প্রাচীন লিপি থেকে বাংলা লিপি
মানুষের অতীত ইতিহাস জানা যায় কি করে ? অথবা দূরের মানুষের কাছে ভাব প্রকাশের উপায় কি ছিল ? আজকাল পৃথিবীতে যা ঘটে তা আমরা খবরের কাগজ পড়ে জানতে পারি । তাছাড়া বিভিন্ন হাতের লেখা, সরকারি কাগজ , পর্যটক এর লেখা বিবরণী ইত্যাদি ভাবে জানা যায় । যখন কাগজ ছিল না তখন কিন্তু চিত্র দিয়ে প্রকাশ করা হতো ভাব । চিত্র বা সাংকেতিক চিহ্নের পরে বর্ণমালা আবিষ্কার হয়। এই বর্ণমালা লিখা হতো- তালপাতায়. ভূর্জ গাছের ছালে, পাথরের থামে, ধাতু বা তামার পাতে, কাদা দিয়ে পাতা বানিয়ে তার ওপর শোলা দিয়ে দাগ কেটে লেখা হতো ।
মিশরে একরকম নলখাগড়া হয় এটার নাম প্যাপিরাস। এই গাছ কেটে জোড়া দিয়ে লম্বা বানিয়ে লেখা হতো । প্যাপিরাস থেকে ইংরেজি পেপার কথাটি এসেছে।
পৃথিবীর প্রায় সকল লিপি একটি মূললিপি থেকে উদ্ভব হয়েছে। এই লিপির নাম হল ফিনিশীয় লিপি। প্রাচীন ফিনিসিয়গণ প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণের আবিষ্কার করেন। গ্রিকগণ স্বরবর্ণ আবিষ্কার করেন। যা থেকে ইউরোপীয় (vowel) সৃষ্টি হয়েছে।ভারতবর্ষে বাংলা লিপির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। প্রাচীন ভারতে দুটি লিপি, ইতিহাসে পাওয়া যায়। একটি হলো ব্রাহ্মী যা বাম দিক থেকে লেখে অপরটির খরোষ্টি যা ডান দিক থেকে লেখে। ব্রিটিশ পন্ডিত ব্রাহ্মী পাঠোদ্ধারের সক্ষম হন । উনিশ শতকের শেষ দিকে এবং বিশ শতকের প্রথমার্ধ জুড়ে একের পর এক বাংলা লিপির পাঠোদ্ধার হতে থাকে। এ থেকে বাংলা লিপির বিবর্তনের ধারাবাহিক ইতিহাস জানা সম্ভব হয়েছে।
ব্রাহ্মী থেকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন আঞ্চলিক লিপির উদ্ভব হয়েছে, যার মধ্যে- নাগরী ,টাকড়ি ,গ্রন্থ, গুরুমুখী , গুজরাটি, তামিল,তেলেগু,উড়িয়া,মালয়, কানেড়ী, বাংলা, বর্মী, তিব্বতি, সিংহলী। এসব লিপি ব্রাহ্মীর আঞ্চলিক বিবর্তনের চূড়ান্ত রূপ। লেখককের রুচিবোধের কালক্রমে পরিবর্তন হয়ে থাকে।
বাংলা লিপির উদ্ভব ঘটেছে উত্তরভারতীয় ব্রাহ্মী থেকে।বাংলা লিপির মধ্যে আবার দুটি ধারা দেখা যায় একটি পশ্চিমধারা অপরটি পূর্বীধারা। এই পূর্বীধারা থেকে বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে। সেটা জানা সম্ভব হয়েছে মহাস্থান লিপি এবং নোয়াখালী জেলার শিলুয়া মুর্তিলেখ।
গুপ্ত যুগে উত্তর বঙ্গে ৮ টি এবং দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গের ১ টি সহ মোট নয়টি তাম্রলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে । এসব তাম্রলিপি পূর্ব ভারতীয় ব্রাহ্মলিপির পরিবর্তনের রুপটি ধরা পড়ে। যা থেকে বাংলা বর্ণের প্রাথমিক রুপটি লক্ষ করা যায়।
আমাদের দেশে এমন আরো অনেক প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন আছে যা থেকে আমরা আমাদের প্রাচীন লিপি গুলো জানতে পারি। পরবর্তীতে প্রাচীন লিপি পরিশুদ্ধ হয়ে আমাদের বাংলা অক্ষর এ রূপান্তরিত হয়েছে।
সূত্র : গুগল,ফুলকি
শাহনেওয়াজ সেরাজ সুবর্ণা
ইন্সট্রাক্টর অফ আর এস ডিপার্টমেন্ট
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট