আমার পরিবেশ আমার অস্তিত্ব

আমার পরিবেশ আমার অস্তিত্ব

কোটি বছর আগে যতটা সবুজ ছিল আমাদের পৃথিবী, এখন অতটা নেই। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবী দূষিত নরকে পরিণত হচ্ছে। অবশ্য শুধু শিল্প বিপ্লবই দায়ী নয়; আরো অনেক কারণ রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে আমরা সচেতন না হলে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।

যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনও বদলেছে। সময়ের সঙ্গে জনসংখ্যা বেড়েছে বহু গুণ, বেড়েছে চাহিদাও। এ কথা সবারই জানা যে মানুষের সব প্রয়োজন মেটানোর উৎস প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকৃতি। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের কারণে মানুষের চাহিদার আমূল বদল হয়েছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে পরিবেশের ওপর। বাসস্থান ও ক্ষেতের জন্য জায়গা করার জন্য দরকার অনেক জমি। মানুষ সেই জমির ব্যবস্থা করছে বনজঙ্গল সাফ করে। কারখানায় প্রস্তুত হয় মানুষের নিত্যদিনের সামগ্রী। সেই কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন না করে নদীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যা পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সাগরে। আবার সেটা পুড়িয়ে পুড়িয়ে ক্ষতিকর ধোঁয়া বাতাসেও ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদনে সুবিধার জন্য যে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে, তা মাটির ক্ষতি করছে। এভাবে পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান দূষিত হচ্ছে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে।

সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, মৌমাছির সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক হারে। পরাগায়নের মাধ্যমে আমাদের বিপুল পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন মৌমাছির বিকল্প নেই। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণ করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ পরিবেশ সংকটের এই দায় সমগ্র মানব জাতির।৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।১৯৭৪ সালের ৫ জুন প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হওয়ার পর থেকে ১শ’টির বেশি দেশে দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে একটি বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। দিবসটি সামুদ্রিক দূষণ, মরুকরণ, ওজোনস্তর, মাটি দূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে গঠিত একটি বৃহৎ পদক্ষেপ।

মানুষের ব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রী পরিবেশকে দূষণ করে জলজ, স্থলজ, বনজ, এমনকি মানবজাতির স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অতিমাত্রায় প্লাস্টিক ব্যবহার ও এর যত্রতত্র নিক্ষেপ পরিবেশ দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ, গৃহস্থালির ব্যবহৃত প্লাস্টিক, পণ্যের মোড়ক, কসমেটিকস্ প্লাস্টিক, পানির জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ব্যাপকভাবে ব্যবহারের ফলে প্রকৃতিকে দূষিত করছে। কারণ প্লাস্টিক এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা সহজে পচে না এবং যার পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে প্রচুর সময় লাগে। ফলে পরিবেশের ওপর এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। যেহেতু প্লাস্টিক অপচ্য পদার্থ সেহেতু বন, জল ও স্থলের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রাণীর বাসস্থান ও খাদ্য গ্রহণে ব্যাপক বাধার সৃষ্টি করছে। ফলে সেসব স্থানের প্রাণীর জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনকি কোনো কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু প্রাণীর ক্ষেত্রেই নয়, প্লাস্টিক মানব দেহে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে।

পরিবেশকে সুস্থ রাখতে গাছ সবচেয়ে বেশি জরুরি। অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ ও বনজ সম্পদকে রক্ষা করে বায়ু দূষণের মাত্রাকে কমানো সম্ভব। বাস্তুতন্ত্রের যে সব জীব পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, তাদের টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে সব নীতিমালা প্রণীত রয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন পরিবেশ দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে পারে। প্রাণের অস্তিত্বের জন্য পরিবেশের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুরক্ষিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

 

সূত্র : গুগল 

লেখক:

শাহনেওয়াজ সেরাজ সুবর্ণা

ইন্সট্রাক্টর অফ আর এস ডিপার্টমেন্ট

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট