ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার সহজ উপায়

ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার সহজ উপায়

ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার সহজ উপায়

কিভাবে ভাল ছাত্র হওয়ার উপায় খুজবেন? এর উপায় অনেক। তার মধ্যে সহজতর পদ্ধতিগুলো জানা থাকলে যে কোন  ছাত্রই হয়ে উঠতে পারেন ভাল ছাত্র। প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত  অনেক দামী আর বৈচিত্রময়। তাই এই মুহুর্তগুলোকে কাজে লাগানোই হচ্ছে প্রতিভাবান লোকেরদের কাজ। ছাত্র জীবনেও এরকম একটি  বৈচিত্রময়  কাল অতিক্রম হয়। একে অনেক ছাত্র সাজিয়ে ফেলেন নিজেদের মত করে। যার ফলাফল নিশ্চিত ভাল রেজাল্ট। আর এই আয়োজনের নাম হল প্রতিদিনের রুটিন অথবা ডেইলি রুটিন। কিভাবে ভাল ছাত্র হওয়ার উপায় অনুশীলন করতে গেলে কতগুলি মৌলিক বিষয় আসে।  তার মধ্যে একটি অবশ্যই ডেইলি রুটিন।  এছাড়াও আছে সহায়ক অনেক কাজ। তবে ডেইলি রুটিনের অনেক সুবিধা আছে।  যে কোন খারাপ ছাত্রকেই ভাল ছাত্র হওয়ার উপায় বাতলে দিতে পারে।  এই লেখায় আমি তাই শুধু ডেইলি রুটিন নিয়েই আলোচনা করেছি। বাকী বিষয় গুলি নিয়ে পরে আরেকটি লেখায় আলাপ করব।

ডেইলি রুটিন(Daily Routin): ডেইলি রুটিনের কথা বলার সময় আমার একটি উদাহরনের কথা মনে পড়েছে। সেটা এই রকম- একটি ট্রেন চালানোর জন্যে প্ল্যাটফর্ম ত্যাগ করার আগে রেল মাষ্টার অর্ডার দিলেন যে আজ আরো পাঁচটি বগি এই ট্রেনের সাথে জুড়ে দেয়া হবে তার কারন যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি। যেমন হুকুম তেমন কাজ, কিন্তু এই কাজের জন্য সময় দরকার। পেছনের ট্রেন খানা কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে, তবু মাষ্টার কাজটি করলেন। এর মাঝে পেছনের ট্রেন চলে আসায় তিনি লাইন ম্যান দিয়ে আটকে দিলেন এবং এই ট্রেন ছাড়ার পর পেছনের ট্রেন ফ্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করালেন।

ডেইলি রুটিনের সাথে এই উদাহরনের একটা ছোট মিল আছে। প্রথমত, রুটিন করে ফেলার পর অবশ্যই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিয়ে সেটা দক্ষ ষ্টেশন মাষ্টারের ন্যায় পরিচালনা করতে হবে। একটি ডেইলি রুটিন শুরু হতে পারে ঘুম থেকে উঠার পরপর-ই। এটা সকালে যে কোন মুহুর্ত হতে পারে। তবে সুর্য উঠার আগে হলে ভাল হয়। কারন এই সময়ে শরীরের ইন্দ্রীয়গুলো ভাল কাজ করে। কিভাবে ভাল ছাত্র হওয়ার উপায় অনুশীলন করবেন তা একটি রুটিন আপনাকে দিতে পারে।  একটি ট্রেনের ইঞ্জিনের চেয়ে বেশি বড় ভুমিকা রাখতে পারে।

কিভাবে ভাল ছাত্র হবার উপায় অনুসন্ধান করা যায় তা  আমি একে একে বিশ্লেষন করছি-

প্রথমেই একটি ডেইলি রুটিনের জন্য যা করতে পারেন তা হচ্ছে-

পরিকল্পনা তৈরীঃ নিজে নিজেই যেহেতু আপনি একটি রুটিন বানাবেন তাই নিজে থেকেই পরিকল্পনা করুন। কিভাবে সাজালে ভাল হয়, কোন কাজের উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এসব মাথায় রেখে একটি সুন্দর পরিকল্পনা করে ফেলুন। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যান।

সময় ভাগ করাঃ সময়কে ভাগ করে নেয়ার পর তা দিয়ে দিনের একেক টি কাজ পরিপুর্নভাবে সম্পন্ন করতে পারাই রুটীনের কাজ। যদি ব্যর্থ হয় তবে রুটিন ভ্যালু লেস হয়ে যায়। তাই একটি রুটিন কখনোই এলোমেলো হতে পারেনা সফলতার জন্যে। সময়ের কাজ সময়ে করতে পারার একটা চর্চা করতে হবে। সময় ভাগ করে ফেললে আপনার রুটিনের জন্য সহজ হয়ে যাবে। তবে এমন সময় নিয়ে আসবেন না যে সময়ে আপনি কোন নির্দিষ্ট কিছুই করতে পারবেন না। যেমন আপনি মনে করলেন যে দুটা কাজের ফাঁকে ১০মিনিট সময় আছে অন্য একটি কাজ করে ফেলা যায়। হ্যাঁ করে তো ফেলা যায় তবে তা যেন বড় কোন কাজ না হয় সে দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। ডেইলি রুটিনের জন্য অবশ্যই পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগে এমন সব কাজ সময়ের মধ্যে ধরতে হবে।

সময় পরিমাপঃ প্রত্যেক কাজের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। যেমন আপনি একটি হোমওয়ার্ক করতে আপনার হয়ত ৩০ মিনিট সময় লাগে। তাহলে আপনার রুটিনে ত্রিশ মিনিটের কম সময় নেয়া বোকামি হবে। এজন্য প্রত্যেক কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় পরিমাপ করতে হয়। রুটিন করার আগে এই সময়জ্ঞান আপনাকে অর্জন করে নিতে হবে।

রুটিন স্থায়ীকরনঃ প্রারম্ভিক পর্যবেক্ষনের জন্য আপনি একটি খসড়া রুটিন দিয়ে শুরু করতে পারেন। যেমন ম্যাথমেটিক্স এর জন্য প্রতিদিন এক ঘন্টা। কিন্তু কিছু দিন(প্রায় এক মাসের) মধ্যে দেখলেন যে একঘন্টা অনেক কম হচ্ছে। আপনার আরো বেশি সময় দরকার। তাহলে আরো বাড়িয়ে নিতে পারেন। বাড়িয়ে নিলে যদি মনে হয় যে এবার ঠিক আছে তখন সেটা স্থায়ী ডেইলি রুটিন হিসেবে নিন। এভাবে খসডা থেকে আপনি স্থায়ী রুটিনে অনেক কাজে সময় কমাতেও পারেন। উদাহরন, আপনার গোসলে প্রতিদিন ৩০ মিনিট সময় লাগে। আপনি চাইলে আরো দ্রুত গোসল সারতে পারেন। তখন হয়ত ৭মিনিটের মধ্যেই গোসল শেষ, একে স্থায়ী রুটিনে নিন। আর এই সাত মিনিটের বাইরে আর যাওয়া যাবে না। এটাই আপনার ইফিসিয়েন্সি বা দক্ষতা। কাজে দিন দিন দক্ষতা বাড়ে। তাই সময় আমাদের দিন দিন বাড়তে থাকে, কারন কাজের জন্য সময় কম লাগে। এভাবেই আপনি অনেক বেশি কাজ শেষ করতে পারবেন। যিনি সেরা তিনি অবশ্যই আমাদের চেয়ে দ্রুত কাজ করেন।

রুটিন পরিবর্তনঃ এটা লাগবেই। কোন রুটিনেই আপনি জীবন ধরে রাখতে পারবেন না। তার জন্য বৈচিত্র নিয়ে আসতে হয়। তিনমাসে ছোটখাট পরিবর্তন করতে পারেন। আবার বছরে নতুন প্ল্যানিং কালে অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারেন। কোন কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক কারনেও পরিবর্তন লাগতে পারে। পরিবর্তন কে উন্নতি হিসেবে নিন। যেমন আপনার সাধারন জীবন থেকে উন্নত জীবন। নিজেই বের করুন কী করলে আপনি আরো উন্নত জীবন পাচ্ছেন।

 

আশাকরছি এভাবেই আপনি একটি ডেইলি রুটিনের মধ্যে দিয়ে নিজেকে আরো উন্নত করতে পারবেন।

সংগৃহীত – https://kivabe.info/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%93%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC/

 

Bangladesh Skill Development Institute (BSDI)

Inclusive-leadership---2

৪র্থ শিল্প বিপ্লব করবে জীবনযাত্রাকে সহজতর।

৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে মূলত প্রযুক্তির বিপ্লব বলা হয় যা মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো সহজ করে তুলবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকেও এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বাড়বে মানুষের কর্মসংস্থান এবং কমে যাবে নিন্ম কর্মসংস্থান।

৪র্থ শিল্প বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্যঃ-

৪র্থ শিল্প বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবনযাত্রার মান কে আরো সহজলভ্য করা। দৈনন্দিন কাজকর্ম নিয়ন্তন করবে প্রযুক্তির উদ্ভাবনসমূহ। যেখানে একটি মেশিন অন্য একটি মেশিনকে নিয়ন্ত্রন করবে, যেখানে একটি ডিভাইস অন্য একটি ডিভাইস কে নিয়ন্ত্রন করবে এবং মানুষের জীবনযাত্রা হবে টেকনোলজি বেস এবং সহজ।

Untitled-4-1024x684

ক্যারিয়ার পরিকল্পনা চারটি প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে

বছর আসে বছর যায়। এটাই সৃষ্টির শুরু থেকে হয়ে আসছে এবং হতে থাকবে। জীবন থেকে ৩৬৫ দিন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। আর এই তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের যুগে এখন তো সময় যেন আমাদের সাথে মাইকেল বোল্টেকে অনুকরণ করে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দৌড় প্রতিযোগীতায় নেমেছে। ২০১২ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস এ অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে ৩ ঘন্টার যাত্রা বিরতি হলো। দুই ঘন্টার মধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে বসে আছি। সময় আর কাটে না। তার ঠিক ৭ বছর পর কেপটাউন থেকে বাংলাদেশে ফিরবো, মাঝখানে দোহা এয়ারপোর্টে ৯ ঘন্টার যাত্রা বিরতি। দুই ঘন্টার মধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে এয়ারপোর্টের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে কাজ করা শুরু করলাম। হঠাৎ শুনলাম ফ্লাইটের এনাউন্সমেন্ট। মনে হলো মুহুর্তের মধ্যে ৯ ঘন্টা কেটে গেছে।  এই হলো বর্তমানের সময়ের গতি।

এখন চাইলেই সময় নষ্ট করা যায় কিন্তু চাইলেই সময়ের সদ্বব্যবহার করা যায় না। সময়ের সদ্বব্যবহারের জন্য চাই সময়ের পরিকল্পিত ব্যবহার। না হলে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের রাতে আমরা একটি বছর কে বিদায় দিয়ে নতুন আর একটি বছর কে আমন্ত্রণ জানাবো। আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারনা প্রায় কাজ করে আর সেটি হলো আমরা মনে করি নতুন বছর মনে হয় আমাদের চাহিদাকে আপনা আপনি ঠিক করে দেবে। আমরা মনে মনে প্ল্যান করি, অনেক পরিকল্পনা করি কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে অবহেলা করি। সাধারনত পুরানো বছরের শেষের দিকে আমাদের অবকাশ যাপন শুরু হয়, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, মজা, শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতেই নতুন বছরের প্রথম মাসের অর্ধেকটা কেটে যায়। আর সেই সাথে সোস্যাল মিডিয়ার প্রভাবতো আছেই।  আমাদের পরিকল্পনা কল্পনাতেই রয়ে যায়।  বিশেষজ্ঞরা বলেন ক্যারিয়ার প্ল্যান বছরের শুরুতেই করা উচিত যার জন্য প্রয়োজন সচেতন এবং খোলা মন।

বর্তমানে আমরা একটু এগিয়ে আছি কারন আমরা এমন এক সময় অবস্থান করছি যখন আমাদের যেকোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সাথে সহায়ক ভুমিকা পালনের জন্য আছে প্রযুক্তি।  মানুষ চাইলেই সব পারে কিন্তু সমস্যা হলো আমরা জানিই না আমি কি চাই, আমার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি, বাস্তবায়নের জন্য কি কি দরকার এবং কাদেরকে দরকার। মানুষের ধর্ম হলো চাপে না পড়লে কিছুই করতে পারে না। যদিও এর মধ্যেও ব্যাতিক্রম আছে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভেতর থেকে শক্তি উৎপন্নের জন্য প্রয়োজন একটা ধাক্কা। প্রত্যেকের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করার সময় চারটি প্রশ্ন করা অত্যন্ত জরুরী। যে চারটি প্রশ্ন তিনি নিজে নিজেকে করবেন এবং উত্তর বের করার চেষ্টা করবেন। অনেক সময় মেন্টরের সহায়তায় উত্তর বের করা যেতে পারে তবে সঠিক মেন্টর খুজে বের করতে না পারলে আবার হীতে বিপরীত হতে পারে। প্রশ্ন চারটি হচ্ছেঃ

  • ক্যারিয়ারে ব্যস্ত এবং সুখী হবার জন্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কি হতে হবে বলে আপনি মনে করছেন? প্রথম প্রশ্নটি একটু জটিল এবং চিন্তা করে বের করার মতো। অনেকে আবার বলেন চাইতে তো সমস্যা নেই এবং চাইবোই যখন তখন কোন বাছ বিচার করবো না। তবে এতটুকু মনে রাখতে হবে ক্যারিয়ারে ব্যস্ত এবং সুখী করতে পারে এমন জিনিস কামনা করাই শ্রেয়। তবে এই প্রশ্নটির উত্তর বের করতে হলে সবার আগে নিজেকে জনতে হবে এবং তার জন্য প্রয়োজন আত্মমূল্যায়ন এবং গবেষণা ।

 

  • শীর্ষ তিনটি লক্ষ্য কি আপনি নির্ধারন করতে পারেনউপরের চাহিদাগুলো আপনার ক্যারিয়ারের সাথে যুক্ত করতে কোন তিনটি শীর্ষ লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে আপনার বাস্তবায়ন করতে হবে। তার একটা কর্মপরিকল্পনা বের করতে হবে।

 

  • নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন বা অর্জনের জন্য কী ধরণের শিক্ষা বা উপকরন আপনার প্রয়োজনআপনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে আপনার কি কোন ধরনের শিক্ষা বা প্রশিক্ষনের প্রয়োজন আছে কিনা। বা কোন মেন্টর বা পরামর্শদাতার প্রয়োজন পড়বে কিনা, সেটা নির্ধারন করাটা অত্যন্ত জরুরী।

 

  • লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে, আপনার কী নতুন কোন সম্পর্ক স্থাপন করা প্রয়োজন? এক্ষেত্রে আপনি একটি ছক তৈরি করে কোন কোন মানুষের সাহায্য বা সহযোগীতা আপনার প্রয়োজন তার একটি তালিকা আপনি করে নিতে পারেন। আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার বা কাদের সহযোগীতায় আপনি করবেন বা এমন কে বা কারা আছেন যারা আপনাকে পেশা ভিত্তিক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন। অথবা খুজে বের করা এমন কারা আছেন যারা আপনাকে সাহায্য করবেন সেখানে যেতে যেখানে আপনি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পৌছতে চাচ্ছেন।

 

প্রশ্নগুলো অত্যন্ত সাধারন এবং অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যেই আপনাকে বলেছেন কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি এখনও সময় নিয়ে যথাযথভাবে পরিকল্পনা করা এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সময় বের করতে পারেননি। ধরে নিন ২০২০ সাল আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর এবং এখন থেকেই কাজ করতে হবে যেন ২০২৫ এর মধ্যে আপনি সেই জিনিসগুলো আপনার ক্যারিয়ারে সংযুক্ত করবেন যেগুলো আপনাকে ব্যস্ত এবং সুখী করতে পারবে। মনে রাখবেন আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন ততোক্ষনে ২০২০ সাল চলমান এবং অচিরেই চলে আসবে আরেকটি ৩১ ডিসেম্বর। তাই উত্তর বের করুন, কাজ করুন, লেগে থাকুন, সাফল্য আসবেই। আর সবসময় মনে রাখতে হবে অনুশীলনে সবই সম্ভব।

ক্যারিয়ারে যেকোন সহযোগীতার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে যোগােযোগ করুন: নাহিদা ইতি (০১৯১৩৪৯৩২৪৬), আশা আহমেদ (০১৮৪৭৩৩৪৮৫৬) আথবা ইমেইল করুন: [email protected]

অনুশীলনে সবই সম্ভব

মানুষ হিসাবে আমরা সব সময় নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে থাকতে পছন্দ করি। ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা আমার ক্যারিয়ারের সাথে যুক্ত হবে এটাই আমার সব সময়ের কাম্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো নতুন কিছু শেখা বড়ই কঠিন, বিশেষত শুরুতে যখন আমরা শিখতে আরম্ভ করি এবং বার বার ভুল করি, তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা ভুলের কথা মনে করে মাঝ পথে ছেড়ে চলে আসি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নতুন কিছু শেখার একমাত্র উপায় হলো নিরলশ অনুশীলন, বার বার ভুল করা এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা যে একই ভুল পুনরাবৃত্তি না করা।

কানাডিয়ান সাংবাদিক, লেখক ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল তার বিখ্যাত বই আউটলিয়ারস এ বলেছেন ”কোন একটি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হতে প্রয়োজন দশ হাজার (১০,০০০) ঘন্টার অনুশীলন”। আরও একধাপ বাস্তববাদী হয়ে লেখক জোশ কাউফম্যান তার বই  দ্য পার্সোনাল এমবিএ-তে উল্লেখ করেছেন “কিছুই পারি না থেকে মোটামুটি পারি” পর্যন্তু আসতে প্রয়োজন প্রায় ২০ ঘন্টার অনুশীলন – যা প্রতিদিন ৪৫ মিনিট করে এক মাসের নিয়মিত অনুশীলন।

সুতরাং কোন একটি বিষয়ে আমি “মোটামুটি ভালো” বা “বিশেষজ্ঞ” যেটাই হতে চাই না কেন তার জন্য আমার প্রয়োজন হবে অনুশীলনের। বিভিন্ন গবেষনা বলছে অনুশীলন তাদের জন্যও অত্যন্ত কঠিন এবং প্ররিশ্রমের যারা ইতিমধ্যে কোন একটি বিষয়ে উচ্চ দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং নতুন আরেকটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে চাচ্ছেন। আর একারনেই সম্ভবত অভিজ্ঞদের মধ্যে অনেকেরই নতুন কোন দক্ষতা অর্জনে কিছুটা অনিহা কাজ করে। তারা মনে করেন কোন বিষয়ে সক্ষমতা অর্জনের জন্য পড়া এবং আলোচনাই যথেষ্ট। আমাদের শিক্ষা পদ্ধতির দিকে তাকালেই আমরা এর ছাপ খুব ভালোভাবেই দেখতে পাই। ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে কে কত ভালোভাবে মুখস্ত করেছে তার উপর ভিত্তি করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এটা সবাই একবাক্যে স্বীকার করছেন যে পড়া এবং আলোচনার পাশাপাশি হাতেকলমে শেখা এবং সেটা বার বার অনুশীলন না করলে দক্ষতা কখনই সম্ভব নয়। তাই দক্ষতা বিকাশ অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

এই বিষয়ে আলোচনা করতে গেলেই মনে পড়ে আমার সাইকেল চালানো শেখার কথা। মাত্র তিন বছর আগে সাইকেল চালানো শিখেছি। ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল সাইকেল চালানোর। সেজন্য সাইকেল বিষয়ে অনেক পড়েছি, কি কি ধরনের সাইকেল আছে, সাইকেলের ওয়ার্ল্ড রেসিং, সাইকেলের বিভিন্ন পার্টস এমনকি বন্ধুদের আড্ডায় সাইকেল বিষয়ে কতো আলোচনা শুনেছি কিন্তু কোনদিন সাইকেলের উপর উঠে চালানোর সাহস করিনি। তিনবছর আগে আমার এক বন্ধুকে বলার পর ও বললো কোন ব্যাপার না মাত্র দুই ঘন্টায় তুই সাইকেল চালাবি। পরবর্তী দিন আমার বন্ধু তার সাইকেল নিয়ে আসলো এবং শুরু হলো প্রশিক্ষন। ১০ বছর বয়সে যেটা করার কথা সেটা করলাম অনেক বছর পর এসে। যেহেতু সাইকেল নিয়ে আমার আগেই ধারনা ছিল এবং আমার বন্ধুর সুদক্ষ প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সত্যি সত্যিই আমি চার ঘন্টার মাথায় সম্পূর্ন একা সাইকেল চালালাম। তারপর সাতদিন আর সাইকেল বের করিনি ভয়ে। হঠাৎ একদিন মনে হলো আজ একাই সাইকেল বের করে চালাবো। প্রচন্ড ভয় নিয়ে বের করলাম এবং আস্তে আস্তে চালালাম। ৩০ দিনের ব্যবধানে একদম পাকা সাইকেল চালক হয়ে গেলাম এবং অনায়াসে দ্রুতগতিতে চলতে থাকা রিকশার সাথে নিজে নিজে প্রতিযোগিতা করে জিতেও গেলাম। আহ! কি সুখ!

সাধারণত জন্মগতভাবেই আমাদের একটি গুন আছে যে কোন একটি বিষয় মন দিয়ে পড়লে এবং বন্ধুদের সাথে আলাপ করলেই সে বিষয়ের একটি স্পষ্ট ধারণা আমরা দ্রুত উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু ভুল হয় তখন, যখন আমরা মনে করি যে হয়তো আমি এখন বাস্তবে সেটা প্রয়োগ করতে পারবো এবং সেটা করতে গিয়েই আমাদের ভুল ভেঙে যায়। আসলে জ্ঞান এবং দক্ষতা কখনই এক জিনিস নয়। বাস্তবতা হ’ল কোন বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জনের পর হাতে-কলমে করে সেটা বার বার অনুশীলন করতে হবে, তারপর সেই দক্ষতা প্রয়োগ করার মাধ্যমে বন্ধু বা অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে মতামত খোলা মনে গ্রহন করতে হবে।  অভিজ্ঞদের মতামত অনুসারে তা পরিমার্জন বা পরিবর্ধন করে আবার নিরলশ অনুশীলন করতে হবে যা ২০ থেকে ১০,০০০ ঘন্টা পর্যন্ত হতে পারে।

আমি আবারও স্বীকার করছি এটি করা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। শুধু দরকার উন্নত মানসিকতা। কেননা একমাত্র উন্নত মানসিকতাই আমাদেরকে ‘না’ কে ‘হ্যা তে রুপান্তর করতে শেখায়। নতুন কিছু শেখার অর্থ হলো প্রাথমিকভাবে নিজেকে একদম আনাড়ি ভাবা, প্রয়োগের মাধ্যমে ভুল করা, মতামত নিয়ে সংশোধন করা এবং বার বার চেষ্টা করা। নিঃসন্দেহে এতগুলো ধাপ অনুসরণ করা অস্বস্তিকর। যদিও আমরা জানি, যেই দক্ষতাকে আমি আমার ক্যারিয়ারের সাথে যুক্ত করতে চাচ্ছি সেটা অত্যন্ত মূল্যবান, তবুও ২০ থেকে ১০,০০০ ঘন্টার কথা মনে হলেই চেষ্টা করা বন্ধ করে দেই এবং পুরানো অভ্যাসে ফিরে আসি। অনুশীলনের গুরুত্ব আমরা সবাই জানি কিন্তু প্রশ্ন হলো কীভাবে আমরা এটিকে সম্ভব করতে পারি? এই বিষয়ে বিষেজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তা নীচে তুলে ধরলামঃ

  • নিজেকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ করতে হবেঃ নতুন কিছু শেখা এবং দক্ষতা অর্জন করা মানেই হলো অনেক পরিশ্রম করা, এটিকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে এবং শেখাটা যে কঠিন হবে সে বিষয়ে নিজের কাছে সৎ থাকতে হবে বিশেষ করে যখন আমি নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকি।
  • নিজের সীমাবদ্ধ অনুধাবন করতে হবেঃ আমরা চাইলেই সবকিছুতে একেবারে দক্ষ হতে পারবো না। এটাই বাস্তবতা। তাই যে বিষয়ে আমি দক্ষ হতে চাচ্ছি সে বিষয়ে নিজেকে বার বার অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। যখন বুঝবো যে আমি ভালোভাবেই দক্ষতা অর্জন করেছি তখন নতুন আরেকটি বিষয় নিয়ে অনুশীলন শুরু করবো।
  • সময়ের প্রতি যত্নবান হতে হবেঃ অনুশীলনের জন্য প্রতিদিন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে। অনেকে ক্যালেন্ডারে  সময় ব্লক করে রাখেন বা আরো অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করেন যার অর্থ হলো নিজের এবং সময়ের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা। মনে করতে হবে এটি একটি প্রজেক্ট এবং আমি তার প্রধান হিসেবে কাজ করছি।
  • সাথে কাউকে পেলে মন্দ হয় নাঃ অনুশীলনের জন্য একে অপরকে দায়বদ্ধ রাখতে সহপাঠিদের বা সহকর্মীদের সাথে কাজ করলে দ্রুত ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

সবশেষে বলতে ইচ্ছে করছে আমার সেই প্রিয় ট্যাগলাইন অনুশীলনে_সবই_সম্ভব। মাত্র তিনটি শব্দ কিন্তু মন থেকে অনুধাবন করার চেষ্টা করলে দেখবো এর গভীরতা বিশাল। আসলে এটি বিশ্বাস করার ব্যাপার। আর কথায় আছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদুর। আসুন আজ থেকেই আমরা আবার বিশ্বাস করি কঠিন বা অস্বস্তিকর হলেও এটা সত্যি ”অনুশীলনে_সবই_সম্ভব। শেষ করতে চাই একটি প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি এখন কোন নতুন দক্ষতা অনুশীলন করার কথা ভাবছেন?

উত্তরটি কমেন্টে লিখে পাঠিয়ে দিন। আর যদি আপনার এই দক্ষতা অর্জনে আমি বা আমাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট কোন কাজে আসতে পারি  তাহলে নিশ্চিন্তে আমাদের লিখে বা ফোন করে জানাতে পারেন নীচের দেয়া তথ্যে: ad@bsdi-bd,org বা +৮৮ ০১৭১৩ ৪৯৩ ২০৬

লেখক:

কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

টেক্সটাইল সেক্টরে ফ্রি প্রশিক্ষন মিলবে ভাতা ও চাকরি

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রনালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ) এর আওতায় বিটিএেমএ এর তত্বাবধানে বিএসডিআই এর সাথে টেক্সটাইলের নিন্মক্ত কোর্স সমূহ পরিচালনা করে থাকে।

কোর্স সমূহঃ-

  • এ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং ,
  • ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড লিন ম্যানুফ্যাকচারিং
  • প্রডাকশন প্লানিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট

এসব কোর্সের সুবিধাঃ-

  • বিনা খরচে কোর্সটি শেখা সম্ভব এবং রয়েছে চাকরির ব্যবস্থা
  • কাজের সুযোগ বৃদ্ধি
  • দক্ষ কর্মীর চাহিদাপূরন

নূন্যতম যোগ্যতাঃ-

  • নূন্যতম ৮ম শ্রেনী অথবা সমমান।
  • বয়স সীমা ১৫ বছর থেকে ৪০ বছর।

কেন আপনি বেছে নিবেন শেফ পেশা

বর্তমানে নারী ও পুরুষ সকলের কাছে শেফ পেশা বেশ জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠেছে। ট্যুরিজম এবং হোটেল সেক্টরের উন্নতির সাথে সাথে পেশা হিসেবে শেফ একটি জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রায় ১,৫০,০০০,০০ এর বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এসব রেস্টুরেন্টে শেফ হিসেবে কাজ করছে প্রায় ৩০,০০০,০০ জন লোক ।

বাংলাদেশে ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ১২ টি হোটেল। এই হোটেল গুলোর রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন প্রায় ২০০০ শেফের।

দেশে বিদেশে অসংখ্য চাকরীর পাশাপাশি উদ্যোগতা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুবিধা রয়েছে যেমন:

  • রান্নার বই বা রেসিপির বই লেখা
  • ক্যাটেরিং বিজনেস করতে পরেন
  • রান্নার পরামর্শকারী হিসেবে চাকরীর সুবিধা
  • নিজে রেস্টুরেন্ট করতে পারেন অথবা
  • শেয়ারে রেস্টুরেন্টের বিজনেস করতে পারেন
  • ঘরে বসে রান্নার হোম ডেলিভারি ব্যাবসা করতে পারেন ।

বর্তমানে এটি একটি চাহিদা সম্পন্ন পেশা হয়ে উঠেছে।

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হয়

বাইবেলে সুন্দর একটি কথা আছে যে, He who liveth, he who beliveth, shall never die. অর্থাৎ যে বিশ্বাস করে সে-ই বেঁচে থাকে। এই বিশ্বাস এবং কাজের মধ্যে যে ডুবে যেতে পেরেছে তাকে কোন দুঃখ, মালিন্য স্পর্শ করতে পারে না। কাজের নিজস্ব আনন্দ রয়েছে। কাজের মধ্যে ডুবে যেতে হলে স্বপ্নের প্রয়োজন।

আমরা অনেকেই মনে করি স্বপ্ন মানেই একটি নিছক কল্পনামাত্র। কিন্তু আসলে তা নয়; স্বপ্ন মানেই বাস্তব, স্বপ্ন মানেই গন্তব্য। আমি কোথায় যেতে চাই তার নাম স্বপ্ন। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হতে পারে।

বাস্তব স্বপ্ন ও চেষ্টা কখনোই ব্যর্থ হয় না। যদি স্বপ্নকে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে পারা যায় তাহলে তা অর্জনও করা যায়। বিশাল এই পৃথিবীতে দূর মহাকাশের নক্ষত্র থেকে আলো এসে পড়ে। আমরা সবাই এই পৃথিবীর প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছি মাত্র কিছু সময়ের জন্য যে সময়টা খুব বেশীও নয় আবার খুব কমও নয়। এই সময়কে নিজের ইচ্ছে মতো সাজিয়ে নিতে দরকার সুপরিকল্পিত স্বপ্নের। আমরা সবাই সাফল্য চাই। সকলে জীবনে সেরা জিনিস চাই।

কেউই সাদামাটা জীবন চাই না, হামাগুড়ি দিয়ে চলতে চাই না।

কেউই দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হতে চায় না। ছোট ছোট ভাবনা, ছোট ছোট স্বপ্ন আর ছোট ছোট কাজের সমষ্টিই জীবন। প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি স্বপ্ন প্রভাবিত করে জীবনকে।

স্বপ্ন সাধারণত দুই রকমের হয়। যার একটি হলো স্বাভাবিক স্বপ্ন, যা আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি, এই স্বপ্নের কোন মানেই থাকে না।

আরেক ধরনের স্বপ্ন আছে, যা স্বপ্ন বা মনছবি অথবা আমরা বলতে পারি জীবন ছবি। আর এটা হলো বড় হওয়ার স্বপ্ন, জীবনে একটা কিছু করার স্বপ্ন। এই স্বপ্নই আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন:- লেখক, ব্যবসায়ী, গায়ক, নায়ক, শিক্ষক ইত্যাদি হওয়ার স্বপ্ন।

পক্ষান্তরে ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্ন অনেকে মনেও রাখেন না।

আত্মোপলব্ধি

মানুষ তার আশার  সমান সুন্দর ও বিশ্বাসের সমান বড় হতে পারে। প্রত্যেকের হৃদয়ে একজন মানুষ বসবাস করে। সে কথা বলে, আত্মনিমগ্ন হয়ে কান পাতলে সে ভেতরের মানুষটির কথা শোনা যায়। সে যা বলে ঠিক সে অনুযায়ী কাজ করলেই জীবনে সফল হওয়া যায়, বড় কিছু করা যায়। কারণ সেখানে আমি বা আপনি সম্পূর্ণ একা। জীবনে আপনি কী করতে চান এটা আপনার পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র আপনাকে নির্ধারণ করে দিতে চাইবে। কিন্তু এসব কিছুর বাহিরে আপনার ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছা থাকতে পারে কিংবা আপনিও পারিপার্শ্বিকের নির্ধারণ করা লক্ষ্যের অনুসারী হতে পারেন। তবে তার আগে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন; উপলব্ধি করুন। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে একটা উত্তর আসবেই। সেই পথটা অনুসরণ করুন। কখনো বিফল হবেন না।

বিশ্বাস

বাইবেলে বলা হয়েছে, বিশ্বাস পাহাড়কেও টলাতে পারে।  বিশ্বাস একটি অদ্ভূত শক্তি, এটা কোন ম্যাজিক বা অলৌকিক বিষয় নয়।

“আমি দৃঢ় নিশ্চিত-আমি পারবো। ”

এই একটি কথা খুব অদ্ভুতভাবে আপনার মনোবল বাড়াবে। বাস্তব স্বপ্ন ও চেষ্টা কখনোই ব্যর্থ হয় না। রাইট ভাতৃদ্বয় স্বপ্ন দেখতেন এমন এক যন্ত্র বানাবেন যাতে করে আকাশে ওড়া সম্ভব। তারা তৈরী করলেন প্লেন। সভ্যতার চেহারাই পরিবর্তন হয়ে গেল তাদের এই আবিষ্কারের ফলে। মার্কনি স্বপ্ন দেখতেন, স্রষ্টার শক্তিকে জয় করে কাজে লাগাবেন। তিনি যে ভুল স্বপ্ন দেখেননি তার প্রমাণ বেতার ও টেলিভিশন আবিস্কার। উল্লেখ্য যে, মার্কনি যখন দাবি করলেন, তিনি তারের সাহায্য ছাড়াই বাতাসের মধ্য দিয়ে সংবাদ প্রেরণের পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন, তখন তার বন্ধুরা তাকে মনস্তাত্ত্বিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন মাত্র তিন মাস স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। অতিমাত্রায় অপদার্থের অপবাদ নিয়ে স্কুল থেকে বহিস্কৃত হওয়া হেলেন কেলার মাত্র ১৯ মাস বয়সে শ্রবণশক্তি, বাকশক্তি আর দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। বিশ্বাস আর স্বপ্নের সংমিশ্রণে হয়ে ওঠেন মহিয়সী এবং তার জীবন বিরাট এক সত্যের প্রমাণ- বাস্তবে পরাজয় স্বীকার না করলে কেউ পরাজিত হয় না। মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড় হতে পারে যদি সে যা আশা করে, তা বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে পারে।

ধৈর্য্য

বাস্তব কখনো কখ্নো কল্পনার চেয়েও অবিশ্বাস্য হয়। কেউ যদি বলে আমি পঁচিশ বছর বয়সে অর্ধ পৃথিবীর সম্রার্ট হবো- কথাটা গাঁজাখুরি বলে উরিয়ে দিবে অনেকে, কিন্তু আলেকজান্ডার তা হয়েছিলেন। সংবাদ পাঠক পদের জন্য এক আবেদন প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কারণ তার কণ্ঠস্বর যর্থাথ ছিল না। তিনিই আজকের অমিতাভ বচ্চন! একজন স্কুল শিক্ষক, ছাত্র অংকে মনযোগী না হওয়ায় এবং ছোট্ট অংক করতে না পারায় তাকে শিক্ষক   বলেছিলেন, “তুমি জীবনে কিছুই হতে পারবে না।” সেই বালক বড় হয়ে হয়েছিলেন মস্তবড় বিজ্ঞানী। তার নাম আলবার্ট আইনস্টান

উপরের উদাহরণগুলোর সারমর্ম হচ্ছে: যিনি কখনো পরাজিত হলেও লক্ষ্যহীন হন না, তিনিই প্রকৃত বিজয়ী।

মানুষের মস্তিষ্ক এক অসাধারণ বায়ো-কম্পিউটার। এই কম্পিউটারে যে মানুষ যে রকম প্রোগ্রাম করবেন, তিনি সেরকম ফল পাবেন। যিনি হতাশ হয়ে নিজেকে বলবেন, তার দ্বারা কিছুই হবে না, তিনি জীবনে ব্যর্থ হবেন। আর যিনি হাজারো প্রতিকূলতার মাঝেও বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখবেন, তিনি ঠিকই তা করে ফেলবেন। বিশ্বাস বা প্রোগ্রামিং হয়ে গেলে বায়ো কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে বিজয়ের মালা পরিয়ে দিবে আপনাকে। সাফল্যের জন্য যা কিছু করতে হয়, মন শরীরকে দিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে করিয়ে নেবে।

স্বপ্ন

সৃষ্টিকর্তার কাছে সব মানুষ সমান। তাই তিনি সবাইকে বড় হওয়ার জন্য, জীবনে বড় কিছু অর্জন করার জন্য সামর্থ্য দেন। যারা তাঁর স্বপ্নটা দেখা মাত্র চিনতে পারেন এবং স্বপ্ন পূরণের জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তা করেন, তাদের জীবনেই স্বপ্ন পূরণ হয়।

জর্জ ফোরম্যান ১৯৯৪ সালে ২০ বছর পর মুষ্টিযুদ্ধের খেতাবী লড়াইয়ে জয়ী হয়ে প্রমাণ করেছিলেন স্বপ্নের নিকট আত্মসমর্পণের কোন বয়স সীমা নেই, যদি সমর্পণ করা যায় তা হলে জয় সুনিশ্চিত। ১৯৭৪ সালে মোহাম্মদ আলীর হাতে নক আউট হওয়ার ২০ বছর পর ১৯৯৪ সালে ৪৫ বছর বয়সে ২৬ বছরের মাইকেল মুরারকে পরাজিত করে বক্সিং এর খেতাবী লড়াই জেতার মত অসম্ভবকে তিনি সম্ভব করেছিলেন, তার স্বপ্নের জোড়েই। জেতার পর সংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন কিভাবে সম্ভব করলেন এই অসম্ভব কাজটি? তিনি বলেছিনে “স্বপ্ন দেখে। ২০ বছর ধরে বিজয়ের এই স্বপ্ন- ই তো আমি সব সময় দেখেছি। বয়স বাড়লেই মানুষ তার স্বপ্ন বিসর্জন দেয় না। আপনি মনে প্রাণে যা চান তা পাবেনই।”

লক্ষ্য নির্ধারণ

লক্ষ্য অর্থ অভীষ্ট বা উদ্দেশ্য। লক্ষ্য শুধুই অলীক স্বপ্ন নয়- এটা এমন স্বপ্ন যা বাস্তবায়িত করা হয়। লক্ষ্য ‘যদি আমি পারতাম’ এর আবছা অস্পষ্ট ধারণার চেয়ে অনেক বড়। লক্ষ্য অর্থ ‘যার জন্য আমি তৎপর হয়ে কাজ করি’। লক্ষ্য স্থির না হলে কিছুই করা সম্ভব নয়। প্রথম পদক্ষেপটি পর্যন্ত নেয়া অসম্ভব!

মানুষও হোঁচট খেতে খেতে এগোয় বটে তবে যদি তার কোন গন্তব্য জানা না থাকে তাহলে সে কোথাও পৌঁছাতে পারে না। জীবনের জন্য যেমন অক্সিজেন প্রয়োজন, তেমনি জীবনে বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন স্বপ্নের। স্বপ্ন ছাড়া কেউই হঠাৎ সফল হয় না। অক্সিজেন যেমন বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন তেমনি আপনি কোথায় পৌঁছতে চান সে সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। শুরু করার আগে কোথায় যাবেন তা স্থির থাকা দরকার।

পারিপার্শ্বিকতা

ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে আপনাকে এই ধারণাটি সহায়তা দিতে পারে। তা হলো- নিজের ভবিষ্যতকে ৩টি ভাগে ভাগ করা। যেমন:- (১) কর্মক্ষেত্র (২) পারিবারিক (৩) সামাজিক।

এভাবে জীবনটাকে ভাগ করতে পারেন। আবার চাইলে আরো বেশি ভাগে ভাগ করতে পারেন। জীবনের কাছ থেকে কি পেতে চান? কিভাবে নিজেকে সন্তুষ্ট করা যায় তা জানতে পারবেন এবং আপনার স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হবে। জীবনের ৩টি বিভাগই একে অপরের সাথে যুক্ত। প্রত্যেকটি বিভাগকে যে বিভাগটি সবচেয়ে বেশি প্রভাহিত করে তা-ই হলো আপনার কাজ।

শীর্ষস্থান শুধু্মাত্র একজনের জন্য

রাজার সিংহাসনে রাজা একাই বসেন। একই সিংহাসনে একসাথে দুইজন বসতে পারেন না। দুই হাজার মাইল হিমালয় পর্বতমালায় হয়তো কোটি কোটি লোকের জায়গা হতে পারে। কিন্তু শৃঙ্গের সর্বোচ্চ শিখরে দুইজন লোক এক সাথে আরোহণ করতে পারে না। একজনকে আগে উঠতে হয়। তারপর পরের জনকে। এজন্য তেনজিং এবং হিলারি এক সাথে শিখরে আরোহণ করতে পারেননি। তেনজিং আগে উঠার কারণে সর্বপ্রথম এভারেষ্ট শৃঙ্গ আরোহণকারী হিসেবে এক নম্বারে তেনজিং এর নাম চলে এসেছে।

বাইবেলে আছে, টপ অব দ্যা হিলে যেতে হয় একা। আসলেই তাই। যে মানুষ প্রতিকুলতা এড়িয়ে একাকী চলতে শুরু করে সে-ই পথ পেয়ে যায়, সে-ই এগিয়ে যায়। তার কথাই ইতিহাসে লেখা থাকে।

পরিশেষে বলতে চাই, যে স্বপ্নের জন্য আপনি মরতেও রাজি এমন স্বপ্ন দেখুন। স্বপ্ন না থাকলে আপনি কখনও উন্নতি করতে পারবেন না, কারণ স্বপ্নই জীবনের জ্বালানী। নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখুন এবং তা পূরণের প্রতিজ্ঞা করুন। সমস্ত ঝুঁকি গ্রহণ করুন সাহসের সাথে।

আপনি কোথায় আছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আসলে আপনি কোথায় যেতে চান সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

তাই বিজ্ঞানী আইনস্টান বলেছেন, “জ্ঞানের চেয়েও কল্পনা (স্বপ্ন) অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

Reference: http://10minuteschool.com/blog/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AC/

বদলে যাও বদলে দাও

আমি সেবার এসএসসি দিয়েছি। প্রথম পাবলিক পরীক্ষা, মনে তাই অনেক টেনশন- কী হয় কী হয় কে জানে! তো এরকমই একটা সময়ে, সেদিন এসএসসির রেজাল্ট দেবে-এইরকম একটা দিনে আমি আর আমার বন্ধু রাস্তা দিয়ে হাঁঁটছিলাম।

আমার কোক খেতে অনেক ভালো লাগে। যথারীতি প্রচণ্ড টেনশনে আমার সাথে ছিল একটা কোকের বোতল। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি- নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি, কিন্তু আমার মাথা থেকে ওই রেজাল্টের বিষয়টা আর যাচ্ছেই না! টেনশনে হাঁটতে হাঁটতে এক টান দিয়ে পুরো কোকটা শেষ করে বোতলটা ছুঁড়ে মারলাম রাস্তার আরেক কোণায়।

আমার বন্ধুটি কিছুই বললো না। ওকে দেখলাম একটু পরে সেই কোণায় যেতে। রাস্তা পার হলো, আমারই ফেলে দেয়া বোতলটা তুলে নিলো, তারপর আমাকে বললো, “এবার চল, এগোই।”

আমি মনে মনে ভাবলাম, বন্ধুটির বাসায় মনে হয় খালি প্লাস্টিকের বোতল লাগবে, ওর আম্মু বোতল এনে দিতে বলেছে, এইজন্যেই বেচারা কষ্ট করে বোতল কুড়িয়ে নিয়ে আসলো। আমার ধারণা ভুল ছিল।

আমার বন্ধুটি একটু পরে দূরে রাস্তার উল্টোদিকে একটা ডাস্টবিন দেখলো। সে আবারো রাস্তা পার হলো, ডাস্টবিনে বোতলটা ফেললো, তারপর নির্বিকার ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “চল!”

পুরো ঘটনাটা বলতে গেলে আমার বুকের মাঝখানটায় এসে লাগলো। একেবারেই নীরবে আমার বন্ধুটি প্রচ্ছন্ন চপেটাঘাত করলো আমাকে, বিষয়টা বেশ গায়ে লেগেছিলো সেদিন। আম্মু-আব্বু থেকে শুরু করে অনেকেই অনেকবার বলেছে আমাকে, ময়লাগুলো জায়গামতো ফেলতে- কিন্তু সেগুলো এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছি, যথারীতি।

কিন্তু আমার এই বন্ধুটি, একেবারেই নীরবে দারুণ একটা কাজ করে ফেলে আমার মধ্যে আমূল একটা পরিবর্তন নিয়ে এলো। সারাজীবন আম্মু বকা দিয়ে যেটা আনতে পারে নি, বন্ধুর এই নীরব প্রতিবাদ দেখে সেই আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, যেখানে সেখানে আর ময়লা ফেলবো না। কোনদিন না।

সেই থেকে শুরু। ডাস্টবিন ব্যবহার করতে ভুলি নি আর কোনদিন। আমার এই বন্ধুটির এক নীরব প্রতিবাদই আমার পরিবর্তনের সূতিকাগার হয়ে পড়লো। আমিও আশেপাশের কেউ কোন ময়লা যেখানে সেখানে ফেলে রাখলেই চুপচাপ সেটা তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিতাম।

এতে দু’টো বিষয় হয়।

এক, মানুষকে যদি তুমি খুব রাগী ভাষায় গিয়ে বলো- ভাই ময়লা কেন ফেলছেন, ঠিক জায়গায় ময়লা ফেলেন, সেক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে, তুমি অযথাই একটা বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে পারো। সেসবের কোন দরকার তো নেই!

দুই, মানুষটা যখন দেখবে যে তার ফেলা ময়লাটা অন্য কেউ তুলে ফেলছে, তখন তার মধ্যে চরম অনুশোচনাবোধ আসবে। তার মনে হবে, আমি নিজের ময়লাটাই ফেললাম না, আরেকজন অন্য মানুষের ময়লা ফেলে দিয়ে আসছে! এই একটা শিক্ষা কিন্তু তোমরাও তোমাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারো, দারুণ কার্যকর হবে- হলফ করেই বলে দিতে পারি আমি! নিজে বদলে গিয়ে দেখালেই কিন্তু মানুষের চোখে পরিবর্তনটা ভালভাবে ফুটে ওঠে। 

মানুষকে কথা বললে তারা হয়তো কথাটা শোনে, অনেকে আবার হেসেই উড়িয়ে দেয়। সিস্টেমকে বদলে দিতে হলে আগে বদলে যেতে হবে নিজেকে। শুধু প্লাস্টিকের বোতলের কথাই নয়, বরং সবকিছুকেই যদি এভাবে আমরা নিজে নিজে করার অভ্যাস করতে পারি, দেখবে জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গেছে- সবাই তারিফও করছে তোমার!

Reference: http://10minuteschool.com/blog/be-the-change/

মাদার তেরেসার ১০টি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি

নীল পাড়ের সাদা সুতি শাড়ি, রুক্ষ চামড়া ও মায়াবী এক চেহারা- শুধু এতটুকু বললে যে মানুষটির ছবি চট করে মাথায় চলে আসে, তার নাম মাদার তেরেসা। মহীয়সী এই নারী পৃথিবীতে মানবতার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি ছিলেন একজন ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক, যিনি সারাজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন মানবতার দোরগোড়ায়।

নানা সময় ছুটেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে, কোলে তুলে নিয়েছেন পীড়ন-নিপীড়নে থাকা হাজারো শিশুদের, সেবা করেছেন অনেক অবহেলিতদের। পৃথিবীতে তাঁর অবদান কখনোই বলে শেষ করা সম্ভব নয়। মাদার তেরেসা জগতজুড়ে অনেক খ্যাতি পেয়েছেন নিজের কষ্টসাধ্য চেষ্টার কারণে, তবে পথটা এতটাও মসৃণ ছিল না যতটা না শুনতে মনে হচ্ছে। অসহায়দের নিয়ে চলাফেরার সাথে সাথে তাঁর নিজের মধ্যেও অনেক উপলব্ধি এসেছিলো যা মাদার তেরেসার নানা উক্তির মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে। এসব উক্তি যতটা শ্রুতিমধুর, ঠিক ততটাই অনুপ্রেরণামূলক।

মাদার তেরেসার ১০টি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি:

১. পিতৃবিয়োগের পর সময়টা অনেক কঠিন ছিল মাদার তেরেসার জন্য। তাঁর মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে অনেক কষ্টে বড় করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এবং যোগদান করেন সিস্টার্স অব লরেটো নামক এক মিশনারি সংস্থায়। ১৯৪৬ সালে ধর্মীয় কাজে ভারতের দার্জিলিং যাত্রাপথে তাঁর মধ্যে এক গভীর উপলব্ধি আসে যাকে পরবর্তীতে তিনি “কল উইদিন দ্যা কল (Call within the call)” হিসেবে আখ্যা দেন। এসময়ই তাঁর মধ্যে দরিদ্রের মাঝে বেঁচে থাকার যে আকাঙ্ক্ষা, সেটির পরিস্ফুটন ঘটে। তাঁর মতে সর্বদা দুস্থ অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আমাদের প্রতি আদেশ এবং এই আদেশ অমান্য করা মূলত ধর্মবিশ্বাসের অবমাননা করা। তিনি বলেন,

“বাইরের জগতে এখনি বেড়িয়ে পড়ো এবং ভালোবাসো প্রত্যেকটি মানুষকে। তোমার উপস্থিতি যেন হাজারো মানব হৃদয়ে নতুন আলোর সঞ্চার জাগায়।“

২. আমি একটি ব্যাক্তিগত গল্প বলবো এখন। সময়টা ছিল ২০১৩ কিংবা ২০১৪ এর একটা সময়। আমি ক্লাস নাইনে পড়তাম তখন, বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল অ্যাণ্ড কলেজে। সে সময়ে আমার স্কুলের কিছু ক্লাসমেট নিজ উদ্যোগে একটা সামাজিক সংঘ খুলেছিলো, নাম আলোড়ন, যার মূল কাজই হচ্ছে বনশ্রীর রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো হাজারো পথশিশু, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধীসহ আরো অনেক মানুষকে কোনো না কোনোভাবে সাহায্য করা।

সাহায্যের তহবিলের জন্য ওরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রোড ক্যাম্পিং করে টাকা উঠাতো। আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল আলোড়নে যোগ দেয়ার। একবার আমার খুব কাছের এক বন্ধুকে আলোড়নের এসব উদ্যোগের কথা বলতেই সে আমাকে বলেছিলো “শুন, এভাবে মাত্র একজন-দুইজন মানুষকে সাহায্য করে কী লাভ বল? দেশে যে হাজারো মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে, তার কী হবে? একজন মানুষকে সামান্য একটা জামা কিনে না দিয়ে বরং বৃহত্তর উদ্যোগে কিছু করা উচিত।” আমাদের সমাজে এরকম অনেক ঘটনাই দেখতে পাওয়া যায়। এইরকম ঘটনাগুলোকে ইঙ্গিত করে মাদার তেরেসা বলেছিলেন,

“যদি তুমি একশো মানুষকে সাহায্য করতে সক্ষম না হও, তাহলে অন্তত একজনকে সাহায্য করো।“

৩. ১৯৪৮ সালে মাদার তেরেসা গরীব ও সাহায্যের আশায় থাকা মানুষদের নিয়ে নিজের মিশনারি কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি নিজ উদ্যোগে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতার মতিঝিল এলাকায়। এত বড় একটা উদ্যোগ নেয়ার পূর্বে তিনি কারোর জন্য অপেক্ষা করেননি। তাঁর মনে হয়েছে যে উদ্যোগ কারোর না কারোর তো ঠিকই নিতে হবে। কারোর আদেশ-উপদেশের বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে নিজ প্রচেষ্টাতেই সকল কাজ শুরু করার জন্য মাদার তেরেসার জীবনী ছিল অন্যতম দৃষ্টান্ত।

“কারোর নেতৃত্বের অপেক্ষা না করে নিজ থেকেই সকল উদ্যোগ নেয়া উচিত।“

৪. শুরুর দিকেবিদ্যালয় পরিচালনা করার কাজটা তাঁর একার পক্ষে অনেক কঠিন ছিলো। ধর্মপালন থেকে শুরু করে মানবসেবা, সত্যিই একটা সময় তাঁর মাথার ওপর পাহাড়সম দায়িত্বের বোঝা চলে আসে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। ধীরে ধীরে তাঁর এই মহৎ উদ্যোগে হাজারো মানুষ যুক্ত হতে শুরু করে। দ্রুতই এই খবর ভারতীয় সরকারের নজরে আসে। ভারতীয় সরকারের তখনকার প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং জহরলাল নেহেরুও মাদার তেরেসার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। মাদার তেরেসা মনে করতেন,

“আমি একা এই পৃথিবীকে বদলে দিতে পারবোনা। তবে আমি স্বচ্ছ জলে একটি ছোট পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করে বড় বড় জলতরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারবো।“

৫. মাদার তেরেসার জীবনী থেকে জানা যায় যে, তিনি জন্ম থেকেই ছিলেন প্রচণ্ড প্রভুভক্ত। তিনি দিনের বড় একটা সময় প্রার্থনায় মগ্ন থাকতেন, বাকি সময় মানবসেবায়। তিনি মানবসেবাকে ধর্মপালনের একটি মহৎ অংশ হিসেবেই সর্বদা গণ্য করতেন। তাঁর দর্শন ছিল,

“সৃষ্টিকর্তা তোমাদের সফল হওয়ার আদেশ দেননি, শুধুমাত্র সর্বদা অবিরাম চেষ্টা ধরে রাখার আহ্‌বান করেছেন।“

তিনি তাঁর কাজকে সবসময় শ্রদ্ধা করতেন এবং একই সাথে ভরসা রাখতেন সৃষ্টিকর্তার উপর। তিনি জানতেন, কঠিন সাধনা করলে ঈশ্বর অবশ্যই একদিন মুখ তুলে তাকাবেন।

৬. মাদার তেরেসা যে সারাজীবন নিজের অবদানের জন্য মানুষের প্রশংসা পেয়েছেন, তা কিন্তু নয়। জীবনের নানা পর্যায়ে তিনি মানুষের সমালোচনার শিকার হয়েছেন। সমালোচিত হয়েছেন ধর্মযাজকের নির্দিষ্ট পোশাক ত্যাগ করে সাদা শাড়ি তুলে নেয়ার সময়, সমালোচিত হয়েছেন গর্ভপাত নিয়ে সমালোচনা করায়। এমনকি অনেকে তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও সমালোচনা করতে দেরি করেনি। কিন্তু এসব কথার তীর মাদার তেরেসাকে নিজের কর্মজীবন ও মানবসেবা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। এমনকি তিনি এসব মানুষকে কখনো এসব কথার জের ধরে বিচার করেননি। তাঁর জীবনী থেকে পাওয়া একটি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি হলো,

“মানুষকে বিচার করে সময় নষ্ট করলে কখনোই তাদেরকে ভালবাসার সময় পাওয়া যাবে না।”

এমনকি যেসব মানুষ মাদার তেরেসার কাজের সমালোচনা করতো, মাদার তেরেসা ঠিক সেসব মানুষকেই পরবর্তীতে মানবতার ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য অনুরোধ করতেন।

৭. আমি একটা জিনিস খেয়াল করে দেখলাম। সেটা হলো, এই ব্লগটি লেখার সময় আমি কিছুক্ষণ গুগলের এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করলাম, কিছু তথ্য সংগ্রহ করলাম, কিছু ছবি বের করলাম। হঠাৎ করে চোখে ধরা পড়লো যে, মাদার তেরেসার বেশিরভাগ ছবিতেই তাঁর হাস্যজ্জল একটা চেহারা ভেসে উঠছে। মাদার তেরেসা খুব গম্ভীর হয়ে বসে আছেন, এমন ছবি খুব কম আছে বলেই ধরে নিচ্ছি। আসলে মাদার তেরেসা নিজেও খুব হাসিখুশি একজন মানুষ ছিলেন। তিনি মানবসেবার কাজের মধ্যেই তাঁর সবটুকু সুখ খুঁজে পেতেন। তিনি জানতেন, একজন অসহায় হতদরিদ্রের কাছে সামান্য হাসির মূল্য কতটুকু। তাঁর একটি মহৎ উক্তি হলো,

“প্রত্যেকের প্রতি ভালবাসার শুরুটা হোক হাসির মাধ্যমে। “

মাদার তেরেসা আরো বলেন “অনেক মানুষের জীবনে একটি ছোট্ট হাসি কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা আমরা কখনোই বুঝতে পারবো না।“ সকল ভাল কাজের শুরু হাসির মাধ্যমে-এই নীতিতেই যেন মাদার তেরেসার আপাদমস্তক গড়া ছিল।

৮. ১৯৯৬ সালে পৃথিবীর শতাধিক দেশে সর্বমোট ৫০০টিরও বেশি মিশনারি পরিচালনা করেছিলেন মাদার তেরেসা। মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে যে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো, সময়ের ব্যবধানে সেই সংখ্যাটি কয়েক হাজারে পৌঁছায়। তারা সবাই পৃথিবীর নানা প্রান্তে মানবসেবা অব্যাহত রেখেছিলেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন। গরীবদের মাঝেও যারা গরীব, তাদের জন্য কাজ করতো এই চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান। যেই শুরুটা হয়েছিল ক্ষুদ্র আকারে, আজ তা পৃথিবীব্যাপ্ত আকার ধারণ করেছে।

“আমরা সকলেই শুরুতেই বিশাল কোনো মহৎ কাজ করতে পারবো না। কিন্তু ভালবাসা দিয়ে ছোট ছোট অনেক ভাল কাজ করা সম্ভব।“

একসময়ের সেই ক্ষুদ্র মানবসেবা প্রতিষ্ঠান আজ মাদার তেরেসা অর্গানাইজেশন এ রূপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত রয়েছে বিখ্যাত মাদার তেরেসা সেন্টার।

৯. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ- ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫, এই পাঁচ বছরব্যাপী চলমান এই যুদ্ধ পুরো পৃথিবীর মানচিত্রকে যেন ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। জার্মান হিটলার বাহিনীর হাত ধরে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ অচিরেই প্রাণ হারায়, আহতদের সংখ্যাটা অজানা থাকাই শ্রেয়। চারদিক তছনছ করে দেয়া এই যুদ্ধকালীন সময়ে পৃথিবীবাসী যেন ভুলে গিয়েছিল শান্তির প্রকৃত শব্দার্থ। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নেতারা কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন পৃথিবীতে পুনরায় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।

এসময় এই পুরো ব্যাপারটা স্বয়ং মাদার তেরেসাকেও উদ্বিগ্ন করে তুলেছিলো। পৃথিবীতে এত ধ্বংসযজ্ঞ, মানুষের আর্তনাদ তাঁর মনকে ব্যথিত করে তোলে। তিনি মানুষের কাছে গিয়ে শুনেছেন যুদ্ধের সেই ভয়াবহতা। তিনি মনে করতেন, অস্ত্র দিয়ে কখনোই শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। শান্তি ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে বেশি দরকার যেটি, সেটি হচ্ছে মানবতা।

“অস্ত্র দিয়ে কখনোই শান্তিকে ঘরে আনা সম্ভব নয়, সম্ভব ভালবাসা ও সহানুভূতির হাত ধরে।“

১০.

“সবচেয়ে ভয়াবহ দারিদ্রতা হচ্ছে একাকীত্ব এবং প্রিয়জনের সহানুভূতি না পাওয়ার অনুভূতি।“

 বর্তমান সময় কিশোর-কিশোরিদের মধ্যে আলোচিত একটি বিষয় হলো ডিপ্রেশন। ভয়াবহ এই ব্যাধির অন্যতম কারণ হচ্ছে একাকীত্ব। একজন মানুষের জীবনে একাকীত্ব যে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, তা কল্পনাতীত। মাদার তেরেসার জীবনেও এমন অনেক সময় এসেছে, যখন তিনি একাকীত্বে ভুগেছেন। অল্প বয়সেই পরিবার ছেড়ে এসে মিশনারিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে তিনি বাকি জীবন পরিবারকে কাছে পাননি।

এমনকি ১৯২৮ সালে ১৮ বছর বয়সে গৃহত্যাগের পর তিনি তাঁর মায়ের চেহারা আর কখনো দেখতে পাননি। তিনি কখনো কখনো অনেক ভেঙ্গে পড়তেন একাকীত্বের জন্য। ঘরে ফেরার জন্য তাঁর মন সবসময় আনচান করতো, কিন্তু দায়িত্বের টানে কখনোই তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।

মাদার তেরেসার জীবনী আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, অনেক অনুপ্রেরণারও জোগান দেয় তাঁর অসাধারণ জীবন। কিভাবে মানুষকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে আত্মতুষ্টি পাওয়া যায়, তারই নিদর্শন নীল পাড়ের শাড়ি পরিহিত হাস্যোজ্জ্বল ঐ মহীয়সী নারী। তাই বোধহয় মাদার তেরেসার প্রতিটি বাণীই যেন জয়গান গায় মানবতার, জয় হয় মানুষের।

Reference :

https://www.catholicnewsagency.com/news/from-inspiration-to-adoption-a-story-of-working-with-mother-teresa-47977

https://www.brainyquote.com/authors/mother_teresa

http://10minuteschool.com/blog/mother-teresa-quotes/

 

 

 

ঈগলের ৭ নীতি, অনুসরণে হতে পারে তোমার উন্নতি

বিধাতা পৃথিবীকে এমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন যে প্রকৃতি থেকেই মানুষ শেখার জন্য খুঁজে পায় অসংখ্য উৎস। সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে মানুষ দাবিদার হলেও পশু-পাখিদের কাছ থেকেও কিন্তু শেখার আছে অনেক কিছু! নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মিতব্যয়িতা, পারিবারিক বন্ধন ইত্যাদি অনেক কিছুই আমরা তাদের দৈনিক কার্যক্রম দেখে শিখতে পারি।

ঈগলকে আমরা চিনি শক্তিধর, দক্ষ একটি শিকারি পাখি হিসাবে। তবে পাখির রাজা ঈগল নিজ জীবনে মেনে চলে ৭টি মূলনীতি যা মানুষ হিসাবে আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় ও অনুসরনীয়।

চলো দেখে আসি এই ৭টি নীতি এবং তা হতে প্রাপ্য শিক্ষাগুলো!  

নীতি- ১:

ঈগল অনেক উঁচুতে উড়ে এবং কখনোই চড়ুই কিংবা অন্যান্য ছোট পাখিদের সাথে মেশে না, উড়েও না।

ঈগল যেই উচ্চতায় উড়ে বেড়ায়, সেই উচ্চতায় অন্য কোন পাখি পৌঁছাতেও পারে না। এজন্যেই ঈগল একা ওড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কারোর সাথে দল বেঁধে নয়।

প্রাপ্য শিক্ষা:

কাক-চড়ুই যেহেতু ঈগলের সমান এতো উঁচুতে উড়তে পারে না, তাই ঈগল তাদের সাথে দল বাঁধে না।

মানুষ হিসাবে তোমাকেও জীবনে চলার পথে এমন মানুষগুলোর সাথেই চলতে-ফিরতে-মিশতে হবে যারা তোমার সমান স্বপ্ন দেখে, যাদের সাথে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি মিলে, যাদের সাথে থাকলে তোমার ব্যক্তিগত উন্নয়ন সম্ভবপর হবে।  

বন্ধুত্ব করতে হবে সম-মানসিকতার মানুষের সাথে এবং এড়িয়ে চলতে হবে এই কাক ও চড়ুইদের, যাদের সাথে তোমার জীবনের লক্ষ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

নীতি- ২:

ঈগলের রয়েছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি যার মাধ্যমে সে আকাশে থাকা অবস্থাতেই ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পায়, তাও একদম স্পষ্ট! ঈগল যখন তার শিকার খোঁজে, সে তার সব ফোকাস সেটার ওপর নিয়ে যায় এবং বেরিয়ে পড়ে শিকারের জন্য। যত বাধাই আসুক না কেন, সেটিকে না পাওয়া পর্যন্ত ঈগল কোনক্রমেই তার চোখ সরায় না।

প্রাপ্য শিক্ষা:

ঈগল যেমন খুব স্পষ্টভাবে সবই দেখতে পায়, কিন্তু ফোকাস করে শুধু একটি প্রাণীর উপরে, তেমন ভাবে তোমাকেও সব কিছু জানতে হবে, খোঁজ খবর রাখতে হবে তবে ফোকাস রাখতে হবে যেকোনো একটি কাজের উপর

নিজেকে জানো, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করো এবং সেই একটি লক্ষ্যের পিছনেই ছোটো। যত বিপত্তিই আসুক না কেন, ফোকাস হারানো চাই না!

নীতি- ৩:

পাখির রাজা ঈগল সর্বদা জীবন্ত প্রাণীকে খাবার হিসেবে খেয়ে থাকে। কখনোই কোন মৃত জিনিস তারা ভক্ষণ করে না।

প্রাপ্য শিক্ষা:  

রোজ রোজ নতুন শক্তির চাহিদায় ঈগল পাখি কখনোই মৃত কিছু না খেয়ে বরং জীবন্ত ও নতুন কোন শিকারের পিছে ছুটে।

ঠিক একই ভাবে, গতিশীল পৃথিবীতে নিজেকে এগিয়ে রাখার লক্ষ্যে নিজেকে সর্বদা নতুন সব তথ্য দিয়ে আপডেটেড রাখতে হবে। প্রতি সেকেন্ডেই বদলে যাচ্ছে অনেককিছু। তাই সার্বক্ষণিক তোমাকে জানতে হবে সর্বশেষ তথ্য ও খবর। জীবনের লক্ষ্য আরও স্পষ্ট করার জন্য এসব নতুন তথ্য নতুন শক্তির যোগান দেয়।

তাছাড়াও, আশেপাশের কিছু মানুষ মৃত ও পচা মাংসের মতই। তারা সর্বদা এমন সব কথাই বলে যা আমাদের নিরুৎসাহিত করে। তবে এখানেই শিক্ষা নিয়ে হাজির হয় ঈগল পাখি। সে যেমন চড়ুই, কবুতরের মতো পাখিদের জন্য নিরুৎসাহিত না হয়ে আরও উঁচুতে উড্ডয়ন করে, তোমাকেও কোন কিছুতে কান না দিয়ে ঈগলের মতোই এগিয়ে যেতে হবে নিজের স্বপ্ন ছুঁতে।

নীতি- ৪:

ঝড় আসলে ঈগল পাখি তা এড়িয়ে না গিয়ে বরং ঝড়ের বেগকেই কাজে লাগিয়ে উঁচুতে উড়ে যায়। অন্যান্য পাখিরা যখন পাতা ও গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে,  ঈগল তখন ঝড়ের বিরুদ্ধে তার ডানা ঝাপটে যায় এবং ঝড়ের বেগকেই কাজে লাগিয়ে মেঘকে ভেদ করে উপরে উঠে যায়। এমনকি একবার বাতাসের বেগ পেয়ে গেলেই  ঈগল তার ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দেয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই উপরে যেতে থাকে। ঝড়কে যেন সে খুব ভালবাসে!

প্রাপ্য শিক্ষা:  

চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ নয়, সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অন্য সব পাখি যখন আশ্রয়ের জন্য জায়গা খুঁজে, ঈগল তখন ঝড়ের  মাঝেও উড্ডয়নে মগ্ন থাকে। ঝড়ের বেগকে কাজে লাগিয়েই ঈগল টিকে থাকে বৈরি আবহাওয়ায়।

তাই সাফল্যপিপাসু একজন স্বপ্নবাজকেও প্রতিটি চ্যালেঞ্জ সাদরে গ্রহণ করতে হবে। একমাত্র প্রতিকূল পরিস্থিতিই পারে নতুন কিছু শেখাতে, সমস্যা সমাধানের দারুণ দক্ষতাটি বাড়াতে। অতএব, চ্যালেঞ্জ আসলে এড়িয়ে না গিয়ে তার মুখোমুখি হতে হবে, দৃপ্ত হাতে লড়তে হবে। বাধা নয়, শক্তিতে পরিণত করতে হবে, ঠিক যেভাবে ঈগল করে।

নীতি- ৫:

একটা মেয়ে ও ছেলে ঈগল যদি কখনো বন্ধু হতে চায়, মেয়ে ঈগলটি প্রথমেই ছেলে ঈগলটির কমিটমেন্টের পরীক্ষা নিয়ে নেয়। কীভাবে?   

সাক্ষাৎ হওয়ার পর মেয়ে ঈগলটি মাটিতে নেমে এসে গাছের একটি ডাল তুলে নেয়। তার পিছে পিছে ছেলে ঈগলটিও উড়ে যায়। মেয়ে ঈগলটি সেই ডাল নিয়ে উপরের দিকে উড়ে যায় এবং একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় যাওয়ার পর গাছের সেই ডালটি নিচে ফেলে দেয়। তার পিছু নেওয়া সেই ছেলে ঈগলটি তা দেখে ডালটি ধরার জন্য দ্রুত নিচের দিকে যায়। ডালটি সে মেয়ে ঈগলের কাছে ফিরিয়ে আনে।

এই কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি কয়েক ঘণ্টা ধরে হতেই থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত মেয়ে ঈগল আশ্বস্ত হয় যে ছেলে ঈগলটি এই ডাল ফিরিয়ে আনার কাজটি আত্মস্থ করতে পেরেছে। এটা তার কাছে ছেলে ঈগলটির ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার’ পরিচয় তুলে ধরে। অর্থাৎ, ইংরেজিতে আমরা যেটাকে বলি Commitment। একমাত্র ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার’ পরিচয় দিতে পারলেই পরে তারা দুজন বন্ধু হতে পারে।

প্রাপ্য শিক্ষা:

এখান থেকে প্রাপ্য শিক্ষা এটাই যে, ব্যক্তিগত জীবনেই হোক আর পেশাগত জীবনেই হোক, কারোর সাথে কোন চুক্তিতে বা সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে তার Commitment যাচাই করে নিতে হবে। এমন কারোর সাথে কাজে যোগ দিতে হবে যে কাজের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও মনোযোগী।

নিজের কর্মচারী বা জুনিয়রদের অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হবে এবং পরখ করতে হবে যে তোমার তত্ত্বাবধান ব্যতীত তারা কতটুকু ভালো কাজ করেছে, কত মনোযোগ ও গুরুত্বের সাথে কাজ করেছে।

ঈগল আমাদের এই শিক্ষাটা কত সুন্দর করেই না দিয়েছে!

নীতি- ৬: 

ডিম পাড়ার সময় আসলে বাবা ও মা ঈগল পাহাড়ের এমন একটি জায়গা বেছে নেয় যেখানে কোন শিকারির হামলা করার সুযোগ থাকে না। বাসা তৈরির পালা আসলে ছেলে ঈগল এই বাসা নির্মাণের জন্য প্রথমে কিছু কাঁটা বিছায়, তার উপর গাছের ছোট ছোট ডালা, তার উপর আবার কিছু কাঁটা দিয়ে একদম শেষে কিছু নরম ঘাস বিছিয়ে দেয়। ছোট্ট আবাসটির নিরাপত্তার জন্য বাইরের দিকে তারা কাঁটা ও শক্ত ডালা বিছিয়ে রাখে।

বাচ্চা ঈগলগুলোর যখন উড়তে শেখার সময় হয়, মা ঈগল তাদেরকে বাইরে ছুঁড়ে দেয় কিন্তু পড়ে যাওয়ার ভয়ে ছানাগুলো ফিরে আসে। মা ঈগল এবার সব নরম ঘাস সরিয়ে ফেলে পুনরায় তাদের বাইরে ছুঁড়ে দেয়। আর তাই ছানাগুলো যখন ফিরে আসে, কাঁটার সাথে আঘাত পেয়ে তারা নিজেই বাইরে ঝাঁপ দেয় এই ভেবে যে এতো প্রিয় মা-বাবা কেন এমন করছে?

এবারে বাবা ঈগল নিয়োজিত হয় তাদের উদ্ধারকার্যে। নিচে পড়ে যাওয়ার আগেই সে তার পিঠে করে ছানাগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। যতদিন পর্যন্ত ছানাগুলো তাদের ডানা ঝাঁপটানো না শুরু করে, এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।

প্রাপ্য শিক্ষা:  

এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার মতো অনেকগুলো বিষয় আছে।

  • এরকম সুরক্ষিত আশ্রয় গড়ে তোলার এই প্রস্তুতি আমাদের শেখায় যেকোনো পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার।
  • পরিবারের সব কাজে প্রত্যেকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সর্বদাই কাম্য। তা পরিবারের ছোট সদস্যদের কাছেও একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়।
  • বাচ্চা ঈগলের গায়ে কাঁটা লাগায় তারা শেষ পর্যন্ত ডানা ঝাঁপটানো শুরু করে এবং তখনই প্রকৃতপক্ষে নতুন একটা বিষয় আবিষ্কার করে। তারা আবিষ্কার করে যে তারা উড়তে পারে! 
    অতএব এখান থেকে আমাদের শেখা উচিত যে, আমরা যেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, সারা জীবন ওখানেই থাকলে আমরা নতুন কিছু শিখব না, জীবন নিয়ে জানবো না, নিজের ক্ষমতাগুলো নিয়ে অবগত হব না। এক কথায়, ‘Comfort Zone’ থেকে বের হতেই হবে! নচেৎ নতুন কিছু শেখা কখনোই সম্ভব নয়।
  • পৃথিবীতে আর যা কিছুই হয়ে যাক, বাবা-মা কখনোই সন্তানের অমঙ্গল কামনা করেন না। মা ঈগল তার ছানাগুলোকে ছুঁড়ে দিতে চায় যেন তারা উড়তে শিখে, বাবা ঈগল তাদের পড়ে যাওয়া হতে বাঁচায়- এটাই কি অনুসরনীয় নয়?

নীতি- ৭:

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঈগল পাখির ডানার পালকগুলো দুর্বল হয়ে পরে, যে কারণে সে আগের মত খুব দ্রুত গতিতে উড়তে পারে না। দুর্বল বোধ করলে সে এমন একটি জায়গায় আশ্রয় নেয় যেখানে পাথর রয়েছে। সেখানে সে তার শরীরের প্রতিটি পালক টেনে ছিঁড়ে ও উঠিয়ে ফেলে। নতুন পালক না গজানো পর্যন্ত সেই দুর্বল ঈগল কোথাও বের হয় না। নতুন পালক গজিয়ে গেলে সে পুনরায় বজ্র গতিতে উড়ে বেড়ায়।

প্রাপ্য শিক্ষা:

কাজ, দায়িত্ব, পড়াশোনার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে যখন হাঁপিয়ে উঠবে, সিদ্ধান্ত নাও একটু বিরতি নেওয়ার। ছোট্ট একটি ছুটি নাও, সময় বের করো নিজের জন্য। এ সময়টিতে একান্তে চিন্তা করো কোন কাজটি তোমার কাছে অর্থপূর্ণ এবং কোনটি তোমার করার একেবারেই প্রয়োজন নেই। ঈগলের মতো তুমিও ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলো সেসব অপ্রয়োজনীয় কাজের দায়িত্ব যা তোমার চলার গতিকে মন্থর করছে, এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সেই সাথে, নিজেকে যাচাই করে দেখো যে কোন কোন বদ অভ্যাসে তুমি বর্তমানে অভ্যস্ত। ঈগল পাখির মতই ঝেড়ে ফেলো সেসব বদ অভ্যাস; পুনরায় শুরু করো নতুন পথচলা।

সারাংশ:

১। সমমনা মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করো। তোমার জীবনে বন্ধুদের প্রভাব অনেক বেশি। তাই বন্ধু নির্বাচন করো বুঝে শুনে।

২। আশে পাশের সবকিছুর প্রতিই খেয়াল রাখো তবে পিছু নাও শুধু একটি লক্ষ্যের। সেই লক্ষ্য হতে কোন ভাবেই ফোকাস হারানো চাই না!

৩। সব সময় নতুন সংবাদ ও তথ্যের খোঁজ রাখো। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলো এবং অন্য মানুষের কথা শুনে নিজের স্বপ্নের পিছু নেয়া ছেড়ে দিবে না কখনোই।

৪। চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ নয়, সুযোগ হিসাবে দেখো। একে মোকাবিলা না করলে নতুন কিছু কখনোই শেখা হবে না, যেই অবস্থানে রয়েছো তা হতে কখনোই  উত্তরণ করতে পারবে না।

৫। কাউকে নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে তার Commitment যাচাই করো। ব্যক্তিগত হোক আর পেশাগত জীবনেই হোক, যাচাই করে নিতে ভুলবে না।

৬। যেকোন রকম পরিবর্তনের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকো। অভিযোজনে অভ্যস্ত হও অর্থাৎ যেকোন পরিস্থিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখো। আর ভুলে যেয়ো না যে: “Life begins at the end of your comfort zone.”

Comfort zone থেকে না বেরোলে জীবনে অগ্রগামী হওয়া প্রায় অসম্ভব।

৭। নিজের সকল বদ অভ্যাস হতে বের হয়ে আসো। অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো হতে নিজেকে দায়মুক্ত করো। নাহলে জীবন থমকে যাবে!

Reference: http://10minuteschool.com/blog/7-lessons-to-learn-from-the-eagle/

(বাইবেল গ্রন্থে ঈগলের উল্লেখ দেখার পরে Dr Myles Monroe ঈগল নিয়ে গবেষণা করেন এবং খুঁজে পান এই ৭টি নীতি। সেখান থেকেই তোমাদের সবার কাছে এই সুন্দর শিক্ষাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।)