বিগডেটা এবং গণতন্ত্র
স্যোশাল মিডিয়ার দুনিয়া এক বিরাট সামাজিক বিপ্লবের পথ খুলে দিয়েছে দুহাত চওড়া করে। তাহলে লিখি, প্রযুক্তি বিপ্লব কি করে মানুষের রাজনীতি এবং সমাজকে বদলে দেবে, তার ১% ও আপনি দেখেন নি। বাকী ৯৯% খেলা আসিতেছে। আর যে প্রযুক্তির হাত ধরে এই নতুন দিন, নতুন দেশ, নতুন আইন আসছে-তার পোষাকি নাম বিগডেটা।
অবাক হব না যদি দেখি ত্রিশ বছর বাদে, আর কোন রাজনৈতিক পার্টি নেই। রাজনৈতিক প্রতিনিধি নেই। স্কুল নেই। কলেজ নেই। শিক্ষক নেই। ডাক্তার নেই। উকিল নেই। আছে শুধু বিগ ডেটা ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম। যার ওপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে নতুন এ আই শিক্ষক । যে শিশুর সাথে বাড়িতে ক্রমাগত কথা বলে বুঝছে শিশুর কি শেখা দরকার-সে কি লিখবে-কি দেখবে-কি পড়বে-এবং তারপরে মূল্যায়ন ও করে দেবে। ডাক্তারীর ক্ষেত্রেই একই কথা। ডি এন এ, এম আর আই, ব্লাড রিপোর্ট সব বিশ্লেষন করে যদি কোন ওষুধ লাগে, তার ফর্মুলেশন কম্পুটারেই পেয়ে যাবে। রোগ নিয়ে যা বুঝতে চাইবেন-কি কি করনীয় জানতে চাইবেন-সবই পাবেন হাতের মুঠোয়। সরকার, গর্ভনমেন্টের ভূমিকা ক্রমশ সংকুচিত হবে। ট্যাক্স কালেকশন, কে ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে-কে ঘুষ খাচ্ছে-সরকারের কোথায় টাকা খরচ করা উচিত-কিভাবে করা উচিত-সব কিছুর জন্যই থাকবে বিগডেটা রেকমেন্ডেশন সিস্টেম। বাজেট বিতর্কের দরকারই হবে না। নতুন আইন প্রণয়নের ও দরকার হবে না-কারন সোশিওলজিক্যাল বিগডেটা বিশ্লেষন করে বলে দেওয়া সম্ভব হবে, নতুন আইনের দরকার আছে কি নেই! আর ক্রাইম? আমরা এত বেশী সেন্সর নিয়ে ঘুরব-আমরা কোথায় ছিলাম ,কোথায় কি করেছি-তা সব সময় এখনি ট্রাক করে যাচ্ছে গুগল, ফেসবুক। এর পরে আসছে আই ও টি বা ইন্টারনেট অব থিংঙ্কস। বিগডেটাই প্রমান করে দেবে কে অপরাধী। এই ফিল্ডটাকে বলে ইডিসকভারী।
কোন সমাজ বিপ্লব, বৈপ্লবিক চিন্তা, বিপ্লবী-কেও নাই। নাই কোন রক্তপাত। নেই গৃহযুদ্ধ। ছোট ছোট কিছু কিছু আবিস্কার। ছোট ছোট ধাপ। বেবী স্টেপ এট আ টাইম। ট্রানজিস্টর-থেকে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট এক অভূতপূর্ব প্রযুক্তি বিপ্লব। এক ইঞ্চি সিলিকন টুকরোর মধ্যে লাখ লাখ ট্রানসিস্টর। সিলিকন ভ্যালীতে ফেয়ার চাইল্ড সেমিকন্ডাক্টরের হাত ধরে আস্তে আস্তে তৈরী হতে শুরু করল, ছোট্ট ছোট্ট কম্পইউটার যার ক্ষমতা আজকের যেকোন মোবাইল ফোনের ১% ও না। তৈরী হোল মাইক্রোসফট আপলের মতন কোম্পানী যারা কম্পুটারের দাম মধ্যবিত্তের ধরা ছোঁয়ার মধ্যে নিয়ে আসল।
সত্যিকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব এল ইন্টারনেটের হাত ধরে। ইন্টারনেটের পূর্বসূরী আরপানেট। শুধু কম্পিউটার তৈরী করলেই হবে না-তাদের মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থাও চাই। এই ভাবনা থেকেই উদ্ভব সার্ভার, ওয়েব সার্ভার, ওয়েব দুনিয়া। কিভাবে এক জায়গায় তথ্য রেখে সব তথ্য গোটা দুনিয়াকে সার্ভ করা যেতে পারে। ওয়েব সাইটের জন্ম, ইমেল কমিউনিকেশন প্রথম প্রজন্মের তথ্য বিপ্লব। হাজার হাজার ওয়েব সাইট যখন তৈরী হচ্ছে , ১৯৯৪ সালে স্টানফোর্ডের ছাত্র জেরী ইয়াং এর মাথায় ঢুকল এক নতুন ব্যবসার প্ল্যান-একটা ওয়েব সাইট বানালে কেমন হয় যেখানে পৃথিবীর সব ওয়েব সাইটের ডাইরেক্টরী থাকবে? আসলে তখনো ওয়েব সাইট মুড়িমুরকির মত তৈরী হয় নি। সেই ১৯৯৪ সালে সব মিলিয়ে হয়ত ছিল লাখ খানেক সাইট। সেটাই উয়াহুর জন্ম। কিন্ত এত লাখে লাখে ওয়েব সাইট তৈরী হতে শুরু হল প্রতিদিন, জেরী ইয়াং বুঝলেন ডিরেক্টরী ঘেঁটে কেও ওয়েব সাইট খুঁজে পাবে না। চাই সার্চ ইঞ্জিন। সেখান থেকেই ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিনের জন্ম। যার প্রতিদ্বন্দী হিসাবে ১৯৯৮ সালে জন্ম গুগুলের।
বিগডেটার জন্ম গুগুলের হাত ধরেই-এবং সেই সার্চ ইঞ্জিনের সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে। আজ বিগডেটার ব্যবহার ক্ষেত্র এবং ভবিষ্যত সুদূর প্রসারী। তাই এই প্রযুক্তি বুঝতে গুগুলের সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে, সেটা বোঝা দরকার।
সাথে সাথে বুঝতে হবে একেকটি ছোট ছোট আবিস্কার কিভাবে আমূল পরিবর্তন আনছে আমাদের জীবনে। সমাজে। রাজনীতিতে। অপ্রাসঙ্গিক হচ্ছে সমস্ত রাজনৈতিক তত্ত্ব। বেকারত্ব বাড়বে-কারন মানুষের ৯৯% স্কিল আর কোন কাজেই আসবে না।
===========
সোমা রানী দাস
বিভাগীয় প্রধান
ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং