পরীক্ষা শব্দটা এমন, যেটা শুনলে বর্তমান অথবা অতীত সকল প্রজন্মই আঁতকে ওঠে। ক্লাস পরীক্ষা, সাপ্তাহিক পরীক্ষা, মাসিক পরীক্ষা, হঠাৎ পরীক্ষা, ষাণ্মাসিক পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল পরীক্ষা, প্রস্তুতি পরীক্ষা, অর্ধ বাৎসরিক পরীক্ষা, বাৎসরিক পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষা, চাকরির পরীক্ষা– পরীক্ষার যেন অভাব নেই! এতসব পরীক্ষার যাঁতাকলে রীতিমত নাভিশ্বাস উঠে যায় ছাত্রদের। ওঠাটাই স্বাভাবিক, কারণ আমাদের আরামপ্রিয় মস্তিষ্ক এত চাপ নিতে চায় না। পরীক্ষার পড়ার জন্য রাতগুলো যখন নির্ঘুম কাটে তখন নিশ্চয় একবার হলেও মাথায় আসে কে আবিষ্কার করেছিল এই পরীক্ষা? একই সাথে তাকে যদি একবার সামনে পেতাম তাহলে তাকে যে কিভাবে শায়েস্তা করতাম সেই নীল নকশাও মনের অজান্তে করে ফেলি। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি যিনি আবিষ্কার করেছেন এই ভয়ানক পরীক্ষা, সেটা জানার আগে আমাদের জানতে হবে কিভাবে এই পরীক্ষা পদ্ধতির সূত্রপাত হয়েছে…
পরীক্ষা পদ্ধতি
পরীক্ষার পদ্ধতির সূত্রপাত হয়েছে প্রাচীন চীনে। জি! এটাও Made in Chaina. চীনে সর্বপ্রথম Standardized Test বা সার্বভৌম পরীক্ষার প্রচলন করা হয়। এই পরীক্ষার ছিল মূলত একটি বাছাই পরীক্ষা। যার মাধ্যমে সরকারি চাকরির জন্য যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হত। এই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয় ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে। সুই রাজবংশ (Sui Dynasty) এই পদ্ধতি চালু করে। এর প্রায় ১৩০০ বছর পরে কুইং রাজবংশ (Qing Dynasty) ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে এই পদ্ধতি বাতিল করে। কিন্তু ১৮০৬ সালে ইংল্যান্ড এই পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করে এবং সরকারি বিভিন্ন কাজে প্রার্থী নিয়োগের জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করে। পরবর্তীতে তারা ইংল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষা পদ্ধতির সংযোজন করে। এইভাবে আস্তে আস্তে বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশে দেশে গ্রহনযোগ্যতাও পেতে থাকে। বিশ্বব্যাপী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরীক্ষা পদ্ধতির সূচনা
পরীক্ষার আবিষ্কারকহয়।
পরীক্ষার আবিষ্কারক লিখে যদি আমরা গুগল বা যেকোন সার্চ মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করি তাহলে একজন ব্যাক্তির ছবি আমাদের সামনে চলে আসে। তার নাম হল “হেনরি এ ফিশেল”। সাধারনত তাকেই “পরীক্ষার জনক” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৩ সালের ২০শে নভেম্বর জার্মানিতে। তিনি ছিলেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি গ্রীক ও ইহুদি সাহিত্যের উপর বই লিখেছেন। তিনি ২০০৮ সালের মার্চ মাসের ১৮ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি ছিলেন ফরাসি দার্শনিক, যিনি পরীক্ষা এবং পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বক্তৃতা করেছেন। পরীক্ষা সম্পর্কে তিনি যে দার্শনিক ধারনা দেন তা হল , “কোন বিষয়ে উপসংহারে পৌছানোর পূর্বে সেই বিষয় নিয়ে খুব বিচক্ষনতার সাথে পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ।” ধারনা করা হয় হেনরি মিশেলই সর্বপ্রথম দার্শনিক যিনি পরীক্ষার দর্শন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনিই বের করেছেন, বছর শেষে একটা পরীক্ষা না নিলেই নয়। কে পড়াশোনা করেছে আর কে করেনি, সেটা যাচাই করার এর চেয়ে ভালো পদ্ধতি নাকি আর নেই।
তাহলে পরীক্ষার জন্ম কি জনকের আগে!!!
আসলে পরীক্ষা পদ্ধতি কবে থেকে প্রচলন হয়েছে সেটা যদি তোমরা খেয়াল কর তাহলে দেখবে, আসলে আমরা যাকে পরীক্ষার জনক বলে আখ্যায়িত করছি তার জন্মের অনেক আগে থেকেই পরীক্ষার প্রচলন হয়েছে। হেনরি এ ফিশেলের ক্ষেত্রে ধারনা করা হয় তিনিই যে পরীক্ষার জনক এটি একটি ভুল ধারনা। মুলত বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ইন্টারনেট ভিত্তিক হাস্যরস সম্পর্কিত প্লাটফর্ম গুলোতে তাকে নিয়ে অনেক বেশি গল্প / আলোচনা শেয়ার করা হয় যার ফলে তাকেই অনেকে পরীক্ষার জনক হিসেবে মেনে নেয়। কিন্তু মজার বিষয় হল যদি আমরা পরীক্ষা পদ্ধতির সূচনার সময়ের কথা চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে হেনরি এ ফিশেল বা হেনরি মিশেল সকলেই পরীক্ষা দেওয়া লেগেছে।
আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতি
পরীক্ষার সাথে এখন অনেক কিছু জড়িত। রুটিন, গ্রেড, জিপিএ কিংবা ফলাফল সবকিছুই পরীক্ষার সাথে সম্পর্কিত। তাই এই বিষয়গুলো কে আরো সহজ করতে দিন দিন নতুন নতুন পরীক্ষা পদ্ধতির সূচনা হচ্ছে। যেমন আগে পরীক্ষা মানেই ছিল বড় বড় করে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অনেকটা রচনার মত। এর পরে শুরু হল Multiple Choice Question(MCQ) পদ্ধতি। যেখানে শুধু টিক দেওয়া লাগে বা বৃত্ত পূরণ করা লাগে। বিজ্ঞান শাখার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে যেটি সবচেয়ে মজার পরীক্ষা সেটি হল ব্যবহারিক পরীক্ষা বা প্র্যাকটিকেল পরীক্ষা। যেখানে সবকিছু হাতে কলমে করতে হয়। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এখন পরীক্ষা অনেকক্ষেত্রে কম্পিউটার নির্ভর হয়ে গেছে। অনেক দেশে বর্তমানে সরাসরি কম্পিউটারের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে পরীক্ষা পদ্ধতিতেও নতুন নতুন পরিবর্তন আসছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই উপকারি।