“হিস্ট্রি অফ মডার্ন আর্কিটেকচার অফ বাংলাদেশ” – পার্ট ০১ঃ জাতীয় স্মৃতিসৌধ
আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতিকীকরন হিসেবে দন্ডায়মান হয়ে আছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ যা ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে নির্মিত এই জাতীয় স্মৃতিসৌধটি তার স্থাপত্য শৈলী ও নির্মাণকৌশলের জন্য বাংলাদেশের মডার্ন আর্কিটেকচারের তালিকায় জায়গা দখল করে আছে।
আজকে আমরা জানব জাতীয় স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ–
জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর চূড়ান্ত ডিজাইনের জন্য ৫৭ জন প্রতিযোগির মধ্যে স্থপতি মঈনুল হোসেনের নকশা টি নির্বাচিত হয়। এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ মুহুর্তে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি সৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
অসমান উচ্চতা ও স্বতন্ত্র ভিত্তির উপর সাতটি ত্রিভুজাকৃতির প্রাচীর নিয়ে গঠিত হয় মূল সৌধটি। সর্বোচ্চ স্তম্ভটি সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যের ভিত্তির উপর, আর সর্বদীর্ঘ ভিত্তির উপর স্থাপিত স্তম্ভটি সবচেয়ে কম উচ্চতার। প্রাচীরগুলোর মাঝখানে একটি ভাজ দ্বারা কোনাকৃতির এবং একটির পর একটি সারিবদ্ধভাবে বসানো। কাঠামোটির সর্বোচ্চ বিন্দু ১৫০ ফুট উচু। কাঠামোটি এমনভাবে বিন্যস্ত যে, ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে অবকাঠামো গুলোতে পরিদৃষ্ট হয়। স্থপতি মূল স্তম্ভটি নির্মাণে সিমেন্ট-পাথরের কংক্রিট ব্যবহার করলেও এর সংলগ্ন অন্যান্য অবকাঠামো ও পেভমেন্ট নির্মাণে লাল ইট ব্যবহার করেছেন। ভিন্ন ভিন্ন উপাদানের ব্যবহারে মূল স্তম্ভটির গাম্ভীর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। সমগ্র কমপ্লেক্সটি ৩৪ হেক্টর (৮৪ একর) জমি জুড়ে বিস্তৃত। একে ঘিরে আছে আরও ১০ হেক্টর (২৪.৭ একর) সবুজ ভূমি। স্তম্ভটির সামনে বেশ কয়েকটি গণকবর ও একটি প্রতিফলন সৃষ্টিকারী জলাশয় নির্মিত হয়েছে।
প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে প্রবেশ করলে স্তষটিকে প্রবেশদ্বারের অক্ষ বরাবরই চোখে পড়ে। কিন্তু মূল বেদিতে পৌছাতে হলে বেশ কিছু উঁচু-নিচু এলাকা পেভমেন্ট ও একটি কৃত্রিম লেকের উপর নির্মিত সেতু পার হতে হয়। এ সবকিছু স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রামকে চিহ্নিত করেছে। এই সাত সংখ্যাটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্নভাবে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হয়। সাত সংখ্যাটিকে ভাগ সংখ্যা হিসেবে ধরা হয়।
স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যঃ স্মৃতিসৌধের স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে দেওয়া হল–
- এটি ১৫০ ফুট উঁচু।
- এর ফলক সংখ্যা সাতটি।
- এটি জ্যামিতিক ধারায় ৯০° মাপে তৈরি করা হয়েছে।
- রংধনুর রঙ হচ্ছে ৭টি। আমাদের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর। সেখানেও ১ + ৬ = ৭, আবার শেখ মুজিবর রহমান ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেন। তাই তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যা ৭-এর আলোকে স্তরে স্তরে সাজানো ৭টি ফলকের মাধ্যমে চিত্রকর্মে স্মৃতি সৌধটি হয়েছে।
মালামালঃ স্মৃতিসৌধ নির্মাণে ১৪০০ টন সিমেন্ট, ৪৮০ টন লোহা, ১ লক্ষ ঘনফুট পাথর, ৫০ হাজার ঘনফুট বালি, ১ লক্ষ ২৫ হাজার ঘনফুট কংক্রিট এবং শ্রমিকের ১১ লক্ষ ৮৮ হাজার ঘণ্টা শ্রম লেগেছে।
নির্মাণকৌশলঃ তিনটি ধাপে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। নিম্নে তা উলেখ করা হল-
- প্রথম পর্যায়ে কাজ শুরু হয় ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে, আর শেষ হয় ১৯৭৪ সালের জুন মাসে। এতে মোট ব্যয় হয় ২৬ লক্ষ টাকা।
- দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ শুরু হয় ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে আর শেষ হয় ১৯৮২ সালের জুন মাসে। এতে মোট ব্যয় হয় ৩ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা।
- তৃতীয় পর্যায়ে কাজ শুরু হয় ১৯৮২ সালের ২৪ আগস্ট এবং শেষ হয় ১৯৮৬ সালের জুন মাসে। এ সময়ে মোট ব্যয় হয় ৫ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা।
সুতরাং, স্মৃতিসৌধটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছিল ৯ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের নির্মাণ তাৎপর্য এর পাশাপাশি এর সবুজ বেষ্টনী সম্বলিত অসাধারন ল্যান্ড স্ক্যাপিং, স্থাপত্য শৈলী ও নির্মাণকৌশলের জন্য বাংলাদেশের আধুনিক স্থাপত্যে গুরুত্বপূর্ন স্থান দখল করে আছে……
লেখক
লিমা আক্তার
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর
আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন টেকনোলজি
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট