অবাস্তব প্রমান

 

অবাস্তব প্রমান

 

আজকে আমরা মজার কিছু প্রমাণ নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রমাণগুলো যদিও  সত্য নয়, তবুও এই প্রমাণগুলো দেখলে বা জানলে, গণিত হয়ে উঠবে অনেক মজার গণিত

গণিত দিয়ে খুব সহজেই এমন অনেক অবাস্তব বা মিথ্যা কিছু প্রমাণ করা যায় যা সাধারণত গণিতের অসংজ্ঞায়িত বা অনির্ণেয় টার্মগুলো দিয়ে করা হয়ে থাকে! এমনকি এই অসংজ্ঞায়িত বা অনির্ণেয় টার্মগুলো দিয়ে “পৃথিবীর সকল সংখ্যা ১ এর সমান প্রমাণ করা যায়!!!

অনেকর মনে প্রশ্ন এটা কি করে সম্ভব?

এখানে একটা ভুল আছে। ভুলটা কোথায়?

এখানে, বর্গমূল করাটাই হচ্ছে আসল ভুল। ৪র্থ লাইনটিতে ভুল। কারণ, আমরা জানি, বর্গমূলের শর্ত হচ্ছে, “শুধুমাত্র সেই সকল সংখ্যাকেই বর্গমূল করা সম্ভব, যাদের বর্গমূলকে পুনরায় বর্গ করলে একটি ধনাত্মক সংখ্যা পাওয়া যায়।

ঋণাত্মক সংখ্যাকে বর্গমূল করা হলে, তা আর বাস্তব থাকে না। কারণ, এখানে  কে বর্গ করলে -1 পাওয়া যায়, যা একটি ঋণাত্মক সংখ্যা। ঋণাত্মক সংখ্যার বর্গমূল সম্ভব না। অর্থাৎ, বাস্তবে -1 কে বর্গমূল করা সম্ভব না। আর এখান থেকেই জটিল সংখ্যা বা imaginary number এর ধারণা শুরু। যেখানে শুধুমাত্র কাল্পনিক সংখ্যা বা অবাস্তব সংখ্যা নিয়ে কাজ করা হয়।

ঋণাত্মক সংখ্যার বর্গমূল করা হলে সেটা হয়ে যায় অবাস্তব অর্থাৎ, ৪র্থ লাইন এবং তার পর থেকে সব কিছুই অবাস্তব। যা বাস্তবে কখনো সম্ভব না। এই প্রমাণের মূল উদ্দেশ্যও তাই কাল্পনিক। এখানে ১= -১ হচ্ছে একটি কাল্পনিক প্রমাণ।

 

ধরি,
x = y [যেখানে, x ও y উভয়ই পূর্ণ সংখ্যা] বা, x y = y² [উভয় পক্ষকে y দ্বারা গুণ করি] বা, xy – x² = y² – x² [উভয় পক্ষ হতে x² বিয়োগ করি] বা, x² – xy = x² – y² [উভয় পক্ষকে (-) দ্বারা গুণ করি] বা, x (x – y) = (x + y) (x – y)
বা, x = x + y
বা, x = x + x [যেহেতু, আমরা ধরেছিলাম, x=y] বা, x = 2x
বা, 1 = 2

অতএব, 1 = 2

তাহলে এখানে আমরা কি দেখলাম 1= 2 এটা বাস্তবে কিন্তু কখনই সম্ভব নয়। তাহলে অবশ্যই ভুল হয়েছে। ভুলটা কোথায়?

প্রথম লাইন থেকে শুরু করি,
ধরি, x=y
বা, x-y=0

এখন, ৫ম লাইনটি একটু খেয়াল করি,
x (x-y) = (x+y) (x-y)
বা, x.0 = (x+y).0 [যেহেতু, x-y = 0] বা, 0 = 0

এখন যদি x.0 = (x+y).0 লাইনটি থেকে x = x+y লাইনটি পেতে চাই, তখন  x.0 = (x+y).0 এই সমীকরণের উভয়পক্ষকে 0 দ্বারা ভাগ করতে হবে। আর গণিতে কোন কিছুকে 0 দ্বারা ভাগ করলে ফলাফল অসংজ্ঞায়িত হয়।

 

এখন আমরা গণিতের আরও একটি অবাস্তব প্রমাণ ২=৫ করব।

 

প্রমাণঃ

14 = 14

বা, 10 + 4 = 10 + 4

বা, 10 – 10 = 4 – 4

বা, 5 (2-2) = 2 (2-2)

বা, 5=2 [উভয় পক্ষকে (2-2) দ্বারা ভাগ করে]

 

অতএব, 2=5

এখানে ভুলটা কোথায়?

ভুলটা হচ্ছে 2-2 = 0, যা দ্বারা কোন কিছুকে ভাগ করলে উত্তরটি অসংজ্ঞায়িত হয়। অর্থাৎ গণিতে কোন কিছুকে 0 দ্বারা ভাগ করলে ফলাফল অসংজ্ঞায়িত হয়।

 

এখানে ২= ৫ হচ্ছে একটি কাল্পনিক প্রমাণ।

প্রমাণ : – 20 = – 20

 

এখানে ভুলটা কোথায়? ভুলটা হচ্ছে –

 

লাইনটিতে কখনই উভয় পক্ষে বর্গমূল করা যাবে না।

তাই 4 =5 সম্ভব না। প্রমাণটি অবাস্তব।

রীমান সিরিজ থিওরেম ব্যবহার করে আমরা এই প্রমাণটা করব। আমরা রীমান সিরিজ থিওরেম অনুযায়ী এমন একটি অনন্ত ধারা নেই যেখানে শুধু পজিটিভ 1 ও নেগেটিভ 1 থাকবে।

যেমন S = 1 – 1 + 1 – 1+1 – 1+ ………… এভাবে একটি ধারা নেই। এইবার এই ধারাটিকে নিজের ইচ্ছামত সাজিয়ে

S = S

বা, 1 – 1 + 1 – 1+1 – 1+ ………… = 1 – 1 + 1 – 1+1 – 1+ …………

বা, 1 – (1–1) – (1–1) – ……… = (1–1) + (1 – 1) + ( 1–1) + ……

বা, 1 – 0 – 0 – 0 ………. = 0 + 0 + 0 ………..

বা, 1 = 0

এটা কি আসলেই সম্ভব? বাস্তবে, কিন্তু এটা কখনই সম্ভব নয়।

তাহলে আমরা যেই প্রমাণটি করলাম, সেটি অবশ্যই ভুল।

 

 

ফারহা দিবা

সিনিয়র ইন্সট্রাকটর

ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যাথমেটিক্স

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

 

Tags: No tags

Comments are closed.