টেলিকমিউনিকেশন ক্যারিয়ার ভাবনা (পার্ট ০১)

টেলিকমিউনিকেশন ক্যারিয়ার ভাবনা (পার্ট ০১)

আমরা যারা টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হব বা রানিং ছাত্র-ছাত্রী অথবা যারা কমপ্লিট করেছে সকলের জন্যে আজকে আমার এই লেখা। আমি তাদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে তিনটি ভাগে আলোচনা করব।

প্রথমত, টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোন কোন বিষয় নিয়ে পড়ানো হয় এবং এই টেকনোলজিতে অধ্যায়নের মাধ্যমে এক জন শিক্ষার্থী কোন কোন বিষয়ের উপর পড়ালেখা করে যোগ্যতা অর্জন করে। দ্বিতীয়ত, টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পর একজন ছাত্র ছাত্রী কোন কোন টেকনিক্যাল সেক্টরে চাকরির সুযোগ সুবিধা থাকে। তৃতীয়ত, টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করার পর টেকনিক্যাল সেক্টর ছাড়াও আরো কোন কোন সেক্টর এ স্টুডেন্ট রা তাদের ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করতে পারে। সেইসাথে ধাপে ধাপে উচ্চ শিক্ষা এবং ক্যারিয়ার গাইডেন্স সম্পর্কে আলোচনা করব।

কোন ডিপার্টমেন্ট বা সাবজেক্ট দুটি অংশে তাদের বিষয়গুলো বিভক্ত থাকে। একটি হচ্ছে মেজর আরেকটা হচ্ছে মাইনর। মেজর বলতে আমরা সাধারণত বেশিরভাগ বিষয় যে টপিক রিলেটেড হয় সে টপিকে তাকে মেজর বোঝায় এবং যে রিলেটেড সাবজেক্ট তুলনামূলক কম থাকে তাকে মাইনর বলে।

টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজি বিষয়ের সিলেবাস টি মূলত টেলিকমিউনিকেশন, ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার সাইন্স এর সমন্বয়ে গঠিত। এর পাশাপাশি পিওর সাইন্স (ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি), ম্যাথমেটিক্স, বিজনেস স্টাডিজ (একাউন্টিং, অর্গানাইজেশনাল ম্যানেজমেন্ট, এন্টারপ্রিনিউরশিপ), সোশ্যাল সাইন্স এর মতো বিষয় ও সংযুক্ত থাকে। সাধারণত একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার কে পারিপার্শ্বিক সকল বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং টার্ম এর বিভিন্ন লজিক্যাল সিস্টেম সম্পর্কে বুঝতে ম্যাথমেটিক্স ও পিওর সাইন্স এর বিষয়গুলো, বিজনেস সিস্টেম এবং উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বিজনেস স্টাডিজ এর সাবজেক্ট গুলো, এবং সামাজিক এবং আর্থসামাজিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখার জন্য নন টেকনিক্যাল বিষয়গুলো পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেন একজন ছাত্র দক্ষতার সাথে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে যে কোন দিকে তার ক্যারিয়ারকে নির্ধারণ করতে পারে। সেইজন্য ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের পদ্ধতি তাকে চার বছর সময় নিয়ে একজন দক্ষ এবং পেশাদার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ করে দেয়। বলাই বাহুল্য, এর ফলে একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার তার চার বছর মেয়াদি কোর্স শেষ করার পর শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসায় অথবা একজন দক্ষ সহকারি প্রকৌশলী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে।

টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজি তে মূলত মেজর হিসেবে টেলিকমিউনিকেশন এবং ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক্স এবং মাইনর হিসেবে কম্পিউটার সাইন্স পড়ানো হয়। এটি এমন একটি ডিপার্টমেন্ট যেখান থেকে পরবর্তীতে ই ই ই, টেলিকমিউনিকেশন অথবা কম্পিউটার সাইন্সে ব্যাচেলর করা যায়।

টেলিকমিউনিকেশন রিলেটেড বিষয়গুলোর মধ্যে, মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশন, অপটিক্যাল ফাইবার কমিউনিকেশন, মোবাইল কমিউনিকেশন, নেটওয়ার্ক প্ল্যানিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট, টেলিফোনি এন্ড সুইচিং, রাডার এন্ড নেভিগেশন এইডস, স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন, ওয়ারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম সম্পর্কে পড়ানো হয়। যেন একজন ছাত্র টেলিকমিউনিকেশনের সিস্টেম, কমিউনিকেশন টার্ম, প্রসেস, ফ্রিকোয়েন্সি এন্ড সিগন্যাল মেজারিং, নেটওয়ার্ক ডিজাইন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে।

ইলেকট্রনিক্স এর বিষয়গুলোর মধ্যে বেসিক ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস অ্যান্ড সার্কিট, ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স মাইক্রোপ্রসেসর অ্যান্ড মাইক্রোকন্ট্রোলার, ইলেকট্রনিক মেশিন ইত্যাদি বিষয়গুলো পড়ানো হয়। যেন একজন টেলিকমিনেকেশন ইঞ্জিনিয়ার টেলিকমিউনিকেশন ডিভাইস গুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে পারে এবং কম্পিউটার সিস্টেমের হার্ডওয়্যার, ফান্ডামেন্টাল অফ ভিএলএসআই ডিজাইন, আরডুইনো এবং নেটওয়ার্কিং ডিভাইসগুলো সম্পর্কে ভালো ভাবে শিখতে পারে।

সেইসাথে বেসিক ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রিক্যাল মেশিন এর মত কিছু সাবজেক্ট এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয় যার ফলে একটি কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক সিস্টেম এ পাওয়ার সোর্স ও পাওয়ার সিস্টেম সম্পর্কে জানতে পারে

এর পাশাপাশি কম্পিউটার সাইন্সের কিছু বিষয় সম্পর্কে ছাত্রদের পড়ানো হয় যেমন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর ফলে কম্পিউটার সাইন্সের মোটামুটি সব ধরনের বিষয় সম্পর্কে বেসিক ধারণা দিয়ে দেয়া হয়।

সর্বোপরি টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজি র ছাত্র-ছাত্রীদের ইলেকট্রনিক্স কম্পিউটার সায়েন্স এবং টেলিকমিউনিকেশনের সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দেয় যার ফলে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করার পর একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার খুব সহজেই নিজ পছন্দের ট্র্যাক অনুযায়ী ক্যারিয়ার গঠনে নিজেই ভূমিকা রাখতে পারে। পরবর্তী পর্বে ডিপ্লোমা ইন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে কোন কোন সেক্টরে চাকরির সুযোগ সুবিধা থাকে এবং ক্যারিয়ার গঠন করা যায় তার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানবো । ধন্যবাদ।

 

আতিকুর রহমান

জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর, ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশন

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

Tags: No tags

Comments are closed.