পেশাগত জীবন এবং কর্মক্ষেত্রে এক সম্ভাবনাময় শিক্ষা  –  আর্কিটেকচার অর্থাৎ স্থাপতিবিদ্যা এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইন”

পেশাগত জীবন এবং কর্মক্ষেত্রে এক সম্ভাবনাময় শিক্ষা  –  আর্কিটেকচার অর্থাৎ স্থাপতিবিদ্যা এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইন

প্রতিটা মানুষের শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য হল তার ভবিষ্যৎ জীবনকে সহজ এবং সুন্দরভাবে পরিচালনা করা । যেটা অনেকেই ভালো বেতনের ভালো একটা চাকরির মাধ্যমে সফল করেছেন। বর্তমানে সাধারন শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে সেই চাকরি নামক সোঁনার হরিণ খুজে পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে বর্তমানে চাকরি পাওয়াটা অনেকটা সহজ হইয়ে গিয়েছে । তাছাড়া কারিগরি শিক্ষা গ্রহন নিজে থেকেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব । বর্তমানে একটু খেয়াল করলে দেখা যায় অনেক ছাত্রছাত্রী কারিগরি শিক্ষার যেকোনো একটা ট্রেডে বাস্তবমুখী শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে চাকরীর ক্ষেত্রগুলোতে অনেকটা সফলতার দোয়ার উম্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে এবং অনেকেই বেছে নিয়েছেন নিজে থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ । তেমনি নিজ থেকে  চাকরি পাওয়ার  এবং স্বাবলম্বী হয়ে উঠার  একটি সম্ভাবনাময় ট্রেড হচ্ছে আর্কিটেকচার অর্থাৎ স্থাপতিবিদ্যা। আর্কিটেকচার বা স্থাপতিবিদ্যা গ্রহণ করে শুধু চাকরি পাওয়া নয় বরং একজন মানুষ আর্কিটেকচার বা স্থাপতিবিদ্যা  গ্রহনের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে উঠে নিজেই নিজের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার গঠনে সচেষ্ট হতে পারে।

যিনি মুলত  আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং বাস্তবজীবনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দক্ষ হয়ে উঠে, কর্মক্ষেত্রে এর প্রয়োগ করে থাকেন তিনি হচ্ছেন একজন আর্কিটেক্ট । একজন আর্কিটেক্টের কাজ হচ্ছে ক্লাইন্টের চাহিদা অনুযায়ী স্বল্প খরচে স্বল্প জায়গায় সুন্দর এবং একটি কমপ্লিট বিল্ডিং ডিজাইন  করা। আর বিল্ডিং এর অভ্যন্তরীন ডিজাইন অর্থাৎ বিল্ডিং এর  প্রতিটি স্থানকে কাজে লাগিয়ে আসবাব, লাইট, গৃহসজ্জা সামগ্রী যথাযথ ব্যবহার করে বাড়ি, অফিস বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে আরামদায়ক এবং সৌন্দর্যবর্ধিত  করাই   ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাজ । একজন আর্কিটেক্টই মুলত ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাজ করে থাকেন। কিন্তু আধুনিকযুগে আর্কিটেক্ট এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনার এর কাজ কিছুটা ভিন্ন হয়ে গেছে । বর্তমানে ইন্টেরিওর ডিজাইনে আলাদা ভাবে কোর্স সম্পন্ন করে বাস্তবমুখী কর্মজীবনে প্রবেশ করা সম্ভব।

 

আর্কিটেক্ট এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনার পেশা অনেকটা চ্যালেঞ্জীং একটা পেশা কারন এই পেশাই দক্ষ হইয়ে উঠতে হলে অবশ্যই  সৃজনশীল এবং সৃষ্টিশীল হতে হবে ,আর এর পাশাপাশি  থাকতে হবে  অক্লান্ত পরিশ্রম করার ধৈর্য । তবেই একজন দক্ষ আর্কিটেক্ট এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হওয়া সম্ভব । কোনো  পেশাই বা কাজে যেমন দক্ষ হইয়ে উঠতে হলে অবশ্যই পেশা বা কাজটিকে প্যাশন হিসেবে নিতে হয়, ঠিক তেমনি আর্কিটেক্ট এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনে দক্ষ হতে হলে এই পেশাটিকে প্যাশন হিসেবে নিতে হবে,তবেই সফল হওয়া সম্ভব। নতুবা সম্ভব নয় ।শুধু পুঁথিগতবিদ্যা গ্রহণ করে একজন সফল আর্কিটেক্ট হওয়া সম্ভব নয় , সফল আর্কিটেক্ট হতে হলে অবশ্যই পুঁথিগতবিদ্যার পাশাপাশি  সৃষ্টিশীল মানুষিকতা থাকতে হবে। অক্লান্ত পরিশ্রম, সৃষ্টিশীল মানুসিকতার মাধ্যমেই একজন মানুষ সুন্দর এবং অসাধারন সৃষ্টিশীল স্থাপনা উদ্ভাবন করতে পারেন এবং হয়ে উঠেন একজন সফল আর্কিটেক্ট। প্রকৃতপক্ষে আর্কিটেকচার অর্থাৎ স্থাপতিবিদ্যা অনেক কঠিন একটা বিষয় তবে এই কঠিন বিষয়টাই সহজ হয়ে যাই  সৃষ্টিশীল এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনা মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ছাড়াও বর্তমানে বাইরের বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের দক্ষ আর্কিটেক্টদের চাহিদা রয়েছে । অনলাইন মার্কেটপ্লেসেও আমাদের দেশের অনেক দক্ষ আর্কিটেক্ট তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। অনেকে ঘরে বসেই স্থাপতিবিদ্যা গ্রহণ করে নিজের সুন্দর সৃষ্টিশীল এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সুন্দর সুন্দর নতুন স্থাপনার ডিজাইন করে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিজের ক্যারিয়ার ডেভেলপ করছেন।

 

বর্তমানে আধুনিক স্থাপনার অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যবর্ধনে প্রধান ভূমিকা রাখছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা যা একজন আর্কিটেক্ট ও করে থাকেন। একটি প্রতিষ্ঠানের অন্দরমহলের সাজসজ্জা বৃদ্ধিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের চাহিদা বুঝতে পারছে কর্তৃপক্ষ। আর তাই বেড়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের চাহিদা। তাই এ ক্ষেত্রে আলাদাভাবে উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে পারেন যে কেউই। বর্তমানে আর্কিটেকচার এবং ইন্টেরিওর ডিজাইনারদের চাহিদা অনেক। এতে করে তাদের চাকরির জন্য অনেক গুলো ক্ষেত্র তৈরি হইয়েছে, আর্কিটেকচার এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের জন্য বিভিন্ন  কোম্পানিতে যেমন চাকরির সুযোগ রইয়েছে তেমন সরকারি চাকরিতে ও তাদের অনেকগুলো ক্ষেত্র রইয়েছে।

 

কোম্পানির চাকরির ক্ষেত্রগুলো হলোঃ             

* ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং কন্সাল্টেন্সি ফার্ম;

* রিয়েল এস্টেট ও ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি;

* বিজ্ঞাপনী সংস্থা;

* মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেট কোম্পানি;

* হোটেল চেইন;

* অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইত্যাদি।

এছাড়া সরকারি চাকরির ও অনেকগুলো ক্ষেত্র রইয়েছে যেমনঃ

* গণপূর্ত মন্ত্রাণালয়

* বিডিএ

* এলজিইডি

এবং BPSC এর নিয়ন্ত্রাধীন বিভিন্ন মন্ত্রাণালয়ে চাকরির সুযোগ।

 

 

আর্কিটেকচার এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হতে হলে অবশ্যই সৃজনশীলতা এবং সৃষ্টিশীলতার ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে,তবেই একজন দক্ষ এবং কর্মশীল আর্কিটেক্ট এবং ডিজাইনার হওয়া সম্ভব। আর দক্ষ এবং কর্মশীল মানুষের বাস্তব জীবনে চাকরি নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। অনেক তরুণ তরুণী বর্তমানে আর্কিটেকচার এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইন এর ওপর নিজের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখছেন, কারন বর্তমানে একজন আর্কিটেক্ট বা ডিজাইনার এর প্রয়োজনীয়তা অনেক। অনেকেই আর্কিটেকচার এর ওপর নিজের ক্যারিয়ার গরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দেশে অনেক বিল্ডিং আছে যেগুলো আমাদের দেশের দক্ষ আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে।

সর্বোপরি, বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বের  বিভিন্ন দেশে  আর্কিটেক্ট এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দিন দিন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। যার ফলে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।যা আর্কিটেক্ট এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের জন্য কর্মক্ষেত্রে অনেক সফলতা নিয়ে আসছে।

লেখকঃ

শারমিন আক্তার

জুনিয়র   ইনস্ট্রাক্টর

আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন টেকনোলজি

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সিটিউট

Tags: No tags

Comments are closed.