রশংসা আরেকটি টুলস যা কখনও বৃথা যায় না তবে অপ্রয়োজনীয় প্রশংসা হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তাই আগামীতে যার সাথে আপনার কথোপকথনের সম্ভাবনা রয়েছে তাকে নিয়ে একটু গবেষনা করুন। আপনার একটি সত্যিকারের প্রশংসা কারো দিনকে রঙিন করতে অনেক গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করতে পারে।

 

  • কথোপকথনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন এবং অভিজ্ঞরা সবচেয়ে বেশী যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তা হলো চোখ, কান ও মন দিয়ে শোনা এবং কানেক্ট করবার চেষ্টা করা। মনে রাখবেন শ্রবণশক্তি দুর্দান্ত গল্প আবিষ্কারের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অস্ত্র যা আমরা অনেকেই নিজের অজান্তে অব্যবহারিত হিসেবে রেখে দেই।

কথোপকথন শুরু করবেন কিভাবে?

  • নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন যে আপনি কিছুক্ষনের মধ্যেই দারুন একটি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাচ্ছেন
  • নিজের কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখুন এবং দুটি হাত ফ্রী করে রাখুন
  • যার সাথে কথা বলবেন তার সম্পর্কে হালকা একটু জেনে নিন কাছে পরিচিত মানুষের কাছ থেকে অথবা তার লিংকডইন প্রোফাইল ঘেটে দেখে নিন তার বর্তমান কোন কাজ সম্পর্কে
  • এবার দেখুন তিনি কারো ইতিমধ্যে কথোপকথনে যুক্ত আছেন কিনা। যদি দেখেন তিনি একদম মুখোমুখি দাড়িয়ে কথা বলছেন তাহলে তাকে আর বিরক্ত করবেন না। একটু ধৈর্য ধরুন। যখনই দেখবেন তিনি আর মখোমুখি দাড়িয়ে কথা বলছেন না, তারমানে এখন সঠিক সময়।
  • কাছে গিয়ে বড় একটা হাসির মাধ্যমে সালাম দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান এবং আপনার আনন্দ প্রকাশ করুন। তারপর আপনার নিজের পরিচয়টি দিন।
  • তার কোন একটি কাজের প্রশংসা করতে পারেন যেমন: ”মানবতার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আশ্চর্যজন“ বা আপনার ব্লগ বা ভিডিও আমাকে অত্যন্ত অনুপ্রানিত করে”।
  • এবার কথোপকথন শুরু হতে হবে একটি প্রশ্ন দিয়ে যেমন: স্যার বা ভাইয়া আপনি এখন পর্যন্ত যে সমস্ত সৃজনশীল কাজ করেছেন তার জন্য অনুপ্রেরণার উত্স কী? এটা দিয়ে শুরু তারপর ধীরে এগিয়ে যাবেন।
  • কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং কোন প্রকার বাধা ছাড়াই। তবে সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং খুব বেশা পেচানো যাবে না।
  • ফিউচার লিংক তৈরি করতে হবে যেন তার সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে তার কোন ভিজিটিং কার্ড বা লিংকডইনে তার সাথে কানেক্ট হবার চেষ্টা করা। ফেসবুকে কানেকশনের জন্য রিকোয়েস্ট না করাই ভালো। কারন অনেকেই ফেসবুককে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহার করেন। তবে বাড়ি ফিরে কথোপকথনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ফেসবুকে বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট পাঠানো যেতে পারে।
  • সর্বশেষে একটি রিকোয়েস্ট রাখতে পারেন যে আমি কি আপনার সাথে এই কথোপকথনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন স্মৃতিটি ক্যামেরা বন্দি করতে পারি?
  • বাড়ি ফিরে ধন্যবাদ বার্তা প্রেরণ করতে ভুলবেন না।

 

বন্ধুরা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে প্রতিটি দুর্দান্ত কথোপকথন আপনার মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করাবার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। আর প্রতিটি দুর্দান্ত কথোপকথন আপনার জন্য তৈরি করে নতুন সম্ভাবনা। তাই লজ্জাকে পরিহার করে, উত্তেজনাকে অনুভব করে পরিচিত বা অপরিচিত মানুষের সাথে কথোপকথনে যুক্ত হন। কথোপকথন সবসময় ফলপ্রসূ হবে এমন কোন নিশ্চয়তা কারো পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় তবে আপনি যেন মন থেকে বলতে পারেন আপনি চেষ্টার ত্রুটি করেননি।


লেখকঃ কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

কিভাবে আপনার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবেন?

কিভাবে আপনার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবেন?

আপনি কি আরও ভাল কিছু করতে চান?

তবে নিজের মনকে কেন্দ্রীভূত করতে শিখুন।

একটি মনোনিবেশিত মন আপনাকে দ্রুত, দক্ষতার সাথে এবং কম ভুল সহ সমস্ত কিছু সম্পাদন করতে সক্ষম করে।

মনোনিবেশ করা মন আপনাকে বিক্ষিপ্ত ভাবনা এড়াতে সহায়তা করে।

একটি মনোনিবেশিত মন অস্থিরতা হ্রাস করে এবং অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি বাড়ায়।

 

কেন্দ্রীভূত মনের গুরুত্ব:

আপনি যদি আপনার মনের দিকে মনোযোগ দেন, আপনি লক্ষ্য করবেন যে এটি কখনও স্থির হয় না। এটি সর্বদা একটি চিন্তা থেকে অন্য চিন্তায় দ্রুত অগ্রসর হয়, প্রজাপতির মতো যা এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে যায়, খুব কমই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে।

আজকাল, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলির যুগে বেশিরভাগ মানুষের মন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, তাদের মনোযোগের সংক্ষিপ্ততা খুব সহজেই লক্ষ্য করে যায় যে তাদের চারপাশে কী চলছে।

  • আপনি কি একজন সফল শিক্ষার্থী হতে চান ?
  • আপনি কি আরও ভাল, দ্রুত এবং কম ভুল দিয়ে সবকিছু করতে চান?
  • তবে আপনার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে শিখতে হবে!
  • আপনার লক্ষ্য এবং একাগ্রতা উন্নত করতে , আপনি কী করবেন?
  1. আপনি যা করছেন তা নিয়ে ভাল থাকুন।
  2. অপ্রাসঙ্গিক চিন্তাভাবনা উপেক্ষা করুন।
  3. আপনি যা করছেন তার প্রতি আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ এবং শক্তি পরিচালনা করুন।
  4. মনোযোগের বিস্তার  বৃদ্ধিকরণ ।
  5. অস্থিরতা এবং মনের আন্দোলন হ্রাস করুন।
  6. আপনার ধ্যান এবং চাক্ষুষ দক্ষতা উন্নত করুন।
  7. আপনার বোধগম্যতা এবং অধ্যয়ন এবং শেখার দক্ষতা উন্নত করুন।

আপনি কিভাবে আপনার লক্ষ্য উন্নতি করবেন?

আপনি সাধারণ মানসিক অনুশীলনগুলির মাধ্যমে আপনার মনোযোগকে উন্নত করতে পারেন যা আপনার মনকে তীক্ষ্ণ করবে, আপনার মনোযোগের সময় বাড়িয়ে তুলবে এবং আপনাকে মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম করবে।

আপনার শরীরচর্চা যেমন আপনার পেশী শক্তিশালী করে, তেমনি একাগ্রতা অনুশীলনের সাথে আপনার মন অনুশীলন করা আপনার কেঁদ্রীভূতকরণ এবং মনোযোগ দক্ষতাকে শক্তিশালী করে।

 

আপনি কী ধরনের অনুশীলন শিখবেন?

অনুশীলনের মধ্যে, আপনি এমন ব্যায়ামগুলি খুঁজে পাবেন যাগুলির জন্য আপনি প্রায়শই যে ক্রিয়াকলাপগুলি করেন তার প্রতি আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ স্থির করে নেওয়া প্রয়োজন, তবে যা আপনি সম্ভবত স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং অযৌক্তিকভাবে করেন যেমন:

  • একটি সালাদ প্রস্তুত
  • থালা ধোওয়া
  • কফি পান করছেন
  • এবং আরো অন্য কিছু

 

এই অনুশীলনের উদ্দেশ্য হ’ল মনকে আপনি যা করছেন তার দিকে মনোনিবেশ করা শেখানো এবং এটি অন্য চিন্তায় ভ্রমন করতে না দেওয়া।

কোনও নির্দিষ্ট কাজের প্রতি আপনার মনোযোগ কেন্দ্রীকরণের উপর জোর দিয়ে, আপনি আপনার মনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেন এবং এটি আপনাকে মানতে শিখিয়ে দেন।

একটি গল্প থেকে শেখ:

এক সুন্দর দিনটিতে একটি হাতি গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে শান্তভাবে সবুজ পাতা খাচ্ছিল। হঠাৎ একটি ছোট্ট মাছি উড়ে এসে বাজলো এবং হাতির কানে নেমে গেল। হাতি শান্ত থাকল এবং খাওয়া চালিয়ে গেল, মাছি থেকে গাফেল।

মাছিটি উড়ে এলো হাতির কানের চারপাশে, হু হু করে শব্দ করে, কিন্তু হাতি এটিকে অগ্রাহ্য করতে থাকে।

মাছিটি উপেক্ষা করা পছন্দ করে না, তাই মাছিটি ডানাগুলিকে শক্তভাবে উল্টানো দিয়ে হাতির মুখের সুড়সুড়ি দেওয়া শুরু করে। তবুও, হাতিটি খাওয়া চালিয়ে গেল, মাছিটির ক্রিয়া দ্বারা বিরক্ত না ।

হাতির আচরণে মাছিটি বিস্মিত।

“তুমি কি কানে কম শুনো?” মাছিটি হাতির কানে চিৎকার করে উঠল।

“না!” উত্তর দিল হাতি।

“আপনি আমার গুঞ্জনে এবং আমার মুখের সামনে আমার ডানা ফাটিয়ে দেওয়ার কারণে কেন বিরক্ত হচ্ছেন না?” মাছি জিজ্ঞাসা করলেন।

“কেন আপনি এত অস্থির এবং কোলাহল করছেন? কেন আপনি কেবল কয়েক মুহূর্তের জন্য স্থির থাকতে পারেন না?” হাতিটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, এবং শান্তভাবে পাতা খাওয়া চালিয়ে গেলেন।

মাছি উত্তর দিয়েছিল, “আমি যা দেখি, শুনি এবং অনুভব করি সেগুলিই আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং আমার চারপাশের সমস্ত শব্দ এবং গতিবিধি আমার আচরণকে প্রভাবিত করে । এমনকি আপনার খাবার চিবানো শুনে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে” ”

“আপনার গোপন রহস্যটি কী? আমার কোলাহলমূলক কর্ম সত্ত্বেও আপনি কীভাবে এত শান্ত এবং স্থির থাকতে পারেন?” মাছি জিজ্ঞাসা করলেন।

হাতি খাওয়া বন্ধ করে বলল:

“আমার পাঁচটি ইন্দ্রিয়গুলি আমার শান্তিকে বিঘ্নিত করে না, কারণ তারা আমার মনোযোগকে শাসন করে না। আমি চিন্তাভাবনা, কর্ম এবং প্রতিক্রিয়াগুলির নিয়ন্ত্রণে আছি এবং তাই আমি যেখানেই চাই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি your আপনার গুঞ্জন সহ আমি কোনও ঝামেলা উপেক্ষা করতে পারি I এবং আপনার ডানা ঝাপটানো। ”

“এখন আমি খাচ্ছি,” হাতিটি আরও বলেছিল, “আমি খাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিমগ্ন হয়েছি। এইভাবে, আমি আমার খাবার উপভোগ করতে এবং এটি আরও ভালভাবে চিবিয়ে নিতে পারি । আমি যা কিছু করছি তার নিয়ন্ত্রণে আছি এবং তাই , আমি শান্তিতে থাকতে পারি এবং আমার খাবার উপভোগ করতে পারি। ”

হাতির উত্তরটি মাছিটি বিস্মিত হয়েছিল, কারণ এর কোলাহলপূর্ণ আচরণ সর্বদা মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং অন্যান্য সমস্ত প্রাণীকে বিরক্ত করে। হাতিটি মাছিকে যে পাঠদান শিখিয়েছিল তার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল এবং দ্রুতগতিতে দিগন্তের দিকে উড়ে গেল।

এই গল্পটি দেখায় যে মনের দিকে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হওয়া এটি কতটা দরকারী।

আপনি শব্দ, দর্শনীয় স্থান, বিভিন্ন গন্ধ এবং পরিবেশ আপনার মনকে প্রভাবিত করতে, আপনার মনোযোগ সরিয়ে দিতে, আপনার শান্তিকে ব্যাহত করতে এবং আপনার দক্ষতা হ্রাস করতে পারে বা আপনি আপনার চিন্তাভাবনা এবং ক্রিয়াকলাপের দিকে মনোনিবেশ করতে এবং আরও ভাল কোনও কার্য সম্পাদন করতে পারেন।

মন মাছিটি মতো অস্থির, তবে আপনি এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে, এটিকে শান্ত করতে এবং তার আশ্চর্যজনক ক্ষমতা থেকে উপকার পেতে শিখতে পারেন।

 

লেখকঃ

মোঃ আল-মামুন রশিদ

ইন্সট্রাকটর, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

BSDI

জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার নাম বর্তমান

বিভিন্ন মোটিভেশন চ্যানেলে কিংবা Self Help বইগুলিতে আমরা সবসময় পড়ি, শুনি বা দেখি যে সর্বদা ইতিবাচক ভাবনা পোষন করুন

“মনে কোন নেতিবাচক চিন্তার জন্ম দিবেন না। কারন আপনি যা ভাববেন তাই হয়ে উঠবেন।” 

কিন্তু আমার কথা হল, এই সুন্দর কথাগুলির কার্যকারিতা আমাদের ওপর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। আমরা যখন পড়ি , শুনি বা দেখি তখন আমাদের মধ্যে কিছু করার জোশ আসে তারপর আবার আমরা একইভাবে জীবনযাপন করতে থাকি যদিও কথাগুলি সত্য। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের জীবনের গল্প আলাদা একই কথা যে সবার কাছে সত্য হবে তেমনটা নয়। সবাই কথাগুলোকে কেমনভাবে তার জীবনে প্রয়োগ করছে সেটাই তার কাছে সত্য। এই যে আমি আর্টিকেলটা লিখছি , আমি তোমাকে সরাসরি বলতে পারি না এটা করো , ওটা করো কারন তুমি বুঝবে তোমার জন্য কোনটা করা উচিত কোনটা নয়? মোটিভেটররা আমাদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারে , আমাদের অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে কিন্তু তারপরের কাজগুলো তো আমাদের নিজেকেই করতে হবে তাই না ? আমি জানি না তোমরা এখন কে কেমন পরিস্থিতির মধ্যে আছো , হয়তো কেউ চাকুরির পরীক্ষায় বার বার ব্যর্থ হয়ে জীবনে আর কিছু হবে না বলে ক্ষান্ত হয়ে আছো।কিংবা কেউ প্রিয়জনেদের হারিয়ে আজ যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছো কেউবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নিজেকে শেষ করে দেবার কথা ভাবছো কেউবা টাকা রোজগারের চেষ্টায় রোজ দৌড়াচ্ছ , কিন্তু দিন শেষে ক্লান্তির বলিরেখা তোমার অন্তর আত্মাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। কেউবা অহেতুক দুঃশ্চিন্তা করে রাতের পর রাত জেগে কাটাচ্ছো। আমি শুধুমাত্র কয়েকটি উদাহরণের কথা বললাম ,এর বাইরেও আরো অনেক সমস্যা , আরও জটিল পরিস্থিতি অনেকের জীবনে থাকতে পারে বা রয়েছে কারন জীবন মানেই সংগ্রাম সংগ্রাম আছে বলেই তো জীবনে বাঁচার আনন্দ আছে সংগ্রাম থেকেই তো শক্তির উদয় হয়। এমনকি কখনও কখনও যন্ত্রণাও এক দারুণ শিক্ষক হয়ে উঠতে পারে প্রত্যেকের কাছে আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলিকে আমরা বদলাতে পারি না , এমনকী কখন কী ঘটবে সেটাও কেউ বলতে পারবো না, কিন্তু ঘটনা গুলির ওপর আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটা সম্পূর্ণ আমাদের ওপর নির্ভর করে জীবন কখনো নিখুঁত হয় না , আনন্দবিষাদ,ভালোমন্দ সবটুকু নিয়েই তো জীবন ,আর সেটা আমাদের উপলব্ধি করা উচিত। প্রত্যেকটা ঘটনার একটা সময়সূচি থাকে ঘটে আবার সেই ঘটনা চলেও যায় আমাদের জীবন থেকে কিন্তু আমারা মাসের পর মাস , বছরের পর বছর অনেক দুঃখ জনক ঘটনা কে আঁকড়ে ধরে থাকি সেটা থেকে বেরোতে পারি না , যত ভোলার চেষ্টা করি ততবার ফিরে আসে সেই মুহুর্তগুলি।কিন্তু জীবন মানে তো এগিয়ে চলা পিছনে ফিরে দেখা নয়

একটা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে গড়ে প্রতিদিন প্রতিটি মানুষের মনে সত্তর হাজার চিন্তার সমাবেশ ঘটে এর মধ্যে মজার কথা হলো তার মধ্যে সত্তর শতাংশই হলো নেতিবাচক চিন্তা চিন্তাগুলির ওপর যদি একটু সজাগ হওয়া যায় এবং কোন চিন্তাটা কার্যকারী কোনটা নয় সেটা বিচার করা যায় তাহলে হয়তো জীবনের মান একটু উন্নত হবে জানি তোমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হচ্ছে , অনেক জটিল সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে , তাই সর্বদা নিজেকে পজিটিভ রাখা দায় কিন্তু আমি দেখেছি প্রতিদিন যদি কিছু ছোটো ছোটো সু অভ্যাস আমরা গড়ে তুলি তাহলে হয়তো আমরা কিছুটা পজিটিভ থাকব, খুশি থাকব , নিজেকে ভালোবাসতে ভালো রাখতে শিখব কারন নিজেকে ভালোবাসতে শিখলে তবেই মানুষ অপরকে ভালোবাসতে শেখে

() দিনটা শুরু হোক ইতিবাচক ভাবনা দিয়ে :- 

আমরা যদি সকালটা শুরু করি কিছু ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে , তাহলে সারাটাদিন আমরা ইতিবাচক ভাবনা নিয়েই কাটাতে পারব। সকালে ঘুম থেকে ওঠে যদি আমরা আমাদের প্রিয়জনদের মুখগুলো দেখতে পারি তারা সুখে আছে, ভালো আছে, এটা কী একটা সুন্দর পুরষ্কার নয়আমাদের জীবনে বলো ? সকালে যদি একটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ফর্দি বানাই যে , পাঁচটি কারনে আজ আমি কৃতজ্ঞতা অনুভব করছি তাহলে দেখবে ভালো লাগবে, দিনটা ভালো কাটবে। কী নেই তা না ভেবে কী আছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি তাহলেই আমরা পজিটিভ থাকবো

 

