সকলের জন্যে কটন ফাইবার

সকলের জন্যে কটন ফাইবার

আমি মনে করি কটন ফাইবার নিয়ে আলোচনা আমাদের সবার জানার একটা বিষয় হতে পারে এবং টেক্সটাইল ছাএ-ছাত্রীদের জন্য বা অনন্য ছাএ-ছাত্রীদের জন্য উপকারী হবে।

কটন ফাইবার আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটি সুতা তৈরির কাঁচামাল যার অনুপস্থিতে হয়ত আমাদের এতবিহত চাহিদার সুতা তৈরি করা সম্ভব ছিলনা। কেননা বেশি ভাগ বস্ত তৈরিতে কটন ফাইবার ব্যবহিত হয়। তাই চলুন কটন ফাইবার সম্পর্কে জেনে নেই।

কটন বা তুলা প্রাকৃতিক সেলুলোজ ফাইবার বলা হয়। কারন কটনের মধ্যে ৯৪% সেলুলোজ আছে। কটন ফাইবারের দৈর্ঘ্য = ০.৩ থেকে ৫.৫ সে.মি; .আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা= ৭ থেকে ১০% (আদর্শ ৮.৫%) প্রাকৃতিক ফাইবার গুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত ফাইবার হচ্ছে কটন। কাপড় তৈরির জন্য সুতা প্রয়োজন আর সুতা তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে যে সব তন্তু বা আঁশ ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে টেক্সটাইল ফাইবার বলে, আর কটন তাদের মধ্যে অন্যতম।

বর্তমানে বস্ত্র শিল্পে অনেক ধরনের ফাইবার ব্যাবহার করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু ফাইবার প্রকৃতিগত ভাবে পাওয়া যায় এবং কাপড় আবিষ্কারের প্রথম থেকেই সেগুলো ব্যবহার হয়ে আসছে।  আর কিছু কৃত্তিম ভাবে পাওয়া যায়। ইতিহাসের দেখা যায় কটন ফাইবারের যে ঐতিহ্য চোখে পড়ে তা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও প্রাচীন। কটন বা তুলা  চাষে প্রথম সময় সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মিলিত মত থেকে ধারনা নেয়া যায় যে, খৃষ্টপূর্ব ৩,০০০ বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম তুলা চাষ শুরু হয়। এছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকোতে খৃস্টপূর্ব ৩,৫০০ বছর এবং খৃষ্টপূর্ব ৫০০ বছর হতে আমেরিকায় তুলার চাষ প্রচলিত ছিল।

 

ঐতিহাসিকদের মতে তুলার ব্যাবহার প্রথমে শুরু হয়েছিল ভূমধ্যসাগরীয় তথা আরবদেশ গুলোতে। মিশর হয়তো এক্ষেত্রে প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। আধুনিক সভ্যতার তীর্থভূমি বলে পরিচিত ব্রিটেন কিন্তু এ ব্যাপারে পিছিয়ে ছিল। পরবর্তীতে শিল্প বিপ্লবের পর ১,৩০০ শতাব্দীর গোঁড়া থেকে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে ব্রিটেনে প্রথম তুলার ব্যাবহার শুরু হয়। আমেরিকাতে তুলার ব্যাবহার শুরু হয় আরও পরে, ১,৬০০ শতাব্দীর শেষের দিকে। বিশ্বব্যাপী তুলার ব্যাপক ব্যাবহার শুরু হয় আঁশ থেকে যান্ত্রিক ভাবে সুতা তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কারের পর থেকে। শুধু তাই নয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুতা ও কাপড় তৈরির উত্তরোত্তর উন্নত প্রযুক্তিসহ কাপড়ের রং, ছাপা ও ফিনিশিং প্রক্রিয়াগুলোর আধুনিক পদ্ধতি উদ্ভাবনের ফলে কাপড়ের সর্বমুখী ব্যাবহার এতোই অবধারিত হয়ে পড়েছে যে, আজকের উন্নত বিশ্বে তুলার ব্যাবহার ব্যতিরেকে মানব কল্যাণের কোন দিককে বিচ্ছিন্ন করে ভাবা যায় না।ফলে বর্তমানে পৃথিবীর সকল দেশের, সকল শ্রেণীর মানুষ তুলা দিয়ে তৈরি কাপড় ও তুলাজাত অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করে আসছেন।

 

বাংলাদেশে তুলার চাষ:

কটন ফাইবার হলো ফাইবারের রাজা। প্রকৃতি থেকে সবচাইতে বেশি উৎপন্ন হয় এই কটন ফাইবার, এবং কটন ফাইবার হতে উৎপন্ন কটন ফেব্রিক দ্বারা তৈরি পোশাক মানুষের সবচাইতে বেশি কমফোর্ট প্রদান করে। বাংলাদেশে তুলার চাষ তেমন হয়না কিন্ত কিছু কিছু জায়গায় হয়ে থাকে। যে প্রকার তুলা বাংলাদেশে আগে থেকে উৎপন্ন হত তা “গোসিপিয়াম-আরবোরিয়াম” শ্রেণিভুক্ত। সাধারণত একে কুমিল্লা কটন নামে অভিহিত করা হতো। এই তুলার তিনটি বাণিজ্যিক নাম প্রচলিত যথা, লাংগুনিয়া, দোলা ও চাকুরিয়া। এই কুমিল্লা কটনের চাষ এখনো কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় প্রচলিত আছে। এই উৎপাদিত তুলার গুনগত মান খুবই নিন্ম শ্রেণীর এবং আঁশের দৈর্ঘ্য আধা ইঞ্চির উপরে নয়। ফলে এগুলো থেকে মিল পদ্ধতিতে কোন সুতা তৈরি হত না। দেশীয় প্রথায় চরকায় সুতা কাটা ও লেপ-তোষকের জন্য এগুলো বেশি ব্যবহৃত হতো।

বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক পর্যায়ে যে তুলা উৎপাদিত হচ্ছে তা মূলত: আমেরিকান। শুরুতে আমেরিকা থেকে বীজ আমদানি করে আমাদের দেশে নিয়মিত তুলা চাষ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশে তুলা উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন দেশের তুলার বীজ এনে স্থানীয়ভাবে শংকরিত করে বিভিন্ন জাতের তুলা বীজ উৎপন্ন করেছে। দেশে উৎপাদিত তুলা বর্তমানে ফলন ও গুনগত মানের দিক থেকে বেশ উন্নতি সাধন করেছে। এসব তুলার আঁশের দৈর্ঘ্য, রং এবং পরিপক্বতা বেশ ভাল। মেহেরপুর, জীবন নগর প্রভৃতি কেন্দ্রের দীর্ঘ আঁশের তুলা ব্যবহার করে অন্য কোন সংমিশ্রণ ছাড়াই ৬০স কাউন্ট পর্যন্ত সুতা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে তুলা উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কটনের প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য

১.নরম

২.আরামদায়ক

৩.ভাল পানি  শোষণ ক্ষমতা

৪.ভালমত প্রিন্ট করা যায়

৫.সহজে সেলাই করা  ইত্যাদি

৪.রঙ ধারণ ক্ষমতা বেশি

 

কটনের অ্যাপ্লিকেশন

সুতির প্রধান শেষ ব্যবহারগুলোর মধ্যে রয়েছে:

 

১.পোশাক

ব্লাউজ, শার্ট, বাচ্চাদের পোশাক, সাঁতারের পোশাক, স্যুট, জ্যাকেট, প্যান্ট, সোয়েটার, হোসিয়ারি ইত্যাদি।

২.হোম ফ্যাশন

পর্দা, চাদর, তোয়ালে, টেবিল কাপড়, টেবিল ম্যাট, ন্যাপকিনস ইত্যাদি।

৩.প্রযুক্তিগত অ্যাপ্লিকেশন।

৪.চিকিৎসা এবং প্রসাধনী অ্যাপ্লিকেশন

ব্যান্ডেজ, ক্ষত প্লাস্টার ইত্যাদি।

 

 

 

লেখক

মোহাম্মদ রাসেল শেখ

জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর

টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্ট