সাব-স্টেশনের গোপন কথা

সাব-স্টেশনের গোপন কথা

সাবস্টেশন নিয়ে মনের মাঝে অনেক প্রশ্নই জাগ্রত হয় কিন্তু আজকে সাবস্টেশন এই বিষয়টি নিয়ে দুটি প্রশ্নের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করব। প্রথম টি  হল, ৫০ কেজি ওজনের কম ব্যক্তি কেন সাবস্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না? দ্বিতীয় টি হল, স্টেপ এবং টাচ পটেনশিয়াল কি ? এটি সাবস্টেশন এ কি প্রভাব ফেলে ।চলুন একটি একটি করে সমাধান করা যাক।

৫০ কেজি ওজনের কম ব্যক্তি কেন সাবস্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না?

ক্যাপাসিটিভ ডিসচার্জ কারেন্ট

বাস্তবিকভাবে ২০-২৫ ফুট দূর থেকে বিদ্যুৎ কখনো টেনে নিয়ে যায়না। তবে হাই ভোল্টেজের জন্য ক্যাপাসিটিভ কারেন্ট ডিসচার্জ হতে পারে। কারণ মানবদেহ মাংসল এবং ফাপা। তাই হাই ভোল্টেজে মানবদেহ ক্যাপাসিটরের ন্যায় কাজ করে।এবার আসা যাক মূল প্রশ্নে। আসলে ৫০ কেজির কম ব্যক্তির সাবস্টেশনে প্রবেশ অনুচিত এই নিয়মটি IEEE কর্তৃক প্রকাশ করা হয়। আমরা জানি, IB = k/ts এখানে, IB হল বডি কারেন্ট, k হল কনস্ট্যান্ট, আর t হল ঐ ব্যক্তির উপর প্রভাব বিস্তার করতে কারেন্টের যতটুকু সময় লাগে।আর অন্য দিকে, k = SB

কার্ডিয়াক এরেস্টের ঝুঁকি

এখানে SB হল shocking probability of body। এসি কারেন্ট মানবদেহের জন্য বিপদজ্জনক এসি কারেন্ট বিপদ্দজনক হবার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল, রোধের উপর এসির তেমন প্রতিক্রিয়া নেই।তাই এসি কারেন্ট মানুষ বা যেকোন প্রাণীর হৃদপিন্ড প্রভাব বিস্তার করে কার্ডিয়াক এরেস্ট ঘটাতে পারে। এসি মানেই ছন্দময়ী কারেন্ট। অর্থাৎ কখনো পজিটিভ সাইকেল আবার কখনো নেগেটিভ সাইকেল। এই ছন্দময়তা হার্ট টিস্যু সহ্য করতে পারেনা। যার দরুণ হার্টবিট নরমালের তুলনায় অনেক বেড়ে যায় এবং হৃদপিন্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

গবেষণা অনুসারে একজন, ৫০ কেজি ওজন বিশিষ্ট ব্যক্তি উচ্চ ভোল্টেজে অবস্থান করলে তার ক্যাপাসিটিভ ডিসচার্জ বডি কারেন্ট ১১৬ মিলি এম্পিয়ার হয়ে থাকে আর এটি ৩ সেকেন্ডেই তার দেহে প্রভাববিস্তার শুরু করতে সক্ষম। তাই এই পরিমাণ কারেন্ট তার জন্য বেশ মরণঘাতী হতে পারে। মূলত এই কারণেই ৫০ কেজির কম ব্যক্তিদের সাবস্টেশনে প্রবেশ নিষেধ। আর এই ওজন দিয়ে মূলত প্রবেশকারী ব্যক্তিটি কি প্রাপ্তবয়স্ক কিনা তা বুঝানো হচ্ছে।

স্টেপ এবং টাচ পটেনশিয়াল কি ? এটি সাবস্টেশন এ কি প্রভাব ফেলে ?

স্টেপ এবং টাচ পটেনশিয়াল কি ?

যারা সাবস্টেশনে জব করেন এটা তাদের কাছে খুবই সুপরিচিত শব্দ। এই দুটি পটেনশিয়াল এর দরুণ কারো মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই টেকনিক্যাল বিষয় গুলো অনেকের জানা না থাকায় অহরহ দূর্ঘটনা ঘটেই চলছে। যারা সাবস্টেশনে জব করেন তারাই ভাল জানেন যে, এটা যেকোন সময় কত বড় জম হয়ে দাড়াতে পারে। যখন সাবস্টেশনে ফল্ট দেখা দেয় কিংবা খুব বড়সড় স্পার্কিং শুরু হয় তখন না জানার কারণে অনেকেই সেখানে বিনা দ্বিধায় বিচরণ করে থাকেন। এটা মোটেও উচিত নয়।

এমতবস্থায় কাছে না ১০ মিটার দূরে থাকলেও আপনি ঢলে পড়তে পারেন মৃত্যুর কোলে। কারণ সাবস্টেশন গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং ফল্ট কিংবা লিকেজ এর কারণে সেখানে বিশাল ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হতে পারে। এসময় ১০ মিটার রেঞ্জ পর্যন্ত এরিয়া বিদ্যুতায়িত হবার প্রবল সম্ভবনা থাকে। এমতবস্থায় আপনি যদি রেঞ্জের ভেতরে থাকেন তাহলে আপনার দুই পা সেক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোড/পরিবাহীর এর ন্যায় আচরণ করবে। আর দুই পায়ের মধ্যে যে ভোল্টেজ পার্থক্য তৈরি হবে তাকে বলা হচ্ছে স্টেপ পটেনশিয়াল। সরলভাবে বললে দুই পায়ের মধ্যে বিভব পার্থক্য। আবার আপনি ঐ সময় যদি ডিভাইস স্পর্শ করে ফেলেন তখন আপনার হাত & পায়ের মধ্যবর্তী স্থানে ভোল্টেজ সৃষ্টি হবে। যাকে বলা হয় টাচ পটেনশিয়াল। শুধুমাত্র সাবস্টেশন নয়। আবাসিক এলাকায় ইলেকট্রিক্যাল টাওয়ার ফল্ট কিংবা ছিড়ে পড়া তার থেকেও আপনি এটার শিকার হতে পারেন।

 

স্টেপ এবং টাচ পটেনশিয়াল এর থেকে বাচার উপায় কি?

যদি কোন কারণে আপনি সেই রেঞ্জ বা পাল্লায় থাকেন ও তারপরেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেন শুধুমাত্র bunny jump এর সাহায্যে।

Bunny Jump কি?

এটার বাংলা হল খরগোশের ন্যায় লাফানো। এমনভাবে লাফিয়ে রেঞ্জের বাইরে যেতে হবে যেন পা & হাত ভূমি / সাবস্টেশন fault/affected area পুরোপুরি স্পর্শ না করে। নাহলে touch & step potential আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

পরিশেষে বলতে চাই যে, কেউ সাব স্টেশনে প্রবেশ করার পূর্বে এই বিষয়টি অবশ্যই তাদের জানা থাকা প্রয়োজন, তা না হলে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে । তাই তোমাদের সবাইকে বলব অবশ্যই বিষয়টি মাথায় রেখে তারপরে সাব স্টেশনে প্রবেশ করবে।

লিখেছেন, 

মোঃ শফিকুল ইসলাম মিলন

ইন্সট্রাক্টর

ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্ট

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

Tags: No tags

Comments are closed.