() নতুন কিছু শেখার ইচ্ছা :-

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যদি আমরা নতুন কিছু শিখি বা পড়ি সেটার রেশ সারাদিন আমাদের বাকি কাজ গুলোতে পড়বে হতে পারে নতুন কোনো Self Help Book যেটা আমাদের কাজে উদ্যম প্রেরণা জাগাতে, নতুন করে ভাবতে সাহায্য করবে। হতে পারে কারো Biography যারা জীবন যুদ্ধে হার মানে নি , অথবা কোনো Podcast শুনতে পারো কিংবা প্রেরণা মূলক নিবন্ধ গুলি পড়তে পারো। আরেকটি বিখ্যাত প্লাটফর্ম রয়েছে যার নাম Ted Talks যেখানে বিশ্বজুড়ে খ্যাতনামা মানুষজন তাদের আইডিয়া গুলি শেয়ার করে থাকেন সেটা দেখতে পারো যেখানে অনেক নতুন জিনিস শিখতে পারবে তুমি ।ফলে আমাদের ভাবনাতেও ইতিবাচক চিন্তার বীজ জন্মাবে

() নিয়মিত এক্সারসাইজ অনুশীলন:-

বলা হয়ে থাকেসুস্থ শরীরে সুস্থ মন বাস করে।রোজ অন্ততপক্ষে ২০ মিনিট যদি আমরা এক্সারসাইজ করি তাহলে শরীরে একধরনের এনার্জি কাজ করবে , যা আমাদের কার্যক্ষমতাকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলবে বসে থাকা শরীরে রোগ নেতিবাচক চিন্তা বেশি করে বাসা বাঁধে। তাই শরীর মনকে সুস্থ রাখতে হালকা এক্সারসাইজ কর। এতে মনের শক্তি পজিটিভিটি বাড়বে

( ) প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা কর, কথা বল :-

প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বল, তাদের আইডিয়াগুলি গ্রহণ কর তাঁরা কিভাবে দুঃখের দিন গুলিকে জয় করেছে , কিভাবে নতুনকরে বাঁচার প্রেরণা পেয়েছে তাদের বক্তৃতাগুলি শোনো হতে পারে কোনো ফেসবুক কমিউনিটি যাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পার, তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারো কিংবা কোনো সেমিনারে যেতে পারো প্রেরণা মূলক ভিডিও গুলি দেখো এখন যুগ ডিজিটাল হয়েছে Online আমরা গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারি এবং নিজেকে পজিটিভ রাখতে পারি যাঁরা তোমার ইচ্ছা শক্তিকে Boost করবে তাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাও 

() কিছুটা সময় নির্জনে কাটাও :-

১০ মিঃ হলেও কিছুটা সময় নিজের সঙ্গে কাটাও সারাদিনের ব্যস্ত জীবনে আমরা নিজেদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই না বন্ধুবান্ধব ,পরিবার , কর্মজগত , সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে তাদের প্রভাব আমাদের ওপর সর্বদা পড়তেই থাকে আমরা কি করছি ? কেন করছি ? কেন দুঃখ পাচ্ছি ? আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী? এই প্রশ্নগুলি নিজেকে করলে আমরা উত্তর পেয়ে যাব নিজেদের ভাবনায় একটু বদল আনলে জীবনের রং বদলাবে কারন তোমার জীবনের প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমার ভেতরেই লুকিয়ে আছে

( ) বর্তমানে বাঁচো :-

আমাদের জীবনের দুঃখের অন্যতম কারণ আমরা মুহূর্তের জীবনযাপন করি না হয় আমরা অতীতের কোনো ঘটনা নিয়ে সর্বদা দুঃখী থাকি নয়তো ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার ভয়ে দুঃশ্চিন্তা করি আমরা ভাবি ইশ্ কাল যদি আমার সাথে এটা ঘটে , আমার প্রিয়জন যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় , আমার চাকরিটা যদি হাত থেকে চলে যায় তো আমার কী হবে ? আমরা ভাবি আমরা বুঝি এই পৃথিবীতে চিরকাল থাকব। তাই আমাদের ভালোলাগা খুশি থাকা আমরা Postponed করতে থাকি কালকের ওপর আর কাল যদি আমাদের জীবনে আর না আসে ? আমরা কখনও এটা ভাবি না ; ভাবতেও ভয় লাগে। তাই জীবনের মুহূর্তগুলোকে আমরা নষ্ট করতে থাকি। আজকের দিনটাকে যদি আমরা শেষ দিন ভাবি বা এই মুহূর্তটাকেই যদি শেষ মুহূর্ত ভাবি তাহলে জীবনের গল্পটাই পাল্টে যাবে বাইরের কোনো শক্তির প্রয়োজন হবে না তোমাকে পজিটিভ রাখার , তোমার ভিতরের শক্তিই তোমাকে Positive রাখবে তুমি দেখতে পারবে জীবনে কত যাদু আছে , কত আনন্দ রয়েছে প্রতিটি পরতে পরতে।

 

লেখকঃ

মোঃ আব্দুল্লা-আল-মামুন রুপম

ইন্সট্রাকটর, ইলেকট্রিক্যাল

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

BSDI | Bangladesh Skill Development Institute

BSDI | Bangladesh Skill Development Institute

Bangladesh Skill Development Institute (BSDI) ড্যাফোডিল পরিবারের  একটি প্রতিষ্ঠান  যা ২০০২ সাল থেকে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেশাদার মানবসম্পদ বিকাশের জন্য কাজ করছে। BSDI বাংলাদেশের পেশাদার দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলির ঐতিহ্যগত  ধারণাটিকে পুরোপুরি পরিবর্তন করেছে। আজ বিএসডিআই বিজ্ঞান, প্রকৌশল, আর্টস স্টাডি এবং পেশাদার এবং নেতৃত্বের বিকাশের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান।

কর্পোরেট প্রশিক্ষণ শিল্পে বিএসডিআই খুব জনপ্রিয় নাম যা খুব অল্প সময়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। BSDI  বহু জাতীয় ও ট্রান্সন্যাশনাল সংস্থার মানুষকে কর্পোরেট প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে BSDI প্রশিক্ষিত ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম , কর্পোরেট পেশাদার এবং দক্ষ মানবসম্পদ বিকাশের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখছে। সম্প্রতি বিএসডিআই উদ্যোক্তা  তৈরির কাজ শুরু করেছে।

আজ BSDI তার প্রচেষ্টার জন্য বাংলাদেশের প্রথম সর্বোচ্চ নির্বাচিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পরিণত হয়েছে। BSDI তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেখার একটি অভিপ্রায় জাগায় এবং তাদের আজীবন নেতৃত্বের ক্ষমতা দেয়।

 

লক্ষ শুধু জ্ঞান অর্জন নয়

লক্ষ শুধু জ্ঞান অর্জন নয়

এই পৃথিবীতে তথা গোটা বিশ্বজগতে জানার মত কত কি না আছে। আমরা প্রতিনিয়ত সে-সব জ্ঞান, অর্জন করে চলেছি। প্রকৃতি,প্রযুক্তি,প্রাণীবিজ্ঞান, মহাকাশ, ইত্যাদি, ইত্যাদি। মানুষ অনেক আগেই চাঁদে পর্যন্ত পৌছে গেছে।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়োয়া আমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা

তোমাকে অবশ্যই জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন চূড়ায় পৌছানোর পাশাপাশি মানুষের হৃদয়ে পৌছাতে হবে এবং তোমার নিজের অন্তরকেও করতে হবে পবিত্র। শিক্ষার অন্যতম এবং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মনুষ্যত্ববোধ।

দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য

নিজের ব্যাক্তিত্বকে উন্নত করতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিৎ যথার্থ এবং তোমার শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ সেবা। দেশ মানুষের সেবায় নিজেকে প্রস্তুত করতে পারাটাই প্রকৃত শিক্ষা। তুমি একজন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়োয়া শিক্ষার্থী। তোমার শিক্ষার পূর্ণতা পাবে তখনই, যখন তুমি তোমার অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে সততার সাথে দেশের সেবায়, মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারবে।

সেবা করার জন্য তোমাকে যেমন জ্ঞানার্জন করতে হবে, পাশাপাশি তোমার অন্তরকে করতে হবে পবিত্র। মিথ্যা বলা, লোভ,প্রতারনা, এগুলো একেকটি হৃদরোগ। অন্তরের এই রোগগুলোকে দূরীভূত করতে না পারলে তোমার সকল শিক্ষা হবে অনর্থ।

উদ্দেশ্য যদি হয় সেবা, তোমার ক্যারিয়ার এমনিতেই হবে সুউচ্চ।

নিশ্চয়ই সকল কর্ম, মানুষের নিয়তের উপর নির্ভরশীল

অভিনন্দন হে! প্রিয় প্রকৌশল শিক্ষার্থী, তুমি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছ। তুমি হতে যাচ্ছ একজন প্রকৌশলী। তোমার চিন্তা নিশ্চয়ই সৃজনশীল। তোমার এই সৃজনশীল হ্রদয়কে আমরা (শিক্ষকগণ ) সন্মান জানাই। তোমার এই সৃজনশীল মনোভাব এবং অর্জিত জ্ঞানের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত নতুন কিছু দ্বারা আমরা হতে চাই পুলকিত। তোমার মত শিক্ষার্থীদের সৎ কর্ম দ্বারা হতে চাই গর্বিত শিক্ষক। প্রযুক্তির পিঠে চড়ে চষে বেড়াবে তুমি সমগ্র বিশ্ব।

 

বিশ্বজগত দেখবে তুমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে

তোমার দৃষ্টিকে শুধু বইয়ের পৃষ্ঠার মাঝেই সংকীর্ণ করোনা, দৃষ্টিকে বিস্তৃত করো তাত্ত্বিক, ব্যাবহারিক এবং মনুষ্যত্বের দিকে। তোমার দ্বারা যা উদ্ভাবন হবে তা যেন হয় মানুষের কল্যাণে। তোমার পরবর্তী প্রজন্ম যেন তোমাকে শুধু বইয়ের পাতায় নয় বরং চারপাশের বিভিন্ন কল্যাণকর 

উদ্ভাবনের মাঝে তোমাকে খুজে পায়।

তোমরা ইতিমধ্যেই প্রযুক্তিকে যথাযথ ব্যাবহার করছ। বিশেষত COVID 19 এর প্রকোপে তোমরা তোমাদের জ্ঞানার্জন অব্যাহত রেখেছ অনলাইন শিক্ষা ব্যাবস্থার মাধ্যমে। অনেকেই এই প্রযুক্তি নিরর্থক করে রেখেছ। নিজের বিবেককে প্রশ্ন করো। তুমি কি জ্ঞানান্বেষী, নাকি জ্ঞানের আলো থেকে পলায়নকারী? প্রযুক্তির যথাযথ ব্যাবহারে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। আর তাছাড়া তোমরা কারিগরি শিক্ষার্থী,

আমাদের শিক্ষা যখন কারিগরি, আমরা দুনিয়টাকেই বদলে দিতে পারি

পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হবে এটা খুবই স্বাভাবিক, এই পরিবর্তনে তোমার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, পরিবর্তনের এই গতিকে বহুগুণ ত্বরান্বিত করবে। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে তোমার এই অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য যেন মহৎ হয়। নতুন প্রজন্ম যেন তোমার প্রচেষ্টায় এক উন্নত, আধুনিক এবং সুন্দর পৃথিবী উপহার পায়। 

পৃথিবীর ইতিহাস যেন তোমাকে কল্যাণকামী হিসেবেই সনাক্ত করে। তুমি হয়ত কোন একসময় চলে যাবে, তোমার কর্ম তোমাকে চিরজীবী করবে। সবার শিক্ষার উদ্যেশ্য হোক উন্নত বিবেকবোধ , মনুষ্যত্ব, উদ্ভাবনী মনোভাব, সেবা করার প্রয়াস এবং কল্যাণকর চিন্তার মাধ্যমে এক নতুন পৃথিবী গড়ার

লেখকঃ 

নাহিদুল ইসলাম (নাহিদ)

ইন্সট্রাক্টর 

ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্ট

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট