জাফরান সে তো এক দামি মসলা

“জাফরান” সে তো এক দামি মসলা”

জাফরান

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মসলা।  বাংলাদেশের বাজারে 1 কেজি জাফরানের মূল্য ৪ লাখ টাকা ।

ভারতে পাঁচগ্রাম জাফরান বিক্রি হয় ২০০০ রুপিতে।  জাফরান প্রথম চাষ হয় মধ্য এশিয়ায় ৩৫০০ বছর আগে ।  হাজার বছর ধরে ইরান,স্পেন ,ফ্রান্স , ইতালি ও কাশ্মীর সহ গুটিকয়েক দেশে  জাফরান চাষ হয়।  অত্যন্ত মূল্যবান হওয়ায়  বাণিজ্যিক অঙ্গনে জাফরান কে  রেডগোল্ড ও বলা হয়ে থাকে । জাফরান  কে  কেশর  ও বলা হয়। ইংরেজিতে  জাফরান কে Saffron বলা হয় ।  এটা  এতটা দুর্মূল্য কেন এটাই এখন আমরা জানবো ।

 জাফরানের  বৈশিষ্ট্য

জাফরানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল  ফুল হলেও  নেই কোন বীজ।তাই বংশ বিস্তারের জন্য মানুষের উপর নির্ভরশীল। চারা লাগানোর পর প্রায় চার বছর পর এই উদ্ভিদের মূলে টিউবার   সৃষ্টি হয়I খুব সাবধানে কেবল অভিজ্ঞ   ব্যক্তিরাই  সংগ্রহ করে পরবর্তী উদ্ভিদের জন্য রোপন করে। প্রথমত সম্পূর্ণ উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে এ  ফুলের মুখ দেখা  যায় না। আবার যেদিন ফুল ফোটে তার  ঠিক কয়েক   ঘন্টার মধ্যে ফুল থেকে   পুংকেশর   বা ফুলের  রেনু সংগ্রহ করতে হয়। কেননা এ ফুল সূর্য ওঠার সময়  ফোটে   আর দিনের  শেষে তা মলিন হয়ে যায়  Iএক একটি  ফুল থেকে দু-তিনটি রেনু বা কেশর থাকে  যা সাবধানে  ফুল থেকে তুলতে হয়। ফুল থেকে    তুলেই কেশর গুলোকে রাখতে হয় এয়ারটাইট পাত্রে । ৪৫০গ্রাম শুকনো জাফরানের জন্য প্রায় 75000  ফুলের  প্রয়োজন হয়।  অন্য হিসেবে ৭২ গ্রাম তাজা কেশর শুকিয়ে ১২ গ্রাম ব্যবহারের উপযোগী জাফরান পাওয়া যায়। ১কেজি জাফরান সংগ্রহ করতে সময় লাগে প্রায় ৪০ ঘন্টা। পুরো কাজটি  কায়িক পরিশ্রমে শেষ করতে হয় যেখানে অটোমেশনের কোন সুযোগ নেই I অত্যন্ত ধৈর্যের  কাজ বিধায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ চাষ করতে  আগ্রহ হারিয়ে ফেলে I স্পেনে  জাফরান সংগ্রহের কম্পিটিসন হয়। গুটিকয়েক দেশে জাফরান চাষ হলেও  স্বাদ, গন্ধ ও রং এর দিক থেকে সর্বাধিক জনপ্রিয় ইরানের জাফরান  Iপ্রাচীন মিশরের রানী   ক্লিওপেট্রা গোসলের চৌবাচ্চায় কাঁচা দুধে জাফরান  ঢেলে গোসল করতেন , আলেকজান্ডার দি গ্রেট যুদ্ধের পর ক্ষতস্থান    জাফরান দিয়ে    ধুতেন Iরোমান  এম্পায়ার Nero যখন শহরে প্রবেশ করতেন তখন  রোমের রাস্তায় saffron  ছিটানো  হত I এমনকি ইহুদি ধর্ম গ্রন্থ ও উল্লিখিত আছে জাফরান সুগন্ধির কথা কিন্তু সব দুর্মূল্য বস্তুর একাধিক নকল ভার্শন বাজারে পাওয়া যায় ।কুসুম নামক এক ধরনের ফুলের পাপড়ি দিয়ে নকল জাফরান তৈরি করা হয় । এ  ফুলের  পাপড়ির  রং  কেশরের মত লাল টকটকে  হাওয়াই এর সাথে আসল জাফরানের পার্থক্য করা বেশ কঠিন   হয়ে দাঁড়ায় I বাংলাদেশের এই  মেকি জাফরানের  প্রচলনই বেশি কিন্তু গুটিকয়েক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ও জাফরান চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় স্বল্প পরিসরে আসল জাফরান চাষ  শুরু হয়েছে ।

 জাফরান বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়

এতে খাবারের স্বাদ গন্ধ বৃদ্ধি পায। স্পেন এবং পর্তুগাল এর  অনেক খাবারের ডিসে  জাফরানের ব্যবহার হয় Iস্প্যানিশ ন্যাশনাল ডিস “Paella” তে জাফরান ব্যবহার হয় মেডিটেরিয়ান এশিয়ান ইউরোপিয়ান এবং  মোগলাই বিভিন্ন খাবারের রেসিপিতে । জাফরান ব্যবহার করা হয় যেমন শাহী টুকরা, বিভিন্ন রকমের বিরিয়ানি ,বিভিন্ন ডেজার্ট আইটেম , রয়াল রোস্ট ল্যাম্ব লেগ   ডিসে Saffron Raisin sauce পরিবেশন করা হয় । জাফরান  রাইস  , সস ,সুপের  ব্যবহার হয়।

জাফরান মেডিসিন হিসাবে ব্যবহার রয়েছে ৩৫00 বছর আগে।  জাফরান  এ রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট গুনাগুন, ক্যান্সার ফাইটিং গুনাগুন ,  ক্ষুধা  কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে ।

 

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট