ইলেক্ট্রনিক্স এলো কিভাবে?
কিভাবে এত পরিবর্তন হলো ইলেক্ট্রনিক্সের। কারা এতো পরিবর্তন ঘটাচ্ছে? কি ছিলো এর ইতিহাস। কেউ কি জানি? এই ইতিহাস থেকে যুগে যুগে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে আমাদের কাছে এসেছে।
একটা বার যদি আমরা চিন্তা করি আজ থেকে ১০ বছর আগে মোবাইল ফোন , কম্পিউটার, টেলিভিশন, রেডিও, ইত্যাদি এসব ডিভাইস এর অবস্থা কি ছিলো আর এখন কি হয়েছে!!!
চিন্তার বিষয় হলো অতি অল্প সময় এর মধ্যে টেকনোলজির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আজ আমি কিছু ইলেক্ট্রনিক্স এর বেসিক বিষয় এবং ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো।
১। ইলেক্ট্রনিক্স কি?
Electronics শব্দটি ইংরেজী শব্দ। এটা গ্রীক শব্দ Elektron হতে এসেছে। Elektron শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয় বাহ্যিকভাবে প্রয়োগকৃত তড়িৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রে এর পরমানুর আচরণ পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা।
The Institution of Radio Engineers (IRE) ইন্সটিটিউশন অব রেডিও ইঞ্জিনিয়ার্স ‘ইলেকট্রনিক্স’ কে সজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে –‘ ইলেকট্রনিক্স হলো সাইন্স এবং টেকনোলজীর একটি শাখা যা ভ্যাকুয়াম, গ্যাস ও অর্ধপরিবাহী পদার্থের মধ্য দিয়ে পরমানুর প্রবাহ সম্পর্কিত বিষয়াদি এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ডিভাইসের নকশা প্রণয়ন ও প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে অধ্যয়ণ ও গবেষণা করে থাকেন। [Proceedings of I.R.E. Vol. 38 (1950)]
পরিশেষে বলা যায় যে, ইলেকট্রনিক্স তড়িৎ প্রকৌশলের একটি শাখা যেখানে ভ্যাকিউম টিউব অথবা অর্ধপরিবাহী যন্ত্রাংশ এর মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের প্রবাহ আলোচিত হয়। এতে সাধারণত ক্ষুদ্র আকারের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন আই সি কম্পিউটার, ইত্যাদি আলোচিত হয়।
সূচনাকাল ও শুরুঃ
সার উইলিয়াম ক্রুক
ইলেক্ট্রনিক্স এর চর্চা কখন থেকে শুরু হয়েছে তা নিয়ে গবেষক দের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলেও অধিকাংশ গবেষক বায়ুশূন্য নলের উদ্ভাবন ও ব্যবহার কে এর শুরু বলে ধারন করা হয়। একজন জার্মান গবেষক গেসিলার ১৮৫০ সালের কাছাকাছি পরিক্ষন করার সময় লক্ষ করেন যে যদি বায়ুশূন্য নলের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ করানো হয় তবে সেখানে হতে শিখা বীহিন আলোক স্ফুলিঙ্গ বের হয়।
১৮৭৮ সালের দিকে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী সার উইলিয়াম ক্রক্স দেখেন যে বায়ুশূন্য নলের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ মূলত কিছু কনার সমষ্টি।
এই গবেশনার উপর ভিত্তি করে সার জে জে থমসন ক্যাথোড রশ্মির উপর গবেষণা চালান ও এই কনার উপর বৈশিষ্ট সমুহ আবিষ্কার করেন। এর পর ১৮৯৭ সালে ইলেক্ট্রনিক্স এর অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়। ইলেক্ট্রনিক্স এর বৈশিষ্ট্য ও আবিষ্কার এর পরবর্তী প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে অনেক সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। এর ফলে পরবর্তী যুগে থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের গঠন ও নকশা প্রনয়নের কাজ সহজ থেকে সহজতর হয়েছে।
১৯০৪ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পদার্থবিদ স্যার এমব্রোস ফ্লেমিং, (Sir Ambrose Fleming) একটি বিশেষ ধরণের ভ্যাকুয়াম টিউব আবিষ্কার করেন। ফ্লেমিং এর টিউবটি ছিল মূলতঃ একটি ভ্যাকুয়াম টিউব ডায়োড যা দিক পরিবর্তি প্রবাহকে একমূখী প্রবাহে রূপান্তর করতে পারত এবং এটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ ডিটেকশনে রেডিও রিসিভারে ব্যবহৃত হতো।
১৯০৬ সালে মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী লী-ডি-ফরেষ্ট (Lee de Forest) বিশেষ ধরণের টিউব আবিষ্কার করেন যা ছিল মূলতঃ ভ্যাকুয়াম টিউব ট্রায়োড এবং ইহা তড়িৎ সংকেতকে বিবর্ধন করতে পারত। ফরেষ্টের এই টিউবটি অডিওন নামে পরিচিত, এবং পরবর্তিতে এটি টেলিফোনি প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯২০ সালে মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী আলবার্ট হাল (Albert Hull) ম্যাগনিট্রন আবিষ্কার করেন যা উচ্চ শক্তির মাইক্রোওয়েভ সৃষ্টি করতে পারত। পরবর্তিতে ম্যাগনিট্রন ব্যবহার করে সেনাবাহিনী রাডার (RADAR) সিস্টেমের ব্যপক উন্নয়ন করে।
১৯৪৭ সালে আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরীর তিন গবেষক উইলিয়াম ব্রাডফোর্ড শকলি, স্যার জন বার্ডিন এবং ওয়ালটার ব্রাটেইন যৌথভাবে সর্বপ্রথম সেমিকন্ডাকটর নির্মিত ট্রানজিস্টর আবিস্কার করা হয়। ট্রানজিস্টর আবিস্কারের মাধ্যমে সলিড স্টেট যুগের সূচনা হয়, সলিড স্টেট ডিভাইসের ব্যপক উন্নয়ন হতে থাকে ফলে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসমূহ আকার ক্রমান্বয়ে আগের চেয়ে ছোট হতে থাকে।
ট্রানজিস্টরসমূহ আকারে দেখতে ছোট, দ্রুতগতির সুইচিং ক্ষমতা সম্পন্ন এবং কম পাওয়ার অপচয়কারী হবার কারণে তা দ্রুত টিউবকে অপসারন করে নিজের যায়গা দখল করে নেয় এবং ব্যপকভাবে তড়িৎ বর্তনীতে ব্যবহার হতে থাকে। ফলে বর্তনী সমূহের দক্ষতা আরো বৃদ্ধি পায়।
আইসিঃ
১৯৫৯ সালে রবার্ট নরটন নয়ছি এই ধারণা দেন, একই সিলিকন খন্ডের উপর বহু সংখ্যক ডিভাইস নির্মান এবং তাদের ভিতর সাধারণত এই ধরনের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি সম্ভব, এর ফলে ডিভাইসের গড় আকার, ওজন ও উৎপাদন ব্যয় কমবে। মনোলিথিক প্রকৃয়ায় তৈরীকৃত এই সকল বর্তনীসমূহকে একীভূত বর্তনী বা Integrated Circuit বলে। ১৯৬১ সাল হতে ফেয়ারচাইল্ড Fairchild এবং টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট Texas Instruments বাণিজ্যিকভাবে IC উৎপাদন শুরু করে।
পরবর্তীতে এই প্রযুক্তি আরো উন্নত হয়ে একীভূত বর্তনীতে ডিভাইসের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৬১ সালে (SSI), ১৯৬৬ সালে (MSI), ১৯৭০ সালে (LSI) এবং ১৯৮০ সালে (VLSI) ইন্টিগ্রেশন গৃহীত হয়। ফলে আজকের দিনে উৎপাদিত একটি VLSI একক চীপে প্রায় এক মিলিয়নের অধিক ডিভাইস একীভূত করা সম্ভব। সমন্বিত বর্তনী প্রযুক্তির উন্নয়ন ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের উন্নয়নের গতিকে আরো তরান্বিত করেছে। কমিউনিকেশন ও কম্পিউটার শিল্পের উন্নত হার্ডওয়্যার প্রযুক্তি IC টেকনোলজির উন্নয়নের ফলেই সম্ভব হয়েছে।
রবার্ট নরটন নয়ছি
IC টেকনোলজির সুবাদে ১৯৭১ সালে ইন্টেল কর্পোরেশন সর্ব প্রথম ৪ বিটের মাইক্রোপ্রসেসর ইনটেল – ৪০০৪ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়, এর ফলে ব্যক্তিগত কম্পিউটার উদ্ভাবনের পথ সুগম হয়। ১৯৭৩ সালে ইন্টেল কর্পোরেশন ৮ বিটের মাইক্রোপ্রসেসর ইনটেল – ৮০৮০ উদ্ভাবন করে যার মাধ্যমে প্রথম ব্যাক্তিগত কম্পিউটার Altair 8800 তৈরী সম্ভব হয়। এর পর ধিরে ধিরে এর হালনাগাদ শুরু হয়েছে।
এছাড়া আরও অনেক বিষয় রয়েছে যে সব বিষয় গুলোর জন্য ইলেক্ট্রনিক্স এর অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে। যুগে যুগে এর পরিবর্তন হবে।
২। এর প্রয়োজনীয়তাঃ
এর প্রয়োজনীয়তা লিখে শেষ করা সম্বব না। প্রযুক্তির যুগে এমন কোন স্থান নেই যেখানে এর ব্যবহার হয় না। একটু চিন্তা করে দেখেন ১০ বছর আগের কম্পিউটার এর কথা। এর আকার কত বড় ছিল। নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুরো এক রুম লাগত। আর এখন এটা এমন আকৃতি করা হয়েছে যেটা মানুশের কাছে খুব ব্যাবহার যোগ্য।
৩। যে সব ডিভাইসে ইলেক্ট্রনিক্স এর ব্যাবহারঃ
প্রায় সব দরনের ডিভাইসে এর ব্যাবহার করা হয়। ইলেক্ট্রনিক্স এর ইকুইপমেন্ট গুলো এখন হালনাগাদ করা হচ্ছে। এবং সেই ইকুপমেন্ট গুলো কে বিভিন্ন ডিভাইসে ব্যাবহার করা হচ্ছে।
রেডিও, টেলিভিশিন, কম্পিউটার,মোবাইল ফোন, রোবট আরও অনেক ডিভাইস আছে যেগুলোতে ব্যাবহার করা হয়।
যোগাযোগ ও বিনোদন মূলক বাবস্থায় এর ব্যবহার হয়।
কন্ট্রোল ভিত্তিক ও ইন্সট্রুমেন্টশন এ এর প্রয়োগ ক্ষেত্র রয়েছে।
প্রতিরক্ষা কাজে এর ব্যবহার হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর প্রয়োগ ক্ষেত্র।
এসব ডিভাইসকে দিনে দিনে আপডেট করে ব্যাবহার যোগ্য করা হয়।
৪। ইলেক্ট্রনিক্স এর শাখাঃ
ইলেক্ট্রনিক্স এর বিভিন্ন শাখা রয়েসে যেগুলো পরবর্তী লেখাতে আলোচনা করা হবে।
ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্স।
এনালগ ইলেক্ট্রনিক্স।
মাইক্রো ইলেক্ত্রিনিক্স।
ফুজি ইলেক্ট্রনিক্স।
সার্কিট ডিজাইন।
ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট।
সেমিকন্ডাক্টর।
মো: আল মামুন রশিদ
ইন্সট্রাকটর,
ডিপার্টমেন্ট অব ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং