বিজ্ঞান যখন পুণর্বোতন (বিজ্ঞান কল্প কাহিনী) (পর্ব-১)

বিজ্ঞান যখন পুণর্বোতন (বিজ্ঞান কল্প কাহিনী) (পর্ব-১)

টিং টিংটিং !!! খুব সকাল সকাল মোবাইলের কলিং রিংটোন টা বেজে উঠায় মাথার ঠিক কোন অংশের ব্যাথা টা শুরু হলো তা বলতে না পারলেও বলতে পারি ব্যাথা টা “সুষুন্মাতে” প্রবেশ করে “ভেন্ট্রাল পোস্টারোল্যাটেরাল” নিউক্লিয়াস এর “থেলামুস” হয়ে “সোমাটোসেন্সোরিতে” টোকা দিয়েছে। চোখটা বহু কষ্টে খুলে হাল্কা ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি অপরিচিত এক নাম্বার হোতে কল দিয়েছে। ঘুমু ঘুমু আলাপচারিতায় জানতে পারলাম আমার জন্য আমার ছোট ভাই চীন হতে মোবাইল গিফট পাঠিয়েছে যা ব্যাবহার বিধি অনেক নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে দ্রুত গিফট পেতে রেডি হতে লাগলাম। মুখে মাউথ ওয়াশ দিয়ে দু তিনবার কুল কুচি করে পুরাই ফিট। হঠাতই মনে পরলো আরে আমাকে তো অফিস যেতে হবে আর সেই সাথে শপিং, স্পেশাল মানুষটির সাথে ডিনার আর ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে আড্ডা তো আছেই। তবে কি আমি আমার গিফট টি আজ নিয়ে আসতে পারবোনা কুরিয়ার সার্ভিস থেকে? মুহুর্তে মনটা ভীষণ রকমের কষ্টে ভরে উঠলো। ঠিক এই সময় খেয়াল করলাম আমার জানালার পাশে একটা কোয়াড কপ্টার ( ড্রোন) কিছু একটা বক্স নিয়ে আছে যাতে স্পষ্ট ভাবে বুঝা যাচ্ছে চাইনিজ কিছু অক্ষর আর কুরিয়ার সার্ভিস এজেন্সি ফিডেক্স এর নাম। বুঝতে আর বাকি রইলোনা যে এটাই আমার সেই গিফট যা আমার ছোট ভাই চীন হতে পাঠিয়েছে। খুশির মুহুর্ত টা আবার এড্রিনালিন দ্বারা উদ্দীময় হয়ে উঠলো। জানালা খুলে বক্স টি নিতেই আমার আইডেন্টিটি নিশ্চিত এই শিক্ষিত সময়েও আংগুলের ছাপ মিলিয়ে নেয়া হলো ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাশিনে যা ম্যাচ হতেই বক্স টি সুন্দর ভাবে বুঝে পেলাম। বিষয় টা অনেকটা সেই প্রাচীন মিশরীয়ো সভ্যতার পত্রবাহী পাখি কিংবা ছোট খাটো উপহার পাঠানোর জন্য ব্যাবহার করা মঙ্গোলীয় জাতির বাজ পাখির মত আর প্রমান স্বরুপ কাগজে আংগুলের সেই টিপ সই নেয়ার মত।

 

 

ওহ হ্যা, বলে রাখি এটা ২০৫০ সাল এর কোন এক শীতের সকাল। বক্স খুলতেই দেখলাম বিশাল এক ফোন যাকে বলে স্যাটেলাইট ফোন। সত্যি বলতে এই ফোনটি দেখতে আহামোরি কিছু না হলেও আমার মত সুনাম ধণ্য ও রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপুর্ন পদে চাকুরি করার লোকের জন্য সত্যি অতি প্রয়োজনীয় ছিলো। আজকাল কোন কথায় সাধারন স্মার্ট ফোন এ বলে শান্তি নেই। হ্যাকার জগত বেশ এগিয়ে গিয়েছে এই সময়ে। কেউ কিছু করলে কিংবা গোপনীয়ো কিছু বললে তা আড়ি পেতে কিংবা ফোন ক্লোনিং এর মত বেশ কিছু ভয়ানক কাজের মাধ্যমে সহজেই সকল তথ্য পেয়ে যায়। আর এই সকল তথ্য পেলেই কেল্লাফতে , সাথে সাথে তা ভাইরাল হয়ে উঠে নেটিজেন জগতে।

তাই আমার মত যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে তারা এই স্যাটেলাইট ফোনে নিশ্চিন্তে ভরসা রাখতে পারে। এটা কোন অপারেটর কম্পানির সাথে যুক্ত না। সরাসরি রাষ্ট্রায়ত্ব স্যাটেলাইটের সাথে যুক্ত। এখন এর মাধ্যমে কথা বলাও আগের চেয়ে সাশ্রয়ী ও উন্নত। দেশের যেই প্রান্তেই থাকি কিংবা বিশ্বের যাকেই কল দিতে চাই তা সম্ভব সম্পুর্ন নিজস্ব অপারেটিং নাম্বার ব্যাবহার করে। যাইহোক, সেই ১৯৯০ সালের দিকের মোবাইল গুলোর মতই এই ফোন গুলো বড় আর অ্যান্টেনা যুক্ত যা আগের তুলনায় বেশ জনপ্রিয়। মানুষ এই সময়ে আগের তুলনায় এখন অতি সচেতন তার স্বকিয়তা ও ব্যাক্তি গত বিষয়াদি নিয়ে।

আগের চেয়ে মুটিয়ে যাওয়ায় আর বিজ্ঞান বা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলায় আজকাল আর সেই আগের মত ফাস্ট ফুডে দৌড়াই না। তাই এখন সেই আধা সেদ্ধ সবজি কিংবা সালাদ/ ফলমূলই আমার বিশেষ খাদ্য। খাবার যখন নিয়ন্ত্রিত তখন জীবন টাও আর আগের মত উরাধূরা নেই। প্রতি পদক্ষেপ এখন মেপে চলতে হয়। সুস্থ শরীর চাই কারন আরো অনেক বছর দেশটাকে ভালো কিছু উপহার দিয়ে যেতে চাই।

অফিসে যেতে হবে, ৯টায় এলার্ম দিয়ে রাখা সৌখিন ঘড়িটিতে  ডিং!  ঢং! করে জানিয়ে দিলো সেই শুরুর দিকের বড় রাজকীয় ঘড়ি গুলোর মত যখন সমস্ত শহরে একটাই বড় ঘড়ি থাকতো আর জনগন সেই শব্দ সংকেত গুণে বুঝতো কয়টা বাজে আর তাদের এখন কি করণীয়।

ঘরে ডিজিটাল পাসওয়ার্ড দেয়া ডোর লক থাকলেও আজও মানুষের সেই আস্থা বড় মেটাল তালা গুলোতে। কারন এখন চোর গুলও বেশ শিক্ষিত আর প্রযুক্তিময়। তাইতো ব্যাংকের লকার গুলো ডাবল সিকিউরিটি বলতে ইলেক্ট্রোনিক তালা আর মেটাল তালা দুটোকেই সম্মানের সাথে ব্যাবহার করে। আমার বাসায় এই সিকিউরিটি থাকলেও আরো একটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত নিরাপত্তা ব্যাবস্থা আছে যা অনেক টা আগের সময়কার পাড়া মহল্লার বা বাসার পাশের আন্টি , দাদী , ভাবীদের মত যারা সর্বোদা নজর রাখতো কার বাসায় কি হলো , কে গেলো কে আসলো। যদিও বর্তমানে এই সিস্টেমটা ডিজিটালাইজড ইলেক্ট্রোনিক সিস্টেম যা বাসার চারিদিকে নাইট ভিশন সহ সেট করা। এখন সেই ফ্রিতে সার্ভিস দেয়া নজর রাখা কুটনি চাচি, দাদী, ভাবী গুলোর বড়ই অভাব। সবাই এখন নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত।

বাসার গ্যারেজ থেকে সাইকেল বের করে সোজা সাইকেল চালিয়ে যাত্রা শুরু করলাম আমার রোজকার অফিস যাওয়ার কিছু বন্ধুদের সাথে। আমরা এই সময়ে এখন আর আগের মত বাস কিংবা ট্যাক্সি/উবার অতি প্রয়োজন ছাড়া ব্যাবহার করি না। এখন সাইকেল চালিয়ে  স্কুল-কলেজ কিংবা অফিসে যাওয়াটা একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে সাইকেল চালিয়ে কিংবা পায়ে হেঁটে মর্নিং ওয়াকের পাশাপাশি অফিসের উদ্যেশেও রওনা হয়ে যাই। ব্যায়ামও হয় সেই সাথে টাকাও বাঁচে সময়ও বাঁচে আর সকালে হাঁটা কিংবা সাইকেল চালানোর ফলে স্বাস্থ্য উপকারিতা তো বোনাস হিসেবে আছেই। অনেকটা সেই পুরোনো সময়ের হাটুরেদের হাটে যাওয়ার মত। অফিসে পৌঁছিয়ে কেউ এখন আর আগের মত লিফটে উঠা নিয়ে যুদ্ধ করে না। শিক্ষিত সমাজ এখন সবাই চায় বাঁচতে সুস্থ ভাবে। তাই একেবারে অলস কিংবা অসুস্থ বৃদ্ধ না হলে সবাই সিঁড়িঁ বেয়েই উঠে যায় ফ্লোরের পর ফ্লোর। পায়ের ব্যায়াম বিনা জিম এ গিয়েই হয়ে যায় প্রায়। প্রায়সই পরিবেশ সচেতন এই জাতি এখন বাইসাইকেল ব্যাবহার করে এদিক সেদিক যায়।

 

পেট্রোলিয়াম এর মত মূল্যবান দুষ্প্রাপ্য ফুয়েল পুড়িয়ে এখন যাতায়াত খুব কমই করে। এতে পরিবেশ এ বায়ু দুষণ যেমন কমেছে তেমনি অতিরিক্ত যানজট শব্দ দুষণ কমেছে। রাস্তায় এখন এমার্জেন্সি গাড়ি, আর ধনী বিলাস বহুল অলস ব্যাক্তিদের গাড়ি কিংবা রাষ্ট্রোয়াত্বিত বাস বা ট্যাক্সি ছাড়া তেমন কোন গণ পরিবহন চোখে পরেনা। বাই সাইকেলেই সবাই সুখ খুজে নিয়েছে। ফ্রিতে জিম বলে কথা।

অফিসে বসে কাজের ফাকে-ফাকে চা এ চুমুক দিচ্ছি। কম্পিউটারে একটা জরুরি কাজ করছি তড়িৎ গতিতে। চারি দিকে শুনশান নিরবতা। উহু এখন আর সেই আগের সময়ের মাউস কিংবা কী-বোর্ড ব্যাবহার হয় না। সব চলে হাতের চোখের ইশারায়। আদী যুগে যেমন মৌখিক ভাষাহীন সমাজ ইশারায় কথা বলতো ঠিক তেমনটাই এখন মানুষ কম্পিউটারের সাথে ইশারায় ইংগিতে কাজ করে কথা বলে। সমস্ত নিরবতা ভেংগে ডাক বিভাগের একটা ছোট্ট কোয়াড কপ্টার ড্রোন এসে দাঁড়ালো সামনে লেটার হোল্ডারে রয়েছে একটা চিঠি। হ্যাঁ, সঠিক শুনছেন চিঠি। এই ২০৫০ সালে এসে ডাক বিভাগ আবার সেজে উঠেছে তার নতুন মাত্রার রুপে। এক সময়ে ব্যাপক ভাবে চলা ডাক বিভাগ চলতো চিঠি আদান প্রদান কিংবা জরুরি পত্রাদী নিয়ে। ২১ শতকের শুরুতে মোবাইল ফোন আর বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়া ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠায় তা নিস্তেজ হয়ে যায়। কিন্তু ইদানিং বাংলাদেশ সরকার ডাক বিভাগেও যোগ করেছে ডিজিটালাইজেশন। নতুন সেবায় জেগে উঠেছে ডাক সেবা। ডাক বিভাগের রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট ড্রোন যা এপস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আপনি কাউকে এমন কোন সংবাদ পাঠাতে চান যা কোন ভাবেই মিস যেন না হয়, এমন চাইলে এপস এ গিয়ে চিঠিটি লিখে দিলেই তা কাগজে প্রিন্ট হয়ে নির্দিষ্ট ফি এর মাধ্যমে সেই চিঠি প্রাপক এর ডিজিটাল তথ্য অনুযায়ি তার বরাবর জিপিএস সিস্টেমের দ্বারা ট্র্যাকিং করে চলে যাবে। প্রাপক এর নিকট ড্রোন পৌঁছিয়ে গেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিঠি সংগ্রহ না করলে কিংবা ক্যান্সিল অপশনে চেপে দিলে সেই চিঠি প্রেরকের নিকট চলে যায় এবং প্রেরক চাইলে আবার তা প্রেরন করতে পারে এভাবে মোট ৫বার একই ব্যাক্তিকে পর পর পাঠাতে পারবে একই সংবাদ। কিন্তু ৫ বারেও না গ্রহন করলে প্রেরক ১ মাসের জন্য ব্লক হয়ে যায় এই সার্ভিস হতে। এই ব্লক সিস্টেম চালু হওয়ার পিছনে বর্তমান বিভিন্ন ব্যাবসায়িক কম্পানি গুলো দায়ি। তাদের অনিয়ন্ত্রিত বিজ্ঞাপন এর ম্যাসেজ , সিম কম্পানির বস্তা পচা অফারের ম্যাসেজ আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ( ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটস আপ, ইমো ইত্যাদি) প্রচুর গ্রুপ ম্যাসেজ এর জন্য বিশেষ মানুষদের ম্যাসেজ গুলো বা নোটিশ গুলো মিস হয়ে যায় এই সময়ে তাই এই নতুন উদ্দ্যোগ যার ফলে প্রাপক অবশ্যই গুরুত্ব পূর্ন ম্যাসেজটি কোন ভাবেই মিস করে না। তাছাড়া এই ব্যাস্ত অফিস সময়ে অনেক অফিসেই মোবাইল ব্যাবহার করা তো নিষিদ্ধই সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহার করে সময় নষ্ট করাও কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। যাইহোক, ম্যাসেজ টি ছিলো……………………………………………

 

আগামি পর্বে সমাপ্তি…………

 

 

লেখক : এস. এম. রাজিব আহম্মেদ

ইন্সট্রাকটর, কম্পিউটার টেকনোলজি

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

Tags: No tags

Comments are closed.