লক্ষ শুধু জ্ঞান অর্জন নয়
এই পৃথিবীতে তথা গোটা বিশ্বজগতে জানার মত কত কি–ই না আছে। আমরা প্রতিনিয়ত সে-সব জ্ঞান, অর্জন করে চলেছি। প্রকৃতি,প্রযুক্তি,প্রাণীবিজ্ঞান, মহাকাশ, ইত্যাদি, ইত্যাদি। মানুষ অনেক আগেই চাঁদে পর্যন্ত পৌছে গেছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়োয়া আমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা,
তোমাকে অবশ্যই জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন চূড়ায় পৌছানোর পাশাপাশি মানুষের হৃদয়ে পৌছাতে হবে এবং তোমার নিজের অন্তরকেও করতে হবে পবিত্র। শিক্ষার অন্যতম এবং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মনুষ্যত্ববোধ।
“দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য“
নিজের ব্যাক্তিত্বকে উন্নত করতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিৎ যথার্থ এবং তোমার শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ সেবা। দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেকে প্রস্তুত করতে পারাটাই প্রকৃত শিক্ষা। তুমি একজন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়োয়া শিক্ষার্থী। তোমার এ শিক্ষার পূর্ণতা পাবে তখনই, যখন তুমি তোমার অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে সততার সাথে দেশের সেবায়, মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারবে।
সেবা করার জন্য তোমাকে যেমন জ্ঞানার্জন করতে হবে, পাশাপাশি তোমার অন্তরকে করতে হবে পবিত্র। মিথ্যা বলা, লোভ,প্রতারনা, এগুলো একেকটি হৃদরোগ। অন্তরের এই রোগগুলোকে দূরীভূত করতে না পারলে তোমার সকল শিক্ষা হবে অনর্থ।
উদ্দেশ্য যদি হয় সেবা, তোমার ক্যারিয়ার এমনিতেই হবে সুউচ্চ।
“নিশ্চয়ই সকল কর্ম, মানুষের নিয়তের উপর নির্ভরশীল“
অভিনন্দন হে! প্রিয় প্রকৌশল শিক্ষার্থী, তুমি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছ। তুমি হতে যাচ্ছ একজন প্রকৌশলী। তোমার চিন্তা নিশ্চয়ই সৃজনশীল। তোমার এই সৃজনশীল হ্রদয়কে আমরা (শিক্ষকগণ ) সন্মান জানাই। তোমার এই সৃজনশীল মনোভাব এবং অর্জিত জ্ঞানের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত নতুন কিছু দ্বারা আমরা হতে চাই পুলকিত। তোমার মত শিক্ষার্থীদের সৎ কর্ম দ্বারা হতে চাই গর্বিত শিক্ষক। প্রযুক্তির পিঠে চড়ে চষে বেড়াবে তুমি সমগ্র বিশ্ব।
“বিশ্বজগত দেখবে তুমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে“
তোমার দৃষ্টিকে শুধু বইয়ের পৃষ্ঠার মাঝেই সংকীর্ণ করোনা, দৃষ্টিকে বিস্তৃত করো তাত্ত্বিক, ব্যাবহারিক এবং মনুষ্যত্বের দিকে। তোমার দ্বারা যা উদ্ভাবন হবে তা যেন হয় মানুষের কল্যাণে। তোমার পরবর্তী প্রজন্ম যেন তোমাকে শুধু বইয়ের পাতায় নয় বরং চারপাশের বিভিন্ন কল্যাণকর
উদ্ভাবনের মাঝে তোমাকে খুজে পায়।
তোমরা ইতিমধ্যেই প্রযুক্তিকে যথাযথ ব্যাবহার করছ। বিশেষত COVID 19 এর প্রকোপে তোমরা তোমাদের জ্ঞানার্জন অব্যাহত রেখেছ অনলাইন শিক্ষা ব্যাবস্থার মাধ্যমে। অনেকেই এই প্রযুক্তি নিরর্থক করে রেখেছ। নিজের বিবেককে প্রশ্ন করো। তুমি কি জ্ঞানান্বেষী, নাকি জ্ঞানের আলো থেকে পলায়নকারী? প্রযুক্তির যথাযথ ব্যাবহারে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। আর তাছাড়া তোমরা কারিগরি শিক্ষার্থী,
“আমাদের শিক্ষা যখন কারিগরি, আমরা এ দুনিয়টাকেই বদলে দিতে পারি“
পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হবে এটা খুবই স্বাভাবিক, এই পরিবর্তনে তোমার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, পরিবর্তনের এই গতিকে বহুগুণ ত্বরান্বিত করবে। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে তোমার এই অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য যেন মহৎ হয়। নতুন প্রজন্ম যেন তোমার প্রচেষ্টায় এক উন্নত, আধুনিক এবং সুন্দর পৃথিবী উপহার পায়।
পৃথিবীর ইতিহাস যেন তোমাকে কল্যাণকামী হিসেবেই সনাক্ত করে। তুমি হয়ত কোন একসময় চলে যাবে, তোমার কর্ম তোমাকে চিরজীবী করবে। সবার শিক্ষার উদ্যেশ্য হোক উন্নত বিবেকবোধ , মনুষ্যত্ব, উদ্ভাবনী মনোভাব, সেবা করার প্রয়াস এবং কল্যাণকর চিন্তার মাধ্যমে এক নতুন পৃথিবী গড়ার ।
লেখকঃ
নাহিদুল ইসলাম (নাহিদ)
ইন্সট্রাক্টর
ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্ট