কারিগরি শিক্ষা আত্ননির্ভশীলতার প্রস্তুতি

কারিগরি শিক্ষা আত্ননির্ভশীলতার প্রস্তুতি

কারিগরি শিক্ষা

একটি দেশের উন্নয়নের জন্য দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। পৃথিবীর যে দেশে যত বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী আছে সেই দেশ তত বেশি উন্নত। মানব সম্পদ যদি ব্যবহারযোগ্য না হয় তবে তার কোন মূল্য নেই। কোন রাষ্ট্রের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ বা খনিজ সম্পদ থাকলেই, সেই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত হয়না, যদি না ঐ রাষ্ট্র উপযুক্ত পরিকল্পনায় ঐ সম্পদকে ব্যবহার করতে পারে। একইভাবে রাষ্ট্রে অসংখ্য জনগোষ্ঠী থাকলেই রাষ্ট্রের উন্নতি হবে না। ঐ জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে উৎপাদনমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারলে সেই জনগোষ্ঠী রাষ্টের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।।

 

যে শিক্ষা শিক্ষার্থী তার বাস্তব জীবনে ব্যবহার করে কোন একটি নির্দিষ্ট পেশায় নিযুক্ত হতে পারে তাই কারিগরি শিক্ষা। কারিগরি শিক্ষার কয়েকটি ট্রেড রয়েছে যেমন সিভিল ,ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক্স,মেকানিক্যাল,কম্পিউটার,আকিটেকচার,পাওয়ার, ইত্যাদি ।এই ট্রেড গুলোর যেকোনো একটি ট্রেডে বাস্তবমুখী শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে আমরা আমাদের বেকারত্বকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।   সাধারন শিক্ষা অর্জন করে যেখানে চাকরি নামক সোনার হরিনের পেছনে দীঘদিন ছুটতে হয়,সেখানে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে অনেক ভালো মানের চাকরি পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয় না। সঠিকভাবে কারিগরি শিক্ষা গ্রহন করলে অনেক উন্নত মানের প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনে চাকরি পাওয়া যায়।তেমনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলো DHAKA WASA,BREB,DPDC,EPZ,BANGLADESH RAILWAY,BTRC,PWD এবং BPSC তে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সরকারি চাকরি। বিভিন্ন   কারিগরি  শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীকে বা ব্যক্তিকে পেশা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সে নিজেই অর্জিত শিক্ষার সাথে মিল রেখে স্বাধীনভাবে পেশা খুঁজে নিতে পারে। সাধারণ শিক্ষা এর বিপরীত, অর্থাৎ অর্জিত শিক্ষার সাথে কর্মের মিল থাকে না। কারিগরী শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়স সম্পর্কে কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করা হয়। সাধারণত ঝরে পড়া শিক্ষার্থী অথবা কোন কারণে শিক্ষাবঞ্চিত ব্যক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা নানাভাবে সফলতা এনে দিতে পারে। এ ধরনের শিক্ষার প্রধান শর্ত হলো ধৈর্য্য, পরিশ্রম ও অনুশীলন। দক্ষতাই উন্নয়ন-এ কথাটি কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ শিক্ষার প্রধান সাফল্য ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ। এর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থী বা ব্যক্তিকে পরবর্তী জীবনে নির্দিষ্ট কোন কারিগরি বিষয়ে দক্ষ করে তোলা, নিজ নিজ উদ্যোগে স্থানীয় ছোট ছোট শিল্পের প্রসার ঘটানো, স্বাধীনভাবে পছন্দ অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদকে প্রকৃষ্টভাবে কাজে লাগিয়ে কর্মীর হাতে পরিণত করা।

আমাদের দেশের বিপুল সম্ভাবনাময় এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার। প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এদেশের জনসম্পদই হচ্ছে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন ভাগের একভাগ হচ্ছে ১৫ এবং তদুর্ধ বয়সী কম-উপযোগী মানুষ।  দেশে বর্তমানে দারিদ্রের হার ৩০ ভাগেরও উপরে এবং প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ নতুন করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এর অধিকাংশই হয় বেকার, না হয় আধা বেকার অবস্থায় থাকে। যাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়, তারাও দক্ষতার অভাবে স্বল্প বেতন ও সুযোগ-সুবিধায় কাজ করতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের জীবনমান থাকে অনুন্নত এবং অভাব হয় নিত্যসঙ্গী। পাশাপাশি আমাদের দেশের প্রচুর লোক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিদেশে যাচ্ছেন। প্রবাস থেকে আমাদের দেশে তারা যে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করেন তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত এবং এ বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে যে সকল শ্রমজীবী মানুষ বিদেশে যান তার ২৩%  দক্ষ, বাকি ৭৭% আধা-দক্ষ বা অদক্ষ। ফলে তারা অন্যান্য দেশের কর্মজীবীদের তুলনায় অনেক কম আয় করেন এবং কম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করেন। আমরা যদি তাদেরকে দক্ষ শ্রমজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে তারা অধিক উপার্জনসহ মানসম্মত উন্নত জীবনের অধিকারী হতো এবং কয়েকগুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণে সক্ষম হত। কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় জোর দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের চাইতে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যাণ্ড, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপির হার অনেকগুণ বেশী। অথচ ১৯৭০ সালে এই দেশগুলির জিডিপি আমাদের প্রায় সমকক্ষ ছিলো।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশ উন্নতির স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করেছে কারিগরি শিক্ষার ওপর ভর করে। তাদের কৃষি, শিল্প ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি যুগোপযোগী মানসম্মত কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা। অথচ আমাদের দেশের ক্ষেত্রে চিত্রটা ভিন্ন। এখানে কারিগরি শিক্ষার প্রতি সমাজের অনেকেই এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। সামাজিকভাবে ধরে নেওয়া হয় যারা পড়াশুনায় ভালো নয় তারা টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল এডুকেশনে শিক্ষা নিতে আসে। যা আজ আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। এর ফলে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক মহল সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে। অথচ কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ করলে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারত।

কর্মমুখী ও ব্যবহারিক শিক্ষার শক্তিই হচ্ছে উন্নয়ন ও জাতি গঠনের আসল শিক্ষা। জাতীয় জীবনে অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি শিক্ষা। হাতে-কলমে শিক্ষাই হচ্ছে একটা জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। শিক্ষা যেমন ব্যক্তিজীবনকে আলোকিত এবং উন্নত করে, তেমনি জাতি দেশকে সমৃদ্ধ ও সমুন্নত করে। ব্যবহারিক শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে না। হাতে-কলমের শিক্ষার প্রভাবেই মানুষ কুসংস্কার, জড়তা ও হীনতা থেকে মুক্ত হয়ে জাতিকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে পারে। সর্বপরি,বতমানে বেচে থাকার জন্য কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই।

 

Author:

Sharmin Akter

Junior Instructor

AIDT, Daffodil Polytechnic Institute

 

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ [পর্ব ১]

কেমন হওয়া উচিত ফ্রেশার চাকুরী প্রাথীর সিভি

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ [পর্ব ১]

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ

চাকরিদাতার কাছে সিভি হচ্ছে আপনার প্রথম উপস্থাপনা। সিভি বাছাই করার সময় চাকুরীদাতা দ্রুত সময়ে তার চাহিদা অনুযায়ী সিভি বাছাই করতে চায়। অতএব আপনার সিভি এমন হওয়া উচিত যাতে এক ঝলকেই একদম বেসিক যে তথ্যগুলো প্রাথমিক বাছাইয়ে জন্য জরুরী সেগুলো চাকরিদাতার কাছে উপস্থাপিত হয়।

চাকুরীদাতার কাছে নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে উপস্থাপনের জন্য আপনার সিভিটি হতে পারে মোক্ষম অস্ত্র। চলুন এই পর্বে জেনে আসি একজন ফ্রেসার হিসেবে কোন বিষয়গুলো আপনার সিভিতে থাকা জরুরী।

১) CONTACT INFOTMATION (যোগাযোগের তথ্য)

সিভির একদম উপরের অংশে প্রার্থীর সাথে যোগাযোগের তথ্য থাকবে। আপনার নাম, চিঠি পাঠানোর ঠিকানা, ফোন নম্বর বা মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস ও পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Linkedin এর আপনার প্রোফাইল URL টি থাকবে। চাকুরীদাতার যদি আপনার সিভিটি উপযুক্ত মনে করেন তাহলে এই অংশের মোবাইল নাম্বার অথবা ইমেইল এড্রেসে পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য বিস্তারিত তথ্য সহ যোগাযোগ করবেন।

) FORMAL PHOTO (ফর্মাল ছবি)

সিভির একদম উপরের ডান দিকে আপনার ফর্মাল ছবি সংযুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে ছয় মাসের বেশি পুরোনো ছবি না দেওয়াই ভালো। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা বা হালকা নীল হলে ভালো হয়।

) CAREER OBJECTIVE (পেশাগত উদ্দেশ্য)

সিভিতে পেশাগত উদ্দেশ্য শিরোনামে অবশ্যই একটি অংশ রাখবেন। আপনি যে পদের জন্য আবেদন করতে যাচ্ছেন সেখান থেকে আপনি কী অর্জন করতে চান, আপনার উপর কতটুকু নির্ভর করা যায় প্রভৃতি বিষয় অল্প কথায় স্পষ্ট করে উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

) SPECIAL QUALITIES (বিশেষ গুণাবলী)

এই অংশে অল্প কথায় আপনার ব্যাক্তিগত কিছু গুনাবলী উল্লেখ্য করুন যা চাকুরীদাতাকে আকৃষ্ট করতে পারে। সততা, কঠোর পরিশ্রমী, নেতৃত্বের গুণাবলি, কাজের প্রতি যত্নশীল, কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন এইগুলো উদাহরন হিসেবে নেয়া যেতে পারে।

) ACADEMIC QUALIFICATION (শিক্ষাগত যোগ্যতা)

আপনার শিক্ষা সম্পর্কীত তথ্য থাকবে এই অংশে। আপনার অর্জিত সর্বোচ্চ ডিগ্রিটিকে সবার উপরে এবং তারপর ধারাবাহিকভাবে অন্যগুলো ছক আকারে উল্লেখ্য করুন। প্রতিটি অর্জিত ডিগ্রির নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, বোর্ড অথবা বিভাগের নাম, মেজর সাবজেক্ট, ফলাফল এবং ফলাফল প্রকাশের সাল অবশ্যই উল্লেখ্য করতে হবে।

) WORKING EXPERIENCE (কাজের অভিজ্ঞতা)


আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা সফরের ইতিহাস, ইন্টার্নশিপের তথ্য থাকবে এই অংশে। যদি কোন সময় পদের সাথে সংশ্লিষ্ট এমন কোন অ্যাসাইনমেন্ট করে থাকেন, সেটা উল্লেখ করতে পারেন। আবেদনকৃত পদের সঙ্গে সম্পর্কৃত নয় এমন কোনো অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভালো ।

৭) TRAINING & WORKSHOP (প্রশিক্ষন এবং কর্মশালা)


যে পদের জন্য আবেদন করছেন, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো ট্রেইনিং, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদিতে অংশগ্রহনের তথ্য থাকবে এই অংশে। ট্রেইনিং, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির নাম, পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, সময়সীমা ও সালের নাম অবশ্যই উল্লেখ্য করতে হবে।

) EXTRA-CURRICULAR ACTIVITIES (পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম)


মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমের মাধ্যমে। পড়ালেখার পাশাপাশি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, প্রজেক্ট তৈরী, লেখালেখি, বিভিন্ন ক্লাবে সাথে কাজ করার ইতিহাস অল্প কথায় স্পষ্ট করে উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

) ACHIVEMENT (অর্জন)


বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার প্রাপ্তি, বিভিন্ন ক্লাবে নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ ইত্যাদি অল্প কথায় স্পষ্ট করে উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

১০) LANGUAGE PROFICIENCY (ভাষাগত দক্ষতা)


বাংলা ও ইংরেজি এই দুইটি ভাষা সিভিতে উল্লেখ্য করা অতি জরুরী। ইংরেজীতে যদি আপনি দুর্বল হয়ে থাকেন তাহলে এই মুহুর্তে দুর্বলতা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করুন। পদক্ষেপ গুলো কি হতে পারে তা নিয়ে লিখব অন্য কোনদিন। বাংলা ও ইংরেজীর পাশাপাশি অন্য কোন ভাষা যদি আপনার জানা থাকে তা উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

১১) COMPUTER PROFECIENCY (কম্পিউটারে দক্ষতা)

চাকুরীর ক্ষেত্রে কম্পিউটার চালনায় দক্ষতা অতি জরুরী। বিশেষ করে মাক্রোসফট অফিস এর বিভিন্ন এপ্লিকেশন যেমন মাক্রোসফট ওয়ার্ড, মাক্রোসফট এক্সেল, মাক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট সফটওয়ার এবং ইমেল কমিউনিকেশন ইত্যাদি এই অংশে উল্লেখ্য করুন।

১২) INTERST (আগ্রহ বা শখ)

অল্প কথায় স্পষ্ট করে আপনার শখ বা অবসর সময়ে কী করেন তা উল্লেখ করুন এই অংশে। এই ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হোন। চাকুরীর সাথে সম্পর্কৃত আগ্রহ বা শখ উল্লেখ্য করুন যেমন কোন ট্রাভেলিং এজেন্সিতে কোন পদের জন্য আবেদন করছেন সেখানে আপনি ভ্রমন করতে ভালোবাসেন তা প্রথমে  উল্লেখ্য করুন, আপনি যদি কোন কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের কোন পদের জন্য আবেদন করেন তাহলে সেখানেো আড্ডা দেয়া আপনার শখ তা প্রথমে উল্লেখ্য করুন। শেষে আপনার যদি কোন উল্লেখযোগ্য আগ্রহ বা শখ থাকে যুক্ত করুন।

১৩) PERSONAL INFORMATION (ব্যক্তিগত তথ্য)


আপনার পিতা ও মাতার নাম, আপনার জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, জাতীয়তা, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার, ধর্ম এবং স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি এই অংশে উল্লেখ্য করুন।

১৪) REFFERENCE (রেফারেন্স)

প্রয়োজনে যাতে সিভিতে দেয়া আপনার তথ্যগুলোর সত্যতা দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, সে কারনেই এই রেফারেন্সের অংশ। আপনার পরিচিত পেশাজীবি কোন ব্যাক্তি যিনি আপনার সম্পর্কে জানেন তাদের নাম, পদ, অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল এড্রেস ইত্যাদি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। যাদের রেফারেন্স দিচ্ছেন তাদের অনুমতি নিবেন এবং বিষয়টি তাদের জানিয়ে রাখবেন।

১৫) DECLARATION (ঘোষণা)

এই অংশে সর্ম্পূণ সিভির সকল তথ্যের সত্যতা প্রমানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন সার্টিফিকেট সমুহ, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি প্রদর্শন এবং সিভিতে দেয়া প্রত্যেকটি তথ্যের সত্যতার নিশ্চয়তা নিজের নাম ও সিগনেচার সহ ঘোষনা করবেন।

ব্যাক্তিভেদে আরো কিছু বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে তবে উপরোক্ত বিষয় গুলো প্রত্যেকটি ফ্রেশারের সিভিতে থাকা অত্যন্ত জরুরী।

আজ এই পর্যন্তই।
আমন্ত্রন থাকল পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য। আগামী পর্বে থাকছে চাকুরীর জন্য সিভি মেইল করার খুটিনাটি

লেখকঃ 

মোঃ জায়েদুল হক

ইন্সট্রাকটর, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

 

শেখ মুজিব: চিরদিন এক প্রতিবাদী তর্জনী

শেখ মুজিব: চিরদিন এক প্রতিবাদী তর্জনী

দেশের জন্য মুক্তির দীর্ঘ লড়াইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলে যেতে হয়েছে অনেকবার। সব মিলিয়ে তিনি তাঁর জীবনের প্রায় সাড়ে ১২ বছর জেলে ছিলেন। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি কোনো এক সময়। কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থানকালে তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা (রেণু) তাকে অনুরোধ করেন আত্মজীবনী লিখতে।

বঙ্গবন্ধু দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলেছিলেন, “লিখতে তো পারি না; আর এমন কী করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করেছি।”

তবুও রেণু তাঁকে শেষবার অনুরোধ করেন আত্মজীবনী লেখার জন্য, বলেন ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। একদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু কারাগারের ছোট কোঠায় বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছেন তাঁর রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কথা। কীভাবে তাঁর সঙ্গে পরিচয়, কীভাবে তাঁর সান্নিধ্য লাভ, কীভাবে তিনি কাজ করতে শেখালেন ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে ভাবনার জগতে সাঁতার কাটছেন।

হঠাৎ তাঁর মনে হলো লিখতে ভালো না পারলেও ঘটনা যতদূর মনে আছে লিখে রাখতে তো আর ক্ষতি নেই। অন্তত এই বন্দি কারাগারে সময়টুকু তো কাটবে! এর কয়েকদিন পর রেণু তাকে কয়েকটা খাতা কিনে জেলগেটে জমা দিয়েছিলেন। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা তাঁকে দেন। তখন থেকেই তিনি শুরু করেন আত্মজীবনী লিখতে।

বঙ্গবন্ধুর এ অমর সৃষ্টি পাদপ্রদীপের আলোয় আনবার পিছনে তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনার অনেক অবদান রয়েছে। তিনিই বহু খোঁজাখুজি করে বঙ্গবন্ধুর মহাপ্রয়ানের ২৯ বছর পর স্মৃতিকথা লেখা সেই চারটি খাতা হাতে পান। অবহেলা আর অনাদরে পড়ে থেকে জীর্ণ হয়ে যাওয়া খাতাগুলো থেকে বহু কষ্টে পাঠোদ্ধার করে ২০১২ সালে গ্রন্থাকারে আমাদের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হন। যে বই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর নিজের জবানিতেই আমাদের কাছে অনেক বেশি সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছে। পৃথিবীর ১৭টি ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছে।

বইটিতে শেখ মুজিব ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত নিজের জীবনের ঘটনা লিখেছেন। সেখানে তাঁর জীবনে দেখা নানা বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। বইটি লেখার প্রেক্ষাপট, তাঁর বংশপরিচয়, জন্ম, শৈশব-কৈশোর, স্কুল-কলেজের শিক্ষাজীবন, রাজনৈতিক জীবন, সেসময়ের সামাজিক অবস্থা, দুর্ভিক্ষ, কলকাতা-বিহারের দাঙ্গা ও দেশভাগসহ ইত্যাদি নানা বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা যায় বইটি থেকে।

 

পাশাপাশি তাঁর চীন, ভারত, পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণও বইটিতে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। বঙ্গবন্ধুর এ বইটি এমন একটি বই যা যে কোনো পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে বাধ্য। এতে বঙ্গবন্ধুর বংশপরিচয় সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারি। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর অসাধারণ স্মৃতিশক্তির পরিচয় দিয়েছেন। বইটিতে তিনি তাঁর বংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন।

বইটির শুরুতে তিনি উল্লেখ করেছেন, শেখ বোরহানউদ্দিন এই শেখ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। শুরুর দিকে শেখ বংশ বেশ সম্পদশালী ছিল। এর প্রমাণস্বরূপ বোরহানউদ্দিনের সেই মুঘল আমলে ইটের বেশ সুন্দর কয়েকটি দালান নির্মাণ করার কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু সেগুলোকে অবশ্য জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থায় দেখেছেন তাও বলেছেন। ধীরে ধীরে তাদের সম্পত্তির পরিমাণ কমতে থাকে। বইতে বঙ্গবন্ধু তাঁরই বংশের কয়েকজন এবং তাদের নিয়ে কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।

উল্লেখ করেছেন বেগম ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথা। মজার ব্যাপার হলো, বইয়ের তথ্যানুযায়ী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যখন শেখ ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে হয় তখন তাঁর বয়স মাত্র বারো-তেরো বছর, আর ফজিলাতুন্নেসার তিন বছর। বইটির ৭ম পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু মজা করে বলেছেন, “আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে।” এভাবেই অত্যন্ত সহজ ভাষা কিন্তু বিভিন্ন মজার ঘটনার মাধ্যমে নিজের জন্ম ও বংশপরিচয়ের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেছেন বঙ্গবন্ধু।

তাঁর বর্ণনা থেকে আমরা এক বিচিত্র শিক্ষাজীবনের কথা জানতে পারি। বইটি থেকে আমরা জানতে পারি, সাত বছর বয়সে তিনি ভর্তি হন তাঁরই ছোট দাদার প্রতিষ্ঠিত একটি মিডল ইংলিশ স্কুলে, যার নাম ‘টুঙ্গিপাড়া ডিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়’। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সেখানে পড়ার পর চতুর্থ শ্রেণিতে গিয়ে ভর্তি হন ‘গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে’। ১৯৩৪ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। ফলে তাঁর হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে, এসময় তাঁর লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে।

তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান কলকাতার অনেক বড় বড় ডাক্তারকে দেখিয়েছিলেন এবং সেখানেই তাঁর চিকিৎসা হতে থাকে। দুই বছর কেটে যায় ওভাবেই। কিন্তু একটা বিপদ যেতে না যেতেই আবার ১৯৩৬ সালে গ্লুকোমা রোগের জন্য তাঁর চোখ হঠাৎ খারাপ হয়ে পড়ে। এসময় তাঁর বাবা গোপালগঞ্জ থেকে মাদারীপুরে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন, তাই শেখ মুজিবকে সপ্তম শ্রেণিতে আবার ভর্তি করা হয় মাদারীপুর হাই স্কুলে। ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসার জন্য বাবা তাঁকে আবার কলাকাতায় নিয়ে যান। কলকাতার ডাক্তার টি. আহমেদ তাঁকে দেখেন। তিনি বলেন চোখ অপারেশন করতে হবে।

এতে শেখ মুজিব বেশ ভয় পেয়ে যান, পালানোরও চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। চোখ অপারেশন করা হয়। তিনি আবার ভালো হয়ে যান। কিন্তু ডাক্তার বলেন লেখাপড়া বন্ধ রাখতে হবে এবং চশমা পরতে হবে। তাই সেই ১৯৩৬ সাল থেকেই আজীবন চশমা পরতেন বঙ্গবন্ধু, যা তাঁর ব্যক্তিত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছিল।

এরপর আবার মাদারীপুরে ফিরে যান মুজিব। কিন্তু ততদিনে তাঁর সহপাঠীরা তাঁকে ছাড়িয়ে উপরের ক্লাসে উঠে গেছে। তাই তিনি আর মাদারীপুর হাই স্কুলে যাননি। তাঁর বাবা তাঁকে ১৯৩৭ সালে ভর্তি করে দেন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে। এরপর প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত সেখানেই পড়েন তিনি। সত্যিই এক ঘটনাবহুল শিক্ষাজীবনের অধিকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইতে তাঁর শিক্ষাজীবন সম্পর্কে যে বর্ণনা আমরা পাই তা সেটাই প্রমাণ করে।

বইটিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিস্তারিত ফুটিয়ে তুলেছেন অসাধারণভাবে। তিনি বর্ণনা করেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু মিশন স্কুলে পড়াকালেই। এসময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্য পান। হোসেন সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে যখন সোহরাওয়ার্দী মিশন স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন। বইটির প্রায় সবখানেই বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দীর কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর সততা, কর্মদক্ষতা, সুনীতি, উদারতা ও বিচক্ষণতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনকে প্রভাবিত করেছিল অনেকাংশে।

 

শেখ মুজিবের প্রথম জেল জীবনের ঘটনাও এই বইয়ে উঠে এসেছে। সময়টা ছিল ১৯৩৮ সাল। তাঁর এক সহপাঠী ছিলেন আব্দুল মালেক নামে। কোনো একদিন গোপালগঞ্জের খন্দকার শামসুল হুদা এসে জানালেন, মুজিবের সহপাঠী মালেককে ‘হিন্দু মহাসভার’ সভাপতি সুরেন ব্যানার্জীর বাড়িতে তাকে অন্যায়ভাবে মারধর করা হচ্ছে। তাই দ্রুত শেখ মুজিব সুরেন বাবুর বাড়িতে গিয়ে অনুরোধ করেন মালেককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ছাড়া তো দূরে থাক, তাকে উল্টে গালমন্দ করেন সুরেন বাবু। কিশোর মুজিব তার এরকম আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। খবর পাঠিয়ে তাঁর দলের ছেলেদের ডেকে আনেন।

শেখ মুজিবের দুই মামা শেখ সিরাজুল হক ও শেখ জাফর সাদেকও ছুটে যান জনবল নিয়ে। সেখানেই দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল মারামারি শুরু হয়ে যায়। শেখ মুজিব ও তাঁর বন্ধুরা মিলে দরজা ভেঙ্গে নিয়ে আসেন মালেককে। পুরো শহরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। হিন্দু নেতারা থানায় মামলা করেন। খন্দকার শামসুল হক হন আদেশের আসামি। অভিযোগ, মুজিব ছুরি দিয়ে সুরেন বাবুকে হত্যা করতে তার বাড়ি গিয়েছিলেন!

পরদিন মুজিব জানতে পারেন তাঁর দুই মামাকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকেও গ্রেপ্তার করতে চায়, কিন্তু সাহস পাচ্ছে না তাঁর বাবার জন্য। কারণ তাঁর বাবাকে এলাকায় সবাই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। গ্রেপ্তারে দেরি হলে কেউ কেউ তাকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমি পালাব না। পালালে লোকে বলবে যে আমি ভয় পেয়ে পালিয়েছি।”

অনেক ইতস্তত করে পুলিশ শেখ মুজিবের বাসায় গিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেশ করলে বাবা শেখ লুৎফর রহমান বললেন, “ওকে নিয়ে যান।” দারোগা বাবু নরম স্বরে বললেন, “ও বরং খেয়ে-দেয়ে আসুক।” সত্যিই, এবারও নিজের সততার প্রমাণ দেন মুজিব। খেয়ে-দেয়ে হাজিরা দেন তিনি। জেলে মেয়েদের ওয়ার্ডে কোনো মেয়ে আসামি না থাকায় তাকে রাখা হয় মেয়েদের ওয়ার্ডে। সেটি ছিল শেখ মুজিবের প্রথম জেল, তাও আবার বিনা অপরাধে অন্যায়ভাবে। প্রথম জেলে যাওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।

জেল থেকে ফিরে শেখ মুজিবুর রহমান আবার রাজনীতিতে যোগ দেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির ২০৯ নং পৃষ্ঠায় একটি ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি। ঘটনাটি হলো: একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।

আমি আর রেণু দুজনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, আমি তো তোমারও আব্বা। কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন ও আর সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বই থেকে জানা যায় যে শেখ মুজিব প্রথমে পাকিস্তান হবার পক্ষেই ছিলেন। কারণ সেই সময়ের হিন্দু সমাজের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের জন্য মুসলমানরা টিকতে পারছিল না। কিন্তু পাকিস্তান হবার পর যখন বাংলা ভাষার উপর আঘাত আসল, তখন তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। মাত্র বছরখানেকের মধ্যেই পাকিস্তান সৃষ্টির স্বপ্নভঙ্গের কারণ ঘটে। তখন থেকেই পাকিস্তানের নানা অন্যায়-অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে শেখ মুজিব সোচ্চার হতে থাকেন।

আসলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের এমন এক চরিত্র যিনি ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির মতো নিজের জীবনটাকেও অসমাপ্ত রেখে গেছেন। এ অসমাপ্ত জীবন কত-ই না ঘটনাবহুল! বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সম্পূর্ণ প্রতিফলন এ বইটি। আর এ আদর্শে নিজের জীবন গড়ে তুলতে হবে বর্তমান প্রজন্মের প্রতিটি শিশুকে।সত্যি কথা বলতে কী এই বইটা আমি এখনও পড়লে আমার মধ্যে জানার স্পৃহা আরো অনেক বেড়ে যায়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার এক অসামান্য পাঠ রয়েছে বইটিতে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদী চেতনার সঙ্গে বইটি আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়।

 আমাদেরও তাঁর মতো প্রতিবাদী হতে হবে, অন্যায়ের সঙ্গে কখনোই আপোস করা যাবে না।

 

 

=======================================

লিখেছেন:

ইমাম  সাদ আহমেদ

ইন্সট্রাক্টর

ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

 

সুখী হতে গেলে যেটির প্রয়োজন নেই

সুখী হতে গেলে যেটির প্রয়োজন নেই

সুখী হতে চায় না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া মুশকিল । প্রত্যেকে যে যে অবস্থানে আছে সেই অবস্থান থেকে সব সময় উপরে উঠতে চায় । এই উপরে উঠতে চাওয়ার কারণ টি কি?

আমি যদি আপনাকে এই প্রশ্নটি করি তাহলে আপনি কি উত্তর দিবেন? নিশ্চয়ই বলবেন, ভালো থাকার জন্য, সুখে থাকার জন্য বা শান্তিতে থাকার জন্য । এখন প্রশ্ন হলো ভালো থাকা, সুখে থাকা কিংবা শান্তিতে থাকা যেটাই বলেন না কেন? এটির জন্য কি দরকার? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে টাকা পয়সা, বাড়ি, গাড়ি, ক্ষমতা ইত্যাদি অনেক কিছু সামনে চলে আসে । আপনি কি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন, বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা পাওয়ার থাকলেই আপনি সুখে থাকবেন? তাই যদি হতো তাহলে খবরের কাগজে বের হতো না ধনীর দুলালী ভালোবাসার টানে রিকশাওয়ালার ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে । এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে সেগুলো বলে শেষ করা যাবে না, যে টাকা পয়সা থাকলে মানুষ সুখী হতে পারে । এখান থেকে আমরা বুঝলাম যে আসলে টাকা পয়সা ধন দৌলত এগুলো মানুষকে সুখী করতে পারে না ।

আপনার যখন অনেক টাকা হবে তখন আপনি আরো টাকার পিছনে ছুটবেন, সাধারণ মানুষ যেখানে তিন বেলা খায়, আপনি টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে দুই বেলা খাবার সময় পাবেন না কারণ তখন আপনার দরকার আরো টাকা, ক্ষমতাবান ব্যক্তি চেয়ারম্যান থেকে এমপি হতে চাইবে, এমপি হতে পারলে মন্ত্রী হতে চাইবে, মন্ত্রী হতে পারলে প্রধানমন্ত্রী হতে চাই, মানুষের এই চাওয়ার কোন শেষ নেই, এর পিছনে অনেক গল্প আমরা ইউটিউব গুগোল এ সার্চ করলে পেয়ে যাব যারা মোটিভেশনাল স্পিকার তাদের কাছ থেকে । আপনি এখনো কনফিউশন তাইতো, তাহলে প্রকৃত সুখ কিসে?

প্রকৃত সুখ কিসে আরেকটু আলোচনা করলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন । আমি এখানে কয়েকটি পয়েন্ট একটু উল্লেখ করতে চাচ্ছি:

1. অফিসের বস কল দিয়ে বলল কোথায় আপনি এই মুহূর্তে আমার সঙ্গে দেখা করেন ।
2. বন্ধু, পরীক্ষা নাকি আর এক মাস বাকি আছে ।
3. আজকে গণিত পরীক্ষা টা খুব খারাপ হয়ে গেল ।
4. আপনি মনে হয় এবার নির্বাচনে আর জয়ী হতে পারবেন না ।
5. বন্ধু, শুনলাম তোমার প্রেমিকার নাকি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ।

উপরের পাঁচটি বাক্যের মত হাজার হাজার বাক্য আমাদের জীবনে শুনতে হয় । উপরের যে পাঁচটি বাক্য আমি বলেছি, এই পাঁচটি বাক্যের মধ্যে একটি কমন মিল আছে । কি ভেবে পেলেন? অনেকে ইতিমধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছেন, আবার অনেকে এখনো চিন্তাভাবনা করছেন ।

এই পাঁচটি বাক্যের মধ্যে একটি মিল, সেটি হচ্ছে যে কেউ এই পাঁচটি বাক্যের যেকোনো একটি যখন শুনবে তখনই তার ভিতর এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়, এই অস্থিরতা যখন শুরু হয় তখন তার খেতে ভালো লাগেনা, ঘুমাতে ভালো লাগে না, টিভি দেখতে ভালো লাগে না, গান শুনতে ভালো লাগে না, ঘুরতে যেতে ভালো লাগে না, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালো লাগে না, কোন কাজে মন বসে না, আর এইগুলো যখন কোন মানুষের মধ্যে বিরাজ করে, তখন আমরা তাকে বলি লোকটি টেনশনে আছে।

 

 

জি হ্যাঁ, আজকে আমার আলোচনার মূল হচ্ছে টেনশন ।

আমরা সব কিছু অর্জন করতে চাই সুখে থাকার জন্য, কিন্তু এই একটা জিনিস যে যত কম অর্জন করবে সে ততো সুখে থাকবে ।
বুঝতে পারলেন না? টেনশন যার যত বেশি কম সে ততো বেশি সুখী । আমার মতে টাকা পয়সা ধন দৌলত বাড়ি গাড়ি এগুলোতে কোন মানুষ সুখী হতে পারে না । প্রকৃত সুখী সেই ব্যক্তি যার কোন টেনশন নেই । গণিতে সবকিছু শুরু হয় শূন্য থেকে, শূন্য এমন একটি সংখ্যা যে টি সংখ্যার বাম পাশে বসলে সংখ্যার মানের কোন পরিবর্তন হয় না, কিন্তু সংখ্যার ডান পাশে বসলে ঐ সংখ্যার মান দশগুণ বেড়ে যায়, এই শুন্য যদি একা একা থাকে তাহলে তার কোন মূল্য নেই । শুন্য জিনিসটা কেউই অর্জন করতে চায় না । টাকা শুন্য, গাড়ি নেই মানে শুন্য, ছেলে মেয়ে নেই মানে শুন্য, মান সম্মান নেই মানে শুন্য, পাওয়ার নেই মানে শুন্য, এগুলো কোন মানুষ কখনোই আশা করে না । আর এই শুন্য যখন আপনার জীবনে টেনশন এর জায়গাটি দখল করে নিবে, তাই ডানে হোক, বামে হোক আপনি হবেন এই পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ।
শুধুমাত্র একটি জিনিস শূন্যতে থাকলে আপনার মত সুখী ব্যক্তি পৃথিবীতে আর একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না । আমাদের সকল অশান্তির মূল হচ্ছে টেনশন | টেনশন যার যত কম সেই ব্যক্তি ততবেশি সুখী, টেনশন যার যত কম সেই ব্যক্তি তত বেশি কর্মক্ষম, টেনশন যার যত কম সেই ব্যক্তি ততবেশি শক্তিশালী, টেনশন কম মানে মাথা ঠান্ডা, আর ঠান্ডা মাথার মানুষ পৃথিবীর সবকিছু জয় করতে পারে সুতরাং আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি মানুষের সুখে থাকার মূলমন্ত্র হচ্ছে টেনশন কে শুন্য তে রাখার চেষ্টা করা । আর এই টেনশন দূর করে কিভাবে সুখে থাকা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে আর একদিন বলব ।

লেখক,
এম. এম. শাহানুজ্জামান
লেকচারার,
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

লক্ষ্য হোক কারিগরি শিক্ষা

লক্ষ্য হোক কারিগরি শিক্ষা

কারিগরি শিক্ষা

বাংলাদেশে সাধারণ শিক্ষার হার, কারিগরি শিক্ষার হারের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্র-ছাত্রীর গার্জিয়ানরা মনে করেন সাধারণ শিক্ষায় সঠিক শিক্ষা কারন সমাজের প্রতিনিধিত্ব করা থেকে শুরু করে সমাজ সংস্করণে  সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতরাই  প্রতিনিধিত্ব করছে। যার ফলশ্রুতিতে সমাজের বেশিরভাগ গার্জিয়ান মনে করেন তার সন্তানকে সাধারণ শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত করলে, সমাজের তথা রাষ্ট্রের যে কোন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।

যার ফলশ্রুতিতে মা-বাবারা তার সন্তানকে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন এবং তার সন্তানের জন্য প্রচুর অর্থ সম্পদ ব্যয় করে সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রচেষ্টা করে। কিন্তু বাস্তবতা এরকম যে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত  আমাদের বাংলাদেশ অনেক কম। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার যে পথ পেরোনোর প্রচেষ্টায়, সন্তানরা এগিয়ে যায় তা মধ্যবর্তী অবস্থায় গিয়ে থেমে যায়। অধিকাংশ সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার ছাত্র-ছাত্রী সার্টিফিকেট নিয়ে একটি চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়ে থাকে।

 

 

অথচ,পলিটেকনিক শিক্ষায়  শিক্ষার্থীরা বেকার থাকে না। কারণ তারা জীবনের লক্ষ্যই নির্ধারণ করে কর্মের মাধ্যমে। যা  তাকে সমাজ তথা রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করে । পলিটেকনিক শিক্ষা শিক্ষার্থীকে প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে থাকে যার বেশিরভাগই হাতে কলমে শিক্ষা হয়ে থাকে। কারিগরি জ্ঞান থাকার কারণে খুব সহজেই একজন শিক্ষার্থী সমাজের যেকোনো  কাজের সাথে নিজেকে দ্রুত খাপ-খইএ নিতে পারো । বাংলাদেশের পেক্ষাপটে পলিটেকনিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

পলিটেকনিক শিক্ষা হোক লক্ষ্য, কারন যে শিক্ষা সমাজকে পরিবর্তন করে দিতে পারে তাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা সেক্টরেই পলিটেকনিক শিক্ষা হোক লক্ষ্য, রাষ্ট্রের গঠনের জন্য কারিগরি শিক্ষা তথা পলিটেকনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবকরাই পারে তার পরিবর্তন আনায়ন করতে। আজকাল কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট বিহীন জীবন চলাই দুষ্কর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কম্পিউটার টেকনোলজি নামে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে। এছাড়াও ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি, টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজি , সিভিল টেকনোলজি সহ অন্যান্য আরো অনেক যুগোপযোগী টেকনোলজি। আসলে পলিটেকনিক শিক্ষা বলতে আমরা কি বুঝি।

পলিটেকনিক শিক্ষা কী?

একটি পলিটেকনিক শিক্ষা হাতে কলমের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গতিশীল এবং প্রগতিশীল শিক্ষার পরিবেশ দিয়ে থাকে। আমরা উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন পলিটেকনিক এর নাম শুনেছি।

সিঙ্গাপুরে পাঁচটি পলিটেকনিক রয়েছে, যেমন, নানিয়াং পলিটেকনিক (এনওয়াইপি), এনজি অ্যান পলিটেকনিক (এনপি), রিপাবলিক পলিটেকনিক (আরপি), সিঙ্গাপুর পলিটেকনিক (এসপি) এবং টেমেসেক পলিটেকনিক (টিপি)। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের কোর্স সরবরাহ করে যা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার পরিপূর্ণ করার দিকে পরিচালিত করে পাশাপাশি আরও পড়াশোনার জন্য তাদের প্রস্তুত করে। লক্ষ করলে দেখা যায় যে সিঙ্গাপুরের জিডিপি বাংলাদেশের জিডিপির চেয়ে অনেক বেশি তাই তারা একটি উন্নত দেশ। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে খুব দ্রুত তারা উন্নতি লাভ করেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ কারিগরি তথা পলিটেকনিক শিক্ষা দুরুতো গ্রহণ না করার ফলে সিঙ্গাপুরের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

 

অনুশীলন-ভিত্তিক পড়াশোনাঃ

পলিটেকনিক শিক্ষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য অনুশীলন ভিত্তিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া। শিল্প অংশীদারদের সাথে কাজের সংযুক্তি পাঠ্যক্রমের অংশ এবং নির্বাচিত কোর্সের জন্য ছয় সপ্তাহ থেকে ছয় মাস বা তার বেশি সময়ের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। এই কাজের সংযুক্তিগুলি  কাজের উপর মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এবং শিল্প বিশেষজ্ঞদের সাথে কাজ করার সুযোগগুলি সরবরাহ করতে সক্ষম করবে।

একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি, পলিটেকনিকগুলি কিছু গুরুত্বপূর্ণ জীবন দক্ষতা অর্জনের উপর জোর দেয়। এগুলি যোগাযোগ ও উপস্থাপনের পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। এগুলি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস এবং সমালোচনামূলক অনুষদের বিকাশের উদ্দেশ্যে সাহায্য করে যা  সমাজে কার্যকর অংশগ্রহণকারী হতে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীরা অরিজিনাল ও ক্রিটিভিটি চিন্তাভাবনা করতে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করতে শিখবে। যা দ্রুত সমাজ গঠন তথা রাষ্ট্র গঠনে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে।

অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা পলিটেকনিক শিক্ষা পরিচালিত হয়ে থাকে বিধায়। খুব সহজে হাতে কলমে শিক্ষা নেওয়া যায়। অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী প্রতিনিয়তই প্রাক্টিক্যাল ক্লাস এর প্রতি অত্যন্ত যত্নবান এবং গুরুত্ব দিয়ে থাকন। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক অংশটি কম থাকে। প্র্যাকটিক্যাল অংশটি বেশি থাকায় গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার থেকে একটু আলাদা হয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশের পেক্ষাপটে পলিটেকনিক শিক্ষায় হোক জাতীয় লক্ষ্য।

 

লেখক, 

মুহাম্মাদ সহিদুল ইসলাম

ইন্সট্রাক্টর, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

লক্ষ্য ছাড়া দক্ষতা বিকাশ!

লক্ষ্য ছাড়া দক্ষতা বিকাশ!

আমরা সবাই নিজেদের দক্ষতা বিকাশ করতে চাই। সারাদিন ফেসবুক, ইউটিউভ বা গুগল ঘেটে আমরা অনুপ্রানিত হয়ে সীদ্ধান্ত নেই যে অনেক হয়েছে এবার দক্ষতা বিকাশের পালা। শুরু হয় ভিডিও দেখা। আর মাশাআল্লাহ ফেসবুক, ইউটিউভে ভিডিওর অভাব নেই। কখনো এই ভিডিও কখনো বা সেই ভিডিও। আবার অনলাইন লার্নিং পোর্টাল তো আছেই। আমি একটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে সার্ভে করেছিলাম যেখানে আমি কয়েকটি প্রশ্ন রেখেছিলাম তরুনদের কাছেঃ

  1. আপনি কোর্স শুরু করেছেন কিন্তু শেষ করেন নি? (হ্যা অথবা না)
  2. আপনি কোর্স শুরু করেছেন কোন লক্ষ্য নির্ধারন না করেই? (হ্যা অথবা না)
  3. আপনি কোর্স সম্পন্ন করেছেন কিন্তু কোন রুপান্তর হয়নি? (হ্যা অথবা না)

অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে “না”র সংখ্যা বেশী আসছে কেন? লক্ষ্য ছাড়া কোন কিছুই করা মানে হলো কোন কাজে না আসা। উদাহরনস্বরুপ বলা যায়। আমি ইংরেজী ভাষা শিখতে ও কাজে লাগাতে চাই। এখন আপনাকে SMART প্ল্যান করতে হবে।

তাহলে আসুন আমরা এই লক্ষ্যটাকে ভেঙে ফেলি।

  • আমার লক্ষ্যঃ আমি ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে চাই
  • কেনঃ আমি যেহেতু মার্কেটিংয়ে কাজ করবো তাই ইংরেজী ভাষা আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
  • কারনঃ অধিকাংশ সময় আমাকে বাইরের দেশের সাথে কথা বলতে হয়, বিভিন্ন জায়গায় প্রেজেন্টেশন দিতে হয় এবং সেখানে ইংরেজী ভাষাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়।
  • কতদিন সময় দেবেন নিজেকে: এটি তিন মাসের (৯০ দিন) জন্য নিজেকে রুপান্তরের একটি কার্যক্রম হবে।
  • কি কি দক্ষতা অর্জন করতে চান?: ইংরেজীতে কথা বলতে চাই, পড়তে চাই, শুনে বুঝতে চাই

আমার ইংরেজী ভাষা শিক্ষার এই লক্ষ্যকে কিভাবে ভাগ করবো?

 পড়ার ক্ষমতা বাড়ানো (টার্গেট এক মাস):

  • আমি প্রতিদিন এক ঘন্টা করে ৩০ দিন বিভিন্ন ইংরেজী সংবাদপত্র/বই/নিবন্ধ/ব্লগ পড়ব।
  • আমি অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নার্স অভিধান থেকে নতুন শব্দের অর্থ খুঁজে বের করব এবং সেগুলি একটি ডায়েরিতে নোট করব।

শ্রবণ ক্ষমতা বাড়ানো (টার্গেট এক মাস)

  • আমি প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে ৩০ দিন বিবিসি / সিএনএন / অন্যান্য ইংরেজি নিউজ চ্যানেল ইত্যাদি চোখ, কান এবং মন দিয়ে শুনব।
  • আমি গুগল / ইউটিউব ব্যবহার করে নতুন শব্দের উচ্চারণ খুঁজে বের করব।

স্পিকিং সক্ষমতা বাড়ানো (টার্গেট এক মাস)

  • যতটুকু সম্ভব আমি ইংরেজিতে কথা বলবো; এবং পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের সাথে কথা বলার সময় যতটা পারি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করব। লক্ষ্য তিন মাস অনুশীলনটি চর্চা করা।

নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি এবং মেন্টরশিপ সন্ধান করা (টার্গেট তিন মাস)

  • আমি অনুশীলনের জন্য একটি ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাবে যোগদান করব।
  • আমি পরামর্শের জন্য বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শদাতাদের অনুরোধ করব।
  • আমি দরকার হলে কোন সনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এক মাসব্যাপী ইংরেজী ভাষার উপর একটি কোর্স সম্পূর্ন করব (যদি প্রয়োজন হয়)
  • আমি GoEdu.ac, লিংকডইন, গুগল গ্যারেজ ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মগুলি ভিজিট করে অন্তত ১০ টি অনলাইন কোর্সে যোগদান এবং সম্পূর্ণ করব
আপনাদের জন্য বিশেষ এই ছকটি তৈরি করেছি এবং এটি তৈরি করতে আমাকে বিশেষভাবে পরামর্শ  দিয়েছেন বাংলাদেশের অত্যন্ত দক্ষতা সম্পন্ন প্রশিক্ষক এবং আমার খুব প্রিয় জীশু তরফদার ভাই

শেষ কথা

উপরের যে পরিকল্পনাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম সেটা কিন্তু শুধুমাত্র নিজেকে রুপান্তরের নিমিত্তে করা হয়েছে। লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা ছাড়া হাজার হাজার কোর্স করেও রুপান্তরের দেখা পাওয়া যাবে না। আমি যে ছকটি আকবার চেষ্টা করেছি সেটি আপনারা আপনাদের মতো করে আকবার চেষ্টা করুন। তবে মনে রাখবেন জ্ঞান, দক্ষতা এবং আচরন তখনই প্রয়োজনে আসবে যদি তা আপনার লক্ষ্যে সাথে সামঞ্জস্য হয়।

লেখকঃ 

কে এম হাসান রিপন

নির্বাহী পরিচালক

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

কম্পিউটার টেকনোলজি কি ডিপ্লোমা-ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য সঠিক পছন্দ

কম্পিউটার টেকনোলজি কি ডিপ্লোমা-ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য সঠিক পছন্দ

তথ্য প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে, যা গ্লোবাল ভিলজে এ পরিনত করেছে । আধুনিক এই যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমাদের জীবন যাপনকে করে তুলছে আরো সহজ। এই পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে এগিয়ে যাবার প্রত্যয় নিয়ে এল কম্পিউটার প্রযুক্তি। প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে নিজেকে আত্বনির্ভরশীল ব্যক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে হলে কম্পিউটার টেকনোলজি পড়ার বিকল্প কিছু হতে পারে না।

কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনেক রাস্তা খোলা। এ বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বহুমুখী কাজ করতে পারে। কেউ হন প্রোগ্রামার আবার কেউবা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এ ছাড়াও  সৃজনশীল দক্ষতা থাকলে গ্রাফিক্স বা ওয়েব ডিজাইনারও হতে পারেন। পাশাপাশি আছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুযোগ। ঘরে বসেই বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের চর্চা করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কাজ করে দিতে পারেন। নিজেই আরও মানুষের কর্মসংস্থান করে দিতে পারেন।

আর অফিস-আদালতের চাকরি তো আছেই। প্রতিটি ব্যাংক, করপোরেট হাউস, গণমাধ্যমসহ প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি অফিসেই প্রয়োজন হয় কম্পিউটারে দক্ষ জনবলের।

একমাত্র কম্পিউটার টেকনোলজিই পারে বহুমুখি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কম্পিউটার টেকনোলজি অপরিহার্য। ২০১১ সালে হতে প্রতিটি কোর্সে কম্পিউটার বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। সমস্ত- সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহে ই-গভর্নেস চালু করতে যাচ্ছে, সেহেতু অনুমান করা যাচ্ছে যে, কম্পিউটার টেকনোলজি কর্মসংস্থানের ব্যাপ্তি কত বিশাল হতে পারে। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি আপনাকে সামিল করবে এই কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদদের প্রথম সারিতে। এই কম্পিউটার ডিপ্লোমা ডিগ্রী হবে অবারিত কম্পিউটার সম্পর্কীত কর্ম ক্ষেত্রে প্রবেশের আপনার প্রথম চাবিকাঠি।

এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার তথ্য প্রযুক্তিতে নির্ভরশীলতা বাড়ানোর জন্য তৈরি করছে হাইটেক পার্ক। দেশেই তৈরি হবে আমাদের নিত্যব্যবহার্য প্রযুক্তিপণ্য।  এদেশে নির্মিত সফটওয়্যার দিয়েই চলবে আমাদের ব্যাংক, বীমা, কলকারখানা, অফিস-আদালতসহ অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান এই স্বপ্ন নিয়েই হাইটেক পার্ক ধারনার যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ১৯৯৯ সালে। যা বর্তমানে দৃশ্যমান। চলমান প্রকল্পগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক সিলেট, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, রাজশাহী এছাড়াও আরো অনেকগুলো হাই-টেক পার্ক প্রস্তাবিত। এসব হাই-টেক পার্কগুলো পুরোদমে চালু হলে আরো বিশাল একটি ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। সুতরাং ডিপ্লোমা-ইন- কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ই হবে সঠিক পছন্দ বর্তমান প্রেক্ষাপটে।

লেখক:

জহির আহমেদ চৌধুরী

লেকচারার, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

 

 

আছি জ্ঞানের ঋণে, শোধ করিবো কত দিনে?

আছি জ্ঞানের ঋণে, শোধ করিবো কত দিনে?

গরম ধূমায়িত এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে দিতে সকালের ঝুম বৃষ্টির ফোটা গুলো দেখছিলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে। প্রতিটি ফোটা কাছের পুকুরটিতে হুমরি খেয়ে পরছিলো। প্রকৃতির এই দৃশ্য দেখে আমি যখন অনেকটা আত্বিক কবি সেই মুহুর্তে পাশে ফ্লাটের আনোয়ার ভাইকে দেখলাম একটা ছাতা মাথায় দিয়ে হাটু পর্যন্ত প্যান্ট উচিয়ে অনেকটা ব্যাস্ততার সাথেই বের হলেন। স্বাভাবিকতা মেনেই বললাম এতো সকাল সকাল কোথায় চললেন? আনোয়ার ভাই এক গাল হাসি টেনে বললো “ ভাই আজ ব্যাংকের লোনের টাকার কিস্তি দেয়ার শেষ তারিখ, লম্বা লাইনের চক্করে না পরতেই এতো সকালে বের হওয়ায় এই আয়োজন।“ উনার ব্যস্ততা দেখে আর কথা বাড়ালাম না।

টেবিলের উপর রেখে দেয়া বইটি নিয়ে ক্লাসের পড়া এগিয়ে নিতে পড়তে শুরু করলাম। বেশ কয়েকটা অনুচ্ছেদ পড়ার পর হঠাত আনোয়ার ভাইয়ের সকালের কথাটি মনে পরলো। একজন সুস্থ মানুষ সর্বোদা সচেষ্ট থাকে তার পাওনাদারের সম্পদ যথা সময়ে ফেরত দিতে। আনোয়ার ভাইও সেরকমই একজন মানুষ বিধায় উনি সময় মত ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্য সকাল সকাল বৃষ্টির মধ্যেও বের হয়েছেন। কিন্তু আমার মতে একজন মানুষকি সুধুই অর্থিক ভাবেই ঋণী হলে তা ফেরত দিতে এতো সচেষ্ট হবে নাকি আরো কিছুর জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত? আমরা কি সবাই প্রত্যেকে ঋণ মুক্ত নাকি ঋণী? একবার আমার এক বন্ধু খুব গর্ব করেই বলেছিলো সে এবং তার পরিবার কোন দিন কখনো কারো নিকট হতে ধার নেয়না অর্থাৎ ঋণ করেনা। এটা তাদের বংশ গত শিক্ষা সে বলছিলো। যাইহোক তার সেই দাম্ভিকতা সেদিন আমার মত অনেকেই হজম করে শুনছিলাম। কিন্তু আজ মনের মাঝেই বলে উঠছে আমরা সবাই ঋণী। এই ঋণ আমরা কেউ শোধ করতে সক্ষম হয়েছি আবার কেউ এই ঋণ শোধের চেষ্টায় আছি আবার কেউ এই ঋণ শোধের পর অন্যদের ঋণ দিচ্ছি। কিন্তু তবুও এই ঋণ কোন দিনই শোধ করা সম্ভব না। কিসের ঋণ বুঝেননি তাইতো? মনের গভির থেকে একবার ভাবুন তো আপনি আমি জ্ঞানের ঋণ করছি কি না? সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সামাজের প্রতি ঋণ অনেক বড় একটা বিষয় আর এই বড় বিষয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ হলো জ্ঞাণের প্রতি ঋণ। জ্ঞানের প্রতি ঋণ শুনতে কেমন জানি লাগছে তাইনা? অনেকেই হয়তো বলছেন এ কেমন ঋণ যার ভিত্তি এখনো বুঝলাম না। আচ্ছা আমাকে বিষয় টা পরিষ্কার করতে দেন।

এইযে, আপনি আমি ক্লাসের বই বলুন আর গল্পের বই বলুন কিংবা মাল্টিমিডিয়ার তথ্য নির্ভর যেকোন কিছুই বলুন সবই কিন্তু কোন না কোন ব্যাক্তি দ্বারা লিখা বা তৈরিকৃত। এমনকি এই যে আমার পোস্ট টি পড়ছেন এটাও। আপনি জানেন কি এগুলো ধার করা জ্ঞান আপনার আমার জন্য? সেই সব লেখক, উদ্ভাবক, কারিগর দিনের পর দিন জ্ঞান সাধণা করে লিখে গেছেন এক একটি তথ্যবহুল বই। এই বই এর শিক্ষা গুলো তাদের পরিশ্রমের জ্ঞানের। যার মূল্য আপনার আমার বই এর শুরুতে লিখা টাকার অংকে করা নেহাত বোকামি মুর্খতা ছাড়া আর কিছুই না। আমরা তাদের জ্ঞান ধার করে পড়ছি বছরের পর বছর। শুধুই যে ক্লাসের বই তাই নয়, বিভিন্ন জ্ঞান বিজ্ঞান, গল্প উপন্যাস, কবিতা প্রবন্ধ ইত্যাদি সব কিছুই। এখন কেউ হয়তো বলবেন তাহলে কি এগুলো জ্ঞান ধার করা আমাদের জন্য উচিত নয়? আমরা কেন জ্ঞান ধার করবো? ধার করা জ্ঞান আমরা আর নিবোনা ইত্যাদি ইত্যাদি। এহেম! এহেম! ভাই আমরা সামাজিক জীব। এখানে একজন অপরজনের উপর নির্ভরশিল এবং দায়বধ্য। ওই যে বললাম সামাজিক দায়বদ্ধতা। আপনি যত বড়ই ব্যাক্তি হোন না কেন, আপনাকে সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে থেকে একে অপরের সাহায্যে জীবন পরিচালিত করতেই হবে। আর এগুলো সাহায্য নেয়া আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। জীবনের শুরুতে আমরা যেমন বাবা মা এর উপর নির্ভর থাকি খাওয়া, চলা সব কিছুতে আর এর পরে ধাপে-ধাপে শিখে নিই সব কিছু তেমনি রক্ত মাংশের এক প্রানী থেকে মানুষে পরিনত হতে শিক্ষা জীবনের শুরুতে এই মহান লেখক উদ্ভাবক গণের বিতরন করা জ্ঞান ধার/ ঋণ স্বরুপ আমরা গ্রহণ করি। সময়ের সাথে সাথে এই ঋণ এর পরিমানও বেড়েই চলে। এক সময় আপাত দৃষ্টিতে প্রাতিষ্ঠানিক এই শিক্ষা শেষ করে আমরা প্রবেশ করি কর্ম ব্যাস্ত জীবনে। কর্ম জীবন টা এমন এক জীবন যেখানে আপনার সেই সব ধার বা ঋণ করা জ্ঞান কে বাস্তবতায় ইনভেস্ট করতে হয় জীবনকে পরিচালিত করতে। সঠিক ভাবে জ্ঞানকে ইনভেস্ট করতে পারলে আপনি লাভবান হবেন যা আপনার ঋণ গ্রহণের সফলতা হিসেবে ধরা হবে এবং সেই সাথে আপনার এই সফলতার ফল গুলোকে অনেক টা ধার করা জ্ঞান গুলোর শোধ স্বরুপ ধরা যেতেই পারে। কিন্তু শুধু একটা জ্ঞান কি শোধ করলেই হবে? জীবনে কত কত জ্ঞান আপনি ধার করেছেন তার হিসেব নেই।

এবার আরেকটি মজার বিষয়ে আসি। আপনি জ্ঞান ধার করেছিলেন আর তা ইনভেস্ট করে সফলতা পেয়ে মোটামোটি ফেরতও দিলেন। সাধারণত আমরা সুস্থ মানুষেরা তখনই অর্থ বা সম্পদ ধার নিয়ে ফেরত দেই যখন সেই ধার করা অর্থ/ সম্পদের বেশি আয় করা হয় আর তা ফেরত দেয়ার পরেও কিছু থাকে যা ভবিষ্যত জীবন চালাতে অবশ্যই লাগবে। তাহলে জ্ঞানের দিক থেকে যদি হিসেব করি বিষয় টা এমন যে আমি জ্ঞান ইনভেস্ট করে সফলতা পেয়ে এমন কিছু হতে পেরেছি যার ফলে আমি মোটামোটি সেই বিষয়ে ধার করা জ্ঞান শোধ করেছি আর বাকি সামনের ভবিষ্যত জীবন এই সফল হওয়ার অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অবশ্যই চলতে হবে। এখন হিসেব করে দেখুন যে, আপনি বা আমি ধার করে জ্ঞান নিয়ে ইনভেস্ট করে সফল হয়ে সেই সফল হওয়ার অর্জিত ফল কে কাজে লাগিয়ে সামনের ভবিষ্যত কাটিয়ে দিলেও একটা জিনিস শূণ্য থেকেই যাচ্ছে। আর তা হচ্ছে সেই পর্যায়ের জ্ঞান যা আমি অন্যকে ধার/ ঋণ দেয়ার কথা যা সেই সকল লেখক উদ্ভাবক গণ করে গেছেন। তারাও জ্ঞান ধার করেছেন, ইনভেস্ট করেছেন, সফলতা পেয়েছেন আর শুধু নিজের ভবিষ্যত চলার মত করেই চলে গেছেন তা নয়। তারা তাদের পরিশ্রম করা অর্জিত জ্ঞান গুলোকে নিজের বাকি জীবন চলার পরেও আরো যে জ্ঞান অর্জন করে গিয়েছেন তা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে গিয়েছেন লিখে বা উদ্ভাবনের মাধ্যমে। অনেকেই তো সফল হয়, আদর্শ স্বরুপ মানুষও হয়ে উঠে কিন্তু কয়জন রয়েছে যারা তাদের সেই অর্জিত জ্ঞান মানব জাতির কাছে ছড়িয়ে দিয়েছেন? জ্ঞান অর্জন আর জ্ঞান দান অনেক পার্থক্য রাখে। জ্ঞান যে কেউ অর্জন করার অধিকার বা ক্ষমতা রাখে কিন্তু জ্ঞান দান করার যোগ্যতা সবার থাকেনা। যে আপনিই একদিন জ্ঞান ধার করে চলেছিলেন সেই আপনিই সবার মাঝে জ্ঞান দান করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন এমন মহৎ হৃদয় কয় জনের হয়? আমরা আজও জ্ঞান ধার করে চলেছি কিংবা কেউ কেউ জ্ঞান ইনভেস্ট করছি আবার এমনও অনেকে আছি যারা জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি কিন্তু জ্ঞান দান করে সামাজিক যে দায়বদ্ধতা তা কয় জনে শোধ করেছি? জানি সামাজিক ঋণ কিংবা জ্ঞানের ঋণ কোন দিনই সম্পুর্ন শোধ সম্ভব নয়, তবুও তো সাধ্যমত যার যত টুকু আছে তা দিয়ে তো জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে পারি একে অন্যকে। আজ আপনার অর্জিত জ্ঞান যদি দান না করেন তাহলে মনে রাখবেন একদিন আপনি মারা যাবেন আর কবর দেয়ার সাথে সাথেই সেই অর্জিত জ্ঞান দান না করায় মাটির সাথে পচে জৈব সার হয়ে যাবে। প্রশ্ন করুন নিজেকে আপনি কতটুকু জ্ঞান অর্জন করলেন আর কত টুকু শোধ করে দান করলেন। তাই তো বলি “ওহে যুবক আছি জ্ঞানের ঋণে, শোধ করিবো কত দিনে?”

 

—————————————-

এস.এম.রাজিব আহম্মেদ

ইন্সট্রাকটর

ডিপার্টমেন্ট অব কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

চিরন্তন ছুটে চলা

চিরন্তন ছুটে চলা

বিয়ে,

পরস্পরের প্রতি কখনো ভালোবাসা, আবার কখনো তা নিতান্ত ছলনা, এরপর পৃথিবীতে আসা।
এরপর শৈশব, কৈশোর, যৌবন এবং সবশেষে বার্ধক্য অবশেষে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া।
এটাই পৃথিবীতে আসা-যাওয়ার গল্প।
কিন্তু রেখে যাওয়া কিছু স্মৃতির চলে নিরন্তন ছুটে চলা।

সেদিন তুমি পৃথিবীকে চিৎকার করে জানিয়েছিলে তোমার জন্মের কথা। হয়তো সবাই সেদিন খুশি ছিলো, কিন্তু তুমি ছিলে
অসহায়। এর পর মা-বাবার আদরে ধীরে ধীরে বড় হওয়া। তোমার বয়স যখন ১ বছর, তখন আধো আধো কথা বলো,
এরপর ২ বা ২ ১/২ বছরে ভালোভাবেই কথা বলতে শিখেছো কিন্তু তখনও ভালোভাবে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। সে সময়
পরিবারের মানুষের হাতে-হাত রেখে হাঁটার চেষ্টা।
বয়স যখন ৪/৫ তখন শুধু হাটঁতেই শেখনি, দৌড়ানোটাও শিখেছো তখন। এরপর শুরু হলো জীবনযুদ্ধ পড়ালেখা। তখন
তুমি প্রাইমারিতে, তখনও তুমি বোঝনি জীবনের মানে, বাবা মায়ের বা শিক্ষকদের শিখানো বুলি তোমার মুখে। তারপর
শুরু হলো সেকেন্ডারি পড়াশোনা। এখন তোমার মস্তিষ্ক কিছুটা বুঝতে পারছে, হচ্ছে কিছু জীবনের পরিবর্তন।

এরপর কলেজ- ভার্সিটির গন্ডি

যেখানে তোমার খোঁজার পরিপূর্ণ সময় জীবনের মানে।

তুমি অর্থ উপার্জন করলে, সংসারি হলে এরপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া। বয়স ৫০/৬০, তখন ভাবছো পরপারের কথা।
এটাই আমাদের জীবন।
কেন পৃথিবীতে আসলে? আর কেনই বা চলে যাওয়া? ভেবেছো কখনো?
ধরো তুমি একটা কাগজ দিয়ে উড়োজাহাজ তৈরি করেছো: কারন সেটি উড়িয়ে তুমি  বিনোদন পাবে অথবা তুমি একটা
হাত-পাঁখা তৈরি করেছো, সেটি তোমাকে গরমে একটু স্বস্তি দেবে। এটাই নিয়ম |
আমরা কিছু  করি, তা থেকে কিছু পাওয়ার আশায়।
তাহলে তুমি একটু অনুভব করো যে তুমিতো এমনি একটা কিছু করো নাই, তবে তুমি যে পৃথিবীতে আসলে তুমিও এমনি
আসো নাই। মহান আল্লাহ তোমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। আর তোমাকেও পৃথিবীতে কিছু করে যেতে হবে, যেন আরেক
জগতে তোমার  স্রষ্টা খুশি হয়। তাই আমাদের এই নিরন্তর পথচলা হোক ভালো কিছু কজের মাধ্যমে, যেন পৃথিবীতে
আমাদের নাম মুছে না যায়।
শুধু ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপ, ম্যসেন্জারে মধ্যে কমিনিউকেশনে আটকে জীবনটাকে যান্ত্রিক না করে বাবা-মা, পরিবার-
পরিজন, প্রিয়জন সকলকে সময় দেই সাধ্যমত আর সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করে হোক আমাদের ছুটে চলা সামনের দিকে।

সবশেষ একজন সফল মানুষের বিশেষ একটা উক্তির মাধ্যমে আমার আজকের লিখার ইতি টানতে চাই,,,– তিনি কনরাড
হিলটন (প্রতিষ্ঠাতা, হিলটন হোটেল চেইন), তিনি বলেছেন-

“সফল মানুষেরা কাজ করে যায়। তারা ভুল করে, ভুল শোধরায় – কিন্তু কখনও হাল ছাড়ে না”
অর্থাৎ তার চলে নিরন্তন ছুটে চলা। ধন্যবাদ।

লেখকঃ

মোঃ আলামিন হোসেন,
লেকচারার, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

 

আমি চিনি কিন্তু তিনি চেনেন না, কথোপকথনে কীভাবে অংশ নেব?

আমি প্রচুর মানুষের সাথে কথা বলি। যারা পরিচিত তাদের সাথে বলি আবার যারা অপরিচিত তাদের সাথে আরো বেশী বলি।  সরাসরি কথা বলি, মোবাইলের মাধ্যমে বরি, ওয়াটসএ্যাপ, বা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারতো আছেই। আমি যেহেতু প্রচুর ভ্রমন করি, দেশের ভেতরে বা দেশের বাইরে সেজন্য ভ্রমনের সময় আমার এই কথোপকথনের কাজটি বেশী হয়। আরো ভালো লাগে যখন রিকশা, সিএসজি, উবারে উঠি তখন চালকের সাথে গল্প করা। অনেক কিছু শেখা যায় যা লিখে বোঝানো যাবে না। যখন কোন কর্পোরেট ডিনারে বা অনুষ্ঠানে যাবার সুযোগ হয় তখন খুঁজে খুঁজে বের করি কাদের সাথে এখনও আমার পরিচয় হয়নি। তাদের কাছে গিয়ে কথোপকথন শুরু করে দেই। কারন প্রতিটি মানুষের একটি করে গল্প আছে যা কথোপকথনের মাধ্যমে জানা যায় এবং সেখান থেকে নতুন নতুন ধারানা তৈরি করা যায়।

মানুষের জীবন পুরোটাই যোগাযোগ নির্ভর। ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্তু আমাদের যোগাযোগ করতে হয়। বিভিন্ন উপায়ে আমরা যোগযোগ রক্ষা করি। আসলে যোগযোগ এমনই একটি বিষয় যা একজনকে সমৃদ্ধ করে তোলে। যোগাযোগের কথা উঠলেই আমরা মনে করি কর্মক্ষেত্রে আমার যোগাযোগ কেমন হবে? অফিসে বা নিজের ব্যবসায় আমি কিভাবে যোগাযোগ করবো? আসলে ব্যাপারটি পুরোপুরি সেটা নয়। যোগাযোগ সর্বত্র। নিজের ব্যক্তি জীবনের উন্নয়নের জন্য, মানসিকতা বিকাশের জন্য, মানুষের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এবং কর্মক্ষেত্রে শীর্ষ পারফরমারের তকমা লাগাবার জন্য বা ব্যবসায় উন্নতি সাধনের জন্য গুনগত যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমের মাঝে  কথোপকথন অত্যন্ত মূল্যবান। মনে রাখতে হবে  কথোপকথন করেক ধরনের মানুষের সাথে সাধারনত হয়ে থাকতে পারে

  • আপনি চেনেন এমন মানুষ
  • আপনি চেনেন না এমন মানুষ

যাদেরকে জানেন বা চেনেন এমন মানুষের সাথেই আমরা  কথোপকথন চালিয়ে যেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। ধরুন আপনি একটি কর্পোরেট ডিনারের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। আপনি আপনার একজন কলিগের সাথে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। আপনারা দুজনই অনুষ্ঠানের এককোনায় দাড়িয়ে আছেন এবং নিজেদের মধ্যেই অফিসের কর্মব্যস্ত দিন নিয়ে আলোচনা করলেন এবং ডিনার শেষ করে বাড়ি ফিরে এলেন। অথবা আপনি একটি কনফারেন্সে অংশগ্রহনের সুযোগ পেলেন এবং আপনার এক বন্ধুর সাথে গেলেন। আপনারা দুজনই বেছে নিলেন একদম কোনায় অবস্থিত দুটি চেয়ার এবং যথারিতী বসে পুরো সেশনে অংশ নিয়ে বাড়ি চলে এলেন।  অথচ আপনার ডান-বামে বা চারপাশে এমন অনেক মানুষ ছিলেন যাদের সাথে আপনি হাত মেলাতে পারতেন এবং পরবর্তিতে তাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতেন। আবার এমন চিত্রই বেশী দেখা যায় যে কাছে এসে মোবাইল ফোনটি বের করে হাসি দিয়ে বললেন একটা সেলফি তুলি? যাকে বললেন তিনিও হাসি দিয়ে সেলফিতে অংশ নিয়েই শেষ। যদিও প্রথম দুই ব্যক্তির তুলনায় তৃতীয় ব্যক্তি কিছুটা এগিয়ে কারন বাড়ি ফিরে তিনি যখন ছবিটি ফেসবুকে বা লিংকডইনে আপলোড করবেন চমৎকার একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তখন ফেসবুক সেই ব্যক্তিকে এআই (AI) ব্যবহারের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে যে কেউ তার ছবি ফেসবুকে যুক্ত করেছে। যদি স্ট্যাটাসটি পছন্দ হয় তাহলে তিনি তার প্রোফাইলে ঢ়ুকে দেখবার চেষ্টা করবেন। এখানে একটা লীড তৈরি হবার আশা থাকে। কিন্তু যিনি কথাও বললেন, ছবিও তুললেন না, তার জন্য ঐ দু-ঘন্টা বিনিয়োগের ফল কি হলো? কিন্তু বিষয়টি অন্যরকম হতে পারতো!

অনুষ্ঠানে বা কনফারেন্সে যাবার আগে যদি একটু হোম ওয়ার্ক করে নেয়া যায় যেমনঃ

  • খুজে বের করা আপনি কেন সেখানে আছেন বা কেন সেখানে যাচ্ছেন?
  • ঐ অনুষ্ঠানে কারা আসছেন, তাদের নিয়ে হালকা একটু গবেষনা করা।
  • অতিথীদের মধ্যে কারা আছেন যারা আপনার কাজের ক্ষেত্রের সাথে সংযুক্ত এবং তাদের বর্তমান প্রকল্প নিয়ে একটা ধারনা নেয়া।
  • অতিথীদের ফেসবুক বা লিংকডইনের প্রোফাইলটা একটু ব্রাউজ করে যেনে নেয়া কোন ধরনের কাজের সাথে তারা এই মুহুর্তে ব্যস্ত। এটি অবশ্য অনুষ্ঠানে থেকেও করা সম্ভব যদি আগে থেকে অতিথীদের তথ্য পাওয়া না যায়।
  • আসলে পুরো বিষয়টিকে গেম প্ল্যানের সাথে তুলনা করা যায়। গেম প্ল্যান যেমন একটি দল বা একজন খেলোয়াড়ের জন্য বুঝে নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন তেমনি একজন প্রফেশনাল বা গ্রাজুয়েটের জন্য তার নিজের গেম প্ল্যান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, তাহলেই সময় বিনিয়োগের ভালো ফল আশা করা যায়।

একটি বিষয় আমাদের সবসময় স্মরন রাখতে হবে যে প্রত্যেক অপরিচিত মানুষ আপনাকে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। অতএব তার সফলতা অনেক বেশী হয়ে থাকে যিনি অপরিচিত মানুষকে পরিচিত মানুষে রুপান্তর করতে পারেন। অপরিচিত মানুষকে পরিচিত করে তুলবার প্রথম ধাপ হচ্ছে  কথোপকথন।

কথোপকথনের অনেক সুবিধা রয়েছেঃ

  • যেকোন মানুষের সাথে কথোপকথন আপনাকে সম্পূর্ন নতুন একটি ধারনা বা প্রেক্ষপট তৈরিতে সাহায্য করে।
  • যেকোন মানুষের সাথে কথোপকথন আপনাকে একটি নতুন সুযোগের দরজা খুলতে সহায়তা করে
  • আপনাকে নতুনকে সনাক্ত করতে সহায়তা করে
  • আপনার জন্য নতুন লিঙ্ক তৈরি করে দেয় এবং নিজেকে সেই লিংকের সাথে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে।
  • জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করে।
  • দক্ষতা তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে।
  • ইতিবাচক মানসিকতা অর্জনে ভূমিকা রাখে।

ধরুন আপনি কোনও অনুষ্ঠানে রয়েছেন এবং আপনি দেখছেন যে আপনি অনুষ্ঠানের আয়োজক ছাড়া কাউকেই চেনেন না কিন্তু একটি ছোট্ট আলোচনা দিয়ে আপনি অনেক কিছুই অর্জন করতে পারেন। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে  কথোপকথনে বলা এবং শোনার মাঝে একধরনের ব্যালেন্স রাখাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এই বিষয়ে প্রায় সকলেই একমত হয়েছেন যে কথোপকথনে বলার চেয়ে শুনবার মানসিকতাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। গৌতম বুদ্ধের একটি চমৎকার উক্তি রয়েছে ”আপনার মুখ খোলা থাকলে আপনি শিখছেন না”। তার মানে জানবার মানসিকতা নিয়ে কথোপকথনে অংশ নিতে হবে।

দুর্দান্ত কথোপকথনের জন্য কয়েকটি টিপস

দুর্দান্ত যোগাযোগকারী সবসময় একধরনের বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন সর্বক্ষেত্রে এবং তিনি অত্যন্ত সচেতন থাকেন তার এই দক্ষতার ব্যপারে। তারা জানেন কিভাবে একটি দুর্দান্ত কথোপকথন চালিয়ে নেয়া যায়। অবশ্যই এটি একটি গুরুত্বপূর্ন দক্ষতা যা সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।

  • আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে একটি ইংরেজী বাক্য “I am excited”. কোন একটি কাজ করবার আগে আমাদের ভালো করে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে আমি যে কাজাট করতে যাচ্ছি তার জন্য আমার ভেতরে কোন উত্তেজনা কাজ করছে কিনা? যদি উত্তেজনা অনুভাব করা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনি সফলভাবে কাজটি শেষ করতে পারবেন। আর যদি না হয় তাহলে হাজার চেষ্টা করেও আপনি কোন সমাধান বের করতে পারবেন না। বের করতে পারবেন শুধু অজুহাত। কোন অপরিচিত মানুষের সাথে কথোপকথনের প্রধান শর্ত হলো নিজ থেকে মনে মনে বার বার বলতে থাকা “Yes I am Excited”.

 

  • সঠিকভাবে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন হলো শর্ত হলো বডি ল্যাংগুয়েজের উপর নজর রাখা বিশেষ করে “Nonverbal Skills” । আপনার সত্যিকারের মন থেকে একটি হাসি, ইতিবাচক অঙ্গভঙ্গি এবং আবেগ দিয়ে শ্রবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। কথোপকথনের সময় আপনার অভিব্যক্তিগুলোর (Expressions) উপর সর্বদা সচেতন থাকবেন। কোন একটি আলোচনায় অতি সাধারন কিন্তু মূল্যবান আপনার ভুরুর (Eyebrow) সঠিক ব্যবহারও কিন্তু আপনাকে একধাপ এগিয়ে নিতে পারে।

 

  • মাল্টিটাস্কিং করবেন না। কথোপকথনের সময় আমরা নিজের অজান্তেই একাধিক কাজের সাথে যুক্ত থাকি যেটা মোটেও ইতিবাচক নয়। মোবাইল নিয়ে খেলা করা, চাবির রিং ঘোড়ানো, এখানে এবং সেখানে দেখা, হাত গুটিয়ে পকেটের ভেতর রেখে দেয়া ইত্যাদি পরিহার অত্যন্ত জরুরী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কথোপকথনে মনোনিবেশ (Concentration) করা এবং মননশীলতা (mindfulness) নিশ্চিত করা।

 

  • ভালো করে দেখে নেন আপনার ভেতর ”আমিও” (me too) লক্ষণ আছে কিনা। ধরুন কেউ একজন তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অভিজ্ঞতার কথা আপনার সাথে শেয়ার করছেন। তার কথা শেষ হবার সাথে সাথেই আপনিও বলে উঠলেন আমারও এরকম একটি অভিজ্ঞতা আছে এবং বলা শুরু করে দিলেন। এটি দুর্দান্ত কথোপকথনের জন্য একটি বড় বাধা।

 

  • অনেকে বিশেষজ্ঞ হয়ে বিরোধী মন্তব্য তৎক্ষনাত দেবার চেষ্ট করেন, এটি আরেকটি বাধা দুর্দান্ত কথোপকথনের। প্রত্যেকেরই বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। সুতরাং আমাদের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে হবে, তাত্ক্ষণিকভাবে বিরোধীতা করা উচিত নয়। আপনার যদি ভিন্ন মতামত থাকে তাহলে বাড়ি ফিরে ঐ বিষয়ে ব্লগ লিখে নিজস্ব ব্লগ সাইটে পাবলিশ করে দিতে পারেন। তবে কোনভাবেই কথোপকথনের সময় তর্কে যাওয়া ঠিক নয়। যদি বন্ধুদের আড্ডা হয় বা অতি পরিচিত কেউ হয় সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা।

 

  • কথোপকথনে যাবার আগে এই মানসিকতা তৈরি করুন যে আপনি কিছুই জানেন না। তাহলেই আপনি অনেক কিছেই জানতে পারবেন। সক্রেটিসের একটি দারুন উদ্ধৃতি রয়েছে ”আমি জানি যে অনেক কিছুই আমি জানি না”

 

  • যেকোন কথোপকথন শুরু করার আগে প্রয়োজন প্রশ্ন আর সে প্রশ্ন হতে পারে অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যতকে ঘিরে। ধরুন গুগলের মতো বিশাল একটি সাইট খুলে বসে আছেন। কিন্তু কোন প্রশ্ন করছেন না। তাহলে ঐ বিশাল সাইটি খুলে বসে থাকার মানে কি হলো? গুগলের কাছ থেকে সত্যিকারের উপকার পেতে হলে আপনাকে যেমন একটি প্রশ্ন করা দরকার তেমনি পরিচিত বা অপরিচিত কারো কাছ থেকে সত্যিকারের উপকার বা লিংক পেতে হলে দরকার উন্মুক্ত প্রশ্ন। এমন প্রশ্ন যার উত্তর সাধারনত কেউ শুধুমাত্র হ্যা বা না দিয়ে শেষ করতে পারবে না। উদাহরন স্বরুপ বলা যায় যে যদি কোন অপরিচিত মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরে যদি বলেন “কোভিড আমাদের অনেক বিপদে ফেলে দিয়েছে না?” উত্তর আসতে পারে শুধু হ্যা সূচক মাথা নাড়ানো। আর যদি প্রশ্নটি এমনভাবে করা যায় কোভিডের কারনে যে চাপ অর্থনীতির উপর পড়েছে তার থেকে কি সহজে আমরা বের হতে পারবো, আপনি কি মনে করেন? এই খোলা প্রশ্নের কারনে তাকে মন্তব্য করতে হবে।

 

  • ”Happy Hello” কনসেপ্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন টুলস কথোপকথনের শুরুতেই একজনকে আকৃষ্ট করবার জন্য যা বিনা ব্যয়ে যে কারও সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার শক্তি হিসেবে কাজ করে। আসল হাসি দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় সবসময় কাজ করে।

 

  • ইংরেজীতে একটি কোট আছে “Happiness is an unexpected compliment”. প্রশংসা আরেকটি টুলস যা কখনও বৃথা যায় না তবে অপ্রয়োজনীয় প্রশংসা হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তাই আগামীতে যার সাথে আপনার কথোপকথনের সম্ভাবনা রয়েছে তাকে নিয়ে একটু গবেষনা করুন। আপনার একটি সত্যিকারের প্রশংসা কারো দিনকে রঙিন করতে অনেক গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করতে পারে।

 

  • কথোপকথনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন এবং অভিজ্ঞরা সবচেয়ে বেশী যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তা হলো চোখ, কান ও মন দিয়ে শোনা এবং কানেক্ট করবার চেষ্টা করা। মনে রাখবেন শ্রবণশক্তি দুর্দান্ত গল্প আবিষ্কারের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অস্ত্র যা আমরা অনেকেই নিজের অজান্তে অব্যবহারিত হিসেবে রেখে দেই।

কথোপকথন শুরু করবেন কিভাবে?

  • নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন যে আপনি কিছুক্ষনের মধ্যেই দারুন একটি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাচ্ছেন
  • নিজের কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখুন এবং দুটি হাত ফ্রী করে রাখুন
  • যার সাথে কথা বলবেন তার সম্পর্কে হালকা একটু জেনে নিন কাছে পরিচিত মানুষের কাছ থেকে অথবা তার লিংকডইন প্রোফাইল ঘেটে দেখে নিন তার বর্তমান কোন কাজ সম্পর্কে
  • এবার দেখুন তিনি কারো ইতিমধ্যে কথোপকথনে যুক্ত আছেন কিনা। যদি দেখেন তিনি একদম মুখোমুখি দাড়িয়ে কথা বলছেন তাহলে তাকে আর বিরক্ত করবেন না। একটু ধৈর্য ধরুন। যখনই দেখবেন তিনি আর মখোমুখি দাড়িয়ে কথা বলছেন না, তারমানে এখন সঠিক সময়।
  • কাছে গিয়ে বড় একটা হাসির মাধ্যমে সালাম দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান এবং আপনার আনন্দ প্রকাশ করুন। তারপর আপনার নিজের পরিচয়টি দিন।
  • তার কোন একটি কাজের প্রশংসা করতে পারেন যেমন: ”মানবতার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আশ্চর্যজন“ বা আপনার ব্লগ বা ভিডিও আমাকে অত্যন্ত অনুপ্রানিত করে”।
  • এবার কথোপকথন শুরু হতে হবে একটি প্রশ্ন দিয়ে যেমন: স্যার বা ভাইয়া আপনি এখন পর্যন্ত যে সমস্ত সৃজনশীল কাজ করেছেন তার জন্য অনুপ্রেরণার উত্স কী? এটা দিয়ে শুরু তারপর ধীরে এগিয়ে যাবেন।
  • কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং কোন প্রকার বাধা ছাড়াই। তবে সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং খুব বেশা পেচানো যাবে না।
  • ফিউচার লিংক তৈরি করতে হবে যেন তার সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে তার কোন ভিজিটিং কার্ড বা লিংকডইনে তার সাথে কানেক্ট হবার চেষ্টা করা। ফেসবুকে কানেকশনের জন্য রিকোয়েস্ট না করাই ভালো। কারন অনেকেই ফেসবুককে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহার করেন। তবে বাড়ি ফিরে কথোপকথনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ফেসবুকে বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট পাঠানো যেতে পারে।
  • সর্বশেষে একটি রিকোয়েস্ট রাখতে পারেন যে আমি কি আপনার সাথে এই কথোপকথনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন স্মৃতিটি ক্যামেরা বন্দি করতে পারি?
  • বাড়ি ফিরে ধন্যবাদ বার্তা প্রেরণ করতে ভুলবেন না।

 

বন্ধুরা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে প্রতিটি দুর্দান্ত কথোপকথন আপনার মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করাবার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। আর প্রতিটি দুর্দান্ত কথোপকথন আপনার জন্য তৈরি করে নতুন সম্ভাবনা। তাই লজ্জাকে পরিহার করে, উত্তেজনাকে অনুভব করে পরিচিত বা অপরিচিত মানুষের সাথে কথোপকথনে যুক্ত হন। কথোপকথন সবসময় ফলপ্রসূ হবে এমন কোন নিশ্চয়তা কারো পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় তবে আপনি যেন মন থেকে বলতে পারেন আপনি চেষ্টার ত্রুটি করেননি।


লেখকঃ কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট