কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট

“কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট”- নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এখানে দুটি সাইকেল থাকে। প্রথমত জ্বালানি পুড়িয়ে এবং টার্বাইন ঘুরিয়ে সেখানে জেনারেটর কাপলিং করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। পাশাপাশি টার্বাইন থেকে নির্গত তাপ কাজে লাগিয়ে বয়লারের পানি উত্তপ্ত করে বাষ্প তৈরী করে।

বাষ্প টার্বাইনের মাধ্যমে আরেকটি জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলাম। এই টার্বাইন প্রথম জেনারেটরে আরও শক্তি যোগ করতে পারে কিংবা আলাদা একটি জেনারেটরকেও ঘোরাতে পারে। এই এইভাবে যে পাওয়ার প্লান্ট গুলো বানানো হয়, তাকে কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট বলে। দুটি থার্মোডাইনামিক সাইকেল বা তাপগতীয় চক্র ব্যবহারের মাধ্যমে অপচয়টা কমানো হয়। সহজভাষায় দুটি তাপ ইঞ্জিন কাজ করে।

কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট

স্ট্যান্ডার্ড গ্যাস টার্বাইন স্টার্টঃ

 

SSS (Synchro Self Shifting) ক্লাচ গ‍্যাস টার্বাইনকে স্টিম টার্বাইন থেকে স্বাধীনভাবে চলতে সাহায‍্য করে।

 

SSS (Synchro Self Shifting) ক্লাচ

সিনক্রোনাইজেশনে সময় কম নেয়াঃ

 

গ্রিডের সাথে জেনারেটরকে সিনক্রোনাইজ করতে অনেক কম সময় লাগে এবং যেহেতু সিনক্রোনাইজেশনের সময় স্টিম টার্বাইনের তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল না সেহেতু সময় খুব নির্ভুলভাবে নির্ণয় করতে পারে।

 

কোন ঠান্ডা বাতাস প্রয়োজন হয়নাঃ

 

গ‍্যাস টার্বাইন শুরুর সময় হিট রিকোভারি স্টিম জেনারেটর থেকে কোন স্টিম পাওয়া যায় না এবং ‍যতক্ষন না স্টিম টার্বাইনকে অসংযুক্ত করা হয়, স্টিম টার্বাইনের ব্লেডগুলাকে ঠান্ডা করার জন্য এবং চলার সময় সীলিং প্রদান করার জন‍্য একটি স্টিম সরবরাহ দরকার হয়।

 

শুরু করতে কম শক্তির প্রয়োজন হয়ঃ

 

গ্যাস টার্বাইন স্টার্টিং সিস্টেম দিয়ে শুধুমাত্র গ্যাস টার্বাইন এবং জেনারেটর চলার কারনে মেশিন শুরুর জন্য যে পরিমান শক্তির প্রয়োজন হত তা কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে অনেক কম দরকার হবে।

 

গ্যাস টারবাইন

 

স্বল্প নির্গমনঃ

 

টার্বাইন উচ্চ ক্ষমতায় ইফিসিয়ান্টলি চলার সময় যে পরিমান দূষণ হত, গ্যাস টার্বাইন চালু করতে কম সময় লাগার কারনে দূষণ অনেক কম হয়।

 

আদর্শমানের ডিজাইনঃ

 

যেহেতু স্টিম টার্বাইনটি এটার নিজস্ব Thrust বিয়ারিং এর সাথে সংযুক্ত তাই টার্বাইনের উপর ডিজাইন নির্ভরশীল না। এসব ক্ষেত্রে আরও স্ট‍্যান্ডার্ড ডিজাইন ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

সহজ torsional বিশ্লেষণঃ

 

গ্যাস টার্বাইন এক্সেলারেট করার সময় স্টিম টার্বাইনকে বিচ্ছিন্ন করা হয় তাই যখন গ্যাস টার্বাইন স্টিম টার্বাইনটিকে চালাচ্ছে, এই অবস্থাকে গণ্য না করলেও চলে।

 

সহজ কমিশনঃ

 

ধরা হয়, প্লান্টটির একশত পার্সেন্ট স্টিম বাইপাস সুবিধা আছে যে, এটা গ‍্যাস টার্বাইনকে স্টিম টার্বাইনের রোটেশন ছাড়াই একটি সহজ সাইকেল মেশিনের মত সম্পাদন করতে পারে। স্টিম টার্বাইন চালু করার আগেই গ্যাস টার্বাইনের কর্মক্ষমতা নির্ধারণ করা যায়।

 

 

স্টিম টার্বাইন চলাচল বিদ্যুৎ উৎপাদন থামায় নাঃ

 

বাষ্প টার্বাইনকে গ‍্যাস টার্বাইন থেকে স্বাধীনভাবে বন্ধ করতে পারার কারনে স্টিম টার্বাইন সিস্টেমের কোনো চলাচলের জন‍্য ‍গ‍্যাস টার্বাইনকে চালানোর দরকার হয় না। কারন বিদ্যুৎ প্রোডাকশনের সামর্থ্যের মোট ক্ষতি এবং রক্ষণাবেক্ষণের সময়সূচির উপর তাদের ফলাফলের জন‍্য পরিষ্কারভাবে ‍গ‍্যাস টার্বাইন চলাচল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।

 

স্টিম টার্বাইন ঠান্ডা হওয়ার সময় গ‍্যাস টার্বাইন এর রক্ষণাবেক্ষন সম্ভবঃ

 

SSS (Synchro Self Shifting) ক্লাচ ব্যবহার করে স্টিম টার্বাইন নিজের টার্নিং গিয়ার দিয়ে ঘুরতে থাকার সময় গ্যাস টার্বাইনকে থামাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প সরবরাহ করা যেতে পারে। এই বৈশিষ্ট‍্যটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে যেহেতু সাধারণত যে সময় ধরে স্টিম টার্বাইনটি অবশ্যই বন্ধের পর টার্নিং গিয়ারের উপর থাকতে হবে, সে সময়টি গ্যাস টার্বাইনের যতক্ষণ সময় দরকার হয় তার থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। স্টিম টার্বাইন চলার সময় গ্যাস টার্বাইনের রক্ষণাবেক্ষণ করা শুরু করলে আউটেজ সময় কমানো যেতে পারে।

 

 

কম গ‍্যাস টার্বাইন পাওয়ারে স্টিম টার্বাইন বন্ধ করা যায়ঃ

 

মেশিনের নিয়মমাফিক বন্ধ হওয়ার সময় গ্যাস টার্বাইনের আগে স্টিম টার্বাইনকে বন্ধ করা যেতে পারে। এটা সাধারনত করা হয় যখন গ্যাস টার্বাইনের উপর স্টিম টার্বাইনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার জন্য নিজস্ব নির্গমন তাপমাত্রা কমানোর কিছু লোড থেকে যায় এবং এজন্য পরের কাজগুলোও দেরিতে শুরু হয়।

 

কর্মদক্ষতা:

 

ভাল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দক্ষতা ৬০% পর্যন্ত হতে পারে।

 

অসুবিধা:

 

কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট বা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাগুলোর তুলনায় জ্বালানি সাশ্রয়ী। অর্থাৎ সমপরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র তুলনামূলকভাবে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।

 

পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মানুযায়ী শক্তির বিনাশ নেই আবার উৎপাদনও করা সম্ভব নয়। শক্তির রূপান্তর করা যায় কেবল। কিন্তু এই রূপান্তরটা শতভাগ দক্ষ নয়। যেমন আমরা বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে বাতি জ্বালাতে গেলে বাতিটা গরম হয়ে কিছুটা শক্তির অপচয় হয়।

 

বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপারটাও তাই। জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে পুরোটা বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব হয় না। প্রচলিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্রায় দুই তৃতীয়াংশই অপচয় হয়। তাপ শক্তি হিসেবে এই অপচয়টা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পরিবেশে প্রচুর তাপ নির্গত হয়।

 

লেখকঃ মোঃ আব্দুল্লা-আল-মামুন রুপম

ইন্সট্রাকটর, ইলেকট্রিক্যাল

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

Comments are closed.