সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম সম্পর্কে  বিস্তারিত আলোচনাঃ পর্ব-১

সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম সম্পর্কে  বিস্তারিত আলোচনাঃ পর্ব-১

Daffodil Polytechnic Institute কর্তৃক প্রকাশিত ব্লগের ধারা-বাহিক আর্টিকেল লেখার জন্য আমি “ Surveillance Security System“ বিষয় টি বেছে নিয়েছি। আমি মনে করি বিষয় টি যুগ উপ যুগী- তাই এর প্রথম পর্ব “ সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম সম্পর্কে  অবগত হওয়া “। আর্টিকেলটিতে  সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করা হবে। সিকিউরিটি জোরদার করার ক্ষেত্রে  সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম সম্পর্কে ধারনা থাকা অত্যন্ত জরুরী ।

সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম এর যেসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে তা হল-

১। সার্ভিলেন্স সিস্টেম সম্পর্কে অবগত হওয়া।

২। সার্ভিলেন্স সিস্টেম এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ আলোচনা করা ।

৩। ভিডিও সার্ভিলেন্স সিস্টেম এর ঘটনার ব্যাখ্যা সম্পর্কে আলোচনা করা।

৪। সিসিটিভি সার্ভিলেন্স সিস্টেমের বিভিন্ন নোড সম্পর্কে আলোচনা করা ।

 সার্ভিলেন্স সিস্টেম সম্পর্কে অবগত হওয়া 

সার্ভিলেন্স নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে সার্ভিলেন্স শব্দটির উৎপত্তি  সম্পর্কে যানা আমাদের প্রয়োজন।

আসুন জেনে নিই সার্ভিলেন্স কথাটি কোথা থেকে এসেছে। সার্ভিলেন্স (Surveillance) এর আভিধানিক বাংলা অর্থ হচ্ছে নজরদারি । যা একটি ফরাসি শব্দ Sur শব্দের আভিধানিক রূপ From Above অর্থাৎ দূর বা উপর থেকে এবং Veiller এর আভিধানিক অর্থ To Watch অর্থাৎ “দেখার জন্য”। তাই সার্ভিলেন্স এর পুরো অর্থ দাঁড়ায় দূর বা উপর থেকে দেখার জন্য।

তাহলে নজরদারি বা সার্ভিলেন্স এর সংজ্ঞা দাঁড়ায়- কোন ব্যক্তি, সংগঠন, নির্দিষ্ট স্থান ইত্যাদির নিরাপত্তা বা তার গতিবিধির উপর নজরদারি করার জন্য মানুষ দাঁড়া বা যান্ত্রিক সহায়তায় যে পদ্ধতি আরোপ করা হয়,তাকে নজরদারী প্রক্রিয়া বা সার্ভিলেন্স সিস্টেম (Surveillance System ) বলে ।

সার্ভিলেন্স সিস্টেম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে-

১। টেলিফোন নজরদারি

২। ক্যামেরা নজরদারি

৩। এরিয়াল নজরদারি

৪। কম্পিউটার নজরদারি

৫। সামাজিক নজরদারি

৬। বায়োমেট্রিক নজরদারি

৭। ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং

৮। কর্পোরেশন নজরদারি

৯। আরএফআইডি এবং জিওলোকেশন ডিভাইস

১০। মাইক্রোচিপ নজরদারি

১১। পোষ্টাল পরিষেবা

১২। ওয়াল্ডি লাইফ

টেলিফোন নজরদারি  (Telephone Surveillance )   

টেলিফোনে কথা বলে তথ্য পাচার বা কোন অপরাধ সংগঠনের প্রতিষ্ঠা প্রতিহত করার জন্য টেলিফোনের কথার টেপ করে রেকর্ড রাখার প্রক্রিয়া এক ধরনের সার্ভিলেন্স বা নজরদারি।

অফিসিয়াল বা আনঅফিসিয়ালি  টেলিফোনে আড়িপাতা বিশ্বব্যাপী।

উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আইন প্রয়োগকারী আইন (CALEA) এর জন্য যোগাযোগ সহায়তা প্রয়োজনীয় হয়, যে সমস্ত টেলিফোন এবং ভিওআইপি যোগাযোগ ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলি দ্বারা রিয়েল-টাইম ওয়্যারটেপিং এভেলেবেল থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বড় টেলিযোগাযোগ সংস্থা — AT&T Inc.and Verizon – এফবিআইয়ের সাথে চুক্তি করেছে, যাতে তাদের ফোন কল রেকর্ডগুলি ফেডারেল এজেন্সিগুলির জন্য সহজেই সন্ধান করা যায় , জন্য প্রতি বছর ১.৮ মিলিয়ন ডলার এর জন্য পরিশোধ করতে হয়।

 ক্যামেরা নজরদারি (Camera Surveillance)   

নজরদারি ক্যামেরা বা Camera Surveillance হ’ল কোনও অঞ্চল পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভিডিও ক্যামেরা। নজরদারি এর ক্ষেত্রে ক্যামেরা বহুল প্রচলিত, বিশেষ করে ভিডিও ক্যামেরা রেকর্ডিং ডিভাইস আইপি নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে খুবই কার্যকরীভাবে কাজ করা যায়। এধরনের নজরদারি ব্যবস্থায় ব্যবস্থা একটি কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থাকে, যেখান থেকে সব ক্যামেরা দ্বারা নজর রাখা হয়। এ ধরনের নজরদারি ব্যবস্থা সাধারণত নিরাপত্তারক্ষী বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ব্যবহার করে থাকে।

এরিয়াল নজরদারি (Aerial Surveillance)   

শূন্যে ভাসমান কোন যন্ত্রের বা বিমানের সাহায্যে নজরদার করার প্রক্রিয়াকে এরিয়ার সার্ভিলেন্স (Aerial Surveillance) বলে। যেমন ড্রন দ্বারা ভিজুয়াল ইমেজ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দল বা এলাকার উপর নজরদারি করা হয়ে থাকে বিশেষ করে পাকিস্তান আফগানিস্তান ও বিভিন্ন দেশে আমেরিকান আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ব্যাপকহারে গ্রহণের মাধ্যমে সার্ভিলেন্স করে আসছে সফলতার সাথে।অনেক সময় বিমান থেকেও Surveillance করা হয়ে থাকে । বিশেষ করে আমেরিকার Awax বিমান তাদের জন্য বহুল ব্যবহৃত হয়।


কম্পিউটার নজরদারি (Computer Surveillance)    

কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্ক নজরদারি হ’ল কম্পিউটারের ক্রিয়াকলাপ এবং একটি হার্ড ড্রাইভে থাকা ডেটা বা ইন্টারনেটের মতো কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলিতে ডেটা স্থানান্তরিত হওয়া ডেটা পর্যবেক্ষণ। এই পর্যবেক্ষণটি প্রায়শই গোপনীয়ভাবে পরিচালিত হয় এবং এটি সরকার, কর্পোরেশন, অপরাধমূলক সংস্থা বা ব্যক্তি দ্বারা সম্পন্ন হতে পারে।

 

 

সোশ্যাল মিডিয়া নজরদারি (Social Media Surveillance)    

সোশ্যাল মিডিয়া নজরদারি ডিজিটাল যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলি থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণকে বোঝায়।

নজরদারির অন্যতম ক্ষেত্রেই হচ্ছে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বা সোশ্যাল মিডিয়া যেমন- ফেসবুক, টুইটার,

ইউটিউব, লিংকডিন  ইত্যাদি কে কোথায় কি ধরনের বক্তব্য বা কি ধরনের আচরণ ও কোন ঘটনার উপর কি ধরনের প্রক্রিয়া প্রদর্শন করছে তা সোশ্যাল মিডিয়া বা নেটওয়ার্ক নজরদারির মাধ্যমে সহজে জানা যায়।


বায়োমেট্রিক
নজরদারি (Biometric Surveillance)   

বায়োমেট্রিক নজরদারির মাধ্যমে মানুষের শারীরিক উপস্থিতি নিশ্চিত এবং তার আচরণের উপর নজরদারি করা সম্ভব। ইদানিং আমাদের দেশে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে মোবাইল সিম রেজিস্ট্রেশন এবং অফিস, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্রে হাজিরা দেয়ার মাধ্যমে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করণের কাজ চলছে। এ ধরনের নজরদারি প্রক্রিয়ারই বায়োমেট্রিক নজরদারি।

ডেটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং(Data Mining and Profiling)   

ডাটা মাইনিং এবং প্রোফাইলিং প্রক্রিয়ায় বহুসংখ্যক মানুষের বিভিন্ন এলাকার তথ্য একসাথে স্টোর করে তারপর সেখান থেকে যখন যেটা প্রয়োজন তা নিয়ে কাজ করা হয় তখন কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা এলাকার তথ্যাবলী আলাদা আলাদাভাবে প্রফাইল আকারে দেখা যায়।

 

কর্পোরেট নজরদারি (Corporate Surveillance)   

কর্পোরেট নজরদারি হ’ল কর্পোরেশন কর্তৃক কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণ পর্যবেক্ষণ। সংগৃহীত ডেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিপণনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় বা অন্য কর্পোরেশনগুলিতে বিক্রি হয় তবে নিয়মিত সরকারী সংস্থাগুলির সাথেও ভাগ করা হয়।

আরএফআইডি এবং জিওলোকেশন ডিভাইস (RFId and Geolocation Devices)   

রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডি এবং জিওলোকেশন ডিভাইস, এ ধরনের সার্ভিলেন্স ব্যবস্থা কোন বস্তু বা মানুষ বা যানবাহনের উপর নজরদারি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডি ট্যাগ ( RF Id Tag) মাধ্যমে বহনকারী যানবাহন কোথায় অবস্থান করছে তা জানা যায়।বিমান জাহাজ গাড়ি মোটরসাইকেল এমনকি মোবাইল ফোনের অবস্থান নির্ভুলভাবে নজরদারিতে রাখতে জিপিএস ব্যবহার করা হয়।

মাইক্রোচিপ নজরদারি(Micro Chip Surveillance)   

মাইক্রোচিপ এর সাহায্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা যানবাহনের উপর সার্ভিলেন্স করা হয় এর সিগনাল এর মাধ্যমে রিসিভার সিগন্যাল রিসিভ করে, ওই ব্যক্তি বা যানবাহনের অবস্থান বের করা যায়। কখনো কখনো মাইক্রোচিপ মানুষের শরীরে ও স্থাপন করা হয়ে থাকে যাতে তার অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়।

নজরদারির অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ডাক বিভাগে নজরদারি । কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গতিবিধি এবং তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হোল চিঠিপত্র, যার উপর নজরদারি করা হয় ডাক বিভাগের মাধ্যমে।ডাকযোগে পণ্যের অবস্থান প্রতিনিয়ত কাস্টমারের কাছে প্রদান করার জন্য বিশ্বের সব বড় বড় পোস্টাল সার্ভিস গুলি, একটি কাস্টম প্যানেল দিয়ে থাকে যার ফলে তার পণ্য সঠিক জায়গায় পৌঁছেছে কিনা সময়মতো তা অনুধাবন করতে পারে।পোষ্টাল পরিষেবা(Postal Service)    

এছাড়াও আমরা আরো অনেক ধরনের সার্ভিলেন্স সিস্টেম দেখতে পাই যেমন -পশু-পাখিদের উপর নজরদারি সিস্টেম, করোনাভাইরাস নজরদারি সিস্টেম, হিউম্যান মাইক্রোচিপ ইত্যাদি।

নজরদারি করার সুবিধা অসুবিধা 

নজরদারি করার সুবিধাসমূহ 

  • ২৪ ঘন্টা/সপ্তাহে সাতদিন সার্বক্ষণিক নজরদারি করা সম্ভব ।
  • সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেমের কারণে কোন ঘটনার সত্য তথ্য উদঘাটিত হয়।
  • সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম পাবলিক প্লেসে স্থাপন করা হলে জননিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।
  • সার্ভিলেন্স ব্যবস্থা কোন প্রতিষ্ঠান ও এর কর্মচারীদের নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে
  • সার্ভিলেন্স এর ব্যবস্থা থাকলে সংঘটিত অপরাধের প্রমাণাদি সংগ্রহ করা সহজ হয়।
  • সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম এরিয়াতে অপরাধীরা অপরাধের মাত্রা অনেকখানি কমিয়ে আনে।
  • আদালতে প্রমাণ স্বরূপ অপরাধীদের ভিডিও ফুটেজ এবং অন্যান্য প্রমাণাদি সাবমিট করতে সহজ হয়।
  • কর্মক্ষেত্রে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।

 নজরদারি করার অসুবিধাসমূহ   

  • হ্যাকারদের আওতায় চলে আসলে হুমকির জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার কমে আসতে পারে।
  • ব্যাপক মাত্রায় সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেমে মানুষ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ে এবং মেধা ও পরিশ্রম শূন্য হয় পড়ে ।
  • নজরদারির ফলে জনগণ তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে।
  • খরচ বেশি ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়।
  • সার্ভিলেন্স এর ফলে ব্যক্তি অধিকার অনেকাংশে ক্ষুদ্র করে।

পরিশেষে বলতে গেলে বলতে হয় সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম সম্পর্কে জানা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ ও মনিটরিং ব্যবস্থা জানা অত্যন্ত জরুরী যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই এখন বাধ্য হচ্ছে তাদের প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম স্থাপন করা। যার ফলশ্রুতিতে এই সেক্টরে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে । আইটি প্রফেশনে যারা জড়িত হতে চান তাদের সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সম্পর্কে জানা জরুরী, একটি ব্লগে হয়তো সম্পূর্ণ আনা সম্ভব হয়নি, পরবর্তী পর্বে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।  চার বছর মেয়াদি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আন্ডারে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবেন । টেকনিক্যাল এডুকেশন এর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দের জন্য অত্যন্ত উপকারে আসবে এছাড়াও সাধারণ যারা সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি সিস্টেম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী এবং নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য আশা করি কাজে লাগবে।

 

সোর্স ঃ [wikipedia, Google, Textbook.]

 

মুহাম্মাদ সহিদুল ইসলাম

ইনস্ট্রাক্টর(কম্পিউটার)

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সস্টিটিউট

 

Tags: No tags

Comments are closed.