পাওয়ার প্লান্টে এত ভাড়ী কয়েল ঘুরাবে কোন সে দৈত্য?

পাওয়ার প্লান্টে এত ভাড়ী কয়েল ঘুরাবে কোন সে দৈত্য?

বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টা অনেকেই ভালভাবে বুঝতে যেয়েও বুঝতে পারোনা। এই ব্লগটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে সহজভাবে লিখার চেষ্টা করেছি।বিদ্যুৎ উৎপাদন এর জন্য একটি তার বা পরিবাহী কোন দন্ডকে চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে ঘুরানো হলেই তার বা সেই দন্ডটিতে ভোল্টেজ উৎপন্ন হবে। তারটিতে কি পরিমান ভোল্টেজ উৎপাদন হবে তা নির্ভর করে একক সময়ে কি পরিমান চুম্বক বলরেখা পরিবাহী তারের দ্বারা কাট (কর্তন) হয় তার উপর।

 

একটি পরিবাহী তারকে ফ্লাক্স এর ভেতর ঘুরানো হলে যে পরিমান ফ্লাক্স কর্তন করবে, দুইটি বা ততোধিক পরিবাহী তারকে চুম্বক ক্ষেত্রে ঘুরানো হলে নিশ্চয়ই অধিক ফ্লাক্স কর্তন করবে, ফলে তারে ভোল্টেজ ও বেশি উৎপন্ন হবে। আর তাই আমরা পরিবাহী তারকে  পেঁচিয়ে কুন্ডলী বা কয়েল বানিয়ে সেটাকে চুম্বক ক্ষেত্রের মাঝে ঘুরাই। আর এজন্যই দেখবে জেনারেটর এর ভেতরে তারের এত প্যাচ।

 

কয়েল বাধাই এর বিষয়গুলো নিশ্চয়ই জানো।

বিদ্যুৎ উৎপাদন এর জন্য এই কয়েলের অনেক প্যাচ সম্বলিত জেনারেটরটিকে ঘুরাতে হবে। বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই তত্ব আবিস্কার করে গেছেন। এই তত্ত্বের উপরে ভিত্তি করেই  পাওয়ার প্লান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয।

বিদ্যুৎ শক্তি কোন আলাদিনের চ্যারাগ দিয়ে উৎপাদন হয়না। বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও তত্বের উপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে এই বিশেষ শক্তি অর্জন করা যায়। বড় বড় জেনারেটরের কয়েলগুলো খুবই বড় আর ভাড়ী হয়। এখন প্রশ্ন হলো এত ভাড়ী কয়েল বা কুন্ডলী চুম্বক ক্ষেত্রের ভেতরে ঘুরাবে কোন সে দৈত্য?

একটা গল্প বলি শোন! একদা এক ইদুর সমাবেশ হলো সমাবেশে সভাপতি ইদুর, আলোচনা করে বুঝতে পারলো বিড়ালের খুব উৎপাত শুরু হয়েছে। বিড়াল ইদুর নিধনে মত্ত। সবাই সিদ্ধান্ত নিলো বিড়ালের গলায় একটা ঘন্টা বেধে দিবে, বিড়াল হাটার সময় ঘন্টার শব্দ হবে। এই শব্দে সব ইদুর পালিয়ে যাবে। এবার তাদের প্রশ্ন বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? ভয়ে কোন ইদুরই এই কাজের দায়িত্ব নিতে রাজি হলোনা। সমাধান না পেয়ে ইদুরের দল আবার গর্তে পলায়ন করল! হাহ হাহ হাহ হা! আমরা মানুষ এই ইদুরের দলের মত তো আর গর্তে পলায়ন করতে পারিনা তাই আমরা গবেষনা, পর্যালোচনা, পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলাম এত ভাড়ী এই কয়েলকে মানুষের শক্তি দ্বারা ঘুরানোর প্রয়োজন নেই, এই কয়েলকে অন্য কোন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ঘুরানো সম্ভব।

ধরো,তোমার হাতে একটি পানির নল বা পাইপ আছে এই পাইপের ভেতরে একটা একটি পাখা, বা ব্লেডযুক্ত চাকা বসিয়ে দাও যাতে পাখাটি অনায়াসে পাইপের ভেতর ঘুরতে পারে। এবার এই পাইপটিকে একটি ড্রাম এর সাথে যুক্ত করে ড্রামটিকে পানি দিয়ে পূর্ণ করে উচু স্থানে বসিয়ে দাও।  কি দেখতে পাবে পাইপ দিয়ে ড্রামের পানি নিচে নেমে আসছে, আর পাইপ দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার সময় ব্লেডে ধাক্কা লেগে ব্লেড যুক্ত চাকাটি পাঙ্খার মত ঘুরছে।। তাহলে কি ধারনা পেলে পাখা নিজের হাতে না ঘুরিয়ে পানির শক্তি দ্বারাও ঘুরানো সম্ভব। এই পাঙখার সাথে কোন চেইন যুক্ত করে দিলে বাইরের অন্য কিছুও ঘোরানো সম্ভব। (উদাহরন স্বরুপ সাইকেলের প্যাডেল ঘুরানোর সময় চেইন যুক্ত করলেই পেছনের চাকাটিকেও ঘুরানো সম্ভব হচ্ছে) .বিদ্যুৎ উৎপাদন এর জন্য আমাদের কয়েল ঘুরাতে হবে আর কয়েল ঘুরানোর জন্য আমরা একটি চাকা বা পাখার সহযোগীতা নিব। চাকা বা পাখা ঘুরলে পাখার সাথে কাপলিং করা জেনারেটর এর কয়েলও ঘুরবে। পাওয়ার প্লান্টে এই ব্লেডযুক্ত ঘুর্নয়ক এর নাম টারবাইন।

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জলের স্রোতকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ঘুরানো হয়। টারবাইনের মাধ্যমে জেনারেটর এর কয়েল ঘুরে, এ থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। পানি থেকে বিদ্যুৎ হয় তা নয়।

নদীতে কোন একটা বাধ দিয়ে পানিকে আটকে রেখে পটেনশিয়াল এনার্জি অর্জন করতে পারি।  এক্ষেত্রে জোয়ারের সময় আসা পানিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বাঁধের পেছনে এরিয়া পানিতে পূর্ণ হয়ে গেলে পানি একটি মোটা পাইপের মাধ্যমে নিচের দিকে অবস্থিত একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে প্রবাহিত করানো হয়। পানি প্রাবাহের সময় এর মধ্যে জমা থাকা বিভব শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই গতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাখাটিকে বা টার্বাইনকে ঘুরাতে পারি।

 

 

আবার দেখো, বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাতাসের বেগকে কাজে লাগিয়ে পাখা ঘোরানো হয়। যেমন ছোট বেলায় মেলা থেকে চরকি কিনে বাতাসের দিকে ধরে রেখে ঘোরিয়েছ।

আবার, বাষ্প বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাষ্পের চাপে টারবাইন ঘুরানো হয়। মুল কথা তারের কুন্ডলী বা কয়েলকে যে কোন উপায়ে ঘুরাতে পারলেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।আর এজন্যই আমাদের এত সব আয়োজন।

 

বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য এবং বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন এর জন্য বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান এর প্রয়োগ ঘটাতে হয়। এই ব্লগ লিখে তোমাদেরকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেসিক ধারনা দিলাম আরো ভাল ধারনা পেতে তোমাদের পর্যাপ্ত বই পড়তে হবে, ক্লাসে লেকচার শুনতে হবে, এবং অর্জিত নলেজকে যাচাই এর জন্য পাওয়ার প্লান্ট ভিজিট করতে হবে।

তোমাদের কৌতুহল তৈরি করতে পারলেই আমি সার্থক। কৌতুহলী মন ই পারে তোমাকে খুব ভাল একজন প্রকৌশলী তৈরি করে দিতে।

 

লেখক:

নাহিদুল ইসলাম (নাহিদ)

ইন্সট্রাকটর

ডিপার্টমেন্ট অব ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

 

Tags: No tags

Comments are closed.