মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত

মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত

মুক্তিযুদ্ধ শুরুই হয়েছিল পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা দিয়ে।

২৫ শে মার্চ ১৯৭১ সালের  মধ্যরাতে শুরু হয় অপারেশন ব্লুস্টার নির্বিচার হত্যা অগ্নিসংযোগ লুটতরাজ দখলদার বাহিনী প্রধান টার্গেট ছিল একদিকে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা অন্যদিকে তখনকার বাঙালি চেতনায় উজ্জীবিত রাজনৈতিক কর্মকা কর্মীগণ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই শহীদ হয়েছেন আর বেশিরভাগ বাঙালি আন্দোলনে শরিক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন দখলদাররা প্রায় পুরো জাতিকে সন্দেহের চোখে দেখেছে সামান্য কিছু দালাল ছাড়া আর সকলেই ছিল তাদের বিরুদ্ধে একটু গুছিয়ে নিয়ে পাকিস্তানীরা যেমন তাবেদার সরকার বানিয়েছে তেমনি অত্যাচার-নির্যাতন বাড়িয়েছে রাজাকার-আলবদর-আলশামস এরকম সব স্থানীয় অনুগত বাহিনী দিয়ে তারা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও সমর্থকদের নিধনের কাজ চালায়।

                             

২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত নয় মাসে যারা দেশে  অন্তত 30 লক্ষ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়।  এত কম সময়ে এত মানুষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছাড়া আর কখনো মারা যায়নি।  সারাদেশ   বদ্ধভূমি আছে যেখানে নিয়মিত বাঙ্গালীদের হত্যা করা হয়েছে।  বহু স্থান আছে যেখানে অকস্মাত্ আক্রমণ চালিয়ে একসাথে বহুৎ লোক হত্যা করা হয়েছে। ওই সময়ে এমন দিন পাওয়া মুশকিল যেদিন কোথাও না কোথাও গণহত্যা চালানো হয়নি। 

 বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণ ছিল এক ঐতিহাসিক ভাষণ। টানটান উত্তেজনার মধ্যে সেদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে তিনি পাকিস্তানী সামরিক জান্তাকে হুঁশিয়ার করে দেওয়ার পাশাপাশি কৌশলে স্বাধীনতার ডাক দেয়। টিনের ভাষণের শেষ পর্যায়ে বলেন এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি অফিসার, বেসামরিক আমলা বৃন্দ, রাজনৈতিক কর্মী, সাধারণ মানুষ সকলেই আসন্ন সংগ্রামের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে থাকেন। পাকিস্তান কৌশলে এগোচ্ছে। আলোচনা চালিয়ে এমনভাবে সময় কাটাচ্ছিল যাতে গোলাবারুদ ও সৈন্য এনে হামলার প্রস্তুতি নেওয়া যায়। চট্টগ্রাম ইপিআর এর মেজর রফিক প্রথম থেকে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন। ২৫ শে মার্চের পর পর  চট্টগ্রামে মেজর জিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেজর খালেদ মোশাররফ, জয়দেবপুরে মেজর শফিউল্লাহ প্রমুখ সৈন্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এদিকে বেসামরিক ছাত্র-জনতা সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামের জন্য তৈরি হতে থাকেন। ছাত্রীরা পর্যন্ত রাইফেল কাঁধে যুদ্ধের মহড়া দিতে থাকে। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক বাহিনী থেকে অফিসার ও সৈনিকদের নেতৃত্বে বিচ্ছিন্নভাবে প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয়।

 আর  নয় মাসে প্রতিদিন ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক দলে দলে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। এমনকি নারী ও শিশুরাও বাদ থাকেনি। হয়ে পড়েছিল জনযুদ্ধ। চট্টগ্রাম বেতার থেকে মেজর জিয়া সাতাশে মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার পর তাতে পাকিস্তানি আক্রমণে হতবিহম্বল মানুষ আশ্বস্ত হয়। তাদের মনোবল বেড়ে যায়। একটা পর্যায়ে পাক বাহিনী ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে  প্রায় সমগ্র দেশ দখল করে নেয়। কিন্তু প্রতিরোধ সংগ্রাম কখনো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। তারপর ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। আর দেশবাসী ঝাঁপিয়ে পড়া মুক্তিযুদ্ধ। 

সূত্র : কীর্তিকথা

শাহনেওয়াজ সেরাজ সুবর্ণা

ইন্সট্রাক্টর অফ আর এস ডিপার্টমেন্ট 

ডেফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট 

 

Comments are closed.