লক্ষ্য পূরন
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই চায় সাফল্য(লক্ষ্য পূরন)। আর সাফল্য অর্জনের মূল ভিত্তি হল, তুমি আসলে কোন কাজে সফল হতে চাও – তা খুজে বের করা এবং সেটিকে জীবনের লক্ষ্য হিসাবে স্থির করা। আর লক্ষ্যের সংজ্ঞা হল জীবনে সুনির্দিষ্ট করে কোন কিছু পাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা।
জীবনে যা পেতে চাও না কেন আগে জানতে হবে – তুমি কি চাও? তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমার জীবনে কোন কাজটি করা সবচেয়ে জরুরী? তুমি যদি মনে কর এখন যে কাজটি তুমি করছো তা তোমার লক্ষ্যের সাথে মিলে না, তাহলে সেটা বাদ দিয়ে লক্ষ্যে পূরণের জন্য কাজ করতে হবে। আন্তরিকতার সাথে কাজ করলে যে কোন লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
জীবনের লক্ষ্য খুজে পাওয়া আর সেই লক্ষ্যের দিকে সঠিকভাবে এগিয়ে সফল হওয়া – দুটোই সমান জরুরী আর এই দুই এর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
আমি প্রকৌশলী হব-
আমি ডাক্তার হব –
আমি ধনী হব –
আমি বাড়ির মালিক হব –
আমি কোম্পানির মালিক হব – …… এগুলো হলো সপ্ন । কিন্তু তুমি যখন এই সপ্নগুলো থেকে নির্দিষ্ট করে কোন কিছুকে পাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন কর – সেটা হবেই লক্ষ্য। তুমি যখন লক্ষ্য ঠিক করবে তখন লক্ষ্যই তোমাকে গন্তব্যে পৌছানোর জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে।
লক্ষ্যে পৌছানেরা প্রথম শর্ত হলো বিশ্বাস। লক্ষ্যে পৌছাতে আমি পারব – এ কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। যদি বিশ্বাস কর ”আমি সফল হব”, তবে অবশ্যই তুমি সফল হবে আর তোমার ব্যবহারে তা প্রকাশ পাবে। তুমি নিজেই নিজের দৃষ্টিভঙ্গীর সুফল দেখতে পাবে।
সাফল্য এবং অসাফল্য নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। সাফল্যের শিখরে পৌছানেরা জন্য অনেকগুলি গুণ আছে। সেগুলি চিহ্নিত করতে পারলে এবং যথাযথ অনুসরণ করতে পারলে সফল হতে পারবে। অনুরূপভাবে সমস্ত অসাফল্যেরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সে বৈশিষ্ট্যগুলি এড়িয়ে চললে বিফল হবে না। সাফল্য কেবলমাত্র কয়েকটি মূল আদর্শকে নিয়মিতভাবে প্রয়োগ করার ফলশ্রæতি । তেমনি বিফলতা হচ্ছে কয়েকটি ভুলের ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি।
তবে জীবনে সাফল্য লাভ করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের কথা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে –
১। আত্ববিশ্বাস – নিজের সম্পর্কে নিজের কাছে স্পষ্ট থাকার নামই আত্ববিশ্বাস। নিজেকে সম্পূর্ণ ভালোবাসার মাধ্যমেই সত্যিকারের আত্ববিশ্বাসের জন্ম হয়। আত্ব বিশ্বাস মানে নিজেকে চেনা। নিজের সৃজনশীলতার ওপর আস্থা রাখা। হীনমন্যতা দূর করা । দৈনন্দিন ও প্রাত্যহিক জীবনে আত্ববিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করা।
২। ব্যর্থতাকে ভয় না পাওয়া – ব্যর্থতা হল এমন একটি বার্তা যে তোমাকে আবারও চেষ্টা করতে হবে, তবে একটু ভিন্ন উপায়ে। ব্যর্থতা জীবন প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। কোন কাজে ব্যর্থ হলে আপনার জীবন শেষ- এ কথা সঠিক নয়।
৩। যেটা করতে ভাললাগে সেটা কর – এমন একটি কাজ বা লক্ষ্য খুজে বের কর যা করতে তুমি পছন্দ কর। কোন জিনিষটা করতে সবচয়ে বেশি ¯সাচ্ছন্দ্য বোধ কর, তা সঠিক ভাবে বুঝে জীবনের লক্ষ্য স্থির করার খুবই জরুরী।
৪। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা– পরিকল্পনা হল কোথায় আছি এবং ভবষ্যিতে কোথায় যেতে চাই তার মধ্যকার সেতুবন্ধন। নিজের লক্ষ্যমাত্রার একটি সুপরিকল্পিত নক্সা তৈরি করা এবং তা অর্জনের জন্য সুন্দর পরিকল্পনার প্রয়োজন। পরিকল্পনা হল কার্যতালিকা, টার্গেট বাস্তবায়ন ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য করণীয় কার্যবলী যার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানো যায়। পরিকল্পনা হচ্ছে ফ্লোচাট, যা ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্কিত। কি করা হবে, কিভাবে করা হবে, কখন করা হবে, কতক্ষণে করা হবে – তা পূর্বেই নির্ধারণ করাকে পরিকল্পনা বলে। অদূর ভবিষ্যতে করণীয় কার্যসমষ্টির অগ্রিম সুচিন্তিত বিবরণী।
৫। কঠোর পরিশ্রম – পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্যগুলোর একটি হল, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসুতি। তুমি যদি সঠিক পথে ধারাবাহিক ভাবে পরিশ্রম কর, তবে অবশ্যই সফল হবে। কঠোর পরিশ্রম দিয়ে তুমি এমন অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারবে, যা হয়ত নিজে আশা কর নাই। তুমি চাইলেই কখনও সবচেয়ে মেধাবী বা প্রতিভাবান হতে পারবে না। কিন্তু সবচেয়ে পরিশ্রমী হতে পারবে এবং সেই পরিশ্রম দিয়ে নিজের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিভাবান, মেধাবী ও সুযোগ প্রাপ্ত মানুষকে পেছনে ফেলে সেরাদের সেরা হয়ে উঠতে পারবে।
৬। ধৈর্য্যশীল হওয়া – অনেকেই খুব অল্পতে হতাশ হয়ে পরে বা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে। ধৈর্য্য না থাকলে দীর্ঘ মেয়াদী কোন কাজ করা সম্ভব না। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পথে তোমার অনেক বাধা বিপত্তি আসবে । এই বাধা বিপত্তি বা ধাক্কা জীবনের একটি শিক্ষা। আর এই ধাক্কা অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌছানোর দিকে এগিয়ে আসলে তোমার আত¦বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। প্রত্যেক সফল মানুষের জীবনের একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ব্যর্থতা। কিন্তু তাদের সফলতার রহস্য হলো প্রবল ধৈর্য্য আর ইচ্ছা শক্তি।
৭। আবেগের প্রতি সংযমী মনোভাব – মানুষ খুবই আবেগপ্রবণ, অনেক সময় মনে না চাইলেও আবেগের সৃষ্টি হয়। কিছু কাজ আবেগের বশে করে ফেলার পর পরিস্থিতির পরিবর্তনে তা মানুষের জীবনে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। আবেগ নিয়ে চিন্তা করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুল হয়ে থাকে। কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে সব চাইতে বাধা দেয় এই অতিরিক্ত আবেগ। তাই আবেগকে যত বেশি তুমি নিয়ন্ত্রন করে রাখতে পারবে, তত বেশি সমস্যা এড়াতে পারবে। তাই আবেগকে একটু নিয়ন্ত্রন করো লজিক দিয়ে চিন্তা করলে তুমি অবশ্যই সফল হবে।
৮। নিয়মানুবর্তিতা – নিয়মানুবর্তিত কে মানব জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি বলা হয়। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতার চর্চা করা অতীব জররুী। সফল হতে হলে তোমাকে নিয়মানুবর্তিতার অনুসরণ করতে হবে। সময়ের কাজ সময়মত করলে, দিনের কাজ দিনে শেষ করলেই সফলতা ধরা দিবে তোমার হাতে।
নিজের লক্ষ্যে থাকতে হবে অটুট। যাদের কোনো লক্ষ্য নেই তারা কখনো অভীষ্টে পৌছাতে পারেন না। যারা সাফল্য চান, সফল চান, তারা দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রাখেন লক্ষ্যের দিকে।
রাসূল (সাঃ) যখন পারস্যকে মুসলমানদের পদানত করার লক্ষ্য স্থির করেছিলেন তখন পারস্য সা¤্রাজ্য ছিল বিশ্বব্যাপী এক অপরাজেয় শক্তি, আর মুসলমানদের হিসাব করার মত কোনো শক্তিই ছিল না। তারপরও রাসুল (সা) লক্ষ্য স্থির করেছিলেন পারস্যকে মুসলমানদের পদানত করার। লক্ষ্য স্থির করে দীপ্ত সাহস ও পরিশ্রমের ফলে একদিন সত্যিই পারস্য সা¤্রাজ্য মুসলমানদের পদানত করেছিলে।
বিশ্ববিজয়ী বীর জুলিয়াস সিজার বলেছিলেন, অধিকাংশ মানুষ বড় হতে পারে না কারণ সে সাহস করে আকাশের মত সূর্যে লক্ষ্য স্থির করে সে দিকে তাকাতে পারে না বলে।
লক্ষ্য বা চাওয়া যাই বলি না কেন যদি নিজের সম্পূর্ণ ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সে লক্ষ্যের পিছনে ছুটে তবে একদিন না একদিন সে লক্ষ্য পূরণ হবে। শুধু প্রয়োজন বিশ্বাস আর পরিশ্রম।
যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, হবেই হবেই দেখা, দেখা হবে বিজয়ের ———
সবশেষে গানের এই সুরের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে হয়, তুমি যদি লক্ষ্য স্থির করে মনে প্রানে বিম্বাস নিয়ে ছুটতে পার, তাহলে বিজয় মানে সাফল্যের দেখা পাবে।
=====================================================================================
লেখক,
ফারহা দিবা
সিনিয়র ইন্সট্রাকটর
ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যাথমেটিকস
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট