বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান

বিশ্বের এমন কিছু, যাদের স্বাধীনতার জন্য মহীরুহ সদৃশ দেশনেতার অবদান সর্বাধিক মর্যাদা ও স্বীকৃতি পায়। এমনি একজন ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছিল সবুজ,শ্যামল , সোনার বাংলায় স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনার জন্য। ইতিহাসের বাক ঘুরে ঘুরে কাল কালান্তর মানুষের মাঝে চির অবিনশ্বর অক্ষয় অমর।এই মহান ব্যক্তি আর কেউ নয় আমাদের প্রিয় নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ, বাঙালি জাতির জনক, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । যার নেতৃত্বে পৃথিবীর ইতিহাসে আরেকটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয় নাম তার বাংলাদেশ। মুজিবের লেখাপড়া শুরু হয় স্বগৃহে। ১৯২৭ সালে স্কুলে ভর্তি হোন। ১৯৩৪ সালে ১২ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে তার চোখে ছানি পড়ে এবং ও অন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। কিছুদিন লেখাপড়া বন্ধ রেখে ১৯৩৭ সালে তিনি হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স পাস করে ,কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা ভার্সিটির আইন বিভাগে ভর্তি হন।

ছাত্র আন্দোলন :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তৎকালীন মুসলিম লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন । ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীদের সমর্থনে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন ।এই আন্দোলনের কারণে শেখ মুজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারা জীবনই ছিল আপোষহীন। আর এজন্য তাঁকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে।  তিনি ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। 

শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সংগ্রাম:

শৈশব ও কৈশোরের ছাত্র থাকাকালে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সক্রিয়তার পরিচয় পাওয়া গেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তার প্রকৃত রাজনৈতিক সংগ্রাম শুরু হয়। লক্ষ্য ছিল দুটি। ১. ১৯৪৭ সালের ৩ জুনের  ব্রিটিশরাজ -প্রতিভূ লর্ড মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পিতভাবে কাঠামোর মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতা পাওয়া গিয়েছিল শেখ মুজিবরের মতে তা;সত্যিকারের স্বাধীনতা ছিল না । তিনি তাঁর নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতোই এক সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশের চিত্র কল্পনা করতেন। ২. শেখ মুজিবের রাজনীতির আর একটি লক্ষ্য ছিল মুসলিম লীগের বুর্জোয়া মনোবৃত্তি ও পশ্চিমা প্রাধান্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। 

 ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অপরাধে শেখ মুজিবকে ১১ মার্চ বন্দি করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনে ১৯৫৮ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত অধ্যায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্ব পদে থেকে পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন ,এই পর্বেই বাংলার মানুষ তাকে বরণ করে নেয় তাদের মুক্তি সংগ্রামের নেতা হিসাবে ,অভিষিক্ত করে ‘ বঙ্গবন্ধু ‘ উপাধিতে।  ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ:

সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দূরদৃষ্টির অধিকারী ছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি অসম্প্রদায়িক একটি গণসংগঠন গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন। আড়ম্বরের  উচ্চ কোলাহল কখনোই বঙ্গবন্ধুর আত্মসম্মানকে স্পর্শ করতে পারেনি। তার মত পৌরুষ এবং তেজস্বিতা বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের দুর্লভ। অসহযোগ আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ এর ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে দেখা করতে যান। সেদিন গাড়িতে তিনি বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে গিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্টের মিলিটারি সেক্রেটারি তাকে বাধা দিতে উদ্যত হন এবং কিছু মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কঠোর দৃষ্টির সামনে তিনি নিরস্ত  হন। একজন মানুষ হিসেবে শেখ মুজিবরের মহত্ত্ব এখানে যে, বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তিনি লড়াই করেছেন,তিনি চেয়েছেন এই দেশের মানুষ যেন খেয়ে পড়ে সুখে শান্তিতে বাঁচতে পারে, আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে নিজেদের ন্যায্য স্থান পেতে পারে, আর  এজন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর সমগ্র জীবন, চিন্তা-ভাবনা ও শ্রম উৎসর্গ করেছিলেন। চরিত্রের দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্বের অতুলনীয়তায় বঙ্গবন্ধুর সকলের ঊর্ধ্বে ছিলেন। একাধারে তিনি সাহসী ও বিনম্র ছিলেন এবং ছিলেন বলিষ্ঠ চিত্তের একজন মানুষ। তিনি চিরাচরিত রাজনীতির ধারা থেকে সরে এসে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সমাজ পরিবর্তনের পথে পা বাড়ান , আর এই নতুন যাত্রাপথের শুরুতেই সাম্রাজ্যবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি তাকে হত্যা করে।

বঙ্গবন্ধুর সাফল্য:

 * ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরত ১২ মার্চ ১৯৭২ সাল । * প্রথম শিক্ষা কমিশন ২৬ জুলাই ১৯৭২ সাল। * প্রথম নির্বাচন ৭ মার্চ ১৯৭৩ ।* ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা ২২ মার্চ ১৯৭৪। * প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ( ১৯৭৩-১৯৭৮) * জাতিসংঘে প্রথম বাংলা ভাষণ ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ২৪ তম অধিবেশনে ৪৫ মিনিট ভাষণ দেন, অনুবাদ করেন ফারুক চৌধুরী , তিনি ছিলেন বাংলাদেশের যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার।  

পরিশেষে ইতিহাস যেমন নেতৃত্বের সৃষ্টি করে , নেতৃত্বও তেমনি ইতিহাস সৃষ্টি করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারা যেমন – শেখ মুজিবুর রহমানকে ইতিহাসের মূলস্রোতে নিয়ে তাকে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা করেছে, ঠিক তেমনিভাবে শেখ মুজিবও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তার রাজনৈতিক সাধনা- সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছেন একটা  পরিণতরূপে স্বাধীন বাঙালি রাষ্ট্র  প্রতিষ্ঠার  আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে। তাই বাংলাদেশ ও বাঙালির অপর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

 

সূত্র : সমাজ বই

শাহনেওয়াজ সেরাজ সুবর্ণা

ইন্সট্রাক্টর অফ আর এস ডিপার্টমেন্ট

ডেফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট