মানুষ গড়ার কারিগর

 

মানুষ গড়ার কারিগর

– শিক্ষক

মানুষ গড়ার কারখানা হল

– শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

শিক্ষাদান করাটা শুধুই একটা চাকরী বা পেশা নয়, এটা একটা আবেগের বিষয়। একজন প্রকৃত শিক্ষক-শিক্ষিকার পরিচয় শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নয়। একজন প্রকৃত শিক্ষক হলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি পাঠ্য পুস্তক থেকে কীভাবে ছাত্রছাত্রীদের শেখাবে সেটুকু যে জানবে তা নয় বরং শিক্ষার্থীদের সেই বিষয়গুলিকে ভালবাসতে শেখানোর ক্ষমতাও তার মধ্যে থাকতে হবে। পাঠদানের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীর মানসিক বিকাশ, মানবিক দিকগুলোকে জাগিয়ে তোলা, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের শিক্ষাটাও দেওয়া উচিত।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন অভিভাবকরা নিজ সন্তানকে স্কুল শিক্ষকদের হাতে তুলে দিয়ে বলতেন, ’আমার সন্তান যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তবে ওর হাড্ডিগুলো শুধু ফেরত দেবেন, বাকি সবই আপনার।’ শিক্ষকও অভিভাবকের দেওয়া দায়িত্বকে তথাস্থ মনে করে সাধ্যমত চেষ্টা করতেন কিন্তু শিক্ষকরা খুব কম ক্ষেত্রেই নির্দয়ভাবে পেটাতেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তার পুত্রের শিক্ষকের কাছে লেখা পত্রে বলেছিলেন ”আমার পুত্রকে জ্ঞানার্জনের জন্য আপনার কাছে পাঠালাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন – এটাই আপনার কাছে আমার বিশেষ দাবি।” জগৎ বিখ্যাত বীর আলেকজান্ডার তার শিক্ষক এরিস্টটলের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বলেছিলেন, ÕTo my father, I own my life; to Aristotle, the knowledge to live worthily’.

পিতামাতা হচ্ছে শিশুর জন্মদাতা ও জন্মদাত্রী । পিতামাতা সন্তানদের লালন পালন করে মানুষের মত মানুষ করে তোলার স্বপ্ন দেখতে পারে। কিন্তু একজন শিক্ষক এই বৈচিত্রময় পৃথিবী সম্পর্কে শিশুকে সম্যক ধারণা দেয়। মানুষের জীবনে পিতামাতার পরই শিক্ষকের অবস্থান। তাকে নবজন্ম দিতে পারে। পিতামাতার হাত ধরে একটি শিশু যেমন জীবনে চলতে শিখে, তেমনি শিক্ষক শিক্ষিকার হাত ধরে জীবনে সম্ভাবনা আর সাফল্যের দুয়ারে পৌছাতে শিখে। শিক্ষক যে পড়াশুনার ক্ষেত্রেই হবে, তা নয়। জীবনের যে কোন ক্ষেত্রেই তার অবদান থাকতে পারে যেমন- জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেওয়া আর সাফল্যের নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেওয়া। শিক্ষকেরা হচ্ছে মানুষ গড়ার কারিগর। জীবনের উন্নয়নের প্রধান সোপনই হল শিক্ষা। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষকরা অন্য যে কোন পেশার মানুষের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান দখল করে আছে।

একজন সফল মানুষের পিছনে শিক্ষকের যে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা থাকে, তা নতুন করে বলার কিছু নাই। তিনি তাকে শুধু সফল নয়, একজন ভাল মানুষ হতে শেখায়। একজন ভাল শিক্ষক একজন ছাত্রের জীবন আমূল বদলে দিতে পারে।

ছাত্রের সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ক মধুর, স্বতঃস্ফূর্ত আবার কখনও গাম্ভীর্যপূর্ণ। শিক্ষক প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর ওপর অভিভাবকসুলভ আচরণ করবে আবার কখনও বা বন্ধুর মত ভালবাসা, পরামর্শ, উৎসাহ দিয়ে সব সময়ই পাশে থাকবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করবে আর শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের  করবে। সন্তানের মতো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আচরণ করবে। শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রের সম্পর্ক পথ প্রদর্শকের মত। শিক্ষক পথ দেখায়, ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা দেন। আর শিক্ষার্থীরা সেই নির্দেশনা মেনে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষকরা প্রথমে হবেন অভিভাবক, তারপর বন্ধু। শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে অভিভাবকের মতো সম্মান করবে, আদেশ উপদেশ মেনে চলবে, শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

, ভালবাসা আর শ্রদ্ধা সম্মানে যে সম্পর্ক রচিত হয় সেই সম্পর্ক যেন সর্বদাই অটুট থাকে। ছাত্র শিক্ষকের পবিত্র সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখা সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। সম্পর্কটা শ্রদ্ধা, ভালবাসা, আন্তরিকতার বন্ধনে মজবুত হওয়া ছাত্রের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ কামনা করে। তিনি গুরু, পিতৃতুল্য এই অনুভুতি একজন ছাত্রের ভেতরে থাকা দরকার। এই সম্পর্ক যেখানে দৃঢ়, সেখানেই শিক্ষা তথা সমাজের অগ্রগতি অপ্রতিরোধ্য।

একটি ছাত্রের জীবনে একজন শিক্ষকের ভ‚মিকা অপরিসীম। শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ রূপরেখা গড়ে তোলার পথপ্রদর্শকের কাজ করেন এবং ছাত্রদের জন্য তারা যা কিছু করে থাকেন, সেই সকল অবদানের কথা কখনই ভোলার নয়।

শিক্ষকতাকে শুধুমাত্র মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত দিলেই হবে না বরং তা সামাজিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

“প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৫ সাল থেকে এই দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত করা হয়। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভ‚মিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষ্যে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

জাপানের একটা প্রচলিত প্রবাদ হলো: Better than a thousand days of diligent study is one day with a great teacher.

দেশের অগণিত শিক্ষকদের আদর্শগত মহান কর্মকান্ডের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাদের পেশাগত অবদানকে স্মরণে – বরণে শ্রদ্ধায় পালন করার জন্য সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মহান শিক্ষক দিবস পালন করার রীতি রয়েছে।

Tags: No tags

Comments are closed.