ফ্যান এর সাথে রেগুলেটর ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিল এর সম্পর্ক
রেগুলেটর এর ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিল কি বাড়ে বা কমে?
আসলে ফ্যান আস্তে বা দ্রুত চলার সাথে বিদ্যুৎ বিলের সম্পর্ক নাই। সম্পর্ক হচ্ছে কোন উপায়ে ফ্যানকে ধীরে বা দ্রুত ঘুরানো হলো তার উপর।
গতানুগতিক বিভিন্ন বই গুলোতে আজো লিখে যে, রেগুলেটর এর ব্যাবহারে ফ্যানকে আস্তে বা দ্রুত ঘুরালে বিদ্যুৎ বিল একই থাকে। কথাটি যৌক্তিক নয়। কারন রেজিস্টিভ টাইপের রেগুলেটর ব্যবহার করে ফ্যানের গতিবেগ কমালে বা বাড়ালে বিদ্যুৎ বিল এর কোন পরিবর্তন হয়না এ কথা সত্য কিন্তু ইলেকট্রনিক রেগুলেটর ব্যাবহার করে ফ্যানের গতিবেগ কমালে বা বাড়ালে বিদ্যুৎ বিল এর পরিবর্তন হয়। তাহলে বুঝা গেল রেগুলেটর এর ধরন এর উপর নির্ভর করে. বিদ্যুৎ বিল একই থাকে ,নাকি কমবে।
এবার জানা যাক রেজিস্টিভ রেগুলেটর এবং ইলেকট্রনিক রেগুলেটর এর কার্যপদ্ধতি:
রেজিস্টিভ রেগুলেটর কে ফ্যানের সাথে সিরিজে সংযোগ করা হয়। রেগুলেটর এর নব থাকে, নবকে ঘুরালে ভিন্ন ভিন্ন মানের রেজিস্টরকে ফ্যানের সাথে সিরিজে সংযোগ করে দেয়। ফলে সংযোগকৃত রেজিস্টর নির্দিষ্ট পরিমান ভোল্টেজকে ড্রপ করে দেয়। আর এই কারনে ফ্যান পুর্ন ভোল্টেজ পায়না। তাই ফ্যান আস্তে ঘুরে।
ধরো ফ্যানের চাহিদা ২২০ ভোল্ট, রেগুলেটর যদি ৭০ ভোল্ট ড্রপ করতে পারে এমন রেজিস্টরকে সংযোগ করে দেয় তাহলে ফ্যান ভোল্টেজ পাবে ২২০-৭০=১৫০ ভোল্ট।
আবার ধরো রেগুলেটরকে যদি ২০ ভোল্ট অপচয় করতে পারে এমন রেজিস্টর এর সাথে সংযোগ দেয়া হয় তবে ফ্যান ভোল্টেজ পাবে ২২০-২০=২০০ ভোল্ট।
তাহলে দেখো রেগুলেটর বিভিন্ন মানের রেজিস্টর কে কানেক্ট করে নিজে ভোল্টেজ ড্রপ করে এবং একটি নির্দষ্ট পাওয়ার অপচয় করে বাকি পাওয়ার ফ্যানের জন্য বরাদ্দ রাখে। ফ্যান ধীরে ঘুরাতে যে পরিমান পাওয়ার সেভ হলো তা কিন্ত রেজিস্টর নিজেই পুরোটা অপচয় করে দিচ্ছে।
সুতরাং ফ্যান আস্তে বা জুরে ঘুরলে পাওয়ার অপচয় একই হয় ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ বিলও অপরিবর্তিত থাকে।
মোট পাওয়ার অপচয়=রেগুলেটর এর অভ্যন্তরীণ রেজিস্ট্যান্স কর্তৃক পাওয়ার অপচয় + ফ্যান কর্তৃক পাওয়ার অপচয়।
এবার চলো জেনে নেই ইলেকট্রনিক রেগুলেটর এর অপারেশন:
ইলেকট্রনিক রেগুলেটর মুলত ফ্যানের সাথে অবস্থান করে সুইচিং এর কাজ করে। এসি কারেন্টের সাইন ওয়েভের কিছু অংশ কেটে দিতে পারে এমন ব্যপারগুলো নিশ্চয়ই জানো।
ইলেকট্রনিক রেগুলেটরে ডায়াক, ট্রায়াক ব্যবহার করে সাইন ওয়েভের কিছু অংশ কেটে দেয়া হয়। তার মানে সাইন ওয়েভের সম্পুর্ন অংশ নয় বরং একটি সুনির্দিষ্ট অংশকে ফ্যানের জন্য বরাদ্দ করে দেয় এই ইলেকট্রনিক রেগুলেটর। যেহেতু সম্পুর্ন সাইনওয়েভটি ফ্যানের জন্য কার্যকরী নয় সুতরাং ফ্যান কম পাওয়ার অপচয় করবে।
আরেকটু সহজ করে বলি, একটি সাধারন সুইচ যেমন ফ্যানটিকে বার বার অন অফ করতে পারে। ইলেকট্রনিক রেগুলেটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ অন করে রাখে আবার কিছু সময় অফ করে রাখে। ফলে পাওয়ার সেভ হয়। এটা এত দ্রুত সময়ে অন -অফ করে যে, কখন অন হচ্ছে আর কখন অফ হচ্ছে ফ্যান বুঝে উঠতে পারেনা। ফলে ফ্যান বিনা বাধায় অবিরাম ঘুরতে থাকে। মাঝখান থেকে পাওয়ার সেভ হয়ে গেল। যেমন, আমরা যে দ্রুত চোখের পাতা প্রতিনিয়য়ত বন্ধ করি, আমরা কখনো অন্ধকার দেখিনা, কারন চোখের এই অন অফ এর সময়টি খুব দ্রুত হয়। এত দ্রুত অন অফ হয় যে আমাদের চোখ অফ এর বিষয়টি ধরতেই পারেনা। সুতরাং বিনা বাধায় আমাদের কাছে সব কিছু দৃশ্যমান হয়। মুলত ইলেকট্রনিক রেগুলেটর এক ধরনের গেইট বলতে পারো বা সুইচও কল্পনা করতে পারো।
বাংলাদেশের সরবরাহ ফ্রিকোয়েন্সি ৫০ হার্জ। তার মানে একটি পুর্ন সাইন ওয়েভ তৈরি হতে সময় লাগে ০.০২ সেকেন্ড। তাহলে অর্ধ সাইকেল তৈরি হতে সময় লাগে ০.০১ সেকেন্ড।
প্রতি অর্ধসাইকেলে ০.০১ সেকেন্ড সময় হতে ০.০০৫ সেকেন্ড সময় অফ করে রাখতে পারলে। অর্ধেক পাওয়ার সেভ হবে।
সুতরাং ফ্যানের রেগুলেটর এর টাইপের উপর নির্ভর করবে রেগুলেটর এর মাধ্যমে ফ্যানকে ধীরে ঘুরলে বিল কমবে নাকি একই থাকবে। যদি রেগুলেটর রেজিস্টিভ টাইপ হয় তাহলে রেগুলেটর দিয়ে ফ্যানের গতি কমালেও বিদ্যুৎ বিল কমবেনা একই থাকবে। কিন্তু যদি রেগুলেটরটি ডায়াক ট্রায়াক দিয়ে তৈরি ইলেকট্রনিক রেগুলেটর হয়, তাহলে রেগুলেটর দিয়ে ফ্যানের গতি কমালে বিদ্যুৎ বিল কমবে।
আশা করছি বিষয়টি তোমাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। বিষয়টিকে সর্বসাধারণের জন্য সহজ ভাবে উপস্থাপন করলাম। বিস্তারিত জানার জন্য ডায়াক, ট্রায়াক এর অপারেশন এবং রেগুলেটর এর সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখে নাও।
লেখক-
নাহিদুল ইসলাম (নাহিদ)
বিভাগীয় প্রধান
ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট