টিমওয়ার্কের প্রকারভেদ

জেনে নিন টিমওয়ার্কের প্রকারভেদ

জেনে নিন টিমওয়ার্কের প্রকারভেদ

টিমওয়ার্ক বলতে বোঝায় সম্মিলিত দলের প্রচেষ্টা। টিমওয়ার্কের মাধ্যমে যে কোনো কঠিন কাজ অতি সহজেই করা সম্ভব। এর মাধ্যমে বিভিন্ন বড় বড় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। মূল কথা সাফল্য পেতে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন পর্যন্ত প্রয়োজন টিমওয়ার্ক। টিমওয়ার্কের মাধ্যমে যে কোনো কঠিন কাজ অতি সহজেই করা সম্ভব।

TEAM WORK বা দলগতভাবে কাজ করার প্রকারভেদ

 ১.  কার্য নির্বাহী দল

 ২. আত্ম নিয়ন্ত্রিত

 ৩. সমান্তরাল দল

 ৪. প্রকল্প দল

 ৫. ব্যবস্থাপনা দল

 

১. কার্য নির্বাহী দল

কার্য নির্বাহী দলগুলো হচ্ছে যারা সংগঠনের জন্য পণ্য উৎপাদন বা সেবাগুলো অবিরত ভাবে প্রদান করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত। তাদের সদস্যপদ সাধারণত স্থায়ী, সচরাচর পূর্ণ সময় এবং উত্তমভাবে নির্ধারিত।
এই দলগুলো ঐতিহ্যগত ভাবে একজন কর্মকর্তা দ্বারা নির্দেশিত হয় যিনি আদেশ দেন কি কাজ সম্পন্ন করতে হবে, ইহা কে করবে এবং কোন পদ্ধতিতে ইহা কার্যকর হবে।
কার্য নির্বাহী দলগুলো কার্যকারীভাবে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ গুলোতে ব্যবহৃত হয়, যেমন খনন কাজে, পোশাক শিল্পে এবং সেবামূলক বিভাগগুলোতে এবং হিসাব রক্ষণ যা হিসাব নিরীক্ষার ক্ষেত্র গুলোতেও ব্যবহার করা হয়।

 

২. আত্ম নিয়ন্ত্রিত

আত্ম-নিয়ন্ত্রিত নির্বাহী দলগুলোর সদস্যরা সংগঠনের প্রতিটি আলাদা আলাদা কাজে অসংখ্য অবদান রাখে এবং একটি তাৎপর্যময় সুবিধাজনক অবস্থা তৈরী করে। এই নির্বাহী দলগুলো দৃঢ় সংকল্প থাকে যাতে তারা তাদের প্রতিষ্ঠান কিংবা সংগঠনের বাধ্যতামূলক উদ্দেশ্যগুলোসঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে পারে।
তারাতাদের উদ্দেশ্য সফল করার উপায় এবং পন্থা সম্পর্কে সুনিশ্চিত জ্ঞান রাখে এবং দলের সবাই একই সিদ্ধান্তের উপর বিশ^সী এবং স্থির থাকে। তারা তাদের কাজের সফলতা আনতে পারবে এই বিষয়ে সকলেই দৃঢ় বিশ^সী থাকা।
আত্ম- নিয়ন্ত্রিত নির্বাহী দলগুলো তাদের দায়িত্বগুলো নিশ্চিত করে যেমন তাদের নিজস্ব কাজের পদ্ধতিগুলোর পরিকল্পনা, অনুসূচি, সংগঠিত করা, নির্দেশিত করা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং পরিমাপ করা।

 

৩. প্যারালাল দল বা সমান্তরাল দল

প্যারালাল দল বা সমান্তরাল দল মূলত প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্য সম্পাদনের জন্য নির্ধারিত দল নয়। এই দল প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্য সম্পাদনের প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে। প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে এবং তাদের সুপারিশ করা ব্যাক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য গঠিত হয় এবং তাদের সীমিত স্বীকৃতী প্রদান করা হয় এবং পুনঃনিরীক্ষন এবং অগ্রগতির জন্য কার্যকর হয়।
সমান্তরাল দলগুলো লোকজনকে কার্য সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন কাজের এককগুলো বা জায়গাগুলো হইতে একত্রিত করে যা নিয়মিত সংগঠনটি উত্তমভাবে কার্যকর করতে পারে না। এই দলগুলোকে সীমিত কর্তৃত্ব দেওয়া হয় এবং সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ে কেবল স্বতন্ত্রদের নামগুলো সুপারিশ করতে দেওয়া হয়।
সমান্তরাল দলগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োগ হয় এবং পুনঃনিরীক্ষণ বা অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন হলে কার্যকর করা হয়। সমান্তরাল দলগুলোর উদাহরণ হচ্ছে গুণমান চক্রগুলো, কার্য সম্পাদনকারীগণ, গুণমান বর্ধক দলগুলো, কর্মচারী সংযুক্ত দলগুলো। সমান্তরাল দলগুলোর কার্যকারিতা প্রমাণ হয় তাদের অবিরত প্রয়োগ দ্বারা এবং সংগঠনের মধ্যে সম্প্রসারিত হলে যাতে তারা তাদের গুণমান বর্ধক কাজগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং আরও কর্মচারীদের সংযুক্ত করতে পারে।

 

৪. প্রকল্প দলগুলো

প্রকল্প দল হচ্ছে একটি সংগঠন যা এশটি সীমিত সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন পণ্য এবং সেবা উৎপাদন করে । এই দলটি গঠিত হয় একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প সম্পন্নের জন্য, একটি সময়ের জন্য অথবা সেই প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার সময়সীমার জন্য। এই নতুন পণ্যের বা সেবার মেধাস্বত্ব সেই সংস্থার কাছে থাকে যারা ইহা তৈরী করে। এই দলগুলোর কার্য ভিন্ন ধরনের হতে পারে যা কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে, যেমন চলতি একটি প্রকল্পের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ধারণা বা পরিকল্পনা তৈরী করা। প্রকল্প দলগুলো তাদের সদস্যদের জ্ঞান এবং পূর্ণ দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।

 

৫. ব্যবস্থাপনা দলগুলো

ব্যবস্থাপনা দলগুলো হচ্ছে একটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকল্পগুলো এবং কাজগুলো চলাকালীন একটি বিভাগ যাদের দায়িত্ব হচ্ছে সমন্বয় করা এবং নির্দেশনা দেওয়া। বিভিন্ন কার্যের কৌশলগত দিকগুলো বা আরম্ভ গুলোর দায়িত্ব থাকে ব্যবস্থাপনা দলগুলোর ওপর। ব্যবস্থাপনা দলগুলো বিভাগের সম্পূর্ণ অবদানের জন্য দায়ী। তাদের তত্ত্বাবধানে থাকে কর্মীদের প্রতিদিনের কাজ, বিভিন্ন কার্যের নির্দেশ প্রদান এবং কর্মীদের ওপর নজরদারি। এই দলগুলোর কর্তৃত্ব নির্ভর করে সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক ছকের সদস্যদের পদ অনুযায়ী। এই ব্যবস্থাপনা দলগুলো গঠিত হয় বিভিন্ন বিভাগের ব্যবস্থাপকদের থেকে- যেমন বাজারজাতকরণের সহ-সভাপতি, কার্য সম্পাদনের সহকারী পরিচালক।

 

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট

Untitled-3 (1)

নেতৃত্ব

নেতৃত্ব

নেতৃত্ব মানুষের একটি বিশেষ গুন। যে ব্যাক্তি অনেকগুলো মানুষের সম্মানয়ে গঠিত দলকে পরিচালনা করবে , যার বক্তব্য অন্য একজন অনুপ্রেরনা দিবে, সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে দলকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাবে এবং দলের অন্যদের সাথে একিত্রে কাজ করবে যর সিদ্ধান্তকে দলের সবাই মূল্য দিবে এবং গ্রহন করবে তাকেই মূলত Leader বা নেতা বলা হয়।

নেতৃত্ব গুনটি শুধুমাএ রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় নয় এবং সকল ক্ষেত্রেই এর অস্তিত্ব রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষেত্রেও এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

নেতৃত্ব ব্যবস্থাপনার একটি অতীব গুরুত্ব বিষয়। প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরে ও সকল কার্যে নির্দেশনা ও নেতৃত্বেরপ্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে সহজেই তার লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করা যায় এবং লক্ষ্যার্জন করা সম্ভবপর হয়। তাই বর্তমান সময়ে একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক নেতৃত্বের উপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেন। সুষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে কর্মীদেরকে কার্যে লাগিয়ে সর্বোচ্চ কার্য আদায় করা সম্ভব।

নেতৃত্ব হল এমন এক “সামাজিক প্রভাবের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে মানুষ কোনও একটি সর্বজনীন কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য মানুষের সহায়তা ও সমর্থন লাভ করতে পারে।

বিভিন্ন পন্ডিতবর্গের মতামত প্রদান করা হলোঃ-

Prof. Koontz O’Donnell এর মতে- “নেতৃত্ব হল জনগণকে প্রভাবিত করার এমন একটি কলা বা প্রক্রিয়া যাতে তারা দলীয় লক্ষ্য অর্জনে স্বেচ্ছায় এবং আগ্রহ ভরে কাজ করে।”

Mr. Bennis – এর মতে- “নেতৃত্ব হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন ব্যবস্থাপক তার অধস্তনদের কাঙ্খিত আচরণে উদ্বুদ্ধ করে।”

Mr. Stogil – এর মতে- “নেতৃত্ব লক্ষ্য নির্ধারণ ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংঘবদ্ধ কর্মীদের কার্যাবলী প্রভাবিত করার প্রক্রিয়া।”

উপরোক্ত সংজ্ঞার আলোকে ইহা প্রতীয়মান হয় যে, নেতৃত্ব হচ্ছে অপরকে প্রভাবিত করার জন্য কৌশল, বল প্রয়োগ নয়। নেতৃত্ব শুধুমাত্র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেমন ব্যবস্থাপক, পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক প্রমুখ কর্তা ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সুতরাং নেতৃত্ব হচ্ছে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার ও প্রক্রিয়া যা দলের বিভিন্ন লোকের প্রকৃতি ও স্বরূপ সামনে রেখে তাদের এমনভাবে পরিচালিত করে যাতে সবাই আস্থার সাথে দলীয় সাংগাঠনিক উদ্দেশ্য হাসিলের মাধ্যমে ব্যক্তির উদ্দেশ্য ও ফলপ্রদভাবে অর্জনে সহায়তা করে।

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট

Untitled-3

নেতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

নেতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। নেতৃত্ব ব্যতীত কোন দল বা সংগঠন চলতে পারে না। প্রতিষ্ঠানে নেতাকে কেন্দ্র করে অধীনস্থ কর্মী আবর্তিত হয়। দলের নেতা এবং দলের সকলের  লক্ষ এক থাকতে হবে আর দলীয় প্রচেষ্টাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিচালনা করাই নেতার কাজ। এরূপ প্রচেষ্টা বিশেষভাবে নেতার গুণ ও কর্মদক্ষতার উপর নির্ভর করে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের মান দুর্বল হলে জনশক্তির মাঝে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং দলবদ্ধ প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়। তাই দলবদ্ধ প্রচেষ্টা সৃষ্টি ও জোরদারকরণের ক্ষেত্রে সুদক্ষ নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই।

যে কোন ব্যবসায় সংগঠনে কর্মীদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া লক্ষ্যার্জন সম্ভব নয় তাই নেতাকে দলের সকলের অনুপ্রেরনা দিতে হয় যাতে করে সকলে উৎসাহী হয়ে দলের উন্নয়নে অংশগ্রহন করে। কার্যকর নেতৃত্ব সংগঠনের অভ্যন্তরে এরূপ সহযোগিতার ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। নেতৃত্বকে ঘিরেই জনশক্তি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং পারস্পরিক সহযোগিতার কার্য সম্পাদন করে। তাই এরূপ নেতৃত্ব কৌশল অবশ্যই ব্যবস্থাপনাকে অবলম্বন করতে হবে।

যোগ্য নেতৃত্ব প্রাতিষ্ঠানিক সকল কাজের ফল প্রদতা বা কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ও গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা রাখে। নেতৃত্ব একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে জনশক্তির সকল কার্যপ্রয়াসকে কেন্দ্রীভূত করে বিধায় কাজের গতিশীলতা বাড়ে এবং এক লক্ষ এক নীতিতে বিশ্বাস করে। সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবার কারণে ও কার্যক্ষেত্রে উত্তম ফলাফল লাভ করা যায়।

ব্যবস্থাপনার অন্যতম দায়িত্ব হলো প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত জনশক্তিকে সংঘবদ্ধ করে পরিচালনা করা। কারণ সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া কখনও প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জন সম্ভব হয় না। প্রতিষ্ঠানের কার্যকর মানের নেতৃত্ব থাকলে তাকে ঘিরে জনশক্তি সংঘবদ্ধ ও আবর্তিত হয় এবং সবাই নেতৃত্ব যত শক্তিশালী হয় সংগঠন তত শক্তিশালী ও মজবুত হয়ে থাকে। তাকে অনুসরন করে তার নির্দেশে পরিচালিত হয়।

নেতৃত্বের প্রধান ও সর্বধিক গুরুত্বপূর্ন দিক হচ্ছে নেতাকে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা দান এবং লক্ষ্য নির্ধারন করতে হবে। লক্ষ্য সফলভাবে পৌছাতে সিদ্ধান্ত  নেয়া এবং সে অনুসারে নিজেকে এবং দলের সকলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

কার্যকর নেতৃত্ব প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাখে। কারণ, নেতৃত্ব হল এমন একটি কৌশল যাতে অধীনস্থ কর্মীগণ তাদের সম্ভাব্য সর্বাধিক সামর্থ অনুযায়ী নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে তৎপর হয়। প্রতিষ্ঠানে যোগ্য নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন ব্যবস্থাপক থাকলে তার বা তাদের প্রচেষ্টায় জনশক্তির ধ্যান-ধারণা ও কর্ম প্রচেষ্টা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়ে থাকে।

 

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট