ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতি

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ [পর্ব ২]

চাকুরীর জন্য সিভি মেইল করার খুটিনাটি

 

চাকুরীদাতা তার চাকুরীর বিজ্ঞাপনে প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ্য করার পর সাধারনত একটি ইমেইল এড্রেস দিয়ে থাকেন যাতে আগ্রহী প্রাথীগন উক্ত ইমেইল এড্রেস এর মাধ্যমে চাকুরীর জন্য আবেদন করতে পারেন। ইমেইলে চাকুরীর জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয়ে আপনার জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী। চলুন এই পর্বে জেনে আসি সেইসব মৌলিক বিষয়গুলো ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতি।

১) “To” তে চাকুরীদাতার ইমেইলঃ
ইমেইলের “To” এর ঘরে চাকুরীর বিজ্ঞাপনে দেয়া ইমেইল এড্রেসটি লিখতে হবে। “To” তে যার মেইল এড্রেসটি দেয়া হয় তিনি হচ্ছেন প্রকৃত প্রাপক বা যাকে মেইলটা লেখা হয়েছে।

এছাড়া আরো দুটি অপশন রয়েছে, “Cc” এবং “Bcc”।
Cc এর পূর্ণরূপ Carbon Copy। প্রকৃত প্রাপক ছাড়া যাদের জানা দরকার যে মেইলটি পাঠানো হয়েছে অথবা মেইলের বিষয়বস্তুর সাথে যারা সম্পর্কিত এমন ব্যাক্তিদের ইমেইল এড্রেসগুলো থাকবে “Cc” তে। উল্লেখ্য যে “To” এবং “Cc” তে যাদের ইমেইল এড্রেস থাকবে মেইলটি পাওয়ার পর তারা প্রত্যেকে “To” তে থাকা ইমেইল এড্রেসগুলো দেখতে পাবে পাশাপাশি “Cc” তে থাকা ইমেইল এড্রেসগুলোও দেখতে পাবে।

এবার আসি “Bcc” তে। Bcc এর পূর্ণরূপ Blind Carbon Copy। “Bcc” তে যাদের ইমেইল এড্রেস রাখা হয় তারা প্রত্যেকেই মেইলটি পান তবে “Bcc” তে তার পাশাপাশি অন্য যাদের ইমেল এড্রেস রাখা হয়েছে সেটা তাদের কাছে গোপন থাকে।

“Cc” এবং “Bcc” সাধারনত কর্পোরেট কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সিভি মেইল করার জন্য সাধারনত আমরা শুধুমাত্র “To” অপশনই ব্যবহার করি। 

২) সাবজেক্টঃ
অনেকে ইমেইলের সাবজেক্ট না লিখেই ইমেইলটি পাঠিয়ে দেন। এটি অত্যন্ত বড় একটি ভুল। ইমেইলের বিষয়বস্তু অল্প কথায় ইমেইল সাবজেক্ট এ লিখতে হবে যাতে করে প্রাপক খুব সহজেই পুরো মেইলটি পড়ার আগেই মেইল এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারনা পান।

উদাহরনঃ
ধরুন আপনি কোন চাকুরীর বিজ্ঞাপনে দেখলেন যে কোন কোম্পানি প্রোডাকশন অফিসার পদে কিছু সংখ্যক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিবে। সেক্ষেত্রে উক্ত চাকুরীর আবেদন করতে ইমেইলের সাবজেক্ট এ লিখতে হবে “Applying for the post of “Production Officer”.

৩) ইমেইল বডিঃ
চাকুরীর আবেদনের ক্ষেত্রে ইমেইলের বডিতে কভার লেটার লিখতে হয়। চাকুরীর বিজ্ঞাপনে উল্লেখ্যিত পদে নিয়োগের জন্য আবেদনপত্রকেই কভার লেটার বলা হয়। একটি কভার লেটারে মূলত তিনটি অংশ থাকে:ক) Introduction (প্রথম অংশ)
‘Dear Sir/Mam’ সম্বোধন ব্যবহার না করে ‘Dear Concern/Hiring Official’ দিয়ে কভার লেটার শুরু করুন। এই অংশে অল্প কথায় কোন পদের জন্য আবেদন করছেন? নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে কীভাবে জানলেন? উল্লেখ্যিত পদে কাজ করার জন্য আপনি কেন আগ্রহী? এই তিনটি বিষয় লিখুন।

খ) Body (মূল অংশ)
চাকুরীর বিজ্ঞাপনে উল্লেখ্যিত পদের জন্য আপনি কী কারণে যোগ্য, যে পদের জন্য আপনি আবেদন করছেন, তার সাথে আপনার যোগ্যতা কীভাবে সম্পর্কিত এই অংশে তা অল্প ও স্পষ্ট ভাষায় ব্যাখ্যা করুন।

গ) Closing (শেষ অংশ)
সিভির সাথে সংযুক্ত আপনার সিভিটি দেখার অনুরোধ করে ইন্টারভিউর জন্য আপনার আগ্রহ এবং নিয়োগকারী কীভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন, তা উল্লেখ করুন শেষ অংশে।

ইন্টারনেটে প্রচুর কভার লেটার স্যাম্পল পাওয়া যায়। এমন কিছু ওয়েবসাইট হলো রেজ্যুমে জিনিয়াস (resumegenius.com), হাডসন (hudson.com), জবস্ক্যান (jobscan.com) ইত্যাদি।

৪) সিগনেচারঃ
ফ্রেশাররা ইমেইলের শেষে নিজের নাম, সর্বশেষ ডিগ্রি, ইউনিভার্সিটি/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, মোবাইল নাম্বার এবং ইমেল ইত্যাদি উল্লেখ্য করুন এই অংশে। যারা চাকুরীজীবি তারা নিজের নাম, বর্তমান পদের নাম, বর্তমান কোম্পানির নাম, মোবাইল নাম্বার এবং ইমেল ইত্যাদি উল্লেখ্য করুন

৫) এটাচমেন্টঃ
সর্বশেষে এটাচমেন্ট বাটনে ক্লিক করে আপনার সিভির সফট কপি মেইলে সংযুক্ত করুন। সিভি অবশ্যই পিডিএফ ফর্মেটে সংযুক্ত করবেন। বর্তমানে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডেই পিডিএফ বানানো যায় তারপরেও যদি সম্ভব না হয় অনলাইনে ফাইল কনভার্ট করা সম্ভব। সিভির ফাইলের নাম যাতে নিজের পূর্ন নাম হয় সেটা লক্ষ্য রাখুন।
যেকোন চাকুরীর আবেদন নিজের মেইল থেকে করুন। যে মেইল থেকে আবেদন করবেন তার গুগুল একাউন্ট প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আপডেট করুন। গুগুল একাউন্টে আপনার পূর্ন নাম এবং একটি ফরমাল প্রোফাইল পিকচার সংযুক্ত করুন। সর্বশেষে যা বলতে হয় তা হল বানানের ক্ষেত্রে অবশ্যই মনোযোগী এবং সতর্ক থাকবেন।

আজ এই পর্যন্তই।
আমন্ত্রন থাকল পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য। আগামী পর্বে থাকছে চাকুরীর ইন্টারভিউতে কেমন হওয়া উচিত আপনার পোশাক

 লেখক: মোঃ জায়েদুল হক, ইন্সট্রাকটর,

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

Comments are closed.