আমি একটি বৈদ্যুতিক হৃদপিন্ডের কথা বলছি- (ট্রান্সফরমার)

আমি একটি বৈদ্যুতিক হৃদপিন্ডের কথা বলছি- (ট্রান্সফরমার)

হৃদপিন্ডের কাজ হচ্ছে পরিশোধিত রক্ত দেহে সঞ্চালন করা। হৃদপিন্ডের স্পন্দন এর ফলে যেমন রক্ত সঞ্চালিত হয়ে মানব দেহ সচল থাকে তেমনি একটি ট্রান্সফরমারের ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের স্পন্দনে সেকেন্ডারি ওয়ান্ডিং বৈদ্যুতিকভাবে সচল হয়ে যথাযথ ভোল্টেজ এবং কারেন্ট সঞ্চালন করে থাকে।

আমি আজ কিছু কৌটা,  আর বড় বড় বক্সের কথা বলব, যা তোমরা সচারাচর রাস্তায় বিদ্যুৎ এর পোল এর উপরে ঝুলন্ত দেখো।

এই কৌটা বা বক্সগুলোই হল ট্রান্সফরমার.

এই ডিভাইসটির কাজ কি? তোমাদের অনেকের মনেই এই প্রশ্ন নিশ্চয়ই জাগে। এই ডিভাইস এর ভিতর এমন কি আছে?
এই সব কৌতুহল থেকেই অনেকেই হয়ত পড়তে এসেছ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।  ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমন হাজার হাজার কৌতুহল আছে। আজ শুধু একটা কৌতুহলের সাধারন উত্তর দেব।

ব্লগটি ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ইচ্ছুক বা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একদম প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উদ্যেশ্যে লিখছি।

ট্রান্সফরমারে কোন ঘুরন্ত অংশ নাই। এটা ভোল্টেজ এবং কারেন্টকে কমাতে বা বাড়াতে পারে।
এই ডিভাইসটি ছাড়া একটি দেশের সমগ্র বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা কখনোই কল্পনা করা যায়না।

 

বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা মুলত ৩ টি ধাপে বিভক্ত।
১) উৎপাদন ব্যাবস্থা  ২)  পরিবহন ব্যাবস্থা  ৩) বিতরন ব্যাবস্থা।

বাংলাদেশের উৎপাদিত পাওয়ার এ ভোল্টেজ ১১০০০ ভোল্টে। প্রয়োজন এবং সুজুগ সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা এই পাওয়ারকে অতি উচ্চমানের উদাহরণ (১৩২০০০ ভোল্ট) ভোল্টেজে পরিবহণ করি দূরদূরান্তে। আবার যখন এই এনার্জি কে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরন করতে চাই তখন নিম্ন ভোল্টেজ (২৩০ ভোল্ট, আবাসিক) আবশ্যক।

তাহলে ভেবে দেখো ভোল্টেজকে প্রয়োজন মত বাড়ানো বা কমানোর জন্য একটা ডিভাইস দরকার।
এই কাজটি যে ডিভাইস করে থাকে তাকেই আমরা ট্রান্সফরমার বলি।

তোমার বাসার সামনে যে বিতরন লাইন দেখো তা ১১০০০ ভোল্টেজ বহন করে। এখান থেকে তুমি তোমার কাঙ্ক্ষিত ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সরবারাহ পেতে হলে অবশ্যই একটি ট্রান্সফরমারের প্রয়োজন।
যা তোমাকে ২৩০ ভোল্ট এর সরবরাহ প্রদান করবে। তখন তুমি নিরাপদে ২৩০ ভোল্টেজ রেঞ্জের বিভিন্ন ডিভাইস, যন্ত্র ব্যাবহার করতে পারবে।

ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকে তারের কুণ্ডলী।
এই কুণ্ডলী বা কয়েল প্যাচানো হয় একটি কোরের উপর। একটি  ট্রান্সফরমারের দুটি সাইড থাকে একটিকে প্রাইমারী আরেকটিকে সেকেন্ডারি সাইড বলে।
প্রাইমারি সাইডের কয়েলের সাথে সেকেন্ডারি কয়েলে কোন প্রকার বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকেনা। মজার ব্যাপার হলো এতদ্বস্বত্তেও প্রাইমারি সাইডের কয়েলের খুব কাছাকাছি সান্নিধ্য পেয়ে সেকেন্ডারি সাইডের কয়েলে ভোল্টেজ আবিষ্ট হয়।

Click the link to watch………… how does a transformer work? https://www.youtube.com/watch?v=vh_aCAHThTQ

ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় ফ্যারাডের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন নীতির মাধ্যমে। যখন প্রাইমারি কয়েলে পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎ আরোপ করা হয় তখন এই কয়েলে কতগুলো চুম্বক বলরেখা উৎপন্ন হয় যা ঘুরতে থাকে। এই ঘুর্ণয়মান চুম্বক ফ্লাক্স সেকেন্ডারি কয়েলকে (কাল্পনিক) কর্তন করে ফলে সেকেন্ডারিতে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। (আরো স্পস্ট জানার জন্য ফ্যারাডের ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন এর সুত্রটি দেখে নাও)  প্রাইমারি সাইডের কয়েলের তুলনায় যদি সেকেন্ডারি সাইডের কয়েলের প্যাচ কম থাকে তাহলে সেকেন্ডারি তে প্রাইমারীর তুলনায় কম ভোল্টেজ আবিষ্ট হবে।
আর যদি প্রাইমারীর তুলনায় সেকেন্ডারি কয়েলে প্যাচ বেশী থাকে তাহলে সেকেন্ডারিতে বেশি ভোল্টেজ উৎপন্ন হবে। ভোল্টেজ উৎপাদন নির্ভর করে কয়েলের প্যাচ সংখ্যার উপরে।

সহজ কথায় বলা যায়, ট্রান্সফরমার এমন একটি ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস যা ইনপুট হিসেবে ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ার নিয়ে আউটপুটেও ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার দিবে, কিন্তু এদের মধ্যে কোন বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকবে না।
উভয় কয়েলই চুম্বকীয় ভাবে সংযুক্ত।

 

 

ট্রান্সফরমার সাধারণত নিম্মলিখিত অংশের সমন্বয়ে গঠিত।

ট্যাংক কোর ওয়াইন্ডিং ট্রান্সফরমার ওয়েল কনজারভেটর ব্রীদার বুখলজ রীলে কুলিং টিউব বুশিং এক্সপালশন ভেন্ট আর্থ পয়েন্ট ও অন্যান্য।

 

 

 

 

 

 

শুধুমাত্র একটি ব্লগ লিখে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোন একটি বিষয়কে পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন সম্ভব নয়। জানার অনেক কিছুই রয়েছে। যাদের ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতি কৌতুহল তাদেরকে বলব, একটি ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, দক্ষ শিক্ষকদের সান্নিধ্যে এই জ্ঞান অর্জন করে দেশের জন্য তুমিও হতে পারো একজন দক্ষ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।

 

লেখকঃ

নাহিদুল ইসলাম (নাহিদ)

ইন্সট্রাক্টর

ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্ট

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

 

 

Comments are closed.