পরমাণু  থেকে রাসায়নিক বন্ধন

পরমাণু  থেকে রাসায়নিক বন্ধন

 

মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুই  পদার্থ |  পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক হল পরমাণু |  পরমাণু এত ক্ষুদ্র যে প্রথম  দিকে ধারণা করা হতো পরমাণু অবিভাজ্য|  পরবর্তীতে উচ্চতর গবেষণার ফলে প্রমাণ মেলে পরমাণু বিভাজ্য

 

পরমাণুকে ভাঙলে তিন ধরনের স্থায়ী  কনা পাওয়া যায়-1.   প্রোটন, 2. নিউট্রন, 3. ইলেক্ট্রন

 

পরমাণুর গঠন নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানি বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে | বিজ্ঞানী স্যার জন ডালটন পদার্থের গঠন সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রকাশ করেন । এই তত্ত্বটি ডালটনের পরমাণুবাদ [Dalton’s Atomic Theory] নামে খ্যাত ।

ডাল্টনের পরমাণুবাদের মূল কথা ছিল- সব পদার্থই অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র অবিভাজ্য নিরেট কণা দ্বারা গঠিত ।

কিন্তু এ তত্ত্ব এখন অচল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে প্রমাণিত হয় যে, পরমাণুর তিনটি উপাদান রয়েছে ।

এগুলো হলো-  ইলেকট্রন প্রোটন এবং নিউট্রন।  এছাড়াও    পরমাণুতে  কিছু  অস্থায়ী ভারী কনা রয়েছে।  যাদের কম্পোজিট কথা বলা হয়। যেমন ডিউটেরন , আলফা কণা। পরমাণুর গঠন নিয়ে রাদারফোর্ড এবং  নীলস বোরের  স্বীকার্য সমূহ বিজ্ঞানীদের কাছে গ্রহণযোগ্য।

রাদারফোর্ড মডেল এর মূল বিষয় ছিল,  পরমাণুর কেন্দ্রে রয়েছে প্রোটন এবং নিউট্রন যাকে একত্রে নিউক্লিয়াস ধরা হয় এবং নিউক্লিয়াসের বাইরে রয়েছে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন। রাদারফোর্ডের মডেলের প্রধান সমস্যা ছিল  তিনি  ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনের নির্দিষ্ট কক্ষপথের  ধারণা দিতে পারে নাই।

রাদারফোর্ডের মডেলের  এই সমস্যাটি দূর করে বিজ্ঞানী নীলস বোর পরমাণুর গঠন সম্পর্কে একটি মডেল প্রস্তাব করেন যা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সকল মডেলের চেয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।

তিনি বলেন পরমাণুতে ইলেকট্রন গুলো  কতগুলো নির্দিষ্ট অনুমোদিত কক্ষপথে আবর্তন করে।  কক্ষপথ গুলো হতে পারে বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার।  এছাড়াও তিনি পরমাণুর বর্ণালী রেখার ব্যাখ্যা দেন।

এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত মোট মৌলের সংখ্যা 118 টি |  প্রত্যেকটা মৌলের পরমাণুকে প্রকাশ করার জন্য  রয়েছে নির্দিষ্ট প্রতীক|  যেমন হাইড্রোজেনকে H ,  অক্সিজেনকে O ,  নাইট্রোজেনকে N  প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয় |

প্রত্যেকটা   মৌলকে  তাদের পারমাণবিক সংখ্যার ভিত্তিতে পর্যায় সারণি নামক স্থানে পৃথক পৃথকভাবে রাখা হয়েছে|  একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে যে কয়েকটি প্রোটন থাকে তার সংখ্যাকে পরমাণু টির পারমাণবিক সংখ্যা বলে|  একটি পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যার  সমান সংখ্যক ইলেকট্রন রয়েছে|  ইলেকট্রন গুলো নির্দিষ্ট নিয়মে পরমাণুতে সজ্জিত থাকে|

কোন পরমাণুর নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্ট্রন ঐ পরমাণুর বিভিন্ন শক্তিস্তরের অন্তর্ভুক্ত নির্দিষ্ট উপশক্তিস্তরের বিভিন্ন অরবিটালে নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জিত থাকে, ইলেক্ট্রনের এই সজ্জাকে পরমাণুর ইলেক্ট্রন বিন্যাস বলে। ইলেক্ট্রন বিন্যাস পলির বর্জন নীতি, আউফবাউ নীতি ও হুন্ডের নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।

 

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে পরমাণু সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। প্রত্যেকটা পরমাণু  চায় তাঁর নিকটতম নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন কাঠামো লাভ করতে।    নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন কাঠামো  লাভের উদ্দেশ্যে প্রত্যেকটা পরমাণুর হয় ইলেকট্রন  ছেড়ে দেয় বা গ্রহণ করে অথবা শেয়ার করে পরস্পরের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হয়।  এভাবে বিভিন্ন যৌগের সৃষ্টি হয়।

প্রত্যেকটা যৌগের যোজনী শূন্য।  যে কারণে সাধারণ অবস্থায় প্রত্যেকটা যৌগ  নিষ্ক্রিয়। একটি  যৌগ যখন অন্য একটি মৌল ও যৌগের সংস্পর্শে আসে তখন বিশেষ কিছু শর্তসাপেক্ষে তাদের মধ্যে বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় ফলে নতুন  যৌগের সৃষ্টি হয়।  এছাড়াও প্রাকৃতিক উপায় নানান  যৌগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।  এভাবে অসংখ্য যৌগ  রসায়নকে সমৃদ্ধ করে।

 

Tags: No tags

Comments are closed.