স্বপ্নতো আছেই, এবার হোক বাস্তবায়নের পরিকল্পনা

স্বপ্নতো আছেই

এবার হোক বাস্তবায়নের পরিকল্পনা

স্বপ্ন আপনার এবং এটি আপনাকেই দেখতে হবে। প্রতিদিন স্বপ্ন দেখি এবং সত্যিকথা বলতে স্বপ্ন একধরনের বিনোদনও বটে। আর একধাপ এগিয়ে যদি বলতে হয় তাহলে বলবো স্বপ্ন সবাই দেখতে পারে। স্বপ্নে আমি দামী গাড়ীতে চড়ি, বড় একটি অফিসের প্রধান ‍হিসেবে কাজ করি, নিজের বাড়িতে থাকি, ঘনঘন দেশের বাইরে অফিসিয়াল ট্রিপে যাই। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ সম্মাননা পাচ্ছি। হঠাৎ মার ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখি যা দেখছিলাম সবই স্বপ্ন ছিল কিন্তু আহা ভালোই ছিলো। স্বপ্নটা দেখে মনের ভেতর একধরনের শক্তি অনুভব করছি। ঠিক করলাম আজ থেকেই শুরু হবে যুদ্ধ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার। হঠাৎ মোবাইলে টুং করে শব্দ হলো। মোবাইলে দেখলাম কোন একজন কে নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে। ঢুকলাম ফেসবুকে, স্ক্রল করতে করতে অনেক নীচে নেমে গেলাম। হঠাৎ আরেকটা টুং শব্দ এলো ইউটিউভ থেকে। ভাবলাম এই ভিডিওটি দেখেই কাজে নেমে পড়বো। একটা, দুইটা, তিনটা করে ৩ ঘন্টার একটি সিনেমা দেখে ফেললাম। এর মধ্যে আবার আমার পোস্ট করা ছবি নিয়ে এক দুষ্টছেলে বাজে মন্তব্য করেছে, তার উত্তর দিতে দিতে মনে হলো একটা লাইভ করে ফেলি। লাইভ করে পোস্ট করেই কিছুক্ষন পর পর চেক করছি কে কি বললো। এই করে সকাল হলো দুপুর, দুপুর হলো সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা হলো রাত। সেই মহান রাত যখন আমি স্বপ্ন দেখি, সেই স্বপ্ন যেখানে আমি বিরাট কিছু একটা। আমার প্রিয় একটি ডায়ালগ আছে স্বপ্ন দেখতে পারে সবাই, বাস্তবে রুপ দিতে পারে মাত্র কজনা। আমাদের চোখের সামনেই অনেক মানুষ আছেন যারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটা বাস্তবে রুপদান করতে পেরেছেন। স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেবার জন্য প্রয়োজন কিছু সাহস তার সাথে কিছু আপস এবং পরিকল্পনা। আমার আজকের আর্টিক্যালটি আমাদের প্রত্যেকের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নেরই উপর।

কিভাবে লক্ষ্য নির্ধারন করবেন?

লক্ষ্য বা স্বপ্ন মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সত্যি কথা বলতে এই লক্ষ্য বা স্বপ্ন একমাত্র মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। কারন মানুষই পারে একমাত্র স্বপ্ন দেখতে বা লক্ষ্য নির্ধারন করতে। আবার সেই মানুষই স্বপ্ন বাস্তবায়ন বা লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কেন? শুরুতে যেভাবে বলেছিলাম লক্ষ্য বা স্বপ্ন একমাত্র মানুষের জন্য, পৃথিবীর অন্য কোন সৃষ্টির জন্য এই শব্দগুলো প্রযোজ্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো সৃষ্টির সেরা হয়েও আমরা অনেকেই লক্ষ্য নির্ধারনে বা স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়ে যাই। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। আমি যে কারনটি খুজে পেয়েছি তা হলো আমরা অনেকেই লক্ষ্যর সাথে অর্জন এবং স্বপ্নের সাথে বাস্তবায়নকে মেলাতে পারি না। লক্ষ্যের সাথে যেমন অর্জন শব্দটিকে যুক্ত করতে হবে তেমনি স্বপ্নের সাথে বাস্তবায়ন শব্দটিকেও যুক্ত করতে হবে। আপনি যদি অত্যন্ত সাহসী হন, আপনার ভেতর যদি দৃঢ় সংকল্প থাকে, আপনার মনোবল যদি শক্তিশালী হয় তাহলেই কেবলমাত্র আপনি যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন তা অর্জন বা যে স্বপ্ন দেখেছেন সেটা বাস্তবায়ন করতে অবশ্যই পারবেন। আমরা যদি পৃথিবীর সফল মানুষদের জীবন পর্যালোচনা করি তাহলে দেখবো তাদের প্রত্যেকেই যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছিলেন বা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা অর্জন বা বাস্তবায়নে ছিলেন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, মানসিকভাবে ছিলেন অত্যন্ত সাহসী এবং মনোবলে ছিলেন মজবুত। তাদের ভেতর দেখা গেছে বাস্তবতাকে স্বীকার করবার মানসিকতা এবং তারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য নিজের ভালো লাগার জায়গাটাকে খুজে পেয়েছেন সবার আগে। তারা জানতেন বা খুজে বের করতে সক্ষম হতেন যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কখন, কিভাবে, কার সাহায্যে কোন কাজটি সম্পাদন করতে হবে।

আমি স্বপ্নের সাথে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেই সেটা হলো অর্জন কারন আপনার স্বপ্ন যদি স্পষ্ট না হয় তাহলে বাস্তবায়নের জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন কা অর্জন করতে আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে বা অসম্ভবও হতে পারে। কোন একজন মানুষ চাইলেই প্রতিদিন অসংখ্য স্বপ্ন বা লক্ষ্য নির্ধারন করতে পারেন কিন্ত তার সাথে যদি অর্জন করবার জন্য পাগলামী না থাকে তাহলে সে স্বপ্ন রাতের বিনোদন ছাড়া আর কিছুই দেবে না। বিষয়টি হয়তো ইতিমধ্যেই সবার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবার কথা আর তা হলো স্বপ্ন যদি হয় একটি বৃত্ত আর লক্ষ্য হলো সেই বৃত্তকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলা। যদি স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য ভেঙে ফেলা না যায় তাহলে সে স্বপ্ন পূরণ করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।

সেজন্য লক্ষ্য বা স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য বিশেষজ্ঞরা বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা সবার আগে যেটি বলবার চেষ্টা করেন তা হলো যে কেউ লক্ষ্য নির্ধারন করবার আগে তিনটি শব্দকে সামনে রেখে নিজেকে প্রশ্ন করুন

  • আমি কি হতে চাই? (What I want to Become) অথবা
  • আমি কি করতে চাই? (What I want to Do) অথবা
  • আমি কি পেতে চাই? (What I want to Have)

তাহলে প্রথম কথা হলো উপরের তিনটি প্রশ্নের উত্তর বের না করে হাজার হাজার স্বপ্ন দেখলেও কোন লাভ হবে না কারন স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন খন্ডে ভাগ করা যাবে না। যখন আপনি বের করে করে ফেললেন আপনার লক্ষ্য, এখন নিজেকেই প্রশ্ন করতে হবে আপনি কেন (Why) এটি হতে চাচ্ছেন (Become) বা কেন করতে চাচ্ছেন (Do) বা কেন পেতে চাচ্ছেন (Have)। এটি হবার বা করার বা পাবার প্রয়োজন কি? কেন’র উত্তর পাবার পর আপনাকে বের করতে হবে কারন (Because)। যখন আপনি নিজেকে কেন দিয়ে প্রশ্ন করলেন এবং কারন বের করলেন তখন এটি অর্জনের জন্য আপনি একধরনের অনুপ্রেরনা বোধ করবেন। আর এই অনুপ্রেরনা আপনিই আপনাকে দিচ্ছেন। তবে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন বা লক্ষ্যকে অর্জনের জন্য সময়সীমা নির্ধারন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্যের সাথে যদি সময়সীমা না থাকে তাহলে আপনি কোন চাপ অনুভব করবেন না। লক্ষ্য নির্ধারনের সহজ ফরমূলা হতে পারেঃ লক্ষ্য = কি + কেন + সময়সীমা

নিচের এই ছকটি পূরণ করে লক্ষ্য অর্জনের প্রথম ধাপ সম্পন্ন করতে পারেন।

আপনার লক্ষ্য? ?
নির্ধারন করুন কি?আপনি কি হতে চান? (What do want to Become) অথবা আপনি কি করতে চান? (What do you want to Do) অথবা আপনি কি পেতে চান? (What do you want to Have)এক বা একাধিক লক্ষ্য হতে পারে আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। ?
প্রশ্ন করুন?কেন (Why) এটি হতে চাচ্ছেন (Become) বা কেন করতে চাচ্ছেন (Do) বা কেন পেতে চাচ্ছেন (Have) ?
কারনটি খুজে বের করুন। (Because Statement) ?
সময়সীমা থাকতে হবে (ছয় মাস হতে পারে বা এক বছর) ?

 

জয় করতে লক্ষ্যকে ছোট ছোট খন্ডে ভাগ করুন

সহজ কথায় যদি বলতে চাই স্বপ্ন হলো আপনার ভবিষ্যতের কাঙ্খিত কোন কিছুর বৃহৎ একটি ছবি যা অর্জনের জন্য আপনি ছোট ছোট খন্ডে ভাগ করেছেন যাকে আমরা বলতে পারি লক্ষ্য। এই বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা ফিরে যেতে পারি অতীতে। সম্রাটদের পরিকল্পনা আমরা সবাই বিভিন্ন বইতে পড়েছি। একজন সম্রাট কিভাবে তার রণকৌশলের মাধ্যমে তার লক্ষ্য অর্জন করেন। ইতিহাস ঘাটলে দেখতে পাবেন ছোট্ট একটি ভুখন্ড থেকে কিভাবে রোম সম্রাজ্য পুরো বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশী রাজত্ব কায়েম করেছে। আমাদেরকে সম্রাটদের মতো ভাবতে হতে, কৌশল নির্ধারন করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে লক্ষ্য যদি পরিমাপযোগ্য না হয় তাহলে আপনার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া আপনি নিজেই লক্ষ্য করতে পারবেন না। যেমন আমি একজন প্রফেশনাল হতে চাই। স্বপ্ন হিসেবে এটি হয়তো ঠিক আছে কিন্তু লক্ষ্য হিসেবে এটি পরিমাপযোগ্য নয় । যদি এমন হয় প্রফেশনাল হবার জন্য প্রথমে আমার নিজের জন্য একটি ভিডিও রিজুমে তৈরি করতে চাই আগামী ১০ দিনের মধ্যে এবং যদি নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করি এভাবেঃ

কি? ”আমি একটি ভিডিও রিজুমে তৈরি করবো।

কার জন্য? আমার জন্য

কেন? অধিকাংশ চাকরিদাতা ভিডিও রিজুমের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশী ব্যক্তিকে দেখে নিয়োগ করতে আগ্রহী

কারন? ভিডিও রিজুমের মাধ্যমে আমার ভাষা, আচরন, যোগযোগ দক্ষতা, বিশ্লেষণ করবার ক্ষমতা পরিলক্ষিত হয়।

কত দিন লাগবে? ১০ দিন

কি কি লাগবে? একটি স্ক্রিপ্ট, আমার মোবাইল ফোন, ভিডিও এডিটিং সফ্টওয়্যার, ৭ দিনের রিহার্সেল, পোষাক, অভিজ্ঞদের উপদেশ ইত্যাদি।

এবার ধরুন আমি লক্ষ্য নির্ধারন করলাম আগামী একবছরের মধ্যে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই। কারন আমি অনেক গবেষনা করে দেখেছি মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করতে পারলে আমি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবো, দেশ-বিদেশে সম্মান, খ্যাতি অর্জন করতে পারবো এবং সবধরনের প্রতিষ্ঠানে আমার একধরনের চাহিদা সবসময়ই থাকবে। যেহেতু আমি লক্ষ্য নির্ধারন করেছি এখন আমার প্রথম কাজ হলো খুজে বের করা আমার এই মুহুর্তে কি আছে এবং কি অর্জন করতে হবে। তার জন্য আমি একটি তালিকা প্রনয়ন করতে পারি বিভিন্ন শুভাকাঙ্খিদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে।

 শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সনদ আছে
 মার্কেটিং বিষয়ক দক্ষতা (হার্ড এবং সফ্ট স্কিলস) নাই
 সেচ্ছাসেবী/পার্ট টাইম কাজের অভিজ্ঞতা এবং প্রশংসা পত্র নাই
 শুদ্ধ বাংলা এবং ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা নাই
 প্রফেশনাল পোষাক পরিচ্ছদ নাই
 প্রযুক্তি সচেতনতা (গুগল থেকে তথ্য বের করার দক্ষতা, মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, বাংলা ও ইংরেজী টাইপিং, ভার্চুয়াল মিটিং প্লেস যেমন জুম বা গুগল মিটের ব্যবহার, স্মার্ট ফোনের যথাযথ ব্যবহার ইত্যাদি) নাই
 প্রফেশনাল সিভি নাই
 ভিডিও রিজুমে নাই
 সোস্যাল মিডিয়া দক্ষতা নাই
 নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট নাই
 কোম্পানি রিসার্চ নাই
 চাকরি ইন্টার্ভিউর দক্ষতা নাই

যেহেতু আমি নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য একবছর সময় বেধে দিয়েছি তাই এখন আমাকে সম্রাটদের মতো ভাবতে হবে। আমি এই একবছর কে তিনভাগে ভাগ করে ফেলতে পারি। বিশেষজ্ঞরা বলেন একটি বছরকে আপনি বিভিন্ন কোয়াটারে ভাঙতে পারেন। ৩+৩+৩+৩ অথবা ৪+৪+৪ হতে পারে। তবে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন প্রথমদিকে সময়টা একটু বেশী রাখুন।

সেক্ষেত্রে পরিকল্পনাটি এমন হতে পারেঃ ৬+৩+৩

যা অর্জন করবো/বছর ৬ মাস ৩ মাস ৩ মাস
এই স্টেজটি একটু কঠিন হবে। যতটা সম্ভব জ্ঞান, দক্ষতা, মনোভাব বিকাশ করুন
  • মার্কেটিং বিষয়ক ১টি সার্টিফিকেট কোর্স করবো
  • ১টি অনলাইন কোর্স করবো
  • ৩টি ওয়ার্কশপ/ ৩টি সেমিনারে অংশ নেবো
  • ৩টি মার্কেটিংয়ের বই পড়বো
  • নিজের ১টি সিভি তৈরি করবো
  • নিজের ১টি ভিডিও রিজুমে তৈরি করবো,
  • অন্তত ৩টি যুব সংগঠনের সাথে যুক্ত হবো একং সক্রিয় থাকবো,
  • মার্কেটিংয়ে দক্ষ এমন অন্তত ১০ জন মানুষের সান্নিধ্যে আসবো
  • আমার ফেসবুক এবং লিংকডইনের প্রোফাইল নতুন করে সাজাবো। সকল নেতিবাচক স্ট্যাটাস বা ছবি (যদি থাকে) সরিয়ে ফেলবো।
  • ছয় মাসের মধ্যে আমার ওয়েব উপস্থিতি বাড়াবো
এই স্টেজে লোকেরা আমাকে লক্ষ্য করা শুরু করবে কাজের অনুসন্ধান করবো, কাজগুলো বিশ্লেষণ করবো এবং যা খুজে পেলাম তা প্রয়োগ করবো
  • সার্টিফিকেট/প্রশংসাপত্র গুলি গোছানো
  • বিভিন্ন জব সাইটের মাধ্যমে কাজের অনুসন্ধান করে বিশ্লেষন করবো
  • কাজের বিবরন খুজে বের করা এবং প্রতিষ্ঠান কি চাচ্ছে সেগুলো খুজে বের করা।
  • বিশ্লেষন করে পছন্দনীয় কাজে আবেদন করা।
  • নিয়োগকারীদের কাছে ইমেল প্রেরণ করা, লিংকডইনের মাধ্যমে মেসেজ করা। মেসেজ বা ইমেইলে মাধ্যমে জানাতে হবে আপনি কি জানেন আর কি পারেন।
  • আমার পছন্দের তালিকায় যে সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর একটি পোস্ট মার্টম করা। এই বিশ্লেষনগুলো করতে পারলে আমার মধ্যে একধরনের আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে।
এই স্টেজে আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক পাওয়া শুরু করবো সাক্ষাত্কারে অংশ নিন, ভুলগুলি সন্ধান করুন এবং আপনি চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত আবার যোগদান করুন।
  • প্রথম নয় মাসের কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় আপনি নিয়মিতভাবেই যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদন করেছেন সেখান থেকে ডাক পাওয়া শুরু করবেন।
  • অবশ্যই প্রস্তুতি নিয়ে ইন্টারভিউতে অংশগ্রহন করবেন
  • প্রথম ইন্টারভিউর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে ছোট্ট একটি ইমেইলের মাধ্যমে যদি জানার চেষ্টা করেন কেন আপনি সুযোগ পেলেন না তাহলে পরবর্তী ইন্টারভিউতে আপনি সে ভুলগুলো আর করবেন না

আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে বা কর্মক্ষেত্র অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করবার জন্য ৩৬৫ দিন যথেষ্ঠ। যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা যায় তহলেই শুধুমাত্র সম্ভব নিজেকে বদলানো। তবে আমি যে পরিকল্পনা করেছি সেটি যে আপনার কাজে আসবে সেটি আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারবো না তাই আমার পরিকল্পনাকে স্যাম্পল হিসেবে ধরে নিয়ে নিজের জন্য রণপ্রস্তুতি নির্ধারন করতে হবে।

লক্ষ্যকে অর্জনের জন্য পক্রিয়ার মধ্যে ফেলতে হবে

যেকোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য পক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শব্দ। উপরের আলোচনায় আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের লক্ষ্যকে নির্ধারন করেছি এবং এই লক্ষ্যকে অর্জনের জন্য একটি ছক বা তালিকা তৈরি করেছি। লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নের জন্য যেমন আমাদের প্রয়োজন ছিলো কি হতে চাই, কেন হতে চাই, কত দিনের মধ্যে হতে চাই। ঠিক তেমনি এই পর্যায়ে আমাদের আরো তিনটি প্রশ্নে উত্তর বের করতে হবে। প্রথমেই যেহেতু আমরা বছরকে তিন ভাগে ভাগ করেছি এবার আমাদের বের করতে হবে

  • ধাপে ধাপে কি অর্জন করবো (What is the next Step)?
  • ধাপটি কখন শেষ করবো (When this step will complete)? এবং
  • ধাপটি সম্পন্ন করতে রিসোর্স কোথায় আছে? (Where are the resources)?

আমরা শৈশবে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রুটিন মেনে চলতাম। ক্লাসের জন্য রুটিন থাকতো এবং সেই রুটিন অনুযায়ী আমরা ক্লাসের প্রস্তুতি নিয়ে থাকতাম। তারপর পরীক্ষার সময়ে আমরা একটি রুটিন পেতাম এবং সে অনুযায়ী পরীক্ষার প্রস্তুতি চলতো। ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের এই পর্যায়েও আমাদের রুটিন তৈরি করতে হবে।

ধাপে ধাপে কি অর্জন করবো (What is my next Step)? আমি কমিউনিকেশনের উপর একটি অনলাইনে কোর্স করবো
ধাপটি কখন শেষ করবো (When this step will complete)? সময় লাগবে ৭ দিন (প্রশিক্ষন) এবং ৮ দিন ব্যবহারিক এবং ১৫ দিন শেষে অনলাইন সার্টিফিকেট অর্জন করবো
ধাপটি ধাপটি সম্পন্ন করতে রিসোর্স কোথায় আছে? (Where are the resources)? বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরম যেমন GoEdu.ac, Google Garage বা Coursera বা LinkedIn Learning থেকে কমিউনিকেশন কোর্স সম্পন্ন করবো। তারপর ফেসবুক এবং লিংকডইন ব্যবহার করে অন্তত ৫ জন প্রফেশনালদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করবো।

আমরা সবাই জানি মাসে চার সপ্তাহ এবং বছরে ৫২ সপ্তাহ। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই আমাদের প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটা নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার মেইনটেইন করতে পারি। খুব সহজেই আমরা ল্যাপটপে বা মোবাইলের মাধ্যমে সেট করতে পারি কোন লক্ষ্যটি কতদিনের মধ্যে শেষ করবো। এই অনলাইন ক্যালেন্ডার বা টাস্ক ট্র্যাকার আমাকে এলার্ম বা ইমেইল নটিফিকেশনের মাধ্যমে মনে করিয়ে দেবে আমার কোন কাজটি কখন করতে হবে। অনেকে আবার ক্যালেন্ডারে টাস্কগুলোকে সাজিয়ে প্রিন্ট করে নিজের টেবিলের সামনে রেখে দেন অথবা স্টিকি নোট হিসেবে নিজের ল্যাপটপের হোম স্ক্রিনে রেখে দেন। তবে যেভাবেই করি না কেন আমার চোখের সামনে আমার এ্যাকশন প্ল্যান থাকাটা অত্যন্ত জরুরী।

আপনার লক্ষ্যকে প্রকাশ্যে ঘোষনা করুন

২০১৫ সালের একটি ঘটনা। কোন একটি ক্লাবের মিটিংয়ে আমার একটি লক্ষ্যের কথা ঘোষনা করে দিয়েছিলাম। বিষয়টি ছিলো এমন যে আমরা পরিকল্পনা করছিলাম যে সদ্য গ্রাজুয়েটদের জন্য একটি জব ফেয়ার আয়োজন করবো। যেখানে চাকরি প্রত্যাশী এবং চাকরিদাতারা একসাথে মিলিত হবেন। এই ঘোষনা দেবার পর ঐ মিটিংয়ে উপস্থিত একজন সদস্য মিটিং শেষে আমার কাছে এসে বিস্তারিত জানতে চাইলেন এবং ভেন্যু সহ আরো অন্যান্য সহযোগীতার আশ্বাস দিলেন। পরবর্তীতে আমি আমার ফেসবুক এবং লিংকডইনের বন্ধুদের মাঝেও আমার পরিকল্পনা শেয়ার করি। এর ফলে যা হলো আমার লক্ষ্যকে আমি একধরনের স্পট লাইটের মধ্যে দেখতে পেলাম। এই গন প্রচারণা আমার যেকোন লক্ষ্যকে বাস্তবায়নে খুব সহযোগীতা করে। কয়েকটি জিনিস ঘটে এই গন প্রচারণার মাধ্যমেঃ

  • আপনি সচেতন থাকেন লক্ষ্যটি বাস্তবায়নের জন্য
  • এক ধরনের অটো এলার্ম কাজ করে
  • যাদের সাথে শেয়ার করলেন তারা আপনাকে স্মরন করিয়ে দেয়
  • অনেকেই আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন

অনেকভাবেই আপনি পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্ট বা গন প্রচারণা করতে পারেন। আপনার নিজের পরিবারের সদস্যদের জানাতে পারেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জানাতে পারেন, কোন ক্লাব মেম্বারদের জানাতে পারেন। অনেকে আবার সোস্যাল প্ল্যাটফরমকেও ব্যবহার করেন। পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্ট বা গন প্রচারণা করবার আগে আপনাকে নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন আপনি কাদের কাছে আপনার লক্ষ্যের কথা শেয়ার করবেন বা কতটুকু শেয়ার করবেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবেঃ

  • সম্পূর্ণ সিমেনার গল্প শুধুই আপনি বা আপনার লক্ষ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষেরা জানবেন আর বন্ধুরা জানবে এর ট্রেলার
  • পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্টে যাবেন তখন অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করতে হবে। যেমন আমি আগামী ১০ দিনের মধ্যে দুটি কমিউনিকেশনের উপর কোর্স সম্পন্ন করবো।

লক্ষ্য অর্জনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা

আমরা লক্ষ্য নির্ধারন করি, লক্ষ্যকে পক্রিয়ার ভেতর ফেলবার চেষ্টা করি, লক্ষ্যকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করি, লক্ষ্যকে জনসম্মুখে নিয়ে আসি কিন্তু জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে যদি বিন্দুমাত্র অবহেলা থাকে তাহলে লক্ষ্য অর্জনে বাধা আসতে পারে। লক্ষ্য অর্জনে বাধা হিসেবে সবচেয়ে যে শব্দটি বিষের মতো কাজ করে তা হলো গড়িমসি বা ইংরেজীতে যাকে বলে procrastination. ছোট বেলায় পরীক্ষার রুটিন আসার পর থেকে আমার মা সবসময় আমার পিছে লেগে থাকতেন যেন আমি সিলেবাস শেষ করার ক্ষেত্রে কোন গড়িমসি না করি। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য আমি যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছি সেটাও আমার গড়িমসির কারনে ব্যাহত হতে পারে। সেজন্য ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা মানে হলো যিনি আপনাকে পদে পদে উপদেশ দেবেন, কোন কৌশল অবলম্বন করলে ভালো হয় সেটা বলে দেবেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোনটি আগে করা উচিৎ সেটা বলে দেবেন এবং কিভাবে অতি সহজে করা যার তাও দেখিয়ে দেবেন। ব্যক্তিগত জবাবদিহিতায় কাদের পাশে রাখতে পারেনঃ

১. জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রথমেই আমরা মা বা বাবার শরণাপন্ন হতে পারি। কারন মা, বাবা তাদের লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করেছেন যা সবসময়ই চিরসবুজ। মা, বাবার পরামর্শ সবসময়ই কাজে আসে কারন তারা ঐ পথে ইতিমধ্যেই হেটেছেন।

২. দ্বিতীয়ত মেন্টরশীপ একটা বিরাট ভূমিকা থাকতে পারে। মেন্টর মানে হলো কোন একটি সেক্টরের বিশেষজ্ঞ যিনি অন্তত ৫ বছর আপনার পছন্দের সেক্টরে টানা কাজ করেছেন এবং এখন অন্য সেক্টর হলেও যিনি এখনো সক্রিয় আছেন। যিনি নিজেকে টেকসই করবার জন্য অনেক ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছেন, অনেক চ্যালেঞ্জ মুখোমূখী হয়েছেন। তবে মেন্টর বাছাই করবার ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখতে হবেঃ

  • যাকে মেন্টর হিসেবে বেছে নেবেন তার মূল্যবোধ সম্পর্কে আপনার ধারনা থাকতে হবে। আপনার এবং তার মূল্যবোধ যদি এক না হয় তাহলে আপনার লক্ষ্য অর্জনে তিনি তেমন কোন কাজে নাও আসতে পারে।
  • যোগাযোগের ক্ষমতা অবশ্যই ভালো হতে হবে। কারন দেখা গেছে নিজে অত্যন্ত সফল কিন্তু আরেকজনকে পথ দেখাবার জন্য অথবা নিজের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা বুঝিয়ে বলবার দক্ষতা তেমন একটা নেই।
  • মানসিকভাবে পরামর্শ দেবার জন্য প্রস্তুত কিনা অথবা সম্মতি আছে কিনা সেটাও দেখে নিতে হবে। কারন হয়তো তিনি বাহ্যিক সম্মতি দিয়েছেন কিন্তু মানসিক ভাবে সম্মতি দেননি। আর সেজন্য লক্ষ্য নির্ধারনের যে সময়সীমা আপনি নিজেই নিজেকে দিয়েছেন সেটা বিলম্ব হবে।বিশ্বাস করুন বা না করুন, একজন পরামর্শদাতা বেছে নেওয়ার সময় ব্যক্তিত্ব অবশ্যই বিবেচনা করার মতো বিষয়। আপনি যদি একজন অন্তর্মুখী হন এবং আপনার সম্ভাব্য পরামর্শদাতা যদি বিপরীত হন, আপনি অস্বস্তি বোধ করতে পারেন।

৩. অনেক সময় পরামর্শক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হন। সেক্ষেত্রে কোচ বা প্রশিক্ষক আপনার লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। কারন কোচিং বা প্রশিক্ষন দেবার জন্য তারা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে থাকেন। তবে কোচিং বা প্রশিক্ষন নেবার জন্য আপনাকে কিছুটা বিনিয়োগ করতেই হবে এবং এ সত্যটি আপনাকে মানতেই হবে। একজন খেলোয়ার তার সেরা খেলাটি দর্শকদের উপহার দেবার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কোচের শরনাপন্ন হন। ঠিক একইভাবে প্রফেশনাল হবার জন্য একজন কোচের অধিনে কিছুদিন থাকা মানেই হলো ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত থাকা।

প্রশ্ন করুন

লক্ষ্য নির্ধারন বা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রশ্ন করতে হবে। প্রশ্ন করতে হবে বোঝার জন্য, জানার জন্য, মেনে চলার জন্য। আমরা অনেকেই প্রশ্ন করতে পারি না বা প্রশ্ন করতে একধরনের লজ্জাবোধ করি। অথবা প্রশ্ন করার অভ্যাস আমাদের মধ্যেই নেই। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক নজির আছে যে একটি প্রশ্ন সম্পূর্ণ জীবনকে বদলে দিয়েছে। তবে এমনভাবে প্রশ্ন করতে হবে যেন উত্তরদাতা শুধুমাত্র হ্যা বা না এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে উত্তর দিতে না পারেন। ঠিক যেমনভাবে চিকিৎসকরা করে থাকেন রোগীর উপসর্গ জানার জন্য। চিকিৎসকের প্রশ্নগুলোকে বলা হয় ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন যার মানে হলো গভীরে ঢুকে উত্তর বের করা। সাধারনত এই ডায়াগনস্টিক প্রশ্নকে আবার অধিকাংশ মানুষ 5W1H বলে জানি। কি (What), কেন (Why), কোথায় (Where), কখন (When), কে (Who) এবং কিভাবে (How).

কি করা উচিত? (What)

এটি করার উদ্দেশ্য কী? (What)

আরও কিছু কি করার আছে? (What)

লক্ষ্য পূরণের জন্য কোথায় রিসোর্স পাবো? (Where)

কখন এগিয়ে যাওয়ার সময়? (When)

কে আমাকে সাহায্য করতে পারেন? (Who)

কেন তারা আমাকে সাহায্য করবে? (Why)

কেন আমি এই কাজ করব? (Why)

তারা আমাকে কীভাবে সাহায্য করবে? (Who)

লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নের সময় যদি প্রতিনিয়ত ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন করা যায় এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞ মানুষদের কাছ থেকে উত্তর সংগ্রহ করা যায় তাহলে লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নে কেউ আটকাতে পারে না। এই ডায়াগনস্টিক প্রশ্নের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কেন (Why)?জাপানের বিখ্যাত ব্যবসায়ী কিচিরো টয়োডা বলেছিলেন কোন সমস্যা বা কোন ধরনের লক্ষ্য নির্ধারনের জন্য যদি অন্তত পাঁচবার কেন (Why) জীজ্ঞেস করা হয় তাহলে সে ঐ সমস্যার বা লক্ষ্যের কেন্দ্রতে পৌছতে সক্ষম হয়। তাই আপনার লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নের জন্য বারবার ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন করুন যার উত্তর কেউ কোনদিন শুধুমাত্র হ্যা বা না দিয়ে শেষ করতে পারবে না।

নিজের সাফল্যে নিজেই উদযাপন করুন

কখনও নিজের সাফল্যে নিজেই উদযাপন করেছেন? আমি প্রায়ই নিজের ছোট কোন সাফল্যকে উপেক্ষা করতাম বৃহৎ কোন সাফল্যের আশায়। এটা খেয়াল করে আমার এক বড় ভাই আমাকে বললেন বড় সাফল্যে ক্ষুদ্র সাফল্যকে উপেক্ষা করছো? এটা একদম ঠিক নয়। আমার বড় কোন স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবার জন্য ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে ফেলি এবং এটাই স্বাভাবিক অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সংখ্যাই বেশী থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে আসা ছোট একটি সাফল্যকে যদি কাছের মানুষদের সাথে নিয়ে উদযাপন করা যায় তাহলে মানসিকভাবে একধরনের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া যায়। কোন কিছুকে ভালোবাসার পর যদি সেটা অর্জন করা যায় তাহলেই কেবলমাত্র উদযাপন করা সম্ভব। ধরুন কোন একটি লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য আপনাকে প্রতিদিন সকালে ঘুম উঠে ব্যায়াম করতে হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য আপনি রাতে ঘড়িতে এলার্ম সেট করে রাখেন। কিন্তু সকালবেলা এলার্ম বেজে উঠলেই আপনার বিরক্ত লাগে। এর মানে হতে আপনি আপনার লক্ষ্যটি বাস্তবায়নের জন্য শুরুতেই যে ফর্মূলার কথা বলেছিলাম সেটি ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারেন নি। ফর্মূলাটি ছিলো ”কেন-কারন”। লক্ষ্য নির্ধারনের আগে কেন আপনি লক্ষ্যটি নির্ধারন করতে যাচ্ছেন এবং এর যথার্থ কারন আপনার কাছে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে অসংখ্যবার আপনি ব্যর্থ হচ্ছেন এবং যতবার আপরি ব্যর্থ হয়েছেন কেন এবং কারন বের করে আবার নেমে পড়লেন। এবার যখন সাফল্য এলো তখন কেউ প্রশংসা না করলেও আপনি নিজেকে নিজেই একটা সাবাসী দিয়ে দেন। দেখবেন অন্যরকম লাগবে। আমি যখন ঠিক করলাম আমি একটি আর্টিক্যাল লিখবো এবং সাথে প্রতিটি প্যারার জন্য একটি করে ভিডিও বানাবো তখন আমি আমি আমাকেই প্রশ্ন করলাম কেন? এবং কারন বের করলাম। তারপর কয়েকজনের সাথে ফোনে কথা বললাম, বেশ কিছু আর্টিক্যাল পড়লাম, মেন্টরের সাথে পরামর্শ করলাম। তারপর সময় নির্ধারন করে নেমে পড়লাম। এখন আমি আর্টিক্যালটির একদম শেষে চলে এসেছি এবং একধরনের অন্যরকম আনন্দবোধ করছি। কারন নতুন একটি আর্টিক্যাল লিখবো এবং সেই সাথে আর্টিক্যালটিকে ভিত্তি করে ভিডিও বানাবো, এই খুশিতে গত তিনদিন আমি একটানা কাজ করেছি। এই যে এতো আয়োজনের শেষে যখন পাবলিশ করবো আমার সোস্যাল সাইটে তখন পাঠকরা হয়তো পড়বেন বা পড়বেন না কিন্তু আমার উদযাপন কিন্তু চলতেই থাকবে যা আমাকে পরবর্তী আর্টিক্যাল লেখায় অনুপ্রেরনা যোগাবে।

লক্ষ্য নির্ধারন, পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা

নিজের জীবনের জন্য লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন, লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য নিজেই নিজেকে সময়সীমা বলে দিয়েছেন এখন প্রয়োজন ঠিকমতো পর্যালোচনা করা। পর্যলোচনার জন্য প্রয়োজন প্রতি সপ্তাহে নিজের জন্য আধা ঘন্টা সময় বের করা। এই আধা ঘন্টা আপনি আপনার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করেছিলেন সেগুলো ঠিক মতো হচ্ছে কিনা। পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা যদি ঠিক মতো না হয় তাহলে যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন সেটা শেষ সময়ে গিয়ে দেখা যেতে পারে ঠিকমতো কাজ করেনি। অথবা আপনি ঠিক পথে আছেন কিনা সেটাও হয়তো দেখা সম্ভব হবে না।

লক্ষ্যঃ আপনি ঠিক করেছেন আপনি ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে চাচ্ছেন এবং আপনি নিজেকে সময় দিয়েছেন একমাস।

কেনঃ ইংরেজী ভাষা মার্কেটিং প্রফেশনালদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

কারনঃ অধিকাংশ সময় আপনাকে বাইরের দেশের সাথে কথা বলতে হবে

কতদিন সময় দেবেনঃ একমাস

লক্ষ্যকে ভাগ করেছেনঃ (১) প্রতিদিন একঘন্টা ইংরেজী দৈনিক পড়বেন (মাসে ৩০ ঘন্টা), (২) প্রতিদিন একঘন্টা ইংরেজী খবর শুনবেন (মাসে ৩০ ঘন্টা, (৩) প্রতিদিন একটি ইংরেজী সিনেমা দেখবেন (মাসে ৩০টি), (৪) প্রতিদিন ২০টি ইংরেজী শব্দ অর্থসহ শিখবেন এবং কথা বলার সময় চেষ্টা করবেন ব্যবহার করতে (মাসে ৬০০টি শব্দ), সপ্তাহে দুদিন শুধুই ইংরেজীতে কথা বলবেন (হোক বা না হোক) (মাসে ৮দিন), প্রতিদিন ইউটিউভের মাধ্যমে অনলাইন টিউটোরিয়াল নেবেন ৩০ মিনিট (মাসে ১৫ ঘন্টা)

এই যে লক্ষ্যকে খন্ডে খন্ডে ভাগ করলেন এবার সপ্তাহে একদিন আধা ঘন্টা সময় বের করে দেখুন সবকিছু ঠিকমতো চলছে কিনা? যদি রুটিন মাফিক সব ঠিক থাকে তাহলে নিজেকে একটি উপহার দিন, হতে পারে একটি চকলেট যা খাবার সময় আনন্দ নিয়ে তৃপ্তির সাথে খাবেন। কারন আপনি নিজেই এই উপহারটি অর্জন করেছেন।

শেষ কথা

স্বপ্ন আপনার! লক্ষ্য আপনার! ব্যর্থতা আপনার! সাফল্য আপনার! যা কিছু অর্জন হবে সব আপনার। মনে রাখতে হবে কেউ আপনাকে করে দেবে না। করতে হবে আপনাকেই। আপনার ভেতর যদি ইতিবাচক মনোভাব থাকে, লক্ষ্যে যদি আপনি অটুট থাকেন, একাগ্রতা যদি হয় মজবুদ আর চিন্তাভাবনা যদি হয় বাদশাদের মতো, তাহলে জীবন যুদ্ধের রণকৌশল আপনি অবশ্যই তৈরি করতে পারবেন এবং সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।


আপনাদের জন্য একটা এ্যাসাইনমেন্ট দিতে চাই

১. আপনারা সবাই স্বপ্ন দেখেন, এবার এই স্বপ্নকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করে ফেলুন

২. প্রতিটি ভাগের জন্য ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন করুন। যেমনঃ

  • এই ক্ষুদ্র ভাগটির মাধ্যমে আপনি কি অর্জন করতে চাচ্ছেন? (What)
  • কেন অর্জন করতে চাচ্ছেন? (Why)
  • কারনটি বের করুন যেন সেটি আপনার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয় (Becasue)
  • সময় নির্ধারন করুন (Start Date & Finish Date) (When)
  • কাদের সাহায্য লাগবে (Who)
  • কিভাবে করবেন (How)

3. নীচের যে ছকটি দেখিয়েছি সেটার আলোকে আপনার লক্ষ্যটিকে দৃশ্যমান করুন।

যা অর্জন করবো/ ১ বছর ৬ মাস (পরিকল্পনা) ৩ মাস (পরিকল্পনা) ৩ মাস (পরিকল্পনা)

 

ধাপে ধাপে কি অর্জন করবো (What is my next Step)?
ধাপটি কখন শেষ করবো (When this step will complete)?
ধাপটি ধাপটি সম্পন্ন করতে রিসোর্স গুলো কোথায় আছে? (Where are the resources)?

৪. তাপরপর আমাদের ইমেইল করুন যাতে আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারেন ([email protected])


লেখকঃ জনাব কে এম হাসান রিপন,

নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (বিএসডিআই)

অধ্যক্ষ, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক