ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ [পর্ব ১]

কেমন হওয়া উচিত ফ্রেশার চাকুরী প্রাথীর সিভি

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ [পর্ব ১]

ফ্রেশারদের চাকুরীর প্রস্তুতিঃ

চাকরিদাতার কাছে সিভি হচ্ছে আপনার প্রথম উপস্থাপনা। সিভি বাছাই করার সময় চাকুরীদাতা দ্রুত সময়ে তার চাহিদা অনুযায়ী সিভি বাছাই করতে চায়। অতএব আপনার সিভি এমন হওয়া উচিত যাতে এক ঝলকেই একদম বেসিক যে তথ্যগুলো প্রাথমিক বাছাইয়ে জন্য জরুরী সেগুলো চাকরিদাতার কাছে উপস্থাপিত হয়।

চাকুরীদাতার কাছে নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে উপস্থাপনের জন্য আপনার সিভিটি হতে পারে মোক্ষম অস্ত্র। চলুন এই পর্বে জেনে আসি একজন ফ্রেসার হিসেবে কোন বিষয়গুলো আপনার সিভিতে থাকা জরুরী।

১) CONTACT INFOTMATION (যোগাযোগের তথ্য)

সিভির একদম উপরের অংশে প্রার্থীর সাথে যোগাযোগের তথ্য থাকবে। আপনার নাম, চিঠি পাঠানোর ঠিকানা, ফোন নম্বর বা মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস ও পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Linkedin এর আপনার প্রোফাইল URL টি থাকবে। চাকুরীদাতার যদি আপনার সিভিটি উপযুক্ত মনে করেন তাহলে এই অংশের মোবাইল নাম্বার অথবা ইমেইল এড্রেসে পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য বিস্তারিত তথ্য সহ যোগাযোগ করবেন।

) FORMAL PHOTO (ফর্মাল ছবি)

সিভির একদম উপরের ডান দিকে আপনার ফর্মাল ছবি সংযুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে ছয় মাসের বেশি পুরোনো ছবি না দেওয়াই ভালো। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা বা হালকা নীল হলে ভালো হয়।

) CAREER OBJECTIVE (পেশাগত উদ্দেশ্য)

সিভিতে পেশাগত উদ্দেশ্য শিরোনামে অবশ্যই একটি অংশ রাখবেন। আপনি যে পদের জন্য আবেদন করতে যাচ্ছেন সেখান থেকে আপনি কী অর্জন করতে চান, আপনার উপর কতটুকু নির্ভর করা যায় প্রভৃতি বিষয় অল্প কথায় স্পষ্ট করে উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

) SPECIAL QUALITIES (বিশেষ গুণাবলী)

এই অংশে অল্প কথায় আপনার ব্যাক্তিগত কিছু গুনাবলী উল্লেখ্য করুন যা চাকুরীদাতাকে আকৃষ্ট করতে পারে। সততা, কঠোর পরিশ্রমী, নেতৃত্বের গুণাবলি, কাজের প্রতি যত্নশীল, কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন এইগুলো উদাহরন হিসেবে নেয়া যেতে পারে।

) ACADEMIC QUALIFICATION (শিক্ষাগত যোগ্যতা)

আপনার শিক্ষা সম্পর্কীত তথ্য থাকবে এই অংশে। আপনার অর্জিত সর্বোচ্চ ডিগ্রিটিকে সবার উপরে এবং তারপর ধারাবাহিকভাবে অন্যগুলো ছক আকারে উল্লেখ্য করুন। প্রতিটি অর্জিত ডিগ্রির নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, বোর্ড অথবা বিভাগের নাম, মেজর সাবজেক্ট, ফলাফল এবং ফলাফল প্রকাশের সাল অবশ্যই উল্লেখ্য করতে হবে।

) WORKING EXPERIENCE (কাজের অভিজ্ঞতা)


আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা সফরের ইতিহাস, ইন্টার্নশিপের তথ্য থাকবে এই অংশে। যদি কোন সময় পদের সাথে সংশ্লিষ্ট এমন কোন অ্যাসাইনমেন্ট করে থাকেন, সেটা উল্লেখ করতে পারেন। আবেদনকৃত পদের সঙ্গে সম্পর্কৃত নয় এমন কোনো অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভালো ।

৭) TRAINING & WORKSHOP (প্রশিক্ষন এবং কর্মশালা)


যে পদের জন্য আবেদন করছেন, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো ট্রেইনিং, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদিতে অংশগ্রহনের তথ্য থাকবে এই অংশে। ট্রেইনিং, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির নাম, পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, সময়সীমা ও সালের নাম অবশ্যই উল্লেখ্য করতে হবে।

) EXTRA-CURRICULAR ACTIVITIES (পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম)


মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমের মাধ্যমে। পড়ালেখার পাশাপাশি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, প্রজেক্ট তৈরী, লেখালেখি, বিভিন্ন ক্লাবে সাথে কাজ করার ইতিহাস অল্প কথায় স্পষ্ট করে উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

) ACHIVEMENT (অর্জন)


বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার প্রাপ্তি, বিভিন্ন ক্লাবে নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ ইত্যাদি অল্প কথায় স্পষ্ট করে উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

১০) LANGUAGE PROFICIENCY (ভাষাগত দক্ষতা)


বাংলা ও ইংরেজি এই দুইটি ভাষা সিভিতে উল্লেখ্য করা অতি জরুরী। ইংরেজীতে যদি আপনি দুর্বল হয়ে থাকেন তাহলে এই মুহুর্তে দুর্বলতা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করুন। পদক্ষেপ গুলো কি হতে পারে তা নিয়ে লিখব অন্য কোনদিন। বাংলা ও ইংরেজীর পাশাপাশি অন্য কোন ভাষা যদি আপনার জানা থাকে তা উল্লেখ্য করুন এই অংশে।

১১) COMPUTER PROFECIENCY (কম্পিউটারে দক্ষতা)

চাকুরীর ক্ষেত্রে কম্পিউটার চালনায় দক্ষতা অতি জরুরী। বিশেষ করে মাক্রোসফট অফিস এর বিভিন্ন এপ্লিকেশন যেমন মাক্রোসফট ওয়ার্ড, মাক্রোসফট এক্সেল, মাক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট সফটওয়ার এবং ইমেল কমিউনিকেশন ইত্যাদি এই অংশে উল্লেখ্য করুন।

১২) INTERST (আগ্রহ বা শখ)

অল্প কথায় স্পষ্ট করে আপনার শখ বা অবসর সময়ে কী করেন তা উল্লেখ করুন এই অংশে। এই ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হোন। চাকুরীর সাথে সম্পর্কৃত আগ্রহ বা শখ উল্লেখ্য করুন যেমন কোন ট্রাভেলিং এজেন্সিতে কোন পদের জন্য আবেদন করছেন সেখানে আপনি ভ্রমন করতে ভালোবাসেন তা প্রথমে  উল্লেখ্য করুন, আপনি যদি কোন কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের কোন পদের জন্য আবেদন করেন তাহলে সেখানেো আড্ডা দেয়া আপনার শখ তা প্রথমে উল্লেখ্য করুন। শেষে আপনার যদি কোন উল্লেখযোগ্য আগ্রহ বা শখ থাকে যুক্ত করুন।

১৩) PERSONAL INFORMATION (ব্যক্তিগত তথ্য)


আপনার পিতা ও মাতার নাম, আপনার জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, জাতীয়তা, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার, ধর্ম এবং স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি এই অংশে উল্লেখ্য করুন।

১৪) REFFERENCE (রেফারেন্স)

প্রয়োজনে যাতে সিভিতে দেয়া আপনার তথ্যগুলোর সত্যতা দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, সে কারনেই এই রেফারেন্সের অংশ। আপনার পরিচিত পেশাজীবি কোন ব্যাক্তি যিনি আপনার সম্পর্কে জানেন তাদের নাম, পদ, অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল এড্রেস ইত্যাদি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। যাদের রেফারেন্স দিচ্ছেন তাদের অনুমতি নিবেন এবং বিষয়টি তাদের জানিয়ে রাখবেন।

১৫) DECLARATION (ঘোষণা)

এই অংশে সর্ম্পূণ সিভির সকল তথ্যের সত্যতা প্রমানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন সার্টিফিকেট সমুহ, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি প্রদর্শন এবং সিভিতে দেয়া প্রত্যেকটি তথ্যের সত্যতার নিশ্চয়তা নিজের নাম ও সিগনেচার সহ ঘোষনা করবেন।

ব্যাক্তিভেদে আরো কিছু বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে তবে উপরোক্ত বিষয় গুলো প্রত্যেকটি ফ্রেশারের সিভিতে থাকা অত্যন্ত জরুরী।

আজ এই পর্যন্তই।
আমন্ত্রন থাকল পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য। আগামী পর্বে থাকছে চাকুরীর জন্য সিভি মেইল করার খুটিনাটি

লেখকঃ 

মোঃ জায়েদুল হক

ইন্সট্রাকটর, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

 

Comments are closed.