উন্নয়নের দ্বার খুলে দিল ড্যাফোডিল

স্কুলের গন্ডী পেরেছিলাম আরও ১০ বছর আগে। স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হলাম পলিটেকনিকে। চলে এলাম ব্যাস্ততম রাজধানীতে। বাবা ও মা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। একটা মাত্র ছেলে ছিলাম বিধায় ভালোবাসাটা অনেক তীব্র ছিল আমার জন্যে। কিন্তু আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম। কারন স্কুলের শেষ বেঞ্চের ছাত্রটি বাবা মা ছেড়ে ঢাকায় এসে এখানকার পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে চলাটা সত্যি খুব কষ্টকর। তার উপর নতুন শিক্ষাঅধ্যায় শুরুটা আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলেছিল। ছাত্র হিসেবে তেমন ভালো ছিলাম না। তাই নিজের মধ্যে ভয়টা বেড়েই চলছিল। যাই হোক সব ভাবনার অবসান ঘটিয়ে বাবা নিয়ে আসলেন ঢাকাতে। ঢাকা পৌছে বাবার এক বন্ধুর বাসায় উঠলাম। বাবার বন্ধু একটি থাকার জন্যে একটি মেস ঠিক করে দিলেন। ভর্তি হলাম “ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট”-এ । আবারও ঠিক একই ভাবে সেই ভয় কাজ করছে মনের মধ্যে। যাই হোক ভর্তি যখন হয়ে গেছি তখন শেষ তো করতেই হবে। তবে শুরু থেকে আমার পলিটেকনিক বা কারিগরি শিক্ষার উপর একটা ধারনা ছিল না। লোকমুখে শুনে আমার মধ্যে একটা ভুল ধারনা জন্মেছিল ছিল যে, কারিগরি শিক্ষা বর্তমান সময়ে তেমন যোগপোযোগী না। এর তেমন কোন বাজার চাহিদা নেই। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে দেখলাম ভালভাবেই কাটছিল। কারন নিজের মধ্যে কারিগরি শিক্ষাব্যাবস্থা নিয়ে জন্মে থাকা ভুল প্রমাণিত হচ্ছিল। ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম সত্যি নিজের চিন্তা ধারাকে বদলে দিল। নিজেকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলছিল। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের থেকে এর শিক্ষাব্যাবস্থা অনেক আধুনিক ও উন্নত। প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যাবস্থা হওয়ায় উচ্চশিক্ষার উৎসাহটা বেড়ে গেল। পড়াশুনা নিয়ে পুষে রাখা ভয়টা ধীরে ধীরে কেটে গেল।
এই শিক্ষাব্যাবস্থার আদলে আমার জীবনে একটা নতুন সুযোগ আসলো। শিক্ষাসফরের অধীনে একটি কর্মশালায় অংশগ্রহন। স্থানটি ছিল মালেশিয়ায়। দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই প্রথম কোনো কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা সফর আয়োজন করল। নিজেকে খুব উদ্দেপিত লাগছে। শিক্ষাসফর নিয়ে নিজের মধ্যে একটি চরম উত্তেজনা কাজ করছে। অবশেষে দিনক্ষন ঠিক হল। ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০১৮। কিন্তু মালেশিয়াতে শিক্ষা সফর হবে বিধায় কিছু কার্যক্রম যেমন ভিসা প্রসেসিং, এয়ার টিকেট, ইমিগ্রেশন ইত্যাদি। এই প্রথম আমার দেশের বাইরে ভ্রমন, তাই নিজেকে খুব উৎসাহী ও ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
যাই হোক শিক্ষা সফরের বিষয়ে আসি। মূলত শিক্ষা সফরটি মালেশিয়ার একটি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ( কেবাংসান ইউনিভার্সিটি অব মালেশিয়া) ও ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট যৌথ ভাবে আয়োজন করেছিল।

অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ করে ২৬শে সেপ্টেম্বর চলে আসল। সন্ধায় বাসা থেকে রেডি হয়ে বের হলাম। আগের দিন সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছিলাম। উত্তেজনার চরম সীমা কাজ করছে। ভার্সিটির সামনে গিয়ে সবাই একত্র হলাম শিক্ষকদের সাথে যারা আমাদের সাথে যাত্রার সঙ্গী হবেন। আমরা ১৫জন সহপাঠী এবং ৪ জন ইন্সট্রাক্টরসহ মোট ১৯ জন ছিলাম। এরপর ভার্সিটি থেকে সবাই ভার্সিটির বাসে করে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। বিমানবন্দর পৌছে ইমিগ্রেশন শেষ করে বিমানে উঠলাম। মূহুর্তটা সত্যি অনেক আনন্দের।

আমরা ঠিক সকাল ৮ টায় মালায়শিয়া পৌছালাম। এয়ারপোর্টে নেমে সেখান থেকে সবাই কেবাংসান ইউনিভার্সিটি অব মালেশিয়াতে গেলাম। ম‚লত এখান থেকেই আমাদের শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য কার্যক্রম শুরু করলাম। কেবাংসান ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল পলিটেকনিক এর যৌথ উদ্দোগে আয়োজন করা হয় একটি কর্মশালা। এই কর্মশালায় আমাদের কিছু সুক্ষ্ম দক্ষতা বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হয়। এর দ্বারা আমি অনেক জ্ঞান লাভ করি। যেমন সেলফ ডেভেলপমেন্ট, টাইম ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। এছাড়াও ভাষাগত ও প্রযুক্তিগত বিদ্যা যেমন ইংলিশ স্কিল, টেকনলজি, ল্যাংগুয়েজ চ্যাঞ্জিং ইত্যাদি। তাছাড়া কেবাংসান ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল রিসার্চ সেন্টার ও জিওলজিকাল রিসার্চ সেন্টার ঘুরে দেখার সুযোগ পাই। ক্লিনিকাল রিসার্চ সেন্টার জায়গাটি সত্যি খুব চমৎকার। সেখানে মালেশিয়ার অনেক পুরোনো কিছু শিল্প ও বন্য প্রাণীর মমি সংরক্ষন করে রাখা আছে। এগুলো ম‚লত তারা ভবিষ্যৎ গবেষনার জন্যে সংরক্ষিত রয়েছে। আর জিওলজিকাল রিসার্চ সেন্টারে তাদের ভূতাত্ত্বিক বিষয়ের উপর কিছু যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম রয়েছে যা তারা গবেষনার জন্যে ব্যাবহার করে থাকে।


এর পাশাপাশি একটি সেশনের আয়োজন করা হয়, যেখানে আমরা ও মালেশিয়ান কেবাংসান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা একত্রে অংশগ্রহন করি। এরপর আমাদের লব্ধ জ্ঞানের উপর আমরা প্রেজেন্টেশন প্রদান করি এবং সেখানে আমরা একে অন্যের সংস্কৃতি তুলে ধরি। সবশেষে আমরা পুরো সেশনের উপর একটি সার্টিফিকেট কেবাংসান ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জন করি।
পরদিন আমরা আরও ৩টি ইউনিভার্সিটি ও ১টি পলিটেকনিক ভ্রমন করি। এরপর সবশেষে আমরা মালেশিয়ার টুর্যিরজম সাইটগুলো ঘুরে দেখা শুরু করি। আমি বিশেষ করে কুয়ালালামপুর এর অসাধারন সৌন্দর্য বেশি উপভোগ করেছিলাম। সেখানকার লোকজন, তাদের সংস্কৃতি, খাদ্যভ্যাস, রাস্তাঘাট সম্পর্কে জানলাম। নিজের মনোস্তাত্ত্বিক প্রবৃদ্ধি বিকশিত হচ্ছিল তা বুঝতে পারলাম। ৩রা নভেম্বর আমরা বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি।
এই সম্পূর্ন এডুকেশন ট্যুরটি আমার জীবনের পুরু চিন্তাভাবনাকে বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম কোনো কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ড্যাফোডিল পলিটেকনিক থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ধরনের এডুকেশন ট্যুরের আয়োজন সত্যি এক্তি বড় পদক্ষেপ। তাছাড়া এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক কোনো ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাথে যৌথভাবে অংশগ্রহনম‚লক শিক্ষা সফর অনেক প্রশংসনীয় বিষয়। এই ধরনের পদক্ষেপ প্রমান করে যে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভিন্ন আংগিকে চিন্তা করে এবং কারিগরি শিক্ষাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখে। সবথেকে বড় বিষয় ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী হিসেবে এই ধরনের ওয়ার্কশপে অংশগ্রহন করতে পারাটা আমার কাছে অনেক বড় অর্জন। যা কিনা বর্তমান সময়ে চাকুরীর ক্ষেত্রে নিজেকে যোগ্যপোযোগী করে তুলতে সাহায্য করবে। কারন শুধু বইপড়া আর পাঠ্যবিদ্যার জোরে বর্তমান প্রতিযোগিতাম‚লক বাজারে টিকে থাকা সম্ভব নয়। নিজেকে এই প্রতিযোগিতাম‚লক জগতে আরও আত্মবিশ্বাসী করে টিকে থাকা ও নিজের স্থানটি আরো শক্ত ও মজবুত করে ধরে রাখার জন্যে প্রকৌশল শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

Tags: No tags

Comments are closed.