বাংলাদেশের বিখ্যাত আর্কিটেক্টদের পরিচয়

বাংলাদেশের বিখ্যাত আর্কিটেক্টদের পরিচয়

বর্তমান এই বিশ্বকে উন্নত থেকে উন্নততর করতে পৃথিবীর বিভিন্ন বিখ্যাত স্থপতিগণ  যেভাবে কাজ করে আসছেন একই সাথে বাংলাদেশের স্থপতিগণ তাদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।  এবং প্রতিনিয়ত ক্রিয়েটিভ ডিজাইন এবং পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। এই সকল স্থপতি গণ তাদের  কালজয়ী কাজের মাধ্যমে বিখ্যাত হয়ে আছেন।আজকে আমরা পরিচিত হবো বাংলাদেশের বিখ্যাত এবং  বরেণ্য স্থপতিদের সাথে যারা দেশ এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থাপত্য কর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সমুন্নত করেছে

 

ফজলুর রহমান খান (FAZLUR RAHMAN KHAN)

ফজলুর রহমান খান 1929 সালের 3 এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পড়াশোনা করেন।  তিনি বাংলাদেশি – আমেরিকান স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার এবং  স্কাইস্ক্র্যাপার ইমারত নির্মাণের জন্য বিখ্যাত।  হাই রাইজ বিল্ডিং ডিজাইন এর জন্য তিনি  “Father of Tubular design’s” হিসেবে বিবেচিত হন।এফ আর খান computer-aided design  বা CAD  অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত।তাছাড়াও তিনি শিকাগোতে অবস্থিত শিয়ার্স টাওয়ার ডিজাইন করেন যা বর্তমানে উইলস টাওয়ার নামে পরিচিত। উইলস টাওয়ার  টি ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ বিল্ডিং হিসেবে তালিকাবদ্ধ ছিল।

 

এফ আর খান এর রচিত বই গুলোর মধ্যে Art of Sky Scrapper, The Genius of  Fazlur Khan  অন্যতম।

এফ আর খান 1982 সালের 27 শে মার্চ সৌদি আরবের জেদ্দায় মৃত্যুবরণ করেন।

আসিফ আহসান উল হক (ASIF AHSAN-UL HAQUE)

স্থপতি আসিফ আহসানুল হক  1976 সালে কক্সবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন সমসাময়িক বাংলাদেশের স্থপতি। বাংলাদেশের  নিজস্ব ধারা   ও সংস্কৃতিকে বিবেচনা করে  আধুনিক স্থাপত্য চর্চা নিয়োজিত আছেন।  একক ও বহু পরিবার ভিত্তিক আবাসন স্থাপত্যের জন্য তিনি সমাদ্রিত।  স্থপতি আসিফ আহসানুল হক খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন।  তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কার প্রাপ্ত একজন স্থপতি। তার কাজের জন্য তিনি 2018 সালে  আর্ক এশিয়া   এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

তার ডিজাইনকৃত  বিল্ডিং  হচ্ছে রিজিয়া ট্রেডিশন,  উইকেন্ড অ্যাড্রেস ফর   হারুনস  ফ্যামিলি।

 

কাশেফ মাহবুব চৌধুরী (KASHEF MAHBOB CHOWDHURY)

স্থপতি  কাশেফ মাহবুব চৌধুরী  ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।  তার উল্লেখযোগ্য কাজ গুলো হচ্ছে চাঁদগাও মসজিদ,  গাইবান্ধার ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার।  তার কাজের জন্য তিনি দুইবার স্থাপত্য আগা খান পুরস্কার লাভ করেন এবং 2012 সালে আর্কিটেকচারাল  রিভিউয়ের  জন্য AR+ D  এমার্জিং আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

 

 

      

কাজী খালেদ আশরাফ (KAZI KHALED ASHRAF)

কাজী খালেদ  আশরাফ 1959 সালে বাংলাদেশের জন্মগ্রহণ করেন। কাজী খালেদ আশরাফ একজন বাংলাদেশী স্থপতি, নগরবিদ এবং স্থাপত্য ইতিহাসবিদ। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন।  ভারত এবং বাংলাদেশের স্থাপত্য সম্পর্কিত  লুইস আইকনের রচনা এবং ঢাকা শহর নিয়ে বই এবং প্রবন্ধ লিখেছেন।

 

 

 

খালেদা একরাম (KHALEDA EKRAM)

বাংলাদেশের অন্যতম নারী স্থপতি  খালেদা একরাম 1950 সালের 6 আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।  এবং প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে  বুয়েটে যোগদান করেন।  অধ্যাপক খালেদা একরাম বাংলাদেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত  দ্বিতীয় নারী উপাচার্য এবং বুয়েটে প্রথম নারী উপাচার্য। তিনি তার কাজের জন্য 2014 সালে অনন্যা শীর্ষ পুরস্কার লাভ করেন।   অধ্যাপক  খালেদা  একরাম 2016 সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকার বনানী  কবরস্থানে  সমাহিত করা

 

খন্দকার হাসিবুল কবির (KHONDOKAR HASIBUL KABIR)

খন্দকার হাসিবুল কবির একজন বাংলাদেশী ল্যান্ডস্কেপ স্থপতি এবং স্থাপত্য শিল্পী যিনি গ্রামীণ ও টেকসই আর্কিটেকচারে ব্র্যাক এবং গ্রামীণ এর মতো বাংলাদেশী উন্নয়ন সংস্থার সাথে কাজ করেন। ২০০৭ সালে তিনি প্রথমে “দি প্ল্যাটফর্ম অফ হোপ” ( আশার মাচা ) প্রস্তাব করেছিলেন যখন তিনি বস্তিতে পরিবার নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে চলে আসেন এবং একটি সম্প্রদায়ের জায়গার নকশা করেছিলেন। এটি নিউইয়র্ক শহরের কুপার – হুইট, জাতীয় নকশা যাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছিল। তিনি জার্মান রুদ্রপুর আনা হেরঞ্জারের সাথে বাংলাদেশের রুদ্রপুরের এমইটিআই হ্যান্ডমেড স্কুলে কাজ করেছিলেন যার জন্যে ২০০৭ আর্কিটেকচারের জন্য আগা খান পুরস্কার পান।

তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।

 

 

 

রফিক আজম (RAFIQ AZAM)

বাংলাদেশের একজন বাংলাদেশী স্থপতি।তিনি 1963 সালের 29 ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশ  প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন।    স্থাপত্য ক্ষেত্রে   গ্রীন  লিভিং এর অস্তিত্বের জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।  2012 সালে তিনি স্থাপত্য শিল্পের অবদান রাখার জন্য সম্মানজনক ‘লিডিং ইউরোপিয়ান আর্কিটেক্ট ফোরাম’ পুরস্কার লাভ করেন।

 

রফিক আজম বিখ্যাত ‘আর্কিটেকচার ফর গ্রীন লিভিং’ বইটি রচনা করেন।

 

 

 

 

বশিরুল হক(BASHIRUL HAQUE)

স্থপতি বশিরুল হক 1942 সালে 24 শে জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ মেক্সিকো ন্যাশনাল কলেজ অফ আর্টস, পাকিস্তান থেকে অধ্যায়ন করেছিলেন।   বশিরুল হক একজন বাংলাদেশী  স্থপতি ও শিক্ষাবিদ। তিনি  ছায়া নট ভবন ও আশা প্রধান অফিস ভবনের স্থপতি।  তিনি তার পরিবেশবাদী স্থাপনার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।  তার বিখ্যাত কাজের জন্য তিনি স্থাপত্যে আগা খান পুরস্কার লাভ করেন। স্থপতি বশিরুল হক 2020 সালের 4 এপ্রিল ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

 

সৈয়দ মাইনুল হোসেন(SYED MAINUL HOSSEN)

সৈয়দ মাইনুল হোসেন 1952 সালের 17 মার্চ বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ  করেন।  বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন।  স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত স্থপতি।  তিনি বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর ও   জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর স্থপতি ।

 

স্থপতি মইনুল হোসেন  2014 সালের 10 ই নভেম্বর  ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন ।

 

 

 

মাজহারুল ইসলাম (MAZHARUL ISLAM)

স্থপতি মাজহারুল ইসলাম 1923 সালের 25 শে ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন।   তিনি ইয়েল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ ওরেগন থেকে   শিক্ষা  গ্রহণ করেন।মাজহারুল ইসলাম ছিলেন একজন বাংলাদেশী স্থপতি,নগর পরিকল্পনাবিদ এবং কর্মী।  আঞ্চলিক আধুনিকতার জন্য তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে বিবেচিত হয়।  তিনি আধুনিক ইসলামী স্থাপত্যে অগ্রদুত এবং বাঙালি আধুনিকতাবাদের জনক। তিনি স্থপতি লুইস আই কানের সাথে  যৌথভাবে বাংলাদেশ সংসদ ভবনের কাঠামো নির্মাণের কাজ করেন।

স্থপতি মাজহারুল ইসলাম 2012 সালের 15 জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

 

 

 

 

লেখক,

লিমা আক্তার

জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর

আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন টেকনোলজি

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

 

 

 

Tags: No tags

Comments are closed.