জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার নাম বর্তমান

বিভিন্ন মোটিভেশন চ্যানেলে কিংবা Self Help বইগুলিতে আমরা সবসময় পড়ি, শুনি বা দেখি যে সর্বদা ইতিবাচক ভাবনা পোষন করুন

“মনে কোন নেতিবাচক চিন্তার জন্ম দিবেন না। কারন আপনি যা ভাববেন তাই হয়ে উঠবেন।” 

কিন্তু আমার কথা হল, এই সুন্দর কথাগুলির কার্যকারিতা আমাদের ওপর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। আমরা যখন পড়ি , শুনি বা দেখি তখন আমাদের মধ্যে কিছু করার জোশ আসে তারপর আবার আমরা একইভাবে জীবনযাপন করতে থাকি যদিও কথাগুলি সত্য। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের জীবনের গল্প আলাদা একই কথা যে সবার কাছে সত্য হবে তেমনটা নয়। সবাই কথাগুলোকে কেমনভাবে তার জীবনে প্রয়োগ করছে সেটাই তার কাছে সত্য। এই যে আমি আর্টিকেলটা লিখছি , আমি তোমাকে সরাসরি বলতে পারি না এটা করো , ওটা করো কারন তুমি বুঝবে তোমার জন্য কোনটা করা উচিত কোনটা নয়? মোটিভেটররা আমাদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারে , আমাদের অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে কিন্তু তারপরের কাজগুলো তো আমাদের নিজেকেই করতে হবে তাই না ? আমি জানি না তোমরা এখন কে কেমন পরিস্থিতির মধ্যে আছো , হয়তো কেউ চাকুরির পরীক্ষায় বার বার ব্যর্থ হয়ে জীবনে আর কিছু হবে না বলে ক্ষান্ত হয়ে আছো।কিংবা কেউ প্রিয়জনেদের হারিয়ে আজ যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছো কেউবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নিজেকে শেষ করে দেবার কথা ভাবছো কেউবা টাকা রোজগারের চেষ্টায় রোজ দৌড়াচ্ছ , কিন্তু দিন শেষে ক্লান্তির বলিরেখা তোমার অন্তর আত্মাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। কেউবা অহেতুক দুঃশ্চিন্তা করে রাতের পর রাত জেগে কাটাচ্ছো। আমি শুধুমাত্র কয়েকটি উদাহরণের কথা বললাম ,এর বাইরেও আরো অনেক সমস্যা , আরও জটিল পরিস্থিতি অনেকের জীবনে থাকতে পারে বা রয়েছে কারন জীবন মানেই সংগ্রাম সংগ্রাম আছে বলেই তো জীবনে বাঁচার আনন্দ আছে সংগ্রাম থেকেই তো শক্তির উদয় হয়। এমনকি কখনও কখনও যন্ত্রণাও এক দারুণ শিক্ষক হয়ে উঠতে পারে প্রত্যেকের কাছে আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলিকে আমরা বদলাতে পারি না , এমনকী কখন কী ঘটবে সেটাও কেউ বলতে পারবো না, কিন্তু ঘটনা গুলির ওপর আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটা সম্পূর্ণ আমাদের ওপর নির্ভর করে জীবন কখনো নিখুঁত হয় না , আনন্দবিষাদ,ভালোমন্দ সবটুকু নিয়েই তো জীবন ,আর সেটা আমাদের উপলব্ধি করা উচিত। প্রত্যেকটা ঘটনার একটা সময়সূচি থাকে ঘটে আবার সেই ঘটনা চলেও যায় আমাদের জীবন থেকে কিন্তু আমারা মাসের পর মাস , বছরের পর বছর অনেক দুঃখ জনক ঘটনা কে আঁকড়ে ধরে থাকি সেটা থেকে বেরোতে পারি না , যত ভোলার চেষ্টা করি ততবার ফিরে আসে সেই মুহুর্তগুলি।কিন্তু জীবন মানে তো এগিয়ে চলা পিছনে ফিরে দেখা নয়

একটা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে গড়ে প্রতিদিন প্রতিটি মানুষের মনে সত্তর হাজার চিন্তার সমাবেশ ঘটে এর মধ্যে মজার কথা হলো তার মধ্যে সত্তর শতাংশই হলো নেতিবাচক চিন্তা চিন্তাগুলির ওপর যদি একটু সজাগ হওয়া যায় এবং কোন চিন্তাটা কার্যকারী কোনটা নয় সেটা বিচার করা যায় তাহলে হয়তো জীবনের মান একটু উন্নত হবে জানি তোমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হচ্ছে , অনেক জটিল সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে , তাই সর্বদা নিজেকে পজিটিভ রাখা দায় কিন্তু আমি দেখেছি প্রতিদিন যদি কিছু ছোটো ছোটো সু অভ্যাস আমরা গড়ে তুলি তাহলে হয়তো আমরা কিছুটা পজিটিভ থাকব, খুশি থাকব , নিজেকে ভালোবাসতে ভালো রাখতে শিখব কারন নিজেকে ভালোবাসতে শিখলে তবেই মানুষ অপরকে ভালোবাসতে শেখে

() দিনটা শুরু হোক ইতিবাচক ভাবনা দিয়ে :- 

আমরা যদি সকালটা শুরু করি কিছু ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে , তাহলে সারাটাদিন আমরা ইতিবাচক ভাবনা নিয়েই কাটাতে পারব। সকালে ঘুম থেকে ওঠে যদি আমরা আমাদের প্রিয়জনদের মুখগুলো দেখতে পারি তারা সুখে আছে, ভালো আছে, এটা কী একটা সুন্দর পুরষ্কার নয়আমাদের জীবনে বলো ? সকালে যদি একটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ফর্দি বানাই যে , পাঁচটি কারনে আজ আমি কৃতজ্ঞতা অনুভব করছি তাহলে দেখবে ভালো লাগবে, দিনটা ভালো কাটবে। কী নেই তা না ভেবে কী আছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি তাহলেই আমরা পজিটিভ থাকবো

 

() নতুন কিছু শেখার ইচ্ছা :-

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যদি আমরা নতুন কিছু শিখি বা পড়ি সেটার রেশ সারাদিন আমাদের বাকি কাজ গুলোতে পড়বে হতে পারে নতুন কোনো Self Help Book যেটা আমাদের কাজে উদ্যম প্রেরণা জাগাতে, নতুন করে ভাবতে সাহায্য করবে। হতে পারে কারো Biography যারা জীবন যুদ্ধে হার মানে নি , অথবা কোনো Podcast শুনতে পারো কিংবা প্রেরণা মূলক নিবন্ধ গুলি পড়তে পারো। আরেকটি বিখ্যাত প্লাটফর্ম রয়েছে যার নাম Ted Talks যেখানে বিশ্বজুড়ে খ্যাতনামা মানুষজন তাদের আইডিয়া গুলি শেয়ার করে থাকেন সেটা দেখতে পারো যেখানে অনেক নতুন জিনিস শিখতে পারবে তুমি ।ফলে আমাদের ভাবনাতেও ইতিবাচক চিন্তার বীজ জন্মাবে

() নিয়মিত এক্সারসাইজ অনুশীলন:-

বলা হয়ে থাকেসুস্থ শরীরে সুস্থ মন বাস করে।রোজ অন্ততপক্ষে ২০ মিনিট যদি আমরা এক্সারসাইজ করি তাহলে শরীরে একধরনের এনার্জি কাজ করবে , যা আমাদের কার্যক্ষমতাকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলবে বসে থাকা শরীরে রোগ নেতিবাচক চিন্তা বেশি করে বাসা বাঁধে। তাই শরীর মনকে সুস্থ রাখতে হালকা এক্সারসাইজ কর। এতে মনের শক্তি পজিটিভিটি বাড়বে

( ) প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা কর, কথা বল :-

প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বল, তাদের আইডিয়াগুলি গ্রহণ কর তাঁরা কিভাবে দুঃখের দিন গুলিকে জয় করেছে , কিভাবে নতুনকরে বাঁচার প্রেরণা পেয়েছে তাদের বক্তৃতাগুলি শোনো হতে পারে কোনো ফেসবুক কমিউনিটি যাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পার, তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারো কিংবা কোনো সেমিনারে যেতে পারো প্রেরণা মূলক ভিডিও গুলি দেখো এখন যুগ ডিজিটাল হয়েছে Online আমরা গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারি এবং নিজেকে পজিটিভ রাখতে পারি যাঁরা তোমার ইচ্ছা শক্তিকে Boost করবে তাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাও 

() কিছুটা সময় নির্জনে কাটাও :-

১০ মিঃ হলেও কিছুটা সময় নিজের সঙ্গে কাটাও সারাদিনের ব্যস্ত জীবনে আমরা নিজেদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই না বন্ধুবান্ধব ,পরিবার , কর্মজগত , সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে তাদের প্রভাব আমাদের ওপর সর্বদা পড়তেই থাকে আমরা কি করছি ? কেন করছি ? কেন দুঃখ পাচ্ছি ? আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী? এই প্রশ্নগুলি নিজেকে করলে আমরা উত্তর পেয়ে যাব নিজেদের ভাবনায় একটু বদল আনলে জীবনের রং বদলাবে কারন তোমার জীবনের প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমার ভেতরেই লুকিয়ে আছে

( ) বর্তমানে বাঁচো :-

আমাদের জীবনের দুঃখের অন্যতম কারণ আমরা মুহূর্তের জীবনযাপন করি না হয় আমরা অতীতের কোনো ঘটনা নিয়ে সর্বদা দুঃখী থাকি নয়তো ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার ভয়ে দুঃশ্চিন্তা করি আমরা ভাবি ইশ্ কাল যদি আমার সাথে এটা ঘটে , আমার প্রিয়জন যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় , আমার চাকরিটা যদি হাত থেকে চলে যায় তো আমার কী হবে ? আমরা ভাবি আমরা বুঝি এই পৃথিবীতে চিরকাল থাকব। তাই আমাদের ভালোলাগা খুশি থাকা আমরা Postponed করতে থাকি কালকের ওপর আর কাল যদি আমাদের জীবনে আর না আসে ? আমরা কখনও এটা ভাবি না ; ভাবতেও ভয় লাগে। তাই জীবনের মুহূর্তগুলোকে আমরা নষ্ট করতে থাকি। আজকের দিনটাকে যদি আমরা শেষ দিন ভাবি বা এই মুহূর্তটাকেই যদি শেষ মুহূর্ত ভাবি তাহলে জীবনের গল্পটাই পাল্টে যাবে বাইরের কোনো শক্তির প্রয়োজন হবে না তোমাকে পজিটিভ রাখার , তোমার ভিতরের শক্তিই তোমাকে Positive রাখবে তুমি দেখতে পারবে জীবনে কত যাদু আছে , কত আনন্দ রয়েছে প্রতিটি পরতে পরতে।

 

লেখকঃ

মোঃ আব্দুল্লা-আল-মামুন রুপম

ইন্সট্রাকটর, ইলেকট্রিক্যাল

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

Tags: No tags

Comments are closed.