কারিগরিতে কেন পড়বেন?
আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আগে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী বলতে স্বনির্ভর অর্থনীতি, যার অর্থ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য আভ্যন্তরীণ বিষয়ে উপযুক্ত বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক নিজস্ব প্রযুক্তি সম্বলিত উন্নয়ন আবশ্যক। আর এ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো কারিগরি শিক্ষা। বিশ্বের উন্নত দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় নিজেকে দক্ষভাবে গড়ে তুলতে হলে এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নাই। বিভিন্ন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড দক্ষ জনশক্তি তৈরির দায়িত্ব পালন করে আসছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরিচালিত শিক্ষাক্রমগুলোর মধ্যে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-জুট টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-লেদার টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-এগ্রিকালচার, ডিপ্লোমা-ইন-ফরেস্ট্রি টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-মেরিন টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-হেল্থ টেকনোলজি, এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা), এইচএসসি (ভোকেশনাল) ও এসএসসি (ভোকেশনাল) অন্যতম। এছাড়া বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদের ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালনা করে আসছে। এসব শিক্ষাক্রম পরিচালনাকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষাক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রত্যেক বছরই বেড়ে চলেছে। মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাহায্য নিয়েই এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব সু-সম্পন্ন করা হয়। সকল বাধা অতিক্রম করে বিশ্বের উন্নত দেশকে অনুসরণ করে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে মানুষকে আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক বিপ্লব সৃষ্টিকারী দেশ জাপান, চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, কোরিয়াসহ বহুদেশ আছে যাদেরকে দেখে আমরা জানতে পারি কারিগরি শিক্ষার সুফল সম্পর্কে। অধিক জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করার একটাই বড় মাধ্যম কারিগরি শিক্ষা। আর বড় কথা হলো কারিগরিতে পড়ে কোনো শিক্ষার্থীই বেকার থাকে না।উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কারিগরি শিক্ষায় কেন জনগণকে শিক্ষিত করা জরুরি। এই শিক্ষা দেশের জন্যে যেমন জরুরী, তেমনি জরুরী নিজের জন্যেও। কারিগরি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ সরকারও সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। মহিলা অধিদপ্তরও নারীদের কারিগরি শিক্ষার্জনের উপর জোর দিয়েছেন। মহিলা অধিদপ্তরের মতে, পৃথিবীর যে দেশে যতো বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী আছে সেই দেশ ততো বেশি উন্নত। মানব সম্পদ যদি ব্যবহারযোগ্য না হয় তবে তার কোন মূল্য নেই। কোনো রাষ্ট্রের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ বা খনিজ সম্পদ থাকলেই, সেই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত হয় না, যদি না ঐ রাষ্ট্র উপযুক্ত পরিকল্পনায় ঐ সম্পদকে ব্যবহার করতে পারে। একইভাবে রাষ্ট্রে অসংখ্য জনগোষ্ঠী থাকলেই রাষ্ট্রের উন্নতি হবে না। ঐ জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে উৎপাদনমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারলে সেই জনগোষ্ঠী রাষ্টের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।
যে শিক্ষা শিক্ষার্থী তার বাস্তব জীবনে ব্যবহার করে কোনো একটি নির্দিষ্ট পেশায় নিযুক্ত হতে পারে তাই কারিগরি শিক্ষা। আবার উপযুক্ত বৃত্তি বা পেশা নির্বাচনের জন্য দক্ষতামূলক যে শিক্ষা, তাকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা বলে। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীকে বা ব্যক্তিকে পেশা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সে নিজেই অর্জিত শিক্ষার সাথে মিল রেখে স্বাধীনভাবে পেশা খুঁজে নিতে পারে। সাধারণ শিক্ষা এর বিপরীত, অর্থাৎ অর্জিত শিক্ষার সাথে কর্মের মিল থাকে না। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়স সম্পর্কে কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করা হয়। সাধারণত ঝরে পড়া শিক্ষার্থী অথবা কোনো কারণে শিক্ষাবঞ্চিত ব্যক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা নানাভাবে সফলতা এনে দিতে পারে। এ ধরনের শিক্ষার প্রধান শর্ত হলো ধৈর্য্য, পরিশ্রম ও অনুশীলন। দক্ষতাই উন্নয়ন-এ কথাটি কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ শিক্ষার প্রধান সাফল্য ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ। এর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থী বা ব্যক্তিকে পরবর্তী জীবনে নির্দিষ্ট কোনো কারিগরি বিষয়ে দক্ষ করে তোলা, নিজ নিজ উদ্যোগে স্থানীয় ছোট ছোট শিল্পের প্রসার ঘটানো, স্বাধীনভাবে পছন্দ অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদকে প্রকৃষ্টভাবে কাজে লাগিয়ে কর্মীর হাতে পরিণত করা।
এ সময়ে এসে মানুষ কিছুটা বুঝতে শেখেছে পলিটেকনিকে পড়লে সহজে চাকুরি পাওয়া যাবে। আর এই শিক্ষা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও যথেষ্ট মর্যাদা পায় এবং এ শিক্ষাকে সাধুবাদ জানায়। সরকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ২য় শ্রেণির মর্যাদায় অনেক আগেই অধিষ্ঠিত করেছে।
লেখক:
মো: আল মামুন রশিদ
ইন্সট্রাকটর,
ডিপার্টমেন্ট অব ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং