মোটর নামের যন্ত্রটি আসলে কি?

মোটর নামের যন্ত্রটি আসলে কি?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত একটি ডিভাইসের নাম হচ্ছে ইলেকট্রিক মোটর।এটি আমরা কমবেশি সবাই ব্যবহার করি কিন্তু কি আমরা জানি এটি কিভাবে কাজ করে, কি দ্বারা তৈরি এটি? আসুন আমরা জেনে নেই ।এই মোটর কি, কিভাবে কাজ করে ,এটি কোথায় কোথায় ব্যবহৃত হয় এবং এর ভিতরেই বা কি দ্বারা তৈরি?

মোটরের ইতিহাস

বিদ্যুৎ এবং চৌম্বকীয়তা   যোগসূত্রটি 1820 সালে ফরাসী পদার্থবিজ্ঞানী আন্দ্রে-মেরি আম্প্রে (1775- 1867) দ্বারা আবিষ্কার করা হয়েছিল । তবে আমাদের বৈদ্যুতিক মোটরের মোটরের এই বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারটিকে আরও কার্যকর প্রযুক্তিতে রূপান্তর করতে আরো কয়েকজন উদ্ভাবক কাজ করেছেন। যে উদ্ভাবকরা তা করেছিলেন তারা হলেন ইংরেজ মাইকেল ফ্যারাডে (1791-18187) এবং উইলিয়াম স্টারজিয়ন (1783–1850) এবং আমেরিকান জোসেফ হেনরি (1797–1878)।

বৈদ্যুতিক মোটর কি

মোটর বা বৈদ্যুতিক মোটর এমন একটি ডিভাইস যা বিদ্যুত আবিষ্কারের পর থেকেই প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি অর্জন করেছে। মোটর বৈদ্যুতিন-যান্ত্রিক ডিভাইস ছাড়া আর কিছুই নয় যা বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে। একটি মোটর এর কারণে, একুশ শতকে আজকের জীবনটি কতইনা সহজ হয়েছে। মোটরটি না থাকলে আমরা এখনও স্যার টমাস এডিসনের যুগে থাকতাম যেখানে বিদ্যুতের একমাত্র উদ্দেশ্য হ’ল বাল্বগুলি আলোকিত করা।

সহজ কথায়, আমরা বলতে পারি বৈদ্যুতিক মোটর একটি বৈদ্যুতিক মেশিন যা বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে। বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক মোটর মোটরের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র এবং তারের ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক প্রবাহের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াটির মাধ্যমে মোটরের খাদে প্রয়োগ করা টর্ক আকারে বল উত্পন্ন করে।

বৈদ্যুতিক মোটরের মূল ধারণা

বৈদ্যুতিক মোটরের মূল ধারণাটি সত্যই সহজ: ধরা যাক আপনি একটি দীর্ঘ  সাধারণ তারের নিলেন, এটি একটি বড় লুপে পরিণত করেন এবং এটি একটি শক্তিশালী, স্থায়ী ঘোড়াওয়ালা চুম্বকের খুঁটির মাঝে রাখেন। এখন আপনি যদি তারের দুটি প্রান্তটি কোনও ব্যাটারির সাথে সংযুক্ত করেন তবে তারটি সংক্ষেপে লাফিয়ে উঠবে। আপনি যখন প্রথমবার এটি দেখেন তখন অবাক হবেন । এটা ঠিক যাদু মত! তবে একটি পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।

যখন একটি বৈদ্যুতিক কারেন্ট তারের সাথে সরে যেতে শুরু করে, তখন এটি চারপাশে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে। আপনি যদি স্থায়ী চৌম্বকের নিকটে তারটি স্থাপন করেন তবে এই অস্থায়ী চৌম্বক ক্ষেত্রটি স্থায়ী চৌম্বকের ক্ষেত্রের সাথে যোগাযোগ করে। আপনি জানতে পারবেন যে দুটি চুম্বক একে অপরের কাছাকাছি স্থাপন করা হলে আকর্ষণ বিকর্ষণ করবে ।একইভাবে, তারের চারপাশে অস্থায়ী চৌম্বকীয়তা চৌম্বকটি থেকে স্থায়ী চৌম্বকত্বকে আকর্ষণ করে বা পিছনে ফেলে দেয় এবং এ কারণেই তারটি লাফিয়ে যায়।

বৈদ্যুতিক মোটর এর শ্রেণীবিন্যাস

মোটর কে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, এসি মোটর ডিসি মোটর এবং স্পেশাল মোটর।যে মটর এসি সাপ্লাই চলে সেগুলো কে আমরা এসি মোটর বলি, যে মোটর ডিসি সাপ্লাই দিয়ে চলে সেগুলো আমরা ডিসি মোটর বলি।এসি মোটর কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় সিনক্রোনাস মোটর এবং ইন্ডাকশন ।মোটর ইন্ডাকশন মোটর কেউ আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় , সিঙ্গেল ফেজ মোটর এবং থ্রি ফেজ মোটর । নিচের ছকের সাহায্যে বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হলো

 

একটি ইলেকট্রিক মোটর এর বিভিন্ন অংশ

একটি মোটর সাধারণত কয়েকটি প্রধান অংশ থাকে তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো  রোটর, স্ট্যাটার, কমুটেটর, ব্রাশ, ফ্রেম আর্মেচার ওয়েল্ডিং ইত্যাদি নিচের চিত্রের মাধ্যমে বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার করে বোঝানো হলো ।

ইলেকট্রিক্যাল মোটর সম্পর্কে  আরও অনেক লেখা যাবে তারপরেও বিষয়টিকে সংক্ষিপ্ত আকারে আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছি।

পরিশেষে বলতে চাই ইলেকট্রিক্যাল মোটর এর মতো আরো অনেক ডিভাইস আছে যেগুলো ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ না পড়লে জানা যাবেনা ।আমাদের কৌতুহলও শেষ হবে না? তাই সকলকে বলবো এই সকল ইন্টারেস্টিং বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করা উচিত।

 

লিখেছেন

মোঃ শফিকুল ইসলাম মিলন

ইন্সট্রাক্টর

ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্ট

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

Comments are closed.