শিক্ষিত নয়, সুশিক্ষিত হতে হবে

শিক্ষিত নয়, সুশিক্ষিত হতে হবে

জন্মগত ভাবেই মানুষ চিন্তা ও সৃষ্টিশীল। এটা মহান আল্লাহ প্রদত্ত। মানুষের এই সুপ্ত চিন্তা শক্তি ও সৃষ্টিশীলতাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে জ্ঞান , দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা অর্জন করাই হলো শিক্ষা। সাধরণত আমরা শিক্ষার ব্যাপারে সুশিক্ষা, অশিক্ষা বা কুশিক্ষা শব্দগুচ্ছ শুনে থাকি। শিক্ষা বা জ্ঞানার্জনের সাথে নৈতিকতা বা সুচিন্তা না থাকলেই আমরা সেটাকে অশিক্ষা বা কুশিক্ষা বলে থাকি।

শিক্ষা না থাকাকে গুণীজন ”চোখ থাকিতে অন্ধ” এর সাথে তুলনা করেছেন। শিক্ষার অভাবে মানুষ দেখেও অনেক কিছু বুঝে না, পড়তে পারে না, বোধগম্য হয় না ইত্যাদি। অন্যদিকে, কিছু শিক্ষিত মানুষ পড়তে পারলেও বা বোধগম্য হলেও, সুশিক্ষার অভাবে উন্নত চিন্তা চেতনায় নিজেকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে না। ফলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

জন্মের পর হতেই মানবশিশুর শিক্ষা শুরু হয় তার পরিবার থেকে। সেখানে যে মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়, সেটাই তার পরবর্তী জীবনের সকল শিক্ষার ভিত্তি। তাই পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রধান বিদ্যালয় এবং মা বাবা হচ্ছেন শিক্ষক – শিক্ষিকা। তবে মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য পারিবারিক পরিমন্ডল অত্যন্ত ক্ষুদ্র। কোন একক ব্যক্তি বা পরিবারের পক্ষে একটি শিশুকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা দিয়ে জীবনের জন্য প্রস্তুত করে তোলা সম্ভব নয়। এ কারনে নির্ভর করতে হয় আত্বীয়-স্বজন, সমাজ, স্কুল, কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তথা রাষ্ট্রের কাছে।

শিশুদের জীবন একটি ছোট বীজের মত। বীজ রোপন করলে উর্বর মাটি, অনুকুল পরিবেশ ও পরিচর্যা পেলে বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়। তেমনি মানবশিশু জন্মগ্রহন করে অপার সম্ভাবনা নিয়ে। সেই সম্ভাবনা বাস্তবরূপে পরিণত হয় গুরুজনদের প্রতিপালন, পরিচর্যা আর ব্যক্তির নিজ সাধনার গুণে।

সভ্যতার শুরুতে মানুষ যখন শিক্ষার পথে পা বাড়ায়, তখন থেকে পরবর্তী কাল পর্যন্ত শিক্ষিত লোকজনদের মাঝে সুশিক্ষা বিরাজমান ছিল। তারা আদর্শবাদী ব্যক্তি হিসাবে সমাজে পরিচিত ছিলেন। সে সময় শিক্ষিত মানুষকে ইতিবাচক ভঙ্গিতে দেখা হত এবং সেটা ছিল সার্বজনীন স্বীকৃত। কিন্তু বর্তমান সময়ে শিক্ষিতজনদের মাঝে সেসব গুণাবলী দেখা যায় না। লোভ লালসা, অর্থের কুপ্রবৃত্তি এবং স্বার্থের জন্য অর্জিত শিক্ষাকে ঠেলে দেয় পায়ের নিচে।

শিক্ষার সাথে একটি কথা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত সেটা হচ্ছে নৈতিকতা। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়, শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন আনা, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা। তাই শিক্ষিত হওয়া আর সুশিক্ষিত হওয়া এক কথা নয়।

শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়। সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যা শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে।

বিশ্বের অনেক দেশ আজ সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত। এসব দেশের নাগরিকেরা  যেমন দায়িত্ববান, তেমনি কর্মঠ। লোভ, লালসা তাদেরও আছে, কিন্তু তা চরিতার্থ করার জন্য কখনও অবৈধ পথ অবলম্বন করে না। একমাত্র কঠোর পরিশ্রম আর নীতি নৈতিকতার জন্যই নিজের ও দেশের উন্নতিতে অবদান রাখে এবং নিজের  দেশকে উপস্থাপন করে বিশ্বব্যাপী। জীবনকে দক্ষ গতিশীল, আকর্ষণীয়, গ্রহণযোগ্য ও কল্যাণকামী করতে সুশিক্ষার কোন বিকল্প নাই। একটি জাতির অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, গৌরব, আশা আকাঙ্খা, রাজনৈতিক দর্শন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাকে অক্ষুন্ন রাখতে এবং জাতি গঠনে সামগ্রিক স্বার্থে নিয়োজিত হতে সুশিক্ষা তথা প্রকৃত শিক্ষাই মানুষকে উদ্ধুব্ধ করে। সার্বিক অর্থে একটি সুন্দর জীবন প্রতিষ্ঠার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সুশিক্ষা।

যেহেতু শিশুর শিক্ষা শুরু হয় পরিবার ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে, তাই শিশুর সুশিক্ষা নিশ্চিতে পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবাইকে সমভাবে ভুমিকা রাখতে হবে। শিশুর শারিরীক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে তার মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে হবে।

সুতরাং  শিক্ষা হতে হবে ভালমন্দ, করণীয়-বর্জনীয়, সঠিক-বেঠিক, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি বোঝা এবং সেভাবে নিজেকে পরিচালিত করা । সচ্ছ চিন্তা করতে পারা এবং সর্বোপরি নিজেকে আলোকিত করা এবং নিজের আলোয় অন্যকে আলোকিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

 

লেখক: 

ফারহা দিবা

সিনিয়র ইন্সট্রাকটর

ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যাথমেটিকস

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

Comments are closed.