মাইন্ডসেট এবং সফট স্কিল

মাইন্ডসেট এবং সফট স্কিল

মাইন্ডসেট এবং সফট স্কিল

সফলতা মূলত দুইটি কারনে আসে, একটা হচ্ছে মাইন্ডসেট এবং আর একটা হচ্ছে সফট স্কিল।

১. মাইন্ডসেট

২.সফট স্কিল

মাইন্ডসেটঃ

মানুষের মাইন্ডসেট করা না থাকে কোন কাজে আসলে সফলতা আসে না। তাই আমাদের একটা নির্দিষ্ট মাইন্সের থাকতে হবে। মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় –

১. গ্রোথ মাইন্ডসেট

২. ফিক্স মাইন্ডসেট

গ্রোথ মাইন্ড সেট এ মানুষরা মনে করে আমি যদি চেষ্টা করি, আমি যদি শিখতে চাই তাহলে আমার অনেক কিছুই শেখা সম্ভব। ফিক্স মাইন্ডসেটের মানুষকে মনে করে যে না এটা আমার দ্বারা হবে না, এইটা তে আমি ভালো না, ওইটা আমি করবো না, এটা করাই আমার জন্য সময় নষ্ট ইত্যাদি তাদের মানুষের টা আসলে ফিক্স করা থাকে যে আমার এই জায়গাতে ডেভলপ হয় সম্ভব না। গুদমারা সেটা মনে করে যে না বেইন হচ্ছে গাছের মত এটাও হবে,  পিকস মানুষের মনে করে এত দেয়ালের মত এটাকে আর গ্রো করা সম্ভব না।

মানুষের ব্রেইন কে আমরা প্লাস্টিক বলতে পারে কারণ এটা আস্তে আস্তে বড় হয়। যত বেশি মানুষ প্র্যাকটিস করবেন ততবেশি সে লার্ন করবে এবং যত বেশি সে লার্ন করবে তত বেশি তার ব্রেইন টা গ্রো করবে।

সফট স্কিলঃ

হার্বাট ইউনিভার্সিটি একটা রিসার্চ পাওয়া গেছে, “যেসব মানুষ চাকরি জীবনে সফল হয়, সেই সমস্ত মানুষের সফট স্কিল তাকে ৮৫% সহযোগিতা করে এবং টেকনিক্যাল স্কিল বা হার্ড স্কিল ১৫% সহযোগিতা করে।“

সফট স্কিল কেন গুরুত্বপূর্ণঃ

আমরা যদি উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকায় তাহলে আমরা দেখতে পাব ৮৫% চাকরির সফলতা আসে সফট স্কিল দিয়ে।  যেমনঃ যারা এইআর প্রফেশনাল আছেন তারা যখন কোন ইন্টারভিউ নেন সেখানে তারা বেশি গুরুত্ব দেয় সফট স্কিল বা ইন্টার পার্সোনাল স্কিলের উপরে। তবে সে ক্ষেত্রে হার্ডস্কিলের বা টেকনিক্যাল স্কিলেরও গুরুত্ব আছে কারণ টেকনিক্যাল স্কিল বা হার্ড স্কিল ছাড়া কর্ম ক্ষেত্রে কাজ করা সম্ভব না।

এবং যারা জব সিকার তাদেরকে নিয়ে রিসার্চ করা হয়েছে সেখানে দেখা গেছে তারা বেশিরভাগই বলেছে যে চাকরির ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল স্কিল বা হার্ড স্কিলের গুরুত্ব বেশি।

তারমানে দেখা যাচ্ছে যে যারা জব দিচ্ছেন এবং যারা জব খুজছেন তাদের মধ্যে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে সবাইকে তা বুঝতে হবে এবং সব স্কিনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ যারা এই জিনিসটা বুঝবেন না এবং মনে করবেন যে তাদের একাডেমিক রেজাল্ট  ভালো হলেই আমি জব পেয়ে যাব তারা আসলে আপনি পাবেন না আপনার যদি সফট স্কিল ডেভলপ না করেন। কারণ যারা আপনাকে চাকরি দিবেন তারা আপনার ইন্টার পার্সোনাল স্কিল বাস্তব স্কিলের উপরে প্রাধান্য দেন।

৫ ধরনের সফট স্কিন যা বর্তমানের থাকা অত্যাবশ্যকঃ

অনেকগুলো সফট স্কিন আছে যার মধ্যে যদি জানতে চাওয়া হয় কোন ধরনের সংস্কৃতি গুলো বেশী গুরুত্বপূর্ন তাহলে আমরা বলতে পারি-

১. প্রবলেম সলভিং

২. ক্রিটিকাল থিংকিং

৩. ক্রিয়েটিভিটি

৪. পিপল ম্যানেজমেন্ট এবং

৫. কলাবরেশন

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক রিপোর্ট অনুযায়ী এই পাঁচ ধরনের সফট স্কিল টপ লিস্টে আছে।

 

. প্রবলেম সলভিং

প্রবলেম সলভিং মানে হচ্ছে যার প্রবলেম সলভ করার এবিলিটি আছে। সে খেতে অনেকেই বলে থাকেন কিভাবে প্রবলেম সলভ করবেন। আসলে প্রবলেম সলভিং এর কিছু মেথড আছে। যেমন

  • প্রবলেম আইডেন্টিফাই করা
  • প্রবলেমের কারণে খুজে বের করা
  • প্রবলেম এনালাইসিস করা
  • সলিউশন খুঁজে বের করা
  • সলিউশন গুলোকে অ্যানালাইসিস করা
  • সলিউশন নিয়ে প্ল্যানিং করা
  • ইমপ্লিমেন্ট করা

 

. ক্রিটিকাল থিংকিং

ক্রিটিকাল থিংকিং হচ্ছে আপনারা যখন কোন ইনফর্মেশন পান তখন তাকে কিভাবে রেশনালি যাচাই বাছাই বা মূল্যায়ন করবেন। আপনার মধ্যে এই যাচাই বাছাই বা মূল্যায়ন করার ক্ষমতা টা আছে কিনা। ক্রিটিক্যাল থিংকিং বলতে এখানে মানুষের এনালাইসিস সিং এর কথা বুঝানো হয়েছে।

আসলে ক্রিটিকাল থিংকিং হচ্ছে অনেক কিছু নিয়ে তৈরি করা একটা জিনিস যেমন এখানে এনালাইসিস আসবেন ইমপ্লিমেন্ট আসবেন, ইভালুয়েশন আসবেন।

. ক্রিয়েটিভিটি

ক্রিটিভিটি হচ্ছে সৃজনশীলতা। কোন কিছু নতুন ভাবে তৈরি করা, কোন কিছু ডিফারেন্ট ভাবে বা ভিন্ন ভাবে  তৈরি করা।

. পিপল ম্যানেজমেন্ট

পিপল ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে আপনি কিভাবে মানুষকে ম্যানেজ করছেন। কিভাবে আপনি মানুষের সাথে মিশবেন, কিভাবে আপনি মানুষের সাথে কথা বলবেন, কীভাবে আপনি মানুষের সাথে একটা সম্পর্ক স্থাপন করবেন, এবং কিভাবে আপনি মানুষকে ম্যানেজ করবেন এটাই হচ্ছে মূলত পিপল ম্যানেজমেন্ট।

. কলাবরেশন

পিপল ম্যানেজমেন্ট এবং কলাবরেশন প্রায় কাছা-কাছি। কিন্ত টিপল ম্যানেজমেন্ট বলতে লিডারশীপ কোয়ালিটি কে বোঝায় আর  কলাবরেশন হচ্ছে টিমওয়ার্ক কোয়ালিটি।  আপনি কিভাবে একটা টিমের সাথে কাজ করছেন, কিভাবে টিম গঠন করছেন, কিভাবে একটা টিমকে নির্দেশনা দিচ্ছেন এটাই মূলত কলাবরেশন।

ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্স

ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্সের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্সের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

Emotional Intelligence কোনো নতুন ধারণা নয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এর বিকাশ শুরু হয়। সহজ কথায় Emotional Intelligence বলতে বোঝায় নিজের ও অন্যের অনুভূতি জানা ও বোঝার ক্ষমতাকে। নিচের এই কয়েক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে একজনের ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্স-

  • নিজের আবেগ, অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়াকে বুঝতে পারা (আত্ম-সচেতনতা)
  • নিজের আবেগ, অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া ও মুড নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা করতে পারা (আত্ম-নিয়ন্ত্রণ)
  • নিজের লক্ষ্যের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা ও যেকোনো বাধায় হার না মানার মনোভাব (মানসিক দৃঢ়তা)
  • অন্যের অনুভূতির প্রতি সচেতনতা ও শ্রদ্ধাবোধ (সহমর্মিতা)
  • সহজেই অন্যের সাথে মিশতে পারা, তাদের প্রভাবিত করা, নেতৃত্ব দেয়া, সমঝোতা ইত্যাদি সামাজিক গুণাবলী (সামাজিক দক্ষতা)

কেন গুরুত্বপূর্ণ ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্স:

এক সময় ধরেই নেয়া হতো, উচ্চ আইকিউ সম্পন্ন মানুষ মানেই সফল মানুষ। উচ্চ আইকিউ বা উচ্চ বুদ্ধিমত্তা অবশ্যই সাফল্যের অনেক বড় একটি প্রভাবক। কিন্তু এখন ধারণা করা হয়, আইকিউই সব নয়। সফলতার পেছনে কাজ করে অনেক গুলো জটিল বিষয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল- ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্স।

ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্স একজন মানুষকে মানসিকভাবে দৃঢ় করে

ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্সের গুরুত্ব ও প্রভাব লক্ষ্য করা যায় প্রায় সব ক্ষেত্রেই। কর্মক্ষেত্রে যদি আমরা দেখি, অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্সের উন্নতির জন্য ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করে থাকে এবং নিয়োগের ক্ষেত্রেও এর ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

গবেষণায় দেখা যায়, নেতৃত্ব দানকারী অধিকাংশ মানুষের ইকিউ অনেক বেশি। ইকিউ তোমাকে সাহায্য করবে অনেক ভালো নেটওয়ার্কিং করতে। বর্তমান সময়ের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে – “ Your network is your net-worth”। ভালো নেটওয়ার্ক তোমাকে পেশাজীবনে এগিয়ে যেতে করবে সাহায্য।

মনে হতে পারে যাদের কাজ অনেক মানুষকে নিয়ে তাদেরই শুধু ইকিউ নিয়ে চিন্তা করা উচিত। কিন্তু, না! ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্স তোমার জীবনকে প্রভাবিত করে আরও অনেক ভাবে।ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্স একজন মানুষকে মানসিকভাবে দৃঢ় করে। তাই সে সহজেই স্ট্রেস বা চাপ নিতে পারে। সে দুশ্চিন্তা বা হতাশায় কম ভোগে। মানসিক প্রশান্তি তার শারীরিক সুস্থতায়ও প্রভাব ফেলে এবং সে পায় এক সুখী- সন্তুষ্ট জীবন। এজন্য ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্সের গুরুত্ব এতোটা বেশি।

 

ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্স কীভাবে বাড়াবেন?

ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্স কোনো জন্মগত গুণ নয়। যেকোনো বয়সেই একজন পারে তার ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্সের উন্নতি ঘটাতে। ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্সের উন্নতির অনেক উপায় রয়েছে। এজন্য তোমাকে তোমার মানবিক অংশটির উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

তোমার আবেগ, মনোবল ও স্পৃহাকে তোমার জীবনের লক্ষ্যের দিকে চালিত করতে হবে। অন্যের প্রতি হতে হবে সহানুভূতিশীল ও সহমর্মী। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে নিজের প্রতিক্রয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে। এছাড়াও জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি করতে হবে ইতিবাচক। এভাবেই বাড়ানো সম্ভব ইমোশোনাল ইন্টেলিজেন্স।

 

সংগ্রহীত

 

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট

download

জেনে নিন “ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা” সম্পর্কে

জেনে নিন “ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা” সম্পর্কে

“ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা” হচ্ছে এমন আমাদের মনের মধ্যে তৈরি হওয়া ইমোশন যেগুলো আমাদের আসে পাশের পরিস্থিতি, আমরা কি দেখছি, কি শুনছি বা কেমন বোধ করছি ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে তৈরি হয়। এই ইমোশন গুলোই হয়তো পরবর্তী সময়ে আমাদের ব্যবহারে কিছু পরিবর্তন আনছে এবং এই পরিবর্তিত ইমোশনে নিয়ন্ত্রন রেখে সামনে দিকে এগিয়ে চলা।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বুঝতে গেলে আগে নিজেকে বুঝতে হবে। এক কথায় ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে নিজের ইমোশন গুলোকে বোঝা, পাশাপাশি অন্যের ইমোশন গুলোও বোঝা। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বলে, আগে নিজেকে খুশি রাখতে হবে আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সে মূলত চার টি সচেতনতার গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়। যেমনঃ-

১। নিজেকে বোঝা বা আত্ম-সচেতনতা

২। অন্যদেরকে বা সমাজকে বোঝা

৩। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা বা ম্যানেজ করা

৪। সম্পর্ক বা সমাজকে ম্যানেজ করা

আমাদের নিজেকে আগে –সচেতন করতে হবে এবং নিজেক্ব –সচেতন করার পাশাপাশি আমাদের চারপাশে যারা রয়েছে তাদেরকেও সচেতন করতে হবে। আমাদের ব্যবহার অন্য একজন ব্যাক্তির উপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে টা আমাদের বুঝতে হবে এবং তাদের উপর কীভাবে প্রভাবে ফেলছে টা নিয়ন্ত্রন করাই হচ্ছে আবেগ নিয়ন্ত্রন করা।

 

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট

প্রফেশনাল ক্ষেত্রে সফটস্কিল

প্রফেশনাল ক্ষেত্রে সফট স্কিল

প্রফেশনাল ক্ষেত্রে সফটস্কিল

পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো,স্কুল থেকেই বাচ্চাদের সফট স্কিলের ধারণা দেওয়া শুরু হয়। যেমন শিক্ষক বাচ্চাদের কে শেখানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গায় খেলতে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের খেলতে দিচ্ছে, যেখানে অনেক বাচ্চা একসাথে খেলাধুলা করে এতে বাচ্চাদের মধ্যে একটা কনফ্লিকট বাধার প্রবনতা থাকে যেমন কথা কাটাকাটি হয় বা মন মালিন্য হয় ইত্যাদি, সেখানে বাচ্চারা কীভাবে ব্যাপারটাকে হ্যান্ডেল করছে বা কীভাবে কনফ্লিকট টার সমাধান করছে তা অবজার্ভ করেন এবং পড়ে তাদেরকে ইনডোর কাউন্সেলিং করা হয়। যা আমাদের দেশের থেকে অনেক ভিন্ন, যার ফলে তাদের ফলাফল ও আমাদের দেশের থেকে অনেক ভিন্ন ও ভাল হয়। তারা সহজেই দলবদ্ধ ভাবে কাজ করতে পারে, নেতৃত্ব দিতে পারে এবং যে কোনো সমস্যার সহজেই সমাধান করতে পারে।

প্রফেশনাল ক্ষেত্রে সফট স্কিল এবং হার্ড স্কিল, এই দুই স্কিল সম্পর্কেই ধারণা থাকতে হবে। প্রোফেসনাল সম্পর্ক গুলো মূলত অনেক সেনসিটিভ হয়, একবার যদি এখানে একটা ফাটল ধরে, অই জিনিসটাকে ঠিক করা খুব কথিন হয়ে দাড়ায়। তাই আমরা যত বার প্রোফেসনাল     আচারনের কথা বলি আমরা সবার আগে বলি, “ Prevention is always better than cure.”

প্রফেশনাল ক্ষেত্রে সফট স্কিল এবং হার্ড স্কিল দুইটার গুরুত্বই অপরিসীম। হার্ড স্কিল বলতে মূলত টেকনিক্যাল বা ফাংশনাল স্কিলকে বোঝায়। যেমন আপনি একজন মার্কেটিং স্পেশালিষ্ট আপনার মার্কেটিং এ নলেজ লাগবে যখনই আপনি এটিকে সেলসে কনভার্ট করতে যাবেন তখনই আপনাকে প্রোডাক্ট প্লানিং, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে, আর এগুলই মূলত আপনার ফাংশনাল স্কিল।

আর সফট স্কিল হল আপনি কাজটা করতে গিয়ে কত সৃজনশীল ভাবে চিন্তা করতে পেরেছেন, একটি দল থেকে কীভাবে দলবদ্ধ হয়ে কাজটি করছেন বা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন , আপনি কীভাবে প্রবলেম সল্ভ করেছেন, আপনি কীভাবে অন্য টিম মেম্বারদের মতামত গ্রহন করছেন ইত্যাদি।

কর্মজীবনে যে কোনো পজিশনেই আপনি থাকেন না কেন, সফট স্কিল আপনার সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হবে। এমন কি একজন ফ্রেশার তারও সফট স্কিলের প্রয়োজন আছে কারন যখন সে কোনো ইন্টার্ভিউয়ের জন্য যাবে এবং তাকে যখন স্যালারি অফার করবে তখন তাকে জানতে হবে কীভাবে নেগোশিয়েট করতে হয়।

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট

প্রোডাক্টিভিটি-বৃদ্ধি-করার-সহজ-উপায়

প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করার সহজ উপায়

প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করার সহজ উপায়

একদম সহজ করে বললে প্রোডাক্টিভিটি বলতে বোঝায় কোনো কাজের পেছনে তোমার পরিশ্রমের বদৌলতে তুমি ঠিক কতটুকু ফলাফল পাচ্ছ। মানে তোমার পরিশ্রম আর পরিশ্রমের ফলাফলের অনুপাতকেই আমরা বলছি প্রোডাক্টিভিটি।

এই প্রোডাক্টিভিটি তোমাদের অনেকেরই  উৎসাহ কিংবা হতাশার কারণ। কেননা অনেকেই পরিশ্রম অনুযায়ী অসাধারণ সব সাফল্যের মুখ দেখছো,মানে প্রোডাক্টিভিটি ঠিকঠাক মতোই কাজ করছে। আবার অনেকেই আছো, যারা শ্রম দিয়েও আশানুরূপ কোনো ফলাফল পাচ্ছো না, দিনদিন হতাশ হয়ে পরেছ।

তোমার কাজটির জন্য দিনের সেরা সময় কোনটা নির্বাচন করো

সকালের পড়ালেখা কি তোমার বেশি মনে থাকে? কিংবা ধরো গীটারের প্র্যাকটিসটা বিকেল বেলাইতেই বেশি ফলপ্রসূ মনে হচ্ছে? এক কাজ করো। একটা এক্সপেরিমেন্ট করে ফেলো। ফোনের নোটে বা ডায়েরিতে তোমার দৈনন্দিন টাস্কগুলোর একটি রেকর্ড নাও। এরপরে দেখো দিনের কোন সময়ে কোন কাজটি করলে তুমি সবচেয়ে বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারছো আর কাজটিও তোমার কাছে ইফেক্টিভ মনে হচ্ছে। এভাবে রেকর্ড নেয়ার ফলে তোমার প্রোডাক্টিভিটি কার্ভ সম্পর্কে তোমার একটি সুস্পষ্ট ধারণা হবে এবং সেই অনুযায়ী তুমি তোমার রুটিন তৈরি করে ফেলতে পারবে।

এভাবে ইফেক্টিভ পদ্ধতিতে প্রোডাক্টিভ রুটিন তৈরি করতে পারলে তোমার প্রোডাক্টিভিটিও বাড়তে শুরু করবে।

  • ৮০/২০ রুল মেনে চলো

১৮৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করা ইতালির  ভিলফ্রেডো ফেডেরিকো দামাসো পারেটো টাইম ম্যানেজম্যান্ট আর প্রোডাক্টিভিটির এক অসাধারণ নিয়ম রেখে গিয়েছেন, যার নাম হচ্ছে ৮০/২০ রুল বা পারেটো প্রিন্সিপাল

পারেটো প্রিন্সিপাল বলছে  যে, শতকরা ৮০ ভাগ ফলাফল আসে শতকরা ২০ ভাগ কাজের জন্য।

আরও সহজভাবে বললে তোমার দৈনন্দিন জীবনের ২০ শতাংশ কাজই তোমাকে ৮০ শতাংশ ফলাফল এনে দেবে। আর এই ব্যাপারটিও মাথায় রেখো- কম কাজ করা মানেই কিন্তু আলসেমি নয়।

৮০/২০ রুল অনুসরণ করার জন্য প্রথমে তুমি প্রতিদিন কী কী কাজ করো তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলো। এবার খেয়াল করো যে তোমার জীবনের লক্ষ্য পূরণে প্রতিদিনকার কোন কাজগুলো তোমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করছে। এবারে তোমার প্রতিদিনকার প্রোডাক্টিভ আওয়ারের জন্য এই কাজগুলো বরাদ্দ রাখো। পারলে সেই কাজগুলোই আগে সেরে ফেলো।

এভাবে ৮০/২০ রুল ফলো করলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিজের মধ্যে তুমি প্রোডাক্টিভিটি খুঁজে পাবে।

  • ঘুম থেকে উঠে নিজের দিকে ফোকাস করো

আমাদের অনেকের মধ্যে যেই অভ্যাসটি সবচেয়ে বেশি রয়েছে সেটি হচ্ছে ঘুম থেকে উঠেই ই-মেইল, মেসেজ আর নোটিফিকেশন চেক করে দিন শুরু করা।

এই অভ্যাসটির কারণে আপডেটেড থাকা যায় ঠিকই কিন্তু এই অভ্যাসের কারণে আজকের দিনে তুমি কী কী অর্জন করতে যাচ্ছ সেটি ঠিক করে দেয় ই-মেইল, মেসেজ কিংবা নোটিফিকেশন দেখার পর তোমার ভার্চুয়াল মাইন্ড সেট আপ।

কাজেই ই-মেইল আর মেসেজ চেক দিয়ে দিন শুরু করার আগে একটু নিজের দিকে ফোকাস করো। নিজেকে সময় দাও। সকাল বেলায় উঠে হালকা ব্যায়াম কিংবা মেডিটেশন করে নিতে পারো। এরপর খবরের কাগজ পড়তে পড়তে স্বাস্থ্যসমত  একটা ব্রেকফাস্ট তোমার প্রোডাক্টিভিটি বাড়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিবে।

এরপর চাইলে মেসেজ, ইমেইল আর নোটিফিকেশন চেক করে নিতে পারবে, এতে খুব একটা বড় ক্ষতি হবে না, বরং উপকারটাই বেশি হবে তোমার।

  • কাজের সময় সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশন বন্ধ রাখো

আমার মনে হয় প্রোডাক্টিভিটির সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে এই সোশ্যাল মিডিয়া। নোটিফিকেশনের বদৌলতে বার বার ফোন চেক করা, ফোনের স্ক্রিনে ডুবে থাকা এখন একটি মহামারি ব্যাধি। একবার নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেইসবুকেই কাটিয়ে দিয়েছ এমন উদাহরণ আশা করি কম নেই।

তোমাকে ছোট একটা তথ্য দেই। এই নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে তোমার কাজে যেই ব্যাঘাত ঘটে আর মনোযোগ হারায় সেই মনোযোগ পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে সময় লাগে ২৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ড। ধরলাম তুমি কোনো কাজের জন্য বরাদ্দ রাখলে  ১ ঘণ্টা। এর মধ্যে মাত্র একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তথাকথিত ঢুঁ মেরে আসতে গিয়ে তুমি প্রায় ৩০ মিনিটের মতো সময় হারাচ্ছো। যার মানে দাঁড়াচ্ছে তুমি তোমার কাজের জন্য বরাদ্দ এক ঘণ্টার মাত্র অর্ধেক সময় পাচ্ছো। মোট কথা কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন হবে না।

সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশন এভয়েড করা তোমার আমার সবার জন্য খুবই কঠিন একটা কাজ সেটি আমি মানছি। কিন্তু কাজ করার সময় ফোনকে অন্তত  সাইলেন্ট মোডে রাখা যেতেই পারে। এভাবে ২১ দিন পার করলেই তুমি টাস্কটিকে একটি অভ্যাসে পরিণত করতে পারবে। এরপর দেখবে কেমিস্ট্রি কিংবা হায়ার ম্যাথের টপিকটা আরও তাড়াতাড়ি মাথায় ঢুকছে।

  • অযথা মাল্টি টাস্কিংকে না বলো

তুমি প্রতিদিন যেই কাজটি করছো সেটি অবশ্যই তোমার লক্ষ্যের সহায়ক হতে হবে। তোমার অবস্থা যাতে Master of all but jack of none- এই রকমের না হয়ে যায়, প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে হলে এই দিকটায় লক্ষ রাখতে হবে। কাজেই  একসাথে অনেকগুলো কাজ করা আজকে থেকেই থামিয়ে দাও। এতে কাজের কাজ কিছুইতো হয় না উল্টো সময় নষ্ট হয়। একটা তথ্য দেই। তুমি দিনে প্রায় ১০ বারের মতো টাস্ক পরিবর্তন করলে তোমার এভারেজ আই কিউ কমে প্রায় ১০ পয়েন্ট এর মতো।

তাই কম টার্গেট রেখে সেই কাজ গুলোভাবে করতে পারলে তোমার কাঙ্ক্ষিত কাজে দক্ষতা বাড়বে, সেই সাথে প্রোডাক্টিভিটি বাড়লে তোমার কাজ করার স্পৃহা শত গুণে বেড়ে যাবে।

আমি মাল্টিটাস্কিংকে না বলছি না, “অযথা” এক সময় অনেক গুলো কাজ একসাথে করার ব্যাপারটিকে না বলছি কেননা এক্ষেত্রে কম প্রোডাক্টিভিটির সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।

  • ব্রেক নাও, বড় কাজকে ভেঙে ছোট করে ফেলো

কাজ করতে করতে প্রায় সময়ই আমাদের মাথা ধরে যায়। এর মানে হচ্ছে কাজ করার জন্য আমাদের ব্রেইনের গ্লুকোজ প্রায় ফুরিয়ে গেছে। এই অবস্থায় নিয়ে ফেলো ব্রেক। ব্রেক মানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্রেক নয়। কাজ করা ফাঁকে ব্রেক হিসেবে তুমি একটু হাঁটাহাঁটি করে আসতে পারো কিংবা লাঞ্চ বা হালকা জল খাবার অথবা মেডিটেশন দিয়েই ব্রেকের পর্বটা সেরে ফেলতে পারবে। ব্রেকের ফলে তোমার ব্রেইন পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্লুকোজের যোগান পাবে যার ফলে তোমার কাজটাও হবে প্রোডাক্টিভ।

কোনো কাজ কি খুব বেশি বড় কিংবা একঘেয়ে রকমের মনে হচ্ছে? চিন্তা নেই। এই সব কাজের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে কাজগুলোকে ভেঙে ছোট করে ফেলো। ছোট ছোট প্রোডাক্টিভ কাজ তোমাকে দিয়ে বড় কাজটি করিয়ে নেবে।

  • এবার নিজেকে ট্রিট দাও

অনেক কাজ হোল। এবার নিজেকে পুরস্কৃত করো। প্রতিটি কাজের লক্ষ্য পূরণ হলে নিজেকে উপহার দাও। এই সেলফ রিওয়ার্ডের প্র্যাকটিস তোমাকে সেলফ মোটিভেটেড থাকতে সাহায্য করবে অনেক বেশি। আর সব সময় নিজে নিজেই মোটিভেটেড থাকতে পারলে প্রোডাক্টিভিটি হবে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

এগুলো ছাড়াও প্রোডাক্টিভিটির আরও কিছু মন্ত্র আছে। যেমন, তোমার কাছে প্রতিদিনকার যেই কাজগুলো কঠিন মনে হবে সেই কাজগুলো পারলে দুপুরের খাবার অর্থাৎ লাঞ্চের আগেই সেরে ফেলো। টু ডু লিস্টের পাশাপাশি তোমার ডেইলি রুটিনের দিকেও মনোযোগ দাও। তার সাথে রুটিনমাফিক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার গুরুত্বটাও কম না। সবশেষে, পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমালে প্রোডাক্টিভিটির জন্য যে এতো এতো প্ল্যান, সবই হবে ধূলিসাৎ।

প্রোডাক্টিভিটি ব্যাপারটি চাইলেই তুমি একদিনে অর্জন করতে পারবে না কেননা প্রোডাক্টিভিটির ব্যাপারটি অন্যান্য অনেক কাজের মতোই অনুশীলন নির্ভর। আর প্রোডাক্টিভিটির অনুশীলন করতে হলে তোমাকে  সব সময় উপরের ব্যাপারগুলো মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু এখানেও কিছু সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার তোমাকে বারবার বাধা দিবে। যেমন ধরো আমাদের নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা খুবই সীমাবদ্ধ একটি বিষয়। কাজেই এই বাধা উৎরাতে হলে বেশ শক্তপোক্ত ইচ্ছা শক্তির প্রয়োজন।

আরও আছে এক কাজ করার সময় অন্য কাজ করার প্রবণতা। এতে আমাদের মানসিক শক্তির অপচয় ছাড়া কাজের কাজ আর কিছুই হয় না। বরঞ্চ এর ফলে আমাদের প্রায় ৪০ শতাংশ প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে প্রোডাক্টিভ হওয়া আর ব্যস্ত থাকা কিন্তু মোটেও এক জিনিস নয়। তাই ব্যস্ত হওয়ার পরিবর্তে প্রোডাক্টিভ হওয়ার পেছনে বেশি মনোযোগ দাও।

প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর প্রায় সব রসদই তোমাকে দিয়ে দিলাম। আজকে থেকেই একটা রুটিন বানিয়ে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য নেমে পড়। আর নিচের উক্তিটি সব সময় মাথায় রাখবে-

 

সংগ্রহীত

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট