জাফরান সে তো এক দামি মসলা

“জাফরান” সে তো এক দামি মসলা”

জাফরান

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মসলা।  বাংলাদেশের বাজারে 1 কেজি জাফরানের মূল্য ৪ লাখ টাকা ।

ভারতে পাঁচগ্রাম জাফরান বিক্রি হয় ২০০০ রুপিতে।  জাফরান প্রথম চাষ হয় মধ্য এশিয়ায় ৩৫০০ বছর আগে ।  হাজার বছর ধরে ইরান,স্পেন ,ফ্রান্স , ইতালি ও কাশ্মীর সহ গুটিকয়েক দেশে  জাফরান চাষ হয়।  অত্যন্ত মূল্যবান হওয়ায়  বাণিজ্যিক অঙ্গনে জাফরান কে  রেডগোল্ড ও বলা হয়ে থাকে । জাফরান  কে  কেশর  ও বলা হয়। ইংরেজিতে  জাফরান কে Saffron বলা হয় ।  এটা  এতটা দুর্মূল্য কেন এটাই এখন আমরা জানবো ।

 জাফরানের  বৈশিষ্ট্য

জাফরানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল  ফুল হলেও  নেই কোন বীজ।তাই বংশ বিস্তারের জন্য মানুষের উপর নির্ভরশীল। চারা লাগানোর পর প্রায় চার বছর পর এই উদ্ভিদের মূলে টিউবার   সৃষ্টি হয়I খুব সাবধানে কেবল অভিজ্ঞ   ব্যক্তিরাই  সংগ্রহ করে পরবর্তী উদ্ভিদের জন্য রোপন করে। প্রথমত সম্পূর্ণ উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে এ  ফুলের মুখ দেখা  যায় না। আবার যেদিন ফুল ফোটে তার  ঠিক কয়েক   ঘন্টার মধ্যে ফুল থেকে   পুংকেশর   বা ফুলের  রেনু সংগ্রহ করতে হয়। কেননা এ ফুল সূর্য ওঠার সময়  ফোটে   আর দিনের  শেষে তা মলিন হয়ে যায়  Iএক একটি  ফুল থেকে দু-তিনটি রেনু বা কেশর থাকে  যা সাবধানে  ফুল থেকে তুলতে হয়। ফুল থেকে    তুলেই কেশর গুলোকে রাখতে হয় এয়ারটাইট পাত্রে । ৪৫০গ্রাম শুকনো জাফরানের জন্য প্রায় 75000  ফুলের  প্রয়োজন হয়।  অন্য হিসেবে ৭২ গ্রাম তাজা কেশর শুকিয়ে ১২ গ্রাম ব্যবহারের উপযোগী জাফরান পাওয়া যায়। ১কেজি জাফরান সংগ্রহ করতে সময় লাগে প্রায় ৪০ ঘন্টা। পুরো কাজটি  কায়িক পরিশ্রমে শেষ করতে হয় যেখানে অটোমেশনের কোন সুযোগ নেই I অত্যন্ত ধৈর্যের  কাজ বিধায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ চাষ করতে  আগ্রহ হারিয়ে ফেলে I স্পেনে  জাফরান সংগ্রহের কম্পিটিসন হয়। গুটিকয়েক দেশে জাফরান চাষ হলেও  স্বাদ, গন্ধ ও রং এর দিক থেকে সর্বাধিক জনপ্রিয় ইরানের জাফরান  Iপ্রাচীন মিশরের রানী   ক্লিওপেট্রা গোসলের চৌবাচ্চায় কাঁচা দুধে জাফরান  ঢেলে গোসল করতেন , আলেকজান্ডার দি গ্রেট যুদ্ধের পর ক্ষতস্থান    জাফরান দিয়ে    ধুতেন Iরোমান  এম্পায়ার Nero যখন শহরে প্রবেশ করতেন তখন  রোমের রাস্তায় saffron  ছিটানো  হত I এমনকি ইহুদি ধর্ম গ্রন্থ ও উল্লিখিত আছে জাফরান সুগন্ধির কথা কিন্তু সব দুর্মূল্য বস্তুর একাধিক নকল ভার্শন বাজারে পাওয়া যায় ।কুসুম নামক এক ধরনের ফুলের পাপড়ি দিয়ে নকল জাফরান তৈরি করা হয় । এ  ফুলের  পাপড়ির  রং  কেশরের মত লাল টকটকে  হাওয়াই এর সাথে আসল জাফরানের পার্থক্য করা বেশ কঠিন   হয়ে দাঁড়ায় I বাংলাদেশের এই  মেকি জাফরানের  প্রচলনই বেশি কিন্তু গুটিকয়েক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ও জাফরান চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় স্বল্প পরিসরে আসল জাফরান চাষ  শুরু হয়েছে ।

 জাফরান বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়

এতে খাবারের স্বাদ গন্ধ বৃদ্ধি পায। স্পেন এবং পর্তুগাল এর  অনেক খাবারের ডিসে  জাফরানের ব্যবহার হয় Iস্প্যানিশ ন্যাশনাল ডিস “Paella” তে জাফরান ব্যবহার হয় মেডিটেরিয়ান এশিয়ান ইউরোপিয়ান এবং  মোগলাই বিভিন্ন খাবারের রেসিপিতে । জাফরান ব্যবহার করা হয় যেমন শাহী টুকরা, বিভিন্ন রকমের বিরিয়ানি ,বিভিন্ন ডেজার্ট আইটেম , রয়াল রোস্ট ল্যাম্ব লেগ   ডিসে Saffron Raisin sauce পরিবেশন করা হয় । জাফরান  রাইস  , সস ,সুপের  ব্যবহার হয়।

জাফরান মেডিসিন হিসাবে ব্যবহার রয়েছে ৩৫00 বছর আগে।  জাফরান  এ রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট গুনাগুন, ক্যান্সার ফাইটিং গুনাগুন ,  ক্ষুধা  কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে ।

 

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট

গল্প থেকে শেখা, পর্ব-৪

 

গল্পের নাম:  কুকুরছানা বিক্রয় (অনুধাবনমূলক গল্প)

একটি দোকানের মালিক তার দরজার উপরে একটি সাইনবোর্ড রেখেছিলেন যেখানে লেখা ছিল “কুকুরছানা বিক্রয়ের জন্য” “

কটি ছোট বাচ্চা সাইনটি দেখে দোকান মালিকটির কাছে গেল, এতে অবাক হওয়ার কোনও অবকাশ নেই কারন এই জাতীয় লক্ষণগুলির সবসময়ই ছোট বাচ্চাদের অনেক প্রিয় হয়ে থাকে।

ছোট বাচ্চাটি জিজ্ঞাসা করলেন “আপনি কুকুরছানা গুলো কত টাকায় বিক্রি করতে চাচ্ছেন?” 

দোকানের মালিক জবাব দিয়েছিলেন, ” ২৫০০ টাকা থেকে ৪৫০0 টাকার মধ্যে।”

ছোট্ট ছেলেটি পকেট থেকে কিছু টাকা বের করল এবং বলল “আমার কাছে  ২০০ টাকা  আছে,”। “আমি কি তাদের কে একনজর দেখতে পারি?” দোকানের মালিক হেসে শিস দিল।দোকানের পিছন থেকে এক মহিলা বের হয়ে আসলেন আর তার পিছনে ছোট ছোট পাঁচ টা কুকুরছানা ছিল। তার মধ্যে একটি কুকুরছানা যথেষ্ট পিছনে ছিল।

তৎক্ষণাৎ ছোট্ট ছেলেটি  কুকুর ছানাটির  কে দেখে পিছনে গেল এবং বলল, “ছোট্ট কুকুরটির কি হয়েছে?”

দোকানের মালিক বললেন, যে পশুচিকিত্সকরা ছোট কুকুরছানা পরীক্ষা করেছেন এবং বলেছিল তার এর পেছনের পায়ের হাড়ে সমস্যা আছে। এর জন্য ওকে সর্বদা ল্যাংড়াতে হবে। 

এটা শুনে ছোট্ট ছেলেটি অনেক খুশি হল। আর সে এই কুকুর ছনাটিকে কিনতে চাইল। 

https://www.youtube.com/watch?v=_XebVRGknTE

দোকানের মালিক বলেন , তোমাকে এই ছোট্ট কুকুরটিকে কিনার দরকার নেই। তোমার যদি  ঠিক এমনি একটি কুকুর ছানার দরকার হয় আমি তোমাকে এমনি একটি কুকুর ছানা এনে দেব। এই কথা শুনে ছোট ছেলেটির বেশ মন খারাপ হয়ে গেল। সে দোকান মালিকের চোখের দিকে সরাসরি আঙুল দেখিয়ে বললেন; 

“আমি চাই না আপনি ওকে আমাকে এমনিতেই দিন। এই ছোট কুকুরটি অন্য সমস্ত কুকুরের মতোই মূল্যবান এবং আমি সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করব। প্রকৃতপক্ষে, আমি আপনাকে এখন ২00 টাকা এবং বাকিটা এক মাস পরে পরিশোধ করবো।”

দোকানের মালিক আবার বললেন  “তোমাকে সত্যিই এই ছোট্ট কুকুর ছানাটাকে কিনতে হবে না। ও অন্য কুকুরছানা গুলোর মতো কখনও দৌড়াতে এবং লাফাতে এবং খেলতে পারবে  না।

এই কথা শুনে ছোট ছেলেটি নিচের দিকে ঝুকলো এবং তার প্যান্ট হাটু পর্যন্ত উঠালো। দোকানের মালিক দেখলো ছেলেটি পংগু , তার বাম পায়ে বড় একটি ক্রেস লাগান। 

ছেলেটি বলল, দৌড়াতে তো আমিও পারি না তাই ওর হয়ত এমন কাউকে প্রয়োজন যে ওকে বুঝতে পারে। 

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ [পর্ব ৪]

 

চাকুরীর ইন্টারভিউ এর কমন কিছু প্রশ্ন

চাকুরীর ইন্টারভিউতে নিয়োগদাতা সাধারনত প্রত্যেক চাকুরীপ্রার্থীকে সাধারন কিছু প্রশ্ন করে থাকেন। আজকের ব্লগে আমরা তেমন কিছু প্রশ্ন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

 

প্রশ্ন -১ আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন

কথোপকথন শুরু করার জন্য নিয়োগদাতা এই প্রশ্নটি করে থাকেন। খুব অল্প কথায় নিজের নাম এবং আপনি কোন জেলা থেকে তা দিয়ে শুরু করুন। মনে রাখবেন নিয়োগদাতার হাতে থাকা সিভিতে যে সমস্ত তথ্য রয়েছে তা বারবার রিপিট করবেন না। সর্বোচ্চ স্তরের শিক্ষা, কাজের দক্ষতা এবং অন্যান্য আগ্রহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে উত্তর দিন।
যেমন,
I grew up in Dhaka and I studied Diploma in Textile Engineering/Computer technolgy/ Civil Technology. I also worked for an factory for 6 months. I really enjoy solving my subject related problem this is the reason why I like this job. In my free time I like to read.

প্রশ্ন -২ আপনার দক্ষতা সম্পর্কে বলুন

নিজের সম্পর্কে আপনি কতটুকু পজেটিভ তা দেখার জন্য সাধারনত নিয়োগদাতা এই প্রশ্নটি করে থাকে। নিজের দক্ষতা বা গুন সম্পর্কে যথাসম্ভব অল্পকথায় আলোচনা করার চেষ্টা করুন।
যেমন,

My strongest strength is attention to detail. I totally believe in planning and execution. In fact, when I was in my college I used to organize my week. Because of my very outgoing nature many people have said that I am quiet approachable so, I believe these are my strengths.

প্রশ্ন -৩ আপনার দুর্বলতা সম্পর্কে বলুন।

এই প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি কোন দুর্বলতা উল্লেখ্য করবেন না। উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হোন যাতে করে নিয়োগদাতার আপনার দুর্বলতাকেও পজিটিভ ভাবে গ্রহন করার সুযোগ থাকে।

যেমন, ন
My weakness is I am too much detail oriented. I always try to accomplish everything and I just want everything to be perfect, but then I realise, I am taking extra time. And maybe that makes me submitting projects late. I think this is my weakness.

 

প্রশ্ন – ৪ আপনার জীবনের লক্ষ্য কি?
এই প্রশ্নের মাধ্যমে নিয়োগদাতা আপনি ভবিষ্যত নিয়ে কিভাবে ভাবেন, আপনার দূরদর্শিতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। এমন কোন উত্তরন উত্তর দিবেন না যেটা একেবারেই অসম্ভব।

বাস্তবতার সাথে মিল রেখে উত্তর দিন।

যেমন,

Well five years from now, I would like be in the management position. Till then, I would like to gain practical experience and then eventually become a Manager. Of course, I would like to share and learn new things from my team members.

 

 

প্রশ্ন – ৪ আপনি আনি আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে কি জানেন?

উক্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে কোম্পানি সম্পর্কে জানার করুন। যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিবেন তার ওয়েবসাইট রিসার্চ করুন। উক্ত কোম্পানীতে পরিচিত কেউ থাকলে তার সাথে আলোচনা করুন। উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন এভাবে,
Your company is very well known for the customer service and you also won an award for the best service provider in the country.

 

আজ এই পর্যন্তই।
আমন্ত্রন থাকল পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য।

 

 লেখক,

মোঃ জায়েদুল হক, ইন্সট্রাকটর

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

গল্প থেকে শেখা, পর্ব-৩

গল্প থেকে শেখা পর্ব-৩

একজন লোক একটি হাতির ক্যাম্পের মধ্য দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন এবং তিনি দেখলেন যে হাতিগুলিকে খাঁচায় রাখা হচ্ছে না বা শিকল দিয়ে বেধেঁ রাখা হচ্ছে না। ক্যাম্পের পেছেনে হাতিগুলোর পেছনের পা শুধুমাত্র একটা ছোট্ট দড়ি বাঁধা ছিল।

 

লোকটি হাতির দিকে তাকিয়ে থাকতেই সে পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল যে কেন হাতিগুলি দড়ি ছিড়তে এবং ক্যাম্প থেকে পালাতে তাদের কোন শক্তি ব্যবহার করেনি?

তারা সহজেই এটি করতে পারত, বরং তার পরিবর্তে, তারা মোটেও চেষ্টা করে নি। অত্যন্ত কৌতূহল নিয়ে উত্তরটি জানতে  তিনি নিকটেই একজন প্রশিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলেন কেন হাতিগুলি সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং কেন  কখনও পালানোর চেষ্টা করেনি।

প্রশিক্ষক জবাব দিলেন;

“যখন তারা খুব বয়স অল্প এবং অনেক ছোট, আমরা তাদের একই বাঁধার জন্য একই আকারের দড়ি ব্যবহার করি এবং এই বয়সে, এটি ধরে রাখার পক্ষে যথেষ্ট। বড় হওয়ার সাথে সাথে তারা বিশ্বাস করতে শর্তযুক্ত যে তারা দড়ি ছিড়ে যেতে পারে না। তারা বিশ্বাস করে যে দড়ি এখনও তাদের ধরে রাখতে পারে, তাই তারা কখনই মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে না ”’

হাতিগুলো মুক্ত হচ্ছিলোনা এবং ক্যাম্প থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল না তার একমাত্র কারণ ছিল সময়ের সাথে সাথে তারা এই বিশ্বাসটি গ্রহণ করেছিল যে এটি সম্ভব নয়।

গল্পের মূল বিষয়বস্তু:

বিশ্ব আপনাকে কতটা পিছনে রাখার চেষ্টা করে না কেন, আপনি যা অর্জন করতে চান তা সম্ভব তা এই বিশ্বাসের সাথে সর্বদা চালিয়ে যান। আপনি সফল হতে পারেন বিশ্বাস করা, আসলে এটি অর্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

লক্ষ্য পূরন

লক্ষ্য পূরন

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই চায় সাফল্য(লক্ষ্য পূরন)। আর সাফল্য অর্জনের মূল ভিত্তি হল, তুমি আসলে কোন কাজে সফল হতে চাও –  তা খুজে বের করা এবং সেটিকে জীবনের লক্ষ্য হিসাবে স্থির করা। আর লক্ষ্যের সংজ্ঞা হল জীবনে সুনির্দিষ্ট করে কোন কিছু পাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা।

জীবনে যা পেতে চাও না কেন আগে জানতে হবে – তুমি কি চাও? তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমার জীবনে কোন কাজটি করা সবচেয়ে জরুরী? তুমি যদি মনে কর এখন যে কাজটি  তুমি করছো তা তোমার লক্ষ্যের সাথে মিলে না, তাহলে সেটা বাদ দিয়ে লক্ষ্যে পূরণের জন্য কাজ করতে হবে। আন্তরিকতার সাথে কাজ করলে যে কোন লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

জীবনের লক্ষ্য খুজে পাওয়া আর সেই লক্ষ্যের  দিকে সঠিকভাবে  এগিয়ে সফল হওয়া – দুটোই সমান জরুরী আর এই দুই এর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।

আমি প্রকৌশলী হব-

আমি ডাক্তার হব –

আমি ধনী  হব –

আমি বাড়ির মালিক  হব –

আমি কোম্পানির মালিক  হব – …… এগুলো হলো সপ্ন । কিন্তু তুমি যখন এই সপ্নগুলো থেকে নির্দিষ্ট করে কোন কিছুকে পাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন কর – সেটা হবেই লক্ষ্য। তুমি যখন লক্ষ্য ঠিক করবে তখন লক্ষ্যই তোমাকে গন্তব্যে পৌছানোর জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে।

লক্ষ্যে পৌছানেরা  প্রথম শর্ত হলো বিশ্বাস। লক্ষ্যে পৌছাতে আমি পারব – এ কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। যদি বিশ্বাস কর ”আমি সফল হব”, তবে অবশ্যই তুমি সফল হবে আর তোমার  ব্যবহারে তা প্রকাশ পাবে। তুমি নিজেই নিজের দৃষ্টিভঙ্গীর সুফল দেখতে পাবে।

সাফল্য এবং অসাফল্য নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। সাফল্যের  শিখরে পৌছানেরা জন্য অনেকগুলি গুণ আছে। সেগুলি চিহ্নিত করতে পারলে  এবং যথাযথ অনুসরণ করতে পারলে সফল হতে পারবে। অনুরূপভাবে সমস্ত অসাফল্যেরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সে বৈশিষ্ট্যগুলি এড়িয়ে চললে বিফল হবে না। সাফল্য কেবলমাত্র কয়েকটি মূল আদর্শকে নিয়মিতভাবে প্রয়োগ করার ফলশ্রæতি । তেমনি বিফলতা হচ্ছে কয়েকটি ভুলের ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি।

তবে জীবনে সাফল্য লাভ করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের কথা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে –

১। আত্ববিশ্বাস – নিজের সম্পর্কে নিজের কাছে স্পষ্ট থাকার নামই আত্ববিশ্বাস। নিজেকে সম্পূর্ণ ভালোবাসার মাধ্যমেই সত্যিকারের আত্ববিশ্বাসের জন্ম হয়। আত্ব বিশ্বাস মানে নিজেকে চেনা। নিজের সৃজনশীলতার ওপর আস্থা রাখা। হীনমন্যতা দূর করা । দৈনন্দিন ও প্রাত্যহিক জীবনে আত্ববিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করা।

২। ব্যর্থতাকে ভয় না পাওয়া – ব্যর্থতা হল এমন একটি বার্তা যে তোমাকে আবারও চেষ্টা করতে হবে, তবে একটু ভিন্ন উপায়ে। ব্যর্থতা জীবন প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। কোন কাজে ব্যর্থ হলে আপনার জীবন শেষ- এ কথা সঠিক নয়।

 ৩। যেটা করতে  ভাললাগে সেটা কর – এমন একটি কাজ বা লক্ষ্য খুজে বের কর যা করতে তুমি পছন্দ কর। কোন জিনিষটা করতে সবচয়ে বেশি ¯সাচ্ছন্দ্য বোধ কর, তা সঠিক ভাবে বুঝে জীবনের লক্ষ্য স্থির করার খুবই জরুরী।

৪। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা– পরিকল্পনা হল কোথায় আছি এবং ভবষ্যিতে কোথায় যেতে চাই তার মধ্যকার সেতুবন্ধন। নিজের লক্ষ্যমাত্রার একটি সুপরিকল্পিত নক্সা তৈরি করা এবং তা অর্জনের জন্য সুন্দর পরিকল্পনার প্রয়োজন।  পরিকল্পনা হল কার্যতালিকা, টার্গেট বাস্তবায়ন ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য করণীয় কার্যবলী যার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট  লক্ষ্যে পৌছানো  যায়। পরিকল্পনা  হচ্ছে ফ্লোচাট, যা ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্কিত। কি করা হবে, কিভাবে করা হবে, কখন  করা হবে, কতক্ষণে করা হবে – তা পূর্বেই নির্ধারণ করাকে পরিকল্পনা বলে। অদূর ভবিষ্যতে করণীয় কার্যসমষ্টির অগ্রিম সুচিন্তিত বিবরণী।

৫। কঠোর পরিশ্রম – পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্যগুলোর একটি হল, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসুতি। তুমি যদি সঠিক পথে ধারাবাহিক ভাবে পরিশ্রম কর, তবে অবশ্যই সফল হবে। কঠোর পরিশ্রম দিয়ে তুমি এমন অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারবে, যা হয়ত নিজে আশা কর নাই। তুমি চাইলেই কখনও সবচেয়ে মেধাবী বা প্রতিভাবান হতে পারবে না। কিন্তু সবচেয়ে পরিশ্রমী হতে পারবে এবং সেই পরিশ্রম দিয়ে নিজের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিভাবান, মেধাবী ও সুযোগ প্রাপ্ত মানুষকে পেছনে ফেলে সেরাদের সেরা হয়ে উঠতে পারবে।

৬। ধৈর্য্যশীল হওয়া অনেকেই খুব অল্পতে হতাশ হয়ে পরে বা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে। ধৈর্য্য না থাকলে দীর্ঘ মেয়াদী কোন কাজ করা সম্ভব না। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পথে তোমার অনেক বাধা বিপত্তি আসবে । এই বাধা বিপত্তি বা ধাক্কা জীবনের একটি শিক্ষা। আর এই ধাক্কা অতিক্রম করে  লক্ষ্যে পৌছানোর দিকে এগিয়ে আসলে তোমার আত¦বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। প্রত্যেক সফল মানুষের জীবনের একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ব্যর্থতা। কিন্তু তাদের সফলতার রহস্য হলো প্রবল ধৈর্য্য আর ইচ্ছা শক্তি।

৭। আবেগের  প্রতি  সংযমী  মনোভাব – মানুষ খুবই আবেগপ্রবণ, অনেক সময় মনে না চাইলেও আবেগের সৃষ্টি হয়। কিছু কাজ আবেগের বশে করে ফেলার পর পরিস্থিতির পরিবর্তনে তা মানুষের জীবনে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। আবেগ নিয়ে  চিন্তা করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুল হয়ে থাকে। কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে সব চাইতে বাধা দেয় এই অতিরিক্ত আবেগ। তাই আবেগকে যত বেশি তুমি  নিয়ন্ত্রন করে রাখতে পারবে, তত বেশি সমস্যা এড়াতে পারবে। তাই আবেগকে একটু নিয়ন্ত্রন করো লজিক দিয়ে চিন্তা করলে তুমি অবশ্যই সফল হবে।

৮। নিয়মানুবর্তিতা – নিয়মানুবর্তিত কে মানব জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি বলা হয়। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতার চর্চা করা অতীব জররুী। সফল হতে হলে তোমাকে নিয়মানুবর্তিতার অনুসরণ করতে হবে। সময়ের কাজ সময়মত করলে, দিনের কাজ দিনে শেষ করলেই সফলতা ধরা দিবে তোমার হাতে।

নিজের লক্ষ্যে থাকতে হবে অটুট। যাদের কোনো লক্ষ্য নেই তারা কখনো অভীষ্টে পৌছাতে পারেন না। যারা সাফল্য চান, সফল চান, তারা দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রাখেন লক্ষ্যের  দিকে।

রাসূল (সাঃ) যখন পারস্যকে মুসলমানদের পদানত করার লক্ষ্য স্থির করেছিলেন তখন পারস্য সা¤্রাজ্য ছিল বিশ্বব্যাপী এক অপরাজেয় শক্তি, আর মুসলমানদের  হিসাব করার মত কোনো শক্তিই ছিল না। তারপরও  রাসুল (সা) লক্ষ্য স্থির করেছিলেন পারস্যকে মুসলমানদের পদানত করার। লক্ষ্য স্থির করে দীপ্ত সাহস ও পরিশ্রমের ফলে একদিন সত্যিই পারস্য সা¤্রাজ্য মুসলমানদের পদানত করেছিলে।

বিশ্ববিজয়ী বীর জুলিয়াস সিজার বলেছিলেন, অধিকাংশ মানুষ বড় হতে পারে না কারণ সে সাহস করে আকাশের মত সূর্যে লক্ষ্য স্থির করে সে দিকে তাকাতে পারে না বলে।

লক্ষ্য বা চাওয়া যাই বলি না কেন যদি নিজের সম্পূর্ণ ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সে লক্ষ্যের পিছনে ছুটে তবে একদিন না একদিন সে লক্ষ্য পূরণ হবে। শুধু প্রয়োজন বিশ্বাস আর পরিশ্রম।

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, হবেই হবেই দেখা, দেখা হবে বিজয়ের ———

সবশেষে গানের এই সুরের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে হয়, তুমি যদি লক্ষ্য স্থির করে মনে প্রানে বিম্বাস নিয়ে ছুটতে পার, তাহলে বিজয় মানে সাফল্যের দেখা পাবে।

=====================================================================================

লেখক, 

ফারহা দিবা

সিনিয়র ইন্সট্রাকটর

ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যাথমেটিকস

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

 

পাই (π) নিয়ে কেন এত মাতামাতি?

পাই (π) নিয়ে কেন এত মাতামাতি?

পাই (বড় হাতের অক্ষরটি Π, ছোট হাতের অক্ষরটি π) গ্রিক বর্ণমালার ষোলতম অক্ষর একইসাথে গ্রিক সংখ্যা ব্যবস্থায় পাইয়ের মান হল ৮০। প্রাচীনতম ব্যবহারের মধ্যে, অক্ষর π গ্রিক শব্দ পরিধির(περιφέρεια) সংক্ষিপ্তরূপ ছিল, যার প্রথম বর্ণটি π। এর আগে, গণিতবিদরা বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকে কখনও কখনও  বা  হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। সর্বপ্রথম ১৬৪৭ সালে ব্রিটিশ গণিতবিদ  তার প্রকাশিত বই ক্ল্যাভিস ম্যাথেমেটিক এবং পরবর্তী সংস্করণগুলোতে δ.π কে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতরূপে প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে এই অনুপাতকে প্রকাশ করার জন্য  ব্যবহার করেন, অপরদিকে π/δ এর মান ৬.২৮.. আকারে ব্যবহার করতেন  ।

পরবর্তীতে ১৭০৬ সালে গণিতবিদ  সর্বপ্রথম তার প্রকাশিত বই  -তে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকে শুধুমাত্র π আকারে ব্যবহার করেন। যদিও তার এই মতবাদ তৎকালীন অনেক গণিতবিদেরা গ্রহণ করেননি। ১৭৬৭ সাল পর্যন্ত অনেকেই পাইকে প্রকাশ করার জন্য ভগ্নাংশই ব্যবহার করতেন।

বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসার্ধের অনুপাত হিসেবে π = ৬.২৮ … ব্যবহার করেন তার ১৭২৭ সালে লেখা  বইটিতে। এরপর তিনি প্রথম π = ৩.১৪ৃ ব্যবহার করেন তার ১৭৩৬ সালের   এবং তার ব্যাপকভাবে পড়া ১৭৪৮ সালের বইটিতে। তিনি লিখেছিলেন, “যৌক্তিকতার জন্য আমরা এই সংখ্যাটি π হিসাবে লিখব; π হল একক ব্যাসার্ধের বৃত্তের পরিধির অর্ধেকের সমান “। ইউরোপের অন্যান্য গণিতবিদদের সাথে অয়লারের ব্যাপক সম্পর্ক ছিল, যার ফলে গ্রিক বর্ণের ব্যবহারটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং পশ্চিমা বিশ্বের পরে এর ব্যবহার সার্বজনীনভাবে গৃহীত হয়।

এছাড়াও গণিতের বিভিন্ন অপারেটর, রসায়নে, মেকানিক্স এবং তরল গতিবিদ্যায়, বীজগণিত টোপোলজিতে এমনকি অর্থনীতির বিভিন্ন রাশি প্রকাশে π প্রতীকটি ব্যবহার করা হয়।

১৪ মার্চ বিশ্ব পাই (π) দিবস। পাই কী? পাই (π) গ্রিক বর্ণমালার ষোলতম অক্ষর যা গ্রিক শব্দ পরিধির(περιφέρεια) সংক্ষিপ্তরূপ। সাধারণত বৃত্তের পরিধিকে তার ব্যাস দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায় তা হল পাই। মজার বিষয় হল বৃত্ত যত বড় বা ছোট হোক না কেন পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত সবক্ষেত্রে একই। এই পাই নিয়ে গণিতবিদদের কৌতুহল ও গবেষনার অন্ত নেই। আজ পাই দিবস উপলক্ষে পাই সংক্রান্ত কিছু অদ্ভুদ ও মজাদার তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করি, যা জেনে আশ্চর্য হবেন।

১. পাইয়ের জন্য π চিহ্ন ২৫০ বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৭০৬ সালে গণিতবিদ উইলিয়াম জোন্স এই প্রতীকটি উপস্থাপন করেছিলেন এবং গণিতবিদ লিওনার্ড অয়লারের ব্যবহারের পর তা জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

২. যেহেতু পাইয়ের প্রকৃত মান গণনা করা যায় না, তাই আমরা কোনো বৃত্তের সঠিক এলাকা বা পরিধি খুঁজে পাই না।

৩. মার্চ ১৪ বা ৩/১৪ বিশ্ব পাই দিবস হিসাবে উদযাপন করা হয় কারণ ৩.১৪ পাই এর প্রথম সংখ্যা। সারা বিশ্ব জুড়ে গণিত ভক্তরা এই সংখ্যাটি উদযাপন করেন।

৪. ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে ভারতের ভিআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজভির মিনা সর্বোচ্চ দশমিক স্থান মুখস্থ বলে গিনেস বুকে রেকর্ড করেন। তিনি ৭০,০০০ দশমিক স্থান বলতে সক্ষম হন। রেকর্ডের সময় তার চোখ বাধা ছিল এবং তার সময় লেগেছিল ১০ ঘন্টা!

 

বিশ্বাস করতে পারছি না? আচ্ছা, এখানে প্রমাণ আছে:

http://www.guinnessworldrecords.com/world-records/most-pi-places-memorised

৫. আমরা সবাই জানি যে আমরা পাইয়ের প্রকৃত মান খুঁজে বের করতে পারি না কারণ এটি একটি অমূলদ সংখ্যা। কিন্তু মজার বিষয় হল, আমরা পাইকে ধারা এবং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি।

৬. পাই মিশরীয় পৌরাণিক কাহিনীরও একটি অংশ। মিশরের লোকেরা বিশ্বাস করত যে গিযার পিরামিডগুলি পাই-এর নীতিতে নির্মিত হয়েছিল। পিরামিডের উলম্ব উচ্চতা ও এর পরিসীমার অনুপাত অনেকাংশে বৃত্তের ব্যাসার্ধ ও এর পরিধির অনুপাতের সমান। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এই পিরামিডগুলি সারাবিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সুতরাং এর মূলনীতি হিসাবে π থাকার ব্যাপারটি সত্যিই স্থাপত্যবিদ জন্য আকর্ষনীয় করে তোলে।

৭. যদিও ১৪ মার্চ (৩/১৪) পাই দিবস পালিত হয়, তবে উদযাপনের জন্য সঠিক সময় দুপুর ১:৫৯ হয়, যাতে সঠিক সংখ্যা ৩.১৪১৫৯ পৌঁছাতে পারে।

৮. পদার্থবিজ্ঞানী ল্যারি শো সান ফ্রান্সিসকোর এক্সপ্লোরেটোরিয়াম বিজ্ঞান জাদুঘরে ১৪ মার্চকে সর্বপ্রথম পাই দিবস পালন করেন । সেজন্য তাকে প্রিন্স অফ পাই বলা হয়।

৯. পাই নম্বরের উপর ভিত্তি করে তৈরি একটি সম্পূর্ণ ভাষা আছে। কিছু লোক পাইকে এতটাই ভালোবাসে, তারা ক্রমাগত শব্দের বর্ণগুলো সংখ্যা পাই এর সংখ্যার সাথে মিল রেখে একটি উপভাষা আবিষ্কার করে ফেলেন। মাইক কিথ এই ভাষাতে ‘Not a Wake’ নামে একটি সম্পূর্ণ বই লিখেছেন।

১০. অনেকগুলি রেকর্ড রয়েছে যা দেখায় যে, পাই আবিষ্কৃত হওয়ার অনেক আগেই বাবিলীয়রা প্রায় ৪০০০ বছর আগেই পাই সম্পর্কে জানত। প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বাবিলীয়রা পাইয়ের মান ৩.১৫ গণনা করেন।

১১. অনেক প্রতিভাধর মানুষ পাই এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। আলবার্ট আইনস্টাইন পাই দিবসে জন্মগ্রহণ করেন। ৭৬ বছর বয়সে স্টিফেন হকিংস ও পাই দিবসে মারা যান।

১২. চাইনিজরা পাই এর সংখ্যা খুঁজে পেতে পশ্চিমাদের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল। কেন? অনেক গণিতবিদ বিশ্বাস করেন যে, চীনা ভাষা গাণিতিক গণনার জন্য সহায়ক। চীনা গণিতবিদরা পাই গেমে দুটি কারণের কারণে এগিয়ে ছিলেন; কারণ তাদের দশমিক উল্লেখ ছিল এবং তাদের শূন্য সংখ্যাটির প্রতীক ছিল। সেই সময়ে, ইউরোপীয় গণিতবিদরা আরব ও ভারতীয় গণিতবিদদের সহযোগিতায় তাদের সংখ্যাব্যবস্থায় শূন্য প্রতীকের ব্যবহার শুরু করেছিলেন।

১৩. আমরা পাই নিয়ে এত মাতামাতি করি কেন? কারণ আমরা সবকিছুর মধ্যে সম্পর্ক এবং প্যাটার্ন খুঁজতে ভালোবাসি। পাই সংখ্যাটি এত দীর্ঘ এবং এত রহস্যময় যে গণিতবিদরা এখনও এই সংখ্যা নিয়ে গবেষনা করে চলেছেন।

১৪. ১৮৮৮ সালে ইন্ডিয়ানা রাজ্যের একজন ডাক্তার দাবি করেছিলেন যে তিনি অতিপ্রাকৃত উপায়ে বৃত্তের সঠিক পরিমাপ শিখেছেন। তিনি তার “অতিপ্রাকৃত” জ্ঞানে এতটাই বিশ্বাস করেছিলেন যে তিনি ইন্ডিয়ানা আইন পরিষদে একটি বিল পাস করার প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যাতে তিনি তার প্রতিভাধর ফলাফলগুলি কপিরাইট করতে পারেন। ফলে যারা পাই এর মান হিসেবে তার মানটি ব্যবহার করবে তাদেরকে এর জন্য মূল্য পবিশোধ করতে হবে! যাইহোক, বিধানসভায় একজন গণিত অধ্যাপক ছিল তিনি পরে প্রমান করে দেখিয়েছেন তার প্রস্তাবিত বিলের পাই এর মানটি ভুল ছিল।

১৫. পাইটি আক্ষরিকভাবে অসীম দীর্ঘ সংখ্যা। কিন্তু ১২৩৪৫৬ নম্বরটি পাই এর ১০ লক্ষ ডিজিট এর কোথাও পাওয়া যায় না। এটি কিছুটা হতাশাজনক কারণ যদি পাইয়ের ১০ লক্ষ ডিজিটের মধ্যে ক্রমানুসারে ১২৪৫৬ না থাকে তবে এটি অবশ্যই সবচেয়ে অনন্য সংখ্যা।

১৬. ব্রিটিশ গণিতবিদ Willam Shanks পাই এর মান বের করতে নিজে নিজে কাজ করেন। তিনি বহু বছর ধরে পাই ডিজিট গণনা করার চেষ্টা করে প্রথম ৭০৭ সংখ্যা বের করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি পাওয়া ৫২৭তম অঙ্ক ভুল ছিল, যার ফলে অবশিষ্ট সংখ্যাগুলো ডিফল্ট ভুল হয়েছিল।

১৭. সংখ্যা পাইটি এত রহস্যময় ছিল যে ডাচ-জার্মান গণিতবিদ Ludolph van Ceulen তার জীবনের বেশিরভাগ সময় পাই এর প্রথম ৩৬ টি সংখ্যা গণনা করেছিলেন। বলা হয় যে প্রথম ৩৬ নম্বর তার সমাধি পাথরের উপর খোদাই করা হয়েছিল, যা এখন হারিয়ে গেছে।

১৮. পাই এর মান গণনার মাধ্যমে আমরা কম্পিউটারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে পারি। এটি একটি ডিজিটাল কার্ডিওগ্রামের মতো কাজ করে কারণ এটি কম্পিউটারের প্রসেসরের বিভিন্ন কার্যক্ষমতার স্তরকে নির্দেশ করে।

১৯. এক্সপ্লোরেটোরিয়াম বিজ্ঞান জাদুঘরে, প্রতি বছর পাই দিবসে একটি বৃত্তাকার প্যারেড সংঘটিত হয়। অংশগ্রহণকারী সবাই পাইয়ের একটি করে সংখ্যা ধরে থাকে। পাই দিবস উদযাপন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল সবাইকে গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহি করে তোলা।

২০. পাই নিয়ে চলচ্চিত্র Pi: Finding Faith in Chaos -এ পাই ও মহাবিশ্বের বিভিন্ন উত্তর খোঁজার ক্ষেত্রে নায়কের প্রচেষ্টাকে চিত্রিত করা হয়েছে। পাইয়ের প্রতি এই অনুসন্ধান তাকে পাগল করে ফেলে। কিন্তু ভাল ব্যাপার হল এই চলচ্চিত্রটি স্যান্ডেন্স চলচ্চিত্র উৎসবে পরিচালক পুরস্কার লাভ করেছে।

২১. প্রাচীনকালে, গণিতজ্ঞগণ পাই গণনা করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। তারা একাধিক বাহু বিশিষ্ঠ বহুভুজ ব্যবহার করে বৃত্তাকার এলাকায় পৌঁছেছেন। আর্কিমিডিস, সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রীক গণিতবিদ এবং আবিষ্কারক, ৯৬ বাহু বিশিষ্ঠ বহুভুজ ব্যবহার করেছিলেন। বহু অন্যান্য গণিতবিদগণ এই বহুভুজের পদ্ধতিতে পাইয়ের মান গণনা করেছেন। চীনে, একজন গণিতবিদ বহুভুজে প্রায় ২০০ এবং তারপরে ৩,০০০ টিরও বেশি বাহু ব্যবহার করে পাইয়ের মান ৩.১৪১৫৯ বের করতে সক্ষম হন!

২২. পাই এর ব্যবহার বছর এর পর বছর বিস্তিৃত হয়েছে। ১৭ শতকের আগে, পাই শুধুমাত্র বৃত্তাকার ক্ষেত্রের মানসমূহ বের করতে ব্যবহার করা হত। কিন্তু ১৭ শতকের মধ্যে, লোকেরা বুঝতে পেরেছিল যে বক্ররেখা এবং হাইপোসাইক্লয়েড সহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি গণনা করতে পাই ব্যবহার করা যেতে পারে। ২০ শতকের মধ্যে, পাইটি সম্ভাব্যতা এবং বিভিন্ন গাণিতিক অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

২৩. পাইয়ের সংখ্যাগুলো গণনা করা কঠিন হলেও পাইয়ের মান দ্বারা অন্যান্য জিনিস গণনা করার ক্ষেত্রে এটি অনেক কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা দশমিকের পরে মাত্র ৯ ডিজিট নিয়ে পৃথিবীর পরিধি গণনা করার জন্য এটি ব্যবহার করি তবে ফলাফলগুটি অসাধারণভাবে সঠিক হবে। প্রতি ২৫,০০০ মাইলের জন্য শুধুমাত্র একটি ইঞ্চির চার ভাগের এক ভাগ ভুল হবে।

২৪. পাই এতই আশ্চর্যজনক এবং রহস্যময় যে এটি চলচ্চিত্রে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৯৬ থ্রিলার চলচ্চিত্র টর্ন কার্টেনে, পাই হল গোপন কোড।

২৫. পাই এর ডিজিটসমূহ কে কার চেয়ে বেশি গণনা করতে পারে এ নিয়ে সর্বদা প্রতিযোগিতা চলছে। ২০১০ সালে জাপানী প্রকৌশলী এবং আমেরিকান কম্পিউটার উইজার্ড পাইয়ের ৫ ট্রিলিয়ান ডিজিট সংখ্যা গণনা করে সর্বাধিক সংখ্যক পাইয়ের ডিজিট গণনার রেকর্ডটি ভাঙ্গে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার তারা কোন সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করেননি। তারা তাদের অসাধারণ কল্পনাশক্তি আর শুধু সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারের সাথে ২০টি এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক ব্যবহার করে এ মানটি বের করেন।

 

পরিশেষে শুধুমাত্র বৃত্তাকার ক্ষেত্রে নয় পাই পরিসংখ্যান, ত্রিকোণমিতি, বিস্তার পরিমাপ, অর্থনীতিসহ ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যপক ব্যবহার হয় যা একে করে তুলেছে সত্যিই অনন্য ও অসাধারণ। সকলের জীবন পাইয়ের মত সুন্দর হোক!

 

লেখক,

মো: রেজাউর রহমান, ইন্সট্রাক্টর,

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট।

 

লুতফর রহমান নিজেকে নিজে ইন্টানর্শীপ দিয়েছে

লুতফর রহমান নিজেকে নিজে ইন্টানর্শীপ দিয়েছে

লুতফর রহমান তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানে নিজেকে ইন্টানর্শীপ দিয়েছে। 

তিনি ড্যাফেডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার ডিপার্টমেন্ট এর অষ্টম সেমিস্টারের একজন ছাত্র। 

তিনি বলেন যখন তিনি চতুর্থ সেমিস্টারের ড্রপ আউট হয়ে যায় তখন থেকেই মূলত তার জীবনের স্ট্রাগল শুরু। চতুর্থ সেমিস্টার ড্রপ আউট হওয়ার  পরে তিনি প্রচণ্ড ভেঙে পড়েন এবং তার পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ চলে যায়। তার অনেকদিন পরে সে রিয়েলাইজ করে যে এভাবে আর থাকা যায় না, তার কিছু একটা করতে হবে। 

পরবর্তীতে শেষ তার এক আঙ্কেলের  কাছ থেকে পরামর্শ নেন যে যেহেতু টেলিকমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্টে টেলিকমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট বেসমেন্টে কি কাজ করা যায়। তখন তার আঙ্কেল তাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেন। 

তিনি সিদ্ধান্ত যে তিনি ব্যবসা  করবেন।  সবার প্রথমে তাকে তার মা সাহায্য করে ছিলেন। তিনি তার মাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে সে টাকা নষ্ট করবে না বরং তার ব্যবসার কাজে লাগাবে সে তার ব্যবসা শুরু করতে চায়। পরবর্তীতে তাকে তার মা ৫০ হাজার টাকা ধার হিসেবে দেয় এবং তা দিয়ে তিনি তার ব্যবসা শুরু করেন। 

অন্যদিকে ড্যাফোডিল পলিটেকনিক থেকে তাকে ব্রিজি চৌধুরী ম্যাম কল দেন। ম্যাম তাকে অনেক বোঝানোর পরে তিনি পঞ্চম সেমিস্টার ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি ভর্তি হন। 

তিনি জানান, “তিনি সকাল বেলা ক্লাস করতেন এবং বিকেলে গিয়ে তিনি তার অফিস সামলাতেন। 

তিনি আরো জানান তিনি এরপর থেকে তিনি আর কোন সাবজেক্টে ফেল করেন নি। ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আমাকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছেন যেমন যখন তিনি তার কোম্পানির কোন সমস্যায় পড়লে তখন তিনি তার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করেন। 

এবং তিনি যে প্র্যাকটিক্যাল গুলো করতেন সেগুলোই তিনি তার কোম্পানিতে কাজে লাগিয়েছেন। “

 

একটা সময় তাদের ইন্টার্নশিপের সময় চলে আসে এবং সে কয়েকটি কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের জন্য যোগাযোগ করেন। 

সেখানে সে দেখল তার কোম্পানিতে যে যে কাজ গুলো আছে ঠিক সেসব কাজগুলো সম্পন্ন কোম্পানিতে গিয়ে করতে হবে। 

 

তাই সে চিন্তা করলেও তিনি তার নিজের কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করবেন। তিনি তার নিজের কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করলেন এবং তার দুই বন্ধু কেউ তার কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দিলেন। 

 

গল্প থেকে শেখা, পর্ব – ২

গল্পের নাম: বাক্সের বাইরে চিন্তাভাবনা ( সৃজনশীল চিন্তা)

 

প্রায় কয়েকশ বছর আগে, ইতালীর একটি ছোট্ট শহরে একজন ছোট ব্যবসায়ী ছিল তার অনেক টাকা ধার ছিল সুদখোরের কাছে। যে সুদখোর লোকটি তাকে ধার দিয়েছিল সে অনেক বৃদ্ধ ছিল এবং দেখতে আকর্ষণীয় ছিল না। তার ব্যবসায়ীর মেয়েকে পছন্দ হয়েছিল।

 তিনি ব্যবসায়ীকে এমন একটি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন যা তাকে দেওয়া  ধার সম্পূর্ণভাবে শোধ করবে। তবে,প্রস্তাব টি তিনি যদি ব্যবসায়ীরমেয়েকে বিয়ে করতে পারেন তবে তারা ধার শোধ করবে। বলাই বাহুল্য, এই প্রস্তাবটিকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখা হয়েছিল। সুদখোর ব্যবসায়ী বলেছিল যে একটি ব্যাগে সে দুটি পাথর রাখে, একটি সাদা এবং একটি কালো।

ব্যবসায়ীর মেয়েকে ব্যাগের  কাছে যেতে হবে এবং ব্যাগ পাথর বের করতে হবে। যদি পাথর টি কালো হয় তাহলে তিনি ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করবেন এবং তার সব ধার শোধ হয়ে যাবে। আর যদি  পাথর টি সাদা হয় তাহলেও সব ধার শোধ হয়ে যাবে এবং ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করতে হব না।

 

সবলোক ব্যবসায়ী লোকটির বাগানে চলে গেল, আর ওই সুদখোর লোকটি দুইটি পাথর উঠালো। যখন ওই সুদখোর লোকটি পাথর উঠাচ্ছিল তখন ব্যবসায়ীর মেয়ে দেখলো যে লোকটি দুইটি পাথরই কালো উঠালো এবং ব্যাগে রেখে দিল।

 

পরবর্তীতে মেয়েটিকে ব্যাগটি দিয়ে দিল এবং বলল ব্যাগ থেকে একটি পাথর বের করতে।

মেয়েটির কাছে  তিনটি অপশন ছিল-

১. ব্যাগ থেকে পাথর নিতে অস্বীকার।

২. ব্যাগ থেকে উভয় পাথর বের করে এবং সুদখোরের প্রতারণার সবার সামনে  প্রকাশ করা।

৩. সবটা জেনেওে কালো পাথরটা বের করে  লোকটিকে মেনে নেওয়া এবং তার পিতার সমস্ত ধার শোধ করে নিজেকে উত্সর্গ করা।

 

মেয়েটি ওই ব্যাগটি থেকে একটি পাথর বের করল, কিন্তু পাথরটি দেখার আগে ‘দুর্ঘটনাক্রমে’ হাত থেকে পরে যায় যেখানে অনেক পথর আগে থেকেই পড়া ছিল সেখানে। মেয়েটি বলল ব্যাগে দেখি যে কোন পাথর টা রয়েছে ।তারপর বোঝা যাবে যে আমার হাত থেকে কোন পাথরটি পড়েছে। 

 

যেহেতু সুদখোর লোকটি ব্যাগের মধ্যে দুইটি পাথরই কাল রেখেছিল  তাই ব্যাগের মধ্যে থাকা পাথরটি কালো ছিল এবং তা সুদখোর ব্যবসায়ী প্রকাশ করতে চাচ্ছিল না। তাই এমন  প্রতিক্রিয়া তাকে  করতে হয়েছিল যেন মেয়েটির পড়ে যাওয়া পাথর টি সাদা ছিল এবং মেয়েটি তার বাবার ধার শোধ করতে সক্ষম হল।

গল্পের নৈতিকতা:

এটা জরুরি না যে কিভাবে আমরা আমাদের কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার আমাদের সামনে যে সে বিকল্পগুলো কে বেছে নিতে হবে। সব সময় কিছু না কিছু বক্সের বাইরে  চিন্তা করে পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।

নিয়ান্ডারথাল : হারিয়ে যাওয়া মানুষদের আদ্যোপান্ত

নিয়ান্ডারথাল : হারিয়ে যাওয়া মানুষদের আদ্যোপান্ত

চারপাশের কয়েক প্রজাতির সাপ দেখা যায়। ব্যাঙের বেশ কয়েকটি প্রজাতি আমাদের চোখে পড়ে।প্রাণী জগতের সকল প্রাণীরই রয়েছে আলাদা আলাদা প্রজাতি। আমরা মানুষরাও কিন্তু এক প্রজাতির নই। মানুষেরও বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে।তবে বিবর্তনের পথ হেঁটে অন্য সকল প্রজাতিকে টেক্কা দিয়ে আজকে আমরা আধুনিক মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছি। টিকে রয়েছি কয়েক হাজার বছর ধরে।মানুষের প্রজাতিগুলোর মধ্যে বর্তমান মানুষের সবচেয়ে কাছাকাছি সময়ের প্রজাতি হচ্ছে নিয়ান্ডারথাল।তারা আজ থেকে প্রায় ৩০ বা ৪০ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাদের অসংখ্য ফসিল উদ্ধার করা গেছে বর্তমান সময়ে এসে। ফলে অন্যান্য প্রজাতির চেয়ে নিয়ান্ডারথাল সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি বেশি।আজকের লেখায় পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নিয়ান্ডারথাল মানুষ প্রজাতির সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

      ল্যাটিন শব্দ Homo এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Human বাংলায় মানুষ। যদিও ১৮৫৬ সালের আগেই নিয়ান্ডারথালদের বেশ কয়েকটি ফসল আবিষ্কৃত হয়েছিল; তবুও ১৮৫৬ সালে জার্মানির নিয়ান্ডার উপত্যকা থেকে পাওয়া ফসিলটি ছিল নিয়ান্ডারথালদের আদর্শ নমুনা বা ফসিল। এই নিয়ান্ডার উপত্যকার নামানুসারে মানুষের এই প্রজাতির নামকরণ করা হয় নিয়ান্ডারথাল।

                                                  জার্মানির    নিয়ান্ডার ভ্যালি

     ১৮২৯ সালে বেলজিয়ামের এঞ্জিসের‘ কাছাকাছি গুহা থেকে একটি নিয়ান্ডার্থাল শিশুর মাথার খুলি আবিষ্কার করা   হয়।  নিয়ান্ডারথালদের পাওয়া ফসিলগুলোর মধ্যে এটি ছিল প্রথম  ফসিল। তবে ১৯  শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আরও ফসিল আবিষ্কার না হওয়া অবদি এটি সম্ভাব্য মানব পূর্বপুরুষ হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। তারপর থেকে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার ফসিল পাওয়া যায় ।এর মধ্যে বাচ্চা, শিশু এবং ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্কের ফসিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।যার ফলে অন্য যেকোনো মানব পূর্বপুরুষের চেয়ে নিয়ান্ডারথাল সম্পর্কে বেশি জানা যায় । ফ্রান্সের লে মুস্টিয়ে থেকে ৪৫ হাজার বছর আগের একটি মাথার খুলি আবিষ্কার করা হয় । এটি ছিল কৈশোরে উপনীত এক নিয়ান্ডারথালের খুলি। নিয়ান্ডারথালদের যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা এই খুলির মধ্যেও ছিল।এরপর একের পর এক ফসিল আবিষ্কার হতে থাকে। ১৯০৯ সালে ফ্রান্স থেকে ১৯৮৩ সালের ইসরাইল থেকে।এই ফসিলগুলো নিয়ান্ডারথালদের সম্পর্কে গভীর অনুসন্ধানে সাহায্য করে গবেষকদের।

 

        নিয়ান্ডারথালদের বিকাশ ঘটেছিল ইউরোপ এবং এশিয়াতে ।পক্ষান্তরে বর্তমান মানুষের প্রজাতির বিকাশ ঘটতে থাকে আফ্রিকাতে। ফসিল গবেষণা করে বিজ্ঞানী ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা দেখেছেন যে , নিয়ান্ডারথালদের পূর্ণ বিকাশ হয়েছিল আজ থেকে প্রায় চার লক্ষ বছর আগে ইউরোপে । এই প্রজাতিটি ইউরেশিয়া , পশ্চিম পর্তুগাল এবং ওয়েলস থেকে সাইবেরিয়ার আলটাই পর্বতমালা পর্যন্ত  বিস্তৃত ।নিয়ান্ডারথালরা ছিল অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন।ঠান্ডা জলবায়ু সত্বেও কয়েক লাখ বছর ধরে সফল ভাবে বসবাস করেছিল তারা। 

         নিয়ান্ডারথালদের মাথার খুলির ছিল লম্বা এবং নিচু ।আধুনিক মানুষের মত গোলাকৃতি ছিল না। তাদের চোখের ওপর আলাদা বিশেষ ধনুকাকৃতির ভ্রু ছিল। তাদের মুখের কেন্দ্রীয় অংশটি সামনের দিকে একটু বেশি প্রসারিত ছিল।তাদের চেহারার মধ্যে যে বিষয়টি সহজে ধরা পড়তো সেটি হচ্ছে লম্বা এবং প্রশস্ত নাক। কিছু বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তাদের এ ধরনের চেহারা হবার কারণ ছিল ঠান্ডা এবং শুষ্ক পরিবেশে টিকে থাকার জন্য। তাদের নাক অপেক্ষাকৃত বড় ছিলো, কারণ সেগুলো তারা যে নিশ্বাস নিতো তা আদ্র এবং উষ্ণ করতে কাজে লাগাতো। তাদের সামনের দাঁত অনেক বড় ছিল এবং তাতে ছিল নানা দাগের চিহ্ন।তারা যখন খাবার বা অন্যান্য উপকরণ তৈরি করত তখন তাদের লম্বা দাঁতগুলো তৃতীয় হাতের কাজ করতো। নিয়ান্ডারথালদের শক্ত পেশীবহুল দেহ ছিল। কোমর এবং ঘাড় ছিল প্রশস্ত। পূর্ণবয়স্ক নিয়ান্ডারথালরা ১.৫০ থেকে ১.৭৫ মিটার লম্বা হতো এবং ওজন হতো ৬৪-৮২ কেজি। প্রথমদিকে নিয়ান্ডারথালরা     শেষের দিকে বিলুপ্ত হওয়া নিয়ান্ডারথালদের চেয়ে লম্বায় আরো বড় ছিল, তবে ওজন একই ছিল।নিয়ান্ডারথাল নারীদের স্তনের আকার অনেক বড় ছিল। কারণ দ্রুত মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রচুর মাতৃদুগ্ধ প্রয়োজন হতো। ছোট হাত এবং পা নিয়ে তাদের শরীর ছিল গাট্টাগোট্টা ধরনের।এ ধরনের শরীর ঠাণ্ডা পরিবেশে টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত ছিল।

    নিয়ান্ডারথালরা গুহায় বসবাস করলেও তাদের যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা ছিল এবং তাদের আচরণ ছিল অনেকটাই মার্জিত। তাদের ব্রেইনের আকার ছিল ১২০০ থেকে ১৭৫০ ঘন সেন্টিমিটার। যা বর্তমান মানুষের তুলনায় বেশি। নিয়ান্ডারথালরা তাদের বুদ্ধি দিয়ে বিভিন্ন অস্ত্র ,যেমন – বর্শা, কুড়াল বানাতে পারত ।তিন লক্ষ বছর আগে নিয়ান্ডারথালরা লিভালইস টেকনিক নামক পাথুরে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ।

   নিজ প্রজাতির মাংস খাওয়াকে ক্যানিবালিজম বলে। এক সময় নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও ক্যানিবালিজম এর চর্চা ছিল।সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফোনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞানী হেলেন রুশিয়ের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক টিম গোয়েত গুহা থেকে প্রাপ্ত নিয়ান্ডার্থালদের হার নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন। তাদের গবেষণায়ও নরভক্ষণের  প্রমাণ মিলেছে। তারা ঠিক কি কারণে নিজেদের মাংস খেত সেটা এখনও রহস্যের বিষয়।

        নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষের সাধারণ পূর্বপুরুষও ছিল একই। সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস হয়ে হোমো অস্ট্রালোপিথ্যাকাস্‌দের থেকে বিবর্তিত হয়েছি আমরা উভয়েই।  জেনেটিক গবেষণাও প্রমাণ করে, অস্তিত্বের প্রথম ১ লাখ বছর ধরে আমাদের ডিএনএ’র কিছু অংশও সাধারণ পূর্বপুরুষদের থেকে নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে ভাগ করে পেয়েছি আমরা।তাই নিয়ান্ডারথালদের আদিম প্রজাতি হিসেবে না নিয়ে সহাবস্থান শুরু করে আধুনিক মানুষেরা। তারপর কিছু পরিবর্তন ঘটে। আমাদের অস্ত্রের সঙ্গে প্রতীকী শিল্পকর্ম উন্নত হতে শুরু করে। ফলে হোমিও স্যাপিয়েন্সরা জটিল করে তোলে নিয়ান্ডারথালদের জীবনযাত্রা।                   

   জার্মানির জাঁ জ্যাক লিপজিগ বিবর্তনমূলক নৃ-বিজ্ঞান ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের হাবলিন বলেন, হোমো স্যাপিয়েন্সরা তাদের বাসস্থান দখলে নিয়ে নিলে নিয়ান্ডারথালরা খুব শিগগিরই বাস্তুচ্যুত হয়। ফলে আধুনিক মানুষের কাছে প্রতিযোগিতায় হেরেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় তারা।

জার্মানির টুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকোলাস কোনার্ডের দল নিয়ান্ডারথালদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে আধুনিক মানুষের স্থল আঘাত তাদের জনসংখ্যাকে দ্রুত কমিয়ে দেয়। পক্ষান্তরে আমাদের সংখ্যা বেড়ে যায়, আমরা আরো অনেক জটিল সামাজিক ইউনিটে বসবাস শুরু করি এবং প্রয়োজন অনুসারে আরো পরিশীলিত উপায়ে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। ফলে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু হলে ইউরোপ- আফ্রিকা তথা পুরো পৃথিবী থেকেই বিদায় নিতে বাধ্য হয় তারা’।  

 

সূত্র : গুগল 

শাহনেওয়াজ সেরাজ সুবর্ণা

ইন্সট্রাক্টর অফ আর এস ডিপার্টমেন্ট

ডেফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

 

আয়নিক বন্ধন এর ধারণা

আয়নিক বন্ধন এর ধারণা

এই মহাবিশ্বকে  বিজ্ঞানীরা দুই ভাগে ভাগ করেছেন ,যার একটি হল পদার্থ আর অপরটি হলো শক্তি ।  অর্থাৎবিজ্ঞানীদের ধারণা মতেসমগ্র পৃথিবী পদার্থ এবং শক্তি দিয়ে তৈরি সাধারণত আমরা যা দেখতে পাই  সবকিছুই পদার্থ| পদার্থ সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকেমৌলিক পদার্থ এবং যৌগিক পদার্থপৃথিবীতে পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলিক পদার্থের সংখ্যা 118 টিবাকি যে পদার্থগুলো আমরা দেখতে পাই সবগুলাই যৌগিক পদার্থ| এই যৌগিক পদার্থ আবার বিভিন্ন বন্ধনে তৈরি হয়যার মধ্যে সবচেয়ে কমন একটা বন্ধন হল আয়নিক বন্ধন।  পৃথিবীতে যত ধরনের যৌগিক পদার্থ রয়েছে বিশেষ করে অজৈব যৌগিক পদার্থ  সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই গঠিত হয় আয়নিক বন্ধন দ্বারা।  আয়নিক বন্ধন সম্পর্কে তাই ধারণা রাখা প্রয়োজন

বন্ধন হলো  পরস্পরের সাথে যুক্ত হওয়া বা একত্রিত হওয়া |আর আয়নিক বন্ধন হলো আয়ন আদানপ্রদানের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত হওয়া।  পৃথিবীতে যে 118 টি মৌলিক পদার্থের পরমাণু রয়েছে তারা প্রত্যেকেই চায় তাদের কাছাকাছি নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করতে| এই নিষ্ক্রিয় বা স্থিতিশীল মৌলের ইলেকট্রন কাঠামো লাভের উদ্দেশ্যে  দুই বা ততোধিক   একই বা ভিন্ন মৌলের পরমাণু একটা নির্দিষ্ট আকর্ষণ বলের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের যৌগ গঠন করে

 

আয়নিক বন্ধন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য আসুন আমরা যে লবণ(NaCl)  খেয়ে থাকে, সেই লবণের গঠন টা জেনে নেই।  খাবার লবনের রাসায়নিক নাম হল সোডিয়াম ক্লোরাইড যার সংকেত হিসেবে লেখা হয় NaCl.

অর্থাৎ এখানে আয়নিক যৌগ গঠনকালে  একটি সোডিয়াম একটি ক্লোরিনের পরমাণু প্রয়োজন ছিল

 

এই সোডিয়াম পরমাণুতে (Na)11 টি ইলেকট্রন রয়েছে| সোডিয়াম পরমাণু একটি ইলেকট্রন ছেড়ে দিলে তার নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়ন(11) এর ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করেফলে সোডিয়াম  আয়নে পরিণত হয়|

Na- e Na+

 

অপরদিকে ক্লোরিন পরমাণুতে (Cl)17হয়েছেক্লোরিন পরমাণু সোডিয়াম পরমাণুর   ছেড়ে দেওয়া ইলেকট্রন তার নিজ কক্ষপথের নিয়ে নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাস আর্গন(18) এর ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করেফলে  ক্লোরাইড আয়নে পরিণত হয়                              Cl+ e Cl

 

এই সোডিয়াম আয়ন ক্লোরাইড আয়ন যখন পরস্পরের কাছাকাছি আসে তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের ইলেকট্রোস্ট্যাটিক আকর্ষণ বল কাজ করে| ফলে তারা পরস্পরের সাথে যুক্ত হয় এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড নামের লবণ তৈরি করে থাকে। 

Na + Cl    Na+ + Cl  NaCl

লেখক

মোঃআলামিন হোসেনলেকচারারড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট