ম্যাজিক বর্গ, পর্ব-২
ম্যাজিক বর্গ কি? আমরা অনেকেই জানি না। আজকে আমরা ম্যাজিক বর্গ নিয়ে আলোচনা করব।
ম্যাজিক বর্গ হল একটি বর্গাকার ছক যেখানে কিছু সংখ্যা এমন ভাবে সাজানো থাকে সেখানে সংখ্যাগুলোকে উপর-নিচ, পাশাপাশি কিংবা কোণাকুণি যোগ করলে সর্বদা একই যোগফল পাওয়া যায়। এটাই মূলত ম্যাজিক বর্গের প্রধান বৈশিষ্ট্যে ।
ম্যাজিক বর্গ বিভিন্ন রকমের হয়। আজকে আমরা Regular Magic Square (RMS) নিয়ে আলোচনা করব:
Regular Magic Square আবার দুই ধরণের।
(i) RMS of Odd number
(ii) RMS of Even number
RMS of Odd Number: এ ধরণের ম্যাজিক বর্গের কলাম কিংবা সারি সংখ্যা বিজোড় সংখ্যক হয়। যেমনঃ 3×3 ম্যাজিক বর্গ, 5×5 ম্যাজিক বর্গ, 7×7 ম্যাজিক বর্গ ইত্যাদি।
RMS of Even Number : এ ধরণের ম্যাজিক বর্গের কলাম কিংবা সারি সংখ্যা জোড় সংখ্যক হয়। যেমনঃ 4×4 ম্যাজিক বর্গ, 6×6 ম্যাজিক বর্গ ইত্যাদি।
ম্যাজিক বর্গের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সেই বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে পরিচিত হইঃ
শুধুমাত্র RMS of Odd Number এর জন্য প্রযোজ্যঃ
ধরা যাক একটি n x n ম্যাজিক বর্গের সারি / কলামের সংখ্যা = n
প্রথম সংখ্যা = a শেষ সংখ্যা = z, বর্গের মাঝের সংখ্যা = m
এবং বর্গের যে কোন সারি কিংবা কলাম কিংবা কর্ণ বরাবর সংখ্যাগুলোর যোগফল S
(i) S= mn =
(ii) m =
(iii) Pn = 4m (n-1)
২ নং চিত্রে ম্যজিক বর্গের পরিসীমা P1 হলে,
P1= + + + + + +
3 নং চিত্রে ম্যজিক বর্গের পরিসীমা P2 হলে,
P2 = + + + + + + + + + + + + +
যেমন ১নং চিত্রে 3×3 ম্যাজিক বর্গে, n = 3, a = 1 এবং z = 9
(i) বর্গের যে কোন সারি কিংবা কলাম কিংবা কর্ণ বরাবর সংখ্যাগুলোর যোগফল
S=
(ii) বর্গের মাঝের সংখ্যা, m = =
(iii) ম্যাজিক বর্গের পরিসীমা: Pn = 4m (n-1)
= 4 x 5 (3-1) = 40
এধরনের ম্যাজিক বর্গের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এর সোজাসুজি এবং কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী যেকোনো দুটি সংখ্যার সমষ্টি ম্যাজিক বর্গের প্রথম ও শেষ সংখ্যার সমষ্টির সমান ।
ম্যাজিক বর্গ অনেক প্রকারের:
কমপ্লিট ম্যাজিক স্কয়ারঃ কমপ্লিট ম্যাজিক স্কয়ারে প্যান ডায়াগনালের সংখ্যাগুলোর যোগফল ম্যাজিক ধ্রুবকের সমান । প্যান ডায়াগনাল হলো ডায়াগনালের সমান্তরাল রেখা।
উদাহরণঃ 4×4 এর ম্যাজিক বর্গের 3 ও 1 এবং 2 ও 2 প্যান ডায়াগনালের সংখ্যার যোগফল ম্যাজিক ধ্রুবকের সমান। অর্ডার ৪ এর ম্যাজিক ধ্রূবকটি হলো 34 । এছাড়া কমপ্লিট ম্যাজিক স্কয়ারের (Complete Magic Square) আরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। ছবিতে সংখ্যাগুলোর যোগফলকে ‘+’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে যা ম্যাজিক ধ্রুবকের সমান।
সেমি ম্যাজিক স্কয়ারঃ
সেমি ম্যাজিক স্কয়ারে ক্ষেত্রে প্রতিটি সারি ও কলামের সংখ্যাগুলোর যোগফল সমান হয়, কিন্তু ডায়াগনালের সংখ্যাগুলোর যোগফল সমান হয় না।
RMS of Odd number ম্যাজিক বর্গ তৈরির কৌশলঃ সচরাচর আমরা “Siamese Method” পদ্ধতি অনুসরণ করে Odd Number ম্যাজিক বর্গ তৈরি করি । এই পদ্ধতিটা সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন একজন ফ্রেঞ্চ ম্যাথেমেটিশিয়ান সায়মন (Simon de la Loubère)। এই পদ্ধতিও আবার দুই ধরণের। একটিতে বর্গের একদম উপরের সারির মাঝে 1 বসানো হয়। আর অপরটিতে বর্গের কেন্দ্রের ডান পাশে 1 বসানো হয়।
প্রথম পদ্ধতিঃ
বেজোড় ক্রমের ম্যাজিক বর্গ (যেমনঃ 3, 5, 7, 9 ……….) নির্ণয়:
১। প্রথমে মাঝখানের কলামের সবার উপরের ঘরে ছোট সংখ্যাটি (সাধারণত 1) বসাতে হবে।
২। এরপর কোনাকুনি ভাবে উপরের ঘরে তার উপরের সংখ্যাটি অর্থাৎ 2 বসবে।
৩। যদি উপরে কোন ঘর না থাকে তাহলে সোজাসুজি সবার নিচের ঘরে চলে আসবে। সেখানে 2বসবে।
৪। আবার কোনাকুনি ভাবে উপরের ঘরে যাবে, সেখানে কোন ঘর ফাকা না থাকলে তাহলে বামদিকের একই সারি বরাবর সর্ববামে যাবে।সেখানে 3 বসবে।
৫। 3 এর উপরে কোনাকুনি ঘরটি ফাকা নাই অর্থাৎ 1 আছে। তখন সরাসরি 3 এর নিচের ঘরটিতে 4 বসবে।
৬। 4 এর উপরে কোনাকুনি ঘরটিতে 5, তার উপরের কোনাকুনি ঘরটিতে 6 বসবে। আবার কোনাকুনি ভাবে উপরের ঘরে যাবে, যেহেতু সেখানে কোন ঘর ফাকা নাই। তাই 6 এর নিচের ঘরটিতে 7 বসবে।
৭। 7 এর উপরে কোনাকুনি ঘরটিতে ফাকা নাই, তাই বামদিকের একই সারি বরাবর সর্ববামে যাবে।সেখানে 8 বসবে।
৭। 8 এর উপরে কোনাকুনি ঘরটিতে ফাকা নাই, তাহলে সোজাসুজি সবার নিচের ঘরে চলে আসবে। সেখানে 9 বসবে।
একই নিয়মে 5 ক্রমের ম্যাজিক বর্গ নির্ণয় করা যায়।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
১। প্রথমে বর্গটির কেন্দ্রের ডান পাশে 1 লিখতে হবে।
২। 1 এর ডানদিকের উপরের কোনাকুনি বরাবর পরবর্তী সংখ্যা 2 লিখতে হবে ।
৩। বর্গটির ডান পাশের কলামের সাথে বাম পাশের কলামটি জুড়ে দিয়ে পরবর্তী সংখ্যাটি অর্থাৎ 3 লিখতে হবে এইভাবে।
৪। এবার বর্গটির উপরের সারির সাথে আর একটি সারি জুড়ে দিয়ে কোনাকুনিভাবে পরবর্তী সংখ্যা 4 লিখতে হবে। যেহেতু সেখানে কোন ঘর ফাকা নাই। তাই সোজা নিচের ঘরে 4 বসবে। তারপর আগের মতো কোনাকুনি অগ্রসর হতে হবে।
৫। যেহেতু 5 এর উপরে কোনাকুনি ঘর ফাকা নাই. তাই তার ডান পাশের ঘরের পরের ঘরে পরবর্তী সংখ্যা 6 বসবে। তারপর আগের নিয়মে কোনাকুনিভাবে অগ্রসর হতে
৬। আগের নিয়ম পুনরাবৃত্তি করতে থাকলে তৈরি হয়ে যাবে 5X5 RMS of Odd Number।
একইভাবে 7×7 ম্যাজিক বর্গও গঠন করা যায়। আমরা পরবর্তীতে জোড় সংখ্যার ম্যজিক বর্গ কিভাবে গঠন করা যায়, তা শিখবো।
গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিসের উক্তি দিয়ে শেষ করছি,
যারা গণিত নিয়ে অধ্যয়ন করেনি বা জানার চেষ্টা করেনি, তাদের কাছে জগতের অনেক কিছুই দূর্বোধ্য হয়ে থাকে।
ফারহা দিবা
সিনিয়র ইন্সট্রাকটর
ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যাথমেটিক্স
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট