সুনিশ্চিত ক্যারিয়ার গড়তে সিদ্ধান্ত হোক হোটেল ম্যানেজমেন্ট

পেশা হিসেবে হোটেল ম্যানেজমেন্ট বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত এবং কাঙ্ক্ষিত পেশা । তরুন প্রজন্মের কাছে এ পেশার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে । বর্তমানে দেশে কিংবা বিদেশে হোটেল এন্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট একটি  অপার সম্ভাবনাময় শিল্পে পরিনত হয়েছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে দেশে অসংখ্যা হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্টে এর সংখ্যা বাড়ছে  যেখানে অধিক দক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে হোটেল ম্যানেজমেন্টের পড়াশুনার চাহিদাও বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (বিএসডিআই) ২০০৩ সাল থেকে ১বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সটি  পরিচালনা করে আসছে। যেখানে কোর্স শেষে সরাসরি দেশে-বিদেশে ইন্টার্নশিপের পাশাপাশি চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে। এছাড়াও এই কোর্সে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে ৫ তারকা হোটেলসহ ক্যারিয়ার গড়তে পারেন এয়ারলাইন্স, হসপিটাল, চেইনসপ এবং ট্যুর এন্ড ট্রাভেল এজেন্সিতে। বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (বিএসডিআই) এর পাশকৃত শিক্ষার্থীরা দেশে এবং বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পাচ্ছে এবং দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য হোটেল এয়ারলাইন্সে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।

ডির্পাটমেন্ট অব ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি এর আওতায় ৩মাস ও ৬ মাস মেয়াদি সরকারি সনদে বেশ কিছু সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালিত হয়ে আসছে। যেমন – ফুড এন্ড বেভারেজ প্রোডাকশন, সার্ভিস, হাউজ কিপিং এবং ফ্রন্ট ডেস্ক। এসকল স্বল্প মেয়াদী কোর্স করে শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চেইন শপে ক্যারিয়ার গড়তে পারে কেননা এই ইন্ডাস্ট্রিতে ফুড এন্ড বেভারেজ, সার্ভিস, হাউজ কিপিং এবং ফ্রন্ট ডেস্ক  এই বিভাগগুলোই প্রধান । নিজের দক্ষতা ও ধৈর্য্যশীলতার মাধ্যমে খুব দ্রত এই পেশায় উন্নতি করা সম্ভব।

সুবিধাসমূহ :

  1. সান্ধ্যকালীন ব্যাচ
  2. সরকারি সনদ
  3. সুসজ্জিত ল্যাব
  4. ব্যবহারিক ক্লাস সুবিধা
  5. অভিজ্ঞ শিক্ষক
  6.  আর্থিক সুবিধা
  7. RPL
  8. চাকরী ও র্ইন্টানশীপ সহায়তা

শিক্ষা-পদ্বতি :  প্রতি ক্লাসে হাতে কলমে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে পাঠদান করা হয় । পাশাপাশি থিওরি, আইটি স্কিলস, স্পিকিং স্কিলস, জব স্কিলস এবং ইন্ডাস্ট্রি ট্যুরে পূনাঙ্গ কোর্সটি সাজানো । যার ফলে একজন শিক্ষার্থী সম্পূর্ণভাবে দক্ষ হয়ে প্রফেশনাল জীবনে আত্মপ্রকাশ করতে পারে । এ প্রোগামের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে চাকরী পাবার সকল কৌশল শেখানোর পাশাপাশি চাকরীর বাজারে শিক্ষার্থীকে আরো দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এছাড়াও রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্ট সুবিধা।

সার্টিফিকেট : এ শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ডের সার্টিফিকেট কোর্সের সরকারি সনদ প্রদান করা হয় ।

মান নিয়ন্ত্রণ : বিএসডিআইতে রয়েছে অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী এবং ৫ তারকা হোটেলের দক্ষ ও অভিজ্ঞ শেফ। পড়ালেখায় মান নিয়ন্ত্রণ করে ভালো ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে বিএসডিআই-এর  একাডেমিক কাউন্সিলের তত্ত্বাবধান।

ভর্তি যোগ্যতা : যেকোনো গ্রুপে এইচএসসি/ও-লেভেল অথবা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

ক্যাম্পাস সুবিধা : বিএসডিআইতে রয়েছে ৩টি ভিন্ন ক্যাম্পাস, আধুনিক লাইব্রেরি, প্র্যাকটিক্যাল ল্যাব এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই ক্যাম্পাস জোন ব্যবহারের সুবিধা।

স্কলারশিপ সুবিধা : মেধাবী ও অসচ্ছলদের জন্য রয়েছে ১০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন কর্তৃক স্কলারশিপের সুবিধা। মুক্তিযোদ্ধা পৌষ ও নারী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ স্কলারশিপের সুবিধা।

ভর্তি সেশন : বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটে (বিএসডিআই) বছরে ৩ টি সেশনে (র্মাচ, জুলাই, নভেম্বর) ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। চাকরিজীবীরা সান্ধ্যকালীন ব্যাচে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

যোগাযোগ : বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিএসডিআই) বাড়ী-২, রোড-১২, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। ০১৭১৩৪৯৩২৪৬, ০১৭১৩৪৯৩২৪৩।

Web: www.bsdi-bd.org

BSDI | Bangladesh Skill Development Institute

BSDI | Bangladesh Skill Development Institute

Bangladesh Skill Development Institute (BSDI) ড্যাফোডিল পরিবারের  একটি প্রতিষ্ঠান  যা ২০০২ সাল থেকে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেশাদার মানবসম্পদ বিকাশের জন্য কাজ করছে। BSDI বাংলাদেশের পেশাদার দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলির ঐতিহ্যগত  ধারণাটিকে পুরোপুরি পরিবর্তন করেছে। আজ বিএসডিআই বিজ্ঞান, প্রকৌশল, আর্টস স্টাডি এবং পেশাদার এবং নেতৃত্বের বিকাশের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান।

কর্পোরেট প্রশিক্ষণ শিল্পে বিএসডিআই খুব জনপ্রিয় নাম যা খুব অল্প সময়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। BSDI  বহু জাতীয় ও ট্রান্সন্যাশনাল সংস্থার মানুষকে কর্পোরেট প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে BSDI প্রশিক্ষিত ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম , কর্পোরেট পেশাদার এবং দক্ষ মানবসম্পদ বিকাশের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখছে। সম্প্রতি বিএসডিআই উদ্যোক্তা  তৈরির কাজ শুরু করেছে।

আজ BSDI তার প্রচেষ্টার জন্য বাংলাদেশের প্রথম সর্বোচ্চ নির্বাচিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পরিণত হয়েছে। BSDI তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেখার একটি অভিপ্রায় জাগায় এবং তাদের আজীবন নেতৃত্বের ক্ষমতা দেয়।

 

Hotel Management at BSDI

Hotel Management at BSDI

নিশ্চিত ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনাময় শিল্পক্ষেত্র হোটেল ম্যানেজমেন্ট। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান শিল্পক্ষেএ হচ্ছে ট্যুরিজম এবং হোটেল ম্যানেজমেন্ট। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে দেশে বিদেশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন নামিদামি তারকা হোটেল । বিশ্বের চাহিদা সম্পন্ন শিল্পগুলোর মধ্যে ট্যুরিজম ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট (Hotel Management) অষ্টম তম শিল্পক্ষেএ।

গ্লোবাল জিডিপির ১০.৪% আসে ট্যুরিজম ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট থেকে এবং ধারনা করা হচ্ছে পরবর্তী ১০ বছরে প্রায় ৭২ মিলিয়ন চাকরী যুক্ত করা হবে এই সেক্টরে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৮ লাখের বেশি তারকা হোটেল রয়েছে যেখানে কাজ করছেন প্রায় লাক্ষ লাক্ষ দক্ষ লোক ।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এই শিল্পের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ ট্যুরিস্ট ভিজিটে আসছেন।

Bangladesh Skill Development Institute (BSDI) ২০০৬ সাল থেকে কনফেডারেশন অফ ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট (সিটিএইচ) বোর্ডের অধীনে হোটেল ম্যানেজমেন্ট এর উপরে ১ এবং ২ বছর মেয়াদী  ডিপ্লোমা পরিচালনা করে আসছে। এই ডিপ্লোম্যাটিক হচ্ছে প্রফেশনাল ডিপ্লোমা এবং এই কোর্সগুলোতে খুব বয়স সীমা নির্ধারন করা নেই। যেকোনো বয়সেই এই কোর্স করা সম্ভব। এই কোড গুলো তে ভর্তি হতে ন্যূনতম যোগ্যতা এইচএসসি পাস হতে হবে যোগ্যতা এইচইসসি পাশ হতে হবে। এখানে কোর্সের সিলেবাস এবং কোর্স রিলেটেড সমস্ত কিছু সিটিএস বোর্ড থেকে নির্ধারণ করা হয় এবং সার্টিফিকেটও সিটিএইচ বোর্ডের অধীনে হয়।

তথ্যের সাথে আমি কি সংযোগ তৈরি করতে পারছি?

তথ্যের সাথে আমি কি সংযোগ তৈরি করতে পারছি?

জীবনে শেখার কোন শেষ নেই। আমরা সবাই শিখছি, কেউ হয়তো লিংকডইন থেকে বা হয়তো ফেসবুক থেকেও শিখছি। কিন্তু আমাদের সাথে অগ্রগামী মানুষেদের কিছুটা পার্থক্য আছে। তারা সবসময় যেকোন কিছু দেখে বা কারো সাথে আলোচনা করে যা শিখলেন সেটা তার ব্যক্তিগত এজেন্ডা বা ইচ্ছা বা সখের সাথে সংযোগ তৈরি করেন। যে সংযোগটিই আসলে তাকে তার ক্যারিয়ারের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করে। আজ সকালে আমি একটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশগ্রহন করি। মিটিংটি পরিচালনা করছিলেন ড্যাফোডিল পরিবারের সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খান। মিটিংয়ের কোন একটি পর্যায়ে তিনি একটি বিষয় আমাদের সকলের সামনে নিয়ে আসলেন। কোন একটি প্রশ্নে উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার প্রতিদিনের সকাল শুরু হয় কিভাবে? উত্তরটিতে আমি যে এতোখানি চমকিত হবো সেটা আমি নিজেই বুঝতে পারি নি। তিনি বললেন প্রতিদিন সকাল শুরু হয় জাতীয় দৈনিক পড়ে। কখনও কাগজের মাধ্যমে পড়েন, কখনও হয়তো প্রযুক্তির মাধ্যমে পড়েন। এই অভ্যাসটির কারনে উনার পক্ষে সম্ভব হয় সারবিশ্বের তথ্য সংগ্রহের। যে তথ্যগুলোকেই তিনি সংযোগ ঘটান উনার ক্যারিয়ার এজেন্ডার সাথে এবং এটি ছাত্রজীবন থেকেই তিনি অনুশীলন করে আসছেন। কিন্তু আমার চমকিত হবার কারনটি আমি এই লেখাটির শেষের দিকে উল্লেখ করেছি।

সংবাদপত্র আমাদেরকে সমৃদ্ধ করে তথ্য এবং সাধারণ জ্ঞান সরবরাহ করবার মাধ্যমে। একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, খেলাধুলা, বিনোদন, বাণিজ্য, মানবিকতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ সম্পর্কে জানতে পারি সংবাদপত্রের মাধ্যমে। পৃথিবীর প্রায় সকল সফল ব্যক্তিরাই সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাসকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এই অভ্যাসটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশস্ত করবে এবং আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে। বিষয়টি হয়তো খুবই সাধারন মনে হবে অনেকের কাছে কারন আমরাও কোন না কোন উপায়ে খবরের কাগজ পড়ি কিন্তু আমাদের পড়াটা সীমাবদ্ধ থাকে আমাদের পছন্দনীয় বিষয়ের মধ্যে এবং শুধুমাত্র জানবার নিমিত্তে। সংযোগ তৈরি করবার জায়গায় আমরা হয়তো অনেকেই ব্যর্থ হই।

আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব একটি পছন্দনীয় ক্ষেত্র আছে। যেখানে আমরা স্বাচ্ছন্দবোধ করি কাজ করতে বা আগ্রহী কাজ করবার জন্য। এখন এই আগ্রহের জায়গা আরো বেশী দৃঢ় হয় যখন আমরা আত্মবিশ্বাসী হই। কিন্তু আমরা অনেকেই আত্মবিশ্বাসের জায়হায় হোচট খাই। কিন্তু কেন? আত্মবিশ্বাসের জন্য ক্যারিয়ার পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু সমস্যা হলো পরিকল্পনা আমরা কোনদিনই করতে সক্ষম হবো না যদি না আমার কাছে সঠিক তথ্য থাকে। আমার কাছে মনে হয় এখানে একটি ৩৬০ ডিগ্রী মডেল হতে পারে। যেমনঃ

আমরা প্রত্যেকেই পড়ছি। সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, ব্লগ, আর্টিক্যাল, বই বিভিন্ন উপায়ে পড়ছি কিন্তু সংযোগ ঘটাতে পারছি না। আর সংযোগ ঘটাতে না পারার কারনে উপরের যে ৩৬০ ডিগ্রী মডেলের কথা উল্লেখ করলাম সেটি পরিপূর্ন হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন টিপস এবং টেকনিক ইতিমধ্যেই দিয়েছেন যে কিভাবে পড়লে ক্যারিয়ারের জন্য ৩৬০ মডেল তৈরি করা সম্ভব হবে। আমার খুব ভালো লাগছে একটি বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যেটি হয়তো অনেকেই চাইলে সহানুভূতি বা Empathy সাথে তুলনা করতে পারেন। ড্যাফোডিল পরিবারের সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খান তার ব্যক্তিগত চরম ব্যস্ততার মাঝেও শুধুমাত্র ছাত্র ছাত্রী, সদ্য গ্র্যাজুয়েট, প্রফেশনাল বা উদ্যোক্তাদের জন্য ২১টি লেকচারের একটি কোর্স তৈরি করেছেন এবং আপলোড হয়েছে GoEdu.ac লার্নিং পোর্টালে এবং সকলের জ্ঞান অর্জনের জন্য এটি সম্পূর্ন কমপ্লিমেন্টরী সেবা উনার পক্ষ থেকে। এই লিংকের Click Here মাধ্যমে প্রবেশ করে আপনারা চাইলেই কোর্সটিতে অংশগ্রহন করতে পারেন এবং জেনে নিতে কিভাবে পড়লে আপনিও তথ্যের সাথে নিজের ক্যারিয়ারে সংযোগ ঘটাতে পারবেন।

বন্ধুরা আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বস করি জীবনে শেখার কোন শেষ নেই। প্রতি মুহুর্তে শিখছি। শেখার গুরুত্বপূর্ন একটি মাধ্যম হচ্ছে পড়া বা জানতে চওয়া কি আছে এর মাঝে যা আমাকে সাহায্য করতে পারে। যা আমি আমার ক্যারিয়ারের সাথে সংযোগ ঘটাতে পারি। তথ্য কি শুধুই তথ্য? তথ্যের সাথে আমি কি সংযোগ তৈরি করতে পারছি? প্রশ্নটি আপনাদের সকলের কাছে রেখে শেষ করছি


লেখকঃ কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

বাক্সে-জমা শিক্ষা

বাক্সে-জমা শিক্ষা

আজকে আসলে আমি শিক্ষাটাকে আমরা কিভাবে বাক্স বন্ধ করে রাখি, বাক্সের মধ্যে জমা করে রাখি সে ব্যাপার নিয়ে কিছু বলব-

স্কুলের বাইরে বা ভেতরেযেকোনো স্তরে শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্ককে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করলে এর বর্ণনাধর্মিতা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এই সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে বর্ণনাকারী বক্তা ( শিক্ষক) এবং মনোযোগের সাথে শ্রবণকারী শ্রোতা ( ছাত্র) মূল্যবোধ বা বাস্তবতার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, তা যে বিষয়বস্তুকে ঘিরেই হোক না কেন, বর্ণনার প্রক্রিয়ায় জীবনরিক্ত অসার হয়ে ওঠে। শিক্ষা এখন বর্ণনাত্নক অসুস্থতায় ভুগছে।

শিক্ষক এমনভাবে বাস্তবতার কথা বলেন যেন তা গতিহীন, স্থির, কুঠুরিবদ্ধ এবং তাকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। অথবা, তিনি এমনসব বিষয়ের অবতারনা করেন যা ছাত্রদের অস্থিত্বের অভিজ্ঞতার সাথে পুরোপুরি সম্পর্কহীন। তাঁর কাজ হচ্ছে কোনো কিছু বর্ণনা করে ছাত্রদের মগজ পুরো করে দেওয়া। সেই বর্ণনা বিষয়বস্তু বাস্তবতা হতে বিচ্ছিন্ন, সমগ্রতার সাথে সম্পর্কহিত। যে সমগ্রতা তাদের বিপদাপন্ন করেছে এবং যে সমগ্রতাশিক্ষা সম্পর্কিত তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তার সাথে কোন যোগ নেই এই শিক্ষার। শব্দকে তার যথার্থতা হতে দূরে সরিয়ে তাকে ফাঁপা, বিচ্ছিন্ন এবং খাপছাড়া বকবকানিতে পর্যবসিত করা হয়।

আরো খারাপ ব্যাপার হলো এই যে, ধরনের শিক্ষা ছাত্রদের বাক্সে পরিণত করে; সেই বাক্স পুরো করার দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষকের ।যত সুষ্ঠুভাবে শিক্ষক সেই বাক্স পূর্ণ করতে পারে তত যোগ্য সেই শিক্ষক। যত নিরীহভাবে ছাত্র সেই বাক্স পূর্ণ করতে পারে তত যোগ্য সেই শিক্ষক। যত নিরীহভাবে ছাত্র সেই বাক্স পূর্ণ করার ব্যাপারে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে তত ভালো সেই ছাত্র।

ফলে শিক্ষা হয়ে ওঠে জমা করার বিষয়; যেখানে ছাত্ররা জমা রাখার পাত্র আর শিক্ষকগণ হচ্ছেন জমাকারী। যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার বদলে শিক্ষকগণ ইশতেহার জারি করেন, বিদ্যা জমা রাখেনছাত্ররা তা মুখস্ত করে আর তার পুনরাবৃত্তি করে। এটি হচ্ছে শিক্ষার ব্যাংকিং লেনদেনেরধারণা। এতে ছাত্রদের ভূমিকা হচ্ছে জমা করা জিনিস গ্রহণ করা, নথিবদ্ধ করা আর জমা রাখা। 

এটি সত্যি যে, যেসামগ্রী তারা জমা করে সেগুলোর সংগ্রাহক বা কেটালগার হতে পারে ছাত্ররা। কিন্তু অন্তিম বিশ্লেষণে এই পদ্ধতিতে মানুষ সৃজনশীলতা, পরিবর্তন এবং জ্ঞানের অভাবে যান্ত্রীক হয়ে পড়ে। কারণ, অনুসন্ধিৎসা আর প্র্যাক্সিস ব্যতীত মানুষ সত্যিকার মানবিক হয়ে উঠতে পারে না। আবিষ্কার, পুনরাবিষ্কারের মাধ্যমে, এই বিশ্বে, এই বিশ্বের সাথে, একে অপরের সাথে, মানুষ যে অস্থির, উদ্দাম, অবিরাম আশাপ্রদ অনুসন্ধান চালায়, তাতেই শুধু জ্ঞানের সৃষ্টি হয়।

ব্যাংকিং ধারণায় জ্ঞান হচ্ছে একটি দান সামগ্রীযারা পুরোপুরি অজ্ঞ বলে বিবেচিত তাদেরকে প্রদেয় পন্ডিতমন্যদের দান। অন্যদের ওপর পুরোপুরি অজ্ঞতা আরোপ হচ্ছে অত্যাচারীর আদর্শের চরিত্রলক্ষণ; এই আদর্শ শিক্ষা এবং জ্ঞানকে অনুসন্ধানের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে অগ্রাহ্য করে। শিক্ষক নিজেকে ছাত্রের বিপরীত মেরুতে দাঁড় করান; ছাত্রদের অজ্ঞতা চরম বলে বিবেচনা করে তিনি তাঁর অস্তিস্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। হেগেলীয় দ্বন্দ্বের ক্রীতদাসের মতো বিচ্ছিন্ন থেকে ছাত্ররা শিক্ষকের অস্তিত্বের প্রশ্নে নিজেদের অজ্ঞতা মেনে নেয়। কিন্তু কখনো অনুধাবন করতে পারে না যে, তারাও শিক্ষকদের শিক্ষিত করে তোলে।

অপরপক্ষে মুক্তিদায়ী শিক্ষার যৌক্তিকতা এই যে, এটি সমন্বয় সাধনে প্রবৃত্ত হয়। ছাত্রশিক্ষকের দ্বন্দ্বের সমাধানের মাধ্যমে শিক্ষার যাত্রা শুরু করতে হবে; দুই মেরুর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবেযাতে উভয়েই একই সাথে ছাত্র শিক্ষক হয়ে ওঠে।

ব্যাংকিং ধারণার মধ্যে এর সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং, উলটো ব্যাংকিং পদ্ধতির শিক্ষা বিরাজমান দ্বন্দ্বকে রক্ষা করবে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তীব্রতর করবে।অত্যাচারী সমাজের চারিত্রলক্ষণ নিম্নবর্ণিত মনোভাব আচার আচরণের মাধ্যমে তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেঃ

১। শিক্ষক শিক্ষা দেন এবং ছাত্ররা শিক্ষা গ্রহণ করে।

২। শিক্ষক সবকিছু জানেন এবং ছাত্ররা শিক্ষার কিছুই জানে না।

৩।শিক্ষক ভাবনাচিন্তা করেন আর ছাত্ররা হচ্ছে তার ভাবনা চিন্তার বিষয়।

৪। শিক্ষক কথা বলেন , ছাত্ররা চুপচাপ শোনে।

৫।শিক্ষক শৃংখলা আনয়ন করেন এবং ছাত্ররা শৃংখলা মেনে চলে।

৬।শিক্ষক নির্বাচন করেন এবং তাঁর পছন্দ প্রতিষ্ঠা করেন, ছাত্ররা তা মেনে চলে।

৭। শিক্ষক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন; শিক্ষকের কর্মের মধ্যদিয়ে ছাত্ররা কাজ করার স্বাদ লাভ করে।

৮। শিক্ষক কর্মসূচির বিষয়বস্তু নির্বাচন করেন, ছাত্ররা তা অনুসরণ করে।

৯। শিক্ষক জ্ঞানের কর্তৃত্বকে তার নিজের পেশাগত কর্তৃত্ব বলে ভুল করেন। ফলে ছাত্রদের স্বাধীনতার বিপরীতে তাঁর কর্তৃত্বই বজায় রাখে।

১০। শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষণ প্রক্রিয়ার বিষয়ী, ছাত্ররা হচ্ছে শুধু বিষয়।

 

 

লেখক,

=====================

সোমা রানী দাস

বিভাগীয় প্রধান 

ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং 

মাদার তেরেসার ১০টি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি

নীল পাড়ের সাদা সুতি শাড়ি, রুক্ষ চামড়া ও মায়াবী এক চেহারা- শুধু এতটুকু বললে যে মানুষটির ছবি চট করে মাথায় চলে আসে, তার নাম মাদার তেরেসা। মহীয়সী এই নারী পৃথিবীতে মানবতার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি ছিলেন একজন ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক, যিনি সারাজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন মানবতার দোরগোড়ায়।

নানা সময় ছুটেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে, কোলে তুলে নিয়েছেন পীড়ন-নিপীড়নে থাকা হাজারো শিশুদের, সেবা করেছেন অনেক অবহেলিতদের। পৃথিবীতে তাঁর অবদান কখনোই বলে শেষ করা সম্ভব নয়। মাদার তেরেসা জগতজুড়ে অনেক খ্যাতি পেয়েছেন নিজের কষ্টসাধ্য চেষ্টার কারণে, তবে পথটা এতটাও মসৃণ ছিল না যতটা না শুনতে মনে হচ্ছে। অসহায়দের নিয়ে চলাফেরার সাথে সাথে তাঁর নিজের মধ্যেও অনেক উপলব্ধি এসেছিলো যা মাদার তেরেসার নানা উক্তির মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে। এসব উক্তি যতটা শ্রুতিমধুর, ঠিক ততটাই অনুপ্রেরণামূলক।

মাদার তেরেসার ১০টি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি:

১. পিতৃবিয়োগের পর সময়টা অনেক কঠিন ছিল মাদার তেরেসার জন্য। তাঁর মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে অনেক কষ্টে বড় করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এবং যোগদান করেন সিস্টার্স অব লরেটো নামক এক মিশনারি সংস্থায়। ১৯৪৬ সালে ধর্মীয় কাজে ভারতের দার্জিলিং যাত্রাপথে তাঁর মধ্যে এক গভীর উপলব্ধি আসে যাকে পরবর্তীতে তিনি “কল উইদিন দ্যা কল (Call within the call)” হিসেবে আখ্যা দেন। এসময়ই তাঁর মধ্যে দরিদ্রের মাঝে বেঁচে থাকার যে আকাঙ্ক্ষা, সেটির পরিস্ফুটন ঘটে। তাঁর মতে সর্বদা দুস্থ অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আমাদের প্রতি আদেশ এবং এই আদেশ অমান্য করা মূলত ধর্মবিশ্বাসের অবমাননা করা। তিনি বলেন,

“বাইরের জগতে এখনি বেড়িয়ে পড়ো এবং ভালোবাসো প্রত্যেকটি মানুষকে। তোমার উপস্থিতি যেন হাজারো মানব হৃদয়ে নতুন আলোর সঞ্চার জাগায়।“

২. আমি একটি ব্যাক্তিগত গল্প বলবো এখন। সময়টা ছিল ২০১৩ কিংবা ২০১৪ এর একটা সময়। আমি ক্লাস নাইনে পড়তাম তখন, বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল অ্যাণ্ড কলেজে। সে সময়ে আমার স্কুলের কিছু ক্লাসমেট নিজ উদ্যোগে একটা সামাজিক সংঘ খুলেছিলো, নাম আলোড়ন, যার মূল কাজই হচ্ছে বনশ্রীর রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো হাজারো পথশিশু, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধীসহ আরো অনেক মানুষকে কোনো না কোনোভাবে সাহায্য করা।

সাহায্যের তহবিলের জন্য ওরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রোড ক্যাম্পিং করে টাকা উঠাতো। আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল আলোড়নে যোগ দেয়ার। একবার আমার খুব কাছের এক বন্ধুকে আলোড়নের এসব উদ্যোগের কথা বলতেই সে আমাকে বলেছিলো “শুন, এভাবে মাত্র একজন-দুইজন মানুষকে সাহায্য করে কী লাভ বল? দেশে যে হাজারো মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে, তার কী হবে? একজন মানুষকে সামান্য একটা জামা কিনে না দিয়ে বরং বৃহত্তর উদ্যোগে কিছু করা উচিত।” আমাদের সমাজে এরকম অনেক ঘটনাই দেখতে পাওয়া যায়। এইরকম ঘটনাগুলোকে ইঙ্গিত করে মাদার তেরেসা বলেছিলেন,

“যদি তুমি একশো মানুষকে সাহায্য করতে সক্ষম না হও, তাহলে অন্তত একজনকে সাহায্য করো।“

৩. ১৯৪৮ সালে মাদার তেরেসা গরীব ও সাহায্যের আশায় থাকা মানুষদের নিয়ে নিজের মিশনারি কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি নিজ উদ্যোগে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতার মতিঝিল এলাকায়। এত বড় একটা উদ্যোগ নেয়ার পূর্বে তিনি কারোর জন্য অপেক্ষা করেননি। তাঁর মনে হয়েছে যে উদ্যোগ কারোর না কারোর তো ঠিকই নিতে হবে। কারোর আদেশ-উপদেশের বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে নিজ প্রচেষ্টাতেই সকল কাজ শুরু করার জন্য মাদার তেরেসার জীবনী ছিল অন্যতম দৃষ্টান্ত।

“কারোর নেতৃত্বের অপেক্ষা না করে নিজ থেকেই সকল উদ্যোগ নেয়া উচিত।“

৪. শুরুর দিকেবিদ্যালয় পরিচালনা করার কাজটা তাঁর একার পক্ষে অনেক কঠিন ছিলো। ধর্মপালন থেকে শুরু করে মানবসেবা, সত্যিই একটা সময় তাঁর মাথার ওপর পাহাড়সম দায়িত্বের বোঝা চলে আসে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। ধীরে ধীরে তাঁর এই মহৎ উদ্যোগে হাজারো মানুষ যুক্ত হতে শুরু করে। দ্রুতই এই খবর ভারতীয় সরকারের নজরে আসে। ভারতীয় সরকারের তখনকার প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং জহরলাল নেহেরুও মাদার তেরেসার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। মাদার তেরেসা মনে করতেন,

“আমি একা এই পৃথিবীকে বদলে দিতে পারবোনা। তবে আমি স্বচ্ছ জলে একটি ছোট পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করে বড় বড় জলতরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারবো।“

৫. মাদার তেরেসার জীবনী থেকে জানা যায় যে, তিনি জন্ম থেকেই ছিলেন প্রচণ্ড প্রভুভক্ত। তিনি দিনের বড় একটা সময় প্রার্থনায় মগ্ন থাকতেন, বাকি সময় মানবসেবায়। তিনি মানবসেবাকে ধর্মপালনের একটি মহৎ অংশ হিসেবেই সর্বদা গণ্য করতেন। তাঁর দর্শন ছিল,

“সৃষ্টিকর্তা তোমাদের সফল হওয়ার আদেশ দেননি, শুধুমাত্র সর্বদা অবিরাম চেষ্টা ধরে রাখার আহ্‌বান করেছেন।“

তিনি তাঁর কাজকে সবসময় শ্রদ্ধা করতেন এবং একই সাথে ভরসা রাখতেন সৃষ্টিকর্তার উপর। তিনি জানতেন, কঠিন সাধনা করলে ঈশ্বর অবশ্যই একদিন মুখ তুলে তাকাবেন।

৬. মাদার তেরেসা যে সারাজীবন নিজের অবদানের জন্য মানুষের প্রশংসা পেয়েছেন, তা কিন্তু নয়। জীবনের নানা পর্যায়ে তিনি মানুষের সমালোচনার শিকার হয়েছেন। সমালোচিত হয়েছেন ধর্মযাজকের নির্দিষ্ট পোশাক ত্যাগ করে সাদা শাড়ি তুলে নেয়ার সময়, সমালোচিত হয়েছেন গর্ভপাত নিয়ে সমালোচনা করায়। এমনকি অনেকে তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও সমালোচনা করতে দেরি করেনি। কিন্তু এসব কথার তীর মাদার তেরেসাকে নিজের কর্মজীবন ও মানবসেবা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। এমনকি তিনি এসব মানুষকে কখনো এসব কথার জের ধরে বিচার করেননি। তাঁর জীবনী থেকে পাওয়া একটি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি হলো,

“মানুষকে বিচার করে সময় নষ্ট করলে কখনোই তাদেরকে ভালবাসার সময় পাওয়া যাবে না।”

এমনকি যেসব মানুষ মাদার তেরেসার কাজের সমালোচনা করতো, মাদার তেরেসা ঠিক সেসব মানুষকেই পরবর্তীতে মানবতার ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য অনুরোধ করতেন।

৭. আমি একটা জিনিস খেয়াল করে দেখলাম। সেটা হলো, এই ব্লগটি লেখার সময় আমি কিছুক্ষণ গুগলের এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করলাম, কিছু তথ্য সংগ্রহ করলাম, কিছু ছবি বের করলাম। হঠাৎ করে চোখে ধরা পড়লো যে, মাদার তেরেসার বেশিরভাগ ছবিতেই তাঁর হাস্যজ্জল একটা চেহারা ভেসে উঠছে। মাদার তেরেসা খুব গম্ভীর হয়ে বসে আছেন, এমন ছবি খুব কম আছে বলেই ধরে নিচ্ছি। আসলে মাদার তেরেসা নিজেও খুব হাসিখুশি একজন মানুষ ছিলেন। তিনি মানবসেবার কাজের মধ্যেই তাঁর সবটুকু সুখ খুঁজে পেতেন। তিনি জানতেন, একজন অসহায় হতদরিদ্রের কাছে সামান্য হাসির মূল্য কতটুকু। তাঁর একটি মহৎ উক্তি হলো,

“প্রত্যেকের প্রতি ভালবাসার শুরুটা হোক হাসির মাধ্যমে। “

মাদার তেরেসা আরো বলেন “অনেক মানুষের জীবনে একটি ছোট্ট হাসি কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা আমরা কখনোই বুঝতে পারবো না।“ সকল ভাল কাজের শুরু হাসির মাধ্যমে-এই নীতিতেই যেন মাদার তেরেসার আপাদমস্তক গড়া ছিল।

৮. ১৯৯৬ সালে পৃথিবীর শতাধিক দেশে সর্বমোট ৫০০টিরও বেশি মিশনারি পরিচালনা করেছিলেন মাদার তেরেসা। মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে যে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো, সময়ের ব্যবধানে সেই সংখ্যাটি কয়েক হাজারে পৌঁছায়। তারা সবাই পৃথিবীর নানা প্রান্তে মানবসেবা অব্যাহত রেখেছিলেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন। গরীবদের মাঝেও যারা গরীব, তাদের জন্য কাজ করতো এই চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান। যেই শুরুটা হয়েছিল ক্ষুদ্র আকারে, আজ তা পৃথিবীব্যাপ্ত আকার ধারণ করেছে।

“আমরা সকলেই শুরুতেই বিশাল কোনো মহৎ কাজ করতে পারবো না। কিন্তু ভালবাসা দিয়ে ছোট ছোট অনেক ভাল কাজ করা সম্ভব।“

একসময়ের সেই ক্ষুদ্র মানবসেবা প্রতিষ্ঠান আজ মাদার তেরেসা অর্গানাইজেশন এ রূপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত রয়েছে বিখ্যাত মাদার তেরেসা সেন্টার।

৯. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ- ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫, এই পাঁচ বছরব্যাপী চলমান এই যুদ্ধ পুরো পৃথিবীর মানচিত্রকে যেন ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। জার্মান হিটলার বাহিনীর হাত ধরে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ অচিরেই প্রাণ হারায়, আহতদের সংখ্যাটা অজানা থাকাই শ্রেয়। চারদিক তছনছ করে দেয়া এই যুদ্ধকালীন সময়ে পৃথিবীবাসী যেন ভুলে গিয়েছিল শান্তির প্রকৃত শব্দার্থ। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নেতারা কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন পৃথিবীতে পুনরায় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।

এসময় এই পুরো ব্যাপারটা স্বয়ং মাদার তেরেসাকেও উদ্বিগ্ন করে তুলেছিলো। পৃথিবীতে এত ধ্বংসযজ্ঞ, মানুষের আর্তনাদ তাঁর মনকে ব্যথিত করে তোলে। তিনি মানুষের কাছে গিয়ে শুনেছেন যুদ্ধের সেই ভয়াবহতা। তিনি মনে করতেন, অস্ত্র দিয়ে কখনোই শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। শান্তি ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে বেশি দরকার যেটি, সেটি হচ্ছে মানবতা।

“অস্ত্র দিয়ে কখনোই শান্তিকে ঘরে আনা সম্ভব নয়, সম্ভব ভালবাসা ও সহানুভূতির হাত ধরে।“

১০.

“সবচেয়ে ভয়াবহ দারিদ্রতা হচ্ছে একাকীত্ব এবং প্রিয়জনের সহানুভূতি না পাওয়ার অনুভূতি।“

 বর্তমান সময় কিশোর-কিশোরিদের মধ্যে আলোচিত একটি বিষয় হলো ডিপ্রেশন। ভয়াবহ এই ব্যাধির অন্যতম কারণ হচ্ছে একাকীত্ব। একজন মানুষের জীবনে একাকীত্ব যে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, তা কল্পনাতীত। মাদার তেরেসার জীবনেও এমন অনেক সময় এসেছে, যখন তিনি একাকীত্বে ভুগেছেন। অল্প বয়সেই পরিবার ছেড়ে এসে মিশনারিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে তিনি বাকি জীবন পরিবারকে কাছে পাননি।

এমনকি ১৯২৮ সালে ১৮ বছর বয়সে গৃহত্যাগের পর তিনি তাঁর মায়ের চেহারা আর কখনো দেখতে পাননি। তিনি কখনো কখনো অনেক ভেঙ্গে পড়তেন একাকীত্বের জন্য। ঘরে ফেরার জন্য তাঁর মন সবসময় আনচান করতো, কিন্তু দায়িত্বের টানে কখনোই তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।

মাদার তেরেসার জীবনী আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, অনেক অনুপ্রেরণারও জোগান দেয় তাঁর অসাধারণ জীবন। কিভাবে মানুষকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে আত্মতুষ্টি পাওয়া যায়, তারই নিদর্শন নীল পাড়ের শাড়ি পরিহিত হাস্যোজ্জ্বল ঐ মহীয়সী নারী। তাই বোধহয় মাদার তেরেসার প্রতিটি বাণীই যেন জয়গান গায় মানবতার, জয় হয় মানুষের।

Reference :

https://www.catholicnewsagency.com/news/from-inspiration-to-adoption-a-story-of-working-with-mother-teresa-47977

https://www.brainyquote.com/authors/mother_teresa

http://10minuteschool.com/blog/mother-teresa-quotes/