মানব সভ্যতায় চাকার আগমন

মানব সভ্যতায় চাকার আগমন

চাকা শব্দটি অতি পরিচিত আমাদের। চাকা কথাটি আসলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে গাড়ির বড় বড় বৃত্তাকার বস্তু গুলো। সারাদিন ছুটে চলা ঘুরতে থাকা এই ভব ঘুরে চাকা আধুনিক বিজ্ঞান সমাজের প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই ব্যাবহার হয়। কখনো মিল কারখানায়, কখনো ডিভাইসে, কখনো বড় কোন যন্ত্রে আবার কখনোবা যানবাহনে। কিন্তু মজার বিষয় হলো এই চাকার জীবন কিংবা জন্ম টা এই বিষয় গুলোকে নিয়ে শুরু হয়নি। আজ আপনাদের সাথে এই চাকা নিয়ে কিছু মজার কথা শেয়ার করবো। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার যা পৃথিবীটাকেই পরিবর্তন করে দিয়েছে।

প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বছর পূর্বে চাকার জন্ম। সে সময় মুলত কুমারেরা ব্যাবহার করতো। কিন্তু ঠিক কিভাবে কার মাথা হতে এই গোল চাকার ধারণা এসেছে তা আজও রহস্য। অনেক ঐতিহাসিক চিন্তাবিদের মতে চাকার ধারনা আসে শ্বিকার করার জন্য উঁচু স্থান থেকে পাথর গড়িয়ে ফেলে প্রানীকে আহত বা হত্যা করা থেকে। সে যাই হোক কখনো টাইম মেশিন পেলে সেই সময়ে গিয়ে দেখে এসে জানাবো।

প্রাথমিক দিকে পাথর কেটে কেটে চাকতি বানিয়ে চাকা বানানো হতো প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতায়। পরে পরিশ্রম কমাতে মাটির চাকতির ভার্সনটি প্রচলিত হয়। কিন্তু সেই সময়েও কেউ ভাবতেই পারেনি যে এটা কালজয়ী একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার হবে। অনেকের মতে চাকা আগুন আবিষ্কারের আগে এসেছে যদিওবা এই নিয়ে জোরালো কোন মত নেই। কাঠের চাকতির ধারনা আসে আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩৭০০ বছর এর শেষে। কাঠের চাকতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে পরিবহণ সুবিধার জন্য। এর আগে পাথরের চাকায়

পরিবহণ ছিলো বেশ পরিশ্রমের আর ধীর গতির।

৩৭০০ খ্রিষ্টপূর্বে একটা চিত্রে পাওয়া গেছে ককেশীয়রা তাদের মৃত দেহ ঠেলা গাড়িতে বহন করছে। পোল্যান্ডের একটি অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ বছর আগের একটি পাত্র যাতে চাকার গাড়ির নকশা আছে। ইউরোপে ব্যাপক হারে চাকা ব্যাবহার শুরু হয় ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বে আর এশিয়ায় ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বে। সাধারনত চাকা ব্যাবহার ব্যাপক ভাবে হতো সেইসব অঞ্চলে যেখানে সমতল ভূমির পরিমান বেশি। কারন চাকা চলাচলে সমতল ভূমি জরুরি ছিলো। এই জন্য চীনে চাকার ব্যাবহার শুরু হয় ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বে যখন চাকাতে উন্নত কিছু টেকনিক যুক্ত হতে শুরু করে। প্রায় ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের সমকালীন আন্দ্রোনভ সংস্কৃতিতে স্পোকযুক্ত চাকার ব্যবহার পাওয়া যায়। মজার বিষয় হলো বর্তমান আমেরিকা মহাদেশ দ্বয়ে চাকা খেলনার গাড়ি বা বস্তুতে ব্যাপক ব্যাবহার হলেও বিজ্ঞান বা দৈনন্দিন জীবনে তার ব্যাবহার ছিলো সামান্য।

 

খ্রিষ্টপূর্ব  ১০০০ সালের দিকে কেল্টিকদের মানুষ বুঝতে পারে চাকার ওজন হালকা ও মজবুত হলে বেশি ভালো হয়। তাই তখন থেকে তারা স্পোক যুক্ত চাকায় একটা বেরিয়ার যুক্ত করতো। যার ফলে টেকশই ও হাল্কা হতো। এভাবে ধীরে-ধীরে ছোট খাটো পরিবর্তন হয়ে আসলেও বড় পরিবর্তন হয়নি ১৮৭০ সাল অবদি। ১৮৭০ খ্রিঃ এর দিকে চাকায় নিউম্যাটিক টায়ার ব্যবহার করা শুরু হয়। আর এখন বর্তমান সময়েও সেই টায়ার দিয়েই চলছে গাড়ির চাকা। তবে আগামীতে আরো ব্যাপক ভিত্তিক গবেষণায় বড় কিছু পরিবর্তন আসতে চলেছে। তবে যেই যাই বলুন না কেন চাকা ছিলো থাকবে ,আর তা শুধু গাড়িতে ব্যাবহারের জন্য তা নয়। চাকা শিল্পায়ন এর এই আধুনিক সভ্যতার সব ক্ষেত্রেই আছে এবং থাকবে। আমাদের জীবন সভ্যতা পালটে দিতে আগুন, চাকা, লিভার, ধারালো অস্ত্র বেস্ট আবিষ্কার গুলোর মধ্যে। আগামীতে আরো মজার কিছু সাধারন বিষয় কিন্তু জীবন পালটে দেয়া আবিষ্কার গুলো নিয়ে কথা বলবো। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন আর চক্রযানে চরে ঘুরে আসুন রহস্যময় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

 

লেখক: এস. এম. রাজিব আহম্মেদ

ইন্সট্রাকটর, কম্পিউটার টেকনোলজি

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

Comments are closed.