বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা
মানুষ বেচেঁ থাকবে যতদিন, বস্ত্রের চাহিদা থাকবে ততদিন। আর যতদিন বস্ত্রের চাহিদা থাকবে ততদিন টেক্সটাইল শিল্পের বিকাশ চলতে থাকবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেক্সটাইল এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত বিষয়। কারন, আমাদের দেশের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগই আসে পোষাক শিল্প হতে। তাছাড়া এ সেক্টরের মাধ্যমে বেকারদের কর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ পূরন হয়। বাংলাদেশে চাকরির বাজারে যে কয়টি পেশা রয়েছে তার মধ্যে টেক্সটাইলের চাহিদা অন্যতম। কারন এই সেক্টেরে চাহিদার তুলনায় যোগ্য প্রার্থীর অভাব রয়েছে। বাংলাদেশে ক্রমর্বধমান টেক্সটাইল শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটার কারনে টেক্সটাইল শিল্পের গুনগত উন্নয়ন এবং সচল ভাবে ধরে রাখতে হলে দক্ষ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের কোন বিকল্প নাই। তাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংকে আপনার পেশা হিসেবে নিলে আপনি হতে পারবেন এই বিপুল সম্বাবনাময় অর্থনৈতিক এবং বানিজিক সেক্টরের গর্বিত অংশীদার।
বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিক্ষার ইতিহাস:
১৯২১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকায় নারিন্দায় উয়েভিং স্কুল নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা
হয়। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান ক্ষমতা লাভের পরে এর নামকরন করা হয় ইষ্ট পাকিস্তান টেক্সটাইল
ইনষ্টিটিউট। ১৯৬০ সালে এটিকে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৭৮ সালে এই
প্রতিষ্ঠানকে ডিগ্রী বা স্নাতক পর্যায়ে উন্নতি করা হয় এবং এর নামকরন করা হয় কলেজ অব
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি। ১৯৯৩ সালে এক সাথে ৬টি ইনষ্টিটিউটে ৩ বছর মেয়াদী
ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয়। ইনষ্টিটিউট গুলো হল: বেগমগঞ্জ, জোরারগঞ্জ, রংপুর, বরিশাল, টাঙ্গাইল,
দিনাজপুর।
২০০১ সালে ৩ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সকে ৪ বছরে উন্নতি করা হয়। ২০১০ সালে দেশের চলমান
অর্থনীতির উপর বিবেচনা করে টেক্সটাইল ইনষ্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনিত করার জন্য সংসদে
প্রস্তাব করা হয়। ২০১০ সালের ৫শে অক্টেবর এই প্রস্তাবটি সংসদে চুড়ান্তভাবে পাশ করা হয় এবং
২২শে ডিসেম্বর ইহা কার্যকর করা হয়। ২০১১ সালে ১৫ই মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকার
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় পড়ার বিষয়বস্তুঃ
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় মূলত টেক্সটাইলের মৌলিক বিষয়গুলো পড়ানো হয়। এগুলো হলঃ
১)ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজি (স্পিনিং)।
২)ফেব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজি (নিটিং অ্যান্ড উয়েভিং)।
৩)ওয়েট প্রসেসিং টেকনোলজি (ডাইং,পিন্টিং অ্যান্ড ফিনিসিং)।
৪)এপারেল ম্যানুফেকচারিং টেকনোলজি।
তন্তু থেকে কাপড় বানানোর উপযোগী সুতা তৈরি, কিংবা একটি ফেব্রিককে আরামদায়ক করার যেসব
পদ্ধতি রয়েছে, সেসবও এই পড়ালেখার বিষয়। অদাহ্য, তাপরোধী, রাসায়নিকরোধী কিংবা পানিরোধী
ফেব্রিকের সম্ভাবনা ও ব্যবহার—এই সবকিছুই পড়ানো হয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয়
পোশাক থেকে শুরু করে বিশেষায়িত (যেমন অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের জন্য জ্যাকেট কিংবা
মহাকাশচারীদের স্যুট) সবকিছুই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের
জন্য এই বিশাল টেক্সটাইল সেক্টরের জোগান দিতে গিয়ে পরিবেশের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে,
সেটা প্রতিরোধ করাও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অংশ। নিত্যনতুন ডিজাইনের ফ্যাশন উদ্ভাবন থেকে
শুরু করে যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা তৈরি পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা—এসব কিছুই পড়ানো
হয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায়।
পেশা হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং:
পেশা হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কথা বলতে গেলে প্রথমেই যে কয়েকটি বিষয় মাথায় আসে
তা হল-কর্মক্ষেএ, বেতন, সুনাম এবং ভবিষ্যত। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের বাংলাদেশে সরকারি এবং
বেসরকারি দুইটি প্রতিষ্ঠানেই চাকুরি করার সুযোগ রয়েছে। বেশ কিছু সংখ্যক সরকারি টেক্সটাইল
রয়েছে যেখানে চাকুরি করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া অনেক বেসরকারি টেক্সটাইল রয়েছে সেখানে ও
চাকুরি করার সুযোগ রয়েছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাকুরির অনেক সেক্টর আছে যেমন:
▶ স্পিনিং ফ্যাক্টরী
▶ নিটিং ফ্যাক্টরী
▶ উইভিং ফ্যাক্টরী
▶ ডাইং ফ্যাক্টরী
▶ গামেন্টস ফ্যাক্টরী।
▶ বায়িং হাউজ।
▶ মার্চেন্ডাইজিং।
▶ টেক্সটাইলের বিভিন্ন ধরনের ম্যাটেরিয়াল, ক্যামিক্যাল, মেশিনারী মার্কেটিং।
তাছাড়া পেশা হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে দেশের বাহিরে অর্থাৎ বিদেশে কাজ করার
সুযোগও রয়েছে।
লেখক,
মোঃ জায়েদুল হক
ইন্সট্রাকটর