ভোল্টেজ এর কারনে কি বিদ্যুৎ বিল কম বা বেশি হতে পারে ?

উপরের এই বিষয়টি পরিস্কার ভাবে বোঝার জন্য কয়েকটি বিষয়ে আমাদেরকে সামগ্রিক ধারণা থাকতে হবে আমি প্রথমে এই বিষয়গুলো ধারনা দেবার চেষ্টা করছি।

কারেন্ট কী?

একক সময়ে কোন পরিবাহীর ভেতর দিয়ে যে পরিমাণ ইলেকট্রন একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয় তাকে কারেন্ট বলে।কারেন্টের একক হল এম্পিয়ার এবং প্রতীক হলো আই।

ভোল্টেজ কী?

যে চাপ বা বলের কারণে কোন পরিবাহীর ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎস থেকে ইলেকট্রনসমূহ আমাদের বৈদ্যুতিক ডিভাইস সমূহে এসে পৌঁছায় তাকে ভোল্টেজ বলে।ভোল্টেজের একক হচ্ছে ভোল্ট এবং প্রতীক হলো  ভি।

পাওয়ার কী?

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার বলতে আমরা বুঝি একক সময়ে কোন সার্কিট এর ভিতর দিয়ে কি পরিমান এনার্জি প্রবাহিত হলো তার পরিমাণ কে।পাওয়ার এর একক হল ওয়ার্ড এবং প্রতীক হলো পি।

একটা ডিভাইস চলার জন্য ভোল্টেজ এবং কারেন্টের খুবই প্রয়োজন।আপনার ডিভাইসে সংযুক্ত বৈদ্যুতিক পরিবাহি হতে ইলেকট্রন সমূহ ডিভাইসে প্রবেশের জন্য অবশ্যই ভোল্টেজের প্রয়োজন।আর এই ইলেকট্রন প্রবাহকে কারেন্ট বলে।

সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি ডিভাইস চলার জন্য কারেন্ট এবং ভোল্টেজের প্রয়োজন ।একটি ছাড়া অন্য টি কাজ করতে পারে না ।যদি আপনি খুব বেশি পরিমাণে কারেন্ট দেন কিন্তু ভোল্টেজ না দেন তাহলে যে রকম এই যন্ত্রটি চলবে না ।তেমনি ভাবে আপনি যদি অনেক পরিমাণে ভোল্টেজ দেন কিন্তু কারেন্ট না দেন তাহলেও ওই ডিভাইসটি চলবে না ।ডিভাইসটি চালানোর জন্য অবশ্যই দুটোই প্রয়োজন।কারেন্ট এবং ভোল্টেজের একত্রে গুণফলকে আমরা পাওয়ার বা এনার্জি বা শক্তি বলি।

বিদ্যুৎ বিল কিভাবে হিসাব করা হয়

বিদ্যুৎ বিল হিসাব করার জন্য মূলত পাওয়ার কে প্রাধান্য দেওয়া হয়।তার মানে হচ্ছে আমরা নির্দিষ্ট সময়ে কতটুকু পাওয়ার বা ক্ষমতা ব্যবহার করছি তার উপর ভিত্তি করে আমরা বিদ্যুৎ বিল হিসাব করি।এই পাওয়ারের একক হচ্ছে ওয়ার্ল্ড এটাকে বড় করলে কিলোওয়াট ।আমরা  খেয়াল করলে হয়তো বা দেখব মিটার এর উপরে কিলোওয়াট-ঘণ্টা লেখা থাকে আর এই কিলোওয়াট-ঘণ্টা দিয়েই আমাদের সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিল হিসাব করা হয়।

উদাহরণ হিসেবে যদি আমি ধরি 80 ওয়ার্ডের একটি বৈদ্যুতিক পাখা 10 ঘন্টা ধরে যদি চলে তাহলে 80 ওয়াট X 10 ঘন্টা সমান 800 ওয়াট ঘন্টা বা 0.8 কিলো ওয়াট ঘন্টা  ।প্রতি ইউনিট 5 টাকা করে হলে তাহলে বিদ্যুৎ বিল আসবে 0.8 X 5 সমান 4 টাকা।একইভাবে বাড়িতে যতগুলো লাইট ফ্যান অন্যান্য ইলেকট্রিক ডিভাইস গুলো আমরা ইউজ করি সবগুলোর বিল বের করে যোগ করলে আমরা একদিনে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ বিল পাব এবং মাসের মোট দিন দিয়ে যদি ওই মোট বিল কে গুন করি তাহলে সমস্ত মাসের বিদ্যুৎ বিল পাব।

ভোল্টেজ কমে গেলে কি বিদ্যুৎ বিল বেশি হবে

প্রত্যেক ডিভাইসের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোল্টেজ রেটিং থাকে ।সাধারণত ওই রেটিং  করা ভোল্টেজ পেলেই ডিভাইসটি সম্পূর্ণরূপে কাজ করতে সক্ষম হয় ।তবে ভোল্টেজ কমে গেলে বিদ্যুৎ বিলের উপর কোন প্রভাব পড়ে না কারণ বিদ্যুৎ বিলের হিসেবে ভোল্টেজের উপর হয় না নির্দিষ্ট সময়ে  কি পরিমান ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি ইউজ হয় তার উপর ভিত্তি করে করা হয়। বিষয়টি পরিস্কার ভাবে বোঝানোর জন্য একটি হিসাব করে দেখানো হলো।

মনে করি 26 ওয়াটের একটি বাতি 220 ভোল্ট রেটিংয়ের চলে এবং তিন ঘন্টা ধরে চলল ।এখন আমরা তিন ঘন্টার বিদ্যুৎ বিলের হিসাব করি ।যেহেতু বাতিটি 26 ওয়াটের এবং 220 ভোল্ট রেটিংয়ের চলে তাহলে এই বাতিটি কারেন্ট নিবে 26/220=0.12 এম্পিয়ার ।তাহলে আউটপুট পাওয়ার হবে 0.12 X 220= 26 ওয়াট ।যেহেতু 3 ঘণ্টা চলবে এবং বিদ্যুতের দাম যদি প্রতি ইউনিট 5 টাকা করে হয় ।তাহলে বিদ্যুৎ বিল আসবে 26 X 3 =78 ওয়াট  ঘন্টা /1000= 0.078 কিলো ওয়াট ঘন্টা X 5 টাকা= 0. 4 টাকা।

ধরুন আপনার বাড়ির ইলেকট্রিক পোলে কোন কারণে লুজ কানেকশন হলো এই লুজ কানেকশন এর কারণে লাইনের ভোল্টেজ কমে 180 ভোল্ট হলো এবং তিন ঘন্টা ধরে চলল ।এখন আমরা তিন ঘন্টার বিদ্যুৎ বিলের হিসাব করি ।যেহেতু বাতিটি 26 ওয়াটের এবং 180 ভোল্ট রেটিংয়ের চলে তাহলে এই বাতিটি কারেন্ট নিবে 26/180=0.14 এম্পিয়ার ।তাহলে আউটপুট পাওয়ার হবে 0.14 X 180= 25 ওয়াট ।যেহেতু 3 ঘণ্টা চলবে এবং বিদ্যুতের দাম যদি প্রতি ইউনিট 5 টাকা করে হয় ।তাহলে বিদ্যুৎ বিল আসবে 25 X 3 =75 ওয়াট  ঘন্টা /1000= 0.075 কিলো ওয়াট ঘন্টা X 5 টাকা= 0. 4 টাকা।

 

সুতরাং বিদ্যুৎ বিল মোটেও ভোল্টেজ এর উপর নির্ভর করে না ,নির্ভর করে পাওয়ার এর উপর অর্থাৎ কিলোওয়াট-ঘণ্টা উপর।

Tags: No tags

Comments are closed.