বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর বিলাসবহুল এবং গগনচুম্বী বিল্ডিং বলতে প্রথমেই যে নাম গুলো আসে সেগুলো হল্ বুর্জ আল খলিফা,সাংহাই টাওয়ার,জেদ্দা টাওয়ার, মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার ইত্যাদি । আজকের দিনের এই নান্দনিক ডিজাইনসম্পন্ন বিলাসবহুল এবং গগনচুম্বী বিল্ডিং দৃশ্যমান হবার পিছনে যুগ যুগ ধরে কাজ করে আসছেন পৃথিবীসেরা বিভিন্ন স্থপতিগণ।
বিল্ডিং এবং নির্মাণ সম্পর্কে ধারণা শুরু হয়েছিল কয়েক বিলিয়ন বছর পূর্বে। সেই থেকে বিভিন্ন স্টাইল এবং ডিজাইনের উদ্ভাবন। আর স্থপতিরা তাদের কাজের মাধ্যমে ডিজাইনে ইউনিক কনসেপ্ট গুলোকে ফুটিয়ে তুলেছে।সাধারণ বিল্ডিং থেকে শুরু করে গগনচুম্বী বিল্ডিং ডিজাইনের মাধ্যমে স্থপতিরা গ্রহন করেছে তাদের সেরা অর্জন ।
চলুন পরিচিত হয়ে আসি পৃথিবী সেরা কিছু উজ্জ্বল স্থপতিদের সাথে………
Mies van der Rohe
Zaha Hadid
লুডউইগ মাইস ভ্যান ডের রোহে (Ludwig Mies van der Rohe)
জার্মান-আমেরিকান স্থপতি মাইস ভ্যান ডের রোহে আধুনিক স্থাপত্যের অগ্রদূত হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। তারবিখ্যাত্ “less is more” প্রস্তাবনা টি তাকে স্থাপত্য মহলে স্মরণীয় করে রেখেছে। এবং তার এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে তিনি স্থাপত্য বিদ্যায় Contemporary স্থাপত্য রীতির প্রবর্তন করেন এবং তা ডিজাইনে সহজ এবংসাবলীল মাত্রা যোগ করেছিল। তিনি তার বিল্ডিং গুলোতে বিভিন্ন আধুনিক ম্যাটেরিয়ালস যেমন- প্লেট গ্লাস, ইন্ড্রাস্টিয়াল স্টিল ইত্যাদি ব্যবহার করতেন যা ডিজাইনে ইন্টেরিয়র স্পেস প্ল্যানিং এ খুবই কার্যকরী। তার উল্লেখ্যযোগ্য স্থাপত্য কর্ম গুলো হলো-বার্সেলোনা প্যাভিলিয়ন, ফার্নসওয়ার্থ হাউস, নিউ ন্যাশনাল গ্যালারী,ওয়েস্ট মাউন্ট স্কয়ার, টরন্টো ডমিনিয়ন সেন্টার।
ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইট (Frank Lloyd Wright)
ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইট বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত স্থপতি। তিনি তুলনামূলক ভাবে নিচু আকৃতির বিল্ডিং এর ডিজাইন ডেভেলাপ নিয়ে কাজ করেছেন। ফলিং ওয়াটার রেসিডেন্স এর কনসেপ্ট ও আবির্ভূত হয়েছিল এই বিখ্যাত স্থপতি ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইট থেকে যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম শীতলতম এবং সেরা স্থাপত্যের অংশ হিসেবে অভিহিত। তার এই বিখ্যাত রেসিডেন্সের রেক্টেঙ্গেল আকৃতির বেল্কুনি গুলো দেখে মনে হবে যেন প্রাকৃতিক কোন জল্প্রপাতের উপর ভেসে আছে।
মাইকেল গ্র্যাভস (Michael Graves)
মাইকেল গ্র্যাভস ছিলেন একজন আমেরিকান স্থপতি যিনি তার মডার্ন এবং পোস্টমডার্ন ডিজাইনের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।তিনি একটানা চল্লিশ বছর প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার অন্যতম স্থাপত্য কর্ম গুলো হচ্ছে পোর্টল্যান্ড বিল্ডিং, ডেনভার পাবলিক লাইব্রেরী এবং ডলফিন রিসোর্ট, হিউম্যানো বিল্ডিং এর বেশ কয়েকটি বিল্ডিং।
রেম কুলহাস (Rem Koolhas)
রেম কুলহাস ১৯৪৫ সালে রটারড্যামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একুশ শতকের শীর্ষ স্থপতিদের মধ্যে Pritzker পুরস্কার প্রাপ্ত অন্যতম স্থপতি।তিনি শুধুমাত্র বিল্ডিং ডিজাইনার হিসেবেই নয় বরং স্থাপত্য তাত্বিক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন।তিনি সর্বধিক পরিচিত চিনের বেইজিং এ অবস্থিত “সেন্ট্রাল চায়না টেলিভিশন হেডকোয়ার্টার” এর জন্য। এটি ৪৪ তলা বিশিষ্ট জালিকাকার গঠনে তৈরি একটি বিখ্যাত স্থাপনা যা স্থানীয়দের কাছে “big boxer shorts” হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া ও রয়েছে মস্কোর গ্যারেজ মিউজিয়াম,শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ,ডি রটারডাম কমপ্লেক্স ইত্যাদি।
জাহা হাদিদ (Zaha Hadid)
ইরাকি-ব্রিটিশ জাহা হাদিদ বিশ্বের মহিলা স্থপতিদের মধ্যে অন্যতম যিনি “Queen of the Curve” হিসেবে সর্বধিক পরিচিত। স্থাপত্য কাজে তিনি তার দর্শন বিদ্যাকে কাজে লাগিয়েছিলেন যা তাকে কৃতিত্ব অর্জনে সহায়তা করে।তিনি তার কাজের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন একাডেমিক,প্রফেশনাল এবং সিভিক ইন্সটিটিউট এর কাছ থেকে।তার উল্ল্যেখযোগ্য প্রকল্প গুলোর মধ্যে রয়েছে গুয়াংজু অপেরা হাউস,লন্ডন অলিম্পিকস অ্যাকোয়াটিক সেন্টার এবং চিনের বেইজিংয়ের গ্যালাক্সি এসওএইসও ইত্যাদি।
নরম্যান ফোস্টার (Norman Foster)
নরম্যান ফোস্টার ছিলেন লুডউইগ মাইস ভ্যান ডের রোহে, ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইট এবং লি কর্বুসিয়র এর অনুসারী।ব্রিটিশ আর্কিটেক্ট নরম্যান ফোস্টার তার কেরিয়ারের প্রথম দিকে বাকমিনস্টার ফুলারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তিনি তার কাজের মধ্যে ত্রিভুজাকৃতি ফর্মের পরে টেসলেটেড প্যাটার্ন এর প্রসার ঘটান এবং তার ডিজাইনের এই প্যাটার্ন তাকে স্মরনীয় করে রেখেছেন।লন্ডনের A: 30 St Mary Axe প্রদর্শনীতে ,লন্ডনের বানিজ্যিক এলাকায় নরম্যান ফোস্টার এর “The Gerkin” নামক স্কাইস্ক্রাপার বিল্ডিং টি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আইফেল টাওয়ার যেমন প্যারিস কে সিম্বোলাইস করে তেমনি এই বিল্ডিং টি লন্ডন কে পুরো বিশ্বে পরিচিত করে তুলেছে।
সিজার পেলি (Cesar Pelli)
বিশ্বের সর্ববৃহৎ বা সর্বোচ্চ বিল্ডিং গুলোর স্থপতি এবং জনপ্রিয় নগর গুলোর আরবান প্ল্যানার হিসেবে সিজার পেলি সুপরিচিত।তার ইউনিক আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের জন্য তিনি “American Institute of Architects” থেকে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। পেট্রোনাস বা টুইন টাওয়ার ,ওয়ার্ল্ড ফিন্যান্সিয়াল সেন্টার,ওয়েলস ফার্গো সেন্টার, ক্রেল ক্লিনিক বিল্ডিং ইত্যাদি স্থাপনা গুলো তার অনবদ্য স্থাপত্যকর্ম গুলোর মধ্যে অন্যতম।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবী কে উন্নত থেকে উন্নতর করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে স্থপতিরা,যাদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের ক্রিয়েটিভ কাজের প্রতিফলন আমরা সর্বত্র দেখতে পাই আমাদের উন্নত দেশের আরবান প্ল্যানিং এবং সুউচ্চ ইমারত গুলোতে। এসব আর্কিটেকদের সকল কাজ গুলো সার্থক ও সফল হয় মানুষের সক্রিয় বসবাসের মাধ্যমে।
লিমা আক্তার
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর
আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন টেকনোলজি
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট