আজ না কাল (Today Not Tomorrow)

আজ না কাল

(Today Not Tomorrow)

আজ অনেক পড়ছি, আজ আর না, কাল পড়বো|

আজ অনেক কাজ করেছি, আজ আর না, কাল করব|

আজ আর না যাই, কাল যাব| দৈনন্দিন জীবনে আমরা এরকম অনেক কথাবার্তা বলে থাকি| আজ না কাল|

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, কাল যে সেই কাজটা, সেই পড়াটা, সেই জায়গায় যাওয়াটা আর হয়ে ওঠে না| কাল করব, কাল পড়বো, বলে আমরা যেটি রেখে দিই সেটি আমরা আর কখনোই সমাপ্ত করতে পারিনা| তার প্রমান আপনি নিজেই, বিগত কয়েকটি দিনের কথা আপনি চিন্তা করে দেখুন তো? এরকম অনেককথা বলেছেন যে, আজ না কাল, আসলে কি কাল যে সেই কাজটি হয়েছিল? হয়নি|

ছোটবেলায় একটি ভাব সম্প্রসারণ পড়েছিলাম –

“ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল,

গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল|’’

আমরা অনেকেই ভাব-সম্প্রসারণ টি পড়েছি, কিন্তু তার যে মূলভাবটি কিন্তু আমরা ধারণ করতে পারিনি|

এটির মূল কথা হচ্ছে, অল্প অল্প করে জমা হতে হতে, এক সময় অনেক বড় কিছুতে পরিণত হয়|

আজকে একটু রাখলাম, কালকে একটু রাখলাম, পরশু আরেকটু রাখলাম, এইভাবে রাখতে রাখতে কাজটি এত বড় হয়ে যায়, তখন সেটি আর করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা| তখন আমাদের কাছে সেটি মনে হয়, আমাদের দারা করা অসম্ভব না| একটা উদাহরণ দিলে সহজে বুঝা যাবে, অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে – যারা সেমিস্টার শুরুতেই নিয়মিত পড়াশোনা করে, দিনের পড়া দিনে সম্পন্ন করে, তাদের কাছে কোন পড়াশোনাই জটিল মনে হয় না|

আবার অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে – যারা শুরুতেই বলতে থাকে, কেবল তো সেমিষ্টার শুরু হল এখনো অনেক সময় আছে, আজ না কাল, কাল না পরশু, এরকম করতে করতে তাদের সেমিস্টার শেষ হয়ে যায় কিন্তু তাদের পড়া আর সম্পন্ন হয় না, কিছুদিন পরে ঝরে যায়, এবং সে মনে মনে ভাবে আমার জন্য পড়াশোনা সম্ভব না|

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার সমূহ নিয়ে একটু চিন্তা করলে মাথা ঘুরে যায়| মোবাইল- আমাদের কাছে কোন ব্যাপারই না, কিন্তু পূর্বের মানুষের কথা চিন্তা করেন, তারা কখনো ভাবতেই পারেনি  যে, এখানে বসে তারা বাড়িতে তাদের পরিবারের

সঙ্গে কথা বলবে তাদের চেহারা দেখবে|

কম্পিউটার – বিজ্ঞানের আর এক বিস্ময়ের নাম| কম্পিউটারে কাজ করতে যেয়ে, এই যন্ত্রটি কে যত দেখি, ততো আমি অবাক হয়ে যাই|

কত রকম জটিল জটিল সমস্যা, মুহূর্তের মধ্যেই সমাধান করে দিচ্ছে| বিজ্ঞানের হাজারো আবিষ্কার আছে এরকম, যেগুলো আমাদেরকে বিস্ময় করে তোলে| অন্য কিছু ভাববেন না আমি বিজ্ঞানের আবিষ্কার নিয়ে কথা বলছি না, আমি এই সমস্ত কিছু আবিস্কার করার পিছনের যে কাহিনীগুলো ছিল সেগুলো নিয়ে একটু আলোকপাত করব|

টমাস আলভা এডিসন, বাল্ব আবিষ্কার করতে এক   হাজার বার ব্যর্থ হয়েছিল, কিন্তু উনি হাল ছেড়ে দেননি| অবশেষে বারবার চেষ্টা করার পরে তিনি সফল হয়েছেন এবং আজকে আমরা আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছি| এরকম অনেক উদাহরণ আছে যেগুলো এখানে বলে শেষ করা যাবে না| তারা যদি আজ করবো না কাল করব বলে এই সমস্ত কাজগুলো এক/দুই দিন করে রেখে দিত তাহলে আজও আমরা সেই আদিমজাতি থেকে যেতাম, সভ্য হয়ে ওঠা আমাদের আর হতো না|

কালকের দিনটা কেমন যাবে আমরা কেউ জানিনা| আজকে যতটুকু সময় পেয়েছি সেই সময়টা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে| কালকেরটা কালকে দেখা যাবে| আজকে যতটুকু পারি ততটুকুই করতে হবে, মনের ভুলেও কালকের জন্য কোন কিছু রাখা যাবে না| একটা কাজ করার সময় ভাবতে হবে, বা পড়তে বসলে পড়াটা নিয়ে বলতে হবে, এটি আজকেই আমাকে সম্পন্ন করতে হবে| তাহলে কি হয় শরীরের ভেতরে, কাজ করার বা পড়াশোনা করার একটা শক্তি চলে আসে| কিন্তু আপনি যখন বলবেন যে আজ করব না কালকে, তখনি আপনার মন আপনার মস্তিষ্ক, আপনার ওই কথাটা কে সমর্থন করে অলস হয়ে যেতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে আপনি একটি অলস মানুষের পরিণত হবেন| ছোট ছোট কাজ সম্পন্ন করতে করতে একদিন দেখবেন আপনি অনেক বড় কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন|

মনে করেন একটি গণিত বই তে, দশটা অধ্যায় আছে| প্রত্যেক অধ্যায় এ ত্রিশটা করে সমস্যা আছে| তাহলে মোট তিন শত সমস্যা দেওয়া আছে ওই গণিত বই টিতে|

একজন ছাত্র  পড়াশোনায় খুবই ভালো, সে কয়েকটা  অধ্যায়ের সমস্যার সমাধান করে দেখল খুবই সোজা, আমি এগুলো পারব| থাক পরে করব, আজ না| এইভাবে আজ না কাল করতে করতে যখন সামনে পরীক্ষা আসবে, তখন তার কাছে এই তিন শত সমস্যা সমাধান করার জন্য সময় থাকবে দুই থেকে তিন দিন|  তখন সে ভাল ছাত্র হওয়া সত্বেও, অনুশীলনের অভাবে সে কিন্তু আশানুরূপ ফল পাবেনা| কিন্তু  তিন শত সমস্যা  আপনি যদি প্রত্যেকদিন দুইটা করে সমস্যার সমাধান করেন, তো  তিন শত সমস্যা সমাধান করতে আপনার সময় লাগবে দেড়শ দিন| এক বছরে তিন শত পয়ষট্টি দিন| তো দেখেন আপনি নিয়মিত দুইটা করে সমস্যা সমাধান করেন তাহলে গণিত বই আপনার বছরের অর্ধেক সময়ের মধ্যেই সবগুলো সমস্যার সমাধান আপনি করে ফেলছেন| আর প্রত্যেকদিন দুইটা করে সমস্যার সমাধান  করতে যে কেউ পারে| কেউ যদি  প্রত্যেকদিন একটা করে সমস্যা সমাধান করে, দুই মাস আগে তার গণিত বইটির সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে| আমরা অনেকেই ছোটবেলায় কচ্ছপ আর খরগোশের দৌড় এর গল্প জানি| খরগোশ দ্রুতগতি সম্পন্ন হওয়া সত্বেও, এখন না পরে করব, এই মতবাদের উপর বিশ্বাস করে সে কিন্তু ধীরগতিসম্পন্ন কচ্ছপের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছিল| এরকম হাজারো উদাহরণ  আছে যেগুলো আমরা বলে শেষ করতে পারবো না|

প্রতিযোগিতাময় এই পৃথিবীতে, কোন কিছুই সহজে অর্জন করা সম্ভব না| কঠোর পরিশ্রম চেষ্টা ও সাধনার দ্বারা অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়|

কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ, মানুষ কি কখনও ভাবছিল আকাশের ঐ সুন্দর চাঁদে তারা অবস্থান করতে পারবে? কিন্তু সেটি সম্ভব হয়েছে| সেটি কি একদিনে সম্ভব হয়েছে? না, অনেক পরিশ্রম চেষ্টা-সাধনার দ্বারা মানুষ চাঁদকে পরাজিত করতে পেরেছে|

সুতরাং সর্বশেষ আমি বলব, আজকে যে সময়টা পাবেন সেই সময়টা সুন্দরভাবে কাজে লাগাবেন| আজকে যে সময়টি পেলেন সেটি আজকে কাজে লাগিয়ে ফেলুন| আজকে সম্পন্ন  করলে কালকে নতুন আরেকটি কাজ আপনি হাতে পাবেন| সেটি সম্পন্ন করার পরে আরেকটি নতুন কাজ আপনি হাতে পাবেন| কালকে করবেন বলে রেখে দিলে কালকে যদি আর একটা নতুন  আরেকটি সুযোগ আসে, সেটি কিন্তু আপনি গ্রহণ করতে পারবেন না| আর ছাত্র-ছাত্রী যারা আছেন, তারা আজকে যে সময় পেলেন যতটুকু সম্ভব পড়াশোনার কাজে লাগিয়ে ফেলবেন, তাহলে কালকে নতুন একটি  অধ্যায়, নতুন একটি সমস্যার সমাধান  করার কৌশল কিন্তু অর্জন করতে পারবেন|

সুতরাং আমরা এই লেখাটি পড়ে শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা আমাদের প্রত্যেকটি সময়কে কাজে লাগাবো| কাল নয়, আজ থেকে, এখনই শুরু করে দিন|

 

 

 

লেখক,
এম. এম. শাহানুজ্জামান
লেকচারার,
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

 

Comments are closed.